Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 46-48

ঈশ্বর ইস্রায়েলকে আশ্বাস দিলেন

46 ইস্রায়েল মিশর দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। প্রথমে তিনি বের্-শেবাতে গেলেন। সেখানে ইস্রায়েল তাঁর পিতা ইস‌্হাকের ঈশ্বরের উপাসনা করলেন এবং বলি দিলেন। রাত্রে ঈশ্বর স্বপ্নে যাকোবের সঙ্গে কথা বললেন। ঈশ্বর বললেন, “যাকোব, যাকোব।”

ইস্রায়েল উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।”

তখন ঈশ্বর বললেন, “আমি ঈশ্বর, তোমার পিতার ঈশ্বর! মিশরে যেতে ভয় করো না। মিশরে আমি তোমাকে এক মহাজাতিতে পরিণত করব। আমি তোমার সঙ্গে মিশরে যাব আর তোমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনব। তুমি মিশরে মারা যাবে কিন্তু যোষেফ তোমার সঙ্গে থাকবে। তুমি মারা গেলে যোষেফই তার নিজের হাত দিয়ে তোমার চোখ বুজিয়ে দেবে।”

ইস্রায়েল মিশরে গেলেন

তারপর যাকোব বের্-শেবা ছেড়ে মিশরের দিকে যাত্রা করলেন। ইস্রায়েলের পুত্ররা নিজেদের পিতা যাকোবকে এবং প্রত্যেকে নিজের পুত্র কন্যা ও স্ত্রীদের নিয়ে মিশরে চললেন। ফরৌণ যে মালবাহী গাড়ীগুলো পাঠিয়েছিলেন সেইগুলো করেই তাঁরা গেলেন। তাঁরা তাঁদের পশুপাল এবং কনান দেশে তাঁদের যা যা ছিল সব নিয়ে চললেন। সুতরাং ইস্রায়েল মিশরে তাঁর সমস্ত সন্তান এবং তাদের পরিবার নিয়েই গেলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁর পুত্ররা এবং নাতিরা, তাঁর কন্যারা এবং নাতনিরা। সুতরাং তাঁর সমস্ত পরিবার তাঁর সাথে মিশরে গেলেন।

যাকোবের পরিবার

ইস্রায়েলের পুত্ররা এবং তাঁর বংশধররা যাঁরা তাঁর সঙ্গে মিশরে গিয়েছিলেন তাঁদের নামগুলি এই:

রূবেণ ছিলেন জ্যেষ্ঠ পুত্র। রূবেণের পুত্ররা ছিলেন হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্মি।

10 শিমিয়োনের পুত্ররা ছিলেন যিমূয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর আর এছাড়া শৌল। (শৌলের মা ছিলেন একজন কনানীয় স্ত্রীলোক।)

11 লেবীর পুত্ররা ছিলেন গের্শোন, কহাৎ ও মরারি।

12 যিহূদার পুত্ররা হলেন এর, ওনন, শেলা, পেরস ও সেরহ। (এর ও ওনন কনান দেশেই মারা গিয়েছিল।) পেরসের পুত্ররা হলেন হিষ্রোণ ও হামূল।

13 ইষাখরের পুত্ররা হলেন তোলয়, পুয, যোব ও শিম্রোণ। 14 সবূলূনের পুত্ররা হলেন সেরদ, এলোন ও যহলোল।

15 রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন ছিলেন যাকোব ও লেয়ার সন্তানগণ। পদ্দম্-অরামে লেয়ার এই সন্তানরা জন্মেছিল। তার দীনা নামে একটি কন্যাও ছিল। তার পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল 33 জন।

16 গাদের পুত্ররা ছিলেন সিফিয়োন, হগি, শূনী, ইষ্বোন, এরি, অরোদী ও অরেলী।

17 আশেরের পুত্ররা ছিলেন যিন্না, যিশ্বা, যিশবি, বরিয় এবং তাদের বোন সেরহ। বরিয়ের পুত্ররা অর্থাৎ‌ হেবর ও মল্কীয়েলও ছিলেন।

