Old/New Testament
বিন্যামীনের মিশরে যাওয়ার জন্য যাকোবের সম্মতি
43 দুর্ভিক্ষের সময়টা সেই দেশের পক্ষে খারাপ হল। 2 মিশর থেকে আনা সব শস্যই লোকরা খেয়ে শেষ করে ফেলল। যখন সেইসব শস্য শেষ হল, যাকোব তার দুটি পুত্রকে বলল, “মিশরে গিয়ে খাবার জন্য আরও শস্য কিনে আনো।”
3 কিন্তু যিহূদা যাকোবকে বলল, “কিন্তু সেই দেশের রাজ্যপাল আমাদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইকে নিয়ে না এলে আমি তোমাদের সঙ্গে কথা বলব না।’ 4 আপনি বিন্যামীনকে আমাদের সঙ্গে পাঠালে আমরা আবার শস্য কিনতে যেতে পারি। 5 কিন্তু বিন্যামীনকে না পাঠালে আমরা যাব না। সেই রাজ্যপাল আমাদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন তাকে না নিয়ে আসা চলবে না।”
6 ইস্রায়েল বললেন, “কেন তোমরা তাঁকে বললে যে তোমাদের আরেক ভাই রয়েছে? কেন তোমরা আমায় এই রকম বিপদে ফেললে?”
7 ভাইরা উত্তরে বলল, “লোকটি অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন। তিনি আমাদের ও আমাদের পরিবার সম্বন্ধে সব কিছু জানতে চাইছিলেন। তিনি এও জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের পিতা কি এখনও জীবিত আছেন? তোমাদের বাড়ীতে কি আর কোন ভাই রয়েছে?’ আমরা কেবল তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমরা জানতাম না যে তিনি ছোট ভাইকে নিয়ে আসতে বলবেন।”
8 তখন যিহূদা তার পিতা ইস্রায়েলকে বলল, “বিন্যামীনকে আমার সঙ্গে যেতে দিন। আমি তার যত্ন নেব। আমাদের মিশরে যেতেই হবে, না গেলে আমরা সবাই মারা যাব, এমনকি আমাদের সন্তানরাও মরবে। 9 আমি নিশ্চিতভাবে তার নিরাপত্তার দিকে নজর রাখব। আমিই তার দায়িত্ব নেব। আমি যদি তাকে ফেরত না আনি তবে চিরকাল তোমার কাছে অপরাধী থাকব। 10 আমাদের যদি আগে যেতে দিতে তবে আমরা দ্বিতীয়বার খাবার নিয়ে আসতে পারতাম।” 11 তখন তাদের পিতা ইস্রায়েল বললেন, “এই যদি সত্যি হয় তবে বিন্যামীনকে তোমাদের সঙ্গে নাও। কিন্তু রাজ্যপালের জন্য কিছু উপহার নিয়ে যেও। সেই সমস্ত জিনিস যা আমরা আমাদের দেশে সংগ্রহ করেছি তা নিয়ে যাও। তার জন্য মধু, পেস্তা, বাদাম, ধূনো, আঠা এবং সুগন্ধদ্রব্য এইসব নিয়ে যাও। 12 এইবার তোমাদের সঙ্গে দ্বিগুন টাকা নিও। গতবার দাম মেটাবার পর যে টাকা তোমাদের কাছে ফেরৎ এসেছিল তা সঙ্গে নাও। হতে পারে রাজ্যপালের ভুল হয়েছিল। 13 বিন্যামীনকে নিয়েই তার কাছে যাও। 14 আমার প্রার্থনা তোমরা যখন রাজ্যপালের সামনে দাঁড়াবে তখন যেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করেন। প্রার্থনা করি সে যেন বিন্যামীন ও শিমিয়োনকে নিরাপদে ফিরে আসতে দেয়। যদি তা না হয় তবে আমি পুত্র হারানোর শোকে আবার মুষড়ে পড়ব।”
