Old/New Testament
13 সেইদিন দায়ূদ পরিবারের সদস্যদের জন্য ও জেরুশালেমে বসবাসকারী অন্যান্য লোকেদের জন্য এক নতুন ঝর্ণা খোলা হবে। এই ঝর্ণাটি হবে পাপ ও অশুদ্ধি থেকে শুদ্ধিকরণের নিমিত্ত।
ভ্রান্ত ভাববাদী আর নয়
2 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন, “সেইসময় আমি পৃথিবী থেকে মূর্ত্তিসমূহের নাম কেটে দেব। ভ্রান্ত ভাববাদীদের আর অশুদ্ধ আত্মাদের সরিয়ে দেব। লোকেরা এমনকি তাদের নামও মনে করবে না। এবং আমি ভ্রান্ত ভাববাদী ও অশুচি আত্মাদের পৃথিবী থেকে দূর করব। 3 যদি কেউ ভাববাণী অব্যাহত রাখে, তবে তাকে শাস্তি পেতে হবে। এমনকি তার পিতামাতাও তাকে বলবে, ‘প্রভুর নামে তুমিও মিথ্যা কথা বলছ।’ সে ভাববাণী করছে বলে তার মাতা পিতাই তাকে বিদ্ধ করে হত্যা করবে। 4 সেই সময়, ভাববাদীরা তাদের দর্শন ও ভাববাণী সম্বন্ধে লজ্জিত হবে। তারা নিজেদের ভাববাদী বলে সনাক্ত করবার জন্য ভাববাদীদের নিমিত্ত মোটা পোষাক পরবে না। তারা লোককে ঠকাবার জন্য ঐ পোষাকগুলো পরবে না। 5 তারা বলবে, ‘আমি একজন ভাববাদী নই। আমি একজন কৃষক, এবং ছোট বেলা থেকেই আমি মাঠে কৃষি কাজ করেছি।’ 6 কিন্তু অন্য লোকেরা বলবে, ‘কিন্তু তোমার হাতের ঐ আঘাতগুলি কিসের?’ সে তখন বলবে, ‘আমি আমার বন্ধুর বাড়ী মার খেয়েছিলাম।’”
7 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন, “আমার তরবারি মেষপালকদের আঘাত করুক! সেটা আমার বন্ধুকে আঘাত করুক! মেষপালকদের আঘাত কর এবং মেষরা পলায়ন করবে। এবং আমি সেই ক্ষুদ্রগণকে শাস্তি দেব। 8 দেশের দুই-তৃতীয়াংশ লোক আঘাতে মারা যাবে কিন্তু এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকবে। 9 তখন আমি ঐ অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ লোকদের পরীক্ষা করব। আমি তাদের বিভিন্ন সংকটে ফেলব। সেগুলো হবে তাদের অগ্নিপরীক্ষার মত ঠিক যেমন লোকে আগুন ব্যবহার করে রূপোকে খাঁটি করতে অথবা সোনা খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করতে। তখন তারা আমার নামে ডাকবে আর আমি তাদের ডাকে সাড়া দেব। আমি বলব, ‘তোমরা আমার লোক।’ আর তারা বলবে, ‘প্রভু আমাদের ঈশ্বর।’”
বিচারের দিনের বর্ণনা
14 দেখ, বিচারের জন্য প্রভুর বিশেষ দিন আসছে। আর যে সম্পদ তুমি লুঠ করছ তা তোমার শহরে ভাগ করা হবে। 2 জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য আমি সমস্ত জাতিকে জড়ো করব। শত্রুরা শহর অধিকার করবে এবং ঘর বাড়ি ধ্বংস করবে। স্ত্রীলোকদের ওপর বলাৎকার করা হবে এবং অর্ধেক লোককে বন্দী করে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হবে। বাদবাকীরা পেছনে পড়ে থাকবে। 3 তখন সেইসব জাতির সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য প্রভু নিজে যাবেন অতীতে যেমন তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। 