18 যাকোবের এই পুত্ররা ছিলেন তাঁর স্ত্রী দাসী সিল্পার। (সিল্পাই সেই দাসী যাকে লাবন তাঁর কন্যা লেয়ার সাথে দিয়েছিলেন।) তাঁর পরিবারের মোট সদস্য ছিলেন 16 জন।

19 বিন্যামীনও যাকোবের সঙ্গে ছিলেন। বিন্যামীন ছিলেন যাকোব ও রাহেলের পুত্র। (যোষেফও রাহেলের পুত্র। কিন্তু যোষেফ ইতিমধ্যে মিশরে ছিলেন।)

20 মিশরে যোষেফের দুই পুত্র হয়। তাদের নাম মনঃশি ও ইফ্রয়িম। (যোষেফের স্ত্রীর নাম ছিল আসনৎ‌। তিনি ছিলেন ওন শহরের যাজক পোটীফরের কন্যা।)

21 বিন্যামীনের পুত্ররা হল বেলা, বেখর, অস্বেল, গেরা, নামন, এহী, রোশ, মুপ্পীম, হুপ্পীম ও অর্দ।

22 এঁরা ছিলেন যাকোব ও তার স্ত্রী রাহেলের সন্তান। পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা 14 জন।

23 দানের পুত্র ছিলেন হূশীম।

24 নপ্তালির পুত্র ছিলেন যহসিয়েল, গূনি, বেৎসর ও শিল্লেম।

25 এঁরা ছিলেন যাকোব ও বিল্হার সন্তান। (বিল্হা-ই সেই দাসী যাকে লাবন তাঁর কন্যা রাহেলের সাথে পাঠিয়েছিলেন।) এই পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল সাত।

26 সরাসরি যাকোব হতে উৎপন্ন উত্তরপুরুষদের মোট 66 জন তাঁর সঙ্গে মিশরে গিয়েছিলেন। (এই সংখ্যার মধ্যে যাকোবের পুত্রদের স্ত্রীদের গণনা করা হয় নি।) 27 আবার যোষেফেরও দুই সন্তান ছিলেন যাঁরা মিশরে জন্মেছিলেন। সুতরাং মিশরে যাকোবের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা হল 70 জন।

ইস্রায়েল মিশরে পৌঁছালেন

28 যোষেফের সঙ্গে কথা বলার জন্য যাকোব যিহূদাকে তাঁর আগে পাঠালেন। এর পরে যাকোব এবং তাঁর পুত্ররা গোশন প্রদেশে পৌঁছোলেন। যিহূদা গোশন প্রদেশে যোষেফের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। যাকোব এবং তাঁর পরিবারের লোকজন এরপর সেই প্রদেশে পৌঁছালেন। 29 যোষেফ যখন শুনলেন যে তাঁর পিতা আসছেন তখন তিনি রথ প্রস্তুত করে গোশন প্রদেশে তাঁর পিতা ইস্রায়েলের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। যোষেফ তাঁর পিতাকে দেখে গলা জড়িয়ে ধরে বহুক্ষণ কাঁদলেন।

30 তখন ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “এখন আমি শান্তিতে মরতে পারব। আমি তোমার মুখ দেখলাম এবং জানলাম যে তুমি এখনও জীবিত।”

