Old/New Testament
অব্রাহামের গরার যাত্রা
20 অব্রাহাম পূর্বের বাসস্থান ত্যাগ করে নেগেভে গেলেন। তিনি কাদেশ এবং শূরের মধ্যবর্তী গরার নগরে বাস করা শুরু করলেন। 2 গরারে বাস করার সময় অব্রাহাম সবাইকে বললেন যে সারা তাঁর বোন। গরারের রাজা অবীমেলক সে কথা শুনলেন। অবীমেলক সারাকে কামনা করলেন, তাই সারাকে নিয়ে আসার জন্য কয়েকজন ভৃত্যকে পাঠালেন। 3 কিন্তু রাত্রে ঈশ্বর স্বপ্নে অবীমেলকের কাছে এলেন। ঈশ্বর বললেন, “তোমার মরণ ঘনিয়ে এসেছে। যে নারীকে তুমি এনেছ সে বিবাহিতা।”
4 কিন্তু অবীমেলক তখন পর্যন্ত সারাকে শয্যার সঙ্গিনী করেন নি। তাই অবীমেলক বললেন, “প্রভু, আমি তো অপরাধ করিনি। আপনি কি একজন নিরপরাধকে হত্যা করবেন? 5 অব্রাহাম নিজে আমায় বলেছে যে, এই নারী তার বোন। আর ঐ নারীও বলেছে যে, ঐ পুরুষ তার ভাই। আমি তো কোন অপরাধ করিনি। আমি তো জানতামই না যে আমি কি করছি।”
6 তখন ঈশ্বর স্বপ্নের মধ্যে অবীমেলককে বললেন, “হ্যাঁ, আমি জানি তুমি নির্দোষ এবং এটাও জানি যে তুমি কি করছ তা তুমি জানতে না। তোমায় আমি বাঁচিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাকে আমার বিরুদ্ধে পাপ করতে দিই নি। আমিই তোমায় ঐ নারীকে শয্যায় নিয়ে যেতে দিই নি। 7 সুতরাং তুমি অব্রাহাম ও তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে দাও। অব্রাহাম একজন ভাববাদী। সে তোমার জন্য প্রার্থনা করবে এবং তুমি তাতে জীবন লাভ করবে। কিন্তু তুমি যদি অব্রাহাম ও তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে না দাও তাহলে আমি নিশ্চিত যে তোমার মৃত্যু আসন্ন এবং তোমার সমস্ত পরিবারেরও মৃত্যু হবে।”
8 সুতরাং পরদিন খুব সকালে অবীমেলক তাঁর ভৃত্যদের ডেকে তাঁর স্বপ্নের কথা বললেন। তাঁর স্বপ্নের কথা শুনে ভৃত্যরা খুব ভীত হয়ে পড়ল। 9 তখন অবীমেলক অব্রাহামকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন আপনি আমাদের প্রতি এরকম ব্যবহার করলেন? আমি আপনার প্রতি কি অন্যায় করেছি? কেন মিথ্যে বললেন যে ঐ নারীটি আপনার বোন? আমার রাজত্বে আপনি অনেক বিপর্যয় ডেকে এনেছেন। আমার প্রতি এসব করা আপনার উচিৎ হয় নি। 10 আপনি কিসের ভয় পাচ্ছিলেন? কেন আপনি আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করলেন?”
