Old/New Testament
যোনাথন দায়ূদকে সাহায্য করল
19 শৌল তাঁর পুত্র যোনাথনকে এবং আধিকারিকদের দায়ূদকে হত্যা করবার আদেশ দিলেন। কিন্তু যোনাথন দায়ূদকে ভালবাসত। 2-3 যোনাথন দায়ূদকে সাবধান করে বলল, “সাবধান! শৌল তোমাকে মারবার সুযোগ খুঁজছে। সকাল বেলা মাঠে গিয়ে লুকিয়ে থেকো। আমি পিতাকে নিয়ে সেই মাঠে আসব এবং তুমি যেখানে লুকিয়ে থাকবে তার কাছে গিয়ে দাঁড়াব। আমি তোমার ব্যাপারে পিতার সঙ্গে কথা বলব। তারপর আমি কি জানলাম তা তোমাকে জানাব।”
4 পিতার সঙ্গে যোনাথন কথা বলতে লাগল। সে দায়ূদের গুণগান করল। সে পিতাকে বলল, “তুমি হচ্ছ রাজা। দায়ূদ তোমার দাস। সে তোমার কোন ক্ষতি করে নি, সুতরাং তার প্রতি তুমি অন্যায় ব্যবহার করো না। সে তো সর্বদা তোমার ভালই করেছে। 5 পলেষ্টীয়কে হত্যা করতে গিয়ে সে তার জীবন বিপন্ন করেছিল। আর প্রভু ইস্রায়েলীয়দের জন্য মহাবিজয় এনেছিলেন। তুমি স্বচক্ষে এসব দেখেছিলে, তুমি খুশিও হয়েছিলে। তাহলে কেন তুমি দায়ূদকে মারতে চাও? সে নির্দোষ। তাকে মেরে ফেলার কোন কারণই দেখছি না।”
6 শৌল যোনাথনের কথা শুনলেন। শুনে তিনি প্রতিজ্ঞা করে বললেন, “যেমন প্রভুর অস্তিত্ব নিশ্চিত তেমনই নিশ্চিত হও যে দায়ূদকে হত্যা করা হবে না।”
7 যোনাথন দায়ূদকে ডেকে সব বলল। সে দায়ূদকে শৌলের কাছে ডেকে আনল। তাই দায়ূদ আগের মতই শৌলের কাছে থেকে গেলেন।
শৌল আবার দায়ূদকে হত্যা করতে চাইলেন
8 আবার যুদ্ধ শুরু হল। দায়ূদ পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়তে গেলেন। তিনি তাদের হারিয়ে দিলেন। তারা পালিয়ে গেল। 9 কিন্তু প্রভুর কাছ থেকে এক দুষ্ট আত্মা শৌলের উপর এল। তিনি ঘরে বসেছিলেন। তাঁর হাতে ছিল বল্লম। দায়ূদ বীণা বাজাচ্ছিলেন। 10 শৌল বল্লম ছুঁড়ে দায়ূদকে দেওয়ালে গেঁথে দিতে গেলেন, কিন্তু দায়ূদ লাফ দিয়ে সরে গেলেন। বল্লম ফসকে গিয়ে দেওয়ালে বিঁধে গেল। সেই রাত্রে দায়ূদ পালিয়ে গেলেন।
11 দায়ূদের বাড়িতে শৌল লোক পাঠালেন। তারা সারারাত দায়ূদের বাড়ির কাছাকাছি পাহারা দিল। তারা সকালে দায়ূদকে হত্যা করবে বলে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু দায়ূদের স্ত্রী মীখল দায়ূদকে সাবধান করে দিয়েছিল। সে বলল, “আজ রাত্রেই তুমি পালিয়ে গিয়ে নিজেকে বাঁচাও, না হলে ওরা কালই তোমাকে মেরে ফেলবে।” 12 মীখল দায়ূদকে জানালা দিয়ে নীচে নামতে সাহায্য করল। দায়ূদ পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পেলেন। 13 মীখল গৃহদেবতাকে নিয়ে তাকে কাপড় পরাল। তারপর বিছানার ওপর মূর্ত্তিটাকে রাখল। মূর্ত্তির মাথায় কিছু ছাগলের চুলও ছড়িয়ে দিল।
