Old/New Testament
14 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, 2 “ওদের বলো, মিগ্দোল এবং সূফ সাগরের মাঝখানে বাল্সফোনের সামনে রাত্রিযাপন করতে। 3 তাহলে ফরৌণ ভাববে যে ইস্রায়েলের লোকরা মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। ওদের আর কোথাও যাবার জায়গা নেই। 4 তখন আমি ফরৌণকে সাহসী করে তুলব যাতে সে তোমাদের তাড়া করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ফরৌণ ও তার সেনাদের পরাজিত করব। এটা আমার সম্মান বাড়াবে। এবং মিশরের লোকরা তখন জানতে পারবে যে আমিই প্রভু।” ইস্রায়েলের লোকরা ঈশ্বরের কথামতোই কাজ করল।
ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করলেন
5 মিশরের রাজা খবর পেলেন যে ইস্রায়েলীয়রা পালিয়েছে। এই খবর শুনে ফরৌণ ও তাঁর সভাসদরা আগের মত মন পরিবর্তন করলেন। ফরৌণ বললেন, “আমরা কেন ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলাম? কেন ওদের পালাতে দিলাম? এখন আমরা আমাদের ক্রীতদাসদের হারালাম।”
6 সুতরাং ফরৌণ তাঁর রথে চড়ে লোকজন সমেত ফিরে গেলেন। 7 ফরৌণ তাঁর সব চেয়ে ভালো 600 জন সারথীকে নিলেন। প্রত্যেকটি রথে একজন করে বিশিষ্ট সভাসদ ছিল। 8 ইস্রায়েলীয়রা তাদের যুদ্ধ জয়ে উঁচু করা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মিশরের রাজা ফরৌণ, যাঁর হৃদয় প্রভুর দ্বারা উদ্ধত হয়েছিল, ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করলেন। 9 মিশরীয় সৈন্যরা তাদের তাড়া করল। ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী, রথারোহী এবং সৈন্য ইস্রায়েলীয়দের ধরে ফেলল যখন তারা সূফ সাগরের কাছে বাল্সফোনের পূর্বে পী-হহীরোতে শিবির করেছিল।
10 ইস্রায়েলের লোকেরা দেখতে পেল ফরৌণ এবং তাঁর সেনারা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তখন তারা ভয় পেয়ে প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে উঠল। 11 তারা মোশিকে বলল, “কেন তুমি আমাদের মিশর থেকে বার করে আনলে? কেন মরার জন্য তুমি আমাদের এই মরুভূমিতে নিয়ে এলে? আমরা অন্ততঃ মিশরে তো শান্তিতে মরতে পারতাম। সেখানে আর কিছু থাক না থাক প্রচুর কবর ছিল। 12 এরকম যে ঘটতে পারে তা কিন্তু আমরা আগেই বলেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, ‘অনুগ্রহ করে আমাদের বিরক্ত কোরো না। আমাদের এখানেই থাকতে দাও, মিশরীয়দের সেবা করতে দাও।’ এই মরুভূমিতে এসে মরার থেকে মিশরীয়দের দাসত্ব অনেক ভাল ছিল।”
13 কিন্তু মোশি উত্তরে বলল, “ভয় পেয়ে পালিয়ে যেও না। দেখো, প্রভু কিভাবে আজ তোমাদের রক্ষা করেন। তোমরা আর কোনও দিন মিশরীয়দের দেখতে পাবে না। 14 তোমাদের কিছুই করতে হবে না। শুধু শান্ত হয়ে দেখে যাও কি ঘটছে। প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন।”
15 সেই সময় প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এখনও কেন আমার সামনে কাঁদছো! ইস্রায়েলীয়দের এগিয়ে যেতে বলো। 16 যখন তুমি সূফ সাগরের ওপর তোমার হাতের লাঠি তুলে ধরবে সূফ সাগর দুভাগ হয়ে যাবে। তখন লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া সেই শুকনো পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে পারবে। 17 আমিই মিশরীয়দের সাহসী করে তুলেছি। তাই ওরা তোমাদের তাড়া করছে। কিন্তু আমি তোমাদের দেখাব যে আমি ফরৌণ, তার সমস্ত সৈন্য, তার অশ্বারোহীসমূহ এবং সারথীদের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। 18 তখন মিশরও জানবে যে আমিই প্রভু। মিশরীয়রাও আমাকে সম্মান জানাবে যখন আমি ফরৌণ, তার অশ্বারোহীগণ এবং সারথীদের পরাজিত করব।”