11 তখন অব্রাহাম বললেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, এখানে কেউ বোধহয় ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে না। তাই ভেবেছিলাম, সারাকে পাওয়ার জন্যে আমাকে কেউ হত্যা করতেও পারে। 12 সারা আমার স্ত্রী, আবার আমার বোনও বটে। সারা আমার পিতার কন্যা বটে, কিন্তু আমার মাতার কন্যা নয়। 13 ঈশ্বর আমাকে পিতৃগৃহ থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। ঈশ্বর আমাকে অনেক দেশে নিয়ে গেছেন। যখন এরকম হল তখন আমি সারাকে বললাম, ‘আমার জন্য কিছু করো; যেখানেই আমরা যাব, সবাইকে বলবে যে তুমি আমার বোন।’”
14 তখন অবীমেলক আসল ব্যাপারটা বুঝলেন। তাই অবীমেলক অব্রাহামের হাতে সারাকে ফিরিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে অবীমেলক অব্রাহামকে কিছু দাস, মেষ ও গবাদি পশুও দিলেন। 15 এবং অবীমেলক বললেন, “চারদিকে তাকিয়ে দেখুন। এসবই আমার জমি। আপনার যেখানে খুশী সেখানে থাকতে পারেন।”
16 আর অবীমেলক সারাকে বললেন, “তোমার ভাই অব্রাহামকে আমি 1000 রৌপ্যমুদ্রা দিয়েছি। যা কিছু ঘটেছে সেসবের জন্যে আমি দুঃখিত এটা বোঝাতেই এই রৌপ্যমুদ্রা। সবাই জানুক যে আমি ন্যায় মেনে কাজ করেছি।”
17-18 অবীমেলকের পরিবারের সমস্ত নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা প্রভু হরণ করেছিলেন। অবীমেলক সারাকে অধিকার করেছিলেন বলে প্রভু এই কাজ করেছিলেন। কিন্তু অব্রাহাম ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং ঈশ্বর অবীমেলক, অবীমেলকের স্ত্রী ও দাসীদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিলেন।
অবশেষে সারার সন্তান লাভ
21 প্রভু সারার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রক্ষা করলেন। প্রভু সারার জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন করলেন। 2 সারা গর্ভবতী হলেন এবং এই বেশী বয়সে অব্রাহামের জন্য একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। ঈশ্বর যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেভাবেই সব সম্পন্ন হল। 3 সারা একটি পুত্রের জন্ম দিলেন এবং অব্রাহাম তার নাম রাখলেন ইস্হাক। 4 ইস্হাকের আট দিন বয়স হলে, যেমনটি ঈশ্বর বলেছিলেন ঠিক সেইভাবে অব্রাহাম তাঁকে সুন্নত করলেন।
5 ইস্হাকের জন্মের সময় অব্রাহামের বয়স ছিল 100 বছর। 6 এবং সারা বললেন, “ঈশ্বর আমাকে আনন্দিত করেছেন। যে শুনবে সেই আমার সুখে সুখী হবে। 7 কেউ ভাবে নি যে আমি অব্রাহামের পুত্রের জন্ম দেব। কিন্তু এই বৃদ্ধ বয়সেও আমি অব্রাহামকে পুত্র দিতে পেরেছি।”
ঘরের মধ্যে অশান্তি
8 ইস্হাক ক্রমশঃ বড় হতে লাগল। শীঘ্রই সে শক্ত খাবার খাওয়ার মত বড় হল। তখন অব্রাহাম একটা মস্ত ভোজ দিলেন। 9 অব্রাহামের প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিল হাগার নামে মিশরীয় দাসী। সারা দেখলেন হাগারের সেই পুত্র ইস্হাককে নিয়ে মজা করছে। তাই সারা বিচলিত হলেন। 10 সারা অব্রাহামকে বললেন, “ঐ দাসী আর তার পুত্রের হাত থেকে আমাদের বাঁচাও। ওদের বিদায় করে দাও! যখন আমাদের মৃত্যু হবে তখন আমাদের যা কিছু ধন-সম্পদ ইস্হাকই পাবে। আমি চাই না যে আমার পুত্র ইস্হাকের সঙ্গে আমার দাসীর পুত্রও সবকিছুর ভাগ পাক!”
