Old/New Testament
ঈশ্বর তাঁর লোকেদের প্রত্যাবর্তন চান
1 বেরিখিয়ের পুত্র সখরিয় প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেয়েছিলেন। এটা ঘটেছিল পারস্যের রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের অষ্টম মাসে (সখরিয় ছিলেন বেরিখিয়ের পুত্র, যিনি ছিলেন ভাববাদী ইদ্দোর পুত্র) বার্তাটি ছিল:
2 প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষের উপর খুব ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। 3 সুতরাং তোমরা অবশ্যই লোকেদের এই কথাগুলি বলবে। প্রভু বলেন, “তোমরা আমার কাছে ফিরে এস, তাহলে আমিও তোমাদের কাছে ফিরব।” সর্বশক্তিমান প্রভুই এই কথা বলেছেন।
4 প্রভু বলেছেন, “তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের মতো হয়ো না। অতীতে, ভাববাদীরা তাদের কাছে বলতেন, ‘সর্বশক্তিমান প্রভু চান তোমরা তোমাদের অসৎ জীবনযাপনের ধারা বদলে দাও আর কোন মন্দ কাজ করো না!’ কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরা আমার কথা শোনেনি।” প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন।
5 ঈশ্বর বলেছেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষরা আজ আর নেই। সেই ভাববাদীরা চিরকালের জন্য বেঁচে থাকেনি। 6 ঐ ভাববাদীরা আমার দাস ছিল। আমার বিধি ও শিক্ষামালা সম্বন্ধে তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে জানাবার জন্য আমি তাদের ব্যবহার করতাম। অবশেষে, তোমাদের পূর্বপুরুষরা শিক্ষা গ্রহণ করে বলেছিল, ‘প্রভু হলেন সর্বশক্তিমান, তিনি যা বলেছিলেন তাই-ই করেছেন। আমাদের মন্দ কাজের জন্য ও অসৎভাবে জীবনযাপনের জন্য তিনি আমাদের শাস্তি দিয়েছেন।’ এইভাবে তারা ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিল।”
চারটি ঘোড়া
7 রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের একাদশতম মাসের 24তম দিনে সখরিয় প্রভুর কাছ থেকে আরেকটি বার্তা পেলেন। বার্তাটি এইরকম ছিল:
8 রাত্রে আমি একটি দর্শন পেলাম। সেই দর্শনে আমি একটি লোককে একটা লাল রঙের ঘোড়ার ওপর দেখলাম। সে উপত্যকায় কিছু সুগন্ধ পত্রবিশিষ্ট গুল্মের ঝোপের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। তার পেছনে ছিল লাল, খয়েরী এবং সাদা রং এর ঘোড়া। 9 আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মহাশয়, এই ঘোড়াগুলি কিসের জন্য?”
তখন যে দেবদূত আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি বললেন, “আমি তোমায় দেখাচ্ছি এই ঘোড়াগুলো কিসের জন্য।”
10 তখন লোকটি সুগন্ধী ঝোপগুলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল, “পৃথিবীর চারিদিকে এদিক ওদিক যাবার জন্য প্রভু এই ঘোড়াগুলোকে পাঠিয়েছেন।”
11 তখন সুগন্ধী ঝোপঝাড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা প্রভুর দূতকে তারা বলল, “আমরা পৃথিবীর এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছি এবং লক্ষ্য করেছি যে সমগ্র পৃথিবী শান্ত ও স্থির।”
12 তখন প্রভুর দূত বললেন, “প্রভু, জেরুশালেম ও যিহূদার শহরগুলোকে স্বস্তি দিতে আপনি আর কত দেরী করবেন? আপনি 70 বছর ধরে এই শহরগুলোর প্রতি আপনার ক্রোধ দেখিয়েছেন।”
