Old/New Testament
মোশির জন্য প্রমাণ
4 তখন মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “কিন্তু আপনি আমাকে পাঠিয়েছেন বললেও ইস্রায়েলের লোকরা তা বিশ্বাস করতে চাইবে না। বরং তারা উল্টে বলবে, ‘প্রভু তোমাকে দর্শন দেন নি।’”
2 কিন্তু প্রভু মোশিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার হাতে ওটা কি?”
মোশি উত্তর দিল, “এটা আমার পথ চলার লাঠি।”
3 তখন প্রভু বললেন, “ঐ লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেল।”
প্রভুর কথামতো মোশি তার হাতের পথ চলার লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতেই ঐ লাঠি তত্ক্ষনাত্ সাপে পরিণত হল। মোশি তা দেখে ভয়ে পালাতে যাচ্ছে দেখে 4 প্রভু মোশিকে বললেন: “যাও কাছে গিয়ে সাপটিকে লেজের দিক থেকে ধরো।”
তখন মোশি সাপটির লেজ ধরে ঝোলাতেই দেখল সাপটি আবার লাঠিতে পরিণত হল। 5 তখন প্রভু বললেন, “লাঠি দিয়ে এই চমৎকারিত্ব দেখলেই লোকরা বিশ্বাস করবে যে তুমি প্রভু, তোমার পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের দেখা পেয়েছ। দেখা পেয়েছ অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের ঈশ্বরের।”
6 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে আরও একটি প্রমাণ দেব। আলখাল্লার নীচে হাত রাখো।”
তাই মোশি আলখাল্লা খুলে হাত ভেতরে রাখলো। তারপর সে তার হাত বার করে দেখল হাতটি শ্বেতীতে ভরে গেছে।
7 তখন প্রভু বললেন, “এবার আবার আলখাল্লার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দাও।” তাই মোশি আবার তার হাত আলখাল্লার ভেতরে ঢুকিয়ে দিল এবং তা বার করে আনার পর মোশি দেখল তার হাত আবার আগের মতোই স্বাভাবিক সুন্দর হয়ে গেছে।
8 তারপর প্রভু বললেন, “যদি লোকরা লাঠিকে সাপ বানানোর কীর্তি দেখার পরও তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে হাতের ব্যাপারটি দেখাবে। তখন তোমাকে তারা বিশ্বাস করবে। 9 যদি এই দুটো প্রমাণ দেখানোর পরও লোকরা তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে নীলনদ থেকে সামান্য জল নেবে। সেই জল মাটিতে ঢালবে এবং জল মাটিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তা রক্তে পরিণত হবে।”
10 তখন মোশি প্রভুর উদ্দেশ্যে বললেন, “কিন্তু প্রভু আমি তো একজন চতুর বক্তা নই। আমি কোনোকালেই সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। এবং এখনও আপনার সঙ্গে কথা বলার পরেও আমি সুবক্তা হতে পারি নি। আপনি জানেন যে আমি ধীরে ধীরে কথা বলি এবং কথা বলার সময় ভাল ভাল শব্দ চয়ন করতে পারি না।”
11 তখন প্রভু তাকে বললেন, “মানুষের মুখ কে সৃষ্টি করেছে? এবং কে একজন মানুষকে বোবা ও কালা তৈরী করে? কে মানুষকে অন্ধ তৈরী করে? কে মানুষকে দৃষ্টিশক্তি দেয়? আমি যিহোবা। আমিই একমাত্র এইসব করতে পারি। 12 সুতরাং যাও। যখন তুমি কথা বলবে তখন আমি তোমায় কথা বলতে সাহায্য করব। আমিই তোমার মুখে শব্দ জোগাব।”
13 তবু মোশি বলল, “হে আমার প্রভু, আমার একটাই অনুরোধ, আপনি এই কাজের জন্য অন্য একজনকে মনোনীত করুন, আমাকে নয়।”
