Old/New Testament
মন্দির নির্মাণের সময় এল
1 দারিয়াবস রাজার রাজত্বকালের দ্বিতীয় বছরের ষষ্ঠ মাসের প্রথম দিনে প্রভু হগয় ভাববাদীর মধ্য দিয়ে সরুব্বাবিলের ও যিহোশূযের কাছে কথা বললেন। সরুব্বাবিল ছিলেন শল্টীয়েলের পুত্র এবং যিহূদার রাজ্যপাল এবং যিহোশূয় ছিলেন মহাযাজক। এই হল সেই বার্তা। 2 সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন, “যিহূদার লোকে বলে যে প্রভুর মন্দির পুনঃনির্মাণ করার সময় এখনও আসেনি।”
3 হগয় আবার প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেলেন। 4 “তোমরা কি মনে কর তোমাদের সুন্দর বাড়িতে বাস করার এইটাই সময়, যখন কিনা প্রভুর এই মন্দির ধ্বংসস্থান হয়ে রয়েছে? 5 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন, ‘নিজের পথ সম্পর্কে সতর্কভাবে চিন্তা কর! 6 তোমরা অনেক বীজ বপন করেছ বটে কিন্তু অল্পই ফসল তুলেছ। তোমরা খাও-দাও কিন্তু তৃপ্ত হও না। তোমরা পান করছ বটে কিন্তু মত্ত হচ্ছ না। তোমরা কাপড় পরছ বটে কিন্তু উষ্ণ হচ্ছ না। যে টাকা উপায় করে সে ছেঁড়া থলিতে টাকা রাখছে।’”
7 সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন, “তোমাদের ব্যবহার ও অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে চিন্তা করো! 8 ওঠ, পাহাড়ে গিয়ে কিছু কাঠ নিয়ে এসে আমার মন্দির তৈরী করো। প্রভু বলেছিলেন, ‘তাহলে আমি মন্দির নিয়ে খুশী হব এবং তাতে সম্মানিত হব।’”
9 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন, “তোমরা প্রভুর ফসলের আশা করেছিলে কিন্তু অল্পই সংগ্রহ করলে। আর সেই অল্প ফসল তোমরা তোমাদের ঘরে আনবার পর আমি তা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলাম। এর কারণ কি? সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন, এর কারণ আমার গৃহ ধ্বংসের মধ্যে পড়ে আছে যখন কি না তোমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের বাড়ী নিয়ে ব্যস্ত। 10 এই জন্য তোমাদেরই কারণে আকাশ বৃষ্টি দেবে না এবং ভূমি ফসল উৎপন্ন করবে না।”
11 প্রভু বলেন, “আমি ভূমি ও পাহাড়কে আজ্ঞা দিচ্ছি যেন তা শুকিয়ে যায়। শস্য, নতুন দ্রাক্ষারস, অলিভ তেল এবং পৃথিবীতে যা কিছু উৎপন্ন হয় সে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। লোকজন ও পশুরা দুর্বল হয়ে পড়বে। লোকদের সমস্ত কঠোর পরিশ্রম ব্যর্থ হবে।”
নতুন মন্দিরে কাজ শুরু হল
12 প্রভু শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিলের সঙ্গে এবং যিহোষাদকের পুত্র, মহাযাজক যিহোশূয়র সঙ্গে কথা বলার জন্য হগয়কে পাঠিয়েছিলেন। এই লোকরা এবং সমস্ত জনগণ তাদের ঈশ্বর প্রভুর কন্ঠ এবং ভাববাদী হগয়ের কথা শুনেছিল। লোকরা তাদের প্রভু ঈশ্বরের প্রতি ভয় ও সম্মান দেখালো।
13 হগয় ছিলেন একজন দূত যাঁকে প্রভু ঈশ্বর জনগণের কাছে তাঁর বার্তা পৌঁছে দেবার জন্য বার্তাবাহক হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। প্রভু বলেন, “আমি তোমাদের সঙ্গে আছি!”
