Old/New Testament
ফরৌণের স্বপ্ন
41 দু বছর পর ফরৌণ একটা স্বপ্ন দেখলেন। দেখলেন তিনি নীল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। 2 স্বপ্নে নদী থেকে সাতটা গরু উঠে এসে ঘাস খেতে লাগল। গরুগুলো ছিল হৃষ্টপুষ্ট, দেখতেও ভালো। 3 এরপর নদী থেকে আরও সাতটা গরু উঠে এসে পাড়ের হৃষ্টপুষ্ট গরুগুলোর গা ঘেঁসে দাঁড়াল। কিন্তু ঐ গরুগুলো রোগা ছিল, দেখতেও অসুস্থ। 4 সেই সাতটা অসুস্থ গরু সাতটা হৃষ্টপুষ্ট গরুগুলোকে খেয়ে ফেলল। তখনই ফরৌণের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
5 ফরৌণ আবার শুতে গেলেন; আবার স্বপ্ন দেখলেন। এইবার দেখলেন একটা গাছে সাতটা শীষ বেড়ে উঠছে। শীষগুলো পুষ্ট এবং শস্যে ভরা। 6 তারপর দেখলেন আরও সাতটা শীষ উঠছে। কিন্তু শীষগুলো অপুষ্ট আর পূবের বাতাসে ঝলসে গেছে। 7 এরপর ঐ রোগা রোগা সাতটা শীষ পুষ্ট সাতটা শীষকে খেয়ে ফেলল। ফরৌণের ঘুম আবার ভেঙ্গে গেল। তিনি বুঝলেন যে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন। 8 পরের দিন সকালে রাতে দেখা স্বপ্নগুলোর জন্য ফরৌণের মন অস্থির হয়ে উঠল। তাই তিনি মিশরের সমস্ত যাদুকর ও জ্ঞানী লোকদের ডেকে পাঠালেন। ফরৌণ তাঁর স্বপ্ন তাদের বললেন কিন্তু কেউ তার অর্থ বলতে পারল না।
ভৃত্যটি যোষেফের কথা বলল
9 তখন পানপাত্রবাহকের যোষেফের কথা মনে পড়ল। ভৃত্যটি ফরৌণকে বলল, “আমার সাথে যা ঘটেছিল তা মনে পড়ছে। 10 আপনি আমার ও রুটিওয়ালার উপর রেগে গিয়েছিলেন এবং আমাদের বন্দী করেছিলেন। 11 তারপর এক রাতে সে ও আমি স্বপ্ন দেখলাম। প্রত্যেকটি স্বপ্নের আলাদা অর্থ ছিল। 12 আমাদের সাথে কারাগারে এক ইব্রীয় যুবক ছিল। সে ছিল রক্ষীদের অধিকারী ভৃত্য। আমরা তাকে আমাদের স্বপ্ন বললে সে তার মানে বলে দিল। 13 আর সে যা বলল বাস্তবে তাই-ই ঘটল। সে বলেছিল যে আমি মুক্তি পেয়ে আবার পুরানো কাজ ফিরে পাব—ঘটলও তাই। রুটিওয়ালা সম্বন্ধে বলেছিল যে সে মারা যাবে—ঘটলও তাই।”
স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে যোষেফের ডাক পড়ল
14 তাই ফরৌণ যোষেফকে ডেকে পাঠালে দুজন রক্ষী দ্রুত তাকে কারাগার থেকে বার করে আনল। যোষেফ দাড়ি কামালেন, পরিষ্কার জামা পরলেন। তারপর ফরৌণের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। 15 ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু কেউ তার ব্যাখ্যা করতে পারছে না। আমি শুনেছি যে তুমি স্বপ্ন শুনলে তার ব্যাখ্যা করতে পার।”
16 উত্তরে যোষেফ বললেন, “আমি পারি না! কিন্তু হয়তো ফরৌণের জন্য ঈশ্বর তার অর্থ বলে দেবেন।”
