Old/New Testament
নাবোত এর দ্রাক্ষাক্ষেত
21 শমরিয়ায় রাজা আহাবের রাজপ্রাসাদের কাছেই একটা দ্রাক্ষাক্ষেত ছিল। যিষ্রিয়েলে নাবোত নামে এক ব্যক্তি ছিল এই ক্ষেতের মালিক। 2 এক দিন রাজা আহাব নাবোতকে বললেন, “আমাকে তোমার ক্ষেতটা দিয়ে দাও, আমি সব্জির বাগান করবো। তোমার ক্ষেতটা আমার রাজপ্রাসাদের কাছে। আমি তোমাকে এর বদলে আরো ভাল দ্রাক্ষা ক্ষেত দেব। কিংবা তুমি যদি চাও আমি ক্ষেতটা কিনেও নিতে পারি।”
3 নাবোত বলল, “এ আমার বংশের জমি। আমি আপনাকে কোনো মতেই দিতে পারব না।”
4 নাবোতের কথায় ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ আহাব তখন বাড়ি ফিরে গেলেন। যিষ্রিয়েলের এই ব্যক্তির কথা তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। নাবোত বলল যে সে তার পরিবারের জমি দেবে না। আহাব বিছানায় শুয়ে পড়লেন, মুখ ঘুরিয়ে রাখলেন এবং খেতে অস্বীকার করলেন।
5 আহাবের স্ত্রী ঈষেবল গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি হয়েছে? খেলে না কেন?”
6 আহাব বললেন, “আমি যিষ্রিয়েলের নাবোতকে ওর জমিটা আমায় দিয়ে দিতে বলেছিলাম। তার বদলে ওকে পুরো দাম দিতে বা আরেকটা জমি দিতে আমি রাজি আছি। কিন্তু নাবোত আমাকে ওর জমি দেবে না বলে দিয়েছে।”
7 ঈষেবল বলল, “তুমি ইস্রায়েলের রাজা। বিছানা ছেড়ে উঠে কিছু খাও, দেখবে তাহলেই অনেক ভাল লাগবে। নাবোতের জমি আমি তোমায় দেব।”
8 এরপর ঈষেবল আহাবের সীলমোহর দিয়ে তাঁর বকলমে কয়েকটা চিঠি লিখে নাবোত যে শহরে বাস করত সেখানকার প্রবীণদের পাঠিয়ে দিলেন। 9 ঈষেবল লিখলেন:
“একটি উপবাসের দিন ঘোষণা করুন যেদিন কেউ কোনো খাওয়া-দাওয়া করবে না। তারপর শহরের সমস্ত লোককে একটা বৈঠকে ডাকুন। সেখানে আমরা নাবোতের সম্পর্কে আলোচনা করব। 10 কিছু লোককে জোগাড় করুন যারা নাবোতের নামে মিথ্যা কথা বলবে। তারা বলবে তারা নাবোতকে রাজা ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছে। এরপর নাবোতকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলুন।”
11 যিষ্রিয়েলের প্রবীণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই নির্দেশ পালন করলেন। 12 তারা একটি উপবাসের দিনের কথা ঘোষণা করলেন যেদিন কেউ কিছু খেতে পারবে না। সেদিন তাঁরা সমস্ত লোকদের নিয়ে এক বৈঠক ডাকলেন। তাঁরা সমস্ত লোকের সামনে নাবোতকে একটি বিশেষ জায়গায় স্থাপিত করলেন। নাবোতকে সেখানে লোকদের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর 13 দুজন লোক বলল যে তারা নাবোতকে রাজা ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছে। তখন লোকরা নাবোতকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মেরে ফেলল। 14 তারপর নেতারা ঈষেবলকে খবর পাঠালেন, “নাবোতকে হত্যা করা হয়েছে।”
15 ঈষেবল যখন এখবর পেলেন তিনি আহাবকে বললেন, “নাবোত মারা গিয়েছে। তুমি যে ক্ষেতটা চেয়েছিলে, তা এবার নিয়ে নিতে পার।” 16 আহাব তখন গিয়ে সেই দ্রাক্ষার ক্ষেত নিজের জন্য দখল করলেন।
