Old/New Testament
গলিয়াৎ ইস্রায়েলকে যুদ্ধে আহ্বান করল
17 পলেষ্টীয়রা যুদ্ধের জন্যে সৈন্য জড়ো করতে লাগল। যিহূদার সোখোতে তারা জড়ো হল। সোখোর আর অসেকার মাঝখানে তাদের তাঁবু পড়লো। জায়গাটা ছিল এফস্দম্মীম নামে একটা শহরে।
2 শৌল এবং ইস্রায়েলের সৈন্যরা একত্র হল। এলা উপত্যকায় তাদের তাঁবু পড়ল। শৌলের সৈন্যরা পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধের জন্যে তৈরী হল। 3 পলেষ্টীয়রা একটা পাহাড়ে, ইস্রায়েলীয়রা আর একটাতে। উপত্যকাটা এই দুটো পাহাড়ের মাঝখানে।
4 পলেষ্টীয়দের মধ্যে একজন বিজয়ী যোদ্ধা ছিল। তার নাম গলিয়াৎ। সে গাৎ থেকে এসেছিল। তার দেহ বিশাল লম্বা ছিল। 9 ফুটেরও বেশী। পলেষ্টীয় শিবির থেকে সে বেরিয়ে এলো। 5 তার মাথায় পিতলের শিরস্ত্রাণ। গায়ে মাছের আঁশের মতো দেখতে একটা বর্ম, সেটা ছিল পিতলের তৈরী, ওজন প্রায় 125 পাউণ্ড। 6 গলিয়াতের পায়েও ছিল পিতলের বর্ম। তার পিঠে ছিল পিতলের বর্শা। 7 তার বর্শার কাঠের দণ্ডটা ছিল তাঁতির লাঠির মতো লম্বা। বর্শার ফলকের ওজন 15 পাউণ্ড। গলিয়াতের ঢাল নিয়ে তার সহকারী আগে আগে হাঁটত।
8 প্রত্যেকদিন গলিয়াৎ বেরিয়ে এসে ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের দিকে যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে বলত, “কেন তোমরা যুদ্ধের জন্য সারবন্দি দাঁড়িয়ে? তোমরা শৌলের ভৃত্য। আমি একজন পলেষ্টীয়। একজনকে তোমরা বেছে নাও, তাকে আমার সঙ্গে লড়বার জন্য পাঠিয়ে দাও। 9 যদি সে আমাকে হত্যা করে তাহলে আমরা পলেষ্টীয়রা সকলেই তোমাদের ক্রীতদাস হব। কিন্তু আমি যদি তাকে হত্যা করি, তাহলে তোমাদের সবাইকে আমাদের ক্রীতদাস হতে হবে এবং আমাদের সেবা করতে হবে।”
10 পলেষ্টীয়রা আরো বলল, “এই আমি এখানে দাঁড়িয়ে ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করছি। সাহস থাকে তো একজনকে পাঠিয়ে দাও। আমার সঙ্গে হয়ে যাক এক হাত লড়াই।”
11 শৌল এবং ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা গলিয়াতের এইসব আস্ফালন শুনে বেশ ভয় পেয়ে গেল।
দায়ূদ যুদ্ধ ক্ষেত্রে গেলেন
12 দায়ূদ ছিলেন যিশয়ের পুত্র। যিশয় যিহূদার বৈৎলেহমে ইফ্রাথা বংশের লোক। তার আট জন পুত্র ছিল। শৌলের আমলে যিশয় বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। 13 যিশয়ের প্রথম তিনটি পুত্র শৌলের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিল। প্রথম পুত্রের নাম ইলীয়াব। দ্বিতীয় জনের নাম অমীনাদব, তৃতীয় জনের নাম শম্ম। 14 সবচেয়ে যে ছোট তার নাম দায়ূদ। ওঁর তিন দাদা শৌলের সৈন্যদলে যোগ দিয়েছিল। 15 কিন্তু দায়ূদ মাঝে মধ্যেই শৌলকে ছেড়ে বৈৎলেহমে তাঁর পিতার কাছে চলে যেতেন। সেখানে তিনি মেষগুলোর দেখাশুনা করতেন।
