Old/New Testament
শিম্শোনের জন্ম
13 আবার ইস্রায়েলীয়রা পাপ কাজে মেতে উঠল। প্রভু তাদের লক্ষ্য করলেন। তাই প্রভু পলেষ্টীয়দের উপর 40 বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের শাসন করার ভার দিলেন।
2 সরা শহরে মানোহ নামে একজন লোক ছিল। সে ছিল দান পরিবারগোষ্ঠীর লোক। মানোহর স্ত্রী ছিল নিঃসন্তান। 3 একদিন প্রভুর এক দূত তার স্ত্রীর কাছে দেখা দিয়ে বলল, “তুমি বন্ধ্যা হয়ে রয়েছ। কিন্তু তুমি গর্ভবতী হবে, তোমার সন্তান হবে। 4 দ্রাক্ষারস বা কোন কড়া পানীয় পান করো না। অশুচি কোন খাদ্য খাবে না। 5 কারণ তুমি গর্ভবতী হবে এবং একটি পুত্রের জন্ম দেবে। সেই পুত্রকে ঈশ্বরের কাছে একটা বিশেষ উপায়ে উৎসর্গ করা হবে। উপায়টা হচ্ছে, সে হবে নাসরতীয়। তাই কখনও তার চুল কাটবে না। সে জন্মাবার আগে থেকেই ঈশ্বরের একজন বিশেষ ব্যক্তি হবে। সে-ই পলেষ্টীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করবে।”
6 তখন সেই স্ত্রী তার স্বামীর কাছে গিয়ে সব কিছু বলল। সে বলল, “ঈশ্বরের কাছ থেকে একজন আমার কাছে এসেছিল। তাকে দেখতে ঈশ্বরের এক দূতের মতো। আমি বেশ ভয় পেয়েছিলাম। এমনকি আমি তাকে জিজ্ঞাসাও করি নি সে কোথা থেকে এসেছে। সে তার নাম কিছুই বলল না। 7 সে শুধু এটুকুই বলল, ‘তুমি গর্ভবতী হবে। তোমার পুত্র হবে। দ্রাক্ষারস বা কোন ঝাঁজাল কড়া পানীয় পান করবে না। কোন অশুদ্ধ খাবার খাবে না। কারণ তোমার সেই সন্তানকে ঈশ্বরের কাছে কোন বিশেষ পদ্ধতিতে উৎসর্গ করা হবে। সে জন্মাবার আগে থেকেই ঈশ্বরের একজন বিশেষ ব্যক্তি হবে এবং আমৃত্যু সে তাই থাকবে।’”
8 তাই শুনে মানোহ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। সে বলল, “হে প্রভু, দয়া করে আপনি ঈশ্বরের সেই ব্যক্তিকে আবার আমাদের কাছে পাঠান। যে শিশু অচিরেই জন্মাবে, তাকে আমরা কিভাবে গড়ে তুলব বলে দিন।”
9 ঈশ্বর মানোহর প্রার্থনা শুনলেন। ঈশ্বরের দূত আবার তার স্ত্রীকে দেখা দিলেন। সে তখন মাঠের মধ্যে একা বসেছিল। মানোহ তার সঙ্গে ছিল না। 10 সে ছুটে স্বামীর কাছে গিয়ে বলল, “সেই ব্যক্তিটি যে আগে একবার আমার কাছে এসেছিল, আবার এসেছে!”
11 মানোহ স্ত্রীর সঙ্গে তার কাছে এল। সে জিজ্ঞাসা করল, “আপনিই কি সেই, যিনি এর আগে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন?”
প্রভুর সে দূত বললেন, “হ্যাঁ, আমিই।”
12 মানোহ বলল, “আশা করি যা বলেছেন তাই হবে। এবার বলুন ছেলেটি কেমনভাবে জীবন কাটাবে? সে কি করবে?”
