Old/New Testament
দেওয়াল লিখন
5 রাজা বেল্শত্সর তাঁর 1000 উচ্চপদস্থ কর্মচারীর জন্য এক ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন ও তাদের সঙ্গে তিনি দ্রাক্ষারস পান করেছিলেন। 2 দ্রাক্ষারসের প্রভাবে তিনি তাঁর ভৃত্যদের আদেশ দিলেন সেই সব সোনার ও রূপার পাত্রগুলি আনতে যেগুলি নবূখদ্নিৎসর, তাঁর পিতামহ[a] জেরুশালেমের মন্দির থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। রাজা চেয়েছিলেন তাঁর রাজবংশীয়রা, পত্নীরা ও উপপত্নীরা যেন ওইসব পাত্র থেকে দ্রাক্ষারস পান করে। 3 তাই তারা জেরুশালেমে অবস্থিত ঈশ্বরের মন্দির থেকে সোনার পাত্রগুলি যেগুলি নিয়ে আসা হয়েছিল সেগুলি নিয়ে এলো। এবং রাজা ও তাঁর কর্মচারীরা, তাঁর পত্নীরা ও উপপত্নীরা সেই পাত্রগুলি থেকে পান করেছিলেন। 4 তাঁরা দ্রাক্ষারস পান করার সময় সোনা, রূপা, পিতল, লোহা, কাঠ ও পাথরের তৈরী দেবমূর্ত্তির গুণগান করছিলেন।
5 রাজা যখন তাকালেন, তখন হঠাৎ একটি মানুষের হাত আবির্ভূত হয়েছিল এবং বাতি-স্তম্ভের কাছে দেওয়ালের পোঁচড়ার ওপর লিখতে শুরু করেছিল।
6 রাজা বেল্শত্সর এই দৃশ্য দেখে এত ভীত হয়ে পড়লেন যে তাঁর মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গেল এবং তাঁর হাঁটুতে হাঁটু ঠোকাঠুকি লেগে গেল। তাঁর পা এত দুর্বল মনে হল যে তিনি উঠে দাঁড়াতেও পারলেন না। 7 তখন রাজা সমস্ত যাদুবিদগণ, ভবিষ্যৎবক্তাসমূহ এবং কল্দীয়দের তাঁর কাছে ডাকলেন। তিনি ঐ জ্ঞানী লোকদের বললেন, “যারা আমাকে এই লেখা পড়ে তার অর্থ ব্যাখ্যা করে দিতে পারবে আমি তাদের পুরস্কার দেব। আমি তাদের বেগুনী রঙের বস্ত্র দেব, তাদের গলায় সোনার হার দেব এবং তাকে আমার রাজ্য তৃতীয় শাসকের পদ দেব।”
8 তাই রাজার সমস্ত জ্ঞানী ব্যক্তিরা জড়ো হল। কিন্তু তারা লেখাটি পড়তে বা তার অর্থ বলতে পারল না। 9 রাজা বেল্শত্সর ভয় পেয়ে গেলেন। তাঁর মুখ চিন্তায় ও ভয়ে সাদা হয়ে গেল। রাজার কর্মচারীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল।
10 তারপর রাণী সেই ভোজসভায় এলেন। তিনি রাজা ও রাজকর্মচারীদের কথা শুনে বললেন, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হোন! ভয়ে আপনার মুখ সাদা হতে দেবেন না। 11 আপনার রাজ্যে একজন মানুষ আছেন যাঁর মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা বিদ্যমান। আপনার পিতার সময়ে, তিনি দেখিয়ে ছিলেন যে তিনি গুপ্তকথা বুঝতে সক্ষম। তিনি এও দেখিয়ে ছিলেন যে তিনি দেবতাদের মতই জ্ঞান ও বুদ্ধিতে পূর্ণ ছিলেন। পিতামহ এঁকে সমস্ত জ্ঞানী মানুষ, যাদুবিদ ও কল্দীয়দের অধিপতি করে দিয়েছিলেন। 12 আমি যে মানুষটির কথা বলছি তার নাম দানিয়েল। রাজা তার নাম দিয়েছিলেন বেলটশত্সর। বেলটশত্সর খুব বুদ্ধিমান এবং তিনি অনেক বিষয় জানেন। তিনি স্বপ্নের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারেন, গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করতে পারেন এবং কঠিন সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তিনিই এই দেওয়াল লিখনের অর্থ বলে দেবেন।”