16 সেই পলেষ্টীয় (গলিয়াৎ) প্রতিদিন সকালে আর সন্ধ্যায় বেরিয়ে এসে ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মস্করা করত। এইভাবে 40 দিন কেটে গেল।
17 একদিন যিশয় তাঁর পুত্র দায়ূদকে বললেন, “এক ঝুড়ি ভাজা শস্য আর দশটা গোটা পাঁউরুটি নিয়ে শিবিরে তোমার দাদাদের কাছে যাও। 18 তাছাড়া দশ টুকরো পনিরও নিয়ে যেও। তোমাদের দাদারা যার অধীনে যুদ্ধ করছে সেই সেনাপতিকে এটা দেবে। সে 1000 জন সৈন্যের সেনাপতি। তোমার ভাইদের কুশল সংবাদ নাও। ওরা যে ভাল আছে সে রকম কিছু চিহ্ন নিয়ে এসো। 19 তোমার ভাইরা এলা উপত্যকায় শৌল আর ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের সঙ্গে রয়েছে। তারা সেখানে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রয়েছে।”
20 যিশয়ের কথা মতো ভোরবেলায় দায়ূদ একজন রাখালের ওপর মেষগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে খাবার দাবার নিয়ে চলে গেলেন। দায়ূদ শিবিরে ঠেলাগাড়ী চালিয়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি দেখলেন সৈন্যরা যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে। ওরা সিংহনাদ দিতে থাকল। 21 ইস্রায়েলীয়রা ও পলেষ্টীয়রা সারিবদ্ধ হয়েছিল এবং যুদ্ধের জন্য তৈরী হয়েছিল।
22 যে খাবার-দাবার যোগান দেয় তার কাছে সব কিছু রেখে দিয়ে দায়ূদ বেরিয়ে পড়লেন। যেদিকে ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা দাঁড়িয়েছিল, সেদিকে তিনি দ্রুত চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দাদাদের খোঁজ খবর নিলেন। 23 তারপর ওদের সঙ্গে দেখা করে দায়ূদ কথা বলতে লাগলেন। তারপর গাতের সেরা যোদ্ধা গলিয়াৎ তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলো এবং যথারীতি ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে গর্জাতে লাগল। তার কথাগুলো দায়ূদ সবই শুনলেন।
24 গলিয়াতকে দেখে ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। 25 একজন ইস্রায়েলীয় বলল, “লোকটাকে দেখেছ? একবার ওর দিকে দেখ। গলিয়াৎ বারবার বেরিয়ে আসছিল এবং ইস্রায়েলকে নিয়ে মজা করছিল। যে ওকে মেরে ফেলবে তাকে রাজা শৌল প্রচুর টাকা পয়সা দেবে। গলিয়াতকে যে হত্যা করবে, তার সঙ্গে শৌল তার কন্যার বিয়ে দেবে। শুধু তাই নয়, শৌল তার পরিবারকে ইস্রায়েলে স্বাধীন[a] হয়ে থাকতে দেবে।”
26 কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “ও কি বলছে? পলেষ্টীয়কে হত্যা করলে, এবং ইস্রায়েলীয়দের লজ্জা মুছে দিতে পারলে কি পুরস্কার দেওয়া হবে? গলিয়াৎ লোকটা কে? সে তো একজন বিদেশী ছাড়া কেউ নয়। সে একজন পলেষ্টীয় এই যা। সে কি করে ভাবতে পারল যে জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যদের বিরুদ্ধে গালমন্দ করতে পারে?”