15 তাই ভাইরা রাজ্যপালকে দেবার জন্য উপহারগুলো নিল আর সঙ্গে আগে যা নিয়েছিল তার দ্বিগুন টাকা নিল। এইবার বিন্যামীনও তার ভাইদের সাথে মিশরে গেল।
ভাইদের যোষেফের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ জানানো হল
16 মিশরে যোষেফ বিন্যামীনকে তার ভাইদের সঙ্গে দেখতে পেয়ে ভৃত্যদের বললেন, “ঐ লোকদের আমার বাড়ী নিয়ে এস। পশু মেরে রান্না কর। এই লোকরা আজ দুপুরে আমার সঙ্গে খাবে।” 17 ভৃত্যটি কথা মত কাজ করল। সে ঐ লোকদের যোষেফের বাড়ীর ভিতর নিয়ে এল।
18 যোষেফের বাড়ী যাবার সময় ভাইরা ভয় পেয়ে গেল। তারা বলল, “গতবার যে টাকা আমাদের বস্তায় ফেরৎ দেওয়া হয়েছিল তার জন্যই বোধহয় আমাদের এখানে আনা হচ্ছে। ঐ বিষয়টিকেই আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে তারা আমাদের গাধা কেড়ে নিয়ে আমাদের দাস করে রাখবে।”
19 তাই ভাইরা যোষেফের বাড়ীর প্রধান ভৃত্যের কাছে গেল। 20 তারা বলল, “সত্যি বলছি গতবার আমরা শস্য কিনতে এসেছিলাম। 21-22 বাড়ী ফেরার পথে আমরা বস্তা খুলে প্রত্যেক বস্তায় আমাদের টাকা খুঁজে পেলাম। আমরা জানি না টাকা সেখানে কি করে এলো। কিন্তু আমরা সেই টাকা ফেরৎ দেবার জন্য নিয়ে এসেছি। আর এবারের শস্য কেনার জন্যও টাকা এনেছি।”
23 কিন্তু সেই ভৃত্য বলল, “ভয় পেও না, আমায় বিশ্বাস কর। তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের পিতার ঈশ্বর নিশ্চয়ই উপহার হিসাবে সেই টাকা তোমাদের বস্তায় ফেরৎ দিয়েছেন। আমার মনে আছে তোমরা গতবার শস্যের জন্য দাম দিয়েছিলে।”
তারপর সেই ভৃত্যটি শিমিয়োনকে কারাগার থেকে বাইরে আনল। 24 ভৃত্যটি তাদের যোষেফের বাড়ী নিয়ে গেল। সে তাদের জল দিলে তারা পা ধুয়ে নিল। তারপর সে তাদের গাধাদের খাবার খেতে দিল।
25 ভাইরা শুনতে পেল যে তারা যোষেফের সঙ্গে খাবে। তাই তারা দুপুর পর্যন্ত তাদের উপহার সাজাল। 26 যোষেফ বাড়ী ফিরলে ভাইরা তাদের সঙ্গে করে আনা উপহার তাঁকে দিল। তারপর তারা হাঁটু গেড়ে তাকে প্রণাম করল।
27 যোষেফ তারা কেমন আছে জিজ্ঞেস করলেন। তারপর বললেন, “তোমাদের বৃদ্ধ পিতা যাঁর সম্বন্ধে আমাকে বলেছিলে তিনি কেমন আছেন? তিনি কি এখনও জীবিত আছেন?”
