Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
1 রাজাবলি 12-13

গৃহযুদ্ধ

12 1-3 নবাটের পুত্র যারবিয়াম তখনও মিশরে লুকিয়ে ছিল। যখন সে শলোমনের মৃত্যু সংবাদ পেল, তার জন্মভূমি ইফ্রয়িমে পার্বত্য অঞ্চলের সেরেদতে ফিরে এল। এদিকে রাজা শলোমনের মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হলে নতুন রাজা হলেন তাঁর পুত্র রহবিয়াম।

ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দা রহবিয়ামকে রাজপদে অধিষ্ঠিত করতে শিখিমে গিয়েছিল। কারণ রহবিয়াম তখন সেখানেই ছিলেন। সকলে রহবিয়ামকে বলল, “আপনার পিতা আমাদের খাটিয়ে খাটিয়ে জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিলেন। আপনি দয়া করে আমাদের কাজের বোঝা একটু হাল্কা করে দিলেই আমরা আপনার হয়ে কাজ করব।”

রহবিয়াম তাদের উত্তর দিলেন, “তোমরা তিনদিন পরে আমার কাছে এস। তখন আমি আমার সিদ্ধান্ত তোমাদের জানাব।” একথা শুনে সবাই ফিরে গেল।

শলোমনের যে সমস্ত প্রবীণ পরামর্শদাতা তখনও জীবিত ছিলেন, রাজা রহবিয়াম তাদের তাঁর কর্তব্য কর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, “আমার এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ‌? আমি এদের কি বলব?”

প্রবীণরা তাঁকে বললেন, “তুমি যদি আজ ওদের কাছে দাসের মতো হও, ওরা সত্যি তোমার সেবা করবে। তুমি যদি ওদের সঙ্গে দয়াপরবশ হয়ে কথা বলো, তাহলে ওরা চির দিনই তোমার হয়ে কাজ করবে।”

কিন্তু রহবিয়াম এই পরামর্শে কর্ণপাত করলেন না। তিনি তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তিনি তাদের বললেন, “লোকরা বলছে, ‘আপনার পিতা যা কাজ দিতেন তার চেয়েও আমাদের হাল্কা কাজ দিন।’ কি করা যায় বলো তো? আমি এখন ওদের কি বলি?”

10 রাজার বন্ধুরা রহবিয়ামকে বলল, “শোন কথা! ওরা নাকি বলছে তোমার পিতা ওদের বেশী খাটাতেন। তুমি কেবল মাত্র ওদের ডেকে বলে দাও, ‘দেখ হে, আমার কড়ে আঙ্গুল আমার পিতার পুরো দেহের চেয়েও শক্তিশালী। 11 আমার পিতার জন্য তোমরা যে কাজ করেছ তার চেয়েও অনেক কঠিন কাজ আমি তোমাদের দিয়ে করাব। কাজ আদায় করার জন্য আমার পিতা তোমাদের শুধু চাবকাতেন, আমি ধারালো লোহা বসানো চাবুক দিয়ে চাবকাবো।’”

12 রহবিয়াম লোকদের তিন দিন পরে আসতে বলেছিলেন তাই ঠিক তিন দিন পরে ইস্রায়েলের লোকরা আবার রহবিয়ামের কাছে ফিরে এল। 13 রহবিয়াম তখন প্রবীণদের কথা না শুনে 14 তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শ অনুযায়ী বললেন, “আমার পিতা তোমাদের জোর করে বেশি খাটিয়েছিল বলছো, এখন আমি আরো বেশী খাটাবো। আমার পিতা তোমাদের শুধু চাবকেছেন, আমি লোহা বসানো চাবুক দিয়ে চাবকাবো।” 15 অর্থাৎ‌ রাজা লোকদের আবেদনে সাড়া দিলেন না। প্রভুর অভিপ্রায়েই এই ঘটনা ঘটল। প্রভু নবাটের পুত্র যারবিয়ামের কাছে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখার জন্যই এই ঘটনা ঘটালেন। শীলোনীয় ভাববাদী অহিয়ের মাধ্যমে প্রভু যারবিয়ামের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন।