27 একথা শুনে ইস্রায়েলীয়রা গলিয়াতকে মারলে কি পুরস্কার পাওয়া যাবে সেসব দায়ূদকে জানাল। 28 দায়ূদের বড়দা ইলীয়াব যখন শুনলো দায়ূদ সৈন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে, তখন সে রেগে গেল। সে দায়ূদকে বলল, “তুমি এখানে কেন? কার হাতে তুমি মরুভূমি অঞ্চলে মেষগুলোর দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে এলে? কেন এখানে এসেছ সেকি আমি জানি না ভেবেছ? তোমাকে যা বলা হয়েছিল সেগুলো তুমি করতে চাও না। তুমি শুধু যুদ্ধ দেখবার জন্যই এখানে আসতে চেয়েছ।”
29 দায়ূদ বললেন, “আমি কি করেছি? আমি তো কোন অন্যায় করি নি, শুধু কথা বলছিলাম মাত্র।” 30 এই কথা বলে দায়ূদ অন্যান্য লোকের দিকে ফিরে সেই একই কথা জিজ্ঞেস করলেন। তারা তাঁকে আগের মত ঐ একই উত্তর দিল।
31 কয়েক জন লোক দায়ূদকে কথা বলতে দেখল। তারা দায়ূদকে শৌলের কাছে নিয়ে গেলো। শৌলকে তারা বলল, দায়ূদ কি বলেছিল। 32 দায়ূদ শৌলকে বললেন, “লোকরা যেন গলিয়াতকে নিরুৎসাহিত করে না দেয়। আমি তোমার ভৃত্য। আমি এই পলেষ্টীয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই।”
33 শৌল বললেন, “তুমি তা করতে পারো না। তুমি তো একজন সৈনিকও নও।[b] আর গলিয়াৎ তো ছোটবেলা থেকেই যুদ্ধ করছে।”
34 তখন দায়ূদ শৌলকে বললেন, “আমি তোমার ভৃত্য, পিতার মেষগুলোর দেখাশুনা করছিলাম। একটা সিংহ আর একটা ভাল্লুক পাল থেকে একটা মেষ নিয়ে গেল। 35 আমি ঐ জন্তুটার পেছনে ধাওয়া করে ওটার মুখ থেকে মেষটাকে টেনে বার করে নিয়ে এলাম। জন্তুটা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তখন আমি ওর দাড়ি ধরে টেনে জোরে এমন আঘাত করলাম যে সেটা মরে গেল। 36 একটা সিংহ আর একটা ভাল্লুককে আমি শেষ করে দিয়েছি। এরপর আমি এই বিদেশী গলিয়াতকে ওদের মতোই হত্যা করব। গলিয়াৎ মরবেই কারণ সে জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছে। 37 প্রভু আমাকে সিংহ আর ভাল্লুকের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। এই পলেষ্টীয়দের হাত থেকে তিনি আমায় রক্ষা করবেন।”
শৌল দায়ূদকে বললেন, “তবে যাও। প্রভু তোমার সহায় হোন।” 38 এই বলে শৌল তাঁর পোশাক দায়ূদকে পরিয়ে দিলেন। ওর মাথায় চড়িয়ে দিলেন পিতলের শিরস্ত্রাণ আর দেহে দিলেন পিতলের বর্ম। 39 দায়ূদ কোমরে তরবারি নিলেন। একটু ঘুরে ফিরে বেড়িয়ে দেখলেন সব ঠিক আছে কি না। তিনি শৌলের পোশাকটা পরার চেষ্টা করলেন কিন্তু তিনি এমন ভারী জিনিস পরতে অভ্যস্ত ছিলেন না।
তাই তিনি শৌলকে বললেন, “আমি এইসব জিনিস নিয়ে লড়াই করতে পারব না। আমি ওগুলোতে অভ্যস্ত নই।” তারপর তিনি ওগুলো সব খুলে ফেললেন। 40 তারপর তিনি তাঁর বেড়ানোর ছড়িটা হাতে নিয়ে নদীর ধারে গিয়ে পাঁচটা নিটোল নুড়ি পাথর তুলে নিলেন। সেগুলো তিনি মেষপালকের থলেতে রাখলেন। হাতে গুলতি নিয়ে গেলেন গলিয়াতের মুখোমুখি হতে।
দায়ূদ গলিয়াতকে হত্যা করলেন