17 তখন ফরৌণ যোষেফকে বলতে লাগলেন, “আমার দেখা স্বপ্নে আমি নীল নদীর ধারে দাঁড়িয়েছিলাম। 18 তখন নদী থেকে সাতটা গরু উঠে এসে ঘাস খেতে শুরু করল। গরুগুলো ছিল হৃষ্টপুষ্ট, দেখতেও সুন্দর। 19 তারপর আমি নদী থেকে আরও সাতটি গরু উঠে আসতে দেখলাম। কিন্তু এই গরুগুলো রোগা রোগা, দেখতেও অসুস্থ। ঐরকম বিশ্রী গরু আমি মিশরে কখনও দেখি নি। 20 তারপর রোগা অসুস্থ গরুগুলো প্রথমে আসা হৃষ্টপুষ্ট গরুগুলোকে খেয়ে ফেলল। 21 কিন্তু তাও তাদের চেহারা রোগা আর অসুস্থই রইল। দেখে মনেই হবে না যে তারা সেই মোটা মোটা গরুগুলো খেয়েছে। তারপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
22 “আমার পরের স্বপ্নে আমি দেখলাম একটা গাছে সাতটা শীষ বেড়ে উঠছে। শীষগুলো পুষ্ট শস্যের দানায় ভরা। 23 তারপর সেগুলোর পরে সাতটা আরও শীষ উঠে এলো। কিন্তু এগুলো রোগা আর পূবের বাতাসে ঝলসানো ছিল। 24 এরপর সেই অপুষ্ট শীষগুলো পুষ্ট শীষগুলোকে খেয়ে ফেলল।
“আমার যাদুকরদের আমি এই স্বপ্নগুলো বললাম বটে কিন্তু তারা তার অর্থ বলতে পারল না। স্বপ্নগুলোর অর্থ কি?”
যোষেফ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলেন
25 তখন যোষেফ ফরৌণকে বললেন, “এই দুই স্বপ্নের বিষয়টা এক। ঈশ্বর শীঘ্রই যা করতে চলেছেন তা আপনার কাছে প্রকাশ করেছেন। 26 উভয় স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ এক। সাতটা ভাল গরু এবং সাতটা ভাল শীষ সাতটা ভাল বছরকে বোঝাচ্ছে। 27 আর সাতটা রোগা গরু, সাতটা অপুষ্ট শীষ বোঝায় সাতটা দুর্ভিক্ষের বছর। সাতটা ভাল বছরের পর দুর্ভিক্ষের সাত বছর আসবে। 28 শীঘ্র যা ঘটতে চলেছে ঈশ্বর তাই-ই আপনাকে দেখিয়েছেন। যে ভাবে আমি বললাম ঈশ্বর সেইভাবেই এসব ঘটাবেন। 29 সাত বছর মিশরে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হবে। 30 কিন্তু তারপর আসবে দুর্ভিক্ষের সাতটা বছর। মিশরের লোকরা ভুলে যাবে অতীতে কত শস্যই না হত। এই দুর্ভিক্ষে দেশ নষ্ট হবে। 31 লোকরা ভুলে যাবে শস্যের প্রাচুর্য্য বলতে কি বোঝায়।
32 “ফরৌণ, আপনি একটি বিষয় নিয়ে দুটি স্বপ্ন দেখেছন। কারণ ঈশ্বর যে সত্যিই তা ঘটাতে চলেছেন তা আপনাকে দেখাতে চাইলেন। আর তিনি শীঘ্রই তা ঘটাবেন। 33 তাই ফরৌণ, আপনার উচিৎ একজন সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান লোক খুঁজে তাকে মিশর দেশের জন্য নিযুক্ত করা। 34 তারপর আপনি অন্য লোকদের নিয়োগ করুন যেন তারা খাদ্য সংগ্রহ করে। সাতটি ভাল বছরের প্রত্যেকটি লোক তাদের উৎপন্ন শস্যের এক পঞ্চমাংশ সেই লোকদের দিক। 35 এইভাবে ঐ লোকরা ঐ সাতটি ভাল বছরে প্রচুর খাদ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজন না পড়া পর্যন্ত শহরে শহরে সংগ্রহ করে রাখবে। এইভাবে ফরৌণ, আপনার অধীনে ঐ খাদ্য আসবে। 36 তারপর দুর্ভিক্ষের সাত বছরে মিশর দেশের জন্য খাদ্য থাকবে। আর দুর্ভিক্ষে মিশর ধ্বংস হয়ে যাবে না।”
37 এই পরিকল্পনা ফরৌণের মনপুতঃ হল আর তাঁর আধিকারিকরাও মেনে নিল। 38 তারপর ফরৌণ তাদের বললেন, “ঐ কাজ করার জন্যে মনে হয় না আমরা যোষেফের থেকে আর ভাল কাউকে পাব! ঈশ্বরের আত্মা তার সঙ্গে রয়েছে আর সেই জন্যই সে জ্ঞানবান!”