17 এ সময় প্রভু তিশ্রের ভাববাদী এলিয়কে শমরিয়ায় নাবোতের দ্রাক্ষার ক্ষেতে গিয়ে আহাবের সঙ্গে দেখা করতে নির্দেশ দিলেন। 18-19 তিনি বললেন, “আহাব ঐ ক্ষেত নিজের জন্য দখল করতে গিয়েছেন। ওকে গিয়ে বল, ‘আহাব তুমি নাবোতকে হত্যা করে এখন ওর জমি দখল করছ। তাই আমি তোমায় শাপ দিলাম যে জায়গায় নাবোতের মৃত্যু হয়েছে সেই একই জায়গায় তোমারও মৃত্যু হবে। যেসব কুকুর নাবোতের রক্ত চেটে খেয়েছে তারা ঐ একই জায়গায় তোমারও রক্ত চেটে খাবে।’”
20 এলিয় তখন আহাবের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। আহাব এলিয়কে দেখতে পেয়ে বললেন, “তুমি আবার আমার পিছু নিয়েছ। তুমি তো সব সময়ই আমার বিরোধিতা করো।”
এলিয় উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, আমি আবার তোমাকে খুঁজে বার করেছি। তুমি আজীবন প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ আচরণ করে কাটালে। 21 তাই প্রভু তোমাকে জানিয়েছেন, ‘আমি তোমায় ধ্বংস করব। আমি তোমাকে ও তোমার পরিবারের সমস্ত পুরুষকে হত্যা করব। 22 তোমার পরিবারের দশাও নবাটের পুত্র যারবিয়ামের পরিবারের মতো হবে। কিংবা রাজা বাশার পরিবারের মতো। এই দুই পরিবারই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি একাজ করব কারণ আমি তোমার ব্যবহারে ক্রুদ্ধ হয়েছি। তুমি ইস্রায়েলের লোকদের পাপ আচরণের কারণ।’ 23 প্রভু আরো বললেন, ‘কুকুররা তোমার স্ত্রী ঈষেবলের দেহ যিষ্রিয়েল শহরের পথে ছিঁড়ে খাবে। 24 তোমার পরিবারের যে সমস্ত লোকের শহরে মৃত্যু হবে তাদের মৃতদেহ কুকুর খাবে আর মাঠেঘাটে যারা মারা যাবে তাদের মৃতদেহ চিল শকুনিতে ঠোকরাবে।’”
25 আহাবের মতো এতো বেশী অপরাধ বা পাপ আগে কেউ করেন নি। তাঁর স্ত্রী ঈষেবলই তাঁকে এসব করিয়েছিলেন। 26 আহাব ইমোরীয়দের মতোই কাঠের মূর্ত্তি পূজা করার মতো জঘন্য পাপ আচরণ করেছিলেন। এই অপরাধের জন্যই প্রভু ইমোরীয়দের ভূখণ্ড নিয়ে তা ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছিলেন।
27 এলিয়র কথা শেষ হলে আহাবের খুবই দুঃখ হল। তিনি তাঁর শোকপ্রকাশের জন্য পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর শোকপ্রকাশের পোশাক গায়ে দিলেন। খাওয়া-দাওয়া করে দুঃখিত ও শোকসন্তপ্ত আহাব ঐ পোশাকেই ঘুমোতে গেলেন।
28 প্রভু তখন ভাববাদী এলিয়কে বললেন, 29 “আমি দেখতে পাচ্ছি আহাব আমার সামনে বিনীত হয়েছে। তাই আমি ওর জীবদ্দশায় কোনো সংকটের সৃষ্টি না করে ওর ছেলে রাজা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর আমি আহাবের বংশের ওপর বিপদ ঘনিয়ে তুলব।”
মীখায় আহাবকে সতর্ক করে দিলেন
22 পরবর্তী দু বছর ইস্রায়েল ও অরামের মধ্যে শান্তি বজায় ছিল। 2 তারপর তৃতীয় বছরের মাথায় যিহূদার রাজা যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজা আহাবের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
3 এসময় আহাব তাঁর রাজকর্মচারীদের বললেন, “মনে আছে অরামের রাজা গিলিয়দের রামোৎ আমাদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন? রামোৎ ফিরিয়ে নেবার জন্য আমরা কিছু করিনি কেন? রামোতে আমাদেরই থাকা উচিৎ।” 4 আহাব তখন রাজা যিহোশাফটকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি অরামের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের সঙ্গে রামোতে যোগ দেবেন?”