41 পলেষ্টীয় ধীরে ধীরে দায়ূদের দিকে এগিয়ে এলো। গলিয়াতের অস্ত্রবাহক ঢাল নিয়ে ওর আগে-আগে চললো। 42 দায়ূদকে দেখে গলিয়াৎ হাসলো। সে দেখল দায়ূদ ঠিক সৈন্য নয়, কিন্তু লাল মুখো একজন সুদর্শন বালক। 43 গলিয়াৎ দায়ূদকে জিজ্ঞাসা করল, “এই লাঠিটা কিসের জন্য? তুমি কি এটা দিয়ে কুকুরের মতো আমায় তাড়াবে?” এই বলে সে তার দেবতাদের নাম নিয়ে দায়ূদকে গালমন্দ করতে লাগল। 44 গলিয়াৎ বলল, “আয় তোর দেহটাকে নিয়ে পাখি আর জানোয়ারদের খাওয়াই।”
45 দায়ূদ পলেষ্টীয়কে বললেন, “তুমি তো তরবারি, বর্শা, বল্লম নিয়ে আমার কাছে এসেছ। কিন্তু আমি এসেছি সর্বশক্তিমান প্রভুর নাম নিয়ে। এই প্রভুই ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের ঈশ্বর। তুমি তাঁকে নিয়ে অনেক অকথা কুকথা বলেছ। 46 আজ প্রভুর দয়ায় আমি তোমাকে পরাজিত করব। তোমাকে আজ আমি হত্যা করব। তোমার মুণ্ড কেটে নিয়ে জন্তু জানোয়ারদের আর পাখীদের খাওয়াব। শুধু তুমি নয়, সব পলেষ্টীয়দের ঐ একই অবস্থা করব। তখন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ জানবে, ইস্রায়েলে একজন ঈশ্বর আছেন। 47 এখানে যারা এসেছে তারা সবাই জানবে যে মানুষকে বাঁচাতে প্রভুর কোন তরবারি বা বল্লমের দরকার হয় না। এটাতো প্রভুরই যুদ্ধ। পলেষ্টীয়দের হারাতে প্রভুই আমাদের সহায়ক।”
48 গলিয়াৎ দায়ূদকে আক্রমণ করতে উদ্যত হল। সে একটু একটু করে দায়ূদের কাছে ঘেঁষে এল। তখন দায়ূদ ওর দিকে ছুটে গেলেন।
49 দায়ূদ থলে থেকে একটা পাথর বের করলেন। সেটাকে তাঁর গুলতির মধ্যে রেখে তিনি ছুঁড়লেন। গুলতি থেকে পাথরটি ছিটকে গিয়ে একেবারে গলিয়াতের দু চোখের মাঝখানে পড়ে ওর মাথার ভেতর অনেকখানি ঢুকে গেল। গলিয়াৎ মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেল।
50 এইভাবে শুধু একটা গুলতি আর একটি পাথর দিয়েই দায়ূদ এই পলেষ্টীয়কে হারিয়ে দিলেন এবং আঘাত করে মেরে ফেললেন। দায়ূদের হাতে কোন তরবারি ছিল না। 51 তাই দায়ূদ গলিয়াতের শরীরের কাছে দৌড়ে গেলেন। তিনি গলিয়াতের তরবারির খাপ থেকে তরবারি বার করে গলিয়াতের মুণ্ড কেটে ফেললেন। এইভাবেই তিনি গলিয়াতকে হত্যা করলেন।
তাদের নায়ককে মৃত দেখে অন্যান্য পলেষ্টীয়রা দৌড় লাগাল। 52 ইস্রায়েলীয়রা আর যিহূদার সৈন্যরা হৈ-হৈ করতে করতে পলেষ্টীয়দের তাড়া করল। এইভাবে তারা ধাওয়া করল গাৎ শহরের সীমানা আর ইক্রোণের ফটক পর্যন্ত। তারা অনেক পলেষ্টীয়কে হত্যা করল। শারাইমের রাস্তা ধরে গাৎ আর ইক্রোণ পর্যন্ত তাদের মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়েছিল। 53 পলেষ্টীয়দের তাড়িয়ে নিয়ে যাবার পর ইস্রায়েলীয়রা পলেষ্টীয়দের শিবিরে ফিরে এসে অনেক জিনিসপত্র লুঠ করল।
54 গলিয়াতের মুণ্ড নিয়ে দায়ূদ জেরুশালেমে চলে এলেন। তিনি গলিয়াতের অস্ত্রশস্ত্রগুলো নিজের তাঁবুতে রেখে দিলেন।
শৌল দায়ূদকে ভয় পেতে লাগলেন
55 শৌল দায়ূদকে গলিয়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে দেখলেন। সেনাপতি অবনেরকে শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “অব্নের, এ বালকটির পিতা কে বলো তো?”
