Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 রাজাবলি 10-12

যেহূ শমরিয়ার নেতাদের চিঠি দিলেন

10 আহাবের 70 জন ছেলে শমরিয়ায় বাস করত। যেহূ এই সমস্ত ছেলেদের যারা মানুষ করেছে তাদের, শমরিয়ার শাসকদের ও যিষ্রিয়েলের নেতাদের চিঠি লিখে পাঠালেন। 2-3 এই সমস্ত চিঠিতে লেখা হল: “এ চিঠি পাবার সঙ্গে সঙ্গেই আপনারা আপনাদের ভাইদের মধ্যে যাকে যোগ্যতম বলে মনে করেন, তাকে তার পিতার সিংহাসনে বসিয়ে পিতৃকুলপতিদের আধিপত্যের জন্য সংগ্রাম শুরু করার জন্য প্রস্তুত হন। রথ আর ঘোড়া তো আপনাদের যথেষ্টই আছে, উপরন্তু আপনারা সকলেই সুরক্ষিত শহরের মধ্যে বাস করেন!”

কিন্তু যেহূর পাঠানো এই চিঠি পেয়ে যিষ্রিয়েলের নেতা ও শাসকবর্গ খুবই ভয় পেয়ে গেল। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করল, “যোরাম আর অহসিয় দুই রাজাই যখন যেহূকে থামাতে পারল না, তখন আমরাই কি পারব?”

আহাবের বাড়ির চৌকিদার, নগরপাল, শহরের নেতা ও আহাবের সন্তানদের পালকপিতারা যেহূকে খবর পাঠাল: “আমরা আপনার আজ্ঞাধীন দাসানুদাস। আপনি যা বলবেন আমরা তাই করতে রাজী আছি। আমরা নিজেদের কোন রাজা নির্বাচন করছি না, এবার আপনি যা ভাল মনে করবেন তাই করুন।”

শমরিয়ার নেতারা আহাবের সন্তানদের হত্যা করলেন

যেহূ তখন এই সমস্ত নেতাদের দ্বিতীয় এক চিঠিতে নির্দেশ দিলেন, “আপনারা সত্যি সত্যিই যদি আমাকে সমর্থন করেন এবং আমার বশ্যতা স্বীকার করেন তাহলে আহাবের ছেলেদের মুণ্ডুগুলো কেটে আগামীকাল এই সময় আমার কাছে, যিষ্রিয়েলে নিয়ে আসবেন।”

আহাবের 70 জন ছেলে ঐ শহরেই নেতাদের সঙ্গে বাস করত যারা তাদের প্রতিপালন করেছিল। শহরের নেতারা এই চিঠি পেয়ে 70 জন রাজপুত্রকে হত্যা করে তাদের মুণ্ডুগুলো টুক্রিতে রাখলেন। তারপর সেই টুক্রিগুলো যিষ্রিয়েলে যেহূর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। বার্তাবাহক এসে যেহূকে খবর দিল, “তারা রাজপুত্রদের মুণ্ডুগুলো নিয়ে এসেছে!”

তখন যেহূ বললেন, “ঐ কাটা মুণ্ডুগুলো কাল সকাল পর্যন্ত শহরের ফটকে দুটো গাদা করে সাজিয়ে রাখ।”

সকাল বেলা যেহূ গিয়ে লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমরা সকলেই নির্দোষ। আমি আমার অন্নদাতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে হত্যা করেছি। কিন্তু আহাবের এই সমস্ত ছেলেদের কে হত্যা করল? তোমরা! 10 শোন, মনে রেখো প্রভু যা বলেন তা অবশ্যই হবে। আহাবের পরিবারের পরিণতি সম্পর্কে প্রভু আগেই এলিয়র মাধ্যমে এইসব কথা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। এখন তিনি তা শুধু কাজে পরিণত করলেন।”

11 শেষ পর্যন্ত যেহূ যিষ্রিয়েলে বসবাসকারী আহাবের পরিবারের সমস্ত সদস্য, আহাবের ঘনিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, বন্ধুবান্ধব, যাজকবর্গ সকলকেই হত্যা করলেন। আহাবের কোন নিকট জনই রক্ষা পেল না।