14 মোশির প্রতি প্রভু তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “বেশ! তাহলে তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমি তোমার ভাই হারোণকে তোমার সঙ্গে দিচ্ছি। হারোণ লেবীয় পরিবারের সন্তান এবং সে বেশ ভাল বক্তা। হারোণ ইতিমধ্যেই তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসছে। এবং সে তোমাকে দেখে খুশীই হবে। 15 হারোণ তোমার সঙ্গে ফরৌণের কাছে যাবে। তোমাদের কি বলতে হবে তা আমি বলে দেব। কি করতে হবে তা আমি তোমাদের শিখিয়ে দেব এবং তুমি তা হারোণকে বলে দেবে। 16 তোমার হয়ে হারোণ লোকদের সঙ্গে কথা বলবে। তুমি হবে তার কাছে ঈশ্বরের মতো। আর হারোণ হবে তোমার মুখপাত্র।[a] 17 সুতরাং যাও এবং সঙ্গে তোমার পথ চলার লাঠি নাও। আমি যে তোমার সঙ্গে আছি তা প্রমাণ করার জন্য লোকদের এই চিহ্ন-কার্যগুলি দেখাও।”
মোশির মিশরে প্রত্যাবর্তন
18 মোশি তখন তার শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে গেল। মোশি তার শ্বশুরকে বলল, “অনুগ্রহ করে আমাকে মিশরে ফিরে যেতে দিন। আমি দেখতে চাই আমার লোকরা এখনও সেখানে বেঁচে আছে কিনা।”
যিথ্রো তার জামাতা মোশিকে বলল, “নিশ্চয়ই! আশা করি তুমি সেখানে ভালোভাবেই পৌঁছাবে।”
19 মিদিয়নে থাকাকালীন প্রভু মোশিকে বললেন, “মিশরে ফিরে যাওয়া এখন তোমার পক্ষে ভাল। কারণ যারা তোমায় হত্যা করতে চেয়েছিল তারা এখন কেউ বেঁচে নেই।”
20 সুতরাং মোশি তখন তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের গাধার পিঠে চাপিয়ে মিশরে প্রত্যাবর্তন করল। সঙ্গে সে তার পথ চলার লাঠিও নিল। এটা সেই পথ চলার লাঠি যাতে রয়েছে ঈশ্বরের অলৌকিক শক্তি।
21 মিশরে আসার পথে প্রভু মোশির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাকে অলৌকিক কাজ দেখানোর যে সব শক্তি দিয়েছি সেগুলো সব ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার সময় তার সামনে করে দেখাবে। কিন্তু আমি ফরৌণকে একগুঁয়ে এবং জেদী করে তুলব। সে লোকদের কিছুতেই ছেড়ে দেবে না। 22 তখন তুমি ফরৌণকে বলবে: 23 প্রভু বলেছেন, ‘ইস্রায়েল হল আমার প্রথমজাত পুত্র সন্তান। এই প্রথমজাত সন্তান একটি পরিবারে জন্মেছিল। অতীত দিনে এই প্রথমজাত সন্তানের গুরুত্ব ছিল অসীম। এবং আমি তোমাকে বলছি আমার পুত্রকে আমার উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও। তুমি যদি ইস্রায়েলকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করো তাহলে আমি তোমার প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে হত্যা করব।’”
মোশির পুত্রের সুন্নৎকরণ
24 মিশরে ফেরার পথে মোশি একটি পান্থশালায় রাত্রিযাপন করছিল। তখন প্রভু তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন।[b] 25 কিন্তু সিপ্পোরা একটা ধারালো পাথরের ছুরি দিয়ে তার পুত্রের সুন্নৎ করল। এবং সুন্নৎ এর চামড়া (চামড়াটি লিঙ্গের মুখ থেকে ছিঁড়ে বেরিয়েছিল।) মোশির পায়ে ছোঁয়াল। তারপর সে মোশিকে বলল, “আমার কাছে তুমি রক্তের স্বামী।” 26 সিপ্পোরা একথা বলেছিল কারণ তার ছেলের সুন্নৎ তাকে করতেই হত। তাই সে তাদের কাছ থেকে সরে এল।
ঈশ্বরের সম্মুখে মোশি এবং হারোণ
27 প্রভু হারোণকে বললেন, “মরুপ্রান্তরে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করো।” প্রভুর কথামতো হারোণ ঈশ্বরের পর্বতে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করে তাকে চুম্বন করল। 28 প্রভু যে সব কথা বলবার জন্য মোশিকে পাঠিয়েছিলেন এবং প্রভুই যে তাকে পাঠিয়েছেন তা প্রমাণ করবার জন্য যে সব অলৌকিক কাজ করতে বলেছিলেন তার সম্বন্ধে সবই মোশি হারোণকে জানাল। প্রভু যা বলেছেন তার সবকিছু মোশি হারোণকে খুলে বলল।