যিহোশাফট বললেন, “অবশ্যই। আমার সেনাবাহিনী ও ঘোড়া আপনার সৈন্যদলের সঙ্গে যোগ দেবার জন্য প্রস্তুত। 5 কিন্তু প্রথমে এ বিষয়ে আমরা প্রভুর পরামর্শ নেব।”
6 তখন আহাব ভাববাদীদের এক বৈঠক ডাকলেন। সেই বৈঠকে প্রায় 400 ভাববাদী যোগ দিলেন। আহাব তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি রামোতে অরামের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাব, নাকি আমি উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করব?”
ভাববাদীরা বললনে, “আপনি এখনই গিয়ে যুদ্ধ করুন। প্রভু আপনার সহায় হয়ে আপনাকে জিততে সাহায্য করবেন।”
7 কিন্তু যিহোশাফট তাদের বললেন, “এখানে কি প্রভুর অন্য কোন ভাববাদী উপস্থিত আছেন? তাহলে আমাদের তাঁকেও ঈশ্বরের মতামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা উচিৎ।”
8 রাজা আহাব বললেন, “যিম্লের পুত্র মীখায় নামে ভাববাদী এখানে আছেন। আমি তাঁকে পছন্দ করি না কারণ যখনই তিনি প্রভুর কথা বলেন কখনও আমার সম্পর্কে ভালো কোনো কথা বলেন না।”
যিহোশাফট বললেন, “মহারাজ আহাব, আপনার মুখে একথা শোভা পায় না।”
9 তখন রাজা আহাব রাজকর্মচারীদের একজনকে গিয়ে মীখায়কে খুঁজে বার করতে বললেন।
10 সে সময় দুজন রাজাই তাঁদের রাজকীয় পরিচ্ছদ পরেছিলেন। তাঁরা শমরিয়ায় ঢোকার দরজার কাছে বিচার কক্ষে রাজ সিংহাসনে বসেছিলেন। সমস্ত ভাববাদীরা তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে ভাববাণী করছিলেন। 11 সেখানে কনানীর পুত্র সিদিকিয় নামে এক ভাববাদী ছিলেন। সিদিকিয় কিছু লোহার শিং বানিয়ে আহাবকে বললেন, “প্রভু বলেছেন, ‘অরামের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় তুমি এই শিংগুলো ব্যবহার করলে ওদের যুদ্ধে হারাতে ও ধ্বংস করতে পারবে।’” 12 অন্য সমস্ত ভাববাদীরাও সিদিকিয়র কথার সঙ্গে একমত হলেন। ভাববাদীরা বললেন, “আপনার সেনাবাহিনীর এবার যাত্রা শুরু করা উচিৎ। রামোতে প্রভুর সহায়তায় আপনার সেনাবাহিনী অরামের সৈন্য দলের বিরুদ্ধে অবশ্যই জয়লাভ করবে।”
13 এসব যখন হচ্ছিল, যে রাজকর্মচারী মীখায়ের খোঁজে গিয়েছিল সে মীখায়কে খুঁজে বার করে বলল, “দেখ সমস্ত ভাববাদীরাই বলেছেন মহারাজ যুদ্ধে জয়লাভ করবেন। আমি তোমাকে আগেই বলে দিচ্ছি, সে কথায় সায় দেওয়াই কিন্তু সব চেয়ে নিরাপদ।”
14 কিন্তু মীখায় বলল, “না! আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে ঐশ্বরিক শক্তির বলে প্রভু আমায় দিয়ে যা বলাবেন আমি তাই বলব।”
15 মীখায় তখন গিয়ে রাজা আহাবের সামনে দাঁড়ালে রাজা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, “মীখায় আমি ও রাজা যিহোশাফট কি সম্মিলিত সেনাবাহিনী নিয়ে এখন রামোতে অরামের সৈন্যদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করতে পারি?”
