Old/New Testament
নিস্তারপর্ব
12 মোশি ও হারোণ মিশরে থাকার সময় প্রভু তাদের বললেন, 2 “এই মাস হবে তোমাদের জন্য বছরের প্রথম মাস। 3 এই আদেশ সমস্ত ইস্রায়েলবাসীর জন্য: এই মাসের দশম দিনে প্রত্যেকে তার বাড়ীর জন্য একটি করে পশু জোগাড় করবে। পশুটি একটি মেষ অথবা একটি ছাগলও হতে পারে। 4 যদি তার বাড়ীতে একটি গোটা পশুর মাংস খাওয়ার মতো যথেষ্ট লোক না থাকে তবে সে তার কিছু প্রতিবেশীকে মাংস ভাগ করে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করবে। প্রত্যেকের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট মাংস থাকবে। 5 পশুটিকে হতে হবে একটি এক বছরের পুংশাবক এবং সম্পূর্ণরূপে স্বাস্থ্যবান। 6 মাসের চতুর্দশ দিন পর্যন্ত এই পশুটির ওপর তোমাদের নজর রাখতে হবে। সেই দিন ইস্রায়েলীয় মণ্ডলীর সমস্ত লোকরা এই পশুটিকে গোধুলি বেলায় হত্যা করবে। 7 তোমরা এই প্রাণীর রক্ত সংগ্রহ করে, যে বাড়ীতে লোকরা ভোজ খাবে সেই বাড়ীর দরজার কাঠামোর ওপরে ও পাশে এই রক্ত লাগিয়ে দেবে।
8 “এই দিন রাতে তোমরা মেষটিকে পুড়িয়ে তার মাংস খাবে। তোমরা তেঁতো শাক ও খামিরবিহীন রুটিও খাবে। 9 মেষটিকে কাঁচা অথবা জলে সিদ্ধ করা অবস্থায় তোমাদের খাওয়া উচিৎ হবে না, কিন্তু আগুনের তাপে সেঁকবে। মেষশাবকটির মাথা, পা এবং ভিতরের অংশ সব কিছুই অক্ষুন্ন থাকবে। 10 তোমরা সব মাংস রাতের মধ্যেই খেয়ে শেষ করবে। যদি পরদিন সকালে কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তা পুড়িয়ে ফেলবে।
11 “যখন তোমরা আহার করবে তখন তোমরা যাত্রার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে থাকার পোশাকে থাকবে। তোমাদের পায়ে জুতো থাকবে, হাতে ছড়ি থাকবে এবং তোমরা তাড়াহুড়ো করে খাবে। কারণ এ হল প্রভুর নিস্তারপর্ব।
12 “আমি মিশরীয়দের প্রথমজাত শিশুগুলিকে এবং তাদের সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবকগুলিকে হত্যা করব। এইভাবে, আমি মিশরের সমস্ত দেবতাদের ওপর রায় দেব যাতে তারা জানতে পারে যে আমিই প্রভু। 13 কিন্তু তোমাদের দরজায় লাগানো রক্ত একটি বিশেষ চিহ্নের কাজ করবে। যখন আমি ঐ রক্ত দেখব তখন আমি তোমাদের বাড়ীগুলোর ওপর দিয়ে চলে যাব। আমি শুধু মিশরের লোকদের ক্ষতি করব। এইসব মারাত্মক রোগে তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না।
14 “তাই তোমরা সবসময় মনে রাখবে যে আজ তোমাদের একটি বিশেষ ছুটির দিন। তোমাদের উত্তরপুরুষরা এই ছুটির দিনের মাধ্যমে প্রভুকে সম্মান জানাবে। 15 এই ছুটিতে তোমরা সাতদিন ধরে খামিরবিহীন রুটি খাবে, ছুটির প্রথম দিনে তোমরা তোমাদের বাড়ী থেকে সমস্ত খামির সরিয়ে ফেলবে। এই ছুটিতে পুরো সাত দিন ধরে কেউ কোন খামির খাবে না। যদি কেউ সেটা খায় তবে সেই ব্যক্তিকে ইস্রায়েলীয়দের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে। 16 এই ছুটির প্রথম ও শেষ দিনে পবিত্র সমাগম অনুষ্ঠিত হবে। তোমরা এই দিনগুলোতে কোন কাজ করবে না। তোমরা এই দিনগুলিতে একমাত্র তোমাদের আহারের জন্য খাদ্য তৈরী করতে পারবে। 17 তোমরা খামিরবিহীন রুটির উৎসবের কথা মনে রাখবে। কেন? কারণ এই দিন আমি তোমাদের সব লোককে দলে দলে মিশর থেকে বের করে এনেছিলাম, তাই তোমাদের সব উত্তরপুরুষ এই দিনটি স্মরণ করবে, এই নিয়ম চিরকাল থাকবে। 