13 তাই দানিয়েলকে রাজার কাছে আনা হল। রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নামই কি দানিয়েল যাকে আমার পিতা বন্দী করে যিহূদা থেকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন? 14 আমি শুনেছি যে তোমার মধ্যে দেবতাদের আত্মা বিদ্যমান। আমি এও শুনেছি যে তুমি গুপ্ত কথা বুঝতে সক্ষম এবং তোমার অনেক বুদ্ধি আছে এবং তুমি খুব জ্ঞানী। 15 এই দেওয়ালের লিখন পড়ে তার অর্থ ব্যাখ্যা করবার জন্য আমার কাছে জ্ঞানী এবং যাদুবিদদের আনা হয়েছিল। কিন্তু তারা এটা করতে সক্ষম হল না। 16 আমি শুনেছি তুমি যে কোন জিনিস ব্যাখ্যা করতে পারো এবং যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারো। তুমি যদি দেওয়ালের এই লেখা পড়ে তার অর্থ আমার কাছে ব্যাখ্যা করতে পারো তাহলে আমি তোমাকে বেগুনী রঙের বস্ত্রাদি প্রদান করব ও তোমার গলায় একটি সোনার হার পরিয়ে দেব। এরপর তুমিই হবে আমার রাজ্যের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ শাসক।”
17 তখন দানিয়েল রাজাকে উত্তর দিলেন, “আপনার দান আপনার কাছে থাকুক বা ওটা আপনি অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারেন। আমি তবুও আপনাকে এই লেখা পাঠ করে তার অর্থ ব্যাখ্যা করে দেব।
18 “মহারাজ, পরাৎপর আপনার পিতামহ নবূখদ্নিৎসরকে একজন মহান ও পরাক্রমী রাজা বানিয়ে ছিলেন। তাঁকে ঈশ্বর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছিলেন। 19 অনেক দেশের এবং অনেক ভাষার লোকরা নবূখদ্নিৎসরকে ভয় পেত। কেন? কারণ পরাৎপর তাঁকে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজা বানিয়েছিলেন। নবূখদ্নিৎসর কাউকে মারতে চাইলে মেরে ফেলতেন আর বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে বাঁচিয়ে রাখতেন। তিনি যাদের গুরুত্বপূর্ণ করতে চাইতেন তাদের তাই করতেন এবং তিনি যাদের গুরুত্বহীন করতে চাইতেন তাদের গুরুত্বহীন করতেন।
20 “কিন্তু নবূখদ্নিৎসর জেদী হয়ে উঠলেন এবং দাম্ভিক ভাবে ব্যবহার করতে লাগলেন। তাই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁর কাছ থেকে সিংহাসন ও তাঁর সমস্ত গৌরব কেড়ে নেওয়া হল। 21 নবূখদ্নিৎসর লোকদের ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন। তাঁর মানসিকতাকে একটি পশুর মনের মত করা হয়েছিল। তিনি বন্য গাধাদের সাথে বাস করতে লাগলেন এবং গরুর মতো ঘাস খেতে লাগলেন। তাঁর শরীর শিশিরে ভিজে গেল। এসব তত দিন পর্যন্ত ঘটল যতদিন না তিনি বুঝলেন যে পরাৎপর সমস্ত মানুষের রাজত্বের ওপর কর্তৃত্ব করেন এবং যাকে খুশী রাজ্য দেন।
22 “কিন্তু বেল্শত্সর আপনি নবূখদ্নিৎসরের পৌত্র, আপনি যদিও এসবই জানেন তবু আপনি বিনয়ী হননি। 23 তার বদলে আপনি স্বর্গের ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। আপনি প্রভুর মন্দির থেকে আনা পাত্রে আপনার রাজকর্মচারী, আপনার পত্নী ও উপপত্নীদের দ্রাক্ষারস পান করার আদেশ দিয়েছেন। আপনি সোনা, রূপা, পিতল, লোহা, কাঠ ও পাথরের তৈরী সেই সব দেবতাদের প্রশংসা করেছেন। তারা কিছু দেখতে পায় না, শুনতে পায় না বা বুঝতে পারে না। কিন্তু আপনি সেই ঈশ্বরকে সম্মান দেন নি যাঁর আপনার জীবন ও কর্মের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। 24 তাই, এই কারণে ঈশ্বর এই হাতটি দেওয়ালে লেখবার জন্য পাঠিয়েছিলেন। 25 এই হল সেই কথাগুলো যা দেওয়ালের ওপর লেখা ছিল:
মিনে, মিনে, তকেল, এবং উপারসীন
26 “এই হল সেই সব শব্দের অর্থ:
মিনে: ঈশ্বর আপনার রাজত্বের শেষ দিন গণনা করেছেন।
27 তকেল: আপনাকে তুলাদণ্ডে পরিমাপ করা হয়েছে এবং দেখা গেছে যে আপনার মধ্যে যথেষ্ট ধার্মিকতা নেই।
28 উপারসীন: আপনার রাজ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। তা এখন মাদীয় ও পারসীকদের মধ্যে বণ্ট্ন করা হবে।”
29 তখন বেল্শত্সর দানিয়েলকে বেগুনী বস্ত্রে ভূষিত করার আদেশ দিলেন। তার গলায় সোনার হার পরিয়ে দেওয়া হল এবং তাকে রাজ্যের তৃতীয় উচ্চতম শাসক ঘোষণা করা হল। 30 সেই রাতেই বাবিলের লোকদের রাজা বেল্শত্সর হত হলেন। 31 মাদীয় দারিয়াবস, যিনি প্রায় 62 বছর বয়স্ক ছিলেন তিনি রাজত্বের ভার নিলেন।
দানিয়েল ও সিংহরা
6 দারিয়াবস ভাবলেন যে 120 জন রাজ্যপালকে তাঁর সম্পূর্ণ রাজত্বের দায়িত্ব দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 2 এবং তিনি এই 120 জন রাজ্যপালকে তত্ত্বাবধান করবার জন্য তিন জন অধ্যক্ষ নিযুক্ত করলেন। দানিয়েল ছিলেন এই তিনজনের একজন। রাজা এদের নিযুক্ত করেছিলেন যাতে কেউ তাঁকে ঠকিয়ে রাজ্যের ক্ষতি না করতে পারে। 3 দানিয়েল তাঁর উৎকৃষ্ট চরিত্রের জন্য অন্য যে কোন অধ্যক্ষ অথবা রাজ্যপালের চেয়ে তাঁর পদে ভালো অবস্থায় ছিলেন। এতে রাজা এতই সন্তুষ্ট হলেন যে তিনি দানিয়েলকে সমগ্র রাজ্যের শাসক হিসেবে নিয়োগ করবেন বলে স্থির করলেন। 4 কিন্তু অন্য অধ্যক্ষ ও শাসকরা এই খবর শুনে ঈর্ষান্বিত হল। তাই দানিয়েল রাজার জন্য যে কাজ করছিলেন তার মধ্যে তারা দোষ খুঁজে বার করবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা তাঁর কাজে কোন দোষ-ত্রুটি খুঁজে পেল না। দানিয়েল ছিলেন বিশ্বাসী। তিনি কখনও ইচ্ছে করে অথবা ভুলেও কোন ভুল কাজ করেন নি।
5 অবশেষে সেই লোকরা দেখল যে দানিয়েলকে দোষারোপ করার মতো কোন কারণই তারা খুঁজে পাবে না। তাই তারা ঠিক করল যে তারা রাজার কাছে দানিয়েলের ঈশ্বরের নীতি সম্পর্কিত ব্যাপারে অভিযোগ করবে।
6 তাই ঐ দুজন অধ্যক্ষ ও শাসকরা দল বেঁধে রাজার কাছে গিয়ে বলল, “মহারাজ দারিয়াবস চিরজীবি হোন! 7 সমস্ত অধ্যক্ষগণ, গুরুত্বপূর্ণ রাজকর্মচারীগণ, মন্ত্রীগণ এবং রাজ্যপালরা একটি নির্দিষ্ট ব্যাপারে একমত হল। আপনি এ বিষয়টিকে একটি আদেশ হিসাবে প্রচার করুন যা সকলে মানবে। এই আদেশটি হল যে পরবর্তী 30 দিনের মধ্যে কেউ যদি রাজা ছাড়া অন্য কোন দেবতা বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করে তবে তাকে সিংহের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হবে। 8 মহারাজ আপনি এই আদেশ লেখা কাগজটিতে স্বাক্ষর করে এই আদেশটি অপরিবর্তিত রাখার ব্যবস্থা করুন, কেননা মাদীয় ও পারসীকদের নিয়মানুসারে কোন আইন বা আদেশ বাতিল বা পরিবর্তন হয় না।” 9 তাই রাজা দারিয়াবস এই আদেশপত্রটি সাক্ষর করলেন।