মীখায় বলল, “নিশ্চয়ই! আপনারা দুজনে গিয়ে এখন যুদ্ধ করলে, প্রভু আপনাদের জিততে সাহায্য করবেন।”
16 আহাব বললেন, “মীখায় আপনি মোটেই দৈববাণী করছেন না। আপনি নিজের কথা বলছেন। আমাকে সত্যি কথা বলুন। আপনাকে কত বার বলবো? আপনি আমাকে প্রভুর অভিমত জানান।”
17 অগত্যা মীখায় বলল, “আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, কি ঘটতে চলেছে। ইস্রায়েলের সেনাবাহিনী পরিচালনার যোগ্য লোকের অভাবে এক পাল মেষের মতো ছড়িয়ে পড়বে। প্রভু বলছেন, ‘এদের কোনো যোগ্য সেনাপতি নেই। যুদ্ধ না করে এদের বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিৎ।’”
18 আহাব তখন যিহোশাফটকে বললেন, “দেখলেন! আপনাকে আগেই বলেছিলাম। এই ভাববাদী আমার সম্পর্কে কখনও ভাল কথা বলে না। এমন কথা বলে যা আমি শুনতে চাই না।”
19 কিন্তু মীখায় তখন প্রভুর অভিমত ব্যক্ত করে বলে চলেছে, “শোনো! আমি স্বচক্ষে প্রভুকে তাঁর সিংহাসনে বসে থাকতে দেখতে পাচ্ছি। দূতরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে। 20 প্রভু বলেছেন, ‘তোমাদের দূতদের মধ্যে কেউ কি রাজা আহাবকে প্রলোভিত করতে পারবে?’ আমি চাই আহাব রামোতে অরামের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন। তাহলে ও নিহত হবে। দূতরা কি করবে সে বিষয়ে সহমত হতে পারলো না। 21 শেষ পর্যন্ত এক দূত বলল, ‘আমি পারব রাজা আহাবকে প্রভাবিত করতে।’ 22 প্রভু প্রশ্ন করলেন, ‘কিভাবে তুমি এই কাজ করবে?’ দূত উত্তর দিলেন, ‘আমি যাব ও সমস্ত ভাববাদীদের মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা হব।’ তখন প্রভু বললনে, ‘উত্তম প্রস্তাব! যাও, গিয়ে রাজা আহাবের ওপর তোমার চাতুরী দেখাও। তুমি সফল হবে।’”
23 মীখায় তার গল্প শেষ করে বলল, “তার মানে এখানেও ঠিক একই কাণ্ডখানাই ঘটেছে। প্রভু আপনার ভাববাদীদের দিয়ে আপনার কাছে মিথ্যে কথা বলিয়েছেন। প্রভু নিজেই আপনার ওপর দুর্যোগ ঘনিয়ে তোলার ব্যবস্থা করেছেন।”
24 তখন ভাববাদী সিদিকিয় গিয়ে মীখায়ের মুখে আঘাত করে বলল, “তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস করো যে ঈশ্বরের ক্ষমতা আমাকে ছেড়ে গেছে এবং প্রভু এখন তোমার মুখ দিয়ে কথা বলছেন?”
25 মীখায় উত্তর দিল, “শীঘ্রই বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তুমি তখন গিয়ে একটা ছোট্ট ঘরে লুকিয়ে বুঝতে পারবে, আমিই সত্যি কথা বলেছি।”
26 তখন রাজা আহাব তাঁর এক কর্মচারীকে, মীখায়কে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়ে বললেন, “ওকে গ্রেপ্তার করে আমোনের শাসনকর্তা রাজপুত্র যোয়াশের কাছে নিয়ে যাও। 27 ওদের বললেন মীখায়কে কারাগারে বন্ধ করে রাখতে। জল আর রুটি ছাড়া যেন ওকে আর কিছু খেতে না দেওয়া হয়। আমি যুদ্ধ থেকে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত ওকে এভাবে আটকে রেখো।”
28 মীখায় তখন চিৎকার করে বলল, “আমি কি বলেছি তোমরা সকলেই শুনেছ। রাজা আহাব তুমি যদি যুদ্ধ থেকে বেঁচে ফিরে আস তাহলে সবাই জানবে যে ঈশ্বর কখনোই আমার মধ্যে দিয়ে কথা বলেন নি।”
রামোৎ গিলিয়তে যুদ্ধ
29 তারপরে রাজা আহাব ও রাজা যিহোশাফট রামোতে অরামের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। 30 তারপর রাজা আহাব, রাজা যিহোশাফটকে বললেন, “আমরা যুদ্ধের জন্য তৈরী হব। আমি এমন পোশাক পরবো যাতে বোঝা না যায় যে আমি রাজা। কিন্তু আপনি আপনার রাজকীয় পোশাক পরুন, যাতে বোঝা যায় আপনি রাজা।” তারপর ইস্রায়েলের রাজা সাধারণ পোশাকে তিনি রাজা নন এভাবে যুদ্ধ শুরু করলেন।
