Old/New Testament
তিনজন অতিথি
18 পরে প্রভু পুনরায় অব্রাহামের সামনে আবির্ভূত হলেন। মম্রির ওক বৃক্ষগুলির কাছে অব্রাহাম বাস করছিলেন। একদিন অব্রাহাম নিজের তাঁবুর প্রবেশ পথে বসেছিলেন। তখন দিনের সবচেয়ে চড়া গরমের সময়। 2 অব্রাহাম চোখ তুলে দেখলেন যে তাঁর সামনে তিনজন আগন্তুক দাঁড়িয়ে। তাঁদের দেখে অব্রাহাম তাঁদের কাছে গিয়ে অভিবাদন জানালেন। 3 অব্রাহাম বললেন, “মহাশয়গণ, আমি আপনাদের সেবক, আমার এখানে আপনারা কিছুক্ষণ অবস্থান করুন। 4 আপনাদের পা ধোয়ার জন্য আমি জল এনে দিচ্ছি। আপনারা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করুন। 5 আমি আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি এবং আপনারা ইচ্ছামত আহার করে আবার আপনাদের গন্তব্যস্থল অভিমুখে যাত্রা করতে পারেন।”
ঐ তিনজন বললেন, “বেশ কথা! যেমন বললেন, আমরা তেমনই করব।”
6 অব্রাহাম তাড়াতাড়ি তাঁবুর ভেতরে গেলেন। অব্রাহাম সারাকে বললেন, “চট করে তিনজনের মত রুটির ব্যবস্থা করো।” 7 তারপর অব্রাহাম তাঁর গোয়ালে দৌড়ে গেলেন। সবচেয়ে ভাল বাছুরটা বেছে নিলেন। অব্রাহাম তখনই এক ভৃত্যকে ওটাকে মেরে রান্না করার জন্যে বললেন। 8 তারপর অব্রাহাম সেই মাংস আর খানিকটা দুধ ও পনীর এনে অতিথি তিনজনের সামনে রাখলেন। পরিবেশন করার জন্য অব্রাহাম সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং তাঁরা গাছের ছায়ায় বসে ভোজন করলেন।
9 তারপর তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার স্ত্রী সারা কোথায়?”
অব্রাহাম বললেন, “ওখানে ঐ তাঁবুর মধ্যে।”
10 তখন প্রভু বললেন, “আমি আবার বসন্তকালে আসব। তখন তোমার স্ত্রী সারার একটি পুত্র হবে।”
তাঁবুর ভেতর থেকে সারা সমস্ত কথাবার্তা শুনছিলেন। 11 অব্রাহাম ও সারা তখন রীতিমত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। সন্তান জন্ম দেওয়ার বয়স সারা অনেকদিন আগে পার হয়ে এসেছেন। 12 স্বভাবতই সারা যা শুনলেন তা বিশ্বাস করলেন না। নিজের মনে মনে সারা হেসে বললেন, “আমি বৃদ্ধা হয়েছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ। সন্তান প্রসবের পক্ষে আমার অনেক বেশী বয়স হয়েছে।”
13 তখন প্রভু অব্রাহামকে বললেন, “সারা হাসছে। সারা ভাবছে যে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পক্ষে তার অনেক বেশী বয়স হয়েছে। 14 কিন্তু প্রভুর পক্ষে কি কোনও কাজ খুব কঠিন? না! আমি যেমন বলেছি, আবার বসন্তকালে, তেমনই আসব এবং তোমার স্ত্রী সারার তখন সন্তান হবে।”
15 কিন্তু সারা বললেন, “আমি হাসি নি!” (একথা বললেন কারণ তিনি ভয় পেয়েছিলেন।)
কিন্তু প্রভু বললেন, “না! আমি জানি, তা সত্যি নয়! তুমি হেসেছিলে!”