10 দানিয়েল, প্রত্যেক দিন তিন বার করে নতজানু হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন এবং তাঁর গুণগান করতেন। যখন তিনি এই আজ্ঞার কথা শুনলেন তিনি তাঁর বাড়ীর ভেতরে গিয়ে জেরুশালেমের দিকে খোলা জানালার কাছে গেলেন এবং নতজানু হয়ে প্রতি দিনের মতো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন।
11 তখন ওই সব লোকরা দল বেঁধে দানিয়েলের বাড়ি গেল এবং তাঁকে প্রার্থনা করতে এবং ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইতে দেখতে পেল। 12 তাই তারা রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে তাঁর আদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলল, “মহারাজ আপনি একটি আদেশ জারি করেছেন যে পরবর্তী 30 দিনের মধ্যে যদি কেউ রাজা ছাড়া অন্য কোন মানুষ বা দেবতার কাছে প্রার্থনা করে তবে তাকে সিংহের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হবে। এবং আপনি আদেশটিতে স্বাক্ষরও করেছেন।”
রাজা উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, এই আদেশটি মাদীয় ও পারসীকদের একটি আদেশ। এই আদেশ কখনও বাতিল করা বা বদলানো যায় না।”
13 তখন ঐ লোকরা বলল, “দানিয়েল নামক ওই ব্যক্তিটি আপনাকে অথবা যে আদেশ পত্রে আপনি স্বাক্ষর করেছেন, তাকে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। দানিয়েল যিহূদা থেকে আনা বন্দীদের একজন এবং সে আপনার আদেশ মানছে না। সে এখনও রোজ তিন বার করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে।”
14 রাজা একথা শুনে খুবই দুঃখ পেলেন ও মুষড়ে পড়লেন। তিনি দানিয়েলকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন এবং সেই জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি দানিয়েলকে রক্ষা করার উপায় ভাবতে লাগলেন। 15 তখন ওই লোকরা রাজার কাছে একত্রে গিয়ে বলল, “মহারাজ মনে রাখবেন মাদীয় ও পারসীকদের নিয়মানুসারে কোন আইন বা আদেশে যদি রাজা স্বাক্ষর করেন তবে তা বাতিল বা পরিবর্তন করা যায় না।”
16 তখন রাজা তাঁর ভৃত্যদের দানিয়েলকে আনতে আদেশ দিলেন এবং তারা তাঁকে আনল। রাজা দানিয়েলকে বললেন, “আমি আশা করি যে ঈশ্বরকে তুমি অনবরত উপাসনা করছ তিনি তোমায় রক্ষা করবেন।” 17 একটি বড় পাথর আনা হল এবং গুহামুখে রাখা হল। রাজা ও তাঁর কর্মচারীরা সেই পাথরটি তাদের আংটি দিয়ে সীলমোহর করলেন, যাতে কেউ না পাথর সরাতে পারে এবং দানিয়েলকে গুহা থেকে বার করে আনতে পারে। 18 তারপর রাজা তাঁর প্রাসাদে ফিরে গেলেন। তিনি রাত্রে কিছু খাননি আর কাউকে আসতে দেননি এবং তাঁকে মনোরঞ্জন করতে দেননি। তিনি ঘুমোতেও পারেন নি।
19 পরদিন সকালে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি গুহার কাছে ছুটে গেলেন। 20 তিনি গুহার কাছে গিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন স্বরে দানিয়েলকে ডাকতে লাগলেন। তিনি বললেন, “হে দানিয়েল, জীবন্ত ঈশ্বরের সেবক, তুমি সব সময় তাঁর সেবা কর। তোমার ঈশ্বর কি তোমাকে সিংহের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন?”