প্রভু মিশরের সেনাদের পরাজিত করলেন
19 এরপর প্রভুর দূত, যে সামনে থেকে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সে ইস্রায়েলীয়দের পিছন দিকে চলে এলো। তাই এক লম্বা মেঘস্তম্ভ মুহুর্তের মধ্যেই লোকদের সামনে থেকে পিছনে চলে এল।
20 এইভাবে ঐ মেঘস্তম্ভ মিশরীয়দের মাঝখানে বিরাজ করতে থাকল। তখন মিশরীয়দের জন্য অন্ধকার থাকলেও ইস্রায়েলীয়দের জন্য আলো ছিল। তাই ঐ রাত্রে মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কাছে আসতে পারল না।
21 মোশি সূফ সাগরের ওপর তার হাত মেলে ধরল। প্রভু পূর্ব দিক থেকে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি করলেন। এই ঝড় সারারাত ধরে চলতে লাগল। দু’ভাগ হয়ে গেল সমুদ্র। এবং বাতাস মাটিকে শুকনো করে দিয়ে সমুদ্রের মাঝখান বরাবর পথের সৃষ্টি করল। 22 ইস্রায়েলের লোকরা ঐ পথ দিয়ে হেঁটে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের দুদিকে ছিল জলের দেওয়াল। 23 পিছনে ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী সেনা ও রথ ধাওয়া করল। 24 পরদিন সকালে মেঘস্তম্ভ ও অগ্নিশিখার ওপর থেকে প্রভু মিশরীয় সেনাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। তখন প্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ নিয়ে মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে আতঙ্কে ফেলে দিলেন। 25 রথের চাকা আটকে গিয়ে রথ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। মিশরীয়রা চিৎকার করে উঠল, “চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই। প্রভুই ইহুদীদের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।”
26 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “সমুদ্রের ওপর তোমার হাত তুলে ধর। দেখবে তীব্র জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করছে মিশরীয়দের রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের।”
27 মোশি তার হাত সমুদ্রের ওপর মেলে ধরলো। তাই দিনের আলো ফোটার ঠিক আগে সমুদ্র তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেল। মিশরীয়রা জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে দৌড়তে লাগল। কিন্তু প্রভু তাদের সমুদ্রের জলে ঠেলে দিলেন। 28 জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করল রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের। ফরৌণের যে সমস্ত সেনারা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে আসছিল তারা সব ধ্বংস হল। কেউ বেঁচে থাকল না।
29 ইস্রায়েলের লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের পথের দুপাশে ছিল জলের দেওয়াল। 30 সুতরাং সেইদিন এইভাবে প্রভু মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। পরে ইস্রায়েলীয়রা সূফ সাগরের তীরে মিশরীয়দের মৃত দেহের সারি দেখতে পেল। 31 মিশরীয়দের সেই পরিণতি দেখার পর থেকে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর শক্তি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হল। তারা প্রভুকে ভয় ও সম্মান করতে শুরু করল। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করল প্রভুকে এবং তাঁর দাস মোশিকে।
মোশির সঙ্গীত
15 এরপর মোশি এবং ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর উদ্দেশ্যে এই গানটি গাইল:
“আমি প্রভুর উদ্দেশ্যে গান গাইব!