16 তারপর সেই তিনজন আগন্তুক যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। সদোমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবং সদোম অভিমুখে চলতে শুরু করলেন। তাঁদের এগিয়ে দেওয়ার জন্য অব্রাহামও তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে শুরু করলেন।
ঈশ্বরের সঙ্গে অব্রাহামের দরাদরি
17 প্রভু আপন মনে বললেন, “এখন আমি কি করব তা কি অব্রাহামকে বলব? 18 অব্রাহাম থেকে জন্মলাভ করবে এক মহান ও শক্তিশালী জাতি এবং অব্রাহামের জন্যেই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবে। 19 আমি অব্রাহামের সাথে এক বিশেষ চুক্তি করেছি। প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে জীবনযাপনের জন্য যাতে অব্রাহামের সন্তান-সন্ততি ও উত্তরপুরুষগণ অব্রাহামের আজ্ঞা পালন করে তাই এই ব্যবস্থা করেছি। এটা করেছি যাতে তারা ন্যায়পরায়ণ হয় ও সৎ জীবনযাপন করে। তাহলে আমি প্রভু, প্রতিশ্রুত জিনিসগুলি দিতে পারব।”
20 তারপরে প্রভু বললেন, “যে নিদারুণ পাপ সেখানে সংঘটিত হচ্ছে, তার জন্য আমি সদোম এবং ঘমোরার বিরুদ্ধে তীব্র আর্তনাদ শুনেছি। 21 যত খারাপ বলে শুনেছি তা সত্যিই তত খারাপ কিনা তা আমি নিজে গিয়ে দেখব। তাহলে আমি নিশ্চিতভাবে সব জানব।”
22 তখন তাঁরা তিনজন সদোম অভিমুখে হাঁটতে শুরু করলেন। কিন্তু অব্রাহাম প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। 23 অব্রাহাম প্রভুর কাছে এলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, “প্রভু, আপনি কি ভাল লোকেদেরও ধ্বংস করবেন যেমন আপনি মন্দ লোকেদের ধ্বংস করেন? 24 সদোম নগরে যদি 50 জনও ভাল লোক থাকে তাহলে আপনি কি করবেন? তাহলেও কি আপনি নগরটা ধ্বংস করবেন? নিশ্চয়ই আপনি ঐ নগরবাসী 50 জন ভাল লোকের জন্য নগরটা রক্ষা করবেন? 25 তাহলে আপনি নিশ্চয়ই ঐ নগরটা বা ঐ খারাপ লোকদের ধ্বংস করতে গিয়ে ঐ 50 জন ভাল লোকদেরও ধ্বংস করবেন না? যদি তা করেন তাহলে ভাল এবং মন্দ লোকেদের একই পরিণতি হবে। তার অর্থ, ভাল এবং মন্দ জাতীয় উভয় লোকদেরই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আপনি সমস্ত পৃথিবীর বিচারক। আমি জানি আপনি ঠিক বিচারই করবেন।”
26 তখন প্রভু বললেন, “আমি যদি সদোম নগরে 50 জন ভাল লোক পাই তাহলে আমি সমগ্র নগরটাকেই রক্ষা করব।”
27 তখন অব্রাহাম বললেন, “আপনার তুলনায় আমি নেহাতই ধুলো আর ছাই। কিন্তু একটা প্রশ্ন করে আবার আপনাকে বিরক্ত করছি। 28 যদি ভাল লোকদের থেকে 5 জনকে খুঁজে না পাওয়া যায় তখন কি করবেন? নগরে যদি মাত্র 45 জন ভাল লোক থাকে? মাত্র 5 জনকে পাওয়া গেল না বলে কি আপনি গোটা নগর ধ্বংস করে ফেলবেন?”
তখন প্রভু বললেন, “যদি আমি 45 জন ভাল লোককেও পাই তাহলে ঐ নগর ধ্বংস করব না।”
29 অব্রাহাম আবার বললেন, “সেখানে গিয়ে আপনি যদি মাত্র 40 জন ভাল লোককে পান তাহলে কি আপনি পুরো নগর ধ্বংস করবেন?”
প্রভু বললেন, “আমি যদি 40 জন ভাল লোককেও পাই তাহলে আমি নগরটা ধ্বংস করব না।”
30 অব্রাহাম বললেন, “প্রভু দয়া করে আমার ওপর রাগ করবেন না। একটা প্রশ্ন করি! যদি নগরে মাত্র 30 জন ভাল লোককে পান তাহলেও কি আপনি ঐ নগর ধ্বংস করবেন?”
তখন প্রভু বললেন, “আমি যদি 30 জন ভাল লোক পাই তাহলে নগরটা ধ্বংস করব না।”
31 তখন অব্রাহাম বললেন, “আপনাকে কি আর একবার বিরক্ত করতে পারি? যদি সেখানে মাত্র 20 জন ভাল লোক পান তাহলে কি করবেন?”