13 প্রভুর দূত মানোহকে বলল, “আমি যা-যা করতে বলেছি তোমার স্ত্রীকে সে সব অবশ্যই করতে হবে। 14 যে সব জিনিস দ্রাক্ষালতায় জন্মায়, সে সব যেন সে না খায়। কোন দ্রাক্ষারস বা চড়া ধরণের কোন পানীয় যেন সে কিছুতেই না পান করে। কোন অশুচি খাবার সে কোন মতেই খাবে না। ঠিক যা যা আদেশ দিয়েছি সেই রকমই কাজ যেন সে করে।”
15 তখন মানোহ প্রভুর দূতকে বলল, “দয়া করে আপনি একটু বসুন। আমরা আপনাকে কচি পাঁঠার মাংস রান্না করে খাওয়াব।”
16 প্রভুর দূত বলল, “তোমরা আমাকে যেতে না দিলেও আমি তোমাদের সঙ্গে খাবো না। তবে একান্তই যদি কিছু করতে চাও তাহলে প্রভুর উদ্দেশ্যে হোমবলি উৎসর্গ করো।” (মানোহ বুঝতে পারে নি যে লোকটি সত্যিই প্রভুর দূত।)
17 মানোহ প্রভুর দূতকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি কি আপনার নাম জানতে পারি? কারণ আপনার কথামত সব কিছু হলে আমরা আপনাকে সম্মান জানাব।”
18 প্রভুর দূত বললেন, “কেন তুমি আমার নাম জানতে চাইছ? এটা তো আশ্চর্য ব্যাপার!”
19 তারপর মানোহ একটা পাথরে একটা কচি পাঁঠাকে বলি দিল। সেই সঙ্গে একটি শস্য নৈবেদ্যও প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করল এবং সে একটি আশ্চর্য কাজ করল। 20 মানোহ আর তার স্ত্রী যা ঘটেছিল তার সব দেখল। বেদী থেকে আগুনের শিখা যখন আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছিল তখন প্রভুর দূত আগুনের মধ্য দিয়ে স্বর্গে চলে গেল।
এই দৃশ্য দেখার পর তারা দুজন ভূমিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করল। 21 প্রভুর সেই দূত আর কখনও মানোহ এবং তার স্ত্রীর কাছে আবির্ভূত হয় নি। অবশেষে মানোহ বুঝতে পারল যে লোকটি সত্যিই প্রভুর দূত। 22 মানোহ তার স্ত্রীকে বলল, “আমরা ঈশ্বর দর্শন করেছি! এখন আমরা নিশ্চিত মারা যাব!”
23 কিন্তু তার স্ত্রী বলল, “প্রভু আমাদের মারতে চান না। তা যদি হত তাহলে তিনি আমাদের হোমবলি ও শস্যের নৈবেদ্য গ্রহণ করতেন না। তিনি আমাদের এইসব দৃশ্য দেখাতেন না। তা যদি হত তাহলে তিনি আমাদের এইসব কথা বলতেন না।”
24 তারপর তার একটি সন্তান হল। সে তার নাম দিল শিম্শোন। শিম্শোন বড় হয়ে উঠল। প্রভু তাকে আশীর্বাদ করলেন। 25 শিম্শোন যখন মহনেদান শহরে ছিল তখন তার উপর প্রভুর আত্মা ভর করল। শহরটি সরা আর ইষ্টায়োল শহরের মাঝখানে অবস্থিত।
শিম্শোনের বিবাহ
14 শিম্শোন তিম্না শহরের দিকে নেমে এল। সেখানে সে একজন পলেষ্টীয় নারীকে দেখতে পেল। 2 বাড়ি ফিরে শিম্শোন তার পিতামাতাকে বলল, “আমি তিম্নায় একজন পলেষ্টীয় নারী দেখেছি। তোমরা তাকে আমার কাছে এনে দাও। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।”
3 তার পিতামাতা বলল, “তুমি তো ইস্রায়েলের একজন মেয়েকে বিয়ে করতে পারো। পলেষ্টীয়দের মেয়েকে বিয়ে করতে তোমার এত ইচ্ছে কেন? এসব লোকদের এমনকি সুন্নৎ পর্যন্ত হয় নি।” শিম্শোন এসব কথা শুনল না।
সে বলল, “ঐ মেয়েটিকেই আমার জন্য এনে দাও। তাকেই শুধু আমি চাই।” 4 (শিম্শোনের পিতামাতা তো জানত না, এটাই ছিল প্রভুর অভিপ্রায়। তিনি কিভাবে পলেষ্টীয়দের শায়েস্তা করা যায় সেই রাস্তাই খুঁজছিলেন। সে সময় ইস্রায়েলে ওদেরই রাজত্ব ছিল।)