28 ভাইরা উত্তর দিল, “হ্যাঁ, মহাশয়, আমাদের পিতা এখনও জীবিত আছেন।” তারপর তারা আবার যোষেফের সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে প্রণাম করল।
29 তখন যোষেফ বিন্যামীনকে দেখতে পেলেন। (বিন্যামীন ও যোষেফ ছিলেন এক মায়ের সন্তান।) যোষেফ বললেন, “এই কি তোমাদের ছোট ভাই যার সম্বন্ধে তোমরা আমায় বলেছিলে?” তারপর যোষেফ বিন্যামীনকে বললেন, “বৎস, ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন।”
30 সেই সময় যোষেফ ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন। যোষেফ তাঁর ভাই বিন্যামীনকে যে ভালবাসেন তা প্রকাশ করতে চাইলেন। তাঁর কান্না পেল, কিন্তু তিনি চাইলেন না যে তাঁর ভাইরা তাঁকে কাঁদতে দেখুক। তাই যোষেফ দৌড়ে তাঁর ঘরে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন। 31 তারপর যোষেফ তাঁর মুখ ধুয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন, “এখন খাবার সময় হয়েছে।”
32 ভৃত্যরা যোষেফের জন্য একটা টেবিলে ব্যবস্থা করল। অন্য টেবিলে তাঁর ভাইদের বসার ব্যবস্থা হল, এছাড়া মিশরীয়দের জন্য আলাদা আরেকটা টেবিলে ব্যবস্থা করা হল। মিশরীয়রা মনে মনে বিশ্বাস করত যে ইব্রীয়দের সঙ্গে বসে তাদের খাওয়াটা উচিত কাজ নয়। 33 যোষেফের ভাইরা তাঁর সামনের টেবিলেই বসল। ভাইরা ছোট থেকে বড়জন পরপর বসেছিল। কি ঘটছিল তাই ভেবে ভাইরা বিস্ময়ে একে অপরের দিকে চাইল। 34 ভৃত্যরা যোষেফের টেবিল থেকে খাবার এনে তাদের দিচ্ছিল। তবে ভৃত্যরা বিন্যামীনকে অন্যদের চাইতে পাঁচগুণ বেশী খাবার দিল। ভাইরা যোষেফের সঙ্গে খেল, পান করল যে পর্যন্ত না তারা প্রায় মত্ত হয়ে গেল।
যোষেফ ফাঁদ পাতলেন
44 তারপর যোষেফ তাঁর ভৃত্যদের এক আদেশ দিয়ে বললেন, “ওদের প্রত্যেকের বস্তা বইবার ক্ষমতা অনুসারে শস্য ভর্ত্তি করে দাও। আর প্রত্যেকের টাকাও তাদের শস্যের সঙ্গে রেখে দাও। 2 আমার ছোট ভাইয়ের বস্তায় তার টাকাটা রেখো এবং তার সঙ্গে আমার বিশেষ রূপোর পেয়ালাটাও রেখো।” ভৃত্যরা যোষেফের কথা মত কাজ করল।
3 পরের দিন ভোরবেলা ভাইদের গাধায় করে দেশে ফেরার জন্য বিদেয় করা হল। 4 তারা শহর ছেড়ে বেরোলে যোষেফ তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “যাও, ওদের পিছু নাও। ওদের থামিয়ে বল, ‘আমরা তোমাদের প্রতি কি ভাল ব্যবহার করি নি? তবে তোমরা কেন আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে? কেন তোমরা আমার মনিবের রূপোর পেয়ালা চুরি করলে? 5 আমার মনিব সেই পেয়ালা থেকে পান করেন এবং গণনার জন্যও ব্যবহার করেন। তোমরা যা করেছ তা অন্যায় কাজ।’”
6 ভৃত্যটি সেই মত কাজ করল। সে সেখানে পৌঁছে ভাইদের থামালো। যোষেফ যা বলতে বলেছিলেন, ভৃত্যটি সেই মত কথা বলল।