16 ইস্রায়েলের সমস্ত লোক দেখল নতুন রাজা তাদের আবেদনে কর্ণপাত পর্যন্ত করল না। তখন তারা রাজাকে এসে বলল,

“আমরা কি দায়ূদের পরিবারভুক্ত?
    মোটেই না। আমরা কি যিশয়ের জমির কোনো ভাগ পাই? না!
তাহলে দেশবাসীরা চলো আমরা আমাদের নিজের বাড়িতে ফিরে যাই।
    দায়ূদের পুত্র তার নিজের লোকদের ওপর রাজত্ব করুক।”

একথা বলে ইস্রায়েলের লোকরা যে যার বাড়িতে ফিরে গেল। 17 ইস্রায়েলের যে সমস্ত লোক যিহূদার শহরগুলিতে থাকত রহবিয়াম শুধুমাত্র তাদের ওপর রাজত্ব করেছিলেন।

18 অদোরাম নামে একজন লোক কর্মচারীদের তত্ত্বাবধান করত। রাজা তাকে ডেকে পাঠিয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে বললেন। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকরা পাথর ছুঁড়ে তাকে মেরে ফেলল। রহবিয়াম তখন কোন মতে তাঁর রথে চড়ে জেরুশালেমে পালিয়ে গেলেন। 19 অতএব ইস্রায়েলের লোকরা দায়ূদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল এবং এখনও পর্যন্ত তারা দায়ূদ পরিবার বিরোধী।

20 ইস্রায়েলের সমস্ত লোক যখন যারবিয়ামের ফিরে আসার কথা জানতে পারল, তারা একটি সমাবেশের আয়োজন করে তার সঙ্গে দেখা করে তাকেই সমগ্র ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে ঘোষণা করল। একমাত্র যিহূদার পরিবারগোষ্ঠী দায়ূদের পরিবারের অনুসরণ করতে লাগল।

21 রহবিয়াম জেরুশালেমে ফিরে গেলেন এবং যিহূদা ও বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠীকে একত্রে জড়ো করলেন। এই দুই গোষ্ঠী মিলিয়ে মোট 180,000 জনের একটি সেনাবাহিনী গঠিত হল। রহবিয়াম ইস্রায়েলের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাঁর রাজত্ব উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন।

22 কিন্তু প্রভু শময়িয় নামে এক ঈশ্বরের লোকের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, 23 “যাও যিহূদার রাজা শলোমনের পুত্র রহবিয়াম আর যিহূদার লোক ও বিন্যামীনকে গিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ করতে বারণ করো। 24 ওদের সকলকে ঘরে ফিরে যেতে বলো কারণ আমিই এইসব ঘটিয়েছি।” রহবিয়ামের সেনাবাহিনী প্রভুর আদেশ মেনে বাড়ি চলে গেল।

25 শিখিম হল ইফ্রয়িমের পার্বত্য অঞ্চলের একটি শহর। যারবিয়াম শিখিমকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করে সেখানেই বসবাস করতে লাগল। পরে সে পনূয়েল নামে একটি শহরে গিয়ে সেটিকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করেছিলো।

26-27 যারবিয়াম মনে মনে ভাবলেন, “যদি লোকরা জেরুশালেমে প্রভুর মন্দিরে নিয়মিত যাতায়াত চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে তারা শেষ পর্যন্ত দায়ূদের উত্তরপুরুষদের দ্বারাই শাসিত হতে চাইবে। তারা আবার যিহূদার রাজা রহবিয়ামকে অনুসরণ করবে আর আমাকে হত্যা করবে।” 28 তাই রাজা তাঁর পরামর্শদাতাদের কাছে তাঁর করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে উপদেশ চাইলেন। তাঁরা রাজাকে তাঁদের পরামর্শ দিলেন। তখন যারবিয়াম দুটো সোনার বাছুর বানিয়ে লোকদের বললেন, “তোমরা কেউ আরাধনা করতে জেরুশালেমে যাবে না। ইস্রায়েলের অধিবাসীরা শোনো, এই দেবতারাই তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন।”[a] 29 একথা বলে যারবিয়াম একটা সোনার বাছুর বৈথেলে রাখলেন। অন্য বাছুরটাকে রাখলেন দান শহরে। 30 ইস্রায়েলের লোকরা তখন বৈথেলে ও দানে বাছুর দুটোকে আরাধনা করতে গেল। কিন্তু এটি অত্যন্ত গর্হিত ও পাপের কাজ হল।