13 তখন প্রভু আমার সঙ্গে কথোপকথনরত দেবদূতটিকে অনেক সদয় ও স্বস্তিপূর্ণ কথা বললেন। 14 তখন প্রভুর দূত আমাকে লোকেদের এই কথা বলতে বললেন:
প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন:
“জেরুশালেম ও সিয়োনের জন্য আমার একটি গভীর অনুভূতি আছে।
15 এবং যে জাতিরা নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করে, তাদের প্রতি আমি অতিশয় ক্রোধান্বিত।
আমি যখন তেমন রেগে ছিলাম না,
তখন আমি ঐ জাতিদের ব্যবহার করেছিলাম আমার লোকদের শাস্তি দিতে।
কিন্তু ঐ জাতিগুলো ক্ষতি সাধন করেছে।”
16 তাই প্রভু বলেন,
“আমি জেরুশালেমে ফিরে আসব এবং তাকে স্বস্তি দেব।”
প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
“জেরুশালেমকে আবার গড়া হবে
আর সেখানে আমার গৃহও নির্মাণ করা হবে।”
17 দেবদূতরা বলল লোকদের বল:
“প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
‘আমার শহর আবার ধনী হয়ে উঠবে।
আমি সিয়োনকে স্বস্তি দেব।
আমি জেরুশালেমকে আবার আমার বিশেষ শহর হিসাবে মনোনীত করব।’”
চারটি শিং আর চারজন কারীগর
18 তখন আমি উপরের দিকে তাকিয়ে চারটে শিং দেখতে পেলাম। 19 তারপর আমি আমার সঙ্গে আলাপচারী সেই দূতকে জিজ্ঞেস করলাম, “এই শিংগুলির অর্থ কি?”
তিনি আমাকে বললেন, “এই শিংগুলি হল সেই শিং যারা ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল।”
20 প্রভু আমায় চারজন কারিগর দেখালেন। 21 আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “ঐ চারজন কারিগর কি করতে আসছে?”
তিনি বললেন, “এই শিংগুলি সেই জাতিগুলির প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা যিহূদার লোকদের আক্রমণ করেছিল এবং জোর করে তুলে তাদের নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তারা তাদের বিদেশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এই চারজন কারিগর ঐ চারটি শিংকে ভয় দেখাতে এবং তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে এসেছে!”
জেরুশালেম মাপা হল
2 তারপর আমি চোখ তুলে চেয়ে দেখলাম মাপার ফিতে হাতে একজন মানুষ। 2 আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
তিনি আমায় বললেন, “আমি জেরুশালেম মেপে দেখতে চাই তা দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে কতখানি।”
3 তখন যে দেবদূতটি আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি চলে গেলেন এবং আরেকটি দেবদূত তাঁর সঙ্গে কথা বলবার জন্য এগিয়ে এলেন। 4 তিনি তাকে বললেন, “দৌড়ে গিয়ে সেই যুবকদের বল যে জেরুশালেম মাপার পক্ষে অতিশয় বড়। তার কাছে গিয়ে এই কথাগুলো বল:
‘জেরুশালেম হবে প্রাচীরবিহীন একটি শহর
কারণ জেরুশালেমে বসবাসকারী মানুষ ও পশুর সংখ্যা হবে অনেক।’
5 প্রভু বলেছেন,
‘আমি শহরের চারধারে একটি আগুনের প্রাচীর তৈরী করে তাকে রক্ষা করব।
এবং সেই শহরের মহিমা আনয়ণ করবার জন্য আমি সেখানে বাস করব।’”
ঈশ্বর তাঁর লোকেদের বাড়ীতে আহবান করেছেন
6 প্রভু বলেছেন,
“তাড়াতাড়ি কর,
উত্তরে অবস্থিত দেশটি ত্যাগ কর!
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আমি তোমার লোকেদের
চতুর্দ্দিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।
7 ওহে সিয়োনের লোকেরা, যারা বাবিলে বাস করছ,
তোমাদের প্রাণ বাঁচাতে এ জায়গা ছেড়ে যাও এবং ঐ শহর ছেড়ে পালাও!”