প্রভু বললেন, “আমি যদি 20 জন ভাল লোক পাই তাহলে আমি নগরটা ধ্বংস করবো না।”
32 তখন অব্রাহাম বললেন, “প্রভু দয়া করে রাগ করবেন না, কিন্তু শেষবারের মতো আর একটি প্রশ্ন দিয়ে আপনাকে বিরক্ত করি। আপনি যদি সেখানে মাত্র 10 জন ভাল লোক পান তাহলে আপনি কি করবেন?”
প্রভু বললেন, “ঐ নগরে 10 জন ভাল লোক পেলেও আমি তা ধ্বংস করব না।”
33 প্রভুর অব্রাহামকে যা বলার ছিল, সব বলা হয়ে গেল। এবার প্রভু তাঁর পথে চলে গেলেন এবং অব্রাহাম নিজের বাসস্থানে ফিরে গেলেন।
লোটের অতিথিগণ
19 1-2 সেদিন সন্ধ্যায় সদোম নগরে দুজন দূত এলেন। তখন লোট নগরের প্রবেশ পথে বসেছিলেন। তিনি দূতদের আসতে দেখলেন। লোট ভাবলেন যে তারা সাধারণ পথিক, নগরের মধ্য দিয়ে কোথাও যাচ্ছে। লোট উঠে গিয়ে তাঁদের অভিবাদন করে বললেন, “মহাশয়গণ, অনুগ্রহ করে একবার আমার বাড়ীতে আসুন এবং আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। সেখানে আপনারা হাত-পা ধুয়ে রাত্রিবাস করতে পারেন। তাহলে কাল সকালে আবার আপনাদের গন্তব্যস্থল অভিমুখে যাত্রা করতে পারবেন।”
দূত দুজন বললেন, “না, আমরা চকেই রাত্রিবাস করব।”
3 কিন্তু লোট নিজের বাড়ীতে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। তাই দূতরা শেষ পর্যন্ত লোটের বাড়ীতে থেকে যেতে রাজী হলেন। তাঁরা লোটের বাড়ীতে গেলেন। লোট তাঁদের কিছু পানীয় দিলেন। লোট তাঁদের রুটি বানিয়ে দিলেন এবং তাঁরা সেই রুটি খেলেন।
4 সেদিন সন্ধ্যায় ঘুমোতে যাওয়ার ঠিক আগে, নগরের নানা প্রান্ত থেকে নানা বয়সের বহু লোক লোটের বাড়িতে এল। সদোমের সেইসব লোকেরা লোটের বাড়ী ঘিরে ফেলল এবং লোটকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। 5 তারা বলল, “আজ সন্ধ্যায় যারা এসেছে, কোথায় তারা? তাদের বাইরে নিয়ে এস—আমরা তাদের সাথে যৌন সহবাস করতে চাই।”
6 লোট বাইরে বেরিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন। 7 সেই জনতার উদ্দেশ্যে লোট বললেন, “না! বন্ধুরা, আমি মিনতি করছি, এমন খারাপ কাজ কোরো না। 8 দেখ, আমার দুটি মেয়ে আছে—কোনও পুরুষ তাদের স্পর্শ করে নি। তোমাদের জন্য আমি নিজের কন্যাদের দেব। তোমরা তাদের নিয়ে যা খুশী করতে পারো। কিন্তু দয়া করে এই অতিথি দুজনের প্রতি কিছু কোরো না। এই দুজন আমার ঘরে এসেছে এবং আমার অবশ্যই এদের রক্ষা করা উচিৎ।”
9 যেসব লোকেরা লোটের বাড়ী ঘিরে রেখেছিল তারা উত্তর দিল, “আমাদের পথ থেকে সরে যাও।” তারপর তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “এই লোকটা একদিন অতিথি হিসেবে আমাদের নগরে বাস করতে এসেছিল। এখন জ্ঞান দিচ্ছে, আমরা কি করব না করব!” তখন সেই লোকেরা লোটকে বলল, “এখন তোমার প্রতি ওদের চেয়ে আরও বেশী খারাপ ব্যবহার করব।” অতএব সেই জনতা লোটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। ক্রমে দরজা ভেঙ্গে ফেলার উপক্রম।