তিনি মহান কাজ করেছেন।
তিনি ঘোড়া এবং ঘোড়সওয়ারদের
সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।
2 প্রভুই আমার শক্তি।
তিনি আমার পরিত্রাতা
এবং আমি তাঁর প্রশংসার গান গাইব।
প্রভু আমার ঈশ্বর,
আমি তাঁর প্রশংসা করব।
প্রভু হলেন আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর।
এবং আমি তাঁকে সম্মান করব।
3 প্রভু হলেন মহান যোদ্ধা।
তাঁর নাম হল প্রভু।
4 ফরৌণের রথ এবং সেনাদের
তিনি সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।
ফরৌণের সেরা সৈন্যরা
সূফ সাগরে ডুবে গেছে।
5 জলের গভীরে তারা তলিয়ে গেছে।
পাথরের মতো তারা জলে ডুবে গেছে।
6 “প্রভু আপনার ডান হাত অসম্ভব শক্তিশালী।
প্রভু আপনার ডান হাত শত্রুবাহিনীকে চুরমার করে দিয়েছে।
7 আপনি আপনার মহান রাজকীয় ঢঙে
আপনার বিরুদ্ধাচারীদের ধ্বংস করেছেন।
আগুনের শিখা যেমন করে ঘর পুড়িয়ে দেয়,
তেমনি আপনার ক্রোধ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
8 আপনার নিঃশ্বাসের একটি সজোর ফুৎকারে জল জমে উঠেছিল।
সেই জলোচ্ছ্বাস একটি নিরেট দেওয়ালে পরিণত হয়েছিল
এবং সমুদ্রের গভীরতাও ঘন হয়ে উঠেছিল।
9 “শত্রুরা বলেছিল,
‘আমি তাদের তাড়া করে ধরে ফেলব।
আমি তাদের সমস্ত ধন-সম্পত্তি লুঠ করব।
আমি তরবারি ব্যবহার করে সব লুঠ করে নেব।
সবকিছু আমার নিজের জন্য নিয়ে যাব।’
10 কিন্তু আপনি আপনার নিঃশ্বাস দিয়ে সমুদ্রকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন
এবং তাদের ঢেকে দিয়েছিলেন।
তারা সীসার মতো
সেই ক্রুদ্ধ সমুদ্রের নীচে চলে গেছে।
11 “প্রভুর মতো আর কোনও ঈশ্বর আছে?
না! আপনার মতো আর কোনও ঈশ্বর নেই।
আপনি অত্যন্ত পবিত্র।
আপনি আশ্চর্যজনক শক্তিশালী।
আপনি মহান অলৌকিক ঘটনা ঘটান।
12 আপনি আপনার ডান হাত প্রসারিত করেছিলেন,
তাই পৃথিবী তাদের গিলে ফেলেছিল।
13 আপনি আপনার মহান করুণা দিয়ে
লোকদের রক্ষা করেছেন।
এবং আপনার শক্তি দিয়ে
ঐ লোকদের আপনার পবিত্র ও সুন্দর দেশে আপনি নিয়ে এসেছেন।
14 “অন্যান্য দেশ এই কাহিনী শুনে ভয় পাবে।
পলেষ্টীয়রা ভয়ে কেঁপে উঠবে।
15 ইদোমের নেতারা ভয়ে কাঁপবে।
মোয়াবের নেতারা ভয়ে কাঁপবে।
কনানবাসীরা উদ্যম হারাবে।
16 ঐ শক্তিশালী লোকরা যখন আপনার ক্ষমতার প্রমাণ পাবে
তখন তারা ভয় পেয়ে যাবে।
ওরা পাথরের মতো অনড় হয়ে থাকবে, প্রভু
যতক্ষণ না আপনার লোকরা চলে যায়:
17 তাদের আপনার পর্বতে নিয়ে যান
যেখানে আপনার বাসস্থান এবং সেখানে তাদের স্থাপন করুন।
আমার প্রভু, ঐ জায়গাটাই হচ্ছে সেই জায়গা যেটা আপনি তৈরী করেছেন।
পবিত্র স্থান যেটাকে আপনার হাত প্রতিষ্ঠা করেছে।
18 “প্রভু চিরকালের জন্য যুগে যুগে শাসন করবেন।”
19 যখন ফরৌণের সমস্ত ঘোড়া, রথ ও অশ্বারোহী সমুদ্রের নীচে চলে গেল, তখন প্রভু আবার সমুদ্রের জল তাদের ওপর ফেরৎ আনলেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে শুকনো পথে হেঁটে গিয়েছিল।
20 তারপর হারোণের বোন মরিয়ম, মহিলা ভাববাদিনী, হাতে একটি খঞ্জনী তুলে নিল। মরিয়ম ও তার মহিলা সঙ্গীরা নাচতে ও গাইতে শুরু করল। গানের যে কথাগুলো মরিয়ম উচ্চারণ করছিল তা হল:
21 “প্রভুর উদ্দেশ্যে গান কর!