31 এছাড়াও যারবিয়াম উচ্চ স্থানে মন্দির বানিয়েছিল। (শুধুমাত্র লেবীয়দের পরিবারগোষ্ঠী থেকে যাজক বেছে নেওয়ার পরিবর্তে সে ইস্রায়েলের বিভিন্ন পরিবারগোষ্ঠী থেকে যাজকদের বেছে নিয়েছিল।) 32 এরপর রাজা যারবিয়াম ইস্রায়েল উৎসবের মতো একটি নতুন ছুটির দিনের প্রবর্তন করল। অষ্টম মাসের 15 দিনে এই ছুটি পালিত হত। এসময় রাজা বৈথেল শহরের বেদীতে বলিদান করত। সে তার বানানো বাছুর দুটোর সামনে বলি দিত। রাজা যারবিয়াম বৈথেলে ও উঁচু জায়গায় তার বানানো পূজোর জায়গাগুলোর জন্য যাজকদের বেছে নিয়েছিল। 33 অর্থাৎ‌ রাজা যারবিয়াম তার সুবিধা মতো ইস্রায়েলীয়দের জন্য উৎসবের সময় বেছে নিয়েছিল। অষ্টম মাসের 15 দিনের মাথায় ঐ ছুটির দিনটিতে বৈথেল শহরে তার বানানো বেদীতে বলিদান ছাড়াও ধূপধূনো দেওয়া হতো।

বৈথেলের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কথন

13 1-2 প্রভু যিহূদার ঈশ্বরের প্রেরিত একজনকে বৈথেলে যাবার জন্য এবং বেদীর ওপরে পূজো করবার বিরুদ্ধে কথা বলবার জন্য ডেকে পাঠালেন। যখন সেই ভাববাদী বৈথেলে পৌঁছলেন তখন রাজা যারবিয়াম বেদীর সামনে দাঁড়িয়ে ধূপধূনো দিচ্ছিলেন।

তিনি গিয়ে ঐ যজ্ঞবেদীকে সম্বোধন করে বললেন, “দায়ূদের পরিবারে যোশিয় নামে এক বালক জন্মাবে। যাজকরা এখন যজ্ঞবেদীতে পূজো দিচ্ছে, কিন্তু যোশিয় একদিন এই সমস্ত যাজকদের যজ্ঞবেদীর ওপরেই হত্যা করবে। এখন যাজকরা যে বেদীতে ধূপধূনো জ্বালাচ্ছে সেই বেদীতেই মানুষের হাড় পুড়িয়ে যোশিয় তা ব্যবহারের অযোগ্য করে তুলবে।”

এসমস্ত ঘটনা যে সত্যি সত্যি ঘটতে চলেছে সে বিষয়ে ঈশ্বরের লোক উপস্থিত সবাইকে প্রমাণ দিলেন। তিনি বললেন, “আমি যা বললাম তা যে সত্যি সত্যি ঘটবে সে কথা প্রমাণের জন্য প্রভু আমাকে বলেছেন, ‘এই বেদী ভেঙ্গে দু টুকরো হয়ে সমস্ত ছাই মাটিতে ছড়িয়ে পড়বে।’”

রাজা যারবিয়াম ঈশ্বরের লোকের কাছ থেকে বৈথেলের বেদীর কথা শুনে বেদী থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে সেই লোককে দেখিয়ে বলল, “ওকে গ্রেপ্তার করো।” কিন্তু একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তার হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেল, সে আর হাত নাড়াতে পারল না। একই সঙ্গে বেদীটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে সমস্ত ছাই মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। এর থেকেই ঈশ্বরের লোকের কথার সত্যতা প্রমাণ হল। তখন রাজা যারবিয়াম ঈশ্বরের লোককে বলল, “দয়া করে আপনার প্রভুর ঈশ্বরের কাছে আমার এই হাতটি আবার ঠিক করে দেবার জন্য প্রার্থনা করুন।”