5 পিতামাতাকে নিয়ে শিম্শোন তিম্না শহরে নেমে এল। শহরের কাছাকাছি দ্রাক্ষার ক্ষেত পর্যন্ত তারা চলে এল। সেখানে হঠাৎ একটা য়ুব সিংহ গর্জে উঠে শিম্শোনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। 6 প্রভুর আত্মা মহাশক্তিতে শিম্শোনের উপর নেমে এল। খালি হাতেই শিম্শোন সিংহটাকে ছিঁড়ে দু-টুকরো করে ফেলল। অনায়াসেই সে এটা করে ফেলল। একটা কচি পাঁঠাকে চিরে ফেলার মতই কাজটা যেন সহজ হয়ে গেল শিম্শোনের কাছে। কিন্তু শিম্শোন ঘটনাটি পিতামাতার কাছে বলল না।
7 শিম্শোন শহরে গিয়ে পলেষ্টীয় মেয়েটির সঙ্গে কথাবার্তা বলল। মেয়েটি তাকে খুশি করেছিল। 8 কয়েকদিন পর শিম্শোন ফিরে এসে ঐ পলেষ্টীয় মেয়েকে বিয়ে করতে এলে পথে মৃত সিংহটিকে সে দেখল। মৃত সিংহটির গায়ে মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে বসে। কিছু মধুও হয়েছে। 9 শিম্শোন হাতে কিছুটা মধু তুলে নিল। মধু খেতে খেতে সে হাঁটতে লাগল। পিতামাতার কাছে এসে সে তাদেরও একটু মধু দিল। তারা সেই মধু খেল। কিন্তু শিম্শোন বলল না, সেই মধু মরা সিংহের গা থেকে পাওয়া।
10 শিম্শোনের পিতা পলেষ্টীয় মেয়েটিকে দেখতে গেল। এটাই ছিল প্রথা যে বর সে একটা ভোজসভা করবে। সেই অনুযায়ী শিম্শোন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেল। 11 পলেষ্টীয় যখন দেখল শিম্শোন এরকম একটা ভোজের ব্যবস্থা করছে তখন তারা ওর কাছে 30 জন পলেষ্টীয়কে পাঠাল।
12 ঐ 30 জনকে শিম্শোন বলল, “আমি তোমাদের একটা ধাঁধা বলতে চাই। এই আনন্দ অনুষ্ঠান সাতদিন ধরে চলবে। এর মধ্যে তোমাদের এই ধাঁধার উত্তর দিতে হবে। উত্তর দিতে পারলে আমি তোমাদের 30টি জামা আর 30টি কাপড় দেবো। 13 কিন্তু উত্তর না দিতে পারলে তোমরা আমাকে 30টি জামা আর 30টি কাপড় দেবে।” ওরা বলল, “বল কি তোমার ধাঁধা, আমরা শুনব।”
14 শিম্শোন তখন এই ধাঁধাটা বলল:
“খাদকের মধ্য থেকে খাদ্য কিছু জোটে,
বলবান হতে মিষ্টি কিছু ওঠে।”
30 জন লোক তিনদিন ধরে মাথা ঘামাল, কিন্তু উত্তর দিতে পারল না।
15 চতুর্থ দিনে তারা শিম্শোনের স্ত্রীর কাছে এসে বলল, “তোমরা কি আমাদের নিঃস্ব করার জন্য নেমন্তন্ন করেছ? তোমার স্বামীর কাছ থেকে কায়দা করে ধাঁধার উত্তরটা জেনে নাও। যদি উত্তর না জানতে পার তাহলে আমরা তোমাকে আর তোমার বাপের বাড়ির সবাইকে পুড়িয়ে মেরে ফেলবো।”
16 আর কোন উপায় না পেয়ে সে শিম্শোনের কাছে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। সে বলল, “তুমি তো আমায় শুধু ঘৃণাই করো! তুমি আমায় একটুও ভালবাস না! তুমি আমার দেশের লোকদের কাছে ধাঁধা বলেছ, কিন্তু কই আমাকে তো তুমি সেই ধাঁধার উত্তরটা বলো নি।” শিম্শোন উত্তর দিল, “আমার মাতাপিতাকেও যখন উত্তরটা বলি নি, তোমাকে বলতে যাব কেন?”
17 অনুষ্ঠানের বাকি দিনগুলোয় শিম্শোনের স্ত্রী কেঁদেই চলল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম দিনে শিম্শোন ধাঁধার উত্তরটি স্ত্রীকে বলেই ফেলল কারণ তার স্ত্রী এই নিয়ে তাকে বিরক্ত করছিল। তারপর তার স্ত্রী দেশের লোকদের কাছে সেই উত্তরটি বলে দিল।
18 সুতরাং সাত দিনের দিন সূর্যাস্তের আগে পলেষ্টীয়রা উত্তরটা পেয়ে গেল। শিম্শোনকে গিয়ে তারা বলল:
“মধুর চেয়ে মিষ্ট কি আছে?
