Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যাত্রা 31-33

বৎসলেল এবং অহলীয়াব

31 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “আমার বিশেষ কাজের জন্য আমি যিহূদা বংশীয় একজনকে নির্বাচন করেছি। তার নাম হল বৎসলেল। বৎসলেল হল হূরের পৌত্র এবং উরির পুত্র। আমি বৎসলেলকে ঈশ্বরের আত্মা, পটুতা, দক্ষতা এবং সমস্ত রকমের কলা ও শিল্পের জ্ঞান দিয়ে ভরে দিয়েছি। বৎসলেল একজন ভাল শিল্পকার এবং সে সোনা, রূপো ও পিতল থেকে নানা জিনিসপত্র তৈরী করতে পারে। বৎসলেল নানা মণি মাণিক্য কাটতে ও তাতে খোদাই করে সুন্দর অলঙ্কার তৈরী করতে পারে। সে কাঠের শিল্পকর্মেও পারদর্শী। বৎসলেল সব ধরণের কাজ করতে পারে। বৎসলেলের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি অহলীয়াবকে নির্বাচন করেছি। অহলীয়াব হল দান পরিবারগোষ্ঠীর অহীষামকের পুত্র। আমি বাকী কারিগরদের সব রকম দক্ষতা দিয়েছি যাতে ওরা তোমাকে দেওয়া আমার নির্দেশগুলো পালন করতে পারে:

সমাগম তাঁবু,

সাক্ষ্যসিন্দুক,

সাক্ষ্য সিন্দুকের ওপরের আচ্ছাদন এবং সমাগম তাঁবুর সমস্ত আসবাবপত্র।

টেবিল ও তার ওপর রাখা যাবতীয় সব কিছু,

আনুষঙ্গিক অংশসহ

খাঁটি সোনার বাতিস্তম্ভটি এবং ধূপবেদী।

হোমবলির বেদী এবং বেদীতে ব্যবহৃত জিনিসপত্র।

হাত পা ধোয়ার পাত্র ও পাত্রের নীচের পায়া।

10 যাজক হারোণের জন্য বোনা বিশেষ পোশাক পরিচ্ছদ

এবং হারোণের পুত্ররা যখন যাজকের কাজ করবে তখন তাদের জন্য বোনা বিশেষ পোশাক পরিচ্ছদ।

11 সুগন্ধি অভিষেকের তেল,

পবিত্র স্থানে ব্যবহারের সুগন্ধি ধূপ।

আমি তোমাকে ঠিক যেভাবে নির্দেশ দিয়েছি ঠিক সেইভাবেই তাদের এই জিনিসগুলো তৈরী করতে হবে।”

বিশ্রামের দিন

12 প্রভু মোশিকে বললেন, 13 “ইস্রায়েলের লোকদের এই কথাগুলি বলো: তোমরা অবশ্যই আমার বিশ্রামের দিন বিধি অনুসারে পালন করবে। তোমরা এটা অবশ্যই করবে কারণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম এটা তোমার এবং আমার মধ্যে একটি প্রতীক চিহ্ন হিসাবে বিরাজ করবে। এই চিহ্ন দেখাবে যে, আমিই প্রভু, তোমাদের পবিত্র করেছি।

14 “এই বিশ্রামের দিনকে একটি বিশেষ দিনের মর্যাদা দেবে। যদি কেউ এই বিশেষ বিশ্রামের দিনকে অন্য একটি সাধারণ দিনের মতো পালন করে তাহলে তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। যদি কেউ এই বিশ্রামের দিনেও কাজ করে, তাহলে তাকে তার লোকদের থেকে বিতাড়িত করতে হবে। 15 কাজ করার জন্য সপ্তাহের বাকি ছয় দিন নির্দিষ্ট থাকবে কিন্তু সপ্তম দিনটি হবে বিশেষ বিশ্রামের দিন। এই দিনটি তোলা থাকবে প্রভুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিন হিসেবে। এই বিশেষ বিশ্রামের দিনে কেউ কাজ করলে তার মৃত্য়ু অনিবার্য। 16 বিশ্রামের দিনটিকে সর্বদা মনে রেখে ইস্রায়েলের মানুষ বিশেষ দিন হিসেবে পালন করবে। তারা সর্বদা এটা মেনে চলবে। এটা হল আমার ও তাদের মধ্যে এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। 17 বিশ্রামের দিনটি একটি চিরস্থায়ী চিহ্ন হিসেবে বেঁচে থাকবে আমার ও ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে। প্রভু সপ্তাহের ছয় দিন পরিশ্রম করে এই স্বর্গ ও মর্ত্য তৈরী করেছেন। কিন্তু সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম ও অবসরের মধ্যে কাটিয়েছেন।”