14 শৌল দায়ূদকে ধরে আনার জন্য লোক পাঠালেন। কিন্তু মীখল বলল, “দায়ূদের অসুখ করেছে।”
15 লোকরা শৌলকে একথা বলতে শৌল আবার তাদের দায়ূদকে আনার জন্য পাঠালেন। শৌল তাদের বলে দিলেন, “দায়ূদকে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই নিয়ে আসবে। আমি তাকে হত্যা করব।”
16 আবার তারা দায়ূদের বাড়ি গেল। বাড়ির ভেতর ঢুকে ঘরে গিয়ে দেখল বিছানার ওপর দেবতার মূর্ত্তি, মূর্ত্তির মাথায় ছাগলের চুল।
17 শৌল মীখলকে বললেন, “তুমি কেন আমার সঙ্গে এইভাবে চালাকি করলে? কেন তুমি আমার শত্রুকে পালাতে দিলে? দায়ূদ তো পালিয়ে গেছে!”
মীখল বলল, “দায়ূদ বলেছিলেন, আমি যদি ওকে পালাতে সাহায্য না করি তাহলে তিনি আমাকে হত্যা করবেন।”
দায়ূদ রামায় শিবিরে গেলেন
18 দায়ূদ পালিয়ে গিয়ে রামায় শমূয়েলের কাছে এলেন। শৌল তাঁর প্রতি কি করেছেন সে সব দায়ূদ শমূয়েলকে বললেন। তারপর তাঁরা দুজন তাঁবুগুলোর দিকে গেলেন। সেখানে ভাববাদীরা থাকত। সেখানেই দায়ূদ থেকে গেলেন।
19 শৌল জেনেছিলেন দায়ূদ রামার কাছাকাছি তাঁবুগুলোর মধ্যেই আছেন। 20 শৌল দায়ূদকে বন্দী করে আনার জন্য লোক পাঠালেন। কিন্তু তারা যখন সেখানে এলো, তখন একদল ভাববাদী ভাববাণী করছিল। তাদের নেতা শমূয়েল সেখানে দাঁড়িয়ে। শৌলের লোকদের ওপরও ঈশ্বরের আত্মা এলেন, তাই তারাও ভাববাণী করতে শুরু করল।
21 শৌলের কানে এ খবর পৌঁছল। তিনি তখন অন্য একদল লোক পাঠালেন। তারাও সেখানে গিয়ে ভাববাণী করতে শুরু করল। তারপর শৌল তৃতীয় একদল প্রতিনিধি পাঠালেন। তারাও ভাববাণী করতে শুরু করল। 22 অবশেষে শৌল নিজেই রামায় গেলেন। যেখানে ফসল ঝাড়াই হয় তার পাশে একটি বড় কুয়োর দিকে শৌল চলে এলেন। কুয়োটা ছিল সেখু নামে একটা জায়গায়। শৌল সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “শমূয়েল আর দায়ূদ কোথায়?”
লোকরা বলল, “তারা রামার কাছে তাঁবুগুলোতে রয়েছে।”
23 শৌল তখন রামার কাছে তাঁবুগুলোর দিকে গেলেন। এবার শৌলের উপরও ঈশ্বরের আত্মা নেমে এলো। শৌল ভাববাণী করতে শুরু করলেন। রামার তাঁবুগুলোর দিকে রাস্তায় যতই এগোলেন ততই তিনি আরো বেশী করে ভাববাণী করতে লাগলেন। 24 তারপর শৌল তাঁর পোশাক খুলে ফেললেন এবং শমূয়েলের সামনেই ভাববাণী করতে লাগলেন। সমস্ত দিন সমস্ত রাত তিনি নগ্ন হয়ে পড়ে রইলেন।
সেই জন্য লোকে বলে, “শৌল কি তবে ভাববাদীদের মধ্যে একজন?”