21 দানিয়েল উত্তর দিল, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হোন! 22 আমার ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করবার জন্য তাঁর দূত পাঠিয়েছেন। দূত সিংহদের মুখগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন। সিংহরা আমাকে আঘাত করেনি কারণ ঈশ্বর জানেন আমি নির্দোষ। আমি কখনো আপনার প্রতি কোন অন্যায় করিনি।”
23 দারিয়াবস এই শুনে খুব খুশী হলেন এবং তাঁর ভৃত্যদের আদেশ দিলেন দানিয়েলকে সিংহের খাঁচা থেকে বার করে আনতে। দানিয়েলকে যখন সিংহের খাঁচা থেকে বার করে আনা হল তখন তাঁর শরীরে কোন ক্ষত পাওয়া গেল না। সিংহরা দানিয়েলের কোন ক্ষতি করেনি কারণ তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন।
24 তখন রাজা দানিয়েলের ওপর দোষারোপ করবার জন্য ঐ লোকগুলোকে সিংহগুলোর গুহার কাছে আনতে আদেশ দিলেন। তিনি তাঁর ভৃত্যদের স্ত্রী ও সন্তানসহ তাদের ওর মধ্যে ফেলে দিতে আদেশ করলেন। তারা গুহার মেঝে স্পর্শ করার আগেই সিংহের মুখে পড়ল। সিংহরা তাদের দেহের মাংস খেয়ে নিল এবং তাদের সমস্ত হাড়গুলোও গুঁড়ো করে ফেলল।
25 তারপর রাজা দারিয়াবস বিভিন্ন দেশসমূহ ও বিভিন্ন ভাষাসমূহের লোকদের কাছে এই চিঠি লিখলেন:
শুভেচ্ছা!
26 আমি একটি নতুন আইন তৈরি করছি। এই আইনটি আমার সমগ্র রাজ্যের লোকদের জন্য তৈরী। তোমরা সবাই দানিয়েলের ঈশ্বরকে ভয় ও ভক্তি করে চলবে।
দানিয়েলের ঈশ্বর হলেন জীবন্ত ঈশ্বর।
ঈশ্বর চির জীবি!
তাঁর রাজত্ব কখনো শেষ হবে না,
তাঁর শাসনও শেষ হবে না।
27 ঈশ্বর মানুষকে সাহায্য করেন ও রক্ষা করেন।
ঈশ্বর স্বর্গে ও পৃথিবীতে চিহ্ন-কার্য এবং আশ্চর্য কার্য করেন।
এই সেই ঈশ্বর যিনি দানিয়েলকে সিংহের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।
28 এবং দানিয়েল দারিয়াবস ও পারসীক রাজা কোরসের সময় সফল হয়েছিলেন।
চারটি পশু সম্বন্ধে দানিয়েলের স্বপ্ন
7 বাবিলের রাজা বেল্শত্সরের রাজত্বের প্রথম বছরে[b] দানিয়েল বিছানায় শুয়ে ঘুমোনোর সময় একটি স্বপ্ন দেখলেন। 2 তিনি স্বপ্নে যা দেখে ছিলেন তা লিখে রাখলেন এবং তার সারমর্ম বললেন। তিনি বললেন: “আমি রাত্রে একটি স্বপ্ন দেখেছি। ঐ স্বপ্নে চারি দিক থেকে জোরে হাওয়া বইছিল এবং সমুদ্রকে অশান্ত করে তুলেছিল। 3 আমি চারটি বড় জন্তু দেখেছিলাম যারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে আলাদা। তারা সবাই সমুদ্র থেকে উঠে এলো।
4 “প্রথম জন্তুটিকে সিংহের মতো দেখতে আর তার ঈগলের মতো ডানা ছিল। আমি যখন তাকিয়ে ছিলাম, তার ডানাগুলি টেনে তুলে ফেলা হল। জন্তুটিকে মাটি থেকে তোলা হল এবং তাকে মানুষের মত দুপায়ের ওপর দাঁড় করানো হল। এবং তাকে একটি মানুষের মন দেওয়া হল।
5 “তারপর আমি দ্বিতীয় জন্তুটিকে দেখতে পেলাম যাকে দেখতে ভালুকের মতো। তাকে তার পেছনের পায়ের ওপর তোলা হল এবং তার মুখের মধ্যে দাঁতের ফাঁকে তিনটি পঞ্জরাস্থি ছিল। তাকে বলা হল, ‘চালিয়ে যাও, তোমার যত ইচ্ছে মাংস খাও!’