29 সুতরাং মোশি এবং হারোণ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে প্রবীণ ব্যক্তিদের একত্র করার জন্য গেল। 30 তখন হারোণ সেই কথাগুলো বলল যেগুলো প্রভু মোশিকে বলতে বলেছিলেন। আর মোশি লোকদের সামনে সেই সকল চিহ্ন কার্য করে দেখাল। 31 তার ফলে লোকরা বিশ্বাস করল যে প্রভু মোশিকে পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ইস্রায়েলের লোকরা জানল যে, ঈশ্বর তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তাই তারা সকলে নতজানু হয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে লাগল।
ফরৌণের সম্মুখে মোশি এবং হারোণ
5 লোকদের সঙ্গে কথা বলার পর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়ে বলল, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার সম্মানার্থে উৎসব করার জন্য আমার লোকদের মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র দাও।’”
2 কিন্তু ফরৌণ বলল, “কে প্রভু? আমি কেন তাকে মানব? কেন ইস্রায়েলকে ছেড়ে দেব? এমনকি এই প্রভু কে আমি তাই জানি না। সুতরাং আমি এভাবে ইস্রায়েলের লোকদের ছেড়ে দিতে পারি না।”
3 তখন হারোণ এবং মোশি বলল, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাই আমরা তিন দিনের জন্য মরুপ্রান্তরে ভ্রমণের অনুমতি প্রার্থনা করছি, সেখানে আমরা আমাদের প্রভু, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করব। আমরা যদি তা না করি তাহলে তিনি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেবেন। আমাদের মহামারী অথবা যুদ্ধের প্রকোপে মেরে ফেলবেন।”
4 কিন্তু তখন মিশরের রাজা তাদের উত্তর দিলেন, “মোশি ও হারোণ, তোমরা কাজের লোকদের বিরক্ত করছ। ওদের কাজ করতে দাও। গিয়ে নিজের কাজে মন দাও। 5 দেখ, দেশে এখন প্রচুর কর্মী আছে এবং তোমরা তাদের কাজ করা থেকে বিরত করছ।”
ফরৌণ লোকদের শাস্তি দিলেন
6 একই দিনে ক্রীতদাস প্রভুদের এবং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়কদের ফরৌণ আদেশ দিলেন ইস্রায়েলীয় লোকদের আরো কিছু কঠিনতর কাজ দিতে। 7 ফরৌণ তাদের বললেন, “ইঁট তৈরির জন্য এতদিন তোমরা খড় সরবরাহ করেছো। কিন্তু ওদের বলো, এখন থেকে ইঁট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় খড় ওরা নিজেরাই যেন খুঁজে আনে। 8 কিন্তু খড় খুঁজে আনতে হবে বলে ইঁটের উৎপাদন যেন না কমে। আগে ওরা সারাদিনে যে পরিমাণ ইঁট তৈরি করতো নিজেরা খড় জোগাড় করে আনার পরও ওদের আগের মতো একই পরিমাণ ইঁট তৈরি করতে হবে। আজকাল ওরা ভীষণ অলস হয়ে গেছে। এবং সেজন্যই ওরা আমার কাছে মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র চাইছে। ওদের হাতে বিশেষ কাজ নেই তাই ওরা ওদের ঈশ্বরকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে যেতে চায়। 9 তাই এই লোকদের আরও কঠিন পরিশ্রম করাও যাতে ওরা ব্যস্ত থাকে। তাহলে ওদের আর প্রতারণামূলক কথা শোনবার সময় হবে না।”
10 তাই মিশরের ক্রীতদাস প্রভু এবং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা ইস্রায়েলের লোকদের কাছে গিয়ে বলল, “ফরৌণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ইঁট তৈরির জন্য তোমাদের আর খড় সরবরাহ করা হবে না। 11 এবার থেকে তোমরা নিজেরা খড় জোগাড় করে আনবে। সুতরাং যাও গিয়ে খড় জোগাড় করো। কিন্তু ইঁট তৈরির পরিমাণ আগের মতোই রাখতে হবে। খড় জোগাড়ের নাম করে কম ইঁট তৈরি করলে চলবে না।”