11 এতে অব্রাহাম খুব বিচলিত হলেন। তিনি তাঁর পুত্র ইশ্মায়েলের জন্যে উদ্বিগ্ন হলেন। 12 কিন্তু অব্রাহামকে ঈশ্বর বললেন, “ঐ পুত্র আর দাসীর জন্যে চিন্তা কোরো না। সারা যা চায় তা-ই করো। তোমার একমাত্র উত্তরাধিকারী হবে ইস্হাক। 13 কিন্তু তোমার দাসী পুত্রকেও আমি আশীর্বাদ করব। সে তোমার পুত্র সুতরাং তার পরিবার থেকেও আমি এক মহান জাতি সৃষ্টি করব।”
14 পরদিন খুব ভোরে অব্রাহাম কিছু খাদ্য ও পানীয় জল এনে হাগারকে দিলেন। তাই সম্বল করে হাগার পুত্রকে নিয়ে চলে গেল। হাগার সেই স্থান ত্যাগ করে বের্-শেবা মরুভূমির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগল।
15 কিছুক্ষণ পরে সব জল ফুরিয়ে গেল। পিপাসা মেটাবার জন্যে আর কিছু থাকল না। তখন হাগার তার পুত্রকে একটা ঝোপের নীচে রাখল। 16 হাগার খানিকটা দূরে হেঁটে গেল। তারপর সেখানেই বসে পড়ল। হাগারের ভয় হল, জলের অভাবে তার পুত্র বোধ হয় মারা যাবে। পুত্রের মৃত্যু সে দেখতে পারবে না। তাই সেখানে বসে বসে সে কাঁদতে লাগল।
17 ঈশ্বর সেই পুত্রের কান্না শুনতে পেলেন এবং স্বর্গ থেকে ঈশ্বরের দূত হাগারকে বলল, “কি হয়েছে? ভয় পেও না! প্রভু তোমার পুত্রের কান্না শুনতে পেয়েছেন। 18 যাও, পুত্রকে গিয়ে দেখ। ওর হাত ধরে এগিয়ে চলো। আমি তাকে এক বৃহৎ জাতির পিতা করব।”
19 তখন হাগার ঈশ্বরের কৃপায় একটা কূপ দেখতে পেল। তারপর হাগার সেই কূপের জলে নিজের জলপাত্র পূর্ণ করল। তারপর সেই জল নিয়ে গিয়ে পুত্রকে পান করাল।
20 সেই পুত্র বড় হতে লাগল আর ঈশ্বর সারাক্ষণ তার সঙ্গে থাকলেন। ইশ্মায়েল সেই মরুভূমির মধ্যেই বড় হতে লাগল। ক্রমে ক্রমে সে হল একজন শিকারী। তীরধনুকে সে হয়ে উঠল খুব দক্ষ। 21 তার মা এক মিশরীয় কন্যার সঙ্গে তার বিয়ে দিল। তারা সেই পারণ নামের মরুভূমিতেই বাস করতে লাগল।
অবীমেলকের সঙ্গে অব্রাহামের দরাদরি
22 তারপর অবীমেলক ও ফীখোল অব্রাহামের সঙ্গে কথা বললেন। ফীখোল ছিলেন অবীমেলকের সৈন্যবাহিনীর প্রধান। তাঁরা অব্রাহামকে বললেন, “তোমার সব কাজেতেই ঈশ্বর তোমার সঙ্গে আছেন। 23 সুতরাং ঈশ্বরের সাক্ষাতে তুমি আমায় একটা প্রতিশ্রুতি দাও। প্রতিজ্ঞা করো যে তুমি আমার ও আমার সন্তান-সন্ততির প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকবে। প্রতিশ্রুতি দাও যে তুমি আমার প্রতি এবং যে দেশে বাস করছ সেই দেশের প্রতি ন্যায়পরায়ণ হবে। প্রতিশ্রুতি দাও যে আমি তোমার প্রতি যেরকম ন্যায়পরায়ণ, তুমিও আমার প্রতি সেরকম ন্যায়পরায়ণ হবে।”
24 এবং অব্রাহাম বললেন, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে আপনি আমার প্রতি যেরকম আচরণ করেছেন আমিও আপনার প্রতি সেরকম আচরণ করব।” 25 তারপর অব্রাহাম অবীমেলকের কাছে একটা অভিযোগ করলেন। অব্রাহাম অবীমেলকের কাছে অভিযোগ করলেন যে তাঁর দাসরা একটা পানীয় জলের কূপ অধিকার করে রেখেছে। সেই কূপটি অব্রাহামের দাসরা খনন করেছিল।
26 কিন্তু অবীমেলক বললেন, “কে এরকম করেছে আমি জানি না। আপনি তো এর আগে এ ব্যাপারে কখনও কিছু বলেন নি!”
27 সুতরাং অব্রাহাম আর অবীমেলক দুজনে চুক্তিবদ্ধ হলেন। অবীমেলক চুক্তির প্রমাণ হিসেবে অব্রাহামকে কয়েকটা মেষ আর গবাদি পশু দিলেন। 28 অব্রাহাম অবীমেলকের সামনে সাতটা মেষ পৃথক করে রাখলেন।
29 অবীমেলক অব্রাহামকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমার সামনে এই সাতটা মেষ পৃথক করে রাখলেন কেন?”