দায়ূদ ও যোনাথন একটি চুক্তি করলেন
20 রামার তাঁবুগুলো থেকে দায়ূদ পালিয়ে গেলেন। যোনাথনের কাছে গিয়ে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি অন্যায় করেছি? কি আমার অপরাধ? কেন তোমার পিতা আমায় হত্যা করতে চাইছে?”
2 যোনাথন বলল, “এ হতেই পারে না। আমার পিতা তোমাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে না। আমাকে কিছু না বলে সে কোন কাজই করে না। সে কাজ যতই সামান্য হোক্, কি জরুরীই হোক্, আমাকে সে সবই বলে। তাহলে তোমাকে মারার কথাই বা আমাকে সে বলবে না কেন? না, তোমার কথা ঠিক নয়।”
3 কিন্তু দায়ূদ বললেন, “তোমার পিতা ভালভাবেই জানে যে আমি তোমার বন্ধু। তোমার পিতা মনে মনে ভেবেছে, যোনাথন যেন আমার মতলব জানতে না পারে। যদি সে এর সম্পর্কে জানতে পারে, তার হৃদয় দুঃখে ভরে যাবে এবং সে দায়ূদকে জানিয়ে দেবে। কিন্তু তুমি এবং প্রভু যেমন নিশ্চিতভাবে জীবিত সেই রকম নিশ্চিতভাবেই আমার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে।”
4 যোনাথন বলল, “তুমি যা বলবে আমি তাই করব।”
5 দায়ূদ বললেন, “শোন, কাল অমাবস্যার উৎসব। আমার রাজার সঙ্গে খাবার কথা আছে। কিন্তু সন্ধ্যে অবধি আমায় মাঠে লুকিয়ে থাকতে হবে। 6 যদি তোমার পিতার চোখে পড়ে যে আমি নেই তবে তাঁকে বোলো, ‘দায়ূদ বৈৎলেহমে বাড়িতে যেতে চাইছিল, কারণ এই উপলক্ষ্যে ওর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া আছে। সে আমার কাছে বৈৎলেহমে তার পরিবারের কাছে যাবার অনুমতি চেয়েছিল।’ 7 যদি তোমার পিতা বলেন, ‘ভালই তো’ তবেই বুঝব আমার বিপদ কেটে গেছে। আর যদি রেগে যান তাহলে জেনে রেখো তিনি আমায় মারবেনই। 8 যোনাথন আমায় দয়া করো। আমি তোমার ভৃত্য। প্রভুর সামনে তুমি আমার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলে। যদি আমি দোষী হই, তুমি তোমার নিজের হাতে আমাকে হত্যা কোরো, কিন্তু তোমার পিতার কাছে আমাকে নিয়ে যেও না।”
9 যোনাথন বলল, “না না, এ হতেই পারে না। যদি পিতার তোমাকে মারার মতলব আমি জানতে পারি তাহলে তোমায় সাবধান করে দেব।”
10 দায়ূদ বললেন, “তোমার পিতা যদি তোমাকে কর্কশভাবে উত্তর দেন তাহলে কে আমায় সাবধান করবে?”