যেহূ অহসিয়র আত্মীয়দের হত্যা করলেন

12 এরপর যেহূ যিষ্রিয়েল থেকে শমরিয়ায় গেলেন। পথে “মেষপালকদের আড্ডা” বলে একটা জায়গায় যেখানে মেষপালকরা মেষদের গা থেকে লোম ছাড়াত সেখানে থামলেন। 13 যেহূ যিহূদার রাজা অহসিয়র আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে বললেন, “তোমরা কারা?”

তারা উত্তর দিল, “আমরা সকলেই যিহূদার রাজা অহসিয়র আত্মীয়। আমরা সকলে মহারাজ আর রাণীমার ছেলেপুলেদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে এসেছি।”

14 যেহূ তখন তাঁর দলবলকে নির্দেশ দিলেন, “এগুলোকে জ্যান্ত ধর।”

যেহূর লোকরা তখন অহসিয়ের 42 জন আত্মীয়স্বজনকে বন্দী করে নিয়ে গিয়ে মেষলোমচ্ছেদক গৃহের কুয়োর কাছে হত্যা করল, কেউই রক্ষা পেল না।

যিহোনাদবের সঙ্গে যেহূর সাক্ষাৎ

15 সেখান থেকে যাবার পথে রেখবের পুত্র যিহোনাদবের সঙ্গে যেহূর দেখা হল। যিহোনাদব তখন যেহূর সঙ্গেই দেখা করতে আসছিলেন। যেহূ তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি যে রকম আপনাকে বিশ্বাসী বন্ধু বলে মনে করি, আপনিও কি আমাকে তাই করেন?”

যিহোনাদব উত্তর দিলেন, “অবশ্যই! আমিও আপনার বিশ্বাসী বন্ধু।”

যেহূ বললেন, “তাই যদি হয় তবে আপনি আমার হাতে হাত রাখুন।”

এই বলে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে যিহোনাদবকে নিজের রথে টেনে তুললেন।

16 যেহূ বললেন, “আমার সঙ্গে চলুন। দেখতেই পাচ্ছেন প্রভুর প্রতি আমার অবিচল ভক্তি আছে।”

যিহোনাদব তখন যেহূর রথে চড়েই রওনা হলেন। 17 শমরিয়ায় এসে যেহূ আহাবের পরিবারের অবশিষ্ট জীবিত ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করলেন। প্রভু এলিয়র কাছে যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন ঠিক সে ভাবেই যেহূ আহাবের পরিবারের সবাইকে হত্যা করলেন, কাউকে রেহাই দিলেন না।

যেহূ বালের মূর্ত্তি পূজারীদের ডেকে পাঠালেন

18 তারপর যেহূ সমস্ত লোকদের জড়ো করে বললেন, “আহাব আর বাল মূর্ত্তির জন্য কি এমন কাজ করেছিলেন, যেহূ তার থেকে অনেক বেশি করবে! 19 বাল মূর্ত্তির সমস্ত ভক্ত, ভাববাদী আর যাজকদের ডেকে নিয়ে এস, যাও। দেখো কেউ আবার যেন বাদ না পড়ে! বাল মূর্ত্তির চরণে আমি এক মহার্ঘ বলিদান করতে চাই। এই অনুষ্ঠানে যে আসবে না আমি তাকে হত্যা করব!”