14 পরে প্রভু ঈশ্বর শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল যিনি যিহূদার অধ্যক্ষ ছিলেন তাকে, যিহোষাদকের পুত্র যিহোশূয় মহাযাজককে ও লোকদের আত্মাকে উত্তেজিত করলেন। তাই তারা এলো এবং তাদের ঈশ্বর, প্রভু সর্বশক্তিমানের মন্দির গঠনের কাজ শুরু করল। 15 দারিয়াবস রাজার রাজত্ব কালের দ্বিতীয় বছরের ষষ্ঠ মাসের 24তম দিনে তারা এই কাজ করতে আরম্ভ করেছিল।
প্রভু লোকদের উৎসাহিত করলেন
2 প্রভু তাঁর ভাববাদী হগয়কে সপ্তম মাসের 21তম দিনে এই বার্তা দিয়েছিলেন। 2 “যিহূদার অধ্যক্ষ শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিলের সঙ্গে যিহোষাদকের পুত্র মহাযাজক যিহোশূয়র সঙ্গে এবং সমস্ত লোকের সঙ্গে কথা বল। তাদের বল: 3 ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে রয়েছে যে এই মন্দিরকে তার পূর্বের গৌরব মণ্ডিত অবস্থায় দেখেছিলে? তোমাদের কি মনে হয়? প্রথম মন্দিরটির তুলনায় এই মন্দিরটি কি দেখতে কিছুই নয়? 4 কিন্তু এখন প্রভু বলেন, “সরুব্বাবিল সাহস হারিয়ো না, শক্ত হও।” যিহোষাদকের পুত্র মহাযাজক যিহোশূয়, “সাহস হারিয়ো না, শক্ত হও।” এই দেশের সমস্ত লোককে প্রভু এই কথা বলেন, “সাহস হারিয়ো না, শক্ত হও। এই কাজ করে যাও কারণ আমি তোমাদের সঙ্গে আছি!” প্রভু সর্বশক্তিমান এই কথা বলেন!
5 “‘তোমরা যখন মিশর দেশ ত্যাগ করেছিলে সেই সময় আমি তোমাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলাম। আর আমি আমার সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছি। আমার আত্মা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। সুতরাং ভয় পেও না।’ 6 কারণ প্রভু সর্বশক্তিমান এই কথাগুলো বলছেন! ‘কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমি আকাশ ও পৃথিবীকে নাড়া দেব। আমি সমুদ্র ও শুকনো জমিকেও কাঁপিয়ে তুলব। 7 আমি প্রত্যেকটি জাতিকে নাড়া দেব এবং তারা সমস্ত জাতিদের সমস্ত সম্পদ নিয়ে তোমার কাছে আসবে। তখন আমি এই মন্দির মহিমায় পূর্ণ করব।’ প্রভু সর্বশক্তিমান এইসব কথা বলছেন। 8 ‘সমস্ত রূপো আমারই, সোনাও আমার!’ সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন। 9 ‘এই মন্দিরটির গৌরব প্রথম মন্দিরের গৌরবের চেয়ে অনেক বেশী হবে। সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেছেন।’ এই স্থানে আমি শান্তি প্রদান করব, সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেছেন।”
কাজ শুরু হয়েছে—আশীর্বাদও আসবে
10 রাজা দারিয়াবসের রাজত্বকালের দ্বিতীয় বছরের নবম মাসের 24তম দিনে প্রভু ভাববাদী হগয়কে এই বার্তা দিয়েছিলেন। 11 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন, “এইগুলির সম্বন্ধে আইন কি বলে সেটা যাজকদের জিজ্ঞাসা কর। 12 ‘যদি কোন লোক তার কাপড়ের ভাঁজে মাংস বহন করে এবং তার পোষাক কিছু পাঁউরুটি, রান্না করা খাবার, দ্রাক্ষারস, তেল অথবা অন্য কোন খাদ্য স্পর্শ করে তাহলে কি এই জিনিষগুলি পবিত্র হয়ে যাবে?’”
যাজকরা উত্তরে বললেন, “না।”
13 তখন হগয় বললেন, “যদি কোন অশুচি ব্যক্তি এইসব জিনিস স্পর্শ করে তবে তা কি অশুচি হয়?”