11 যোনাথন বলল, “চলো, মাঠে যাওয়া যাক।” যোনাথন আর দায়ূদ মাঠে গেল।
12 যোনাথন দায়ূদকে বলল, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর, প্রভুর সামনে আমি দিব্য দিয়ে বলছি, পিতা তোমাকে নিয়ে কিভাবেন সব আমি জেনে নেব; তোমার ভাল চাইলেও জানতে পারব, মন্দ চাইলেও জানতে পারব। তারপর তিন দিনের মধ্যে তোমার কাছে মাঠে খবর পাঠাব। 13 পিতা তোমাকে মারতে চাইলে তোমায় জানাব। তুমি তখন বিনা বাধায় পালাতে পারবে। আমার কথা রাখতে না পারলে প্রভু আমায় শাস্তি দেবেন। প্রভু তোমার সহায় হোন, যেমন তিনি আমার পিতার সহায়। 14-15 যতদিন বেঁচে থাকবে আমার প্রতি দয়াশীল থেকো। আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারকে তোমার দয়া দেখাতে ভুলো না। প্রভু তোমার সমস্ত শত্রুকে পৃথিবী থেকে উচ্ছিন্ন করবেন।” 16 তখন যোনাথন দায়ূদের পরিবারের সঙ্গে এই মর্মে এক চুক্তি করল: দায়ূদের শত্রুদের প্রভু যেন শাস্তি দেন।
17 এই বলে যোনাথন দায়ূদের কাছ থেকে আবার শুনতে চাইল ভালবাসার সেই অঙ্গীকার। যোনাথন দায়ূদকে ভালবাসে, যেমন সে নিজেকে ভালবাসে।
18 যোনাথন দায়ূদকে বলল, “কাল অমাবস্যার উৎসব। তোমার আসন ফাঁকা থাকবে। তাহলেই আমার পিতা বুঝবে যে তুমি চলে গেছ। 19 তৃতীয় দিনে ঐ একই জায়গায় তুমি লুকিয়ে থাকবে। সেদিন ঝামেলা হতে পারে। পাহাড়ের ধারে অপেক্ষা করবে। 20 ঐ দিন আমি পাহাড়ে উঠবো। দেখাব যে আমি তীর ছুঁড়ে লক্ষ্যভেদ করছি। আমি কয়েকটি তীর ছুঁড়বো। 21 তারপর ঠিকঠাক চললে আমি ওকে বলব, ‘তুই বহু দূরে চলে গেছিস, তীরগুলো তো আমার অনেক কাছেই রয়েছে। যা আবার ফিরে এসে ওগুলো নিয়ে আয়।’ যদি তা বলি তবে তুমি আর লুকিয়ে থেকো না। প্রভুর দিব্য সেক্ষেত্রে তোমার কোন বিপদ হবে না। 22 কিন্তু বিপদ যদি থাকে তাহলে ছেলেটিকে বলবো, ‘তীরগুলো আরো দূরে পড়ে আছে। যা ওগুলো নিয়ে আয়।’ তখন তুমি অবশ্যই চলে যাবে। কারণ প্রভুই তোমাকে দূরে পাঠাচ্ছেন। 23 তোমার ও আমার মধ্যে এই চুক্তি হল, তা মনে রেখো। প্রভু চিরজীবন আমাদের মধ্যে সাক্ষী রইলেন।”
24 দায়ূদ মাঠে লুকিয়ে পড়লেন।
উৎসবে শৌলের মনোভাব
অমাবস্যার উৎসবের দিন এলে রাজা খেতে বসলেন। 25 দেওয়ালের পাশেই সচরাচর যে আসনেতে বসতেন রাজা সেই আসনেই বসলেন। যোনাথন শৌলের মুখোমুখি বসেছিল। শৌলের পাশে বসেছিল অব্নের। কিন্তু দায়ূদের জায়গাটা খালি ছিল। 26 সেদিন শৌল কিছুই বললেন না। ভাবলেন, “নিশ্চয়ই দায়ূদের কিছু হয়েছে। তাই সে শুচি হতে পারে নি।”
27 পরদিন মাসের দোসরা। সেদিনও আবার দায়ূদের জায়গা খালি রইল। শৌল তাঁর পুত্র যোনাথনকে বললেন, “যিশয়ের পুত্রকে কাল দেখি নি, আজও দেখছি না কেন? অমাবস্যার উৎসবে সে আসছে না কেন?”