আসলে এটা যেহূর একটা চাল ছিল, তিনি বালপূজকদের ধ্বংস করতে চাইছিলেন। 20 যেহূ বললেন, “বাল মূর্ত্তির জন্য এক পবিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করো।” যাজকরা সেই যজ্ঞের দিন ঘোষণা করল। 21 যখন যেহূ সমগ্র ইস্রায়েলে এ খবর জানিয়ে দিলেন, বাল মূর্ত্তির সমস্ত পূজারীরা সেখানে এসে হাজির হল, কেউই বাড়ীতে পড়ে থাকল না। তারা সকলে এসে বাল মূর্ত্তির মন্দিরে উপস্থিত হলে বালের মন্দির কানায় কানায় ভরে গেল।

22 যেহূ বস্ত্রাগারের অধ্যক্ষকে বাল মূর্ত্তির সমস্ত পূজকদের জন্য পূজার বিশেষ পোশাক বার করার নির্দেশ দিতে, সেই লোকটি সে সব বার করে নিয়ে এল।

23 তখন যেহূ আর রেখবের পুত্র যিহোনাদব দুজনে মিলে বাল মূর্ত্তির মন্দিরে গেলেন। যেহূ ভক্তদের বললেন, “দেখো মন্দিরে যেন শুধুমাত্র বাল মূর্ত্তির ভক্তরাই থাকে।” 24 বাল মূর্ত্তির ভক্তরা যজ্ঞে আহুতি দিতে ও বলিদান করতে সবাই মিলে মন্দিরের ভেতরে গেল।

এদিকে মন্দিরের বাইরে যেহূ 80 জন প্রহরীকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তাদের বললেন, “দেখো কেউ যেন পালাতে না পারে। কারোর দোষে যদি একজনও পালিয়ে যায় তো আমি তাকে হত্যা করব।”

25 যেহূ হোমবলিতে জলসিঞ্চন করে উৎসর্গের কাজ শেষ করলেন এবং তাঁর সেনাপতিদের আর প্রহরীদের আদেশ দিয়ে বললেন, “এখন যাও আর বাল মূর্ত্তির পূজকদের মেরে ফেল। কেউ যেন মন্দির থেকে প্রাণ নিয়ে বেরোতে না পারে!”

তখন সেনাপতিরা তাদের তীক্ষ্ণ তরবারি দিয়ে বাল মূর্ত্তির সমস্ত পূজকদের হত্যা করল। তারা ও রক্ষীরা মিলে পূজকদের মৃতদেহগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে বাইরে ফেলল। তারপর প্রহরী ও সেনাপতিরা মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে 26 পাথরের ফলক ও স্মরণ-স্তম্ভ বের করে এনে সেগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে মন্দিরটাকে পুড়িয়ে দিল। 27 তারপর তারা বালের স্মরণ-স্তম্ভ এবং বালের মন্দির ভেঙ্গে ফেলল, তারা মন্দিরটাকে ধ্বংস করে তার জায়গায় একটা বিশ্রামাগার বানালো। লোকরা এখনও সেটাকে শৌচালয় হিসেবে ব্যবহার করে।

28 এইভাবে যেহূ ইস্রায়েলে বাল মূর্ত্তির পূজো বন্ধ করলেন। 29 কিন্তু তা সত্ত্বেও, নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সমস্ত পাপ কাজ করতে ইস্রায়েলের লোকদের বাধ্য করেছিলেন সে সমস্ত পাপ কাজ যেহূ অব্যাহত রাখলেন। তিনি বৈথেল ও দানের সেই সোনার বাছুর দুটোকে ধ্বংস করেন নি।

ইস্রায়েলে যেহূর শাসন

30 প্রভু যেহূকে বললেন, “তুমি খুব ভাল কাজ করেছো। আমি যা ভাল বলেছিলাম তুমি তাই করলে। যে ভাবে আমি আহাবের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলাম তুমি ঠিক সে ভাবেই তাদের ধ্বংস করেছো। এই জন্য তোমার উত্তরপুরুষরা চার পুরুষ ধরে ইস্রায়েলে শাসন করবে।”

31 কিন্তু যেহূ সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রভুর বিধি-নির্দেশ পালন করেন নি। যারবিয়াম ইস্রায়েলের বাসিন্দাদের যে সব পাপ আচরণে বাধ্য করেছিলেন তা তিনি বন্ধ করতে পারেন নি।