39 তাই ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “ঈশ্বর তোমাকে এই সমস্ত যখন জানিয়েছেন তখন তোমার মত জ্ঞানী আর কে হতে পারে? 40 আমি তোমাকে আমার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিযুক্ত করলাম, সমস্ত লোক তোমার আদেশ পালন করবে। ক্ষমতার দিক থেকে কেবল আমি তোমার চেয়ে বড় থাকব।”
41 ফরৌণ যোষেফকে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্যপাল করলেন। ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “আমি তোমাকে সমগ্র মিশরের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করলাম।”
42 তারপর ফরৌণ তাঁর আংটি খুলে যোষেফের হাতে পরিয়ে দিলেন। সেই আংটিতে রাজকীয় ছাপ ছিল। ফরৌণ তাকে মিহি কার্পাসের পোশাক দিলেন এবং তার গলায় সোনার হার পরিয়ে দিলেন। 43 ফরৌণ যোষেফকে দ্বিতীয় রথে চড়তে দিলেন। রক্ষকরা যোষেফের রথের আগে আগে যেতে যেতে লোকদের বলতে থাকল, “যোষেফের সামনে হাঁটু গাড়ো।”
এইভাবে যোষেফ সমগ্র মিশরের রাজ্যপাল হলেন। 44 ফরৌণ তাকে বললেন, “আমি রাজা ফরৌণ, সুতরাং আমি যা চাই তাই করব কিন্তু মিশরের আর কেউ তোমার আজ্ঞা ছাড়া হাত অথবা পা তুলতে পারবে না।”
45 ফরৌণ যোষেফের আর এক নাম সাফনত্-পানেহ রাখলেন। ফরৌণ যোষেফকে আসনৎ নামে এক কন্যার সঙ্গে বিয়েও দিলেন। সে ছিল ওন নামক শহরে যাজক পোটীফরের কন্যা। এইভাবে যোষেফ সমস্ত মিশর দেশের রাজ্যপাল হলেন।
46 যোষেফের 30 বছর বয়সে তিনি মিশর দেশের রাজার সেবা করতে শুরু করলেন। তিনি সমস্ত মিশর দেশ ঘুরলেন। 47 সাত বছর মিশরে খুব ভাল শস্য উৎপন্ন হল। 48 আর ঐ সাত বছর ধরে যোষেফ মিশরে খাবার সঞ্চয় করলেন। প্রত্যেক শহরে শহরে যোষেফ সেই শহরের আশেপাশের ক্ষেতে যা জন্মাত তার থেকে সংগ্রহ করতেন। 49 যোষেফ সমুদ্রের বালির মত এত শস্য সংগ্রহ করলেন যে তা মাপা গেল না কারণ তা মাপা সম্ভব ছিল না। 50 যোষেফের স্ত্রী আসনৎ ছিলেন ওন শহরের যাজকের কন্যা। দুর্ভিক্ষের প্রথম বছর আসার আগেই যোষেফ এবং আসনতের দুটি পুত্র হল। 51 প্রথম পুত্রের নাম রাখা হল মনঃশি। যোষেফ এই নাম দিলেন কারণ তিনি বললেন, “ঈশ্বর আমার সমস্ত কষ্ট ও আমার বাড়ীর সমস্ত চিন্তা ভুলে যেতে দিলেন।” 52 যোষেফ দ্বিতীয় পুত্রের নাম রাখলেন ইফ্রয়িম। যোষেফ এই নাম রাখলেন কারণ তিনি বললেন, “আমার মহাকষ্টের মধ্যেও ঈশ্বর আমাকে ফলবান করেছেন।”