7 কিন্তু ভাইরা ভৃত্যটিকে বলল, “রাজ্যপাল কেন এইরকম কথা বলছেন? আমরা সেইরকম কোন কাজ করতেই পারি না। 8 আমরা আমাদের বস্তায় যে টাকা আগের বার পেয়েছিলাম তা ফিরিয়ে এনেছিলাম। তাহলে নিশ্চয়ই আমরা তোমার মনিবের বাড়ী থেকে সোনা কি রূপা কিছুই চুরি করতে পারি না। 9 তুমি যদি সেই রূপোর পেয়ালা আমাদের কারও বস্তায় খুঁজে পাও তবে তার মৃত্যু হোক্। তুমি তাকে তাহলে হত্যা করতে পারো এবং সেক্ষেত্রে আমরাও তোমার দাস হব।”
10 ভৃত্যটি বলল, “আমরা তোমাদের কথা মতই কাজ করব। কিন্তু আমি সেই জনকে হত্যা করব না। আমি রূপোর পেয়ালা খুঁজে পেলে সেই জন আমার দাস হবে, অন্যরা যেতে পারে।”
বিন্যামীন ফাঁদে ধরা পড়ল
11 তখন প্রত্যেক ভাই তাড়াতাড়ি মাটিতে নিজেদের বস্তা খুলে ফেলল। 12 ভৃত্যটি বস্তাগুলি দেখতে লাগল। জ্যেষ্ঠ থেকে শুরু করে কনিষ্ঠের বস্তা খুঁজে দেখলে বিন্যামীনের বস্তায় সেই পেয়ালা খুঁজে পাওয়া গেল। 13 ভাইরা এতে অত্যন্ত দুঃখিত হল। তারা তাদের শোক প্রকাশ করতে জামা ছিঁড়ে ফেলল। নিজেদের বস্তা আবার গাধায় চাপিয়ে শহরে ফিরে চলল।
14 যিহূদা তার ভাইদের নিয়ে যোষেফের বাড়ী গেল। যোষেফ তখনও বাড়ীতে ছিলেন। ভাইরা তার সামনে মাটিতে পড়ে তাঁকে প্রণাম করল। 15 যোষেফ তাদের বললেন, “তোমরা কেন এ কাজ করেছ। তোমরা কি জানতে না যে আমি গণনা করতে পারি? এ কাজে আমার থেকে ভালো কেউ নেই।”
16 যিহূদা বলল, “মহাশয়, আমাদের বলবার কিছুই নেই। ব্যাখ্যা করারও পথ নেই। আমরা যে নির্দোষ তা প্রমাণ করারও পথ নেই। অন্য কোন অন্যায় কাজের জন্য ঈশ্বর আমাদের বিচারে দোষী করেছেন। সেইজন্য আমরা সবাই এমনকি, বিন্যামীনও, আপনার দাস হব।”
17 কিন্তু যোষেফ বললেন, “আমি তোমাদের সবাইকে দাস করব না। কেবল যে পেয়ালা চুরি করেছে সেই আমার দাস হবে। বাকী তোমরা তোমাদের পিতার কাছে শান্তিতে ফিরে যাও।”
যিহূদা বিন্যামীনের জন্য মিনতি করলেন
18 তখন যিহূদা যোষেফের কাছে গিয়ে বললেন, “মহাশয়, দয়া করে আমাকে সব কথা পরিস্কার করে আপনাকে বলতে দিন। দয়া করে আমার প্রতি রাগ করবেন না। আমি জানি আপনি ফরৌণের সমান। 19 আমরা আগে যখন এখানে এসেছিলাম তখন আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমাদের একজন পিতা আর ভাই আছে কি?’ 20 আমরা আপনাকে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘আমাদের এক পিতা আছেন, তিনি বৃদ্ধ। আমাদের এক ছোট ভাই রয়েছে। আমাদের পিতা তাকে ভালবাসেন কারণ সে তাঁর বৃদ্ধ বয়সের সন্তান। আর সেই ছোট ভাইয়ের নিজের এক ভাই মারা গেছে। তাই তার মায়ের পুত্রদের মধ্যে একমাত্র সেই বেঁচে আছে এবং তার পিতা তাকে খুব ভালবাসেন।’ 21 তারপর আপনি বললেন, ‘তবে সেই ভাইকেই আমার কাছে নিয়ে এস। আমি তাকে দেখতে চাই।’ 22 আর আমরা আপনাকে বললাম, ‘সেই ছোট ভাই পিতাকে ছেড়ে আসতে পারে না। আর পিতা তাকে হারালে শোকেতে মারাই যাবেন।’ 23 কিন্তু আপনি আমাদের বললেন, ‘তোমাদের অবশ্যই সেই ভাইকে আনতে হবে নতুবা আমি শস্য বিক্রি করব না।’ 24 তাই আমরা ফিরে গিয়ে আপনি যা বলেছিলেন তা আমাদের পিতাকে জানালাম।