হসায়েল ইস্রায়েলকে পরাজিত করলেন

32 প্রভু এসময় ইস্রায়েল থেকে টুকরো টুকরো ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন করছিলেন। ইস্রায়েলের প্রত্যেক সীমান্তেই অরামের রাজা হসায়েলের হাতে ইস্রায়েলীয় বাহিনী পরাজিত হল। 33 যর্দন নদীর পূর্ব তীরে গিলিয়দের সমগ্র অঞ্চল ছাড়াও গাদীয়, রূবেণীয় ও মনঃশীয়দের পরিবারগোষ্ঠীর দেশ, অর্ণোন উপত্যকার কাছে অরোয় থেকে গিলিয়দ ও বাশন পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল হসায়েল দখল করে নিলেন।

যেহূর মৃত্যু

34 যেহূ আর যা কিছু স্মরণীয় কাজ করেছিলেন সে সমস্ত কিছুই ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে। 35 যেহূ মারা গেলেন এবং তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে শমরিয়ায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র যিহোয়াহস ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলেন। 36 যেহূ শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপর 28 বছর রাজত্ব করেছিলেন।

যিহূদায় রাজপুত্রদের হত্যা করলেন অথলিয়া

11 অহসিয়ের মা অথলিয়া যখন দেখলেন তাঁর পুত্র মারা গিয়েছে, তিনি তখন উঠে রাজ পরিবারের সবাইকে হত্যা করলেন।

যিহোশেবা ছিলেন রাজা যোরামের কন্যা, অহসিয়ের বোন। তিনি যখন দেখলেন সমস্ত রাজপুত্রদের হত্যা করা হচ্ছে, তখন অহসিয়ের এক পুত্র যোয়াশকে নিয়ে একটা শয়ন ঘরে একজন পরিষেবিকার সঙ্গে তাকে লুকিয়ে রাখলেন। অতএব তাঁরা যোয়াশকে অথলিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলেন এবং এইভাবে সে নিহত হল না।

এরপর অথলিয়া যিহূদায় ছ’বছর রাজত্ব করেন। সে সময় যোয়াশকে নিয়ে যিহোশেবা প্রভুর মন্দিরে লুকিয়ে থাকেন।

সপ্তম বছরে প্রভুর মন্দিরের মহাযাজক যিহোয়াদা রাজার বিশেষ দেহরক্ষীদের প্রধান ও প্রধান সেনাপতিকে এক সঙ্গে মন্দিরে ডেকে পাঠালেন। তারপর প্রভুর সামনে গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি করিয়ে যিহোয়াদা তাঁদের রাজপুত্র যোয়াশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করালেন।

অতঃপর যিহোয়াদা তাঁদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, “একটা কাজ তোমাদের করতেই হবে। তোমাদের দলের এক-তৃতীয়াংশ প্রত্যেকটা বিশ্রামের দিনের শুরুতে এসে রাজাকে তাঁর বাড়িতে পাহারা দেবে। আর এক-তৃতীয়াংশ সূর দরজার কাছে থাকবে। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ দরজার কাছে প্রহরীদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে। প্রত্যেকটা বিশ্রামের দিন শেষ হলে তোমাদের দুই-তৃতীয়াংশ প্রভুর মন্দির ও রাজা যোয়াশকে পাহারা দেবে। তিনি কোথাও গেলে তোমরা সবসময়ে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। পুরো দলটাই যেন সশস্ত্র থাকে এবং রাজাকে সবসময়ে ঘিরে থাকে। সন্দেহ জনক কাউকে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে হত্যা করবে।”