18 সীনয় পর্বতে এরপর প্রভু মোশির সঙ্গে কথোপকথন শেষ করলেন। তারপর তিনি বন্দোবস্ত লেখা দুটো সমান্তরাল পাথর ফলক মোশিকে দিলেন। ঈশ্বর নিজের হাতে ঐ দুই পাথর ফলকে লিখেছেন।

সোনার বাছুর

32 পর্বত থেকে মোশির নামতে দেরী হচ্ছে দেখে লোকরা উদ্বিগ্ন হয়ে হারোণকে ঘিরে ধরল। তারা বলল, “মোশি আমাদের পথ দেখিয়ে মিশর দেশ থেকে বার করে এনেছে কিন্তু আমরা তো এখান থেকে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না যে মোশির কি হয়েছে। সুতরাং এসো, আমরা আমাদের নেতৃত্ব দেবার জন্য দেবতাদের তৈরী করি।”

হারোণ তখন ঐ লোকদের বলল, “তোমরা আমার কাছে তোমাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কানের সোনার দুল এনে দাও।”

সুতরাং সবাই তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদের কানের দুল এনে হারোণকে দিল। হারোণ সবার কাছ থেকে সোনার দুলগুলো নিয়ে সেগুলো গলিয়ে একটি বাছুরের মূর্তি গড়ল। হারোণ বাটালি দিয়ে বাছুরের মূর্তি গড়ল এবং সোনা দিয়ে মূর্তিটির আচ্ছাদন তৈরী করল।

তখন লোকরা বলল, “হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা যিনি তোমাকে মিশর দেশ থেকে বাইরে এনেছেন।”

সব দেখার পর হারোণ বাছুরের মূর্তির সামনে একটি বেদী তৈরী করল। এরপর হারোণ ঘোষণা করে জানাল, “আগামীকাল প্রভুর সম্মানার্থে একটি বিশেষ চড়ুই ভাতি উৎসব পালন করা হবে।”

পরদিন খুব ভোরে লোকরা উঠে কিছু পশুকে মেরে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য দিল। তারপর তারা বসে পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া করে আনন্দ স্ফূর্তিতে মেতে উঠল।

ঠিক সেই সময়ে প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার লোকরা, যাদের তুমি মিশর দেশ থেকে বাইরে এনেছো, তারা মারাত্মক পাপ কাজে লিপ্ত হয়েছে। আমার নির্দেশ সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে সোনা গলিয়ে তারা একটি বাছুরের মূর্তি তৈরী করেছে। তারা গলা সোনা দিয়ে তৈরী একটি বাছুরের মূর্তিকে পূজো করছে এবং তাকে নৈবেদ্য দিচ্ছে। আবার তারা বলছে, ‘ইস্রায়েল, এই হচ্ছে তোমার দেবতা যিনি তোমাকে মিশর থেকে বার করে এনেছেন।’”

প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি ঐ লোকদের ভাল করে চিনি। ওরা ভীষণ জেদী ও উদ্ধত। 10 সুতরাং আমাকে একা থাকতে দাও। আমি তাদের ওপর ক্রুদ্ধ, আমি তাদের ধ্বংস করব। তারপর আমি তোমাকে দিয়ে একটা বড় জাতির সৃষ্টি করব।”

11 কিন্তু মোশি বিনয়ের সঙ্গে, প্রভু তার ঈশ্বরকে অনুরোধ করল, “আপনি ক্রোধ দিয়ে আপনার লোকদের ধ্বংস করবেন না। আপনি আপনার শক্তি ও পরাক্রম দিয়ে ঐ মানুষদের মিশর দেশ থেকে বাইরে এনেছিলেন। 12 কিন্তু আপনি যদি ওদের ধ্বংস করেন তাহলে মিশরীয়রা বলতে পারে, ‘প্রভু নিজের লোকদের জন্য খারাপ কিছু করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই তিনি ঐ লোকদের মিশর থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন পর্বতের ওপর নিয়ে গিয়ে তাদের হত্যা করতে। তিনি চেয়েছিলেন তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে।’ তাই আপনি তাদের ওপর রাগ করবেন না। দয়া করে আপনার মনকে বদলান। আপনার জনগণকে ধ্বংস করবেন না। 13 আপনার দাসগণ অব্রাহাম, ইস‌্হাক এবং যাকোবকে স্মরণ করুন। এবং আপনি তাদের কাছে নিজের নামে শপথ নিয়ে বলেছিলেন: ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে আকাশের অসংখ্য তারার মতো তোমাদের বংশ বৃদ্ধি হবে। এই দেশ তোমাদের বংশধরদের দিয়ে দেব। ওরা এখানে চিরকালের জন্য থাকবে।’”