25 “পরে আমাদের পিতা বললেন, ‘যাও, গিয়ে আরও কিছু শস্য কিনে আনো।’ 26 আর আমরা পিতাকে বললাম, ‘আমরা ছোট ভাইকে না নিয়ে যেতে পারি না। রাজ্যপাল বলেছেন ছোট ভাইকে না দেখলে তিনি আমাদের কাছে শস্য বিক্রি করবেন না।’ 27 তখন আমাদের পিতা বললেন, ‘তোমরা জান আমার স্ত্রী রাহেলের দুটি সন্তান হয়। 28 তাদের একজনকে আমি যেতে দিলে বন্য জন্তু তাকে মেরে ফেলল। সেই থেকে আর কখনও তাকে দেখিনি। 29 তোমরা যদি অন্য জনকেও আমার কাছে থেকে নিয়ে যাও আর তার যদি কিছু ঘটে তাহলে আমি শোকে মারা যাব।’ 30 এখন ভেবে দেখুন ছোট ভাইকে নিয়ে বাড়ী না ফিরলে কি ঘটবে—এই ছোট ভাই পিতার প্রাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! 31 ছোট ভাইকে আমাদের সঙ্গে না দেখলে আমাদের পিতা মারাই যাবেন আর দোষটা হবে আমাদেরই। তাহলে আমরা আমাদের বৃদ্ধ পিতাকে এই দুঃখের কারণে মেরে ফেলব।
32 “এই ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব আমিই নিয়েছিলাম। আমি পিতাকে বলেছিলাম, ‘আমি যদি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে না আনি তবে সারাজীবন আমি অপরাধী হয়ে থাকব।’ 33 তাই এখন আমার এই ভিক্ষা, দয়া করে ছোট ভাইকে তার ভাইদের সঙ্গে ফিরতে দিন। আর আমি এখানে আপনার দাস হয়ে থাকি। 34 ঐ ছোট ভাই না ফিরলে আমি পিতাকে মুখ দেখাতে পারবো না। ভেবে ভয় পাচ্ছি আমার পিতার কি হবে।”
যোষেফ নিজের পরিচয় দিলেন
45 যোষেফ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। তিনি সেখানে উপস্থিত সমস্ত লোকের সামনে কেঁদে উঠলেন এবং বললেন, “সবাইকে চলে যেতে বলো।” তাই সব লোক চলে গেল। কেবল যোষেফের ভাইরা সঙ্গে রইল। তখন যোষেফ নিজের পরিচয় দিলেন। 2 যোষেফ খুব উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন, আর ফরৌণের বাড়ীর সমস্ত মিশরীয়রা তা শুনতে পেল। 3 যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমি তোমাদের ভাই যোষেফ। আমার পিতা ভাল আছেন তো?” কিন্তু ভাইরা উত্তর দিল না কারণ তারা হতবুদ্ধি হল, ভয় পেল।
4 তাই যোষেফ আবার তাঁর ভাইদের বললেন, “এখানে আমার কাছে এস। দয়া করে এখানে এস।” তাই ভাইরা যোষেফের কাছে গেল। যোষেফ তাদের বললেন, “আমি তোমাদের ভাই যোষেফ। আমিই সেই, যাকে তোমরা দাস হিসাবে মিশরের জন্য বেচে দিয়েছিলে। 5 এখন চিন্তা করো না। তোমরা যা করেছিলে তার জন্য রাগও করো না। ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুসারেই আমি এখানে এসেছি। আমি তোমাদের প্রাণ বাঁচাতেই এখানে এসেছি। 6 দুর্ভিক্ষের কেবল দুটো বছরই কেটেছে। এখনও আরও পাঁচ বছর কোন চাষ হবে না, ফসলও ফলবে না। 7 সুতরাং ঈশ্বর আমাকে তোমাদের আগেই এখানে পাঠিয়েছেন যাতে আমি তোমাদের লোকজনদের এই দেশে এনে বাঁচাতে পারি। 8 আমাকে যে এখানে পাঠানো হয়েছে তাতে তোমাদের দোষ নেই। এ ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনা। ঈশ্বরই আমাকে ফরৌণের পিতার স্থানে বসিয়েছেন। আমি তার সমস্ত বাড়ীর সমস্ত মিশর দেশের রাজ্যপাল হয়েছি।”
ইস্রায়েল মিশরে আমন্ত্রিত হলেন