সর্বশক্তিমান প্রভুই এই কথা বলেছেন।
তিনি আমাকে সেই জাতিগুলির মধ্যে পাঠিয়েছেন যারা তোমাদের লুঠ করেছিল।
তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাদের কাছে সম্মান আনতে।
8 “কারণ তোমাদের আঘাত করা,
ঈশ্বরের চোখের মণিকে আঘাত করবার তুল্য।
9 বাবিলের লোকরা আমার লোকদের কারারুদ্ধ করেছিল
এবং তাদের ক্রীতদাস বানিয়েছিল।”
কিন্তু আমি তাদের আঘাত করলে তারা আমার লোকেদের দাস হয়ে যাবে।
তখন তোমরা জানবে যে সর্বশক্তিমান প্রভুই আমায় পাঠিয়েছেন।
10 প্রভু বলেছেন,
“সিয়োন, আনন্দ করো এবং সুখী হও!
কারণ আমি আসছি এবং আমি তোমার শহরে বাস করব।
11 সেই সময়ে বহু জাতি
আমার কাছে আসবে।
তারা আমার লোক হবে
এবং আমি তোমার শহরে বাস করব।”
আর তুমি জানবে যে সর্বশক্তিমান প্রভু
আমায় তোমার কাছে পাঠিয়েছেন।
12 প্রভু জেরুশালেমকে তাঁর বিশেষ শহর হিসেবে আবার মনোনীত করবেন।
যিহূদা হবে পবিত্র ভূমিতে তাঁর অংশ।
13 প্রত্যেকে নীরব হও!
প্রভু তাঁর পবিত্র আবাস হতে আসছেন।
মহাযাজক
3 দেবদূতটি আমাকে মহাযাজক যিহোশূয়কে দেখালেন। যিহোশূয় প্রভুর দূতের সামনে দাঁড়ালেন আর শয়তান তাঁর ডানদিকে দাঁড়াল। শয়তান যিহোশূয়কে মন্দ কাজ করবার জন্য দোষারোপ করেছিল। 2 তখন প্রভুর দূত বললেন, “প্রভু তোমাকে ভর্ৎসনা করছেন এবং তিনি তোমাকে তিরস্কার করতে থাকবেন! প্রভু জেরুশালেমকে তাঁর বিশেষ শহর হিসেবে মনোনীত করেছেন। আগুন থেকে টেনে বার করা একটি জ্বলন্ত কাঠির মত তিনি ঐ শহর রক্ষা করেছেন।”
3 যিহোশূয় সেই দেবদূতটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যিহোশূয়ের পরণে ছিল নোংরা কাপড়-চোপড়। 4 তখন দেবদূতটি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অপর দেবদূতদের বললেন, “যিহোশূয়র ঐ মলিন বস্ত্র খুলে নাও।” তখন সেই দেবদূত যিহোশূয়কে বললেন, “এখন আমি তোমার পাপ দূর করে দিয়েছি এবং আমি তোমাকে নতুন আধিকারিক বস্ত্রে সাজাব।”
5 তখন আমি বললাম, “ওর মাথায় একটা পরিষ্কার শিরস্ত্রাণ পরিয়ে দাও।” সুতরাং, যখন প্রভুর দূত কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন, তারা পরিষ্কার জামাকাপড় ও শিরস্ত্রাণ দিয়ে তাকে সজ্জিত করলেন। 6 তখন যিহোশূয়কে দূত বলল,
7 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
“আমি যা বলি তা শোন
এবং আমার উপদেশ মত জীবনযাপন কর।
তাহলে তুমি আমার মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক হবে
এবং মন্দির প্রাঙ্গণের যত্ন নেবে।
এবং কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ দেবদূতদের মত
তুমিও মন্দিরের ভেতর তোমার ইচ্ছানুযায়ী যেতে পারবে।
8 ওহে মহাযাজক যিহোশূয়
এবং তোমার সামনে যে মহাযাজকরা বসে আছে, তোমরা সবাই দয়া করে শোন।
অদূর ভবিষ্যতে আমার বিশেষ দাসকে যখন আমি আনব তখন কি ঘটবে তা দেখাবার জন্য এই লোকরা তার উদাহরণস্বরূপ।
তাকে ‘শাখা’ এই নামে ডাকা হয়।
9 দেখ, আমি যিহোশূয়র সামনে একটা বিশেষ ধরণের পাথর রাখছি।