অব্নের বলল, “দিব্য করে বলছি, আমি জানি না।”
56 রাজা শৌল বললেন, “ওর পিতাকে খুঁজে বার করো।”
57 গলিয়াতকে হত্যা করে দায়ূদ যখন ফিরে এলেন তখন অবনের তাকে শৌলের কাছে নিয়ে এলো। দায়ূদের হাতে তখন গলিয়াতের কাটা মুণ্ড।
58 শৌল দায়ূদকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যুবক তোমার পিতা কে?”
দায়ূদ উত্তর দিলেন, “আমি আপনার ভৃত্য বৈৎলেহমের যিশয়ের পুত্র।”
দায়ূদ ও যোনাথনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব
18 1-2 শৌলের সঙ্গে দায়ূদের কথাবার্তার পর শৌল দায়ূদের বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে উঠলেন। তিনি নিজেকে যতটা ভালবাসতেন, দায়ূদকেও ততটা ভালবেসেছিলেন। সে দিন থেকে, শৌল দায়ূদকে তাঁর কাছে রেখে দিলেন। তিনি দায়ূদকে তাঁর পিতার কাছে ফিরে যেতে দিলেন না। 3 যোনাথন দায়ূদকে খুব ভালবাসত। সে দায়ূদের সঙ্গে একটা চুক্তি করল। 4 যোনাথন নিজের গা থেকে কোট খুলে দায়ূদকে দিল। তার পোশাকও সে দায়ূদকে দিয়ে দিল। এমন কি সে তার ধনুক, তরবারি ও কোমরবন্ধও ওঁকে দিয়ে দিল।
শৌল দায়ূদের সাফল্য লক্ষ্য করলেন
5 শৌল দায়ূদকে নানা জায়গায় যুদ্ধ করতে পাঠালেন। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দায়ূদ ভালভাবেই সফল হলেন। তারপর শৌল তাঁকে সৈন্যদের অধিনায়ক করে দিলেন। এতে সকলেই খুশী হল, এমনকি শৌলের সৈন্যবাহিনীর পদস্থ কর্মীরাও। 6 দায়ূদ পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে ইস্রায়েলের প্রতিটি শহর থেকে মেয়েরা তাঁকে দেখবার জন্য বেরিয়ে এল। তারা তবলা ও বীণা বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করল এবং নাচল। তারা এসব শৌলের সামনেই করল। 7 স্ত্রীলোকরা গাইল,
“শৌল বধিলেন শত্রু হাজারে হাজারে,
আর দায়ূদ বধিলেন অযুতে অযুতে।”
8 তাদের এই গান শুনে শৌলের মন খারাপ হয়ে গেল। তিনি খুব রেগে গেলেন। তিনি ভাবলেন, “স্ত্রীলোকরা ভাবছে যে দায়ূদ লাখে লাখে শত্রু বধ করছে আর আমি মেরেছি কেবল হাজারে হাজারে। রাজত্ব ছাড়া আর কি সে পেতে পারে?” 9 এরপর সেই দিন থেকে শৌল দায়ূদকে খুব সতর্কভাবে লক্ষ্য করতে লাগলেন।
শৌল দায়ূদকে ভয় পেলেন
10 ঈশ্বরের কাছ থেকে এক দুষ্ট আত্মা এসে পরদিন শৌলের ওপর ভর করল। শৌল বাড়িতে প্রলাপ বকতে লাগলেন। দায়ূদ রোজকার মত বীণা বাজালেন। 11 কিন্তু শৌলের হাতে বর্শা ছিল। তিনি মনে মনে ভাবলেন, “আমি দায়ূদকে দেওয়ালের সঙ্গে গেঁথে দেব।” তিনি দু-দুবার দায়ূদের দিকে বর্শা ছুঁড়েও দিলেন। কিন্তু দুবারই দায়ূদ নিজেকে বাঁচিয়েছিলেন।
12 প্রভু দায়ূদের সহায় ছিলেন। তিনি শৌলকে ত্যাগ করেছিলেন। শৌল তাই দায়ূদকে ভয় করতেন। 13 তিনি দায়ূদকে তাঁর কাছ থেকে দূর করে দিলেন। শৌল তাঁকে 1000 সৈন্যের অধিনায়ক করেছিলেন। দায়ূদ যুদ্ধে তাঁদের নেতৃত্ব দিলেন। 14 প্রভু ছিলেন দায়ূদের সহায়। তাই দায়ূদ সব কাজেই সফল হতেন। 15 শৌল দায়ূদের সাফল্য দেখতে দেখতে দায়ূদকে আরও বেশী ভয় করতে লাগলেন। 16 কিন্তু ইস্রায়েল ও যিহূদার সমস্ত লোক দায়ূদকে ভালোবাসত। কারণ দায়ূদ তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতেন এবং তাদের হয়ে যুদ্ধ করতেন।