দুর্ভিক্ষের সময় এল
53 সাত বছর লোকরা খাদ্যের জন্য প্রচুর শস্য পেল। তারপর সেই বছরগুলো শেষ হল। 54 এবার দুর্ভিক্ষের সাতটা বছর শুরু হল ঠিক যেমনটি যোষেফ বলেছিলেন। সেই অঞ্চলের কোন দেশে কোথাও কোন খাদ্য শস্য জন্মালো না। কিন্তু মিশরের লোকদের জন্য যথেষ্ট খাদ্য ছিল। কারণ যোষেফ শস্য জমা করে রেখেছিলেন। 55 দুর্ভিক্ষের সময় শুরু হলে লোকরা খাদ্যের জন্য ফরৌণের কাছে এসে কান্নাকাটি করল। ফরৌণ মিশরীয়দের বললেন, “যাও যোষেফকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর কি করতে হবে।”
56 সব জায়গায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে যোষেফ গুদাম থেকে লোকদের শস্য বিক্রি করতে শুরু করলেন। দুর্ভিক্ষ মিশরেও ভয়াবহ রূপ নিল। 57 সর্বত্রই সেই দুর্ভিক্ষ প্রবল হল, ফলে মিশরের আশেপাশের দেশ থেকেও লোকরা শস্য কিনতে এলো।
স্বপ্ন সত্যি হলো
42 কনান দেশেও প্রবলভাবে দুর্ভিক্ষ হলো। যাকোব জানতে পারল যে মিশর দেশে শস্য রয়েছে। তাই যাকোব তার পুত্রদের বলল, “আমরা কিছু না করে কেন এখানে বসে রয়েছি? 2 শুনলাম মিশর দেশে শস্য বিক্রি হচ্ছে। চল সেখানে গিয়ে আমরা শস্য কিনি। তাহলে আমরা বাঁচব। মরব না!”
3 তাই যোষেফের দশ ভাই মিশরে শস্য কিনতে গেলেন। 4 যাকোব কিন্তু বিন্যামীনকে পাঠালেন না। (কেবল বিন্যামীনই যোষেফের সহোদর ভাই ছিলেন।) যাকোব ভয় পেলেন পাছে বিন্যামীনের খারাপ কিছু ঘটে।
5 কনানেও দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিল ফলে কনান দেশের বহু লোক মিশরে শস্য কিনতে গেল। তাদের মধ্যে ইস্রায়েলের সন্তানরাও ছিলেন।
6 সেই সময় যোষেফ মিশর দেশের রাজ্যপাল ছিলেন। আর যে সব লোক মিশরে শস্য কিনতে আসত তাদের উপর যোষেফ নজর রাখতেন। তাই যোষেফের ভাইরাও তার কাছে এসে হেঁট হয়ে প্রণাম করল। 7 যোষেফ তাঁর ভাইদের দেখে চিনতে পারলেন, কিন্তু এমন ভান করলেন যেন তাদের চেনেনই না। তিনি তাদের সঙ্গে কর্কশভাবে কথা বললেন। তিনি বললেন, “তোমরা কোথা থেকে এসেছ?”
