Old/New Testament
সোনার মূর্ত্তি ও অগ্নিকুণ্ড
3 রাজা নবূখদ্নিৎসর একটি সোনার মূর্ত্তি তৈরী করলেন। মূর্ত্তিটি ছিল 60 হাত উঁচু এবং 6 হাত চওড়া। তারপর তিনি সেই মূর্ত্তিটি বাবিল প্রদেশে দূরা সমতলের ওপর স্থাপন করলেন। 2 তারপর রাজা প্রাদেশীয় রাজ্যপাল, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারীগণ, উপদেশকগণ, কোষাধ্যক্ষগণ, বিচারকগণ, শাসকগণ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ঐ মূর্ত্তির উৎসর্গীকরণ অনুষ্ঠানে আসতে আদেশ দিলেন।
3 তাই তারা সবাই এলেন এবং নবূখদ্নিৎসরের স্থাপিত মূর্ত্তির সামনে দাঁড়ালেন। 4 তারপর রাজার ঘোষক উচ্চকণ্ঠে বললেন, “হে বিভিন্ন দেশ ও নানা ভাষাবিদগণ তোমরা আমার কথা শোন। তোমাদের এই আদেশ দেওয়া হচ্ছে: 5 যে মূহুর্তে শিঙা, বাঁশি, বীণা এবং অন্যান্য সমস্ত বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনবে তখনই তোমরা আভূমি নত হবে এবং রাজার স্থাপনা করা মূর্ত্তির পূজো করবে। 6 যদি কোন ব্যক্তি আভূমি নত না হয়ে পূজো করে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে।”
7 তাই, যে মূহুর্তে শিঙা, বাঁশি, বীণা এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শোনা গেল, সমস্ত দেশসমূহ ও সমস্ত ভাষাবিদগণ আভূমি নত হল এবং নবূখদ্নিৎসরের প্রতিষ্ঠিত মূর্ত্তির পূজা করল।
8 সেই সময়, কিছু কল্দীয় লোকরা রাজার কাছে এল এবং ইহুদীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগল। 9 তারা রাজা নবূখদ্নিৎসরকে বলল, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হোন! 10 মহারাজ আপনি আদেশ করেছিলেন যে শিঙা, বাঁশি, বীণা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের বাদন শোনা মাত্র সকলকে মাথা নত করে সোনার মূর্ত্তিটির পূজা করতে। 11 আপনি আরো বলেছিলেন যে যদি কেউ এই মূর্ত্তির পূজা না করে তাহলে তাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। 12 কিন্তু হে মহারাজ, কিছু ইহুদী আপনার আদেশ অমান্য করেছে। আপনি পূর্বে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীর পদে বহাল করেছিলেন। তারা হল শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো। তারা আপনার দেবতার পূজা করেনি। তারা আভূমি নত হয়নি এবং আপনার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তিটি পূজো করেনি।”
13 তখন রাজা ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে ডেকে পাঠালেন। তাদের রাজার সামনে আনা হল। 14 নবূখদ্নিৎসর ঐ লোকেদের বললেন, “শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্-নগো, এটা কি সত্যি যে তোমরা আমার দেবতাদের পূজো কর না আর তোমরা আভূমি নত হও নি এবং আমার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তিকে পূজো করনি? 15 এবার যখনই তোমরা শিঙা, বীণা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনবে তখনই তোমরা মাথা নত করে সোনার মূর্ত্তির পূজা করবে। যদি তোমরা এই মূর্ত্তির পূজা করতে রাজী থাকো তবে ভাল, নয়তো তোমাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। তখন কোন দেবতাই তোমাদের আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না!”