শৌল তাঁর কন্যার সঙ্গে দায়ূদের বিয়ে দিতে চাইলেন
17 এদিকে শৌল দায়ূদকে মারতে চান। তিনি একটা মতলব আঁটলেন। তিনি দায়ূদকে বললেন, “আমার বড় মেয়ের নাম মেরব। তুমি তাকে বিয়ে কর। তাহলে তুমি আরও শক্তিশালী সৈন্য হতে পারবে। তুমি আমার পুত্রের মতো হবে। প্রভুর জন্য সব যুদ্ধক্ষেত্রে তুমি যুদ্ধ করবে!” এসব ছিল শৌলের ছল চাতুরি। আসলে তিনি ভেবেছিলেন, “আমাকে আর দায়ূদকে মারতে হবে না। পলেষ্টীয়দেরই এগিয়ে দেব আমার হয়ে ওকে মারবার জন্য।”
18 দায়ূদ বললেন, “আমি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবার থেকে আসি নি। আমি কোন গণ্যমান্য ব্যক্তি নই। আমি রাজকন্যাকে বিয়ে করার যোগ্য নই।”
19 তাই দায়ূদের সঙ্গে শৌলের কন্যা মেরবের বিয়ের সময় হলে শৌল মহোলা দেশের অদ্রীয়েলের সঙ্গে তার বিয়ে দিলেন।
20 শৌলের আরেকটি কন্যা মীখল দায়ূদকে ভালবাসত। লোকরা শৌলকে জানাল, মীখল দায়ূদকে ভালবাসে। শৌল শুনে খুশী হলেন। 21 শৌল চিন্তা করলেন, “আমি এবার মীখলকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করব। আমি দায়ূদের সঙ্গে ওর বিয়ে দেব। তারপর পলেষ্টীয়রা ওকে মেরে ফেলবে।” এই ভেবে তিনি দায়ূদকে দ্বিতীয় বার বললেন, “আমার কন্যাকে তুমি আজই বিয়ে করো।”
22 শৌল তাঁর পদস্থ কর্মচারীদের দায়ূদের সঙ্গে আলাদা করে গোপনভাবে কথা বলতে আদেশ দিলেন। তাকে বলবে, “রাজার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মচারীরাও তোমাকে পছন্দ করে। রাজার কন্যাকে তুমি বিয়ে করো।”
23 আধিকারিকরা দায়ূদকে সেইমত সব কিছু বলল। দায়ূদ বললেন, “তুমি কি মনে কর রাজার জামাতা হওয়া সোজা কথা? রাজকন্যার উপযুক্ত টাকাপয়সা খরচ করার সাধ্য আমার নেই। আমি নেহাত একজন সামান্য গরীব ছেলে।”
24 তারা শৌলকে দায়ূদের উত্তর জানাল। 25 শৌল তাদের বললেন, “তোমরা দায়ূদকে বলবে, ‘দায়ূদ, রাজকন্যার বিয়েতে কোন টাকপয়সা নেবেন না। শৌল তাঁর শত্রুদের শায়েস্তা করতে চান। তাই কনের দাম হবে 100 পলেষ্টীয়ের লিঙ্গত্বক,’” এটাই ছিল শৌলের গোপন মতলব। সে ভেবেছিল এর ফলে পলেষ্টীয়রা তাকে হত্যা করবে।
26 শৌলের আধিকারিকরা দায়ূদকে এ সম্বন্ধে জানাল। দায়ূদ রাজার জামাতা হবার সুযোগ পেয়ে খুশী হলেন। সেই জন্যই তিনি সঙ্গে সঙ্গে কিছু করতে চাইলেন। 27 দায়ূদ তাঁর লোকদের নিয়ে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলেন। তিনি 200 জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করলেন। আর তাদের লিঙ্গত্বক শৌলকে উপহার দিলেন। তাঁকে রাজার জামাতা হবার জন্য, এই মূল্য দিতে হল।
শৌলের কন্যা মীখলের সঙ্গে দায়ূদের বিয়ে হয়ে গেল। 28 শৌল বুঝতে পারলেন, প্রভু দায়ূদের সহায়। তিনি বুঝতে পারলেন মীখল দায়ূদকে ভালবাসে। 29 তাই শৌল দায়ূদকে আরও বেশী ভয় পেয়ে গেলেন এবং সারাজীবন তাঁর শত্রু হিসেবে রয়ে গেলেন।