তিনি মহান কাজ করেছেন।
তিনি ঘোড়া এবং ঘোড়াসওয়ারীদের
সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।”
ইস্রায়েলীয়রা মরুপ্রান্তরে গিয়ে পড়ল
22 ইস্রায়েলের লোকদের সূফ সাগর পেরোতে মোশি নেতৃত্ব দিয়েছিল। তিন দিন ধরে শূর মরুভূমি অতিক্রম করতে করতে তারা জলের সন্ধান পেল না। 23 তিন দিন পর তারা মারাতে এসে পৌঁছালো। মারাতে জলের সন্ধান মিললেও সেই জল এত তেঁতো ছিল যে তা পানের অযোগ্য। (এরজন্য এই জায়গার নাম রাখা হয়েছিল মারা বা তিক্ততা।)
24 লোকরা মোশির কাছে এসে নালিশ জানালো। তারা বলল, “এখন আমরা কি পান করব?”
25 মোশি প্রভুর কাছে কেঁদে পড়ল। প্রভু তাকে এক গাছের সন্ধান দিলেন। মোশি সেই গাছ ঐ তেঁতো জলে ডুবিয়ে দিতেই সেই জল সুস্বাদু হয়ে উঠল।
ঐ স্থানে প্রভু লোকদের বিচার করে তাদের জন্য একটি আইন প্রণযনও করেছিলেন। প্রভু তাদের বিশ্বাসেরও পরীক্ষা নিলেন। 26 প্রভু বললেন, “তোমরা অবশ্যই তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে মেনে চলবে। তিনি যেটা সঠিক মনে করবেন সেটাই তোমরা করবে। তোমরা যদি প্রভুর সমস্ত নির্দেশ ও বিধি মেনে চলো তাহলে তোমরা মিশরীয়দের মতো অসুস্থ থাকবে না। আমি প্রভু, তোমাদের মিশরীয়দের মতো অসুস্থ করে তুলব না। আমিই সেই প্রভু যিনি তোমাদের আরোগ্য দান করেছেন।”
27 তারপর লোকরা এলীমে এসে উপস্থিত হল। সেখানে বারোটি জলের ঝর্ণা এবং 70টি তাল গাছ ছিল। তারা সেই জায়গায় জলের ধারে তাদের শিবির তৈরি করল।
মোশি ও এলিয়ের সঙ্গে যীশুকে দেখা গেল
(মার্ক 9:2-13; লূক 9:28-36)
17 ছ’দিন পর যীশু পিতর, যাকোব ও তার ভাই যোহনকে সঙ্গে নিয়ে নির্জন এক পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে উঠলেন। 2 সেখানে তাঁদের সামনে যীশুর রূপান্তর হল। তাঁর মুখমণ্ডল সূর্যের মতো উজ্জ্বল ও তাঁর পোশাক আলোর মত সাদা হয়ে গেল। 3 তারপর হঠাৎ মোশি ও এলিয় তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।
4 এই দেখে পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, ভালই হয়েছে যে আমরা এখানে আছি। যদি আপনার ইচ্ছে হয় তবে আমি এখানে তিনটে তাঁবু খাটাতে পারি, একটা হবে আপনার, একটা মোশির জন্য আর একটা এলিয়র জন্য।”
5 পিতর যখন কথা বলছিলেন, সেই সময় একটা উজ্জ্বল মেঘ তাঁদের ঢেকে দিল। সেই মেঘ থেকে একটি রব শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এর প্রতি আমি খুবই প্রীত। তোমরা এঁর কথা শোন।”
6 যীশুর শিষ্যরা একথা শুনে খুব ভয় পেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। 7 তখন যীশু এসে তাদের স্পর্শ করে বললেন, “ওঠো, ভয় করো না।” 8 তাঁরা মুখ তুলে তাকালে যীশু ছাড়া আর কাউকে সেখানে দেখতে পেলেন না।
9 তাঁরা যখন সেই পাহাড় থেকে নেমে আসছিলেন, সেই সময় যীশু তাদের বললেন, “তোমরা যা দেখলে তা মানবপুত্র মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে না ওঠা পর্যন্ত কাউকে বলো না।”
10 তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে ব্যবস্থার শিক্ষকরা কেন বলে থাকেন যে, প্রথমে এলিয়র আসা আবশ্যক?”[a]
11 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “এলিয় আসবেন, আর তিনি সব কিছু পুনঃস্থাপন করবেন। 12 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলিয় এসে গেছেন, আর লোকে তাকে চেনেনি। লোকেরা তাঁর প্রতি যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। মানবপুত্রকেও তাদের হাতে সেই একই রকম নির্যাতন ভোগ করতে হবে।” 13 তখন তাঁর শিষ্যরা বুঝতে পারলেন যে, তিনি তাঁদের বাপ্তিস্মদাতা যোহনের কথা বলছেন।