16 শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো রাজাকে বলল, “এর ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই। 17 যদি আপনি আমাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন তাহলে আমরা যে দেবতার পূজা করি তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। তিনি ইচ্ছা করলে আমাদের আপনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। 18 কিন্তু যদি আমাদের ঈশ্বরও আমাদের রক্ষা না করেন, তাহলেও আমরা আপনার দেবতার সেবা করব না এবং আপনার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তির পূজাও করব না।”
19 তখন নবূখদ্নিৎসর ভীষণ রেগে গেলেন এবং শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর দিকে ভর্ৎসনাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তিনি অগ্নিকুণ্ডটিকে সাতগুণ বেশী উত্তপ্ত করবার আদেশ দিলেন। 20 তারপর নবূখদ্নিৎসর তাঁর সব চেয়ে শক্তিশালী সৈন্যদের কয়েক জনকে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে বেঁধে ফেলে তাদের অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিতে আদেশ দিলেন।
21 তাই সৈন্যরা আঙরাখা, পায়জামা, টুপি ও অন্যান্য বস্ত্রে পূর্ণসজ্জিত শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে বেঁধে ফেলল এবং জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ফেলে দিল। 22 রাজার আদেশ এত নিষ্ঠুর ছিল বলে এবং অগ্নিকুণ্ডটি এত উত্তপ্ত ছিল বলে যে সৈন্যরা শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্-নগোকে নিয়ে গিয়েছিল তারাই আগুন পুড়ে মারা গেল। 23 শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে দৃঢ় ভাবে বেঁধে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
24 সেই সময় নবূখদ্নিৎসর বিস্ময়ে লাফিয়ে উঠলেন। তিনি তাঁর উপদেশকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কি ঠিক যে আমরা মাত্র তিন জনকে বেঁধে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিলাম?”
উপদেশকরা বললেন, “হ্যাঁ, মহারাজ।”
25 রাজা বললেন, “দেখ, আমি দেখছি চার জন মানুষ আগুনের ভেতর হেঁটে বেড়াচ্ছে। তারা বাঁধনমুক্ত এবং তারা কেউই আগুনে পুড়ে যাচ্ছে না। চতুর্থ জনকে দেখতে যেন একজন দেবদূতের মতো।”
26 তখন নবূখদ্নিৎসর অগ্নিকুণ্ডের মুখের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললেন, “পরাৎপর ঈশ্বরের অনুগত শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো তোমরা এখানে বেরিয়ে এসো!”
তাই শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো আগুনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। 27 তারা বেরিয়ে আসার পর প্রাদেশীয় রাজ্যপাল, উচ্চপদস্থ কর্মচারী, অধিপতি ও রাজার উপদেশকরা তাদের ঘিরে ধরল। তারা দেখল যে আগুন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর আঙরাখা অথবা অন্য কিছু, এমন কি তাদের মাথার একটা চুলও পোড়ায়নি এবং তারা যে আগুনের কাছে ছিল এমন কোন গন্ধও তাদের গা থেকে বেরোচ্ছিল না।
28 এরপর নবূখদ্নিৎসর বললেন, “শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর ঈশ্বরের প্রশংসা করো। তিনি তাঁর দূত পাঠিয়েছেন এবং তাঁর দাসদের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। এই তিন জন লোক তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। তারা আমার আদেশ অমান্য করে মৃত্যুবরণ করতেও রাজী ছিল, কিন্তু তবুও তারা অন্য কোন দেবতার আরাধনা করতে রাজী হয়নি। 29 তাই আমি এই নিয়ম করলাম: কোন দেশের এবং কোন ভাষার কোন ব্যক্তি যদি শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে তবে তাদের টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হবে। তাদের বাড়ি-ঘর সর্বসাধারণের শৌচালয় হয়ে উঠবে কারণ অন্য কোন দেবতা তাঁর লোকদের এভাবে বাঁচাতে পারেন না।” 30 তখন রাজা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়ে বাবিল প্রদেশে পাঠালেন।