10 কিন্তু যে দুজন পুরুষ লোটের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা হঠাৎ দরজা খুলে বেরিয়ে এসে লোটকে ভেতরে টেনে নিয়ে গেলেন এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। 11 তারপর তাঁরা বাইরের মারমুখো জনতার জন্য কিছু একটা করলেন। ফলে যুবক, বৃদ্ধ, সব বদমাশ লোকেরা অন্ধ হয়ে গেল। এর ফলে যারা বাড়ির ভেতর জোর করে ঢোকার চেষ্টা করছিল তারা ভেতরে ঢোকার দরজাই খুঁজে পেল না।
সদোম হতে পলায়ন
12 অতিথি দুজন লোটকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার পরিবারের আর কেউ কি এই শহরে বাস করে? তোমার জামাই, ছেলে, মেয়ে কিংবা পরিবারের আর কেউ কি এখানে আছে? যদি থাকে তাহলে তাদের এখনই এই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলো। 13 আমরা এই নগর ধ্বংস করে দেব। এই নগর যে কত খারাপ তা প্রভু শুনেছেন। তাই এই নগর ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন।”
14 তখন লোট বেরিয়ে গিয়ে তাঁর অন্যান্য মেয়েদের যারা বিয়ে করেছে সেই মেয়েদের স্বামীদের অর্থাৎ জামাইদের সঙ্গে কথা বললেন। লোট বলল, “তাড়াতাড়ি করো! এক্ষুনি এই জায়গা ছেড়ে চলে যাও! প্রভু এখনই এই জায়গা ধ্বংস করবেন।” কিন্তু তারা ভাবল, লোট বোধহয় তামাশা করছেন।
15 পরদিন ভোরে সেই দূতরা লোটকে তাড়া দিলেন। তাঁরা বললেন, “এই নগরবাসীদের শাস্তি দেওয়া হবে। সুতরাং তুমি, তোমার স্ত্রী এবং যে দুজন মেয়ে তোমার কাছে থাকে তাদের নিয়ে শীঘ্রই এই জায়গা ছেড়ে চলে যাও। তাহলে এই নগরের সঙ্গে তোমরা আর ধ্বংস হবে না।”
16 কিন্তু লোটের সব গুলিয়ে গেল এবং তিনি নগর ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাড়া করলেন না। সুতরাং ঐ দুজন লোট এবং তাঁর স্ত্রীর এবং দুই মেয়ের হাত চেপে ধরলেন। ঐ দুজন লোট এবং তাঁর পরিবারকে নিরাপদে নগরের বাইরে নিয়ে গেলেন। লোট এবং তাঁর পরিবারের প্রতি প্রভু দয়ালু ছিলেন। 17 তাই ঐ দুজন লোট এবং তাঁর পরিবারকে নগরের বাইরে নিয়ে এলেন। তাঁরা নগরের বাইরে চলে এলে সেই দুজন দুতের একজন বললেন, “এবার প্রাণ বাঁচাবার জন্য তোমরা দৌড় দাও! আর পেছনের দিকে তাকাবে না। উপত্যকার কোনও জায়গাতে দাঁড়াবে না। যতক্ষণ না ঐ পর্বতে পৌঁছবে ততক্ষণ শুধুই দৌড়বে। থামলে, নগরের সঙ্গে তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে!”