14 তাই প্রভু তাঁর মন পরিবর্তন করলেন এবং তাঁর লোকদের ধ্বংস করবার ভীতি প্রদর্শন পালন করলেন না। 15 তখন মোশি ঘুরে দাঁড়াল এবং পর্বতের নীচে নামল। তার হাতে ছিল বন্দোবস্ত লেখা দুই পাথর ফলক। ঐ দুই পাথর ফলকের দুপাশেই লেখা ছিল প্রভুর নির্দেশগুলি। 16 ঈশ্বর নিজের হাতে ঐ দুই পাথর ফলক তৈরী করে নিজেই ঐ নির্দেশগুলি লিখেছেন।

17 যিহোশূয় শিবিরের গভীরে লোকজনের কোলাহল শুনতে পেল এবং মোশিকে বলল, “মনে হচ্ছে শিবিরের লোকরা যুদ্ধ করছে।”

18 উত্তরে মোশি বলল, “এই কোলাহল কোন যুদ্ধ জয়ের উল্লাস নয় আবার পরাজয়ের কান্নাও নয়। আমি কিন্তু গান বাজনা শুনতে পাচ্ছি।”

19 মোশি সেই শিবিরের কাছে গেল। সে দেখল সোনার বাছুরের মূর্তিটি এবং লোকরা তা নিয়ে নাচানাচি করছে। এসব দেখে মোশি রেগে গেল, রাগের চোটে হাত থেকে পাথর ফলকগুলি নীচে ফেলে দিল এবং পর্বতের পাদদেশে তাদের ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। 20 মোশি সেই সোনার বাছুরের মূর্তিকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর আগুনে সেই মূর্তি গলে গেলে সেই ছাই জলে মিশিয়ে ইস্রায়েলের লোকদের সেই জল পান করতে বাধ্য করল।

21 মোশি হারোণকে বলল, “এই লোকরা তোমার সঙ্গে কি করেছিল যে তুমি ওদের এমন পাপের দিকে ঠেলে দিলে?”

22 হারোণ উত্তর দিল, “মহাশয়, রাগ করো না। তুমি তো জানো এরা সব সময়ই ভুল পথে পা বাড়ায়। 23 ওরা আমায় বলেছিল, ‘মোশি আমাদের মিশর দেশ থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বের করে আনলেও এখন কিন্তু তার কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের জন্য এমন দেবতাসমূহ তৈরী করে দাও যারা আমাদের নেতৃত্ব দেবে।’ 24 তখন আমি ওদের বলেছিলাম, ‘যদি তোমাদের কোন সোনার দুল থাকে তাহলে আমাকে সব দাও।’ ওরা আমাকে সোনার দুল দিলে আমি সেগুলো আগুনে ফেলে দিলে আগুন থেকে ঐ বাছুরটি বার হয়ে এলো।”

25 মোশি দেখল হারোণ লোকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এবং তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। লোকরা বন্য হয়ে উঠেছে। এবং তাদের সমস্ত শত্রুরা এই বোকামী দেখতে পেয়েছে। 26 তাই মোশি সেই শিবিরের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, “কেউ যদি প্রভুকে অনুসরণ করতে চাও তাহলে আমার কাছে এসো।” এবং লেবি বংশজাত লোকরা সবাই দৌড়ে মোশির কাছে চলে এল।

27 তখন মোশি তাদের বলল, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর কি বলেন তা আমি তোমাদের বলব: ‘প্রত্যেকে তার নিজের নিজের তরবারি হাতে তুলে নিয়ে শিবিরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে গিয়ে সমস্ত লোকদের হত্যা করে তাদের শাস্তি দাও। প্রত্যেকে তার বন্ধু ভাই এবং প্রতিবেশীকে হত্যা করবে।’”