ঐ পাথরটার সাতটা দিক রয়েছে।
আমি একটি বিশেষ বার্তা তাতে খোদাই করব।
এটাই দেখাবে যে আমি একদিনে এই দেশের প্রতিটি পাপ দূর করব।”
10 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন,
“সেই সময় লোকরা
তাদের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে একত্রে বসবে।
তারা একে অপরকে ডুমুর গাছ ও দ্রাক্ষালতার তলায় বসবার জন্য নিমন্ত্রণ জানাবে।”
বাতিদান ও দুটি অলিভ গাছ
4 যে দেবদূতটি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি আমাকে জাগাবার জন্য আমার কাছে এলেন। সেই মুহূর্তে আমি ছিলাম ঘুম থেকে সদ্য জেগে ওঠা একজন মানুষের মত। 2 তখন দেবদূত আমায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি দেখতে পাচ্ছো?”
আমি বললাম, “আমি একটি নিরেট সোনার বাতিদান দেখতে পাছি। সেই বাতিদানে সাতটি বাতি রয়েছে এবং বাতিদানের ওপরে রয়েছে একটি পাত্র। সেই পাত্র থেকে সাতটা ফাঁপা নল বেরিয়ে এসেছে এবং প্রত্যেকটি বাতিতে গিয়েছে। নলগুলি পাত্র থেকে বাতিতে তেল বহন করে। 3 পাত্রটির পাশে দুটি অলিভ গাছ, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে। এই গাছেরা বাতির জন্য তেল উৎপন্ন করে।” 4 তখন আমি আমার সঙ্গে যে দেবদূতটি কথা বলছিলেন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “মহাশয়, এসবের অর্থ কি?”
5 দেবদূতটি বললেন, “এই জিনিসগুলো কি তা কি তুমি জানো না?”
আমি বললাম, “জানি না মহাশয়।”
6 তিনি বললেন, “এ হল সরুব্বাবিলের কাছে প্রভুর বার্তা: সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন, ‘তোমার শক্তি ও পরাক্রম তোমায় রক্ষা করবে না। তোমার সাহায্য আসবে আমার আত্মা থেকে।’ 7 ওহে উঁচু পর্বত, তুমি সরুব্বাবিলের কাছে কিছুই নও। তার সামনে তুমি একটি সমতলভূমির মত। সে মন্দিরটি গড়বে এবং যখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাথরটি সেখানে স্থাপন করা হবে, তখন লোকেরা চেঁচিয়ে উঠবে, ‘চমৎকার! অপূর্ব!’”
8 প্রভুর বার্তা আমাকে আরো বলল, 9 “সরুব্বাবিল আমার মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করবে। সে মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ করবে। তখন তুমি বুঝতে পারবে যে সর্বশক্তিমান প্রভু আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন। 10 শুরুতে কাজ অল্প হলেও লোকে তাতে লজ্জিত হবে না আর তারা ওলোন দড়ি হাতে সরুব্বাবিলকে দেখে ওরা খুব খুশী হবে, যে সমাপ্ত হওয়া নির্মাণ কাজ পরীক্ষা করছে এবং মাপ-জোক করছে। পাথরের যে সাতটি ধার তুমি এখন দেখলে, তা প্রভুর চক্ষুস্বরূপ—যা সব দিকে নজর রেখেছিল। পৃথিবীর সব কিছুই তারা দেখতে পায়।”
11 তখন আমি (সখরিয়) তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাতিদানের ডান ও বাম দিকের জলপাই গাছগুলি কি বোঝায়?” 12 আমি তাঁকে আরও বললাম, “সোনার নল দুটির পাশে আমি জলপাই গাছের দুটি শাখা দেখলাম। যেগুলোর মধ্যে দিয়ে সোনালী রঙের তেল বইছে—সেগুলিরই বা অর্থ কি?”