4 সেই সময় তিনি জৈতুন পর্বতের ওপরে দাঁড়াবেন, যে পর্বত জেরুশালেমের পূর্বে অবস্থিত। জৈতুন পর্বত চিরে যাবে এবং পর্বতের একভাগ উত্তরে, অপরভাগ দক্ষিণে সরে যাবে। পশ্চিম থেকে পূর্বে এক গভীর উপত্যকার সৃষ্টি হবে। 5 সেই উপত্যকা তোমার নিকটবর্তী হলে তোমরা পালাবার চেষ্টা করবে। যেমন যিহূদার রাজা উষিয়ের সময়ে ভূমিকম্পের দিনে তোমরা দৌড়েছিলে সেইরকম দৌড়ে পালাবে। ঈশ্বর আসবেন, এবং তাঁর সমস্ত পবিত্র লোকরা তাঁর সঙ্গে থাকবে।
6-7 সেই দিন হবে বিশেষ দিন। সেই দিন আলো, ঠাণ্ডা বা হিম বলে কিছু থাকবে না। কেবল প্রভু জানেন তা কিভাবে হবে, কিন্তু দিন বা রাত বলে কিছু থাকবে না। সাধারণতঃ অন্ধকার যখন নেমে আসে সেই সময়তেও আলো থাকবে। 8 সেই দিন জেরুশালেম থেকে জীবন্ত জলের ধারা বইবে। সেই জলধারা দুটি স্রোতে ভাগ হয়ে এক ভাগ পূর্ব দিকে মৃত সাগরে এবং অপর ভাগ পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরে বইবে। সেই জলের ধারা সারা বছর ধরে থাকবে, কি গ্রীষ্মে, কি শীতে। 9 সেই সময়, প্রভু সমস্ত পৃথিবীর রাজা হবেন। সেই দিন প্রভু হবেন একজন। তাঁর নাম হবে একটিই। 10 সেই সময়, জেরুশালেমের চারধার মরুভূমিতে পরিণত হবে। গেবা থেকে নেগেভের রিম্মোণ পর্যন্ত মরুভূমির মত হয়ে যাবে। কিন্তু জেরুশালেমের পুরো শহরটি আবার নির্মাণ করা হবে। বিন্যামীন ফটক থেকে প্রথম ফটক (কোণের ফটক) পর্যন্ত এবং হননেলের দুর্গ থেকে রাজার দ্রাক্ষা কুণ্ড পর্যন্ত। 11 কোন শত্রু আর তাদের ধ্বংস করতে সেখানে আসবে না। জেরুশালেম নিরাপদ হবে।
12 কিন্তু যে সমস্ত জাতি জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, প্রভু তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের মাঝে তিনি প্লেগ রোগটি পাঠাবেন। জীবিতকালেই তাদের মাংস পচতে শুরু করবে। তাদের চোখগুলো কোটরে পচবে আর জিব মুখের মধ্যে পচতে শুরু করবে। 13-15 এই মারাত্মক রোগ শত্রু শিবিরগুলিতে ছড়িয়ে যাবে। সেই মারাত্মক রোগ তাদের ঘোড়া, উট এবং গাধাদের মধ্যেও ছড়িয়ে যাবে।
সেই সময়, ঐ লোকরা সত্যিই প্রভুকে ভয় পাবে। প্রত্যেকটি লোক অন্য লোকের হাত টেনে ধরবে আর তারা একে অপরের সঙ্গে লড়াই করবে। এমনকি যিহূদাও জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। সমস্ত লোকের কাছ থেকে সোনা, রূপো ও কাপড় চোপড় জড়ো করার পরও এটা ঘটবে। 16 জেরুশালেমে যারা যুদ্ধ করতে এসেছিল, তার থেকে বেঁচে থাকা লোকরা প্রতি বছর সেই রাজা যিনি সর্বশক্তিমান প্রভু, তাঁর উপাসনা করতে আসবে। এবং কুটিরবাস পর্ব পালন করতে জেরুশালেম পর্যন্ত যাবে। 17 আর পৃথিবীর কোন পরিবার যদি জেরুশালেমে সর্বশক্তিমান প্রভুর উপাসনা করতে না যায় তবে প্রভু তাদের বৃষ্টি দেবেন না। 18 যদি মিশরের কোন পরিবার কুটিরবাস পর্ব পালন করতে না আসে তবে প্রভু শত্রু জাতিদের ক্ষেত্রে যেমন করেছিলেন তেমনি তাদেরও সেই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত করবেন। 19 এই শাস্তি হবে মিশরীয়দের জন্য এবং অন্য যে কোন জাতি যারা কুটিরবাস পর্ব পালন করতে না আসে তাদের জন্য।