12 সুতরাং লোকরা মিশরের চারিদিকে খড়ের খোঁজে গেল। 13 ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রায়েলীয়দের আরো কঠিন কাজ করালো এবং তাদের একদিনে সমান সংখ্যক ইঁট তৈরি করতে বাধ্য করল যা তারা খড় থাকাকালীন করত। 14 মিশরীয় ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করানোর দায়িত্ব চাপালো ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়কদের ওপর। মিশরীয় ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়কদের মারলো এবং তাদের বলল, “কেন তোমরা আগের মতো ইঁট তৈরি করতে পারছো না? তোমরা আগে যা করতে পারতে এখনও তোমাদের তাই পারা উচিৎ।”
15 তখন ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা ফরৌণের কাছে নালিশ জানাতে গেল। তারা ফরৌণকে বলল, “আমরা তো আপনার অনুগত ভৃত্য়, তাহলে আমাদের সঙ্গে কেন এরকম ব্যবহার করছেন? 16 আপনি আমাদের খড় সরবরাহ বন্ধ করেছেন। আবার বলছেন আগের মতোই ইঁটের উৎপাদন চালু রাখতে হবে। ইঁট তৈরির পরিমাণ কম হলেই আমাদের মনিবরা আমাদের মারধোর করছে। আপনার লোকরা এটা তো অন্যায় করছে।”
17 উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “তোমরা কাজ করতে চাও না। তোমরা অলস হয়ে গেছ। সেজন্যই তোমরা প্রভুর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে যাবার ব্যাপারে আমার অনুমতি চেয়েছো। 18 যাও, এখন আবার কাজে ফিরে যাও। আমরা তোমাদের কোনও খড় সরবরাহ করব না এবং তোমাদের আগের মতোই সমপরিমাণ ইঁট তৈরি করতে হবে।”
19 তখন ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা বুঝতে পারল যে তারা গভীর সঙ্কটে পড়েছে। তারা জানতো যে কিছুতেই তারা আগের পরিমাণ মতো ইঁট আর তৈরি করতে পারবে না।
20 ফরৌণের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে মোশি এবং হারোণের সঙ্গে তাদের দেখা হল। মোশি ও হারোণ অবশ্য তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্যই অপেক্ষা করছিল। 21 সুতরাং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা মোশি ও হারোণকে বলল, “আমাদের যাওয়ার ছাড়পত্র চাওয়ার ব্যাপারে ফরৌণের সঙ্গে কথা বলে তোমরা একটা মারাত্মক ভুল করেছো। প্রভু যেন তোমাদের শাস্তি দেন। কারণ তোমাদের জন্যই ফরৌণ ও তার শাসকরা আমাদের এখন ঘৃণা করে। তোমরাই তাদের হাতে আমাদের হত্যা করার অজুহাত তুলে দিয়েছ।”
ঈশ্বরকে মোশির নালিশ
22 তখন মোশি প্রভুর কাছে ফিরে গেল এবং বলল, “প্রভু কেন আপনি লোকদের এমন অমঙ্গল করলেন? কেন আপনি আমায় এখানে পাঠিয়েছিলেন? 23 আপনি যা বলতে বলেছিলেন আমি সে কথাগুলো বলতেই ফরৌণের কাছে গিয়েছিলাম। অথচ সেই সময় থেকেই ফরৌণ আপনার লোকদের প্রতি অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করছে। এবং আপনি ঐসব লোকদের সাহায্যের জন্য কোনও কিছুই করছেন না।”
6 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “ফরৌণের এখন আমি কি অবস্থা করব তা তুমি দেখতে পাবে। আমি তার বিরুদ্ধে আমার মহান ক্ষমতা ব্যবহার করব এবং সে আমার লোকদের চলে যেতে বাধ্য করবে। সে যে শুধু আমার লোকদের ছেড়ে দেবে তা নয়, সে তার দেশ থেকে তাদের জোর করে পাঠিয়ে দেবে।”[c]