18 তাই প্রথম মাসের চতুর্দশ দিন বিকেলে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাওয়া শুরু করবে। তোমরা ঐ রুটিটি ঐ মাসের একবিংশ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবে। 19 সাতদিন ধরে তোমাদের ঘরে কোন খামির থাকবে না, যে কোন ব্যক্তি সে ইস্রায়েলের নাগরিক হোক্ বা বিদেশী যে এই সময় খামির খাবে তাকে ইস্রায়েলের বাকি লোকদের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে। 20 এই ছুটিতে তোমরা অবশ্যই খামির খাবে না, তোমরা যেখানেই থাক না কেন খামিরবিহীন রুটি খাবে।”
21 তাই মোশি ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত প্রবীণদের ডেকে বলল, “তোমাদের পরিবারের জন্য মেষশাবক জোগাড় কর এবং নিস্তারপর্বের জন্য মেষশাবকটিকে হত্যা কর। 22 এক আঁটি করে এসোব নিয়ে পাত্রে রাখা রক্তে ডুবিয়ে তা দিয়ে দরজার কাঠামোর ওপর ও পাশের দিক রঙ করো। সকালের আগে কেউ নিজের বাড়ী ত্যাগ করবে না। 23 এই সময়, প্রভু মিশরের ভেতর দিয়ে মিশরীয়দের হত্যা করতে যাবেন। যখন তিনি দরজার কাঠামোর পাশে ও ওপরে রক্তের প্রলেপ দেখবেন, তখন তিনি সেই দরজাগুলোর ওপর দিয়ে যাবেন। প্রভু ধ্বংসকারীকে তোমাদের বাড়ীতে এসে আঘাত করতে দেবেন না। 24 তোমরা অবশ্যই এই আদেশ মনে রাখবে, এই নিয়ম তোমাদের ও তোমাদের উত্তরপুরুষদের জন্য চিরকাল থাকবে। 25 যখন তোমরা প্রভুর প্রতিশ্রুতি মত তাঁর দেওয়া ভূখণ্ডে যাবে তখন তোমাদের এই জিনিসগুলি অবশ্যই মনে রাখতে হবে। 26 যখন তোমাদের সন্তানরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমরা কেন এই উৎসব করছি?’ 27 তখন তোমরা বলবে, ‘এই নিস্তারপর্ব প্রভুকে সম্মান জানাবার জন্য। কেন? কারণ যখন আমরা মিশরে ছিলাম তখন প্রভু আমাদের ইস্রায়েলবাসীদের বাড়ীগুলিকে নিস্তার দিয়েছিলেন। প্রভু মিশরীয়দের হত্যা করেছিলেন কিন্তু আমাদের লোকদের বাড়ীগুলো রক্ষা করেছিলেন।’”
সুতরাং লোকে নত হয়ে প্রভুর উপাসনা করল। 28 প্রভু মোশি ও হারোণকে এই আদেশ দিয়েছিলেন তাই ইস্রায়েলবাসী প্রভুর আদেশমতো কাজ করল।
29 মধ্যরাতে মিশরের সমস্ত প্রথম নবজাতক পুত্রদের প্রভু হত্যা করেছিলেন। ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে জেলের বন্দীর প্রথমজাত পুত্র পর্যন্ত। সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবককেও হত্যা করা হল। 30 সেই রাতে মিশরের প্রত্যেক ঘরে কেউ না কেউ মারা গেল। ফরৌণ, তাঁর কর্মচারী ও মিশরের সমস্ত লোক উচ্চস্বরে কান্না শুরু করল।
ইস্রায়েলীয়দের মিশর ত্যাগ
31 তাই, সেই রাতে ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “উঠে পড়, আমাদের সকলকে ছেড়ে দাও এবং চলে যাও। তুমি ও তোমার ইস্রায়েলের লোকরা যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তোমরা যেমন বলেছিলে, গিয়ে প্রভুর উপাসনা কর। 32 তোমাদের চাহিদা মতো সমস্ত গরু ও মেষের দল তোমরা নিয়ে যেতে পারো। যাও! যখন তোমরা যাবে আমায় আশীর্বাদ করার জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো।” 33 মিশরীয়রা তাদের তাড়াতাড়ি চলে যাবার জন্য মিনতি করল। কেন? কারণ তারা বলল, “তোমরা না চলে গেলে আমরা সকলে মারা যাব!”