28 লেবি বংশজাত প্রত্যেক মানুষ মোশির নির্দেশ পালন করল। সেই দিন অন্তত 3000 ইস্রায়েলবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল। 29 তখন মোশি বলল, “আজ থেকে প্রভু তোমাদের তাঁর সেবার জন্য উৎসর্গ করেছেন এবং আজ তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করেছেন কারণ তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের পুত্রদের এবং ভাইদের বিরুদ্ধে ঝগড়া করেছ।”

30 পরদিন সকালে মোশি সবাইকে বলল, “তোমরা মারাত্মক পাপ কাজ করেছো কিন্তু এখন আমি প্রভুর কাছে যাব এবং চেষ্টা করব যাতে তিনি তোমাদের এই পাপকে ক্ষমা করে দেন।” 31 সুতরাং মোশি আবার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বলল, “প্রভু অনুগ্রহ করে শুনুন। ওরা সোনার দেবতা তৈরী করে মারাত্মক পাপ করেছে। 32 এখন আপনি ওদের এই পাপকে ক্ষমা করে দিন। যদি আপনি ওদের ক্ষমা না করেন তাহলে আপনার লেখা পুস্তক[a] থেকে আমার নাম মুছে দিন।”

33 প্রভু মোশিকে বললেন, “যে আমার বিরুদ্ধে পাপ কাজ করেছে আমি কেবল তার নামই আমার পুস্তক থেকে কেটে ফেলব। 34 তাই এখন তুমি নীচে গিয়ে লোকদের যে দেশে নিয়ে যেতে বলেছি সেই দেশে নিয়ে যাও। আমার দূত তোমাদের আগে পথ দেখাতে দেখাতে যাবে, পাপীর যখন বিনাশের সময় হবে তখন সে শাস্তি পাবেই।” 35 তাই প্রভু লোকদের ওপর একটি মহামারী ছড়িয়ে দিলেন কারণ তারা হারোণকে বাছুরের মূর্তি তৈরী করতে বাধ্য করেছিল।

“আমি তোমার সঙ্গে যাব না”

33 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এবং তোমার লোকদের, যাদের তুমি মিশর থেকে এনেছিলে তাদের অবশ্যই এখান থেকে চলে যেতে হবে। অব্রাহাম, ইস‌্হাক ও যাকোবকে আমি যে দেশ দেব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেই দেশে চলে যাও। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমি ওদের পরবর্তী উত্তরপুরুষদের ঐ দেশ দিয়ে যাব। তাই আমি তোমার আগে একজন দূত পাঠাব এবং কনানীয়, ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের পরাজিত করে ঐ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব। তোমরা সেই ভাল দেশে যাও; সেখানে সব কিছু সুন্দর। কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে যাব না। তোমরা ভীষণ একগুঁয়ে ও জেদী। তোমরা আমাকে ক্রুদ্ধ করেছ। যদি আমি তোমাদের সঙ্গে যাই তাহলে হয়তো আমি তোমাদের ধ্বংস করতে পারি।” এই দুঃসংবাদ শোনার পর লোকরা ভীষন হতাশ হয়ে পড়ল এবং তারা মণিমাণিক্য ব্যবহার করা বন্ধ করে দিল। কেন? কারণ মোশিকে প্রভু বলেছেন, “ইস্রায়েলবাসীকে বলো, ‘তোমরা একগুঁয়ে ও জেদী প্রকৃতির মানুষ। খুব কম সময়ের জন্যও আমি যদি তোমাদের সঙ্গে ভ্রমণ করি তাহলে তোমাদের বিনাশ হতে পারে। সুতরাং যখন আমি স্থির করব ইস্রায়েলকে কি করতে হবে তখন তোমরা নিজেদের দেহ থেকে অলঙ্কারাদি খুলে ফেলো।’” সুতরাং ইস্রায়েলবাসীরা হোরেব পর্বত থেকে তাদের যাত্রাপথে নিজেদের অলঙ্কারাদি খুলে ফেলল।