একটি গাছ নিয়ে নবূখদ্নিৎসরের স্বপ্ন
4 পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী অনেক দেশ ও নানা ভাষার মানুষের কাছে নবূখদ্নিৎসর এই চিঠি পাঠালেন।
অভিবাদন:
2 পরাৎপর ঈশ্বর আমার জন্য যে চমৎকার ও আশ্চর্য সব কাজ করেছেন তা আমি তোমাদের কাছে বলতে পেরে খুশী।
3 ঈশ্বর বহু আশ্চর্য সব কাজ করেছেন।
ঈশ্বরের শক্তি প্রকাশ পেয়েছে বিস্ময়কর জিনিষে।
ঈশ্বরের রাজ্য চিরন্তন,
ঈশ্বরের শাসন পুরুষানুক্রমে বজায় থাকবে।
4 আমি নবূখদ্নিৎসর, আমার প্রাসাদে সাফল্য নিয়ে শান্তিতে ছিলাম। 5 আমি একটি স্বপ্ন দেখে ভীত হলাম। আমি যখন বিছানায় শুয়েছিলাম তখন আমার মনে চিন্তা এসেছিল এবং আমি আমার মনে এমন দর্শন পেয়েছিলাম যা আমাকে ভীত করে তুলল। 6 তাই আমি বাবিলের সমস্ত জ্ঞানী মানুষদের আমার কাছে নিয়ে আসার আদেশ দিলাম। কেন? যাতে তারা আমার স্বপ্নটির তাৎপর্য বলতে পারে। 7 যখন যাদুবিদরা, মায়াবীরা, কল্দীয়রা এবং ভবিষ্যতবক্তারা এলো, তখন আমি তাদের স্বপ্নের কথা বললাম। কিন্তু তারা এর অর্থ বলতে পারল না। 8 অবশেষে দানিয়েল এল। (আমি আমার দেবতার নামানুসারে দানিয়েলকে বেলটশত্সর নাম দিয়েছি। পবিত্র ঈশ্বরদের আত্মা তার মধ্যে বর্তমান রয়েছে।) আমি দানিয়েলকে আমার স্বপ্নের কথা বললাম। 9 আমি বললাম, “তুমি হচ্ছ বেলটশত্সর, মন্ত্রবেৎতাদের রাজা। আমি জানি যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা তোমার মধ্যে বর্তমান। আমি জানি এমন কোন গুপ্ত বিষয় নেই যা তুমি বুঝতে পারবে না। এই ছিল আমার স্বপ্ন। বল এর অর্থ কি। 10 যখন আমি বিছানায় শুয়েছিলাম তখন আমি এই স্বপ্ন দর্শন করেছিলাম: পৃথিবীর কেন্দ্রে আমি একটি গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম যেটি খুব উঁচু ছিল। 11 গাছটি দীর্ঘ ও মজবুত হয়ে বেড়ে উঠেছিল ও তার উপরিভাগ আকাশকে স্পর্শ করেছিল। পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে গাছটিকে দেখা যেতে পারত। 12 গাছের পাতাগুলি ছিল সুন্দর ও গাছটি সুস্বাদু ফলে ভরে ছিল যা সকলকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আহার জোগান দিত। বন্য প্রাণীরা সেই গাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং পাখীরা তার ডালে বাসা বেঁধে ছিল। প্রতিটি প্রাণী এই গাছ থেকে তার খাদ্য পেত।
13 “আমি যখন বিছানায় শুয়ে এইসব জিনিস দেখছিলাম তখন দেখলাম স্বর্গ থেকে এক পবিত্র দূত নেমে আসছেন। 14 তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘গাছটি কেটে ফেল এবং এর ডালগুলিও কেটে ফেল। এর সমস্ত পাতা খসিয়ে দাও ও ফলগুলিকে ছড়িয়ে ফেলে দাও। যে সমস্ত পশুরা গাছের তলায় রয়েছে তারা পালিয়ে যাবে আর গাছের ডালে যে পাখীরা রয়েছে তারা উড়ে যাবে। 15 কিন্তু এর কাণ্ড ও শিকড়গুলিকে মাটিতে থাকতে দাও। এটা লোহা ও পিতলের শিকল দিয়ে ঘিরে দাও। কাণ্ড ও শিকড়গুলি মাঠে ঘাসের মধ্যে থেকে যাক। সে মাঠের মধ্যে বন্য প্রাণী ও গাছদের সঙ্গে থাকুক আর শিশিরে ভিজে যাক। 16 সে আর মানুষের মত চিন্তা করতে সক্ষম হবে না। তার মন হবে একটি পশুর মতো। এই রকম অবস্থায় থাকতে থাকতে, সাতটি ঋতু শেষ হয়ে যাবে।’