সেনাপতিরা যাজক যিহোয়াদার সমস্ত নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। প্রত্যেক সেনাপতি তাঁর লোকবল নিয়ে শনিবারে একটা দল রাজাকে পাহারা দেবে বলে কথা হল, আর বাদবাকি সপ্তাহ আরেকটা দল পাহারা দেবার কথা ঠিক হল। এই সমস্ত সৈনিক যাজক যিহোয়াদার কাছে গেলে 10 তিনি তাঁদের প্রভুর মন্দিরে দায়ূদের রাখা বর্শা ও ঢাল দিলেন। 11 প্রহরীরা সকলে সশস্ত্র অবস্থায় মন্দিরের ডান কোণ থেকে বাঁ কোণ পর্যন্ত, বেদীর চারপাশে এবং রাজা যখনই কোথাও বেরোতেন তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকত। 12 এরা সকলে যোয়াশকে বার করে তাঁর মাথায় মুকুট পরিয়ে, তাঁর হাতে রাজা ও ঈশ্বরের চুক্তিপত্রটি তুলে দিল। তারপর মাথায় মন্ত্রপূতঃ তেল ঢেলে তাঁকে রাজপদে অভিসিক্ত করে হাততালি দিয়ে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, “মহারাজের জয় হোক্!”

13 মহারাণী অথলিয়া সৈনিক ও লোকদের কোলাহল শুনে প্রভুর মন্দিরে গিয়ে দেখলেন, 14 সেখানে স্তম্ভের কাছে যেখানে রাজাদের দাঁড়ানোর কথা, রাজা দাঁড়িয়ে আছেন এবং নেতারা সকলে তাঁকে ঘিরে শিঙা বাজাচ্ছেন। সকলকে খুব খুশী দেখতে পেয়ে মর্মাহত রাণী শোক প্রকাশের জন্য নিজের পরিধেয় পোশাক ছিঁড়ে ফেলে চিৎকার করে উঠলেন, “বিদ্রোহ, বিদ্রোহ!”

15 যিহোয়াদা তখন সেনাপতিদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, “অথলিয়াকে মন্দির চত্বরের বাইরে নিয়ে যাও। তাঁর সমর্থকদের যাকে খুশী তুমি মারতে পারো, কিন্তু প্রভুর মন্দিরের বাইরে।” কারণ যাজক বলেছিলেন, “তাঁকে যেন মন্দিরে হত্যা না করা হয়।”

16 একথা শুনে সৈনিকরা অথলিয়াকে চেপে ধরল। তারপর তিনি রাজপ্রাসাদের ঘোড়া ঢোকার দিকের দরজা পার হতে না হতেই তাঁকে হত্যা করলো।

17 যিহোয়াদা তখন প্রভু রাজা ও প্রজাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করে একটি চুক্তি করলেন। এই চুক্তিতে বলা হল, রাজা ও প্রজা উভয়েই প্রভুর আশ্রিত। এছাড়াও এই চুক্তিপত্রে রাজা ও প্রজার পরস্পরের প্রতি কর্তব্য নির্ধারিত হল।

18 এরপর সমস্ত লোক এক সঙ্গে বালদেবতার মন্দিরে গিয়ে বালদেবতার মূর্ত্তি ও বেদীগুলো ধ্বংস করল। বেদীগুলোকে টুকরো টুকরো করে ভাঙ্গবার পর, তারা বালদেবতার যাজক মত্তনকেও হত্যা করল।

এরপর যিহোয়াদা মন্দিরের দেখাশোনা করবার জন্য আধিকারিকদের রাখলেন। 19 সবাইকে নেতৃত্ব দিয়ে মন্দির থেকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেলেন। রাজার বিশেষ দেহরক্ষী ও সেনাপতিরা রাজার সঙ্গে গেলেন। সবাই মিলে রাজপ্রাসাদের প্রবেশ পথে পৌঁছালে রাজা যোয়াশ সিংহাসনে গিয়ে বসলেন। 20 সমস্ত লোকরা তখন খুবই খুশী হল। শহরে শান্তি ফিরে এল। কারণ রাণী অথলিয়াকে তরবারি দিয়ে রাজপ্রাসাদের কাছেই হত্যা করা হয়েছিল।

21 যোয়াশ যখন রাজা হন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র সাত বছর।