অস্থায়ী সমাগম তাঁবু

মোশি শিবিরের একটু দূরে অন্য একটি তাঁবু স্থাপন করল। মোশি এই তাঁবুর নাম দিল “সমাগম তাঁবু।” প্রভুকে কেউ যদি কিছু জিজ্ঞাসা করতে চায় তাহলে সে শিবিরের বাইরে ঐ সমাগম তাঁবুতে যেতে পারে। যখন খুশি মোশি ঐ সমাগম তাঁবুতে যেত। সবাই তাকে লক্ষ্য করত। সকলে নিজস্ব তাঁবুর দরজায় দাঁড়িয়ে মোশির সমাগম তাঁবুর অভ্যন্তরে যাওয়া দেখতো। মোশি যখনই ঐ সমাগম তাঁবুতে প্রবেশ করতো তখনই তাঁবুর দরজায় মেঘস্তম্ভ নেমে আসত এবং প্রভু তখন মোশির সঙ্গে কথা বলতেন। 10 লোকরা সমাগম তাঁবুর দরজায় মেঘস্তম্ভ দেখতে পেলেই তারা নিজের নিজের তাঁবুর মধ্যে হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতো।

11 এভাবেই প্রভু মোশির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলত। প্রভু বন্ধুর মতো মোশির সঙ্গে কথা বলতেন। প্রভুর সঙ্গে কথা শেষ করার পর মোশি শিবিরে ফিরে যেত কিন্তু মোশির পরিচারক (দাস), নূনের পুত্র যিহোশূয় তাঁবুর বাইরে বেরোত না।

মোশি প্রভুর মহিমা দর্শন করল

12 মোশি প্রভুকে বলল, “আপনি এই লোকদের নেতৃত্ব দিতে বলেছিলেন কিন্তু আমার সঙ্গে আপনি কাকে পাঠাবেন তা কিন্তু বলেন নি। আপনি বলেছেন, ‘আমি তোমাকে ভাল করে চিনি এবং তোমার ওপর আমি সন্তুষ্ট।’ 13 আমি যদি সত্যিই আপনাকে সন্তুষ্ট করে থাকি তাহলে আমাকে আপনার শিক্ষা ও জ্ঞান দিন। আমি আপনাকে জানতে চাই। তাহলে আমি আপনাকে বরাবর সন্তুষ্ট করতে পারব। মনে রাখবেন যে তাদের সবাই আপনার লোক।”

14 প্রভু উত্তরে বললেন, “আমি নিজে তোমার সঙ্গে যাব, আমি তোমাকে বিশ্রাম দেব।”

15 তখন মোশি প্রভুকে বলল, “আপনি যদি আমাদের সঙ্গে না যান তাহলে আমাদের এই স্থান থেকে সরাবেন না। 16 তাছাড়া, আমরা কি করে বুঝব আপনি আমার এবং আপনার লোকদের ওপর সন্তুষ্ট? আপনি যদি আমাদের সঙ্গে যান তাহলে বুঝব আপনি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে না আসেন, তাহলে আমার এবং আপনার লোকদের মধ্যে এবং পৃথিবীর অন্য জাতির মধ্যে আর কোন পার্থক্য থাকবে না।”

17 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “বেশ আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করব। কারণ আমি তোমার ওপর সন্তুষ্ট এবং আমি তোমাকে ভাল করে জানি।”

18 তখন মোশি বলল, “দয়া করে আপনার মহিমা আমায় দেখান।”

19 তখন প্রভু উত্তর দিলেন, “আমি আমার সমস্ত গুণাবলীকে তোমার সামনে দিয়ে গমণ করাবো। আমিই প্রভু এবং তোমরা যাতে শুনতে পাও সেইজন্য আমি আমার নাম ঘোষণা করব। কারণ আমার যাকে খুশী আমি আমার করুণা ও ভালবাসা দেখাতে পারি। 20 কিন্তু তোমরা আমার মুখ দেখতে পাবে না। আমাকে দেখার পর কেউ বাঁচতে পারবে না।”

21 “আমার খুব কাছেই একটি পাথর আছে; তোমরা সেই পাথরের ওপর দাঁড়াতে পারো। 22 ঐ স্থান দিয়েই আমার মহিমা প্রকাশ পাবে। আমি তোমাদের ঐ পাথরের একটি বিশাল ফাটলে রেখে দেব এবং আমি যখন ওখান দিয়ে যাব তখন আমার হাত তোমাদের ঢেকে দেবে। 23 এরপর আমি তোমাদের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নেব এবং তোমরা আমার পিছন দিক দেখতে পাবে কিন্তু আমার মুখ দেখতে পাবে না।”

মথি 22:1-22

নৈশ ভোজে আমন্ত্রিত লোকদের কাহিনী

(লূক 14:15-24)