28 যোনাথন বলল, “দায়ূদ আমাকে বলেছিল ও বৈৎলেহমে যাবে। 29 সে বলেছিল, ‘আমি যাব, তুমি অনুমতি দাও। বৈৎলেহেমে আমার বাড়ির সকলে যজ্ঞে বলি দেবে। আমার ভাই যেতে বলেছে। আমি যদি তোমার বন্ধু হই তাহলে আমাকে তুমি যেতে দাও, ভাইদের সঙ্গে দেখা হবে।’ তাই ও রাজার টেবিলে খেতে আসে নি।”
30 শৌল যোনাথনের উপর খুব রেগে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, “নির্বোধ, হতভাগা ক্রীতদাসীর পুত্র। আমি জানি তুমি দায়ূদের পক্ষে। তুমি, তোমার নিজের কলঙ্ক, তোমার মায়েরও কলঙ্ক। 31 যতদিন যিশয়ের পুত্র বেঁচে থাকবে, ততদিন তুমি না হবে রাজা, না পাবে রাজ্য। যাও, এক্ষুনি দায়ূদকে ধরে নিয়ে এসো কারণ সে মৃত্যুর সন্তান।”
32 যোনাথন বলল, “কেন দায়ূদকে মারতে হবে? সে কি করেছে?”
33 এই কথা শুনে শৌল যোনাথনের দিকে বল্লমটা ছুঁড়ে মারলেন। উদ্দেশ্য তাকেই মেরে ফেলা। এই থেকে যোনাথন বুঝতে পারল, তার পিতা দায়ূদকে সত্যি মেরে ফেলতে চান। 34 যোনাথন রেগে গেল। সে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল। পিতার ব্যাপারে সে এত মুষড়ে পড়ল আর এত রেগে গেল যে দ্বিতীয় দিনের ভোজ সভায় সে কিছু খেল না। তার রাগের কারণ, পিতা তাকে অপমান করেছিল এবং দায়ূদকে হত্যা করতে চায়।
দায়ূদ ও যোনাথন পরস্পরকে বিদায় জানাল
35 পরদিন সকালে দায়ূদের সঙ্গে যেমন ব্যবস্থা হয়েছিল সেভাবে যোনাথন মাঠে গেল। যোনাথন, একটা বালককে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। 36 সে বালকটিকে বলল, “যা, যে তীরগুলো আমি ছুঁড়ছি সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আয়।” বালকটি ছুটতে লাগল, আর যোনাথন তার মাথার উপর দিয়ে তীর ছুঁড়ল। 37 তীরগুলো যেখানে পড়েছে সে দিকে বালকটি ছুটে গেল। কিন্তু যোনাথন বলল, “তীর তো আরও দূরে।” 38 যোনাথন চেঁচিয়ে বলল, “তাড়াতাড়ি কর। তীরগুলো নিয়ে আয়। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকিস না।” বালকটি তীরগুলো কুড়িয়ে মনিবের কাছে এনে দিল। 39 কি হচ্ছে তার সে কিছুই বুঝল না। জানত শুধু যোনাথন আর দায়ূদ। 40 যোনাথন তীরধনুক বালকটির হাতে দিল। তারপর ওকে বলল, “যা! শহরে ফিরে যা।”
41 বালকটি চলে গেলে দায়ূদ পাহাড়ের ওপাশে লুকোনো জায়গা থেকে বেরিয়ে এলো। যোনাথনের কাছে এসে দায়ূদ মাটিতে মাথা নোয়ালেন। এরকম তিনবার তিনি মাথা নোয়ালেন। তারপর দুজন দুজনকে চুম্বন করল। দুজনেই খুব কান্নাকাটি করল। তবে দায়ূদই কাঁদলেন বেশী।
42 যোনাথন দায়ূদকে বলল, “যাও শান্তিতে যাও। প্রভুর নাম নিয়ে আমরা বন্ধু হয়েছিলাম। বলেছিলাম, তিনিই হবেন আমাদের দুজন ও পরবর্তী উত্তরপুরুষদের মধ্যে বন্ধুদের চিরকালের সাক্ষী।”
যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দায়ূদ দেখা করতে গেলেন
21 দায়ূদ চলে গেলেন। যোনাথন শহরে ফিরে এলো। দায়ূদ নোব শহরে যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
অহীমেলক দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে এলেন। তিনি তো ভয়ে কাঁপছিলেন। তিনি দায়ূদকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার, তুমি একা কেন? তোমার সঙ্গে কাউকে দেখছি না কেন?”