ভাইরা উত্তর দিল, “আমরা কনান দেশ থেকে এখানে খাদ্য কিনতে এসেছি।”
8 যোষেফ জানতেন যে এই লোকরাই তার ভাই কিন্তু তারা যোষেফকে চিনল না। 9 আর ভাইদের নিয়ে যোষেফ যে স্বপ্নগুলি দেখেছিলেন তা তাঁর মনে পড়ে গেল।
যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “তোমরা এখানে শস্য কিনতে আস নি! তোমরা গুপ্তচর। তোমরা আমাদের দুর্বল জায়গাগুলো জানতে এসেছ।”
10 কিন্তু তাঁর ভাইরা বলল, “তা নয় মহাশয়! আমরা আপনার দাস, কেবল খাদ্য কিনতে এসেছি। 11 আমরা ভাইরা এক পিতার সন্তান। আমরা সৎ লোক, আমরা কেবল খাদ্য কিনতে এসেছি।”
12 তখন যোষেফ তাদের বললেন, “তা নয়, কিন্তু তোমরা আমাদের কোথায় দুর্বলতা তাই দেখতে এসেছ।”
13 আর ভাইরা বলল, “না! আমরা সবাই ভাই ভাই! আমাদের পরিবারে আমরা বারো ভাই। আমাদের সকলের পিতা একজনই। ছোট ভাই এখনও আমাদের পিতার কাছে রয়েছে। অন্য ভাইটি বহু বছর আগে মারা গেছে। আমরা আপনার দাস, কনান দেশ থেকে এসেছি।”
14 কিন্তু যোষেফ তাদের বললেন, “না! আমি দেখছি আমার কথাই ঠিক। তোমরা গুপ্তচরই বটে। 15 কিন্তু তোমরা যে সত্য বলছ তা আমি তোমাদের প্রমাণ করতে দেব। ফরৌণের নামে দিব্যি দিয়ে বলছি, যে পর্যন্ত না তোমাদের ছোট ভাই এখানে আসে আমি তোমাদের যেতে দেব না। 16 আমি তোমাদের একজনকে যেতে দেব যে ছোট ভাইকে আমার কাছে নিয়ে আসবে, সেই সময়ে তোমরা কারাগারে থাকবে। আমরা দেখব যে তোমাদের কথা সত্যি কিনা, যদিও আমার বিশ্বাস যে তোমরা গুপ্তচর।” 17 তারপর যোষেফ তাদের তিনদিনের জন্য কারাগারে রাখলেন।
শিমিয়োনকে বন্ধকরূপে রাখা হল
18 তিন দিন পরে যোষেফ তাদের বললেন, “আমি ঈশ্বরকে ভয় করি! এই কাজ করলে তোমরা বাঁচবে। 19 তোমরা যদি সত্যিই সৎ লোক হও তবে তোমাদের এক ভাই এখানে এই কারাগারে থাকুক। অন্যরা শস্য বহন করে আপনজনের কাছে নিয়ে যেতে পারে। 20 কিন্তু তোমরা অবশ্যই ছোট ভাইকে এখানে আমার কাছে নিয়ে আসবে। তাহলে আমি জানব যে তোমরা সত্য বলছ এবং তোমরা প্রাণে বাঁচবে।”
ভাইরা এতে সম্মতি জানাল। 21 তারা একে অপরকে বলল, “আমরা যোষেফের প্রতি যে অন্যায় কাজ করেছিলাম তার জন্য এই শাস্তি পাচ্ছি। আমরা তাঁর কষ্ট দেখেও তাঁর প্রাণের জন্য মিনতি শুনতে অস্বীকার করেছিলাম, আর এখন তাই আমরা এই সমস্যায় পড়েছি।”
22 তখন রূবেণ তাদের বলল, “আমি তোমাদের বলেছিলাম ঐ ছেলেটার প্রতি কোন অন্যায় করো না। কিন্তু তোমরা আমার কথা শুনতে চাও নি। তাই এখন তার মৃত্যুর জন্য আমরা শাস্তি পাচ্ছি।”
23 যোষেফ ভাইদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুবাদক ব্যবহার করছিলেন। তাই ভাইরা বুঝল না যে যোষেফ তাদের ভাষা বুঝতে পারছেন। কিন্তু যোষেফ যা শুনছিলেন তার সব কিছুই বুঝলেন। তাদের কথাবার্তা যোষেফকে দুঃখিত করল। 24 তাই যোষেফ তাদের থেকে দূরে গিয়ে কাঁদলেন। কিছুক্ষণ পরে যোষেফ আবার তাদের কাছে ফিরে এলেন। তিনি শিমিয়োনকে ধরে তাদের সামনেই বাঁধলেন। 25 যোষেফ তাঁর ভৃত্যদের বললেন যেন তাদের বস্তাগুলো শস্যে ভরে দেয়। ভাইরা শস্যের জন্য যোষেফকে টাকা দিল। কিন্তু যোষেফ সে টাকা না নিয়ে তাদের বস্তাতেই ফেরত রাখলেন। তারপর তিনি তাদের পথ যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিও দিলেন।
26 তাই ভাইরা গাধার পিঠে শস্য চাপিয়ে রওনা হল। 27 সেই রাত্রে ভাইরা রাত কাটানোর জন্য এক জায়গায় এসে থামল। এক ভাই গাধার খাবার শস্য বার করার জন্য বস্তা খুলতেই বস্তায় তার টাকা দেখতে পেল। 28 সে অন্য ভাইদের বলল, “দেখ, শস্য কিনতে যে টাকা দিয়েছিলাম তা ফেরত এসেছে।” কেউ বস্তায় টাকা ফেরত রেখেছে। এতে ভাইরা খুব ভয় পেয়ে গেল। তারা একে অন্যকে বলল, “ঈশ্বর আমাদের প্রতি এ কি করেছেন?”