34 ইস্রায়েলীয়রা তাদের রুটিতে খামির দেবার সময় পেল না। তারা ভিজে ময়দার তালের পাত্র কাপড়ে জড়িয়ে কাঁধে বয়ে নিয়ে চলল। 35 তারপর ইস্রায়েলের লোকরা মোশির কথামতো তাদের মিশরীয় প্রতিবেশীদের কাছে গিয়ে কাপড় ও সোনা রূপার তৈরী জিনিস চাইল।
36 প্রভু মিশরীয়দের ইস্রায়েলীয়দের প্রতি দয়ালু করে তুললেন যাতে মিশরীয়রা তাদের ধনসইদ ইস্রায়েলবাসীদের হাতে তুলে দেয়! এইভাবে, ইস্রায়েলীয়রা মিশরীয়দের লুন্ঠন করল।
37 ইস্রায়েলের লোকরা রামিষেষ থেকে সুক্কোতে যাত্রা করল। শিশুরা ছাড়াই সেখানে প্রায় 600,000 লোক ছিল। 38 সেখানে প্রচুর মেষ, গবাদি পশু এবং জিনিসপত্র ছিল। তাদের সঙ্গে অনেক অ-ইস্রায়েলীয় লোক গিয়েছিল। 39 যেহেতু তাদের মিশরের বাইরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, সেই হেতু তারা মাখা ময়দায়়, যেটা তারা মিশর থেকে এনেছিল, খামির মেশাবার সময় পায়নি। এবং যাত্রার জন্য কোন বিশেষ খাবার প্রস্তুত করারও সময় হয় নি। তাই তারা খামিরবিহীন রুটিই সেঁকে নিয়েছিল।
40 ইস্রায়েলীয়বাসীরা 430 বছর ধরে মিশরে বাস করেছিল। 41 প্রভুর সৈন্যরা[a] 430 বছর পর সেই বিশেষ দিনে মিশর ত্যাগ করেছিল। 42 তাই সেটা ছিল একটি বিশেষ রাত্রি কারণ প্রভু তাদের মিশর থেকে বাইরে বার করে আনার জন্য লক্ষ্য রাখছিলেন। সেইভাবে, সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুকে সম্মান জানানোর জন্য চিরকাল এই বিশেষ রাতটির প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
43 প্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “এই হল নিস্তারপর্বের বলির নিয়মাবলী: কোন বিদেশী এই নিস্তারপর্বে আহার করবে না। 44 কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি কোন দাস কেনে এবং তাকে সুন্নৎ করায় তাহলে সেই দাস নিস্তারপর্ব খেতে পারবে। 45 কিন্তু যে লোক তোমার দেশের একজন সাময়িক বাসিন্দা বা ভাড়া করা কর্মী তার নিস্তারপর্ব ভোজ খাওয়া উচিৎ নয়। এই নিস্তারপর্ব শুধুমাত্র ইস্রায়েলের লোকদের জন্য।
46 “প্রত্যেক পরিবার একটি বাড়ীতেই আহার করবে। কোনও খাবার বাড়ীর বাইরে যাবে না, মেষ শাবকের কোন হাড় ভাঙ্গবে না। 47 সমস্ত ইস্রায়েল প্রজাতির মানুষ এই উৎসব পালন করবে। 48 যদি ইস্রায়েলীয় ছাড়া অন্য কোন উপজাতির লোক তোমাদের সঙ্গে থাকে এবং তোমাদের খাবারে ভাগ বসাতে চায় তবে তাকে এবং তার পরিবারের প্রত্যেক পুরুষকে সুন্নৎ করাতে হবে। তাহলে সে অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের সমকক্ষ হয়ে যাবে এবং তাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেতে পারবে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির সুন্নৎ না করানো হয় তবে সে এই খাবার আহার করতে পারবে না। 49 এই নিয়ম সকলের জন্যই প্রযোজ্য। এই নিয়মটি ইস্রায়েলীয় অথবা অ-ইস্রায়েলীয় সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।”
50 তাই প্রভু মোশি ও হারোণকে যা আদেশ দিয়েছিলেন সমস্ত ইস্রায়েলের লোক তা পালন করল। 51 তাই সেই দিন প্রভু এইভাবে দলে দলে ইস্রায়েলবাসীদের মিশর দেশ থেকে বাইরে বার করে আনলেন।