2 দায়ূদ বললেন, “রাজা আমাকে একটি বিশেষ আদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘এই আসার উদ্দেশ্য নিয়ে তুমি কাউকে কিছু জানাবে না। আমি তোমাকে কি বলছি কেউ যেন জানতে না পারে।’ আমার লোকদের বলছি কোথায় ওরা আমার সঙ্গে দেখা করবে। 3 এখন বলো, তোমার সঙ্গে কি খাবার আছে? তোমার কাছে থাকলে পাঁচটি গোটা রুটি আমাকে দাও, না হলে অন্য কিছু খেতে দাও।”
4 যাজক বললেন, “আমার কাছে তো সাধারণ কোন রুটি নেই, কিন্তু পবিত্র রুটি আছে। তোমার লোকরা তা খেতে পারে, অবশ্য যদি কোন নারীর সঙ্গে তাদের যৌন সম্পর্ক না থেকে থাকে।”
5 দায়ূদ যাজককে বললেন, “না, এরকম কোন ব্যাপার নেই। যুদ্ধে যাবার সময় এবং সাধারণ কাজের সময়ও তারা তাদের দেহগুলিকে শুদ্ধ রাখে। তাছাড়া এখন আমরা একটি বিশেষ কাজে এসেছি, সুতরাং অশুদ্ধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।”
6 পবিত্র রুটি ছাড়া সেখানে অন্য কোন রুটি ছিল না। যাজক দায়ূদকে তা-ই দিলেন। এই রুটিই তারা প্রভুর সামনে পবিত্র টেবিলে রেখে দিত। প্রতিদিন তারা এগুলো বদলে টাটকা রুটি রেখে দিত।
7 সেদিন সেখানে শৌলের একজন অনুচর উপস্থিত ছিল। সে ছিল ইদোম বংশীয়, তার নাম দোয়েগ। সে ছিল শৌলের প্রধান মেষপালক। দোয়েগকে সেখানে প্রভুর সামনে রাখা হয়েছিল।
8 দায়ূদ অহীমেলককে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাছে কি বল্লম বা তরবারি কিছু একটা আছে? রাজার কাজটা জরুরি তাই তাড়াতাড়িতে আমি সঙ্গে কোনো তরবারি বা অস্ত্রশস্ত্র আনি নি।”
9 যাজক বললেন, “এখানে তো মাত্র একটাই তরবারি আছে, সেটা পলেষ্টীয় গলিয়াতের তরবারি। তুমি এলা উপত্যকায় তাকে হত্যা করার সময় ওর হাত থেকেই এটা কেড়ে নিয়েছিলে। ওটা কাপড়ে মুড়ে এফোদের পেছনে রাখা আছে। ইচ্ছা হলে এটা তুমি নিয়ে যেতে পারো।”
দায়ূদ বললেন, “ওটাই তুমি আমাকে দাও। গলিয়াতের তরবারির মতো তরবারি আর কোথাও পাওয়া যাবে না।”
দায়ূদ এক শত্রুর কাছ থেকে পালিয়ে গাতে গেলেন
10 সেদিন শৌলের কাছ থেকে দায়ূদ পালিয়ে গেলেন। তিনি গাতের রাজা আখীশের কাছে গেলেন। 11 আখীশের অনুচররা এটা ভাল মনে করলো না। তারা বলল, “ইনি হচ্ছেন দায়ূদ, ইস্রায়েলের রাজা। এঁকে নিয়েই ওদের লোকেরা গান গায়। ওরা নেচে নেচে এই গানটা করে:
“দায়ূদ মেরেছে শত্রু অযুতে অযুতে
শৌল তো কেবল হাজারে হাজারে।”
12 তাদের কথাগুলো দায়ূদ বেশ মন দিয়ে শুনলেন। গাতের রাজা আখীশকে তিনি ভয় করতে লাগলেন। 13 শেষে আখীশ ও তার অনুচরদের সামনে দায়ূদ পাগলের ভান করলেন। ওদের কাছে তিনি ইচ্ছে করে পাগলামি করতে লাগলেন। তিনি দরজায় থুতু ছিটাতে লাগলেন। তাঁর দাড়ি দিয়ে থুতু গড়াতে দিলেন।