20 সেই সময়, প্রভু সব কিছুর মালিক হবেন। এমনকি ঘোড়ার গলার ঘণ্টিগুলিতেও লেখা থাকবে, প্রভুর জন্য পবিত্র।[a] আর প্রভুর মন্দিরে ব্যবহৃত সমস্ত বাসন-কোষন বেদীর বাটীর মত পাত্রগুলির মতোই গুরুত্বপূর্ণ হবে। 21 প্রকৃতপক্ষে জেরুশালেম ও যিহূদার প্রতিটি পাত্রেই এই কথা লেখা থাকবে। প্রভু সর্বশক্তিমানের জন্য পবিত্র। নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে যে সমস্ত লোক এসেছিল তারা এসে সেই সমস্ত পাত্র নিয়ে তাতে তাদের বিশেষ খাবার রান্না করবে।
সেই সময়, সর্বশক্তিমান প্রভুর মন্দিরে কোন ব্যবসায়ীকে আর দেখতে পাওয়া যাবে না।
নতুন জেরুশালেম
21 এরপর আমি এক নতুন স্বর্গ ও নতুন পৃথিবী দেখলাম, কারণ প্রথম স্বর্গ ও প্রথম পৃথিবী বিলুপ্ত হয়ে গেছে; এখন সমুদ্র আর নেই। 2 আমি আরো দেখলাম, সেই পবিত্র নগরী, নতুন জেরুশালেম, স্বর্গ হতে ঈশ্বরের কাছ থেকে নেমে আসছে। কনে যেমন তার বরের জন্য সাজে, সেও সেইভাবে প্রস্তুত হয়েছিল।
3 পরে আমি সিংহাসন থেকে এক উদাত্ত নির্ঘোষ শুনতে পেলাম, যা ঘোষণা করছে, “এখন মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আবাস। তিনি তাদের সঙ্গে বাস করবেন ও তারা তাঁর প্রজা হবে। ঈশ্বর নিজে তাদের সঙ্গে থাকবেন ও তাদের ঈশ্বর হবেন। 4 তিনি তাদের চোখের সব জল মুছিয়ে দেবেন। মৃত্যু, শোক, কান্না যন্ত্রণা আর থাকবে না, কারণ পুরানো বিষয়গুলি বিলুপ্ত হল।”
5 আর যিনি সিংহাসনে বসে আছেন তিনি বললেন, “দেখ! আমি সব কিছু নতুন করে করছি!” পরে তিনি বললেন, “লেখ, কারণ এসব কথা সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য।”
6 যিনি সিংহাসনে বসেছিলেন পরে তিনি আমায় বললেন, “সম্পন্ন হল! আমি আলফা ও ওমেগা, আমিই আদি ও অন্ত। যে তৃষ্ণার্ত তাকে আমি জীবন জলের উৎস থেকে বিনামূল্যে জল দান করব। 7 যে বিজয়ী হয় সে-ই এসবের অধিকারী হবে। আমি তার ঈশ্বর হব, আর সে হবে আমার পুত্র। 8 কিন্তু যারা ভীরু, অবিশ্বাসী ঘৃন্যলোক, নরঘাতক, যৌনপাপে পাপগ্রস্ত, মায়াবী, প্রতিমাপূজারী, যাঁরা মিথ্যাবাদী, এদের সকলের স্থান হবে সেই আগুন ও জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে; এই হল দ্বিতীয় মৃত্যু।”
9 আর যে সপ্ত স্বর্গদূতদের কাছে সপ্ত সন্তাপপূর্ণ বাটি ছিল তাদের মধ্যে শেষ সন্তাপের বাটিটি যিনি ঢেলেছিলেন, তিনি এসে আমায় বললেন, “এস, আমি তোমাকে মেষশাবকের বধূকে দেখাব।” 10 আমি আত্মার আবেশে ছিলাম, সেই অবস্থায় তিনি আমাকে একটা খুব বড় উঁচু পাহাড়ের ওপর নিয়ে গেলেন আর স্বর্গে ঈশ্বরের কাছ থেকে যে পবিত্র নগরী জেরুশালেম নেমে আসছিল তা দেখালেন।