13 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, 2 “ইস্রায়েলের প্রতিটি নারীর প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে আমার উদ্দেশ্যে দান কর। এমনকি প্রত্যেকটি পশুর প্রথম পুরুষ শাবকটিও আমার হবে।”
3 মোশি লোকদের বলল, “এই দিনটিকে মনে রেখো। তোমরা মিশরের ক্রীতদাস ছিলে। কিন্তু প্রভু তাঁর মহান শক্তি দিয়ে এই দিনে তোমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন। তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে। 4 আজ আবীব মাসের (বসন্তকালের) এই দিনে তোমরা মিশর ত্যাগ করেছ। 5 প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশ তোমাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রভু তোমাদের এই বিশাল সম্পদে ভরা শস্য শ্যামল দেশে নিয়ে আসার পর তোমরা অবশ্যই প্রতি বছর প্রথম মাসের এই বিশেষ দিনে উপাসনা করবে।
6 “সাতদিন ধরে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে। সাত দিনের দিন ভোজন উৎসব করবে। এই মহাভোজ উৎসব হবে প্রভুকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে। 7 তাই সাতদিন ধরে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে। তোমাদের দেশের কোথাও কোন খামিরবিশিষ্ট রুটি অবশ্যই থাকবে না। 8 সেইদিন তোমরা তোমাদের সন্তানদের বলবে, ‘প্রভু আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছেন বলে আমরা এই মহাভোজ উৎসব পালন করি।’
9 “এই বিশ্রামের দিনটিকে কোনও বিশেষ দিনে হাতে বাঁধা সুতোর মতো তোমাদের মনে রাখা উচিৎ।[b] মনে রাখবে দুই চোখের মাঝখানে কপালে লাগানো তিলকের মতো। এই ছুটির দিনটি তোমাদের প্রভুর শিক্ষামালাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে। এটা তোমাদের সাহায্য করবে প্রভুর মহান শক্তিকে মনে রাখতে যিনি তোমাদের মিশর থেকে মুক্ত করেছেন। 10 সুতরাং প্রতি বছর ছুটির দিনটিকে তোমরা প্রতি বছর সঠিক সময় স্মরণ করবে।
11 “তোমাদের পূর্বপুরুষদের এবং তোমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি মতো প্রভু তোমাদের কনানীয়দের দেশে নিয়ে যাবেন। কিন্তু প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তোমাদের তিনি এই দেশ দিয়ে দেবেন। ঈশ্বর তোমাদের এই দেশ দেওয়ার পর, 12 তোমরা কিন্তু তাঁকে তোমাদের প্রথম পুত্র সন্তান এবং ভূমিষ্ট হওয়া প্রথম পুরুষ শাবককে প্রভুর উদ্দেশ্যে দান করবে। 13 প্রতিটি গাধার প্রথমজাত পুরুষ শাবককে প্রতিটি মেষ শাবকের বিনিময়ে প্রভুর কাছ থেকে কিনে মুক্ত করে আনতে পারবে। যদি মুক্ত করতে না পারো তাহলে গাধার শাবকটিকে ঘাড় মটকে হত্যা করবে। এবং সেটাই হবে প্রভুর প্রতি নৈবেদ্য। কিন্তু মানুষের প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের অবশ্যই প্রভুর কাছ থেকে ফেরৎ নিয়ে আসতে হবে।