9 যোষেফ বলল, “তোমরা তাড়াতাড়ি আমার পিতার কাছে যাও। তাঁকে বল তাঁর পুত্র যোষেফ এই বার্তা পাঠিয়েছে: ‘ঈশ্বর আমাকে মিশরের রাজ্যপাল করেছেন। তাই এখানে আমার কাছে চলে আসুন। দেরী করবেন না। এখনই চলে আসুন। 10 আপনি আমার কাছাকাছি গোশন প্রদেশে থাকতে পারেন। আপনি, আপনার সন্তানরা, আপনার নাতি-নাতনিরা এবং আপনার সমস্ত পশুদেরও নিয়ে আসুন। 11 দুর্ভিক্ষের পরের পাঁচ বছর আমি আপনার যত্ন নেব। ফরে আপনি এবং আপনার পরিবারের যা আছে তার কিছুই হারিয়ে যাবে না।’”
12 যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমি যে সত্যি সত্যিই যোষেফ তা তোমরা চোখেই দেখছ। এখন আমার ভাই বিন্যামীনও জানে যে আমি তোমাদের ভাই, তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি। 13 আমি মিশর দেশে যে সম্মান অর্জন করেছি সে সম্বন্ধে পিতাকে বলো। এখানে তোমরা যা যা দেখছ সে সম্বন্ধে তাঁকে বলো। এবার ওঠ, যত তাড়াতাড়ি পার আমার পিতাকে এখানে নিয়ে এস।” 14 এরপর যোষেফ বিন্যামীনকে বুকে জড়িয়ে ধরে দুজনেই কাঁদতে লাগলেন। 15 যোষেফ অন্যান্য ভাইদেরও চুমু খেয়ে কাঁদলেন। এরপর ভাইরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল।
16 ফরৌণও জানতে পারলেন যে যোষেফের ভাইরা তাঁর কাছে এসেছে। এই খবর ফরৌণের সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়লে ফরৌণ ও তাঁর দাসরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন। 17 ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার ভাইদের বল তাদের যে পরিমাণ শস্যের প্রয়োজন তা নিয়ে যেন কনান দেশে যায়। 18 আরও বল যেন তারা তাদের পিতা এবং তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার কাছে এইখানে ফিরে আসে। আমি তোমাদের বাস করার জন্য মিশরে সব চাইতে ভাল জমি দেব। আর তোমার পরিবার এখানকার সব চেয়ে ভাল খাবার খেতে পাবে।”
19 তারপর ফরৌণ বললেন, “আমাদের মালবাহী গাড়ীগুলোর মধ্যে যেগুলো ভালো তার কিছু তোমার ভাইদের দাও। তাদের বলো যেন, তারা কনান দেশে গিয়ে তাদের পিতা এবং নিজের নিজের স্ত্রী ও পুত্র কন্যা নিয়ে গাড়ী করে ফিরে আসে। 20 সেখান থেকে তাদের সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে আসার ব্যাপারে তারা যেন চিন্তা না করে, কারণ মিশরের সমস্ত উত্তম জিনিস তাদের।”
21 ইস্রায়েলের সন্তানরা তাই করলেন। ফরৌণ যেমন আদেশ করেছিলেন সেই মতন যোষেফ তাদের ভালো কিছু মালবাহী গাড়ী দিলেন আর যাত্রার জন্য যথেষ্ট খাবারও দিলেন। 22 যোষেফ তাঁর প্রত্যেক ভাইকে সুন্দর জামা জোড়াও দিলেন। কিন্তু যোষেফ বিন্যামীনকে দিলেন পাঁচ জোড়া জামা আর 300 রৌপ্য মুদ্রা। 23 যোষেফ তাঁর পিতার জন্যও উপহার পাঠালেন। তিনি দশটা গাধার পিঠে বস্তা ভরে মিশরের বহু উত্তম জিনিস পাঠালেন। আর তার পিতার ফেরবার পথে যাত্রার জন্য আরও দশটি স্ত্রী গাধার পিঠে করে শস্য, রুটি এবং অন্যান্য খাবার পাঠালেন। 24 তারপর যোষেফ তাঁর ভাইদের বিদায় দিলেন। আর তারা যখন পথে যাচ্ছে যোষেফ তাদের বললেন, “সোজা বাড়ী যাও। পথে ঝগড়া করো না।”