18 কিন্তু লৌট এই দুজনকে বললেন, “মহাশয়গণ, দয়া করে আমায় অত দূরে দৌড়ে যেতে বলবেন না! 19 আমি আপনাদের সেবকমাত্র, তবু আমার প্রতি আপনাদের অসীম দয়া। দয়া করে আমার জীবন রক্ষা করেছেন। কিন্তু ঐ পর্বত পর্যন্ত সমস্ত পথ দৌড়োবার ক্ষমতা আমার নেই। যদি আমি খুব ধীরে যাই তবে বিপদ ঘটবে এবং আমি নিহত হব! 20 দেখুন, এখানে কাছেই একটা খুব ছোট শহর আছে। আমি সেই শহর পর্যন্ত দৌড়ে বেঁচে যেতে পারি।”
21 দূত লোটকে বললেন, “ভালো কথা আমি তোমার অনুরোধ স্বীকার করেছি। আমি তোমাকে সেটা করতে দেব। আমি ঐ শহর ধ্বংস করব না। 22 কিন্তু সেখানে শীঘ্রই দৌড়ে যাও। যতক্ষণ না নিরাপদে ঐ শহরে তুমি পৌঁছোচ্ছ ততক্ষণ সদোম ধ্বংস করতে পারব না।” (ঐ শহরের নাম সোয়র কারণ শহরটি খুব ছোট।)
সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস হল
23 সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে লোট সোয়রে পৌঁছলেন। 24 একই সময়ে প্রভু সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করা শুরু করলেন। প্রভু আকাশ থেকে আগুন আর জ্বলন্ত গন্ধক বর্ষণ শুরু করলেন। 25 অর্থাৎ প্রভু ঐ নগরগুলি ধ্বংস করলেন। সমস্ত গাছপালা, সমস্ত লোকজন, সমগ্র উপত্যকাটাই প্রভু ধ্বংস করলেন।
26 লোট যখন স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিলেন তখন লোটের স্ত্রী নিষেধ ভুলে একবার পেছনে নগরের দিকে তাকালেন এবং তখনই লবণের মূর্ত্তি হয়ে গেলেন।
27 খুব সকালে অব্রাহাম আগে যেখানটাতে প্রভুর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন সেই স্থানটিতে তিনি আবার গিয়ে দাঁড়ালেন। 28 অব্রাহাম সদোম এবং ঘমোরার দিকে তাকিয়ে দেখলেন। সমগ্র উপত্যকার ওপর দৃষ্টিপাত করে অব্রাহাম দেখলেন যে সমস্ত উপত্যকা থেকে ধোঁয়া উঠছে। দেখে মনে হল বিশাল অগ্নিকাণ্ডের ফলস্বরূপ ঐ ধোঁয়া।
29 ঈশ্বর উপত্যকার সমস্ত নগর ধ্বংস করলেন। কিন্তু ঈশ্বর ঐ নগরগুলি ধ্বংস করার সময় অব্রাহামের কথা মনে রেখেছিলেন এবং তিনি অব্রাহামের ভ্রাতুষ্পুত্রকে ধ্বংস করেন নি। লোট ঐ উপত্যকার নগরগুলির মধ্যে বাস করছিলেন। কিন্তু নগরগুলি ধ্বংস করার আগে ঈশ্বর লোটকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
লোট এবং তাঁর দুই মেয়ে
30 সোয়রে বাস করতে লোটের ভয় করছিল। তাই তিনি ও তাঁর দুই মেয়ে পর্বতে বাস করতে চলে গেলেন। সেখানে তাঁরা একটা গুহার মধ্যে বাস করতে লাগলেন। 31 দুজনের মধ্যে যে মেয়ে বড় সে একদিন ছোট বোনকে বলল, “পৃথিবীতে সর্বত্র স্ত্রী ও পুরুষ বিয়ে করে এবং তাদের সন্তানাদি হয়। কিন্তু আমাদের পিতা বৃদ্ধ হয়েছেন এবং আমাদের সন্তানাদি দিতে পারে এমন অন্য পুরুষ এখানে নেই। 32 তাই আমরা পিতাকে প্রচুর দ্রাক্ষারস পান করিয়ে বেহুঁশ করিয়ে দেব। তারপর তাঁর সঙ্গে আমরা যৌনসঙ্গম করব। আমাদের পরিবার রক্ষা করার জন্য আমরা এইভাবে আমাদের পিতার সাহায্য নেব!”