13 তখন দূত আমাকে বললেন, “তুমি কি জানো না এসবের অর্থ কি?”
আমি বললাম, “মহাশয় জানি না।”
14 তিনি বললেন, “এর অর্থ হল এরা সেই দুই ব্যক্তিকে যারা সমস্ত পৃথিবীর প্রভুকে সেবা করার জন্য মনোনীত হয়েছে, তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে।”
বাবিল ধ্বংস হল
18 এইসব ঘটনার পর আমি আর একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তিনি মহাপরাক্রান্ত স্বর্গদূত, তাঁর জ্যোতি সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলল। 2 তিনি প্রবল শব্দে চেঁচিয়ে উঠলেন:
“পতন হল!
মহানগরী বাবিলের পতন হল!
সে ভূতের আবাসে পরিণত হয়েছে।
সেই নগরী হয়েছে সব রকমের অশুচি আত্মার আবাস।
সে যতো অশুচি পাখীদের বাসা এবং যতো নোংরা
ও ঘৃন্য পশুদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
3 পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তার অসৎ যৌন পাপের মদিরা
ও ঈশ্বরের রোষ মদিরা পান করেছে।
পৃথিবীর রাজারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করেছে;
আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার অসংযত বিলাসিতার সুবাদে ধনবান হয়ে উঠেছে।”
4 এরপর আমি স্বর্গ থেকে আর একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, সে বলছে:
“হে আমার প্রজারা, ওখান থেকে বেরিয়ে এস,
তোমরা যেন ওর পাপের ভাগী না হও;
আর ওর প্রাপ্য আঘাত যেন তোমাদের ওপর না আসে।
5 কারণ ওর পাপ স্তূপীকৃত হয়ে গগণচুম্বী হয়েছে;
আর ঈশ্বর ওর সব অপরাধ স্মরণ করেছেন।
6 সে অপরের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেছে, তোমরাও তার প্রতি সেরূপ ব্যবহার কর।
সে যেমন কাজ করেছে, তোমরা তার দ্বিগুণ প্রতিফল তাকে দাও।
অপরের জন্য পানপাত্রে সে যে পরিমাণ মেশাতো
তোমরা তার জন্য সেই পাত্রে দ্বিগুণ মেশাও।
7 সে (বাবিল) যত অহঙ্কার ও বিলাসিতায় জীবন কাটাতো
তোমরা তাকে তত যন্ত্রণা ও মনোকষ্ট দাও।
কারণ সে নিজের বিষয়ে বলত, ‘আমি রাণী, রাণীর মতোই সিংহাসনে বসে আছি।
আমি বিধবা নই,
আর আমি কখনই দুঃখ পাব না।’
8 অতএব এক দিনের মধ্যেই তার ওপর এই আঘাত আসবে;
মৃত্যু, শোক ও দুর্ভিক্ষ আর আগুনে
পুড়িয়ে তাকে ধ্বংস করা হবে।
কারণ প্রভু ঈশ্বর যিনি তার বিচার করেছেন তিনি সর্বশক্তিমান।
9 “জগতের যে সব রাজারা তার সঙ্গে যৌন পাপে লিপ্ত হয়েছে ও বিলাসে কাটিয়েছে, তারা তাকে জ্বলতে দেখে ও তার থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে বিলাপ ও হাহাকার করবে।” 10 তার যন্ত্রণার ভয়াবহতা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বলবে:
‘হায়! হায়! হে মহান নগরী!
ও শক্তিশালী বাবিল নগরী!
এক ঘন্টার মধ্যেই তোমার ওপর শাস্তি নেমে এল!’