14 “ভবিষ্যতে তোমাদের সন্তানরা জিজ্ঞাসা করবে, তোমরা এগুলো কেন করলে, ‘এগুলোর মানেই বা কি?’ তখন তোমরা বলবে, ‘আমরা মিশরে দাসত্ব করতাম। কিন্তু প্রভুই তাঁর মহান শক্তি প্রয়োগ করে আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন। 15 মিশরে ফরৌণ ছিলেন ভীষণ জেদী। তিনি কিছুতেই আমাদের মুক্তি দিচ্ছিলেন না। তাই প্রভু তখন সে দেশের প্রত্যেক প্রথমজাত সন্তানদের হত্যা করেছিলেন। প্রভু মানুষ ও পশু উভয়েরই প্রথমজাত পুরুষ সন্তানদের হত্যা করেছিলেন। সেইজন্যই আমরা সমস্ত প্রথমজাত পুং পশুদের প্রভুর কাছে উৎসর্গ করি এবং প্রভুর কাছ থেকে আমাদের প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের কিনে নিই।’ 16 এরই চিহ্ন হিসাবে তোমাদের হাতে সুতো বাঁধা এবং দুই চোখের মাঝখানে তিলক, যাতে তোমরা মনে রাখতে পার যে প্রভু তাঁর পরাক্রম শক্তি প্রয়োগ করে আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছেন।”
মিশর দেশ ত্যাগ করার যাত্রাপথ
17 ফরৌণ যখন লোকদের চলে যেতে দিলেন, ঈশ্বর তাদের পলেষ্টীয় দেশের মধ্যে দিয়ে ভূমধ্যসাগর বরাবর সহজ সমুদ্র পথ ব্যবহার করতে দেন নি, যদিও সেটা রাস্তা ছিল। ঈশ্বর বলেছিলেন, “ঐ দিক দিয়ে গেলে যুদ্ধ করতে হবে। তখন লোকরা মত পরিবর্তন করে আবার মিশরেই ফিরে যেতে পারে।”
18 তাই ঈশ্বর তাদের সূফ সাগরের দিকবর্তী মরুভূমির মধ্যে দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। মিশর ত্যাগ করার সময় ইস্রায়েলের লোকরা যুদ্ধের পোশাকে নিজেদের সজ্জিত করল।
যোষেফ ঘরে গেল
19 মোশি যোষেফের অস্থি বয়ে নিয়ে চলল। (যোষেফ মারা যাবার আগে ইস্রায়েলের পুত্রদের এই কাজ করার প্রতিশ্রুতি করিয়ে নিয়েছিল। যোষেফ বলেছিল, “ঈশ্বর তোমাদের যখন রক্ষা করবেন তখন তোমরা মিশর দেশ থেকে আমার অস্থি সকল বয়ে নিয়ে এসো।”)
প্রভু তাঁর লোকদের নেতৃত্ব দিলেন
20 ইস্রায়েলীয়রা সুক্কোৎ ছেড়ে এসেছিল এবং এথমে, যেটা মরুভুমির কাছে ছিল, সেখানে তাঁবু গাড়ল। 21 প্রভু সেই সময় তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে এলেন। সেই যাত্রার সময় প্রভু পথ দেখানোর জন্য দিনের বেলায় লম্বা মেঘ স্তম্ভ এবং রাতের বেলায় আগুনের শিখা ব্যবহার করতেন। ঐ আগুনের শিখা রাতের বেলায় তাদের পথ চলার আলো যোগাতো। 22 লম্বা মেঘ স্তম্ভ সারাদিন তাদের সঙ্গে থাকত এবং রাতে থাকত আগুনের শিখা।
ইহুদী নেতারা যীশুকে পরীক্ষা করলেন
(মার্ক 8:11-13; লূক 12:54-56)
16 ফরীশী ও সদ্দূকীরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তারা ঐশ্বরিক শক্তির চিহ্নস্বরূপ কোন অলৌকিক কাজ করে দেখাতে বললেন।
2 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “সন্ধ্যা হলে তোমরা বলে থাকো দিনে আবহাওয়া ভাল থাকবে, কারণ আকাশের রঙ লাল হয়েছে। 3 আবার সকাল বেলা বলে থাকো, আজকে ঝোড়ো আবহাওয়া চলবে কারণ আজ আকাশ লাল ও অন্ধকার হয়েছে। তোমরা আকাশের অবস্থা ভালই বিচার করে বোঝ, অথচ কালের চিহ্ন বুঝতে পারো না। 4 এ যুগের দুষ্ট ও ভ্রষ্টাচারী লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখানো হবে না।” এরপর যীশু তাদের ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।
ইহুদী নেতাদের বিরুদ্ধে যীশুর সতর্কবাণী
(মার্ক 8:14-21)
5 যীশু ও তাঁর শিষ্যরা হ্রদের ওপারে যাবার সময় সঙ্গে রুটি নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলেন। 6 তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা সাবধান! ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামির থেকে সতর্ক থেকো।”
7 শিষ্যরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “আমরা রুটি আনিনি বলে সম্ভবতঃ উনি এই কথা বলছেন?”