31 যোষেফ তাঁর ভাইদের এবং পিতার পরিবারের বাকীদের বললেন, “আমি ফরৌণকে বলতে যাচ্ছি যে তোমরা এখানে এসেছ। আমি ফরৌণকে বলব, ‘আমার ভাইরা এবং পিতার পরিবারের বাকী সবাই কনান দেশ ছেড়ে এখানে আমার কাছে এসেছেন। 32 পরিবারের সবাই মেষপালক। তারা সবসময়ই মেষপাল ও গো-পাল রেখে থাকে। তারা তাদের পশু ও আর যা কিছু তাদের ছিল সবই তাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।’ 33 ফরৌণ তোমাদের ডাকলে জিজ্ঞেস করবে, ‘তোমরা কি কাজ কর?’ 34 তোমরা তাকে বলবে, ‘আমরা মেষপালক। সারাজীবন ধরেই আমরা মেষ পালন করে আসছি। আমাদের আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা মেষপালক ছিলেন।’ ফরৌণ তোমাদের গোশন প্রদেশে থাকতে দেবেন। মিশরীয়রা মেষপালকদের পছন্দ করেন না, সেইজন্য তোমাদের গোশন প্রদেশে থাকাটাই ভাল হবে।”

ইস্রায়েল গোশনে বাস করতে লাগলেন

47 যোষেফ ফরৌণের কাছে গিয়ে বললেন, “আমার পিতা, আমার ভাইরা এবং তাঁদের পরিবারের সবাই এখানে এসেছেন। তাঁরা তাঁদের পশু ও সর্বস্ব নিয়ে কনান দেশ থেকে চলে এসেছেন। তাঁরা এখন গোশন প্রদেশে রয়েছেন।” ফরৌণের সামনে যাবার জন্য ভাইদের মধ্যে পাঁচজনকে মনোনীত করলেন।

ফরৌণ ভাইদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কি কাজ কর?”

ভাইরা ফরৌণকে বলল, “মহাশয় আমরা মেষপালক। আর আমাদের আগে আমাদের পূর্বপুরুষরাও মেষপালক ছিলেন।”

তারা ফরৌণকে বলল, “কনান দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছে। তাই পশুদের খাবার ঘাসের অভাব হয়েছে। তাই আমরা এই দেশে বাস করব বলে এখানে এসেছি। দয়া করে আমাদের গোশন প্রদেশে থাকতে দিন।”

তখন ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার পিতা ও তোমার ভাইরা তোমার কাছে এসেছেন। তাদের থাকবার জন্য তুমি মিশরে যে কোন জায়গা বেছে নিতে পারো। তোমার পিতা এবং তোমার ভাইদের সব চাইতে ভাল জমিটা দিও। তাদের গোশন প্রদেশে বাস করতে দাও। আর তারা যদি দক্ষ মেষপালক হয় তবে তারা আমার পশুপালেরও যত্ন নিতে পারে।”

তখন যোষেফ তাঁর পিতাকে ফরৌণের সঙ্গে দেখা করবার জন্য ডেকে আনলেন। যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করলেন। ফরৌণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার বয়স কত?”

যাকোব ফরৌণকে বললেন, “আমার আয়ুর এই অল্প বয়সে আমাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি কেবল 130 বছর বয়স্ক। আমার পিতা এবং আমার পূর্বপুরুষরা আমার চাইতেও বেশী বয়স বেঁচেছিলেন।” 10 যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করলেন এবং তাঁর সামনে থেকে বিদায় নিলেন।

11 ফরৌণের কথামত যোষেফ তাঁর পিতা ও ভাইদের মিশরে জমিজমা দিলেন। রামিষেষ শহরের কাছে স্থিত সেই জমি মিশরের সব জমির চেয়ে সেরা ছিল। 12 আর যোষেফ তাঁর পিতা, তাঁর ভাইদের এবং তাঁর সমস্ত পরিজনদের তাঁদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করলেন।