যোয়াশের শাসনকার্য শুরু

12 ইস্রায়েলে যেহূর রাজত্বের সপ্তম বছরে সিংহাসনে আরোহণ করার পর, যোয়াশ 40 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেন। যোয়াশের মা ছিলেন বের্-শেবা নিবাসিনী সিবিয়া। যোয়াশ প্রভুর নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করেন। রাজা যোয়াশ ঈশ্বরের সামনে ঠিক কাজগুলি করেছিলেন যতদিন তাঁকে যিহোয়াদা নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে তিনিও ভিন্ন মূর্ত্তির পূজোর জন্য উঁচু জায়গায় বানানো বেদীগুলো ধ্বংস করেন নি। লোকরা সেই সব বেদীগুলিতে বলিদান করা ও ধুপধূনো দেওয়া চালিয়ে গেল।

যোয়াশ মন্দির সংস্কারের নির্দেশ দিলেন

4-5 যোয়াশ যাজকদের বললেন, “প্রভুর মন্দিরে কোন অর্থাভাব নেই। মন্দিরে জিনিসপত্র দান করা ছাড়াও, সময় সময় লোকরা মন্দির করও দিয়ে এসেছে। খুশি মত উপহার তারা দিয়েছে। আপনারা, যাজকরা মন্দির মেরামতের জন্য ঐ অর্থ ব্যবহার করবেন। প্রত্যেক যাজক লোকেদের জন্য কাজ করে, তাদের কাছ থেকে যে দক্ষিণা পান সেই টাকা দিয়েই তাদের প্রভুর মন্দির সংস্কার করা উচিৎ‌।”

কিন্তু যাজকরা মন্দির সংস্কার করলেন না। যোয়াশের রাজত্বের 23 বছরের মাথায়ও যখন যাজকরা মন্দির সারালেন না, তখন রাজা যোয়াশ যাজক যিহোয়াদা ও অন্যান্য যাজকদের ডেকে পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, “আপনারা কেন এখনও মন্দিরটা সারান নি? অবিলম্বে আপনারা লোকদের কাজ করে দক্ষিণা নেওয়া বন্ধ করুন। দক্ষিণার টাকাও আর বাজে খরচ করবেন না। ঐ টাকা অবশ্যই মন্দির সংস্কারের কাজে যাওয়া উচিৎ‌।”

যাজকরা লোকদের কাছ থেকে দক্ষিণা নেওয়া বন্ধ করবেন বলে রাজী হলেও, তাঁরা ঠিক করলেন যে মন্দির তাঁরা সারাবেন না। তখন যাজক যিহোয়াদা একটা বাক্স বানিয়ে বাক্সটার ওপরে একটা ফুটো করে সেটাকে বেদীর দক্ষিণ দিকে, যে দরজা দিয়ে দর্শনার্থীরা মন্দিরে ঢোকে, রেখে দিলেন। কিছু যাজক মন্দিরের দরজা আগলে বসে থাকতেন। তারা প্রভুকে প্রণামী হিসেবে দেওয়া টাকা পয়সাগুলো ঐ বাক্সটায় পুরে দিলেন।

10 এরপর থেকে লোকরাও মন্দিরে এলে ঐ বাক্সটার মধ্যে টাকা পয়সা ফেলতে শুরু করল। যখনই মহারাজের সচিব এবং যাজক দেখতেন বাক্সটার মধ্যে অনেক টাকা পয়সা জমে গিয়েছে, তাঁরা তখন সমস্ত টাকা পয়সা বাক্স থেকে বের করে গুণে গেঁথে ব্যাগে ভরে রাখতেন। 11 তাঁরা ঐ অর্থ দিয়ে প্রভুর মন্দিরের কাঠের মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, 12 পাথর-কাটিয়ে, খোদাইকর ও অন্যান্য যেসব মিস্ত্রিরা প্রভুর মন্দিরে কাজ করত তাদের মাইনে দিতেন। এছাড়াও ঐ টাকা দিয়ে মন্দির সারানোর জন্য কাঠের গুঁড়ি, পাথর থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন কিনতেন।