8 তাঁরা কি বলাবলি করছেন, তা জানতে পেরে যীশু বললেন, “হে অল্প-বিশ্বাসী মানুষ, তোমরা নিজেদের মধ্যে কেন বলাবলি করছ যে তোমাদের রুটি নেই? 9 তোমরা কি বোঝ না অথবা তোমাদের কি মনে নেই সেই পাঁচ হাজার লোকের জন্য পাঁচ খানা রুটির কথা আর তারপরে কত টুকরি তোমরা ভর্ত্তি করেছিলে? 10 আবার সেই চার হাজার লোকের জন্য সাতখানা রুটির কথা, আর কত টুকরি তোমরা তুলে নিয়েছিলে? 11 তোমরা কেন বুঝতে পার না যে আমি তোমাদের রুটির বিষয় বলিনি? আমি তোমাদের ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামির থেকে সতর্ক থাকতে বলেছি।”
12 তখন তাঁরা বুঝতে পারলেন যে রুটির খামির থেকে তিনি তাঁদের সতর্ক হতে বলেন নি, কিন্তু বলেছিলেন তাঁরা যেন ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা থেকে সাবধান হন।
পিতর বললেন যীশুই খ্রীষ্ট
(মার্ক 8:27-30; লূক 9:18-21)
13 এরপর যীশু কৈসরিয়া, ফিলিপী অঞ্চলে এলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞেস করলেন, “মানবপুত্র[a] কে? এ বিষয়ে লোকে কি বলে?”
14 তাঁরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন, কেউ বলে এলিয়,[b] আবার কেউ বলে আপনি যিরমিয়[c] বা ভাববাদীদের মধ্যে কেউ একজন হবেন।”
15 তিনি তাঁদের বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?”
16 এর উত্তরে শিমোন পিতর বললেন, “আপনি সেই মশীহ (খ্রীষ্ট), জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।”
17 এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “যোনার ছেলে শিমোন, তুমি ধন্য, কোনো মানুষের কাছ থেকে একথা তুমি জাননি, কিন্তু আমার স্বর্গের পিতা একথা তোমায় জানিয়েছেন। 18 আর আমিও তোমাকে বলছি, তুমি পিতর[d] আর এই পাথরের ওপরেই আমি আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলব। মৃত্যুর কোন শক্তি[e] তার ওপর জয়লাভ করতে পারবে না। 19 আমি তোমাকে স্বর্গরাজ্যের চাবিগুলি দেব, তাতে তুমি এই পৃথিবীতে যা বাঁধবে তা স্বর্গেও বেঁধে রাখা হবে। আর পৃথিবীতে যা হতে দেবে তা স্বর্গেও হতে দেওয়া হবে।”
20 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন, যেন তারা কাউকে না বলে তিনিই খ্রীষ্ট।
যীশুর নিজের মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বানী
(মার্ক 8:31–9:1; লূক 9:22-27)
21 সেই সময় থেকে যীশু তাঁর শিষ্যদের জানাতে লাগলেন যে তাঁকে অবশ্যই জেরুশালেমে যেতে হবে। আর সেখানে কিভাবে তাঁকে ইহুদী নেতা, প্রধান যাজক ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হবে। তাঁকে মেরে ফেলা হবে ও তিন দিনের মাথায় তিনি মৃত্যুলোক থেকে বেঁচে উঠবেন।
22 তখন পিতর তাঁকে একপাশে ডেকে নিয়ে ভর্ৎসনার সুরে বললেন, “প্রভু, এসবের হাত থেকে ঈশ্বর আপনাকে রক্ষা করুন। এর কোন কিছুই আপনার প্রতি ঘটবে না।”
23 যীশু পিতরের দিকে ফিরে বললেন, “আমার কাছ থেকে দূর হও শয়তান! তুমি আমার বাধা স্বরূপ! তুমি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে এ বিষয় চিন্তা করছ, ঈশ্বরের যা তা তুমি ভাবছ না।”
24 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “কেউ যদি আমায় অনুসরণ করতে চায় তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক আর নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসারী হোক্। 25 যে কেউ নিজের জীবন রক্ষা করতে চায়, সে তা হারাবে। কিন্তু যে আমার জন্য তার নিজের প্রাণ হারাতে চাইবে সে তা রক্ষা করবে। 26 কেউ যদি সমস্ত জগত লাভ করে তার প্রাণ হারায় তবে তার কি লাভ? প্রাণ ফিরে পাবার জন্য তার দেবার মতো কি-ই বা থাকতে পারে? 27 মানবপুত্র যখন তাঁর স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর পিতার মহিমায় আসবেন, তখন তিনি প্রত্যেক লোককে তার কাজ অনুসারে প্রতিদান দেবেন। 28 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছে যারা কোনও মতে মৃত্যু দেখবে না, যে পর্যন্ত মানবপুত্রকে তাঁর রাজ্যে আসতে না দেখে।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International