সিংহের চেয়ে বেশী শক্তিশালী কে?”
তখন শিম্শোন বলল:
“যদি তোমরা আমার গরু সঙ্গে নিয়ে না চাষ করতে
তোমরা আমার ধাঁধার সমাধান করতেই পারতে না।”
19 শিম্শোন খুব রেগে গিয়েছিল। প্রভুর আত্মা প্রবল শক্তির সাথে তার ওপর নেমে এল। সে অস্কিলোন শহরে চলে গেল। সেখানে সে 30 জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করল। তাদের মৃতদেহ থেকে সে সমস্ত পোশাক তুলে নিল, ধন দৌলত সরিয়ে নিল। তারপর যারা তার ধাঁধার উত্তর দিয়েছিল, তাদের সে সব বিলিয়ে দিল। এরপর সে পিতার বাড়িতে চলে গেল। 20 স্ত্রীকে সে নিল না। বিয়ের জন্য একজন সেরা পাত্র তাকে ঘরে তুলেছিল।
শিম্শোন পলেষ্টীয়দের অসুবিধায় ফেলল
15 যখন গম তোলার সময় হল শিম্শোন তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেল। স্ত্রীকে দেবার জন্যে একটা কচি পাঁঠা নিয়ে গেল। শ্বশুরকে গিয়ে বলল, “আমি স্ত্রীর ঘরে ঢুকছি।”
কিন্তু মেয়ের পিতা শিম্শোনকে ঢুকতে দিল না। 2 তার পিতা শিম্শোনকে বলল, “আমি ভেবেছিলাম তুমি তাকে ঘৃণা কর। তাই তার বিয়ে দিয়েছি একটি সেরা পাত্রের সঙ্গে। আমার ছোট মেয়ে আরও সুন্দরী। তুমি তাকেই নাও।”
3 শিম্শোন বলল, “এখন তোমাদের, মানে পলেষ্টীয়দের ওপর আঘাত হানলে কেউ আর আমাকে দোষ দিতে পারবে না।”
4 এই বলে শিম্শোন বেরিয়ে গেল। সে 300টি শেয়াল ধরল। সে দুটো করে শেয়াল ধরে তাদের লেজ দুটো বেঁধে জোড়া তৈরি করল। প্রত্যেক জোড়া শেয়ালের লেজে সে একটি করে মশাল বেঁধে দিল। 5 তারপর মশালগুলো জ্বেলে দিল। পলেষ্টীয়দের শস্যক্ষেত্রে সে ঐ শেয়ালগুলোকে ছুটিয়ে দিল। এইভাবে নতুন গজানো সমস্ত গাছ আর শস্যের গাদা সে জ্বালিয়ে দিল। দ্রাক্ষার ক্ষেত আর সমস্ত জলপাই গাছ জ্বালিয়ে দিল।
6 পলেষ্টীয়রা জিজ্ঞাসা করল, “কে এসব কাজ করেছে?”
কেউ একজন বলল, “শিমশোন করেছে। তিম্নার কোন একজনের জামাতা হচ্ছে এই শিম্শোন। তার এই কাজের কারণ তার শ্বশুর শিম্শোনের স্ত্রীকে অন্য এক সেরা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।” তাই পলেষ্টীয়রা শিম্শোনের স্ত্রী আর শ্বশুরকে পুড়িয়ে মেরে ফেলল।
7 শিম্শোন পলেষ্টীয়দের বলল, “তোমরা আমার ক্ষতি করেছ; এবার আমিও তোমাদের ক্ষতি করব। তারপর আমার তোমাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া বন্ধ হবে।”
8 তারপর শিম্শোন পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করল। অনেক লোককে সে হত্যা করল। তারপর সে একটা গুহায় আশ্রয় নিল। গুহাটি ছিল ঐটম শিলা নামে একটি জায়গায়।
9 পলেষ্টীয়রা যিহূদায় চলে গেল। লিহী নামের একটি জায়গায় তারা বিশ্রাম নিল। তাদের সৈন্যরা সেখানে তাঁবু গাড়ল। তারা যুদ্ধের জন্য তৈরি হল। 10 যিহূদা পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা তাদের জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা পলেষ্টীয়রা কেন এখানে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসেছ?”