14 আখীশ তার অনুচরদের বলল, “আরে লোকটাকে দেখো, সত্যি মাথা খারাপ। একে আমার কাছে এনেছ কেন? 15 আমার আশপাশে যথেষ্ট পাগল রয়েছে। আমার কাছে ঐ জাতীয় লোক আর বেশী আনার দরকার নেই। এটাকে আবার আমার বাড়িতে ঢুকিও না।”
চিহ্নের অন্বেষণ
(মথি 12:38-42; মার্ক 8:12)
29 এরপর যখন ভীড় বাড়তে লাগল, তখন যীশু বললেন, “এ যুগের লোকেরা খুবই দুষ্ট, তারা কেবল অলৌকিক চিহ্নের খোঁজ করে। কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া তাদের আর কোন চিহ্ন দেখানো হবে না। 30 যোনা যেমন নীনবীয় লোকদের কাছে চিহ্নস্বরূপ হয়েছিলেন, তেমনি এই যুগের লোকদের কাছে মানবপুত্র হবেন।
31 “দক্ষিণ দেশের রাণী[a] বিচার দিনে উঠে এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন ও তাদের দোষী সাব্যস্ত করবেন। কারণ শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর শলোমন এর থেকে মহান একজন এখন এখানে আছেন।
32 “বিচার দিনে নীনবীয় লোকেরা এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে, তারা এদের ওপর দোষারোপ করবে, কারণ তারা যোনার প্রচার শুনে অনুশোচনা করেছিল, আর এখন যোনার থেকে মহান একজন এখানে আছেন।
জগতের আলোস্বরূপ হও
(মথি 5:15; 6:22-23)
33 “প্রদীপ জ্বেলে কেউ আড়ালে রাখে না বা ধামা চাপা দিয়ে রাখে না বরং তা বাতিদানের ওপরেই রাখে, যেন যারা ঘরে আসে, তারা আলো দেখতে পায়। 34 তোমার চোখ যদি সুস্থ থাকে, তবে তোমার সমস্ত দেহটি দীপ্তিময় হবে; কিন্তু তা যদি মন্দ হয় তবে তোমার দেহ অন্ধকারময় হবে। 35 তাই সাবধান, তোমার মধ্যে যে আলো আছে তা যেন অন্ধকার না হয়। 36 তোমার সারা দেহ যদি আলোকময় হয়, তার মধ্যে যদি এতটুকু অন্ধকার না থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ আলোকিত হবে, ঠিক যেমন বাতির আলো তোমার ওপর পড়ে তোমায় আলোকিত করে তোলে।”
যীশু ফরীশীদের সমালোচনা করলেন
(মথি 23:1-36; মার্ক 12:38-40; লূক 20:45-47)
37 যীশু এই কথা শেষ করলে একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে খাবার আসনে বসলেন। 38 কিন্তু সেই ফরীশী দেখল যে খাওয়ার আগে প্রথা মতো যীশু হাত ধুলেন না। 39 প্রভু তাকে বললেন, “তোমরা ফরীশীরা থালা বাটির বাইরেটা পরিষ্কার কর, কিন্তু ভেতরে তোমরা দুষ্টতা ও লোভে ভরা। 40 তোমরা মূর্খের দল! তোমরা কি জান না যিনি বাইরেটা করেছেন তিনি ভেতরটাও করেছেন? 41 তাই তোমাদের থালা বাটির ভেতরে যা কিছু আছে তা দরিদ্রদের বিলিয়ে দাও, তাহলে সবকিছুই তোমাদের কাছে সম্পূর্ণ শুচি হয়ে যাবে।
42 “কিন্তু হায়, ফরীশীরা ধিক্ তোমাদের কারণ তোমরা পুদিনা, ধনে ও বাগানের অন্যান্য শাকের দশমাংশ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে থাক, কিন্তু ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের বিষয়টি অবহেলা কর। কিন্তু প্রথম বিষয়গুলির সঙ্গে সঙ্গে শেষেরগুলিও তোমাদের জীবনে পালন করা কর্তব্য।