30 অব্রাহাম উত্তর দিলেন, “আপনি যখন এই সাতটা মেষ আমার কাছ থেকে নেবেন তখন প্রমাণিত হবে যে আমি এই কূপ খনন করেছিলাম।”
31 তারপর থেকে ঐ কূপের নাম হল বের্-শেবা। কারণ ঐ স্থানে দুজনে পরস্পরের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
32 অতএব বের্-শেবাতে অব্রাহাম ও অবীমেলক দুজনে একটা চুক্তি সম্পাদন করলেন। তারপর অবীমেলক তাঁর সৈন্যাধক্ষ্যদের নিয়ে পলেষ্টীয়দের দেশে ফিরে গেলেন।
33 বের্-শেবাতে অব্রাহাম একটা চিরহরিৎ ঝাউগাছ রোপণ করলেন। সেখানে তিনি প্রভু শাশ্বত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন। 34 অব্রাহাম পলেষ্টীয়দের দেশে বহুকাল বাস করলেন।
অব্রাহাম, তোমার পুত্রকে বলি দাও!
22 এই সমস্ত কিছুর পরে ঈশ্বর ঠিক করলেন যে তিনি অব্রাহামের বিশ্বাস পরীক্ষা করবেন। তাই ঈশ্বর ডাকলেন, “অব্রাহাম!”
এবং অব্রাহাম সাড়া দিলেন, “বলুন!”
2 তখন ঈশ্বর বললেন, “তোমার একমাত্র পুত্র যাকে তুমি ভালবাস সেই ইস্হাককে মোরিয়া দেশে নিয়ে যাও। সেখানে পর্বতগুলির মধ্যে একটির ওপরে তাকে আমার উদ্দেশ্যে বলি দাও। আমি তোমাকে বলব কোন পর্বতের ওপর তুমি তাকে বলি দেবে।”
3 পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অব্রাহাম যাত্রার জন্যে গাধার পিঠে জিন সাজালেন। সঙ্গে ইস্হাককে নিলেন, আর নিলেন দুজন ভৃত্যকে। অব্রাহাম হোমের জন্য কাঠ কাটলেন। তারপর ঈশ্বর যেখানে যেতে বলেছিলেন সেই স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। 4 তিনদিন চলার পর অব্রাহাম দূরে দৃষ্টিপাত করলেন আর গন্তব্যস্থল দেখতে পেলেন। 5 তখন ভৃত্য দুজনের উদ্দেশ্যে অব্রাহাম বললেন, “গাধাটা নিয়ে তোমরা এখানে অপেক্ষা করো, আমি ছেলেকে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানটিতে যাব এবং উপাসনা করব। পরে তোমাদের কাছে ফিরে আসব।”
6 অব্রাহাম হোমের জন্যে কেটে আনা কাঠ ছেলের কাঁধে দিলেন। এবং সঙ্গে নিলেন খাঁড়া ও আগুন। তারপর অব্রাহাম ও তাঁর ছেলে দুজনেই উপাসনা সম্পাদন করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানটিতে গেলেন।
7 ইস্হাক পিতা অব্রাহামকে বলল, “পিতা!”
অব্রাহাম উত্তর দিলেন, “বলো, পুত্র!”
ইস্হাক বলল, “পিতা! হোমের জন্যে সব আয়োজন দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু হোমের আগে বলি দেওয়ার জন্যে মেষশাবক কোথায়?”