22 দৃষ্টান্তের মাধ্যমে যীশু আবার তাদের বলতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, “স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে এই তুলনা দেওয়া যেতে পারে, একজন রাজা যিনি তাঁর ছেলের বিয়ের ভোজ প্রস্তুত করলেন। সেই ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের ডাকবার জন্য তিনি তাঁর দাসদের পাঠালেন, কিন্তু তারা আসতে চাইল না।

“রাজা আবার তাঁর অন্য দাসদের পাঠালেন, বললেন, ‘যারা নিমন্ত্রিত তাদের সকলকে বল, দেখ, আমার ভোজ প্রস্তুত, আমার বলদ ও হৃষ্টপুষ্ট বাছুরগুলো সব মারা হয়েছে, আর সব কিছুই প্রস্তুত। তোমরা বিবাহ ভোজে যোগ দিতে এস।’

“কিন্তু নিমন্ত্রিত লোকেরা তাদের কথায় কান না দিয়ে যে যার কাজে চলে গেল। কেউ বা তার ক্ষেতের কাজে গেল, আবার কেউ গেল তার ব্যবসার কাজে। অন্যরা রাজার সেই দাসদের ধরে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করল ও তাদের খুন করল। এতে রাজা খুব রেগে গেলেন, তিনি তাঁর সৈন্য পাঠিয়ে সেই খুনীদের মেরে ফেললেন, সৈন্যরা তাদের শহরটিও পুড়িয়ে দিল।

“এরপর রাজা তাঁর দাসদের বললেন, ‘বিয়ের ভোজ প্রস্তুত কিন্তু যারা নিমন্ত্রিত হয়েছিল তারা তার যোগ্য ছিল না। তাই তোমরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাও আর যত লোকের দেখা পাও, তাদের সকলকে এই ভোজে যোগ দেবার জন্য ডেকে আনো।’ 10 তখন সেই দাসরা রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে ভাল ও মন্দ যাদের পেল তাদের সকলকে ডেকে আনল। তাতে বিয়ে বাড়ির ভোজের ঘর অতিথিতে ভরে গেল।

11 “কিন্তু রাজা অতিথিদের সঙ্গে দেখা করতে এসে সেখানে একজন লোককে দেখতে পেলেন যে বিয়ে বাড়ির পোশাক পরে আসে নি। 12 রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বন্ধু, বিয়ে বাড়ির উপযুক্ত পোশাক ছাড়াই তুমি কেমন করে এখানে এলে?’ কিন্তু সে চুপ করে থাকল। 13 তখন রাজা তাঁর পরিচারকদের বললেন, ‘এর হাত পা বেঁধে একে বাইরে অন্ধকারে ফেলে দাও, যেখানে লোকেরা কান্নাকাটি করে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষে।’

14 “কারণ অনেকেই আহুত, কিন্তু অল্পই মনোনীত।”

ইহুদী নেতারা যীশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করল

(মার্ক 12:13-17; লূক 20:20-26)

15 তখন ফরীশীরা সেখান থেকে চলে গেল, আর কেমন করে যীশুকে তাঁর কথার ফাঁদে ফেলা যায় সেই পরিকল্পনা করল। 16 তারা হেরোদীয়দের কয়েকজনের সঙ্গে নিজেদের কয়েকজন অনুগামীকে যীশুর কাছে পাঠাল। এই লোকেরা এসে বলল, “গুরু, আমরা জানি আপনি একজন সৎ‌ লোক। ঈশ্বরের পথের বিষয়ে সঠিকভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। আর কে কি বলে তার ধার ধারেন না কারণ লোকে কি ভাববে তাতে আপনার কিছু যায় আসে না। 17 তাহলে আপনার কি মত, কৈসরকে কর দেওয়া উচিত কি না?”

18 যীশু তাদের বদ মতলব বুঝতে পেরে বললেন, “ভণ্ডের দল আমাকে ফাঁদে ফেলতে চাইছ কেন? 19 যে টাকায় কর দেওয়া হয় তা আমাকে দেখাও।” তারা একটা রূপোর টাকা তাঁর কাছে নিয়ে এল। 20 তখন তিনি তাদের বললেন, “এর ওপরে এই মূর্তি ও নাম কার?”

21 তারা বলল, “রোম সম্রাট কৈসরের।”

তখন তিনি তাদের বললেন, “তবে যা কৈসরের তা কৈসরকে দাও, আর যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দাও।”

22 তারা এই জবাব শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল, তাঁকে আর বিরক্ত না করে সেখান থেকে চলে গেল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International