Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 23-24

সারার মৃত্যু

23 সারা 127 বছর বেঁচেছিলেন। কনান দেশের কিরিয়থ অর্ব অর্থাৎ‌ হিব্রোণ নগরে তাঁর মৃত্যু হল। অব্রাহাম ভীষণ দুঃখ পেলেন, সারার জন্যে অনেক কাঁদলেন। তারপর স্ত্রীর মৃতদেহ রেখে হেতের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। তিনি বললেন, “দেশ পর্যটন করতে করতে আপনাদের দেশে এসে আমি পরবাসী হিসেবে বাস করছি। ফলে আমার মৃত স্ত্রীকে কবর দেওয়ার মত আমার কোনও জায়গা নেই। আমি যাতে স্ত্রীকে কবর দিতে পারি তার জন্য দয়া করে আমায় খানিকটা জায়গা দিন।”

হেতেরা উত্তরে বলল, “মহাশয়, আমাদের মধ্যে আপনি ঈশ্বরের মহান নেতাদের একজন। আমাদের শ্রেষ্ঠ জমিতে আপনি আপনার মৃত স্ত্রীকে সমাধিস্থ করতে পারেন। আপনার স্ত্রীকে আপনি আপনার পছন্দমত জায়গাতে সমাধিস্থ করলে কেউ আপনাকে বাধা দেবে না।”

অব্রাহাম উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের নমস্কার করলেন। অব্রাহাম তাঁদের বললেন, “আপনারা সত্যিই যদি আমার মৃত স্ত্রীকে কবর দেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে চান তাহলে আমার হয়ে সোহরের পুত্র ইফ্রোণের সঙ্গে কথা বলুন। ইফ্রোণের ক্ষেতের শেষে যে মক্পেলার গুহাটা আছে সেটা আমি কিনতে চাই। ইফ্রোণ ঐ গুহার মালিক। যা দাম হয়, সবটাই আমি দেব। আমি চাই যে আমার স্ত্রীর কবরের জন্য যে ঐ জায়গা কিনছি আপনারা সবাই তার সাক্ষী থাকুন।”

10 যাদের সঙ্গে অব্রাহাম কথা বলছিলেন তাঁদের মধ্যে ইফ্রোণ উপবিষ্ট ছিলেন। এখন ইফ্রোণ অব্রাহামকে বললেন, 11 “না, মহাশয়, এখানেই ঐ ক্ষেত এবং গুহাটিও আমি আমার লোকেদের সামনে আপনাকে দেব। আপনি যাতে আপনার ইচ্ছা মত আপনার স্ত্রীকে সমাধিস্থ করতে পারেন সেজন্যে ঐ জমি, গুহা আমি আপনাকে দেব।”

12 তখন অব্রাহাম সমবেত হেতের লোকদের সবিনয় নমস্কার করলেন। 13 সকলের উপস্থিতিতে তিনি ইফ্রোণকে বললেন, “কিন্তু আমি ঐ জমির পুরো দাম আপনাকে দিতে চাই। আমার দেওয়া দাম আপনি দয়া করে গ্রহণ করুন, আমি নির্দ্ধিধায় আমার স্ত্রীকে কবর দিই।”

14 উত্তরে ইফ্রোণ অব্রাহামকে বললেন, 15 “মহাশয়, আমার কথা শুনুন। আপনার ও আমার কাছে 10 পাউণ্ড ওজনের রূপোর তো কোন দাম নেই। সুতরাং আপনি জমিটা নিন এবং সেখানে নিশ্চিন্তে আপনার স্ত্রীকে সমাধিস্থ করুন।”

16 অব্রাহাম বুঝতে পারলেন যে ইফ্রোণের কথার মধ্যেই জমিটার মূল্য উল্লিখিত রয়েছে। সুতরাং অব্রাহাম ঐ মূল্যই ইফ্রোণকে দিলেন। ইফ্রোণের জন্যে অব্রাহাম 10 পাউণ্ড রূপো ওজন করলেন এবং সেই রূপো বণিককে দিলেন।