যীশু অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করলেন
(মার্ক 9:14-29; লূক 9:37-43)
14 যীশু যখন লোকদের মাঝে আবার ফিরে এলেন, তখন একজন লোক যীশুর কাছে এসে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বলল, 15 “প্রভু আমার ছেলেটিকে দয়া করুন। তার মৃগী রোগ হয়েছে, তাতে সে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। সে প্রায়ই হয় আগুনে, নয় তো জলে পড়ে যায়। 16 আমি তাকে আপনার শিষ্যদের কাছে এনেছিলাম, কিন্তু তাঁরা তাকে সুস্থ করতে পারেন নি।”
17 এর উত্তরে যীশু বললেন, “তোমরা অবিশ্বাসী ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক। কতকাল আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব? কতকাল আমি তোমাদের বহন করব? ছেলেটিকে আমার কাছে নিয়ে এস।” 18 তখন যীশু সেই ভূতকে তিরস্কার করলে ভূতটি ছেলেটির মধ্য থেকে বার হয়ে গেল, আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই ছেলেটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল।
19 পরে শিষ্যরা একান্তে যীশুর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা সেই ভূতকে তাড়াতে পারলাম না কেন?”
20 যীশু তাদের বললেন, “তোমাদের অল্প বিশ্বাসের কারণেই তোমরা তা পারলে না। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ছোট্ট সরষে দানার মতো এতটুকু বিশ্বাসও যদি তোমাদের থাকে, তবে তোমরা যদি এই পাহাড়কে বল, ‘এখান থেকে সরে ওখানে যাও’ তবে তা সরে যাবে। তোমাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব হবে না।” 21 [b]
যীশু নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বললেন
(মার্ক 9:30-32; লূক 9:43-45)
22 যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা একসঙ্গে যখন গালীলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন যীশু তাঁদের বললেন, “মানবপুত্রকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। 23 তারা তাঁকে হত্যা করবে; কিন্তু তিন দিনের দিন মানবপুত্র মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।” এতে শিষ্যরা খুবই দুঃখিত হলেন।
কর দেওয়ার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
24 যীশু ও তাঁর শিষ্যরা কফরনাহূমে গেলে, মন্দিরের জন্য যারা কর আদায় করত তারা পিতরের কাছে এসে বলল, “আপনাদের গুরু কি মন্দিরের কর দেন না?”
25 পিতর বললেন, “হ্যাঁ, দেন।”
আর তিনি ঘরে গিয়ে কিছু বলার আগেই যীশু প্রথমে তাঁকে বললেন, “শিমোন তোমার কি মনে হয়? এই পৃথিবীর রাজারা কাদের কাছ থেকে নানারকম কর আদায় করে? তারা কি তাদের নিজের সন্তানদের কাছ থেকে কর আদায় করে, না বাইরের লোকেদের কাছ থেকে কর আদায় করে?”
26 পিতর বললেন, “তারা অন্য লোকদের কাছ থেকেই আদায় করে।”
তখন যীশু বললেন, “তাহলে তাদের সন্তানদের জন্য ছাড় আছে। 27 কিন্তু আমরা যেন ঐ কর আদায়কারীদের কোনরকম অপমান বোধের কারণ না হই, সেই জন্য তুমি হ্রদে গিয়ে বঁড়শী ফেল আর প্রথমে যে মাছটা উঠবে তা নিয়ে এসে সেই মাছটার মুখ খুললে তুমি একটি মুদ্রা পাবে, ওটা দিয়ে আমার ও তোমার দেয় কর মিটিয়ে দিও।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International