6 “তারপর আমি আমার সামনে আরেকটি জন্তুর দিকে তাকালাম। এটি ছিল একটি চিতা বাঘের মতো দেখতে কিন্তু এর পিঠে চারটি ডানা ছিল। ডানাগুলি ছিল পাখির ডানার মতো এবং জন্তুটির চারটি মাথাও ছিল। একে কর্ত্তৃত্ব করার ক্ষমতা দেওয়া হল।
7 “তারপর, আমি আমার স্বপ্ন দর্শনে চতুর্থ জন্তুটিকে দেখলাম। এই জন্তুটি ছিল বিভীষিকাময়, ভয়ঙ্কর এবং ভীষণ শক্তিশালী। এটির ছিল বড় বড় লোহার দাঁত। এই জন্তুটি তার শিকারকে পিষে ফেলে খেয়ে নিল এবং তার শিকারের যা কিছু অবশিষ্ট ছিল তাকে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিল। এই চতুর্থ জন্তুটি আমার দেখা সমস্ত জন্তুর চেয়ে আলাদা ছিল। এরও দশটি শিং ছিল।
8 “আমি যখন ঐ শিংগুলিকে কাছ থেকে দেখছিলাম, ঐ শিংগুলির মধ্যে আরেকটি শিং গজিয়ে উঠল। এই শিংটি ছোট ছিল এবং এতে মানুষের চোখ ছিল। এই শিংটির একটি মুখ ছিল, যেটি দম্ভ প্রকাশ করে যাচ্ছিল। ওই শিংটি আরও তিনটি শিংকে উপড়ে ফেলল।
চতুর্থ প্রাণীর বিচার
9 “আমি তাকিয়ে থাকা-কালীন, কয়েকটি সিংহাসন রাখা হল।
একজন প্রাচীন রাজা সিংহাসনে বসলেন।
তাঁর পোশাক ছিল তুষার শুভ্র।
তাঁর মাথার চুল ছিল মেষ শাবকের পশমের মত সাদা।
তাঁর সিংহাসন ছিল আগুনের তৈরী
এবং সিংহাসনের চাকাগুলি ছিল অগ্নিশিখা থেকে বানানো।
10 সেই প্রাচীন রাজার সামনে দিয়ে এক আগুনের নদী বয়ে যাচ্ছিল।
লক্ষ লক্ষ লোক তাঁকে সেবা করছিল
এবং কোটি কোটি লোক তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিল।
রাজসভা শুরু হতে যাচ্ছিল
এবং বইগুলি খোলা ছিল।
11 “যতক্ষণ আমি লক্ষ্য করছিলাম, ছোট শিংটি দম্ভ প্রকাশ করছিল। আমি দেখতেই থাকলাম যতক্ষণ না ঐ চতুর্থ জন্তুটিকে হত্যা করে তার শরীরকে বিনষ্ট করা হল এবং জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হল। 12 অন্য জন্তুদের কাছ থেকেও কর্ত্তৃত্বের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হল। কিন্তু তাদের কিছু সময়ের জন্য বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া হল।
13 “আমি রাত্রে যে স্বপ্নদর্শন করলাম তাতে মানুষের মতো দেখতে এক ব্যক্তি আমার সামনে এলেন। তিনি আকাশের মেঘের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে সেই প্রাচীন রাজার কাছে এলেন এবং তারা তাঁকে তাঁর সামনে নিয়ে এলো।
14 “সেই মানুষের মতো ব্যক্তিটিকে কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও সম্পূর্ণ শাসন ক্ষমতা দেওয়া হল। সমস্ত দেশ ও সমস্ত ভাষার লোকরা তাঁর উপাসনা করবে। তাঁর শাসন ও রাজত্ব চিরস্থায়ী হবে। তা কখনো ধ্বংস হবে না।
চতুর্থ প্রানী সম্পর্কিত স্বপ্নটির ব্যাখ্যা