লোকটি তখন প্রভুর কাছে সেই প্রার্থনা করায় রাজার হাত ঠিক হয়ে গেল। তখন রাজা ঈশ্বর প্রেরিত সেই লোকটিকে বলল, “অনুগ্রহ করে আপনি আমার সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবেন চলুন। আমি আপনাকে একটি উপহার দিতে চাই।”

কিন্তু সেই লোকটি রাজাকে বলল, “তোমার অর্ধেক রাজত্ব আমাকে দিলেও আমি তোমার সঙ্গে যাবো না বা এখানে কোন পানাহার করব না। প্রভু আমাকে এখানে কিছু খেতে বা পান করতে বারণ করেছেন। প্রভু আমাকে আরো নির্দেশ দিয়েছেন যে, যে রাস্তা দিয়ে আমি এখানে এসেছি, সেই রাস্তা দিয়ে যেন না ফিরি।” 10 একথা বলে তিনি বৈথেলে আসার সময় যে রাস্তা দিয়ে এসেছিলেন, সেটাতে না গিয়ে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে ফিরে গেলেন।

11 বৈথেল শহরে সে সময় একজন বৃদ্ধ ভাববাদী বাস করতেন। তাঁর ছেলেরা এসে তাঁকে বৈথেলের এই ঈশ্বর প্রেরিত ব্যক্তির কার্যকলাপের কথা জানালো। 12 সেই বৃদ্ধ ভাববাদী সব শুনে জিজ্ঞেস করলেন, “তিনি কোন্ রাস্তা দিয়ে ফিরে গেলেন?” ছেলেরা তখন যিহূদা থেকে আসা সেই ভাববাদী যে পথে ফিরে গিয়েছেন পিতাকে দেখালো। 13 বৃদ্ধ ভাববাদী তাঁর পুত্রদের তাঁর গাধায় লাগাম লাগিয়ে দিতে বললেন এবং সেই গাধায় চড়ে বেরিয়ে পড়লেন।

14 বৃদ্ধ ভাববাদী ঈশ্বর প্রেরিত লোকটিকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে দেখলেন একটা মস্ত বড় গাছের তলায় একজন বসে আছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, “আপনি কি ঈশ্বরের লোক যিনি যিহূদা থেকে এসেছেন?”

ভাববাদী উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ।”

15 তখন বৃদ্ধ ভাববাদী বললেন, “দয়া করে আমার সঙ্গে বাড়িতে চলুন, কিছু মুখে দেবেন।”

16 কিন্তু ঈশ্বরের লোকটি এতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, “আমি আপনার সঙ্গে বাড়িতে যেতে বা এখানে কোনো পানাহার করতে পারব না। 17 কারণ প্রভু আমায় নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, ‘তুমি যে রাস্তা দিয়ে যাবে সেই রাস্তা দিয়ে ফিরবে না।’”

18 তখন বৃদ্ধ ভাববাদী বললেন, “আমিও আপনারই মতো একজন ভাববাদী।” উপরন্তু তিনি বানিয়ে বললেন, “প্রভুর কাছ থেকে দূত এসে আমায় আপনাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আপনার পানাহারের ব্যবস্থা করতে বলেছেন।”

19 তখন ঈশ্বর প্রেরিত সেই লোকটি বৃদ্ধ ভাববাদীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে পানাহার করলেন। 20 যখন তাঁরা টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করছেন তখন প্রভু বৃদ্ধ ভাববাদীর সামনে আবির্ভূত হলেন। 21 বৃদ্ধ ভাববাদী যিহূদা থেকে আসা ঈশ্বরের লোকটিকে বললেন, “প্রভু বললেন আপনি প্রভুর নির্দেশ অমান্য করেছেন। 22 আপনাকে প্রভু এখানে কিছু খেতে বা পান করতে বারণ করেছিলেন, কিন্তু আপনি সেই নির্দেশ লঙ্ঘন করে এখানে পানাহার করলেন। শাস্তিস্বরূপ আপনার মৃত্যুর পর আপনার দেহ আপনার বংশের সমাধিস্থলে সমাধিস্থ হতে পারবে না।”