11 তা ছিল ঈশ্বরের মহিমায় পূর্ণ বহুমূল্য মণির মতো, তার উজ্জ্বলতা সূর্যকান্ত মণির মতো উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ। 12 নগরের প্রাচীরটি খুব উঁচু এবং বড় ছিল। প্রাচীরের বারোটি ফটক ছিল। নগরের বারোটি ফটকে বারোজন স্বর্গদূত ছিল। সেই দ্বারগুলির ওপর ইস্রায়েলের বারো গোষ্ঠীর নাম লেখা ছিল। 13 পূর্বদিকে তিনটি দরজা, উত্তরদিকে তিনটি দরজা, দক্ষিণ দিকে তিনটি দরজা ও পশ্চিম দিকে তিনটি দরজা। 14 নগরের সেই প্রাচীরের বারোটি ভিত পাথর ছিল, আর সেই সব ভিত পাথরের ওপর মেষশাবকের বারোজন প্রেরিতের নাম লেখা আছে।
15 স্বর্গদূত, যিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাঁর হাতে ঐ নগরটি, তার সব দরজা ও তার প্রাচীর মাপবার জন্য সোনার মাপকাঠি ছিল। 16 ঐ নগরটি ছিল চারকোণা, দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে সমান। তিনি নগরটি সেই মাপকাঠি দিয়ে মাপলে দেখা গেল তা দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ও উচ্চতায় সমান এবং সেই মাপ হল 1500 মাইল। 17 পরে স্বর্গদূত নগরের প্রাচীর মাপলে দেখা গেল তা 144 হাত উঁচু। স্বর্গদূত মানুষের হাতের মাপ অনুযায়ী তা মাপলেন, এই মাপই তিনি ব্যবহার করেছিলেন। 18 প্রাচীরের গাঁথনি সূর্যকান্তমণির এবং নগরটি ছিল শুদ্ধ সোনায় তৈরী, যেটা ছিল কাঁচের মতো স্বচ্ছ। 19 নগরের প্রাচীরের ভিত পাথরগুলিতে সব ধরণের মূল্যবান মণি খচিত ছিল। প্রথমটি সূর্যকান্ত মণির, দ্বিতীয়টি নীলকান্ত মণির, তৃতীয়টি তাম্রমণির, চতুর্থটি পান্নামণির, পঞ্চমটি বৈদুর্য্যমণির; 20 ষষ্ঠটি লাল বর্ণ মণির, সপ্তমটি স্বর্ণ মণির, অষ্টমটি ফিরোজা মণির, নবমটি পোখরাজ মণির, দশমটি হলুদ সবুজ বর্ণ মণির, একাদশতমটি রক্তাভ ফলসাবর্ণ মণির, দ্বাদশতমটি জামীরা মণির।
21 বারোটি সিংহদ্বার হচ্ছে বারোটি মুক্তা, একটি দ্বার এক একটি মুক্তার তৈরী। নগরের সড়কটি কাঁচের মতো স্বচ্ছ খাঁটি সোনার তৈরী।
22 সেই নগরে আমি কোন মন্দির দেখলাম না, কারণ প্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান ও মেষশাবক হচ্ছেন সেই নগরের মন্দির। 23 নগরটি আলোকিত করার জন্য সূর্য ও চাঁদের প্রয়োজন ছিল না, কারণ ঈশ্বরের মহিমা তা আলোকময় করে, আর মেষশাবকই তার আলোস্বরূপ। 24 এর আলোতে সমস্ত জাতি চলাফেরা করবে, আর জগতের রাজারা তাদের প্রতাপ সেখানে নিয়ে আসবে। 25 ঐ নগরের সিংহদ্বারগুলি কোন দিন কখনও বন্ধ হবে না, কারণ সেখানে কখনও কোন রাত্রি হবে না,
26 আর জাতিবৃন্দের সমস্ত প্রতাপ ও ঐশ্বর্য সেই নগরের মধ্যে আনা হবে। 27 অশুচি কোন কিছু শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। কোন মানুষ যে ঘৃন্য কাজ করে অথবা যে অসৎ সে কখনও নগরে প্রবেশ করতে পারবে না। কেবল যাদের নাম মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লেখা আছে শুধু তারাই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International