15 “আমি, দানিয়েল চিন্তিত ও বিব্রত হয়েছিলাম। এই স্বপ্নদর্শন আমার মনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। 16 যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আমি তাদের একজনের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলাম এসবের অর্থ কি। তাই সে আমাকে এইসব ব্যাখ্যা করে বলল। 17 সে বলল, ‘চারটি মহান জন্তু হল চারটি রাজত্ব। ওই চারটি রাজত্ব পৃথিবীতে আসবে। 18 কিন্তু যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে এবং তাঁর অধিকারভুক্ত, তারা রাজত্ব পাবে এবং ঐ রাজত্ব চিরকালের জন্য ভোগ করবে।’
19 “তখন আমি জানতে চেয়েছিলাম চতুর্থ জন্তুটি কি ও তার অর্থ কি? চতুর্থ জন্তুটি ছিল সমস্ত জন্তুর থেকে ভিন্ন। ওটা ছিল ভয়ঙ্কর। এই জন্তুটির ছিল লোহার দাঁত ও পিতলের নখ। এই জন্তু তার শিকারকে পিষে ফেলে খেয়ে নিত এবং শিকারের অবশিষ্ট ভাগের ওপর দিয়ে মাড়িয়ে চলে যেত। 20 এবং আমি ঐ চতুর্থ জন্তুটির মাথার দশটি শিং-এর কথা জানতে চেয়েছিলাম। আমি ঐ ছোট শিংটির ব্যাপারে জানতে চেয়ে ছিলাম যেটি পরে গজিয়ে উঠেছিল এবং তিনটি শিংকে উপড়ে ফেলেছিল। এই ছোট শিংটির চক্ষুসমূহ ছিল এবং একটি মুখ ছিল যেটি সারাক্ষণ দম্ভ প্রকাশ করত। এটি অন্যদের চেয়ে ভয়ঙ্কর দেখতে ছিল। 21 আমি যখন দেখেই যাচ্ছিলাম তখন এই ছোট শিংটি ঈশ্বরের বিশেষ লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল এবং তাদের পরাজিত করল। 22 এটা চলতে লাগল যতক্ষণ না প্রাচীন রাজা এলেন এবং ঈশ্বরের বিশেষ লোকদের স্বপক্ষে রায় দিলেন। প্রাচীন রাজার ঘোষিত বিচার তাঁর বিশেষ লোকদের তাদের রাজত্ব পেতে সাহায্য করল।
23 “তিনি আমাকে বুঝিয়ে বললেন: ‘চতুর্থ জন্তুটি হল চতুর্থ রাজ্য যা পৃথিবীতে আসবে। এই রাজ্য অন্য সব রাজ্যের থেকে আলাদা হবে এবং এটি সারা পৃথিবীকে গ্রাস করবে। 24 দশটি শিং হল দশ জন রাজা যারা আসবে। এদের পরে আর একজন রাজা আসবে যে আগেকার রাজাদের থেকে আলাদা হবে। সে অন্য তিন জন রাজাকে পরাস্ত করবে। 25 এই রাজা পরাৎপরের বিরুদ্ধে বলবে এবং ঈশ্বরের বিশেষ লোকদের নির্যাতন করবে। এই রাজা নিরূপিত সময়ের এবং ব্যবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা করবে। ঈশ্বরের বিশেষ লোকরা ঐ রাজার অধীনে 3 1/2 বছর কাটাবে।
26 “‘কিন্তু স্বর্গের বিচারসভা বিচার করবে এবং তার ক্ষমতা কেড়ে নেবে। তার রাজ্য ধ্বংস করা হবে এবং সেটি চিরকালের জন্য শেষ হয়ে যাবে। 27 তারপর ঈশ্বরের বিশেষ লোকরা পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের লোকেদের ওপর কর্ত্তৃত্ব করবে। অন্য সমস্ত রাজ্যের লোকরা এদের সম্মান ও সেবা করবে।’