ভাইরা যাকোবকে ঘটনার বিবরণ দিল
29 ভাইরা তাদের কনান দেশে পিতা যাকোবের কাছে ফিরে গেল। যা ঘটেছে তার সব কিছু তারা যাকোবকে বলল। 30 তারা বলল, “সেই দেশের রাজ্যপাল আমাদের সঙ্গে কর্কশভাবে কথা বললেন। তিনি ভাবলেন আমরা গুপ্তচর! 31 কিন্তু আমরা তাঁকে বললাম যে আমরা গুপ্তচর নই, আমরা সৎ লোক। 32 আমরা তাঁকে আমাদের পিতার কথা এবং ছোট ভাই কনান দেশে পিতার সঙ্গে বাড়ীতে রয়েছে তার কথা এবং এক ভাই যে মারা গেছে তার কথাও বললাম।”
33 “তখন সেই দেশের রাজ্যপাল আমাদের এই কথা বললেন, ‘তোমরা যে সৎ লোক তার প্রমাণ দেবার একটা পথ রয়েছে। আমার এখানে তোমাদের এক ভাইকে রেখে যাও। তোমাদের শস্য তোমাদের পরিবারের কাছে নিয়ে যাও। 34 তারপর তোমাদের ছোট ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাহলে আমি বুঝব তোমরা সৎ লোক, অথবা তোমরা গুপ্তচর হয়ে আমাদের ধ্বংস করতে এসেছ কিনা। তোমরা যদি সত্যি বলছ প্রমাণ হয় তবে আমি তোমাদের ভাইকে ফেরত দেব আর তোমরা আবার স্বচ্ছন্দে এই দেশ থেকে শস্য কিনতে পারবে।’”
35 তারপর ভাইরা তাদের বস্তা থেকে শস্য বার করতে শুরু করলো। আর প্রত্যেক ভাই নিজের নিজের বস্তায় নিজের নিজের টাকা খুঁজে পেলো। ভাইরা ও তাদের পিতা সেই টাকা দেখে ভীত হল।
36 যাকোব তাদের বললেন, “তোমরা কি চাও আমি আমার সব সন্তানদের হারাই? যোষেফ চলে গেছে। শিমিয়োনও নেই। আর এখন তোমরা বিন্যামীনকেও নিয়ে যেতে এসেছ।”
37 কিন্তু রূবেন তার পিতাকে বলল, “পিতা, যদি আমি বিন্যামীনকে তোমার কাছে ফিরিয়ে না আনি তবে তুমি আমার দুই সন্তানকে হত্যা করো।”
38 কিন্তু যাকোব বললেন, “আমি বিন্যামীনকে তোমাদের সঙ্গে যেতে দেব না। তার ভাই মৃত আর আমার স্ত্রী রাহেলের পুত্রদের মধ্যে সেই অবশিষ্ট। মিশরে যাবার পথে তার যদি কিছু হয় তবে তা আমাকে মেরেই ফেলবে। তাহলে এই দুঃখে তোমরা আমাকে, এই বৃদ্ধ মানুষকে মেরে ফেলবে।”
কিছু ইহুদী যীশুর সমালোচনা করলেন
(মার্ক 2:23-28; লূক 6:1-5)
12 সেই সময় একদিন যীশু এক বিশ্রামবারে শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। শিষ্যদের খিদে পাওয়ায় তাঁরা গমের শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলেন। 2 কিন্তু ফরীশীরা তা দেখে যীশুকে বললেন, “দেখ! বিশ্রামবারে যা করা নিয়ম বিরুদ্ধ, তোমার শিষ্যরা তাই করছে।”
3 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তিনি কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? 4 তিনি তো ঈশ্বরের মন্দিরে ঢুকে সেই পবিত্র রুটি খেয়েছিলেন। দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের অবশ্যই তা খাওয়া ন্যায়সঙ্গত ছিল না, কেবল যাজকরাই তা খেতে পারতেন। 5 এছাড়া তোমরা কি মোশির বিধি-ব্যবস্থা পড়নি যে বিশ্রামবারে মন্দিরের মধ্যে যে যাজকরা কাজ করেন তাঁরাও বিশ্রামবারের বিধি-ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেন; আর তার জন্য তাদের কোন দোষ হয় না? 6 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, মন্দির থেকেও মহান কিছু এখানে আছে। 7 ‘বলিদান ও নৈবেদ্য থেকে আমি দয়াই চাই।’(A) শাস্ত্রের এই বাণীর অর্থ কি তা যদি তোমরা জানতে, তবে যারা দোষী নয় তাদের তোমরা দোষী করতে না।