23 ইতিমধ্যে ঈশ্বরের লোকটির পানাহার শেষ হলে বৃদ্ধ ভাববাদী তাঁর জন্য গাধায় লাগাম ও জিন চড়িয়ে দিলেন এবং সেই ব্যক্তি রওনা হল। 24 পথে এক সিংহের আক্রমণে ঈশ্বর প্রেরিত ব্যক্তির মৃত্যু হল। 25 কিছু পথচারী যাবার সময়ে পথে পড়ে থাকা সেই মৃতদেহটি আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাধা ও সিংহটাকে দেখতে পেল। তারা ফিরে এসে শহরে বৃদ্ধ ভাববাদীকে এই খবর দিল।

26 যদিও বৃদ্ধ ভাববাদীর পাল্লায় পড়েই ঈশ্বরের পাঠানো এই ব্যক্তি ফিরে এসে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন, বৃদ্ধ ভাববাদী তারা যা বলল সব শুনলেন এবং বললেন, “প্রভুর আদেশ অমান্য করায় প্রভু সিংহ পাঠিয়ে তাঁর পাঠানো ব্যক্তির জীবন নিলেন। প্রভু বলেছিলেন যে তিনি এরকম করবেন।” 27 এই বলে তিনি তাঁর পুত্রদের গাধায় জিন চাপাতে বলে 28 গাধা নিয়ে বেরিয়ে সেই মৃতদেহের কাছ পৌঁছে দেখতে পেলেন যে গাধা আর সিংহ দুটোই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। সিংহটা সেই দেহে মুখ দেয় নি, এমনকি গাধাটাকেও কিছু করে নি।

29 বৃদ্ধ ভাববাদী শোকপ্রকাশ করবার জন্য ও কবর দেবার জন্য গাধায় চাপিয়ে মৃতদেহটাকে শহরে নিয়ে চললেন। 30-31 তিনি সেই ব্যক্তিকে তাঁর নিজের পরিবারের সমাধিস্থলে কবর দিলেন। তারপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ভাই আমার, তোমার জন্য আমি দু: খিত।” তিনি কবর দেওয়ার পর তাঁর পুত্রদের নির্দেশ দিলেন, “আমি মরলে আমাকেও এই কবরে ওঁর পাশে কবর দিস। আমার হাড় ক’খানাকে ওঁর পাশেই রাখিস। 32 প্রভু ওঁর মুখ দিয়ে যে কথা বলিয়েছেন তা একদিন সত্যিই ঘটবে। বৈথেলের বেদী ও শমরিয়ায় অন্যান্য উচ্চস্থানে পূজা করার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য প্রভু ওঁকে ব্যবহার করেছেন।”

33 রাজা যারবিয়ামের কোনোই পরিবর্তন হল না। সে আগের মতোই পাপ আচরণ করে যেতে লাগল। বিভিন্ন পরিবারগোষ্ঠী থেকে যাজক বেছে নিয়ে তাদের দিয়ে উচ্চস্থানে সেবা করাতে লাগল। যে কেউ ইচ্ছা হলেই যাজক হয়ে যেতে পারত। 34 এই পাপের ফলেই তার সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

লূক 22:1-30

ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যা করতে চাইল

(মথি 26:1-5, 14-16; মার্ক 14:1-2, 10-11; যোহন 11:45-53)

22 সেই সময় খামিরবিহীন রুটির পর্ব এগিয়ে এলো, এই পর্বকে নিস্তারপর্ব বলা হত। এদিকে প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে হত্যা করার উপায় খুঁজতে লাগল, কারণ তারা লোকদের ভয় করত।

যীশুর বিরুদ্ধে যিহূদার ষড়যন্ত্র

(মথি 26:14-16; মার্ক 14:10-11)

এই সময় যিহূদা, যে ছিল বারো জন প্রেরিতের মধ্যে একজন, যাকে যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয় বলা হত, তার অন্তরে শয়তান ঢুকল। যিহূদা কেমন করে যীশুকে ধরিয়ে দেবে সে বিষয়ে পরামর্শ করতে প্রধান যাজকদের ও মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের কাছে গেল। তারা যিহূদার কথা শুনে খুবই খুশী হয়ে তাকে এর জন্য টাকা দিতে রাজী হল। যিহূদাও সম্মত হয়ে যখন লোকের ভীড় থাকবে না সেই সময় যীশুকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।

নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন

(মথি 26:17-25; মার্ক 14:12-21; যোহন 13:21-30)

এরপর খামিরবিহীন রুটির দিন এল, যে দিনে নিস্তারপর্বের মেষ বলি দিতে হত। তাই যীশু পিতর ও যোহনকে বললেন, “যাও, আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত কর, যেন আমরা তা গিয়ে খেতে পারি।”

তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কোথায় চান, আমরা কোথায় তা প্রস্তুত করব?”