31 অরামের রাজার রথবাহিনীতে 32 জন সেনাপতি ছিল। রাজা এই 32 জন সেনাপতিদের ইস্রায়েলের রাজাকে খুঁজে বার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি তাদের রাজাকে হত্যা করতে বললেন। 32 যুদ্ধের সময় এইসব সেনাপতিরা রাজা যিহোশাফটকে দেখে ভাবলেন তিনিই বুঝি ইস্রায়েলের রাজা। তারা তখন যিহোশাফটকে হত্যা করতে গেলে তিনি চেঁচাতে শুরু করলেন। 33 সেনাপতিরা দেখল তিনি রাজা আহাব নন, তাই তাঁরা তাঁকে হত্যা করল না।
34 কিন্তু একজন সেনা কোনো কিছু লক্ষ্য না করেই বাতাসে একটা তীর ছুঁড়লো, সেই তীর গিয়ে ইস্রায়েলের রাজা আহাবের গায়ে লাগল। তীরটা একটা ছোট্ট জায়গায় বর্মের না ঢাকা অংশে গিয়ে লেগেছিল। রাজা আহাব তখন তাঁর রথের সারথীকে বললেন, “আমার গায়ে তীর লেগেছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রথ বাইরে নিয়ে চল।”
35 এদিকে দুই সেনাবাহিনী যুদ্ধ করে যেতে লাগল। রাজা আহাব তাঁর রথে কাত হয়ে পড়ে অরামের সেনাবাহিনীর দিকে দেখছিলেন। তাঁর রক্ত গড়িয়ে পড়ে রথের তলা ভিজে গিয়েছিল। বিকেলের দিকে তিনি মারা গেলেন। 36 সূর্যাস্তের সময় ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীর সবাইকে তাদের নিজেদের শহরে ফিরে যেতে বলা হল।
37 এইভাবে রাজা আহাবের মৃত্যু হল। কিছু লোক তাঁর দেহ শমরিয়ায় নিয়ে গেলেন, তাঁকে সেখানে কবর দেওয়া হল। 38 লোকরা শমরিয়ায় একটা ডোবায় রথ থেকে আহাবের রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করল। গণিকারা সেই জলে স্নান করল। কুকুররাও রথ থেকে আহাবের রক্ত চেটে চেটে খেল। প্রভু যে রকম বলেছিলেন সমস্ত ঘটনা ঠিক সেভাবেই ঘটল।
39 আহাব তাঁর শাসনকালে যা কিছু করেছিলেন সে সবই ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। এই গ্রন্থে আহাব কিভাবে হাতির দাঁত দিয়ে তাঁর রাজপ্রাসাদ সাজিয়ে ছিলেন সে কথা ছাড়াও আহাবের বানানো শহরগুলির সম্পর্কেও লেখা আছে। 40 আহাবের মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হল। তাঁর পুত্র অহসিয় তাঁর পরে রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা যিহোশাফট
41 আহাবের ইস্রায়েলে রাজত্বের চতুর্থ বছরে যিহোশাফট যিহূদার রাজা হয়েছিলেন। যিহোশাফট ছিলেন আসার পুত্র। 42 পঁয়ত্রিশ বছর পরে যিহূদার রাজা হবার পর তিনি জেরুশালেমে 25 বছর রাজত্ব করেছিলেন। যিহোশাফটের মা ছিলেন শিল্হির কন্যা অসূবা। 43 যিহোশাফট তাঁর পিতার মতো সৎ পথে থেকে প্রভুর সমস্ত নির্দেশ মেনে চলেছিলেন। তবে তিনি বিধর্মী মূর্ত্তিগুলির উচ্চস্থানগুলো ভাঙ্গেন নি। লোকরা সে সব জায়গায় পশু বলি ছাড়াও ধূপধূনো দিত।
44 যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছিলেন। 45 যিহোশাফট খুবই সাহসী ছিলেন এবং অনেক যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি যা যা করেছিলেন, যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে তা লিপিবদ্ধ আছে।
46 যে সমস্ত নর-নারী গণিকাবৃত্তি অবলম্বন করত যিহোশাফট তাদের ধর্মস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছিলেন। এই সমস্ত নর-নারী তাঁর পিতা আসার রাজত্ব কালে ঐসব ধর্মস্থানে ছিল।
47 এসময়ে ইদোমে কোনো রাজা ছিল না। যিহূদার রাজা সেখানকার শাসন কাজ চালনার জন্য একজন প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে বেছে নিয়েছিলেন।