8 “কারণ মানবপুত্র বিশ্রামবারেরও প্রভু।”
যীশু পঙ্গু রোগীকে সুস্থ করেন
(মার্ক 3:1-6; লূক 6:6-11)
9 এরপর যীশু সেখান থেকে তাদের সমাজ-গৃহে গেলেন। 10 সেখানে একজন লোক ছিল, যার একটা হাত শুকিয়ে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। যীশুকে দোষী করবার উদ্দেশ্য নিয়ে লোকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে কি রোগীকে সুস্থ করা উচিত?”
11 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “ধর তোমাদের মধ্যে কারও একটা ভেড়া আছে, সেই ভেড়াটা যদি বিশ্রামবারে গর্তে পড়ে যায়, তবে তুমি কি তাকে ধরে তুলবে না? 12 আর ভেড়ার চেয়ে মানুষের মূল্য অনেক বেশী। তাই মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা ন্যায়সঙ্গত।”
13 তারপর যীশু সেই লোকটিকে বললেন, “তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও।” সে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলে পর সেটা ভাল হয়ে অন্য হাতটার মতো হয়ে গেল। 14 তখন ফরীশীরা বাইরে গিয়ে যীশুকে মেরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করতে লাগল।
যীশু ঈশ্বরের মনোনীত দাস
15 কিন্তু যীশু সে কথা জানতে পেরে সেখান থেকে চলে গেলেন। অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। তাদের মধ্যে যারা রোগী ছিল, তিনি তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 16 কিন্তু তাঁর এই কাজের কথা সকলকে বলে বেড়াতে তিনি তাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন। 17 আর এইভাবে তাঁর বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে বলা ঈশ্বরের বাণী পূর্ণ হল:
18 “এই আমার দাস,
একে আমি মনোনীত করেছি।
আমার অতি প্রিয় জন,
যার উপর আমি সন্তুষ্ট।
আমি তাঁর উপরে আমার আত্মার প্রভাব রাখব,
তাতে তিনি অইহুদীদের কাছে ন্যায়নীতির বাণী প্রচার করবেন।
19 তিনি কলহ বিবাদ করবেন না,
লোকেরা পথে ঘাটে তাঁর গলার স্বর শুনবে না।
20 মচকানো বেতগাছ তিনি ভাঙবেন না,
মিট্-মিট্ করে জ্বলতে থাকা পলতেকে তিনি নিভিয়ে দেবেন না
যতদিন না ন্যায়নীতিকে জয়ী করেন ততদিন।
21 সর্বজাতির লোক তাঁর ওপর প্রত্যাশা রাখবে।”(B)
ঈশ্বর প্রদত্ত যীশুর পরাক্রম
(মার্ক 3:20-30; লূক 11:14-23; 12:10)
22 সেই সময় লোকেরা ভূতে পাওয়া একজন লোককে যীশুর কাছে নিয়ে এল। লোকটা অন্ধ ও বোবা ছিল। যীশু তাকে সুস্থ করলেন: তাতে সে দেখতে পেল ও কথা বলতে পারল। 23 এই দেখে লোকেরা বিস্মিত হয়ে বলল, “ইনিই কি দায়ূদের সন্তান?”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International