17 “পবিত্র দূত এই শাস্তিটি ঘোষণা করলেন। কেন? যাতে পৃথিবীর সমস্ত লোক জানতে পারে যে, পরাৎপর, মানবজাতির রাজত্বগুলির ওপর শাসন করেন। ঈশ্বর যে ব্যক্তিকে চান তাকে সেই রাজত্ব দেন। এবং ঈশ্বর বিনয়ী লোকদের এই রাজ্যগুলির শাসনের জন্য মনোনীত করেন।
18 “এইগুলোই আমি, নবূখদ্নিৎসর আমার স্বপ্নে দেখেছিলাম। এখন বেলটশত্সর আমাকে বল এর অর্থ কি। আমার রাজ্যে কোন জ্ঞানী মানুষই এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি। কিন্তু বেলটশত্সর, তুমি এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে কারণ তোমার মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা রয়েছে।”
19 তখন দানিয়েল অল্প ক্ষণের জন্য চুপ করে রইলেন। তিনি যা ভাবছিলেন তাতে তিনি উদ্বিগ্ন হলেন। তাই রাজা বললেন, “বেলটশত্সর, স্বপ্নটি এবং তার অর্থ বলতে ভয় পেয়ো না।”
তখন বেলটশত্সর রাজাকে উত্তর করল, “স্বপ্নটি যেন আপনার শত্রুদের বিষয়ে হয়। আর এর অর্থও যেন হয় তাদের জন্য যারা আপনার বিপক্ষে রয়েছে। 20-21 আপনি স্বপ্নে একটি গাছ দেখেছিলেন। সেই গাছ মজবুত ও বিশাল হয়ে বেড়ে উঠেছিল এবং তার মাথা ছুঁয়ে গিয়েছিল আকাশকে। একে পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে দেখা যাচ্ছিল। এতে ছিল সুন্দর পাতা ও প্রচুর ফলের সম্ভার। এর ফল থেকে সবাই প্রচুর খাদ্যও পাচ্ছিল। এটা ছিল বন্য জন্তুদের বাসা ও এর ডালে ছিল পাখীর বাসা। এটাই ছিল সেই গাছ যা আপনি দেখেছিলেন। 22 মহারাজ আপনি হলেন সেই গাছ। আপনি মহান ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। আপনিই সেই দীর্ঘকায় গাছ যার মাথা আকাশ ছোঁয়া আর আপনার ক্ষমতা পৃথিবীর দূর-দূরান্তে পৌঁছেছে।
23 “মহারাজ আপনি একজন পবিত্র দূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখেছেন। তিনি বললেন, ‘গাছটিকে কেটে ফেলো এবং তাকে ধ্বংস কর, কিন্তু তার কাণ্ডের চারপাশে লোহা এবং পেতলের একটি শেকল দাও এবং কাণ্ডটিকে এবং এর শিকড়গুলিকে মাটিতে থাকতে দাও। মাঠে ঘাসের ওপর এটাকে থাকতে দাও যাতে শিশির পড়ে ওটা ভিজে যায়। বন্য জন্তুদের মধ্যে সে বেঁচে থাকুক এবং এইভাবে সাতটি ঋতু শেষ হয়ে যাবে।’
24 “মহারাজ এই হল আপনার স্বপ্নের অর্থ। পরাৎপরের আজ্ঞা অনুসারে আপনার সঙ্গে এগুলি ঘটবে: 25 রাজা নবূখদ্নিৎসর, আপনাকে মানুষের কাছ থেকে দূরে যেতে বাধ্য করা হবে। আপনাকে বন্য পশুদের মধ্যে থাকতে হবে ও গো-পালের মত ঘাস খেতে হবে। এবং আপনি শিশিরে ভিজে যাবেন। সাতটি ঋতু পেরিয়ে গেলে আপনার এই শিক্ষা হবে। আপনি শিখবেন যে পরাৎপর মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করেন এবং তিনি যাকে চান তাকেই রাজত্ব দেন।
26 “কাণ্ড এবং শিকড়গুলিকে মাটিতে রেখে দেওয়ার আজ্ঞার অর্থ হল: আপনার রাজ্য আপনারই থাকবে। এটা হবে তখন যখন আপনি জানবেন যে পরাৎপর লোকদের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমতাশালী। 27 তাই, হে মহারাজ, অনুগ্রহ করে আমার উপদেশ শুনুন। অথবা আপনার ভালোর জন্য পাপ কাজ বন্ধ করুন এবং ভালো লোক হোন। মন্দ কাজ বন্ধ করুন এবং দরিদ্রদের প্রতি দয়া দেখান। তাহলেই আপনি শান্তিতে থাকতে পারবেন।”
28 এগুলো সবই নবূখদ্নিৎসরের বিষয়ে ফলে গেল। 29-30 এই স্বপ্ন দেখার বারো মাস পর রাজা নবূখদ্নিৎসর যখন বাবিলে তাঁর প্রাসাদের ছাদের ওপর হাঁটছিলেন তখন তিনি বললেন, “বাবিলের দিকে তাকিয়ে দেখ! আমি এই বিশাল শহর তৈরী করেছি। এটা হল আমার প্রাসাদ! আমি এই বিশাল প্রাসাদ আমার ক্ষমতায় গড়ে তুলেছি যাতে বোঝা যায় আমি কত মহান!”