30 পলেষ্টীয় সেনাপতিরা ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতেই থাকল। কিন্তু প্রতিবারই দায়ূদ তাদের যুদ্ধে হারিয়ে দিলেন। এইভাবে তিনি শৌলের সবচেয়ে সেরা অধিকর্তা হয়ে উঠলেন। দায়ূদ বেশ বিখ্যাত হয়ে গেলেন।
প্রার্থনার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
(মথি 6:9-15)
11 যীশু এক জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন। প্রার্থনা শেষ হলে পর তাঁর একজন শিষ্য এসে তাঁকে বললেন, “প্রভু, যোহন যেমন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, আপনিও তেমনি আমাদের প্রার্থনা করতে শেখান।”
2 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা যখন প্রার্থনা কর তখন বলো,
‘পিতা, তোমার পবিত্র নামের সমাদর হোক্,
তোমার রাজ্য আসুক।
3 দিনের আহার তুমি প্রতিদিন আমাদের দাও।
4 আমাদের পাপ ক্ষমা কর,
কারণ আমাদের বিরুদ্ধে যারা অন্যায় করেছে, আমরাও তাদের ক্ষমা করেছি,
আর আমাদের পরীক্ষায় পড়তে দিও না।’”
অনবরত যাঞ্চা কর
(মথি 7:7-11)
5-6 এরপর যীশু তাঁদের বললেন, “ধর, তোমাদের কারো একজন বন্ধু আছে। আর সে মাঝরাতে তার কাছে গিয়ে বলল, ‘বন্ধু আমায় খান তিনেক রুটি ধার দাও, কারণ আমার এক বন্ধু যাত্রাপথে এই মাত্র আমার ঘরে এসেছে, তাকে খেতে দেবার মতো ঘরে কিছু নেই।’ 7 সেই লোক যদি ঘরের ভেতর থেকে উত্তর দেয়, ‘দেখ, আমায় বিরক্ত করো না! এখন দরজা বন্ধ আছে আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি শুয়ে পড়েছি। আমি এখন তোমাকে কিছু দেবার জন্য উঠতে পারব না।’ 8 আমি তোমাদের বলছি, সে যদি বন্ধু হিসাবে উঠে তাকে কিছু না দেয়, তবু লোকটি বার বার করে অনুরোধ করছে বলে সে উঠবে ও তার যা দরকার তা তাকে দেবে। 9 তাই আমি তোমাদের বলছি, তোমরা চাও, তোমাদের দেওয়া হবে, খোঁজ তোমরা পাবে। দরজায় ধাক্কা দাও, তোমাদের জন্য দরজা খোলা হবে। 10 কারণ যারা চায়, তারা পায়। যারা খোঁজ করে, তারা সন্ধান পায় আর যারা দরজায় ধাক্কা দেয়, তাদের জন্য দরজা খোলা হয়। 11 তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কি কেউ আছে যার ছেলে মাছ চাইলে সে তাকে মাছের বদলে সাপ দেবে? 12 অথবা ছেলে যদি ডিম চায় তবে তাকে কাঁকড়াবিছা দেবে? 13 তাই তোমরা যদি মন্দ প্রকৃতির হয়েও তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে স্বর্গের পিতার কাছে যারা চায়, তিনি যে তাদের পবিত্র আত্মা দেবেন, এটা কত না নিশ্চয়।”
ঈশ্বরই যীশুর ক্ষমতার উৎস
(মথি 12:22-30; মার্ক 3:20-27)
14 একসময় যীশু একজনের মধ্য থেকে একটা বোবা ভূতকে বার করে দিলেন। সেই ভূত বার হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঐ লোকটি কথা বলতে শুরু করল। এই দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গেল। 15 কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “ভূতদের রাজা বেলস্বূলের সাহায্যেই ও ভূত তাড়ায়!”