48 রাজা যিহোশাফট কিছু মালবাহী জাহাজ বানিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এই সমস্ত জাহাজ ওফীরে গিয়ে সেখান থেকে সোনা নিয়ে আসবে। কিন্তু ওফীরে যাবার আগেই দেশেরই বন্দরে ইৎসিয়োন-গেবরে এইসব জাহাজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। 49 ইস্রায়েলের রাজা অহসিয় তখন নিজের কিছু নাবিককে যিহোশাফটের জাহাজে তাঁর নাবিকদের সঙ্গে কাজ করার জন্য পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যিহোশাফট অহসিয়ের এই সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
50 যিহোশাফটের মৃত্যুর পর তাঁকে দায়ূদ নগরীতে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে চির নিদ্রায় সমাধিস্থ করা হল। এরপর রাজা হলেন তাঁর পুত্র যিহোরাম।
ইস্রায়েলের রাজা অহসিয়
51 যিহূদার রাজা যিহোশাফটের রাজত্বের 17 বছরে আহাবের পুত্র অহসিয় ইস্রায়েলের রাজা হয়েছিলেন। অহসিয় 2 বছর শমরিয়ায় রাজত্ব করেছিলেন। 52 অহসিয় তাঁর পিতা আহাব, মাতা ঈষেবল ও নবাটের পুত্র যারবিয়ামের মতোই প্রভুর বিরুদ্ধে যাবতীয় পাপ আচরণ করেন। এই সমস্ত শাসকরাই ইস্রায়েলকে আরো পাপের দিকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। 53 অহসিয় তাঁর পিতার মতোই বাল মূর্ত্তির পূজা করতেন। ফলে প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। এর আগে তিনি তাঁর পিতার ওপর যে রকম ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, অহসিয়ের প্রতিও তিনি ঠিক সে রকমই ক্রুদ্ধ হন।
যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল
(মথি 27:32-44; মার্ক 15:21-32; যোহন 19:17-27)
26 তারা যখন যীশুকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন কুরীশীর শহরের শিমোন নামে একজন লোককে সৈন্যরা ধরল, সে তখন মাঠ থেকে আসছিল। তারা সেই ক্রুশটা তার ঘাড়ে চাপিয়ে যীশুর পেছনে পেছনে সেটা বয়ে নিয়ে যেতে তাকে বাধ্য করল।
27 এক বিরাট জনতা তার পেছনে পেছনে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কিছু স্ত্রীলোকও ছিল যাঁরা যীশুর জন্য কান্নাকাটি ও হা-হুতাশ করতে করতে যাচ্ছিল। 28 যীশু তাদের দিকে ফিরে বললেন, “হে জেরুশালেমের মেয়েরা, তোমরা আমার জন্য কেঁদো না, বরং নিজেদের জন্য ও তোমাদের সন্তানদের জন্য কাঁদ। 29 কারণ এমন দিন আসছে যখন লোকে বলবে, ‘বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরাই ধন্য! আর ধন্য সেই সব গর্ভ যা কখনও সন্তান প্রসব করে নি, ধন্য সেই সব স্তন যা কখনও শিশুদের পান করায় নি।’ 30 সেই সময় লোকে পর্বতকে বলবে, ‘আমাদের ওপরে পড়!’(A) তারা ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের চাপা দাও!’ 31 কারণ গাছ সবুজ থাকতেই যদি লোকে এরকম করে, তবে গাছ যখন শুকিয়ে যাবে তখন কি করবে?”
32 দুজন অপরাধীকে তাঁর সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। 33 তারা “মাথার খুলি” নামে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাল, সেখানে ঐ দুজন অপরাধীর সঙ্গে তারা যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তারা একজনকে তাঁর বাঁদিকে, আর অন্যজনকে তাঁর ডানদিকে ক্রুশে টাঙিয়ে দিল।
34 তখন যীশু বললেন, “পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা যে কি করছে তা জানে না।”
তারা পাশার ঘুঁটি চেলে গুলিবাঁট করে নিজেদের মধ্যে তাঁর পোশাকগুলি ভাগ করে নিল। 35 লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিল, ইহুদী নেতারা ব্যঙ্গ করে তাঁকে বলতে লাগল, “ওতো অন্যদের বাঁচাতো। ও যদি ঈশ্বরের মনোনীত সেই খ্রীষ্ট হয় তবে এখন নিজেকে বাঁচাক দেখি!”