2 ঈশ্বর তখন মোশিকে আবার বললেন, 3 “আমিই হলাম প্রভু। আমি অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতাম। তারা আমায় এল্সদাই (সর্বশক্তিমান ঈশ্বর) বলে ডাকত। আমার নাম যে যিহোবা তা তারা জানত না। 4 আমি তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলাম। আমি তাদের কনান দেশ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ঐ দেশে তারা বাস করলেও দেশটি কিন্তু তাদের নিজস্ব দেশ ছিল না। 5 এখন, আমি ইস্রায়েলীয়দের বিলাপ শুনেছি। আমি জানি মিশরীয়রা তাদের ক্রীতদাস করে রেখেছিল এবং আমি আমার চুক্তিকে মনে রাখব। 6 সুতরাং ইস্রায়েলের লোকদের গিয়ে বলো আমি তাদের বলেছি, ‘আমি হলাম প্রভু। আমি তোমাদের রক্ষা করব। আমিই তোমাদের মুক্ত করব। তোমরা আর মিশরীয়দের ক্রীতদাস থাকবে না। আমি আমার মহান শক্তি ব্যবহার করব এবং মিশরীয়দের ভয়ঙ্কর শাস্তি দেব। তখন আমি তোমাদের উদ্ধার করব। 7 আমি তোমাদের আমার লোক করে নিলাম এবং আমি হব তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা জানবে যে আমি হলাম তোমাদের প্রভু, ঈশ্বর, যে তোমাদের মিশর থেকে মুক্ত করেছে। 8 আমি অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের কাছে একটি মহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমি তাদের একটি বিশেষ দেশ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তাই আমার নেতৃত্বে তোমরা ঐ দেশে যাবে। আমি তোমাদের ঐ দেশটি দিয়ে দেব। সেই দেশটি একান্তভাবে তোমাদেরই হবে। আমিই হলাম প্রভু।’”
9 মোশি এই কথাগুলো ইস্রায়েলীয়দের বলল, কিন্তু তাদের ধৈর্য্যহীনতা ও কঠোর পরিশ্রমের দরুণ তারা তার কথা শুনতে অস্বীকার করল।
10 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, 11 “যাও মিশরের রাজা ফরৌণকে বলো যে তার উচিৎ ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে মুক্তি দেওয়া।”
12 কিন্তু মোশি উত্তরে জানাল, “ইস্রায়েলের লোকরাই আমার কথা শুনতে অস্বীকার করছে, সেক্ষেত্রে ফরৌণ আর কি শুনবে! সেও আমার কথা শুনতে রাজি হবে না। এ ব্যাপারে আমি একরকম নিশ্চিত। তার উপর আমি ভালোভাবে কথা বলতেও পারি না।”
13 কিন্তু প্রভু মোশি এবং হারোণের সঙ্গে কথা বললেন এবং তাদের ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ও ফরৌণের সঙ্গে কথা বলতে আদেশ দিলেন। ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনতে প্রভু তাদের আদেশ দিলেন।
ইস্রায়েলের কয়েকটি পরিবার
14 ইস্রায়েলীয় পরিবারগুলির নেতাদের নাম ক্রমানুসারে এইরূপ:
ইস্রায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল রূবেণ। তার পুত্ররা ছিল: হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্ম্মি।
15 শিমিয়োনোর পুত্ররা ছিল: যিমুয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর এবং শৌল (যে ছিল এক কনানীয়া মহিলার গর্ভজাত সন্তান।)
16 লেবি 137 বছর জীবিত ছিলেন। লেবির পুত্রদের নাম হল গের্শোন, কহাৎ ও মরারি।
17 গের্শোনের আবার দুই পুত্র ছিল লিব্নি ও শিমিয়ি।
18 কহাৎ 133 বছর পর্যন্ত জীবিত ছিল। কহাতের পুত্ররা হল অম্রম, যিষ্হর, হিব্রোণ এবং উষীয়েল।
19 মরারির দুই পুত্র হল মহলি ও মুশি। এই প্রত্যেকটি পরিবারের প্রথম পূর্বপুরুষ ছিল ইস্রায়েলের সন্তান লেবি।
20 অম্রম বেঁচে ছিল 137 বছর। অম্রম তার আপন পিসি যোকেবদকে বিয়ে করেছিল। অম্রম ও যোকেবদের দুই সন্তান হল যথাক্রমে হারোণ এবং মোশি।
21 যিষ্হরের পুত্ররা হল কোরহ, নেফগ ও সিখ্রি।
22 আর উষীয়েলের সন্তান হল মীশায়েল, ইল্সাফন ও সিথ্রি।
23 হারোণ অম্মীনাদবের কন্যা, নহোশনের বোন ইলীশেবাকে বিয়ে করেছিল। হারোণ ও ইলীশেবার সন্তানরা হল নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ইথামর।
24 কোরহের পুত্র অসীর, ইল্কানা ও অবীয়াসফ হল কোরহীয় গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ।