17-18 সুতরাং ইফ্রোণের জমির স্বত্ত্বাধিকারীর পরিবর্তন হল। মম্রির পূর্বদিকে মক্পেলায় ঐ জমি অবস্থিত। এখন ঐ জমির স্বত্ত্বাধিকারী হলেন অব্রাহাম। তিনি ঐ জমির অন্তর্গত গুহা এবং সমস্ত বৃক্ষাদির স্বত্ত্বাধিকারী হলেন। সমস্ত নগরবাসী ইফ্রোণ ও অব্রাহামের মধ্যে ঐ চুক্তি সম্পাদন প্রত্যক্ষ করলেন। 19 তারপর অব্রাহাম মম্রির (হিব্রোণে) নিকটস্থ জমিতে অর্থাৎ‌ কনান দেশের এক গুহার মধ্যে তাঁর স্ত্রী সারাকে সমাধিস্থ করলেন। 20 অব্রাহাম হেতের জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে ঐ জমি ও জমির মধ্যেকার গুহা কিনলেন। এখন ঐ জমি গুহা হল অব্রাহামের সম্পত্তি এবং ঐ জায়গা তিনি সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহার করতে লাগলেন।

ইস‌্হাকের স্ত্রী

24 অব্রাহাম অত্যন্ত বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। অব্রাহামের ওপর ও তাঁর কৃত সমস্ত কর্মে প্রভুর আশীর্বাদ ছিল। অব্রাহামের সমস্ত সম্পত্তি দেখাশোনার জন্যে একজন পুরানো ভৃত্য ছিল। অব্রাহাম সেই ভৃত্যকে একদিন ডেকে বললেন, “আমার উরুর নীচে হাত দাও। এখন আমার কাছে তুমি একটা প্রতিজ্ঞা করো। স্বর্গ ও মর্ত্যের ঈশ্বর প্রভুর সাক্ষাতে আমায় কথা দাও যে কনানের কোন কন্যাকে আমার পুত্র বিয়ে করবে, এরকমটা তুমি কখনও হতে দেবে না। আমরা কনানীয়দের মধ্যে বাস করি বটে, কিন্তু আমার পুত্রের সঙ্গে কোনও কনানীয় কন্যার বিয়ে হতে দেবে না। আমার দেশে আমার স্বজাতির কাছে ফিরে যাও। সেখানে আমার পুত্র ইস‌্হাকের জন্যে পাত্রী খুঁজে বার করে তাকে এখানে নিয়ে এস।”

ভৃত্যটি তাঁকে বলল, “এমন তো হতে পারে যে কোনও পাত্রী আমার সঙ্গে এদেশে আসতে রাজী হল না। তাহলে কি আমি আপনার পুত্রকে আমার সঙ্গে নিয়ে আপনার জন্মভূমিতে যাব?”

অব্রাহাম তাকে বলল, “না! আমার পুত্রকে ঐ দেশে নিয়ে যেও না। স্বর্গের প্রভু স্বয়ং ঈশ্বর আমার স্বদেশ থেকে সপরিবারে আমায় এখানে নিয়ে এসেছেন। ঐ দেশ আমার পিতার ও পরিবারের স্বদেশ ছিল। কিন্তু প্রভু কথা দিয়েছেন যে এই নতুন দেশ হবে আমার পরিবারের স্বদেশ। প্রভু তোমার আগে তাঁর দূত পাঠাবেন যাতে তুমি আমার পুত্রের জন্য একটি পাত্রী পছন্দ করে তাকে এখানে আনতে পার। কিন্তু যদি সেই পাত্রী তোমার সঙ্গে এই দেশে আসতে না চায় তাহলে তুমি তোমার শপথ থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু তুমি কখনও আমার পুত্রকে সেই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না।”

সুতরাং ভৃত্যটি তার মনিবের উরুর নীচে হাত দিয়ে সেই রকমই শপথ করল।

সন্ধানের শুরু

10 পরিচারকটি অব্রাহামের দশটি উট নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করল। সঙ্গে নিয়ে গেল নানা ধরণের সুন্দর সুন্দর উপহার। সে গেল নাহোরের নগর মেসোপটেমিযাতে। 11 নগরের বাইরে সেই ভৃত্য জলের কূপের দিকে গেল। সন্ধ্যার সময় নগরের মেয়েরা সেই কূপে জল নিতে বেরিয়ে এল। ভৃত্যটি উটগুলোকে সেখানে হাঁটু গেড়ে বসাল।