আর যাজকরা উত্তরে বললেন, “তা অশুচি হয়।”
14 তখন হগয় বললেন, “প্রভু বলেন, ‘এই লোকরা এবং এই জাতি আমার সামনে পবিত্র নয়। তারা যা কিছু কাজ করে এবং যা কিছু মন্দিরে আনে সেগুলোও অশুদ্ধ।
15 “‘এখন, আগে যা ঘটেছিল সেগুলোর সম্বন্ধে ভাবো। প্রভুর মন্দিরে একটি পাথরের ওপর আর একটি স্থাপন করবার আগের সময়ের কথা ভাবো। 16 তখন তোমাদের কেমন অবস্থা ছিল? যখন একজন লোক 20 কাঠা পরিমাণের জন্য শস্যের স্তুপের কাছে এসেছিল তখন সে শুধু 10 কাঠা পেতে সমর্থ হয়েছিল। যখন একটি লোক 50 বোয়েম দ্রাক্ষারসের জন্য দ্রাক্ষারসের জালার কাছে এসেছিল, সেখানে ছিল শুধু 20 বোয়েম। 17 কেন? কারণ আমি তোমাদের শাস্তি দিয়েছিলাম। তোমরা তোমাদের হাত দিয়ে যে সব জিনিষ তৈরী করেছিলে সেগুলো ধ্বংস করবার জন্য আমি রোগসমূহ ও শিলাবৃষ্টি পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তবু তোমরা আমার কাছে ফিরে আসোনি।’ প্রভু এগুলি বলেছিলেন।
18 “প্রভু বলেন, ‘আজ নবম মাসের 24তম দিন। তোমরা প্রভুর মন্দিরের ভিত স্থাপনের কাজ শেষ করেছ। এবার লক্ষ্য কর আজকের দিনের পর থেকে কি ঘটে। 19 তোমাদের গোলায় কি কিছু শস্য অবশিষ্ট আছে? না। দ্রাক্ষালতা, ডুমুরগাছ, বেদানা ও অলিভ গাছের দিকে দেখ, তারা কি ফল দিচ্ছে? না। কিন্তু আজকের দিন থেকে আমি তোমাদের আশীর্বাদ করব!’”
20 মাসের 24তম দিনে প্রভুর কাছ থেকে হগয়ের কাছে আর একটি বার্তা এল। এই সেই বার্তা: 21 “যিহূদার অধ্যক্ষ সরুব্বাবিলের কাছে গিয়ে বল যে আমি আকাশ ও পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তুলব। 22 আমি অনেক রাজা ও তাদের রাজ্যকে উল্টে ফেলব। আমি ঐসব রাজ্যের লোকদের শক্তিকেও খর্ব করব। আমি তাদের রথ ও রথের আরোহীদের ধ্বংস করব। তাদের যুদ্ধের ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ারীকেও আমি ধ্বংস করব। সেই সমস্ত সৈন্যরা এখন পরস্পরের মিত্র কিন্তু তারাই একে অপরের বিরোধিতা করে তরবারি দিয়ে একে অপরকে হত্যা করবে।” 23 প্রভু সর্বশক্তিমান এইসব কথা বলেন, “শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল, তুমি আমার দাস। আমি তোমায় মনোনীত করেছি। সেই সময়ে আমি তোমাকে মোহরাঙ্কিত আংটির মত করে দেব। আমি যে এসব করেছি তার প্রমাণ তুমিই হবে।”
সর্বশক্তিমান প্রভু এইসব কথা বলেন।
পশুর ওপরে স্ত্রীলোক
17 এরপর ঐ সাতটি বাটি যাদের হাতে ছিল, সেই সাতজন স্বর্গদূতদের মধ্যে একজন এসে আমায় বললেন, “এস, বহু নদীর ওপরে যে মহাবেশ্যা বসে আছে, আমি তোমাকে তার কি শাস্তি হবে তা দেখাবো। 2 তার সঙ্গে পৃথিবীর রাজারা যৌন পাপ করেছে, আর পৃথিবীর লোকরা তার অসৎ যৌন ক্রিয়ার মদিরা পান করে মত্ত হয়েছে।”
3 তখন তিনি আত্মার পরিচালনায় আমাকে প্রান্তরের মধ্যে নিয়ে গেলেন। সেখানে আমি একটি নারীকে দেখলাম, সে লাল রঙের এক পশুর ওপর বসে আছে। সেই পশুটির সাতটা মাথা ও দশটা শিং, তার সারা গায়ে ঈশ্বর নিন্দা সূচক নাম লেখা ছিল। 4 সেই নারীর পরনে ছিল বেগুনী ও লাল রঙের বসন, সোনা ও বহুমূল্য মণি-মুক্তা খচিত অলঙ্কার তার অঙ্গে, তার হাতে সোনার একটি পানপাত্র ছিল, ঘৃন্য দ্রব্যে ও তার যৌন পাপ মালিন্যে তা পূর্ণ। 5 তার কপালে রহস্যপূর্ণ এক নাম লেখা আছে:
মহতী বাবিল,
পৃথিবীর বেশ্যাদের
এবং পৃথিবীর যাবতীয় ঘৃন্য জিনিসের জননী।
6 আমি দেখলাম, সেই নারী ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের রক্তে মাতাল হয়ে আছে। এই পবিত্র লোকরাই যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিল।
সেই নারীকে দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। 7 সেই স্বর্গদূত আমায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি অবাক হচ্ছ কেন? আমি ঐ নারী ও তার বাহন পশু সম্পর্কে নিগূঢ়তত্ত্ব জানাচ্ছি। ঐ পশুটির সাতটি মাথা এবং দশটি শিং আছে। 8 তুমি যে পশুকে দেখলে, এক সময় সে বেঁচে ছিল, কিন্তু এখন সে বেঁচে নেই। সে পাতাল থেকে উঠে আসবে ও তার ধ্বংস স্থানে যাবে। জগৎ পত্তনের সময় থেকে পৃথিবী নিবাসী যত লোকের নাম জীবন পুস্তকে লিখিত নেই, তারা ঐ পশুকে দেখে বিস্মিত হবে, কারণ পশুটি একদিন ছিল, এখন আর নেই, কিন্তু পরে আবার আসবে।
9 “এটা বোঝার জন্য বিজ্ঞ মনের প্রয়োজন। ঐ সপ্ত মস্তক হচ্ছে সপ্ত পর্বত, যার ওপর ঐ নারী বসে আছে। তারা আবার সপ্ত রাজার প্রতীক। 10 তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচ জনের পতন হয়েছে। একজন আছে আর অন্য জন এখনও আসে নি। সে এলে কেবল অল্পকালই থাকবে। 11 যে পশু এক সময়ে জীবিত ছিল, আর এখন নেই, সেই হচ্ছে অষ্টম রাজা। এই অষ্টম রাজা সেই সাত রাজার একটি আর সে তার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
12 “আর তুমি যে দশটি শিং দেখলে তা হল দশটি রাজা, তারা এখনও রাজ্য পায় নি, কিন্তু সেই পশুর সঙ্গে এক ঘন্টার জন্য রাজাদের মতো কর্তৃত্ত্ব করার ক্ষমতা পাবে। 13 এই দশ রাজার উদ্দেশ্য এক, তারা নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ত্ব সেই পশুকে দেবে। 14 তারা মেষশাবকের সঙ্গে যুদ্ধ করবে কিন্তু মেষশাবক তাদের পরাজিত করবে কারণ তিনি প্রভুদের প্রভু ও রাজাদের রাজা। তিনি তাঁর মনোনীত এবং বিশ্বস্ত লোকদের সাহায্যে তাদের পরাজিত করবেন। এই লোকদের তিনি আহ্বান করেছিলেন।”
15 আর স্বর্গদূত আমায় বললেন, “দেখ, ঐ গণিকা যে জলের ওপর বসে আছে, সেই জল হচ্ছে জাতিগণ, প্রজাগণ, জনগণ ও ভিন্ন ভাষাভাষীর লোকসমুহ। 16 তুমি যে দশটা শিং ও পশুকে দেখলে, তারা ঐ গণিকাকে ঘৃণা করবে। তারা তার সব কিছু কেড়ে নিয়ে তাকে উলঙ্গ করে তার দেহটাকে খাবে, তারপর তাকে আগুনে পুড়িয়ে দেবে। 17 এসব ঘটবে কারণ ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে তাদের হৃদয়ে এই প্রবৃত্তি দেবেন। সেজন্য তারা সকলে একচিত্ত হয়ে যে পর্যন্ত ঈশ্বরের বাক্য সফল না হয় সেই পর্যন্ত নিজের নিজের ক্ষমতা সেই পশুকে দেবে, যাতে সে রাজত্ব করতে পারে। 18 তুমি যে নারীকে দেখলে সে ঐ মহানগরীর প্রতীক, যে পৃথিবীর রাজাদের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করে।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International