যোষেফ ফরৌণের জন্য জমি কিনলেন

13 দুর্ভিক্ষ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠল, ফলে দেশে কোথাও কোন খাদ্য রইল না। এই দারুণ দুর্ভিক্ষের জন্যে মিশর এবং কনান দেশ দরিদ্র হয়ে পড়ল। 14 দেশের লোকরা আরও শস্য কিনতে থাকল আর যোষেফ সেই অর্থ জমিয়ে ফরৌণের কাছে নিয়ে আসতেন। 15 কিছু পরে মিশরীয় এবং কনানীয়দের সব অর্থ শেষ হয়ে গেল। কারণ তারা সমস্ত অর্থই শস্য কিনতে ব্যয করেছিল। তাই মিশরীয়রা যোষেফের কাছে গিয়ে বলল, “আমাদের খাদ্য দিন। আমাদের অর্থ শেষ হয়ে গেছে। আমরা খেতে না পেলে আপনার চোখের সামনে মারা যাব।”

16 কিন্তু যোষেফ উত্তর দিলেন, “তোমাদের গো-পাল দাও, আমি তোমাদের খাবার দেব।” 17 এইভাবে খাদ্য কেনার জন্য লোকরা তাদের গো-পাল, ঘোড়া এবং অন্যান্য পশুর ব্যবহার করলেন। সেই বছরে যোষেফ পশুর বদলে তাদের খাদ্য দিলেন। 18 কিন্তু পরের বছরে লোকদের খাবার কেনার জন্য পশু এবং অন্য কিছু ছিল না। তাই লোকরা যোষেফের কাছে গিয়ে বলল, “আপনি জানেন আমাদের কাছে আর কোন অর্থ নেই। আর আমাদের সব পশুও এখন আপনারই। সুতরাং আপনি যা দেখছেন আমাদের সেই দেহ ও আমাদের জমি ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছুই নেই। 19 সত্যিই আমরা আপনার চোখের সামনে মারা যাব। কিন্তু আপনি আমাদের খাদ্য দিলে আমরা ফরৌণকে আমাদের জমি দেব এবং আমরা তাঁর দাস হব। আমাদের বপন করার বীজ দিন। তাহলে আমরা মরব না। আর জমিতে আবার আমাদের জন্য শস্য হবে।”

20 তাই যোষেফ মিশরের সমস্ত জমি ফরৌণের জন্য কিনে নিলেন। লোকরা ক্ষুধার জন্য মিশরের সমস্ত জমি ফরৌণের কাছে বিক্রি করে দিল। 21 আর মিশরের সর্বত্র লোকরা ফরৌণের দাস হল। 22 যোষেফ কেবল যাজকদের জমি কিনলেন না। যাজকদের জমি বিক্রি করারও প্রয়োজন ছিল না। কারণ ফরৌণ তাদের কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিতেন আর তারা সেই অর্থ দিয়ে খাদ্য কিনত। 23 যোষেফ লোকদের বললেন, “এখন আমি তোমাদের এবং তোমাদের জমি ফরৌণের জন্য কিনে নিয়েছি। তাই আমি এরপর তোমাদের জমিতে বপন করার বীজ দেব। আর তোমরা তা বপন করতে পার। 24 শস্য ছেদনের সময় তোমরা অবশ্যই উৎপন্ন শস্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণকে দেবে। বাকী পাঁচ ভাগের চার ভাগ শস্য তোমাদের হবে। তোমরা তোমাদের খাদ্যের জন্য সেই রাখা শস্যের বীজ পরের বছর বপন করার জন্য ব্যবহার করতে পারবে। আর তাতে তোমাদের পরিবার ও সন্তানদের জন্যও খাদ্য থাকবে।”

25 লোকরা বলল, “আপনি আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আমরা ফরৌণের দাস হয়ে খুশী।”

26 তাই যোষেফ সেই সময় জমির ব্যাপারে আইন তৈরী করলেন। আর সেই আইন আজও বলবৎ রয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী জমিতে উৎপন্ন সবকিছুর পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণের। যাজকদের জমি ছাড়া সমস্ত জমি ফরৌণের।

“মিশরে কবর নয়”

27 ইস্রায়েল মিশরের গোশন প্রদেশেই স্থায়ী হলেন। তাঁর পরিবার সংখ্যায় বৃদ্ধি পেল এবং বিশাল হয়ে উঠল। মিশর দেশে তাঁরা কিছু জমি পেলেন এবং সফল হলেন।