12 ভৃত্যটি বলল, “প্রভু, আপনি আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর। আজ আমার মনিবের পুত্রের জন্য একটি যোগ্য পাত্রী নির্বাচনে আপনি আমায় সাহায্য করুন। অনুগ্রহ করে আমার প্রভু অব্রাহামকে এই দয়া করুন। 13 এখানে কূপের ধারে আমি দাঁড়িয়ে আছি। নগরের তরুণী রমনীরা এই কূপের জল নিতে আসছে। 14 ইস‌্হাকের জন্যে কোন্ পাত্রীটি উপযুক্ত তা জানার একটা বিশেষ ইঙ্গিত দেখতে পাব বলে এখানে আমি অপেক্ষা করছি। সেই বিশেষ ইঙ্গিতটি হল এই: আমি মেয়েটিকে বলব, ‘তোমার কলসী থেকে আমায় একটু জল দাও।’ সেই মেয়েটিই যে উপযুক্ত তা আমি বুঝতে পারব যদি সে বলে, ‘নিন, এই জলে তেষ্টা মেটান। আপনার উটগুলোকেও আমি জল দিচ্ছি।’ এরকমটা যদি ঘটে তাহলে আমি বুঝব আপনার কাছ হতে আসা সেটাই প্রমাণ যে ঐ মেয়েই ইস‌্হাকের জন্যে সঠিক পাত্রী এবং আমি জানব যে আপনি আমার মনিবকে দয়া করেছেন।”

একটি পত্নী পাওয়া গেল

15 ভৃত্য প্রার্থনা শেষ করার আগেই রিবিকা নামে একটি তরুনী কূপের কাছে এল। রিবিকা বথুযেলের কন্যা। বথুযেল ছিল অব্রাহামের ভাই নাহোর ও তার স্ত্রী মিল্‌কার পুত্র। জল নেওয়ার কলসী কাঁধে নিয়ে রিবিকা কূপের কাছে এল। 16 রিবিকা অসাধারণ সুন্দরী। সে কখনও কোন পুরুষের সঙ্গে ঘুমায় নি। সে ছিল কুমারী। কূপের ধারে গিয়ে সে কলসী ভরে জল নিল। 17 তখন সেই ভৃত্য তাড়াতাড়ি তার কাছে গিয়ে বলল, “দারুণ তৃষ্ণা, দয়া করে তোমার কলসী থেকে একটু জল দাও।”

18 রিবিকা সঙ্গে সঙ্গে কাঁধ থেকে কলসী নামিয়ে তার আঁজলায জল ঢেলে দিয়ে বলল, “এই নিন, তৃষ্ণা মেটান।” 19 তাকে জল খেতে দেওয়ার পরে রিবিকা বলল, “আপনার উটগুলোকেও আমি জল দিচ্ছি।” 20 তখন রিবিকা কলসী খালি করে সবটা জল ঢেলে দিল উটেদের পানপাত্রে। তারপর আবার কূপ থেকে আরও জল আনতে গেল। এভাবে সে সবগুলো উটকেই জল পান করতে দিল।

21 সেই ভৃত্য নীরবে রিবিকার সমস্ত কাজ লক্ষ্য করতে লাগল। সে নিশ্চিত হতে চাইছিল যে প্রভু তার প্রার্থনা শুনেছেন কিনা এবং ইস‌্হাকের জন্যে কন্যা সন্ধান সফল হয়েছে কিনা। 22 উটগুলোর জলপান শেষ হলে সে রিবিকাকে একটা 1/4 আউন্স ওজনের সোনার আংটি দিল। তাছাড়া সে এক-একটি 5 আউন্স ওজনের দুখানা সোনার বালাও রিবিকাকে দিল। 23 ভৃত্যটি রিবিকাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার পিতা কে? তোমার পিতার গৃহে কি আমার লোকদের রাতে থাকার কোনও ব্যবস্থা হতে পারে?”