43 “ধিক্ ফরীশীরা! তোমরা সমাজ-গৃহে সম্মানিত আসন আর হাটে বাজারে সকলের সশ্রদ্ধ অভিবাদন পেতে কত না ভালবাস। 44 ধিক্ তোমাদের! তোমরা মাঠের মাঝে মিশে থাকা কবরের মতো, লোকেরা না জেনে যার ওপর দিয়ে হেঁটে যায়।”
45 একজন ব্যবস্থার শিক্ষক এর উত্তরে যীশুকে বললেন, “গুরু, আপনি এসব যা বললেন, তার দ্বারা আমাদেরও অপমান করলেন।”
46 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে ব্যবস্থার শিক্ষকরা, ধিক্ তোমাদের, তোমরা লোকদের ওপর এমন ভারী বোঝা চাপিয়ে দাও যা তাদের পক্ষে গ্রহণ করা অসম্ভব; আর তোমরা নিজেরা সেই ভার বইবার জন্য সাহায্য করতে তাতে একটা আঙুল পর্যন্ত ছোঁয়াও না। 47 ধিক্ তোমাদের, কারণ তোমরা ভাববাদীদের সমাধিগুহা গেঁথে থাকো; আর এইসব ভাববাদীদের তোমাদের পূর্বপুরুষরাই হত্যা করেছিল। 48 তাই এই কাজ করে তোমরা এই সাক্ষ্যই দিচ্ছ যে তোমাদের পূর্বপুরুষরা যে কাজ করেছিল তা তোমরা ঠিক বলে মেনে নিচ্ছ। কারণ তারা ওদের হত্যা করেছিল আর তোমরা ওদের সমাধি গুহা রচনা করছ। 49 এই কারণেই ঈশ্বরের প্রজ্ঞা বলছে, ‘আমি তাদের কাছে যে ভাববাদী ও প্রেরিতদের পাঠাবো, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে তারা হত্যা করবে, কাউকে বা নির্যাতন করবে।’
50 “সেই জন্যই জগৎ সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত ভাববাদী হত্যা করা হয়েছে, তাদের সকলের হত্যার জন্য এই কালের লোকদের শাস্তি পেতে হবে। 51 হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, হেবলের রক্তপাত থেকে আরম্ভ করে যে সখরিয়কে যজ্ঞবেদী ও মন্দিরের মধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করা হয়েছিল, সেই সখরিয়ের হত্যা পর্যন্ত সমস্ত রক্তপাতের দায়ে দায়ী হবে একালের লোকেরা।
52 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষকরা কারণ তোমরা জ্ঞানের চাবিটি ধরে আছ। তোমরা নিজেরাও প্রবেশ করনি আর যারা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে তাদেরও বাধা দিচ্ছ।”
53 তিনি যখন সেই জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন, তখন ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর বিরুদ্ধে ভীষণভাবে শত্রুতা করতে আরম্ভ করল এবং পরে তাঁকে নানাভাবে প্রশ্ন করতে থাকল। 54 তারা সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল যেন যীশু ভুল কিছু করলে তাই দিয়ে তাঁকে ধরতে পারে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International