36 সৈন্যরাও তাঁর কাছে এগিয়ে এসে তাঁকে উপহাস করতে লাগল। তারা পান করার সিরকা এগিয়ে দিয়ে যীশুকে বলল, 37 “তুই যদি ইহুদীদের রাজা, তবে নিজেকে বাঁচা দেখি!” 38 (তারা একটা ফলকে “এ ইহুদীদের রাজা” লিখে যীশুর ক্রুশের ওপর তা লটকে দিল।)
39 তাঁর দুপাশে যাঁরা ক্রুশের ওপর ঝুলছিল, তাদের মধ্যে একজন তাঁকে বিদ্রূপ করে বলল, “তুমি না খ্রীষ্ট? আমাদের ও নিজেকে বাঁচাও দেখি!”
40 কিন্তু অন্য জন তাকে ধমক দিয়ে বলল, “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমি তো একই রকম শাস্তি পাচ্ছ। 41 আমরা যে শাস্তি পাচ্ছি তা ন্যায়, কারণ আমরা যা করেছি তার যোগ্য শাস্তিই পাচ্ছি; কিন্তু ইনি তো কোন অন্যায় করেন নি।” 42 এরপর সে বলল, “যীশু আপনি যখন আপনার রাজ্যে আসবেন তখন আমার কথা মনে রাখবেন।”
43 যীশু তাকে বললেন, “আমি তোমায় সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে।”
যীশুর মৃত্যুবরণ
(মথি 27:45-56; মার্ক 15:33-41; যোহন 19:28-30)
44 তখন বেলা প্রায় বারোটা; আর সেই সময় থেকে তিনটা পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। 45 সেই সময় সূর্যের আলো দেখা গেল না; আর মন্দিরের মধ্যে ভারী পর্দাটা মাঝখানে থেকে চিরে দুভাগ হয়ে গেল। 46 যীশু চিৎকার করে বললেন, “পিতা আমি তোমার হাতে আমার আত্মাকে সঁপে দিচ্ছি।”(B) এই কথা বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন।
47 সেখানে উপস্থিত শতপতি এইসব ঘটনা দেখে ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলে উঠলেন, “ইনি সত্যিই নির্দোষ ছিলেন!”
48 যে লোকরা সেখানে জড়ো হয়েছিল, তারা এইসব ঘটনা দেখে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সেখান থেকে চলে গেল। 49 কিন্তু যাঁরা যীশুর খুবই পরিচিত ছিলেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত কি ঘটে দেখার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। যে সব স্ত্রীলোক গালীল থেকে যীশুর সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁরাও এদের মধ্যে ছিলেন।
আরিমাথিয়ার যোষেফ
(মথি 27:57-61; মার্ক 15:42-47; যোহন 19:38-42)
50-51 সেখানে যোষেফ নামে একজন লোক ছিলেন, তিনি ছিলেন ইহুদী মহাসভার সভ্য; ভাল ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি পরিষদের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপের সঙ্গে একমত হননি। যিহূদার আরিমাথিয়ার শহর থেকে তিনি এসেছিলেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যের আগমণের প্রতীক্ষায় ছিলেন। 52 যোষেফ পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহটি চাইলেন। 53 পরে যীশুর দেহটি ক্রুশের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে একটি মসলিন কাপড়ে তা জড়ালেন। এরপর পাহাড়ের গা কেটে গর্ত করা একটি সমাধিগুহার মধ্যে দেহটি শুইয়ে রাখলেন। এই সমাধি সম্পূর্ণ নতুন ছিল, এর আগে কাউকে কখনও এখনে কবর দেওয়া হয় নি। 54 সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবারের আয়োজনের দিন, আর বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল।
55 যে স্ত্রীলোকেরা যীশুর সঙ্গে সঙ্গে গালীল থেকে এসেছিলেন, তাঁরা যোষেফের সঙ্গে গেলেন, আর সেই সমাধিটি ও তার মধ্যে কিভাবে যীশুর দেহ শায়িত রাখা হল তা দেখলেন। 56 এরপর তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে বিশেষ এক ধরণের সুগন্ধি তেল ও মশলা তৈরী করলেন।
বিশ্রামবারে তাঁরা বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে কাজকর্ম বন্ধ রাখলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International