তারা বলল, “আমরা শিম্শোনকে ধরতে এসেছি। আমরা তাকে বন্দী করতে চাই। সে আমাদের প্রতি যা অন্যায় করেছে তার জন্য তাকে শাস্তি দিতে চাই।”
11 যিহূদা পরিবারগোষ্ঠীর 3000 লোক তখন শিম্শোনের কাছে গেল। ঐটম শিলার গুহায় গিয়ে তারা তাকে বলল, “তুমি আমাদের এ কি করলে? তুমি কি জানো না যে পলেষ্টীয়রা আমাদের শাসন করছে?”
শিম্শোন বলল, “তারা আমার ওপর যে অন্যায় কাজ করেছে শুধুমাত্র তার জন্যেই আমি তাদের শাস্তি দিয়েছি।”
12 ওরা তখন বলল, “আমরা তোমাকে বেঁধে নিয়ে যাবার জন্য এসেছি। তোমাকে পলেষ্টীয়দের হাতে তুলে দেব।”
শিম্শোন বলল, “প্রতিশ্রুতি দাও তোমরা আমাকে মারবে না।”
13 ওরা বলল, “ঠিক আছে। আমরা শুধু তোমাকে বেঁধে পলেষ্টীয়দের কাছে ধরিয়ে দেব। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা তোমায় হত্যা করব না।” এই বলে ওরা দুটো নতুন দড়ি দিয়ে শিম্শোনকে বেঁধে ফেলল। গুহা থেকে তাকে বার করে নিয়ে চলল।
14 শিম্শোন যখন লিহীতে এল, পলেষ্টীয়রা তাকে দেখতে এল। তারা আনন্দে চিৎকার করে উঠল। তখন প্রভুর আত্মা সবলে শিম্শোনের ওপর এল। দড়িগুলো পোড়া সূতোর মতো পলকা মনে হল এবং তার হাত থেকে খসে পড়ল। যেন সব গলে পড়েছে। 15 শিম্শোন একটা মরা গাধার চোয়ালের হাড় দেখতে পেল। হাড়টা নিয়ে তাই দিয়ে সে 1000 জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করল।
16 তখন শিম্শোন বলল:
“গাধার একটি চোয়ালের হাড় দিয়েই
আমি 1000 লোক হত্যা করেছি।
একটি গাধার চোয়ালের হাড় দিয়ে
আমি তাদের মৃতদেহগুলি জড়ো করেছি।”
17 এই কথা বলে চোয়ালের হাড়টা শিম্শোন ছুঁড়ে ফেলে দিল। সেই জায়গার নাম রামৎ লিহী।
18 শিম্শোনের খুব পিপাসা পেয়েছিল। প্রভুর কাছে সে প্রার্থনা করল। সে বলল, “হে প্রভু আমি তোমার দাস। এই যে আমার বিরাট জয় হল, সে তো তোমারই দয়ায়। পিপাসায় যেন আমি মারা না যাই। তাই এখন দয়া করো তুমি। দয়া করো, যেন ওরা আমায় ধরে না ফেলে, যাদের এখনও সুন্নৎ পর্যন্ত হয় নি।”
19 লিহীর মাঠে একটা গর্ত আছে। ঈশ্বর সেই গর্ত ফাটিয়ে ঝর্ণা তৈরী করলেন। সেই জল পান করে শিম্শোন তাজা হয়ে উঠল। সে আবার শক্তি অনুভব করল। সে সেই ঝর্ণার নাম দিল এন-হক্কোরী। লিহী শহরে এই ঝর্ণা আজও আছে।
20 শিম্শোন 20 বছর ইস্রায়েলীয়দের বিচারক ছিল। সেটা ছিল পলেষ্টীয়দের রাজত্ব কাল।
শত্রুদের ভালবাসো
(মথি 5:38-48; 7:12)
27 “তোমরা যারা শুনছ, আমি কিন্তু তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো। যারা তোমাদের ঘৃণা করে, তাদের মঙ্গল করো। 28 যারা তোমাদের অভিশাপ দেয়, তাদের আশীর্বাদ করো। যারা তোমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তাদের জন্য প্রার্থনা করো। 29 কেউ যদি তোমার একগালে চড় মারে, তার কাছে অপর গালটি বাড়িয়ে দাও। কেউ যদি তোমার চাদর কেড়ে নেয়, তাকে তোমার জামাটিও নিতে দাও। 30 তোমার কাছে যে চায় তাকে দাও। আর তোমার কোন জিনিস যদি কেউ নেয়, তবে তা ফেরত চেও না। 31 অন্যের কাছ থেকে তুমি যেমন ব্যবহার পেতে চাও, তাদের সঙ্গেও তুমি তেমনি ব্যবহার করো।
32 “যারা তোমাদের ভালবাসে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই ভালবাস, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? কারণ পাপীরাও তো একই রকম করে। 33 যারা তোমাদের উপকার করে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই উপকার কর, তাতে প্রশংসার কি আছে? পাপীরাও তো তাই করে। 34 যারা ধার শোধ করতে পারে এমন লোকদেরই যদি কেবল তোমরা ধার দাও, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? এমন কি পাপীরাও তা ফিরে পাবার আশায় তাদের মতো পাপীদের ধার দেয়।