31 তাঁর কথাগুলো যখন মুখের মধ্যেই ছিল তখন একটি কণ্ঠস্বর স্বর্গ থেকে বলল, “রাজা নবূখদ্নিৎসর, ঈশ্বর তোমাকে এটি বলেছেন: রাজা হিসেবে তোমার ক্ষমতা তোমার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হল। 32 তোমাকে মানুষের কাছ থেকে দূরে চলে যেতে বাধ্য করা হবে। তুমি বন্য পশুদের সাথে বাস করবে। তুমি একটি গরুর মতো ঘাস খেয়ে জীবন ধারণ করবে। এই শিক্ষা পেতে সাতটি ঋতু পেরিয়ে যাবে। তখন তুমি জানবে যে পরাৎপর মানুষের রাজত্বের ওপর কর্তৃত্ব করেন এবং তিনি যাকে চান তাকেই রাজত্ব দেন।”
33 ঐ সব কিছু তক্ষুনি ঘটে গিয়েছিল। নবূখদ্নিৎসর মানবসমাজ থেকে দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি গরুর মত ঘাস খেতে শুরু করেছিলেন। তাঁর শরীর শিশিরে ভিজে গিয়েছিল। তাঁর চুল লম্বা হয়ে ঈগল পাখীর পালকের মতো হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর নখ পাখীর নখের মতো বেড়ে গিয়েছিল।
34 তারপর সেই সময়ের শেষে আমি, নবূখদ্নিৎসর, স্বর্গের দিকে বিনীতভাবে তাকিয়েছিলাম এবং আমি আর একবার প্রকৃতিস্থ হলাম। তখন আমি পরাৎপরের গুণগান করেছিলাম। ঈশ্বর যিনি অনন্তজীবি, তাঁকে প্রশংসা ও সম্মানিত করলাম।
কারণ ঈশ্বরের শাসন চিরন্তন!
তাঁর রাজত্ব পুরুষানুক্রমে স্থায়ী।
35 পৃথিবীর মানুষ বস্তুত গুরুত্বপূর্ণ নয়।
স্বর্গীয় ক্ষমতাসমূহ ও পৃথিবীর মানুষদের প্রতি
ঈশ্বর যা চান তা সবই তিনি করেন।
এমন কেউ নেই যে তাঁর শক্তিশালী হাতকে থামাতে পারে
এবং তাঁর কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
36 তাই সেই সময় ঈশ্বর আমাকে শুভ বুদ্ধি ফিরিয়ে দিলেন। তিনি আমাকে রাজার সম্মান ও ক্ষমতাও ফিরিয়ে দিলেন। আমার উপদেষ্টাগণ ও রাজবংশীয় লোকরা আবার আমার কাছে উপদেশের জন্য এসেছিল। আমি আগের চেয়েও আরো মহান ও বেশী পরাক্রমী হয়ে উঠেছিলাম। 37 এখন আমি, নবূখদ্নিৎসর স্বর্গের রাজার প্রশংসা ও সমাদর করি। তিনি যা করেন তাই সঠিক ও ন্যায্য। এবং তিনিই অহঙ্কারী মানুষদের বিনয়ীতে পরিণত করেন।
ঈশ্বরের সন্তান জগতকে জয় করতে পারে
5 যারা বিশ্বাস করে যে যীশুই খ্রীষ্ট, তারা ঈশ্বরের সন্তান। যে কেউ পিতাকে ভালবাসে, সে তাঁর সন্তানদের ভালবাসে। 2 আমরা কি করে জানব যে আমরা ঈশ্বরের সন্তানদের ভালবাসি? আমরা জানি যেহেতু আমরা ঈশ্বরকে ভালবাসি ও তাঁর সব আদেশ পালন করি। 3 ঈশ্বরকে ভালবাসার অর্থই হচ্ছে তাঁর আদেশ পালন করা; আর ঈশ্বরের আদেশ ভারী বোঝার মতো নয়। 4 কারণ প্রত্যেক ঈশ্বরজাত সন্তান জগতকে জয় করে। 5 আমাদের বিশ্বাসই আমাদের জগতজয়ী করেছে। কে জগতের ওপরে বিজয়ী হতে পারে? যে বিশ্বাস করে যে, যীশুই ঈশ্বরের পুত্র।