33 সেই রাত্রে দু মেয়ে তাদের পিতার কাছে গেল এবং তাঁকে প্রচুর দ্রাক্ষারস পান করতে দিল। তারপর বড় মেয়ে পিতার বিছানায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করল। লোট এমন নেশাগ্রস্ত ছিলেন যে তাঁর বিছানায় কে কখন এল এবং কে কখন গেল কিছুই বুঝতে পারলেন না।
34 পরদিন ছোট বোনকে বড় বোন বলল, “গত রাত্রে আমি পিতার সঙ্গে এক বিছানায় শুয়েছি। আজ রাতে আবার তাঁকে দ্রাক্ষারস পান করিয়ে বেহুঁশ করে দেব। তাহলে তুমি তাঁর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করতে পারবে। এভাবে আমরা সন্তানাদি পেতে আমাদের পিতার সাহায্য নেব। এতে আমাদের বংশধারা অব্যাহত থাকবে।” 35 সুতরাং সেই রাত্রে দু মেয়ে আবার পিতাকে নেশাতে বেহুঁশ করে দিল। তারপর ছোট মেয়ে পিতার বিছানায় গিয়ে পিতার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করল। এবারেও লোট এমন নেশাগ্রস্ত ছিলেন যে জানতে পারলেন না কে তার বিছানায় এল, কে গেল।
36 লোটের দু মেয়েই গর্ভবতী হল। তাদের পিতাই তাদের সন্তানাদির পিতা। 37 বড় মেয়ের হল এক পুত্র সন্তান। তার নাম হল মোয়াব। বর্তমানে যে মোয়াবীয় জাতি আছে তাদের আদিপুরুষ হলেন মোয়াব। 38 ছোট মেয়েও এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। তার নাম বিন্-অম্মি। বর্তমানে যে অম্মোন জাতি আছে তাদের আদিপুরুষ হলেন বিন্-অম্মি।
দান করার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
6 “সাবধান! লোক দেখানো ধর্ম-কর্ম বা ঈশ্বরের কাজ করো না। তাহলে তোমাদের স্বর্গের পিতার কাছ থেকে কোন পুরস্কার পাবে না।
2 “তাই তুমি যখন কোন অভাবী মানুষকে কিছু দাও, তখন তূরী বাজিয়ে তা দিও না। যারা ভণ্ড তারা লোকদের প্রশংসা পাবার আশায় সমাজ-গৃহে ও পথে-ঘাটে ঐভাবে তূরী বাজিয়ে দান করে। আমি বলছি, তাদের পুরস্কার তারা পেয়ে গেছে। 3 কিন্তু তুমি যখন অভাবী লোকদের কিছু দান কর, তখন তোমার ডান হাত কি করছে তা তোমার বাঁ হাতকে জানতে দিও না, 4 যেন তোমার দান গোপনে দেওয়া হয়। তাহলে তোমার পিতা ঈশ্বর যিনি গোপনে সব কিছু দেখেন, তিনি তোমায় পুরস্কার দেবেন।
প্রার্থনার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
(লূক 11:2-4)
5 “তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন ভণ্ডদের মতো করো না, তারা লোকদের কাছে নিজেদের দেখাবার জন্য সমাজ-গৃহে ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে ভালবাসে। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। 6 কিন্তু তুমি যখন প্রার্থনা কর, তখন তোমার ঘরের ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে তোমার পিতা যাঁকে দেখা যায় না, তাঁর কাছে প্রার্থনা করো। তাহলে তোমার পিতা যিনি গোপনে যা কিছু করা হয় দেখেন, তিনি তোমাকে পুরস্কার দেবেন।
7 “তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন বিধর্মীদের মতো একই প্রার্থনার পুনরাবৃত্তি করো না, কারণ তারা মনে করে তাদের বাক্য বাহুল্যের গুনে তারা প্রার্থনার উত্তর পাবে। 8 তাই তোমরা তাদের মতো হয়ো না, কারণ তোমাদের চাওয়ার আগেই তোমাদের পিতা জানেন তোমাদের কি প্রয়োজন আছে। 9 তাই তোমরা এইভাবে প্রার্থনা করো,
‘হে আমাদের স্বর্গের পিতা,
তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক্।
10 তোমার রাজত্ব আসুক।
তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক্।
11 যে খাদ্য আমাদের প্রয়োজন তা আজ আমাদের দাও।
12 আমাদের কাছে যারা অপরাধী, আমরা যেমন তাদের ক্ষমা করেছি,
তেমনি তুমিও আমাদের সব অপরাধ ক্ষমা কর।
13 আমাদের প্রলোভনে পড়তে দিও না,
কিন্তু মন্দের হাত থেকে উদ্ধার কর।’[a]
14 তোমরা যদি অন্যদের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গের পিতাও তোমাদের ক্ষমা করবেন। 15 কিন্তু তোমরা যদি অন্যদের ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের স্বর্গের পিতা তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন না।
উপবাস বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
16 “যখন তোমরা উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মতো মুখ শুকনো করে রেখো না। তারা যে উপবাস করেছে তা লোকেদের দেখাবার জন্য তারা মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়ায়। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। 17 কিন্তু তুমি যখন উপবাস করবে, তোমার মাথায় তেল দিও আর মুখ ধুয়ো। 18 যেন অন্য লোকে জানতে না পারে যে তুমি উপবাস করছ। তাহলে তোমার পিতা ঈশ্বর, যাঁকে তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছ না, তিনি দেখবেন। তোমার পিতা ঈশ্বর যিনি গোপন বিষয়ও দেখতে পান, তিনি তোমায় পুরস্কার দেবেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International