25 তাই তারা মিশর দেশ ছেড়ে তাদের পিতার কাছে কনান দেশে গিয়ে পৌঁছাল। 26 ভাইরা বলল, “পিতা যোষেফ এখনও জীবিত! আর তিনিই সমস্ত মিশরের নিযুক্ত রাজ্যপাল।” তাদের পিতা এই শুনে হতবুদ্ধি হয়ে রইলেন; প্রথমে তো তাঁর বিশ্বাসই হল না। 27 কিন্তু তারপর তারা যোষেফ যা বলেছিলেন তা বলল। আর যোষেফ তাঁকে মিশর দেশে নিয়ে যাবার জন্য মালবাহী গাড়ীগুলো পাঠিয়ে ছিলেন তা যখন যাকোব দেখলেন, তখন তিনি আনন্দে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। 28 ইস্রায়েল বললেন, “এবার আমি তোমাদের কথা বিশ্বাস করছি। আমার পুত্র যোষেফ এখনও বেঁচে আছে! আহা, মৃত্যুর আগে আমি তাকে দেখতে পাব!”
24 ফরীশীরা একথা শুনে বললেন, “এ তো ভূতদের শাসনকর্তা বেল্সবূলের[a] শক্তিতে ভূতদের তাড়ায়।”
25 যীশু ফরীশীদের মনের কথা বুঝতে পেরে তাদের বললেন, “বিবাদে বিভক্ত যে কোন রাজ্যই ধ্বংস হয়ে যায়। যে শহর বা পরিবার নিজেদের মধ্যে বিবাদে বিভক্ত তা টিকে থাকতে পারে না। 26 শয়তান যদি ভূতকে তাড়ায় তবে সে নিজেই নিজের বিরুদ্ধে ভাগ হয়ে গেলে তার রাজ্য কি করে টিকে থাকবে? 27 আমি যদি বেল্সবূলের শক্তিতে ভূত তাড়াই, তবে তোমাদের লোকেরা কার শক্তিতে তাদের তাড়ায়? সুতরাং তোমাদের নিজেদের অনুগামীরাই প্রমাণ করবে যে তোমরা ভুল বলছ। 28 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মার শক্তিতে ভূতদের তাড়াই, তবে ঈশ্বরের রাজ্য তো তোমাদের কাছে এসে গেছে। 29 আবার বলছি, কোন শক্তিমান লোককে আগে না বেঁধে কেউ কি তার বাড়িতে ঢুকে তার সবকিছু লুট করতে পারে? তাকে বাঁধবার পর তবেই তো তার বাড়ির সবকিছু লুট করতে পারবে। 30 যে আমার পক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষে, যে আমার সঙ্গে কুড়ায়় না, সে তা ছড়াচ্ছে।
31 “তাই আমি তোমাদের বলছি, মানুষের সব পাপ এবং ঈশ্বর-নিন্দার ক্ষমা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কোন অসম্মানজনক কথাবার্তার ক্ষমা হবে না। 32 মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ যদি কোন কথা বলে, তাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা বললে তার ক্ষমা নেই, এযুগে বা আগামী যুগে কখনই না।
কাজ দেখেই লোককে জানা যায়
(লূক 6:43-45)
33 “ভাল ফল পেতে হলে ভাল গাছ থাকা দরকার, কিন্তু খারাপ গাছ থাকলে তোমরা খারাপ ফলই পাবে, কারণ ফল দেখেই গাছ চেনা যায়। 34 তোমরা কালসাপ! তোমাদের মতো দুষ্ট লোকেরা কি করে ভাল কথা বলতে পারে? মানুষের অন্তরে যা আছে, মুখ দিয়ে তো সে কথাই বার হয়। 35 ভাল লোক তার অন্তরে ভাল কথাই সঞ্চিত রাখে, আর ভাল কথাই বলে; কিন্তু যার অন্তরে মন্দ বিষয় থাকে, সে তার মুখ দিয়ে মন্দ কথাই বলে। 36 আমি তোমাদের বলছি, লোকে যত বেহিসেবী কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রতিটি কথার হিসাব তাদের দিতে হবে। 37 তোমাদের কথার সুত্র ধরেই তোমাদের নির্দোষ বলা হবে, অথবা তোমাদের কথার ওপর ভিত্তি করেই তোমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে।”