28 যাকোব মিশরে 17 বছর বেঁচে ছিলেন সুতরাং তাঁর বয়স হল 147 বছর। 29 সময় হল যখন ইস্রায়েল বুঝলেন যে তিনি শীঘ্রই মারা যাবেন। তাই তিনি তাঁর পুত্র যোষেফকে নিজের কাছে ডাকলেন। তিনি বললেন, “যদি তুমি আমায় ভালবাস তবে আমার উরুর নীচে হাত রাখ এবং প্রতিজ্ঞা কর যে তুমি তোমার কথায় বিশ্বস্ত হবে। আমি মারা গেলে আমায় মিশরে কবর দিও না। 30 যে জায়গায় আমার পূর্বপুরুষদের কবর দেওয়া হয়েছে সেখানেই আমায় কবর দিও। আমাকে মিশর থেকে বয়ে নিয়ে গিয়ে আমাদের পারিবারিক কবরে কবর দিও।”

যোষেফ উত্তর দিলেন, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনার কথা মতোই কাজ করব।”

31 তারপর যাকোব বললেন, “আমার কাছে দিব্য কর।” তখন ইস্রায়েল বিছানায় তাঁর মাথা নামিয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করলেন।[a]

মনঃশি ও ইফ্রয়িমের জন্য আশীর্বাদ

48 কিছু সময় পরে যোষেফ জানতে পারলেন যে তাঁর পিতা খুব অসুস্থ। তাই যোষেফ তাঁর দুই পুত্র মনঃশি ও ইফ্রয়িমকে নিয়ে তাঁর পিতার কাছে গেলেন। যোষেফ সেখানে পৌঁছালে ইস্রায়েলকে কেউ খবর দিলেন, “আপনার পুত্র যোষেফ আপনাকে দেখতে এসেছেন।” ইস্রায়েল খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তিনি খুব চেষ্টা করে কোন মতে বিছানায় উঠে বসলেন।

তখন ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “কনান দেশের লূস নামক জায়গায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সেখানে ঈশ্বর আমায় আশীর্বাদ করেছিলেন। ঈশ্বর আমায় বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে বহু বংশ করব। তোমার অনেক সন্তান-সন্ততি হবে এবং তারা মহান হবে। এই দেশ তোমার বংশধররা চিরকালের জন্য তাদের অধিকারে রাখবে।’ আর এখন তোমার দুই পুত্র, আমার আসার আগেই মিশর দেশে এদের জন্ম হয়েছিল। তোমার দুই পুত্র মনঃশি ও ইফ্রয়িম আমার কাছে নিজের পুত্রের মতই হোক্। তারা আমার কাছে রূবেণ ও শিমিয়োনের মত হোক্। সুতরাং ঐ দুই জন পুত্র আমারই হোক্। তারা আমার সব কিছুর অংশীদার হবে। কিন্তু এছাড়া তোমার যদি আর অন্য পুত্র থাকে তবে তা তোমারই হোক্। আর তারা ইফ্রয়িম ও মনঃশির কাছে সন্তানের মতই হোক্ অর্থাৎ‌ ভবিষ্যতে তারা ইফ্রয়িম ও মনঃশির অধিকারভুক্ত সব কিছুরই অংশীদার হবে। পদ্দম্-অরাম থেকে আসার সময় রাহেল মারা গেলেন। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত দুঃখ পেলাম। আমরা যখন ইফ্রাথের দিকে যাচ্ছিলাম তখন কনান দেশে তিনি মারা গেলেন। আমি তাকে সেখানে ইফ্রাথ যাবার পথের ধারে কবর দিলাম।” (ইফ্রাথ বৈৎ‌লেহেমের অপর নাম।)

তখন ইস্রায়েল যোষেফের পুত্রদের দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই বালকরা কারা?”