16 আবার কেউ কেউ যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য আকাশ থেকে কোন চিহ্ন দেখাতে বলল। 17 কিন্তু তিনি তাদের মনের কথা জানতে পেরে বললেন, “যে রাজ্য আত্মকলহে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, সেই রাজ্য ধ্বংস হয়। আবার কোন পরিবার যদি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে, তবে সেই পরিবারও ভেঙে যায়। 18 তাই শয়তানও যদি নিজের বিরুদ্ধে নিজে দাঁড়ায় তবে কেমন করে তার রাজ্য টিকবে? আমি তোমাদের একথা জিজ্ঞেস করছি কারণ তোমরা বলছ আমি বেলস্বূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই। 19 কিন্তু আমি যদি বেলস্বূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের অনুগামীরা কার সাহায্যে তা ছাড়ায়? তাই তারাই তোমাদের বিচার করুক। 20 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের শক্তিতে ভূতদের ছাড়াই, তাহলে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে ইতিমধ্যেই এসে পড়েছে।
21 “যখন কোন শক্তিশালী লোক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ঘর পাহারা দেয়, তখন তার ধনসম্পদ নিরাপদে থাকে। 22 কিন্তু তার থেকে পরাক্রান্ত কোন লোক যখন তাকে আক্রমণ করে পরাস্ত করে, তখন নিরাপদে থাকার জন্য যে অস্ত্রশস্ত্রের ওপর সে নির্ভর করেছিল, অন্য শক্তিশালী লোকটি সেগুলো কেড়ে নেয় আর ঐ লোকটির ঘরের সব জিনিসপত্র লুটে নেয়।
23 “যে আমার পক্ষে নয়, সে আমার বিপক্ষ। যে আমার সঙ্গে কুড়ায়না, সে ছড়ায়়।
শূন্য ঘর
(মথি 12:43-45)
24 “কোন অশুচি আত্মা যখন কোন লোকের মধ্য থেকে বাইরে আসে, তখন সে বিশ্রামের খোঁজে নির্জন স্থানে ঘোরাফেরা করে আর বিশ্রাম না পেয়ে বলে, ‘যে ঘর থেকে আমি বাইরে এসেছি, সেখানেই ফিরে যাব।’ 25 কিন্তু সেখানে ফিরে গিয়ে সে যখন দেখে সেই ঘরটি পরিষ্কার করা হয়েছে আর সাজানো-গোছানো আছে, 26 তখন সে গিয়ে তার থেকে আরো দুষ্ট সাতটা আত্মাকে নিয়ে এসে ঐ ঘরে বসবাস করতে থাকে। তাই ঐ লোকের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরো ভয়ঙ্কর হয়।”
প্রকৃত সুখী লোক
27 যীশু যখন এইসব কথা বলছিলেন, তখন সেই ভীড়ের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে বলে উঠল, “ধন্য সেই মা, যিনি আপনাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন, আর যাঁর স্তন আপনি পান করেছিলেন।”
28 কিন্তু যীশু বললেন, “এর থেকেও ধন্য তারা যারা ঈশ্বরের শিক্ষা শোনে ও তা পালন করে।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International