ইহুদীরা যীশুর কাছে প্রমাণ চাইলেন
(মার্ক 8:11-12; লূক 11:29-32)
38 এরপর কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর কাছে এসে বললেন, “হে গুরু, আমরা আপনার কাছ থেকে কোন চিহ্ন বা অলৌকিক কাজ দেখতে চাই।”
39 যীশু তাদের বললেন, “এ যুগের দুষ্ট ও পাপী লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে; কিন্তু ভাববাদী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখান হবে না। 40 যোনা যেমন সেই বিরাট মাছের পেটে তিন দিন তিন রাত ছিলেন, তেমনই মানবপুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর অন্তঃস্থলে কাটাবেন। 41 বিচারের দিনে নীনবীয় লোকেরা এই কালের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের দোষী করবে, কারণ নীনবীয় লোকেরা যোনার প্রচারের ফলে তাদের মন ফেরাল। আর দেখ, যোনার চেয়ে এখানে আরও একজন মহান আছেন।
42 “বিচারের দিনে দক্ষিণ দেশের রাণী উঠে এই যুগের লোকদের দোষী সাব্যস্ত করবে, কারণ রাজা শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর দেখ শলোমনের চেয়ে মহান একজন এখানে আছেন।
এই যুগের লোকেরা মন্দে পরিপূর্ণ
(লূক 11:24-26)
43 “যখন কোন দুষ্ট আত্মা কোন মানুষের মধ্য থেকে বার হয়ে যায়, তখন সে জলবিহীন শুকনো অঞ্চলে বিশ্রাম পাবার জন্য ঘোরাঘুরি করতে থাকে কিন্তু তা পায় না। 44 তারপর সে বলে, ‘আমি যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি, সেখানে ফিরে যাব।’ আর ফিরে এসে দেখে সেই ঘর খালি পড়ে আছে; পরিষ্কার ও সাজানো আছে। 45 পরে সে গিয়ে তার থেকে আরো খারাপ অন্য সাতটা দুষ্ট আত্মাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। তারপর তারা সকলে সেখানে গিয়ে বাস করতে থাকে, তাতে সেই লোকটার প্রথম অবস্থা থেকে শেষ অবস্থা আরো খারাপ হয়ে ওঠে। এই যুগের মন্দ লোকদের অবস্থাও সেরকম হবে।”
যীশুর অনুগামীরাই তাঁর পরিবার
(মার্ক 3:31-35; লূক 8:19-21)
46 যীশু যখন সমবেত লোকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তাঁর মা ও ভাইরা এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছায় বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। 47 সেই সময় একজন লোক তাঁকে বলল, “দেখুন, আপনার মা ও ভাইরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।”
48 যীশু তখন তাকে বললেন, “কে আমার মা? কারাই বা আমার ভাই?” 49 এরপর তিনি তাঁর অনুগামীদের দেখিয়ে বললেন, “দেখ! এরাই আমার মা, আমার ভাই। 50 হ্যাঁ, যে কেউ আমার স্বর্গের পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার মা, ভাই ও বোন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International