25 হারোণের পুত্র ইলিয়াসর পূটীয়েলের এক কন্যাকে বিয়ে করার পরে তাদের যে সন্তান হয় তার নাম দেওয়া হয় পীনহস।
এরা প্রত্যেকেই ইস্রায়েলের পুত্র লেবির বংশজাত।
26 হারোণ এবং মোশি ছিল এই পরিবারগোষ্ঠীর। প্রভু তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমার লোকদের মিশর থেকে দলে দলে বাইরে নিয়ে এসো।” 27 হারোণ এবং মোশি উভয়েই মিশরের রাজা ফরৌণের সঙ্গে কথা বলেছিল। তারাই ফরৌণকে বলেছিল ইস্রায়েলের লোকদের মিশর থেকে ছেড়ে দেওয়া হোক্।
ঈশ্বর পুনরায় মোশিকে আহ্বান জানালেন
28 মিশরে যেদিন প্রভু মোশির সঙ্গে কথা বললেন, 29 তিনি তাকে বলেছিলেন, “আমিই হলাম প্রভু। আমি তোমাকে যা কিছু বলেছি তা মিশরের রাজা ফরৌণকে গিয়ে বলো।”
30 কিন্তু মোশি উত্তর দিল, “আমি ভালোভাবে কথা বলতে পারি না। রাজা আমার কথা শুনবে না।”
যীশু জলের উপর দিয়ে হাঁটেন
(মার্ক 6:45-52; যোহন 6:16-21)
22 এরপরই যীশু তাঁর শিষ্যদের নৌকায় করে হ্রদের অপর পারে তাঁর সেখানে যাবার আগে তাদের পৌঁছাতে বললেন। এরপর তিনি লোকদের বিদায় জানালেন। 23 লোকদের বিদায় দিয়ে, প্রার্থনা করবার জন্য তিনি একা পাহাড়ে উঠে গেলেন। অন্ধকার হয়ে গেলেও তিনি সেখানে একাই রইলেন। 24 নৌকাটি তীর থেকে দূরে গিয়ে পড়েছিল, উল্টো হাওয়া বইতে থাকায় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভীষণভাবে দুলছিল।
25 সকাল তিনটে থেকে ছ’টার মধ্যে যীশুর শিষ্যরা নৌকায় ছিলেন। এমন সময় যীশু জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে এলেন। 26 যীশুকে হ্রদের জলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখে শিষ্যরা ভয়ে আঁতকে উঠলেন, তারা “ভূত, ভূত” বলে ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন।
27 সঙ্গে সঙ্গে যীশু তাঁদের বললেন, “এতো আমি! সাহস কর! ভয় করো না।”
28 এর উত্তরে পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, এ যদি সত্যিই আপনি হন, তবে জলের ওপর দিয়ে আমাকেও আপনার কাছে আসতে আদেশ করুন।”
29 যীশু বললেন, “এস।”
পিতর তখন নৌকা থেকে নেমে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যীশুর দিকে এগোতে লাগলেন। 30 কিন্তু যখন দেখলেন প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বইছে, তখন খুবই ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি আস্তে আস্তে ডুবতে লাগলেন আর চিৎকার করে বললেন, “প্রভু, আমাকে বাঁচান।”
31 যীশু তখনই হাত বাড়িয়ে পিতরকে ধরে ফেলে বললেন, “হে অল্প-বিশ্বাসী! তুমি কেন সন্দেহ করলে?”
32 যীশু ও পিতর নৌকায় উঠলে পর ঝোড়ো বাতাস থেমে গেল।
33 যাঁরা নৌকায় ছিলেন তাঁরা যীশুকে প্রণাম করে বললেন, “আপনি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র।”
যীশু বহু অসুস্থ মানুষকে আরোগ্যদান করলেন
(মার্ক 6:53-56)
34 তাঁরা হ্রদ পার হয়ে গিনেষরৎ অঞ্চলে এলেন। 35 সেই অঞ্চলের লোকরা তাঁকে চিনতে পেরে সেই অঞ্চলের সব জায়গায় লোকদের কাছে তাঁর আসার খবর রটিয়ে দিল। তখন লোকেরা তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল তাদের সকলকে যীশুর কাছে নিয়ে এল। 36 তারা যীশুকে অনুরোধ করল, যেন সেই রোগীরা কেবল তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করতে পারে। আর যাঁরা স্পর্শ করল, তারাই সুস্থ হয়ে গেল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International