35 “কিন্তু তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো, তাদের মঙ্গল করো, আর কিছুই ফিরে পাবার আশা না রেখে ধার দিও। তাহলে তোমাদের মহাপুরস্কার লাভ হবে, আর তোমরা হবে পরমেশ্বরের সন্তান, কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ ও দুষ্টদের প্রতিও দয়া করেন। 36 তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু তোমরাও তেমন দয়ালু হও।
নিজেদের দিকে তাকাও
(মথি 7:1-5)
37 “অপরের বিচার করো না, তাহলে তোমাদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না। অপরের দোষ ধরো না, তাহলে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে না। অন্যকে ক্ষমা করো, তাহলে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে। 38 দান কর, প্রতিদান তুমিও পাবে। তারা তোমাদের অনেক বেশী করে, চেপে চেপে, ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে উপচে দেবে। কারণ অন্যদের জন্য যে মাপে মেপে দিচ্ছ, সেই মাপেই তোমাদের মেপে দেওয়া হবে।”
39 যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, “একজন অন্ধ কি অন্য একজন অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? তাহলে কি তারা উভয়েই গর্তে পড়বে না? 40 কোন ছাত্র তার শিক্ষকের উর্দ্ধে নয়; কিন্তু শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে প্রত্যেক ছাত্র তার শিক্ষকের মতো হতে পারে।
41 “তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে তুমি সেটা দেখছ, কিন্তু তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে সেটা দেখছ না, কেন? 42 তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে তা যখন লক্ষ্য করছ না, তখন কেমন করে তোমার ভাইকে বলতে পার, ‘ভাই তোমার চোখে যে কুটোটা আছে, এস তা বার করে দিই।’ কেন তুমি একথা বল? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তা বার করে ফেল, আর তবেই তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে, তা বার করার জন্য স্পষ্ট করে দেখতে পাবে।
দু’প্রকার ফল
(মথি 7:17-20; 12:34-35)
43 “এমন কোন ভাল গাছ নেই যাতে খারাপ ফল ধরে, আবার এমন কোন খারাপ গাছ নেই যাতে ভাল ফল ধরে। 44 প্রত্যেক গাছকে তার ফল দিয়েই চেনা যায়। লোকে কাঁটা-ঝোপ থেকে ডুমুর ফল তোলে না, বা বুনো ঝোপ থেকে দ্রাক্ষা সংগ্রহ করে না। 45 সৎ লোকের অন্তরের ভাল ভাণ্ডার থেকে ভাল জিনিসই বার হয়। আর দুষ্ট লোকের মন্দ অন্তর থেকে মন্দ বিষয়ই বার হয়। মানুষের অন্তরে যা থাকে তার মুখ সে কথাই বলে।
দু’প্রকার লোক
(মথি 7:24-27)
46 “তোমরা কেন আমাকে ‘প্রভু, প্রভু’ বলে ডাক, অথচ আমি যা বলি তা কর না? 47 যে কেউ আমার কাছে আসে ও আমার কথা শুনে সেসব পালন করে, সে কার মতো? 48 সে এমন একজন লোকের মতো, যে বাড়ি তৈরী করতে গভীর ভাবে খুঁড়ে পাথরের ওপর ভিত গাঁথল। তাই যখন বন্যা এল, তখন নদীর জলের ঢেউ এসে সেই বাড়িটিতে আঘাত করল, কিন্তু তা নড়াতে পারল না, কারণ তার ভিত ছিল মজবুত।
49 “যে আমার কথা শোনে অথচ সেই মতো কাজ না করে, সে এমন একজন লোকের মতো, যে মাটির উপর ভিত ছাড়াই বাড়ি তৈরী করেছিল। পরে নদীর স্রোত এসে তাতে আঘাত করলে তখনই বাড়িটা ভেঙে পড়ল এবং একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International