13-14 প্রভুর মন্দিরের জন্য লোকরা যে টাকা দিতেন তা দিয়ে কিন্তু যাজকরা সোনা ও রূপোর পাত্র, বাতিদান, বাদ্যযন্ত্র এসব কিনতে পারতেন না। কারণ কারিগররা যারা মন্দির সারাচ্ছিল তাদের মাইনে ঐ অর্থ থেকে দেওয়া হত। 15 কেউই পাই পয়সার হিসেব নিতেন না বা টাকা কিভাবে খরচ হল—এ প্রশ্ন মিস্ত্রিদের করতেন না। কারণ সমস্ত মিস্ত্রিরা খুব বিশ্বাসী ছিল।

16 দোষ মোচন ও পাপমোচনের নৈবেদ্যর থেকে পাওয়া টাকা কারিগরদের মাইনে দেবার জন্য ব্যবহৃত হত না কারণ ওটাতে ছিল যাজকদের অধিকার।

যোয়াশ হসায়েলের হাত থেকে জেরুশালেমকে রক্ষা করলেন

17 অরামের রাজা হসায়েল গাৎ‌ শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। গাতদের হারানোর পর হসায়েল জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

18 যিহোশাফট, যিহোরাম, অহসিয় প্রমুখ যিহূদার রাজারা ছিলেন যোরামের পূর্বপুরুষ। এরা সকলেই প্রভুকে অনেক কিছু দান করেছিলেন। সে সব জিনিসই মন্দিরে রাখা ছিল। যোয়াশ নিজেও প্রভুকে বহু জিনিসপত্র দিয়েছিলেন। জেরুশালেমকে অরামের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যোয়াশ এই সমস্ত জিনিসপত্র এবং তাঁর বাড়িতে ও মন্দিরে যত সোনা ছিল, সব কিছুই অরামের রাজা হসায়েলকে পাঠিয়ে দেন।

যোয়াশের মৃত্যু

19 যোয়াশ যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন সে সমস্ত যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।

20 যোয়াশের কর্মচারীরা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে সিল্লা যাবার পথে মিল্লো বলে একটা বাড়িতে হত্যা করে। 21 শিমিয়তের পুত্র যোষাখর ও শোমরের পুত্র যিহোষাবদ আধিকারিক ছিল। এই দুজন মিলে যোয়াশকে হত্যা করেছিল।

যোয়াশকে দায়ূদ নগরীতে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করার পর তাঁর পুত্র অমৎসিয় নতুন রাজা হলেন।

যোহন 1:29-51

যীশু, ঈশ্বরের মেষশাবক

29 পরের দিন যোহন যীশুকে তাঁর দিকে আসতে দেখে বললেন, “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপরাশি বহন করে নিয়ে যান! 30 ইনিই সেই লোক, যাঁর বিষয়ে আমি বলেছিলাম, ‘আমার পরে একজন আসছেন, কিন্তু তিনি আমার থেকে মহান, কারণ তিনি আমার অনেক আগে থেকেই আছেন।’ 31 এমনকি আমিও তাঁকে চিনতাম না, কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা যেন তাঁকে খ্রীষ্ট বলে চিনতে পারে এইজন্য আমি এসে তাদের জলে বাপ্তাইজ করছি।”

32-34 এরপর যোহন তাঁর সাক্ষ্যে বললেন, “আমি নিজেও খ্রীষ্ট কে তা জানতাম না। কিন্তু লোকদের জলে বাপ্তাইজ করতে ঈশ্বর আমাকে পাঠালেন। ঈশ্বর আমাকে বললেন, ‘তুমি দেখতে পাবে এক ব্যক্তির উপর পবিত্র আত্মা এসে অধিষ্ঠান করছেন। আর তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি পবিত্র আত্মাতে বাপ্তাইজ করবেন।’” যোহন বললেন, “আমি পবিত্র আত্মাকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখেছি। সেই আত্মা কপোতের আকারে এসে যীশুর উপর বসলেন। আমি তা দেখেছি আর তাই আমি লোকদের বলি, ‘তিনিই ঈশ্বরের পুত্র।’”

যীশুর প্রথম শিষ্যদল

35 পরদিন যোহন তাঁর দুজন শিষ্যের সঙ্গে আবার সেখানে এলেন। 36 যীশুকে সেখান দিয়ে যেতে দেখে তিনি বললেন, “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক!”