10 যীশু তাঁদের বললেন, “শোন! তোমরা শহরে ঢোকার মুখেই দেখতে পাবে একজন লোক এক কলসী জল নিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে পেছনে গিয়ে সে যে বাড়িতে ঢুকবে, 11 সেই বাড়ির মালিককে বলবে, ‘গুরু বলেছেন, আপনার সেই অতিথিঘর কোনটা, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি।’ 12 তখন সেই লোকটি তোমাদের ওপর তলার একটি বড় সাজানো ঘর দেখিয়ে দেবে। তোমরা সেখানেই আয়োজন করো।”

13 যীশু যেমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সেরকমই দেখতে পেলেন আর নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।

প্রভুর ভোজ

(মথি 26:26-30; মার্ক 14:22-26; 1 করিন্থীয় 11:23-25)

14 তারপর সময় হলে যীশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে এলেন। 15 তিনি তাঁদের বললেন, “আমার কষ্টভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে আমি খুবই ইচ্ছা করেছি। 16 কারণ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না ঈশ্বরের রাজ্যে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত আমি এই ভোজ আর খাবো না।”

17 এরপর তিনি দ্রাক্ষারসের পেয়ালা হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “এই নাও, নিজেদের মধ্যে এটা ভাগ করে নাও। 18 কারণ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্য না আসা পর্যন্ত আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না।”

19 এরপর তিনি রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তা খণ্ড খণ্ড করলেন, আর তা প্রেরিতদের দিয়ে বললেন, “এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া হল। আমার স্মরনার্থে তোমরা এটা করো।” 20 খাবার পর সেইভাবে দ্রাক্ষারসের পেয়ালা নিয়ে বললেন, “আমার রক্তের মাধ্যমে মানুষের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া যে নতুন নিয়ম শুরু হল। এই পানপাত্রটি তারই চিহ্ন। এই রক্ত তোমাদের সকলের জন্য পাতিত হল।”

কে যীশুর বিরুদ্ধে যাবে?

21 “কিন্তু দেখ! যে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার সঙ্গে এই টেবিলের ওপরেই আছে। 22 কারণ যেমন নির্ধারিত হয়েছে সেই অনুসারেই মানবপুত্রকে মরতে হবে, কিন্তু ধিক্ সেই লোককে যে তাঁকে ধরিয়ে দেবে।”

23 তাঁরা নিজেদের মধ্যে তখন একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “আমাদের মধ্যে কে এমন লোক হতে পারে, যে এই কাজ করবে?”

দাসের মতো হও

24 সেই সময় তাঁদের মধ্যে কাকে সব থেকে বড় বলা হবে, এই নিয়ে তর্ক শুরু হল। 25 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “অইহুদীদের মধ্যেই রাজারা তাদের প্রজাদের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করে, আর যারা তাদের শাসন করে থাকে তাদেরই আবার ‘উপকারক’ বলা হয়। 26 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমনটি হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে সব থেকে বড় সে হোক্ সবার চেয়ে ছোটর মতো আর যে নেতা সে হোক্ দাসের মতো। 27 কে প্রধান, যে খেতে আসে, না যে পরিবেশন করে? যে খেতে আসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে দাসের মতো আছি।

28 “আমার পরীক্ষার সময় তোমরাই তো আমার পাশে দাঁড়িয়েছ। 29 তাই আমার পিতা যেমন আমার রাজত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন, তেমনি আমিও তোমাদের সেই ক্ষমতা দান করছি। 30 যেন আমার রাজ্যে তোমরা আমার সঙ্গে পান আহার করতে পার, আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International