24 রিবিকা উত্তর দিল, “বথুযেল আমার পিতা। তিনি মিল্‌কা ও নাহোরের পুত্র।” 25 তারপর সে বলল, “উটগুলোকে খেতে দেওয়ার মত খড় আর আপনাদের ঘুমোতে দেওয়ার মত জায়গা দুটোই আমাদের আছে।”

26 ভৃত্যটি সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করে প্রভুর উপাসনা করল। 27 সে বলল, “ধন্য প্রভু, আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর। আমার মনিবের প্রতি প্রভু দয়া ও বিশ্বস্ততার আচরণ করেছেন। প্রভু আমাকে আমার মনিবের আত্মীয়দের বাড়ীতে নিয়ে এসেছেন আমার মনিবের পুত্রের জন্য যোগ্য পাত্রী খুঁজে বার করার জন্য।”

28 তখন রিবিকা ছুটে গিয়ে যা যা ঘটেছে সেসব তার পরিবারের সবাইকে বলল। 29-30 রিবিকার এক ভাই ছিল। তার নাম লাবন। সেই আগন্তুক যা কিছু বলেছে, সেইসব রিবিকা যখন বলছিল তখন লাবন মন দিয়ে সব শুনছিল এবং লাবন যখন তার দিদির আঙুলে আংটি আর হাতে বালা দেখল তখন ছুটে বেরিয়ে গিয়ে সেই কূপের ধারে এল। সেই লোকটি তখন কূপের ধারে উটগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। 31 লাবন বলল, “মহাশয়, আপনাকে আমাদের আলয়ে স্বাগত জানাই। আপনার এখানে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই। আপনাদের বিশ্রামের জন্য আমি সমস্ত বন্দোবস্ত করছি এবং আপনাদের উটগুলোর জন্যে আমাদের বাড়ীতে জায়গা আছে।”

32 তাই অব্রাহামের ভৃত্য তাদের বাড়ীর ভেতরে গেল। উটগুলোর থেকে বোঝা নামাতে লাবন তাদের সাহায্য করল এবং উটগুলোকে খাবারের জন্য খড়ও দিল। লাবন তারপর সেই ভৃত্য ও তার লোকদের পা ধোওয়ার জন্য জল দিল। 33 তারপর লাবন তাদের খাওয়ার জন্য খাবার দিল। কিন্তু ভৃত্যটি খেতে রাজী হল না। সে বলল, “আমি কেন এসেছি তা না বলে আমি খাব না।”

তখন লাবন বলল, “তাহলে আমাদের বলুন।”

রিবিকার জন্যে দরাদরি

34 তখন সেই ভৃত্য বলল, “আমি অব্রাহামের পরিচারক। 35 কিন্তু সমস্ত বিষয়েই আমার মনিবকে আশীর্বাদ করেছেন। আমার মনিব এখন এক মহান ব্যক্তি। অব্রাহামকে প্রভু অনেক মেষের পাল এবং প্রচুর গবাদি পশু দিয়েছেন। অব্রাহামের এখন অনেক সোনা, রূপা, অনেক দাসদাসী। অব্রাহামের অনেক উট ও গাধা আছে। 36 আমার মনিবের স্ত্রী ছিলেন সারা। অনেক বয়সে তিনি একটি পুত্রের জন্ম দিলেন এবং আমার মনিব তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ তাঁর এই পুত্রকে দিয়েছেন। 37 আমার মনিব আমায় একটা শপথ নিতে বাধ্য করেছেন। আমার মনিব আমায় বললেন, ‘আমার পুত্রকে তুমি কনানের কোনও কন্যাকে বিয়ে করতে দেবে না। আমরা কনানের লোকদের মধ্যে বাস করি বটে, কিন্তু আমি চাই না যে সে কনানের কোনও কন্যাকে বিয়ে করে। 38 সুতরাং তুমি শপথ করো যে তুমি আমার পিতার দেশে যাবে। আমার আত্মীয়স্বজনদের কাছে যাও এবং আমার পুত্রের জন্যে একজন পাত্রী নির্বাচন করো।’ 39 তখন আমি আমার মনিবকে বললাম, ‘সেই পাত্রী আমার সঙ্গে এই দেশে আসতে না চাইতেও পারে।’ 40 কিন্তু আমার মনিব বললেন, ‘আমি প্রভুর সেবা করেছি এবং সেই একই প্রভু তাঁর দূত পাঠাবেন তোমার সঙ্গে তোমার সাহায্যের জন্য। আমার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেই তুমি আমার পুত্রের জন্যে পাত্রী খুঁজে পাবে। 41 কিন্তু তুমি যদি আমার পিতার দেশে যাও আর তাঁরা যদি আমার পুত্রের জন্য মেয়ে দিতে অস্বীকার করেন, তাহলে তুমি এই শপথের দায় থেকে মুক্ত হবে।’