যোষেফ তাঁর পিতাকে বললেন, “এরা আমার পুত্ররা, ঈশ্বরই এদের আমায় দিয়েছেন।”

ইস্রায়েল বললেন, “তোমার ছেলেদের আমার কাছে নিয়ে এস। আমি তাদের আশীর্বাদ করব।”

10 ইস্রায়েল বৃদ্ধ হয়েছিলেন এবং চোখেও ভালো দেখতে পেতেন না। তাই যোষেফ দুই পুত্রকে পিতার খুব কাছে নিয়ে এলেন। ইস্রায়েল তাদের গলা জড়িয়ে চুমু খেলেন। 11 তারপর ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “আমি ভাবতেই পারি নি যে কখনও তোমার মুখ দেখতে পাব। কিন্তু দেখ ঈশ্বর আমাকে, তোমায় এমনকি তোমার পুত্রদেরও দেখতে দিলেন।”

12 তারপর যোষেফ ইস্রায়েলের কোল থেকে তাঁর পুত্রদের নিলেন এবং তারা ইস্রায়েলের সামনে মাথা নত করল। 13 যোষেফ ইফ্রয়িমকে তাঁর ডানদিকে এবং মনঃশিকে তার বাঁ দিকে রাখলেন। (সুতরাং ইফ্রয়িম ইস্রায়েলের বাম দিকে ও মনঃশি তার ডান দিকে রইল।) 14 কিন্তু ইস্রায়েল তাঁর হাত আড়াআড়ি ভাবে রেখে তাঁর ডান হাত ছোট পুত্র ইফ্রয়িমের মাথায় রাখলেন। ইস্রায়েল তাঁর বাম হাত বড় পুত্র মনঃশির মাথায় রাখলেন। মনঃশি প্রথমজাত হলেও তিনি বাম হাত তার উপরে রাখলেন। 15 ইস্রায়েল যোষেফকে আশীর্বাদ করে বললেন,

“আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইস‌্হাক আমাদের ঈশ্বরের উপাসনা করতেন।
    আর সেই ঈশ্বরই সারা জীবন আমায় বহন করেছেন।
16 তিনিই সেই দেবদূত যিনি আমায় সব সমস্যা থেকে রক্ষা করেছেন।
    আমার প্রার্থনা, তিনিই এই পুত্রদের আশীর্বাদ করবেন।
এখন এই পুত্ররা আমার এবং আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইস‌্হাকের নামে আখ্যাত হোক্।
    আমার প্রার্থনা তারা যেন পৃথিবীতে বৃদ্ধি পযে বহু বংশ ও বহু জাতি হয়।”

17 যোষেফ যখন দেখলেন তাঁর পিতা ডান হাত ইফ্রয়িমের মাথায় রেখেছেন, তখন তিনি খুশী হলেন না। যোষেফ পিতার হাত ইফ্রয়িমের মাথা থেকে তুলে ধরে মনঃশির মাথায় রাখতে চাইলেন। 18 যোষেফ তাঁর পিতাকে বললেন, “আপনি আপনার ডান হাত ভুল জনের মাথার উপর রেখেছেন। মনঃশিই প্রথমজাত। তার উপরেই ডান হাত রাখুন।”

19 কিন্তু তাঁর পিতা তর্ক করে বললেন, “আমি জানি বৎস, আমি জানি। মনঃশি প্রথমজাত, সে মহান হবে, বহুলোকের পিতা হবে কিন্তু ছোট জন বড় জনের চেয়েও মহান হবে আর তার বংশ আরও অনেক হবে।”

20 তাই ইস্রায়েল সেই দিন এই বলে আশীর্বাদ করলেন,

“ইস্রায়েল কাউকে আশীর্বাদ করতে
    তোমাদেরই নাম ব্যবহার করবে।
তারা বলবে, ‘ঈশ্বর তোমাকে যেন
    মনঃশি ও ইফ্রয়িমের মতো করেন।’”