11 “আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার (বাবিলের) জন্য কাঁদছে ও হাহাকার করছে, কারণ তাদের বাণিজ্য দ্রব্য আর কেউ কেনে না। 12 তাদের বাণিজ্যদ্রব্যগুলি ছিল: সোনা, রূপো, মণি, মুক্তা, মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়, রেশমের কাপড়, লাল রঙের কাপড়, সব রকমের চন্দন কাঠ, হাতির দাঁতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, মূল্যবান কাঠ, পিতলের, কাঁসার, লোহার ও মার্বেল পাথরের সব রকমের পাত্র, 13 আর দারুচিনি, মশলা, ধূপ, সুগন্ধি নির্যাস, মস্তকি, গুগ্গুল, মদ ও জলপাইয়ের তেল, ময়দা, আটা, গরু, মেষ, ঘোড়ার গাড়ী আর মানুষের দেহ এবং প্রাণও। সেই ব্যবসায়ীরা কেঁদে কেঁদে বলবে:
14 ‘হে বাবিল, যে সব ভাল ভাল জিনিসের ওপর তোমার মন পড়ে ছিল তার সবই তোমার কাছ থেকে চলে গেছে।
তোমার সব রকমের বিলাসিতা ও শোভা প্রাচুর্য্য সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।
তুমি তা আর কখনই দেখতে পাবে না।’
15 “ঐ সব জিনিসের ব্যবসায়ীরা তার ধনে ধনী হয়েছিল, তারা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদবে, আর হাহাকার করে বলবে:
16 ‘হায়! হায়! হায় মহানগরী!
সে মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়
ও লাল রঙের কাপড় পরত।
সে সোনা, মণি, মুক্তা খচিত গয়না পরত।
17 এক ঘন্টার মধ্যে তার সেই মহাসম্পদ ধ্বংস হল!’
“আর প্রত্যেক জাহাজের প্রধান কর্মচারীরা, জলপথের যাত্রীরা, নাবিকরা ও সমুদ্রেই জীবিকা যাদের, তারা সকলে বাবিল থেকে সরে দাঁড়ালো। 18 জ্বলন্ত বাবিলের ধোঁয়া দেখে তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আর কোন নগর এই মহানগরীর মত ছিল না!’ 19 তারা সকলে নিজেদের মাথায় ধুলো ছিটিয়ে হাহাকার করে বলতে লাগল:
‘হায়! হায়! ঐ মহানগরীর কি দুর্দশাই না হল!
যার সম্পদে সমুদ্রগামী জাহাজের কর্তারা ধনবান হত,
এক ঘন্টার মধ্যে সে ধ্বংস হয়ে গেল।
20 এই জন্য হে স্বর্গ, উল্লসিত হও!
হে ঈশ্বরের পবিত্র লোকরা! হে প্রেরিতরা আর ভাববাদীরা, উল্লসিত হও!
কারণ সে তোমাদের প্রতি যে অন্যায় করেছে, ঈশ্বর তার শাস্তি তাকে দিয়েছেন।’”
21 পরে এক পরাক্রান্ত স্বর্গদূত খুব বড় যাঁতার মতো পাথর তুলে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে বললেন:
“মহানগরী বাবিলকে এই পাথরটির মতো ছুঁড়ে ফেলা হবে;
আর চিরকালের মতো সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
22 তোমার মধ্যে বীণাবাদক, বাঁশীবাদক, তূরীবাদক ও গায়কদের গান-বাজনা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার মধ্যে আর কখনও কোন শিল্পকারকে পাওয়া যাবে না,
গম ভাঙার যাঁতার শব্দ আর কখনও শোনা যাবে না।
23 তোমার মধ্যে আর কখনও প্রদীপ জ্বলবে না,
বর-কণের কথাবার্তা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত হয়েছিল।
তোমার তন্ত্র-মন্ত্রের জাদুতে সমস্ত জাতি ভ্রান্ত হয়েছিল।
24 বাবিল সমস্ত ভাববাদী, ঈশ্বরের পবিত্র লোক,
আর পৃথিবীতে যত লোককে হত্যা করা হয়েছে, তার রক্তপাতের দোষে দোষী।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International