42 “আজ আমি এই কূপের পাড়ে এসে প্রার্থনা করলাম, ‘প্রভু, আপনি আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর, দয়া করে আমার এই যাত্রাকে সফল করুন। 43 আমি এই কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জল নেওয়ার জন্য আসা একটি মেয়ের জন্যে অপেক্ষা করব। সে জল নিতে এলে আমি বলব, “দয়া করে তোমার কলসী থেকে আমায় একটু জল পান করতে দাও।” 44 এতে উপযুক্ত পাত্রী একটা বিশেষভাবে উত্তর দেবে। সে বলবে, “এই জল আপনি পান করুন আর আপনার উটগুলোকেও আমি জল পান করতে দেব।” যে মেয়ে এইভাবে উত্তর দেবে, আমি জানব, সে-ই আমার মনিবের পুত্রের জন্য উপযুক্ত পাত্রী হবে যাকে প্রভু নির্বাচন করেছেন।’

45 “আমার প্রার্থনা শেষ করার আগেই রিবিকা জল নেওয়ার জন্যে কূয়ো তলায় এল। জলের কলসীটা তার কাঁধে ছিল। আমি তার কাছে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য জল চাইলাম। 46 তখনই সে কাঁধ থেকে কলসী নামিয়ে আমার আঁজলায় খানিকটা জল ঢেলে দিল। তারপর সে বলল, ‘এই জল আপনি পান করুন আর আপনার উটগুলোর জন্য আমি আরও জল দিচ্ছি।’ তখন আমি সেই জল পান করলাম এবং মেয়েটি উটগুলোকেও জল পান করতে দিল। 47 তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার পিতা কে?’ সে বলল, ‘বথুযেল আমার পিতা। তিনি মিল্‌কা ও নাহোরের পুত্র।’ তখন আমি তাকে আংটি আর বালা জোড়া দিলাম। 48 আমি প্রণিপাত করে প্রভুকে ধন্যবাদ জানালাম। আমি প্রভুর, আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বরের প্রশংসা করলাম। আমায় সোজা আমার মনিবের ভাইয়ের নাতনির কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে প্রভুকে ধন্যবাদ জানাই। 49 এখন আমায় বলুন, আপনি কি আমার মনিবের প্রতি সদয় এবং বিশ্বস্ত হয়ে তাঁকে আপনার কন্যাটিকে দেবেন? অথবা আপনি গররাজী হবেন? আপনি খুলে বলুন যাতে আমি কি করব, না করব ঠিক করতে পারি।”

50 তখন লাবন এবং বথুয়েল উত্তর দিলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, সবই প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে হচ্ছে। সুতরাং তোমাকে আমরা এটি বদলাবার জন্য কিছুই বলতে পারি না। 51 তাই রিবিকাকে দিলাম। ওকে নিয়ে যাও। ওর সঙ্গে তোমার মনিবের পুত্রের বিয়ে দাও। প্রভুর এটাই ইচ্ছা।”

52 যখন অব্রাহামের ভৃত্য একথা শুনল সে প্রভুর সামনে ভূমিতে প্রণিপাত করল। 53 তখন সে যেসব উপহার সামগ্রী এনেছিল সেসব রিবিকাকে দিল। সে তাকে খুব সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় এবং সোনা ও রূপার নানা অলঙ্কার দিল। তার ভাই এবং মাকেও দিল বহু রকম মূল্যবান সামগ্রী। 54 তারপর তারা খাওয়াদাওয়া সেরে সেখানে রাত্রিযাপন করল। পরদিন খুব সকালে উঠে তারা বলল, “এখন আমার মনিবের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে।”

55 তখন রিবিকার মা ও ভাই বলল, “রিবিকা আরও কিছুদিন আমাদের কাছে থাকুক। আর দশ দিন আমাদের কাছে থাক। তারপর সে যেতে পারে।”

56 কিন্তু ভৃত্য তাদের বলল, “আমায় দেরী করিয়ে দেবেন না। প্রভু আমার যাত্রা সফল করেছেন। এবার আমার প্রভুর কাছে তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া দরকার।”

57 রিবিকার মা ও ভাই বলল, “রিবিকাকে ডেকে আনি—ও কি বলে শোনা যাক্।” 58 তাঁরা রিবিকাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি এঁর সঙ্গে এখনই যেতে চাও?”