এইভাবে ইস্রায়েল মনঃশির চাইতে ইফ্রয়িমকে বড় করলেন।

21 তারপর ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “দেখ আমার মৃত্যুর সময় কাছে এসে গেছে। কিন্তু ঈশ্বর তোমার সঙ্গে থাকবেন। তিনিই তোমাকে আবার তোমার পূর্বপুরুষদের দেশে নিয়ে যাবেন। 22 আমি তোমাকে যা দিলাম তা তোমার ভাইদের দিই নি। ইমোরীয়দের হাত থেকে যে পাহাড় আমি জয় করে নিয়েছিলাম তা তোমায় দিচ্ছি। আমি সেই পাহাড় জয় করতে আমার তরবারি ও ধনুক ব্যবহার করেছিলাম এবং আমি জয়ী হয়েছিলাম।”

মথি 13:1-30

যীশু বীজ বোনার দৃষ্টান্ত মূলক কাহিনী শোনালেন

(মার্ক 4:1-9; লূক 8:4-8)

13 সেই দিনই যীশু ঘর থেকে বার হয়ে হ্রদের ধারে এসে বসলেন। তাঁর চারপাশে বহু লোক এসে জড় হল, তাই তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন, আর সেই সমবেত জনতা তীরে দাঁড়িয়ে রইল। তখন তিনি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।

তিনি বললেন, “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। সে যখন বীজ বুনছিল, তখন কতকগুলি বীজ পথের ধারে পড়ল, আর পাখিরা এসে সেগুলি খেয়ে ফেলল। আবার কতকগুলি বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল, সেখানে মাটি বেশী ছিল না। মাটি বেশী না থাকাতে তাড়াতাড়ি অঙ্কুর বার হল। কিন্তু সূর্য উঠলে পর অঙ্কুরগুলি ঝলসে গেল, আর শেকড় মাটির গভীরে যায়নি বলে তা শুকিয়ে গেল। আবার কিছু বীজ কাঁটাঝোপের মধ্যে পড়ল। কাঁটাঝোপ বেড়ে উঠে চারাগুলোকে চেপে দিল। কিছু বীজ ভাল জমিতে পড়ল, তাতে ফসল হতে লাগল। সে যা বুনেছিল, কোথাও তার ত্রিশগুণ, কোথাও ষাটগুণ, কোথাও শতগুণ ফসল হল। যার শোনার মতো কান আছে সে শুনুক!”

শিক্ষার সময় যীশু কেন দৃষ্টান্ত দিতেন

(মার্ক 4:10-12; লূক 8:9-10)

10 যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “কেন আপনি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে লোকদের সঙ্গে কথা বললেন?”

11 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে ঈশ্বরের গুপ্ত সত্য বোঝার ক্ষমতা কেবল মাত্র তোমাদেরই দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সকলকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয় নি। 12 কারণ যার কিছু আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে, তাতে তার প্রচুর হবে; কিন্তু যার নেই, তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। 13 আমি তাদের সঙ্গে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথা বলি, কারণ তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না আর তারা বোঝেও না। 14 এদের এই অবস্থার মধ্য দিয়েই ভাববাদী যিশাইয়র ভাববাণী পূর্ণ হয়েছে:

‘তোমরা শুনবে আর শুনবে,
    কিন্তু বুঝবে না।
তোমরা তাকিয়ে থাকবে,
    কিন্তু কিছুই দেখবে না।
15 এইসব লোকদের অন্তর অসাড়,
    এরা কানে শোনে না,
চোখ থাকতেও সত্য দেখতে অস্বীকার করে।
এরকমটাই ঘটেছে যেন এরা চোখে দেখে,
    কানে শুনে
    আর অন্তরে বুঝে
ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে।’(A)