8 অব্রাহাম বললেন, “আমার পুত্র, স্বয়ং ঈশ্বর বলির জন্য মেষশাবকের ব্যবস্থা করবেন।”
সুতরাং অব্রাহাম আর ইস্হাক দুজনে মিলে নির্দিষ্ট স্থানটিতে গেলেন। 9 তাঁরা সেই স্থানটিতে পৌঁছলেন যেখানে ঈশ্বর যেতে বলেছিলেন। সেখানে অব্রাহাম একটি বেদী তৈরী করলেন। বেদীর উপরে অব্রাহাম কাঠগুলো সাজালেন। তারপর অব্রাহাম তাঁর পুত্র ইস্হাককে বাঁধলেন এবং বেদীর উপরে সাজানো কাঠগুলোর উপর তাকে শোয়ালেন। 10 এবার অব্রাহাম খাঁড়া বার করে ইস্হাককে বলি দেওয়ার জন্যে তৈরী হলেন।
11 কিন্তু তখন প্রভুর দূত অব্রাহামকে বাধা দিলেন। সেই দূত স্বর্গ থেকে “অব্রাহাম, অব্রাহাম” বলে ডাকলেন।
অব্রাহাম থেমে গিয়ে সাড়া দিলেন, “বলুন।”
12 দূত বললেন, “তোমার পুত্রকে হত্যা কোরো না, তাকে কোন রকম আঘাত দিও না। এখন আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি ঈশ্বরকে ভক্তি করো এবং তাঁর আজ্ঞা পালন করো। প্রভুর জন্য তুমি তোমার একমাত্র পুত্রকে পর্যন্ত বলি দিতে প্রস্তুত।”
13 তখন অব্রাহাম একটা মেষ দেখতে পেলেন। একটা ঝোপে তার শিং আটকে গেছে। সুতরাং অব্রাহাম সেই মেষটা ধরে এনে বলি দিলেন। ঐ মেষটাই হল ঈশ্বরের জন্য অব্রাহামের বলি। আর রক্ষা পেল অব্রাহামের পুত্র ইস্হাক। 14 সুতরাং অব্রাহাম ঐ স্থানটির একটা নাম দিলেন, “যিহোবা-যিরি।”[a] এমন কি আজও লোকেরা বলে, “এই পর্বতে প্রভুকে দেখা যায়।”
15 স্বর্গ থেকে প্রভুর দূত দ্বিতীয়বার অব্রাহামকে ডেকে বললেন, 16 “আমার জন্য তুমি তোমার একমাত্র পুত্রকেও বলি দিতে প্রস্তুত ছিলে। আমার জন্য তুমি এত বড় কাজ করেছ বলে আমি তোমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমি প্রভু, নিজেরই দিব্য করে প্রতিশ্রুতি করছি যে, 17 আমি তোমাকে অবশ্য আশীর্বাদ করব। আকাশে যত তারা, আমি তোমার উত্তরপুরুষদেরও সংখ্যাও তত করব। সমুদ্রতীরে যত বালি, তোমার উত্তরপুরুষরাও তত হবে। এবং তোমার বংশ তাদের সমস্ত শত্রুদের পরাস্ত করবে। 18 পৃথিবীর প্রত্যেক জাতি তোমার উত্তরপুরুষদের মাধ্যমে আশীর্বাদ পাবে। তুমি আমার আজ্ঞা পালন করেছ বলে তোমার উত্তরপুরুষদের জন্য আমি একাজ করব।”
19 তখন অব্রাহাম তাঁর ভৃত্যদের কাছে ফিরে গেলেন। তাঁরা সকলে বের্-শেবাতে ফিরে এলেন এবং অব্রাহাম বের্-শেবাতেই থেকে গেলেন।
20 এইসব ঘটনার পরে অব্রাহামের কাছে এই খবর এল, “শোনো, তোমার ভাই নাহোর এবং তার স্ত্রী মিল্কারও এখন সন্তানাদি হয়েছে; 21 প্রথম পুত্রের নাম উষ, দ্বিতীয় পুত্রের নাম বূষ, তৃতীয় পুত্র কমূয়েল হল অরামের পিতা। 22 তারপরে আছে কেষদ, হসো, পিল্দশ, ষিদ্লক এবং বথুযেল।” 23 বথুয়েল হল রিবিকার পিতা। এই আট পুত্রের মাতা হল মিল্কা এবং পিতা হল নাহোর। আর নাহোর হচ্ছে অব্রাহামের ভাই। 24 তাছাড়া দাসী রূমার থেকেও নাহোরের আরও চারজন পুত্র ছিল। এই চার পুত্রের নাম টেবহ, গহম, তহশ এবং মাখা।
ঈশ্বর অর্থের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ
(লূক 12:33-34; 11:34-36; 16:13)
19 “এই পৃথিবীতে তোমরা নিজেদের জন্য ধন-সম্পদ সঞ্চয় করো না। এখানে ঘুন ধরে ও মরচে পড়ে তা নষ্ট হয়ে যায়, আর চোরে সিঁধ কেটে তা চুরিও করতে পারে। 20 বরং স্বর্গে তোমার জন্য সম্পদ সঞ্চয় কর, সেখানে ঘুন ধরবে না, মরচেও পড়বে না, চোরেও চুরি করবে না। 21 তোমার ধন-সম্পদ যেখানে রয়েছে, তোমার মনও সেখানে পড়ে থাকবে।
22 “চোখই দেহের প্রদীপ, তাই তোমার চোখ যদি নির্মল হয়, তোমার সারা দেহও উজ্জ্বল হবে। 23 কিন্তু তোমার চোখ যদি অশুচি হয়, তবে তোমার সমস্ত দেহ অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। তোমার মধ্যেকার আলো যদি অন্ধকারাচ্ছন্নই হয়, তবে সে অন্ধকার নিজে কি ভীষণ।
24 “কোন মানুষ দুজন কর্তার দাসত্ব করতে পারে না। সে হয়তো প্রথম জনকে ঘৃণা করবে ও দ্বিতীয় জনকে ভালবাসবে অথবা প্রথম জনের প্রতি অনুগত হবে ও দ্বিতীয় জনকে তুচ্ছ করবে। ঈশ্বর ও ধন-সম্পত্তি এই উভয়ের দাসত্ব তোমরা করতে পারো না।
ঈশ্বরের রাজ্যই প্রথম বিষয়
(লূক 12:22-34)
25 “তাই আমি তোমাদের বলছি, বেঁচে থাকার জন্য কি আহার করব বা কি পান করব এ নিয়ে চিন্তা করো না। আর কি পরব একথা ভেবে দেহের বিষয়েও চিন্তা করো না। খাদ্যের চেয়ে জীবন কি মূল্যবান নয়, অথবা পোশাকের চেয়ে দেহটা কি মূল্যবান নয়? 26 আকাশের পাখীদের দিকে একবার তাকাও, দেখ, তারা বীজ বোনে না বা ফসলও কাটে না, অথবা গোলা ঘরে নিয়ে গিয়ে তা জমাও করে না। তোমাদের স্বর্গের পিতা ঈশ্বর তাদের আহার যোগান। তোমরা কি ওদের থেকে আরও মূল্যবান নও? 27 তোমাদের মধ্যে কে ভাবনা চিন্তা করে নিজের আয়ু এক ঘন্টা বাড়াতে পারে?
28 “পোশাকের বিষয়েই বা কেন এত চিন্তা কর? মাঠের লিলি ফুলগুলির দিকে চেয়ে দেখ কিভাবে তারা ফুটে উঠেছে। তারা পরিশ্রম করে না, নিজেদের জন্য পোশাকও তৈরী করে না। 29 কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি, রাজা শলোমন তার সমস্ত জাঁকজমক সত্ত্বেও তার পোশাকে ঐ ফুলগুলির একটির মতোও নিজেকে সাজাতে পারে নি। 30 মাঠে যে ঘাস আছে আর কাল উনুনে ফেলে দেওয়া হবে, ঈশ্বর যখন তাদের এত সুন্দর করে সাজান, তখন হে অল্প বিশ্বাসী লোকেরা, তিনি কি তোমাদের আরও সুন্দর করে সাজাবেন না?
31 “তোমরা এই বলে চিন্তা করো না, ‘আমরা কি খাবো?’ বা ‘কি পান করবো?’ বা ‘কি পরবো’? 32 বিধর্মীরাই এসব নিয়ে চিন্তা করে। তোমাদের স্বর্গের পিতা ঈশ্বর তো জানেন এসব জিনিসের তোমাদের প্রয়োজন আছে। 33 তাই তোমরা প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে ও তাঁর ইচ্ছা কি তা পূর্ণ করতে চেষ্টা কর, তাহলে তোমাদের যা কিছু প্রয়োজন সে সব দেওয়া হবে। 34 কালকের জন্য চিন্তা করো না; কালকের চিন্তা কালকের জন্য থাক। প্রতিটি দিনের পক্ষে সেই দিনের কষ্টই যথেষ্ট।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International