37 তাঁর সেই দুজন শিষ্য যোহনের কথা শুনে যীশুর অনুসরণ করতে লাগলেন। 38 যীশু পিছন ফিরে সেই দুজনকে অনুসরণ করতে দেখে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কি চাও?”

তাঁরা যীশুকে বললেন, “রব্বি, আপনি কোথায় থাকেন?” (“রব্বি” কথাটির অর্থ “গুরু।”)

39 যীশু তাঁদের বললেন, “এস দেখবে।” তখন তাঁরা গিয়ে দেখলেন তিনি কোথায় থাকেন। আর সেই দিনের বাকি সময়টা তাঁরা যীশুর কাছে কাটালেন। তখন সময় ছিল প্রায় বিকাল চারটে।

40 যোহনের কথা শুনে যে দুজন লোক যীশুর পিছনে পিছনে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন শিমোন পিতরের ভাই আন্দ্রিয়। 41 আন্দ্রিয় সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভাই শিমোনের দেখা পেয়ে তাকে বললেন, “আমরা মশীহের দেখা পেয়েছি।” (“মশীহ” কথাটির অর্থ “খ্রীষ্ট।”)

42 আন্দ্রিয়, শিমোন পিতরকে যীশুর কাছে নিয়ে এলেন। যীশু তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি যোহনের ছেলে শিমোন, তোমাকে কৈফা বলে ডাকা হবে।” (“কৈফা” কথাটির অর্থ “পিতর।”)

43 পরের দিন যীশু গালীলে যাবেন বলে ঠিক করলেন। সেখানে তিনি ফিলিপের দেখা পেয়ে তাঁকে বললেন, “আমার অনুসরণ কর।” 44 আন্দ্রিয় ও পিতর যে অঞ্চলে থাকতেন ফিলিপ ছিলেন সেই বৈৎসৈদার লোক। 45 ফিলিপ এবার নথনেলকে দেখতে পেয়ে বললেন, “আমরা এমন একজনের দেখা পেয়েছি যার কথা মোশি ও ভাববাদীরা বিধি-ব্যবস্থায় লিখে রেখে গেছেন। তিনি নাসরৎ নিবাসী যোষেফের ছেলে যীশু।”

46 নথনেল তাঁকে বললেন, “নাসরৎ! নাসরৎ থেকে কি ভাল কিছু আসতে পারে?”

ফিলিপ বললেন, “এস দেখে যাও।”

47 যীশু দেখলেন নথনেল তাঁর দিকে আসছেন। তখন তিনি তাঁর বিষয়ে বললেন, “এই দেখ একজন প্রকৃত ইস্রায়েলীয়, যার মধ্যে কোন ছলনা নেই।”

48 নথনেল তাঁকে বললেন, “আপনি কেমন করে আমাকে চিনলেন?”

এর উত্তরে যীশু বললেন, “ফিলিপ আমার সম্পর্কে তোমায় বলার আগে তুমি যখন ডুমুর গাছের তলায় বসেছিলে, আমি তখনই তোমায় দেখেছিলাম।”

49 নথনেল বললেন, “গুরু, আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, আপনিই ইস্রায়েলের রাজা।”

50 যীশু উত্তরে বললেন, “আমি তোমাকে ডুমুর গাছের তলায় দেখেছিলাম বলেই কি তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে? এর চেয়েও আরো অনেক মহত্ জিনিস তুমি দেখতে পাবে!” 51 পরে যীশু তাঁকে আরও বললেন, “সত্যি সত্যিই আমি তোমাদের বলছি। তোমরা একদিন দেখবে স্বর্গ খুলে গেছে, আর ‘ঈশ্বরের দূতরা’ মানবপুত্রের ওপর দিয়ে উঠে যাচ্ছেন আর নেমে আসছেন।”[a]

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International