রিবিকা বলল, “হ্যাঁ, আমি যাব।”

59 সুতরাং তাঁরা অব্রাহামের ভৃত্য ও তার লোকজনের সঙ্গে রিবিকাকে যেতে দিলেন। রিবিকাকে ছোটবেলা থেকে যে দাসী মানুষ করেছে সে-ও তাদের সঙ্গে চলল। 60 যখন রিবিকা যাত্রা শুরু করল তাঁরা তাকে বললেন,

“আমাদের বোন, তুমি হও লক্ষ লক্ষ জনের জননী।
    তোমার উত্তরপুরুষগণ শত্রুদের পরাজিত করে দখল করুক তাদের নগরগুলি।”

61 তারপর রিবিকা ও তার দাসী উটের পিঠে চড়ে অব্রাহামের ভৃত্য ও তার লোকজনদের অনুগমন করল। সুতরাং সেই ভৃত্য রিবিকাকে নিয়ে মনিবের গৃহের পথে যাত্রা করল।

62 ইস‌্হাক তখন বের্-লহয়্-রোয়ী ত্যাগ করে নেগেভে বাস করছিলেন। 63 একদিন সন্ধ্যায় একান্তে ধ্যান করার জন্যে ইস‌্হাক নির্জন প্রান্তরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ইস‌্হাক চোখ তুলে দেখলেন যে দূর থেকে উটের সারি আসছে।

64 রিবিকাও ইস‌্হাককে দেখতে পেলেন। তখন সে উটের পিঠ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ল। 65 ভৃত্যকে জিজ্ঞেস করল, “কে ঐ তরুণ মাঠের মধ্যে দিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে?”

ভৃত্য উত্তর দিল, “ঐ আমার মনিবের পুত্র।” শুনে রিবিকা ওড়না দিয়ে তার মুখ ঢাকল।

66 সেই ভৃত্য যা-যা ঘটেছে সব ইস‌্হাককে বলল। 67 তখন ইস‌্হাক মেয়েটিকে তাঁর মায়ের তাঁবুতে নিয়ে গেলেন। সেদিন থেকে রিবিকা হল ইস‌্হাকের স্ত্রী। ইস‌্হাক তাকে খুব ভালবাসলেন। তাকে ভালবেসে ইস‌্হাক মায়ের মৃত্যুর শোকে সান্ত্বনা পেলেন।

মথি 7

অপরের বিচারের বিষয়ে যীশুর শিক্ষা

(লূক 6:37-38, 41-42)

“পরের বিচার করো না, তাহলে তোমার বিচারও কেউ করবে না। কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের বিচার কর, সেই ভাবে তোমাদেরও বিচার করা হবে; আর যেভাবে তুমি মাপবে সেই ভাবে তোমার জন্যও মাপা হবে।

“তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে কেবল তা-ই দেখছ; কিন্তু নিজের চোখের মধ্যে যে তক্তা আছে তা দেখতে পাও না? যখন তোমার নিজের চোখেই একটা তক্তা রয়েছে তখন কিভাবে তোমার ভাইকে বলছ, ‘এস তোমার চোখ থেকে কুটোটা বার করে দিই?’ ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তাটা বার করে ফেলো, তাহলে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটোটা বার করার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে।

“কোন পবিত্র বস্তু কুকুরকে দিও না আর শুয়োরের সামনে তোমাদের মুক্তো ছুঁড়ো না, তাহলে সে তা পায়ের তলায় মাড়িয়ে নষ্ট করবে ও তোমার দিকে ফিরে তোমায় আক্রমণ করবে।

প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর

(লূক 11:9-13)

“চাইতে থাক, তোমাদের দেওয়া হবে। খুঁজতে থাক, পাবে। দরজায় ধাক্কা দিতে থাক, তোমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হবে। কারণ যে চাইতে থাকে সে পায়, যে খুঁজতে থাকে সে খুঁজে পায়, আর যে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে তার জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়।