28 “এটাই ছিল স্বপ্নদর্শনের ব্যাখ্যার শেষ। আমি, দানিয়েল এত ভীত হয়েছিলাম যে ভয়ে আমার মুখ সাদা হয়ে গিয়েছিল। এবং আমি যা দেখেছিলাম ও শুনেছিলাম তা অন্য লোকদের জানাইনি।”
1 সেই প্রাচীন এই চিঠি ঈশ্বরের মনোনীত মহিলা ও তাঁর সন্তানদের কাছে লিখেছে।
আমি তোমাদের সকলকে সত্যে ভালবাসি।
কেবল আমি নই, যারা সত্য কি জানে তারাও তোমাদের ভালবাসে। 2 সেই সত্য আমাদের অন্তরে আছে বলেই আমরা তোমাদের ভালবাসি। সেই সত্য আমাদের সঙ্গে চিরকাল থাকবে।
3 পিতা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে অনুগ্রহ, দয়া ও শান্তি আমাদের সঙ্গে থাকবে। সত্য ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে আমরা এই আশীর্বাদের অধিকারী হয়েছি।
4 তোমার সন্তানদের মধ্যে কেউ কেউ সত্য পথে চলছে ও পিতা আমাদের যেমন আদেশ করেছেন সেই অনুসারে জীবনযাপন করছে দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। 5 প্রিয় ভদ্রমহিলা, তোমার কাছে আমার অনুরোধ আমরা যেন একে অপরকে ভালবাসি। এটা কোন নতুন আদেশ নয়। এই আদেশ তো আমরা শুরু থেকেই শুনে আসছি। 6 এবং এই ভালবাসার অর্থ হল, ঈশ্বর যেমন আদেশ করেছেন সেইরকমভাবে জীবনযাপন করা। ঈশ্বরের আদেশ হল তোমরা ভালবাসায় ভরা জীবনযাপন কর।
7 এই জগতে অনেক ভণ্ড শিক্ষক তৈরী হয়েছে। যীশু খ্রীষ্ট যে মানব দেহে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন একথা তারা স্বীকার করে না। যে এইরকম করে, সে শিক্ষক হিসেবে ঠগ্ ও খ্রীষ্টারি। 8 তোমরা নিজেদের সম্পর্কে সাবধান হও যাতে যে পুরস্কারের জন্য তোমরা কাজ করেছ তা থেকে তোমরা বঞ্চিত না হও। সতর্ক থেকো যেন পুরো পুরস্কারটাই পেতে পারো।
9 কেবল খ্রীষ্টের শিক্ষারই অনুসরণ করা উচিত, যদি কেউ খ্রীষ্টের শিক্ষাকে পরিবর্তিত করে তবে সে ঈশ্বরকে পায় না; কিন্তু যে কেউ সেই শিক্ষানুসারে চলে সে পিতা ও পুত্র উভয়কেই পায়। 10 যদি কেউ যীশুর বিষয়ে এই সত্য শিক্ষা না নিয়ে তোমাদের কাছে শিক্ষা দিতে আসে, তবে তাকে বাড়িতে গ্রহণ করো না, কোন রকম শুভেচ্ছাও তাকে জানিও না। 11 কারণ যে তাকে শুভেচ্ছা জানায় সে তার দুষ্কর্মের ভাগী হয়।
12 যদিও তোমাদের কাছে লেখার অনেক বিষয়ই আমার ছিল, কিন্তু আমি কলম ও কালি ব্যবহার করতে চাই না। আমি আশা করছি তোমাদের কাছে যাব তাহলে আমরা একসাথে হয়ে অনেক কথা বলতে পারব, যেন আমাদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়। 13 ঈশ্বরের মনোনীত তোমার বোনের[a] সন্তানরা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International