16 কিন্তু ধন্য তোমাদের চোখ, কারণ তা দেখতে পায়; আর ধন্য তোমাদের কান, কারণ তা শুনতে পায়। 17 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা দেখছ অনেক ভাববাদী ও ধার্মিক লোকেরা দেখতে চেয়েও তা দেখতে পায় নি। আর তোমরা যা যা শুনছ, তা তারা শুনতে চেয়েও শুনতে পায় নি।

বীজ বোনার দৃষ্টান্ত

(মার্ক 4:13-20; লূক 8:11-15)

18 “এখন তবে সেই চাষী ও তার বীজ বোনার মর্মার্থ শোন।

19 “কেউ যখন স্বর্গরাজ্যের শিক্ষার বিষয় শুনেও তা বোঝে না, তখন দুষ্ট আত্মা এসে তার অন্তরে যা বোনা হয়েছিল তা সরিয়ে নেয়। এটা হল সেই পথের ধারে পড়া বীজের কথা।

20 “আর পাথুরে জমিতে যে বীজ পড়েছিল, তা সেই সব লোকদের কথাই বলে যারা স্বর্গরাজ্যের শিক্ষা শুনে সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের সাথে তা গ্রহণ করে; 21 কিন্তু তাদের মধ্যে সেই শিক্ষার শেকড় ভাল করে গভীরে যেতে দেয় না বলে তারা অল্প সময়ের জন্য স্থির থাকে। যখন সেই শিক্ষার জন্য সমস্যা, দুঃখ কষ্ট ও তাড়না আসে, তখনই তারা পিছিয়ে যায়।

22 “কাঁটাঝোপে যে বীজ পড়েছিল, তা এমন লোকদের বিষয় বলে যারা সেই শিক্ষা শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা ভাবনা ও ধনসম্পত্তির মায়া সেই শিক্ষাকে চেপে রাখে। সেজন্য তাদের জীবনে কোন ফল হয় না।

23 “যে বীজ উৎ‌কৃষ্ট জমিতে বোনা হল, তা এমন লোকদের কথা প্রকাশ করে যারা শিক্ষা শোনে, তা বোঝে এবং ফল দেয়। কেউ একশ গুণ, কেউ ষাট গুণ আর কেউ বা তিরিশ গুণ ফল দেয়।”

গম এবং শ্যামা ঘাসের দৃষ্টান্ত

24 এবার যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত রাখলেন। স্বর্গরাজ্য এমন একজন লোকের মতো যিনি তাঁর জমিতে ভাল বীজ বুনলেন। 25 কিন্তু লোকেরা যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল, তখন সেই মালিকের শত্রু এসে গমের মধ্যে শ্যামা ঘাসের বীজ বুনে দিয়ে চলে গেল। 26 শেষে গমের চারা যখন বেড়ে উঠে ফল ধরল, তখন তার মধ্যে শ্যামাঘাসও দেখা গেল। 27 সেই মালিকের মজুররা এসে তাঁকে বলল, “আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেন নি? তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে এল?”

28 “তিনি তাদের বললেন, ‘এটা নিশ্চয়ই কোন শত্রুর কাজ।’

“তাঁর চাকরেরা তখন তাঁকে বলল, ‘আপনি কি চান, আমরা গিয়ে কি শ্যামা ঘাসগুলি উপড়ে ফেলব?’

29 “তিনি বললেন, ‘না, কারণ তোমরা যখন শ্যামা ঘাস ওপড়াতে যাবে তখন হয়তো ঐগুলোর সাথে গমের গাছগুলোও উপড়ে ফেলবে। 30 ফসল কাটার সময় না হওয়া পর্যন্ত একসঙ্গে সব বাড়তে দাও। পরে ফসল কাটার সময় আমি মজুরদের বলব তারা যেন প্রথমে শ্যামা ঘাস সংগ্রহ করে আঁটি আঁটি করে বাঁধে ও তা পুড়িয়ে দেয় এবং গম সংগ্রহ করে গোলায় তোলে।’”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International