“তোমার ছেলে যদি তোমার কাছে রুটি চায়, তবে তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে তার সন্তানকে রুটির বদলে পাথরের টুকরো দেবে? 10 যদি সে একটা মাছ চায় তবে বাবা কি তার হাতে একটা সাপ তুলে দেবে? নিশ্চয় না। 11 তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের সন্তানদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জানো, তবে তোমাদের স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের কাছে যারা চায়, তাদের তিনি নিশ্চয়ই উৎকৃষ্ট জিনিস দেবেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান

12 “তাই অপরের কাছ থেকে তোমরা যে ব্যবহার প্রত্যাশা কর, তাদের প্রতিও তেমনি ব্যবহার কর। এটাই হল মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের শিক্ষার অর্থ।

স্বর্গে এবং নরকে যাওয়ার পথ

(লূক 13:24)

13 “সংকীর্ণ দরজা দিয়ে সেই পথে প্রবেশ করো, যে পথ স্বর্গের দিকে নিয়ে যায়। যে পথ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তার দরজা প্রশস্ত, পথও চওড়া, বহু লোক সেই পথেই চলছে। 14 কিন্তু যে পথ জীবনের দিকে গেছে তার দরজা সংকীর্ণ আর পথও দুর্গম, খুব অল্প লোকই তার সন্ধান পায়।

লোকেরা যা করে তা লক্ষ্য কর

(লূক 6:43-44; 13:25-27)

15 “ভণ্ড ভাববাদীদের থেকে সাবধান। তারা তোমাদের কাছে নিরীহ মেষের ছদ্মবেশে আসে অথচ ভেতরে তারা হিংস্র নেকড়ে বাঘ। 16 তাদের জীবনের ফল দেখেই তোমরা তাদের চিনতে পারবে। কেউ কি কাঁটাঝোপের মধ্যে থেকে দ্রাক্ষা বা শিয়ালকাঁটার ভেতর থেকে ডুমুর পেতে পারে? 17 ঠিক সেই ভাবে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফলই ধরে, কিন্তু খারাপ গাছে খারাপ ফলই ধরে। 18 ভাল গাছে খারাপ ফল এবং খারাপ গাছে ভাল ফল ধরতে পারে না। 19 যে গাছে ভাল ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হয়। 20 তাই আমি তোমাদের আবার বলছি, তারা যা করে তা দেখেই তোমরা তাদের চিনতে পারবে।

21 “যারা আমাকে প্রভু, প্রভু বলে তাদের প্রত্যেকেই যে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে তা নয়। আমার স্বর্গের পিতার ইচ্ছা যে পালন করবে, কেবল সেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। 22 সেই দিন অনেকে আমায় বলবে, ‘প্রভু, প্রভু আমরা কি আপনার নামে ভাববাণী বলিনি? আপনার নামে আমরা কি ভূতদের তাড়াই নি? আপনার নামে আমরা কি অনেক অলৌকিক কাজ করিনি?’ 23 তখন আমি তাদের স্পষ্ট বলব, ‘আমি তোমাদের কখনও আপন বলে জানিনি, দুষ্টের দল! আমার সামনে থেকে দূর হও।’

একজন জ্ঞানী লোক এবং একজন মুর্খ লোক

(লূক 6:47-49)

24 “তাই বলি, যে কেউ আমার কথা শোনে ও তা পালন করে, সে এমন এক বুদ্ধিমান লোকের মতো যে পাথরের ভিতের ওপর তার বাড়ি তৈরী করল। 25 পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা এল এবং প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বয়ে সেই বাড়ির গায়ে লাগল; কিন্তু সেই বাড়িটা ধসে পড়ল না, কারণ তা পাথরের ওপরে তৈরী করা হয়েছিল।

26 “আবার যে কেউ আমার এইসব কথা শুনে তা পালন না করে, সে একজন মূর্খ লোকের মতো, যে বালির উপরে বাড়ি তৈরী করেছিল। 27 পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা এল, আর ঝোড়ো বাতাস এসে তার বাড়িতে ধাক্কা মারল, তাতে বাড়িটা কি সাংঘাতিক ভাবেই না ধসে পড়ল।”

28 যীশু যখন এইসব কথা বলা শেষ করলেন, তখন জনতা তাঁর এইসব শিক্ষা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। 29 কারণ যীশু একজন ব্যবস্থার শিক্ষকের মতো শিক্ষা দিচ্ছিলেন না, বরং যার অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতোই শিক্ষা দিচ্ছিলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International