ঈশ্বর তাঁর পুত্রের কথা বললেন
6 ইনিই যীশু খ্রীষ্ট, যিনি জগতে জল ও রক্তের মধ্য দিয়ে এসেছিলেন। আত্মাই বলছেন এই কথা সত্য, আর সেই আত্মা স্বয়ং সত্য। 7 যীশুর বিষয়ে তিনজন সাক্ষ্য দিচ্ছেন। 8 আত্মা, জল ও রক্ত আর সেই তিনের এক সাক্ষ্য।
9 লোকে যখন সত্য কিছু বলে আমরা তা বিশ্বাস করি, তবে ঈশ্বরের দেওয়া সাক্ষ্য এর থেকে কত না মূল্যবান। বস্তুত ঈশ্বর স্বয়ং আমাদের কাছে এই সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি তাঁর নিজের পুত্রের বিষয়ে সত্য জানিয়েছেন। 10 ঈশ্বরের পুত্রকে যে বিশ্বাস করে ঐ সত্য তার অন্তরে থাকে। ঈশ্বরের কথায় যে বিশ্বাস করে না, সে তাঁকে মিথ্যাবাদী করেছে, কারণ ঈশ্বর তাঁর পুত্রের বিষয়ে যে কথা বলেছেন সে তাতে বিশ্বাস করে নি। 11 সেই সাক্ষ্য হচ্ছে, ঈশ্বর আমাদের অনন্ত জীবন দিয়েছেন এবং এই জীবন তাঁর পুত্রে আছে। 12 ঈশ্বরের পুত্রকে যে পেয়েছে সেই সত্য জীবন পেয়েছে। ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায় নি সে জীবন পায় নি।
অনন্ত জীবন
13 তোমরা যারা ঈশ্বরের পুত্রের ওপর বিশ্বাস করেছ আমি তোমাদের কাছে এই কথা লিখছি যেন তোমরা জানতে পার যে তোমরা অনন্ত জীবন পেয়েছ। 14 আমরা এবিষয়ে সুনিশ্চিত যে আমরা যদি তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর কাছে কিছু চাই তবে তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন; 15 আর আমরা যদি সত্যি জানি যে তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনেছেন তবে জানতে হবে যে আমরা তাঁর কাছে যা চেয়েছি তা পেয়ে গিয়েছি।
16 যদি কেউ তার খ্রীষ্টান ভাইকে এমন কোন পাপ করতে দেখে যার পরিণতি অনন্ত মৃত্যু নয়, তবে সে তার ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করবে, আর ঈশ্বর তাকে জীবন দান করবেন। যারা অনন্ত মৃত্যুজনক পাপ করে না, তিনি কেবল তাদেরই তা দেবেন। মৃত্যুজনক পাপ আছে, আর আমি তোমাদের সেরকম পাপ যারা করে তাদের জন্য প্রার্থনা করতে বলছি না। 17 সমস্ত রকম অধার্মিকতাই পাপ; কিন্তু এমন পাপ আছে যার ফল অনন্ত মৃত্যু নয়।
18 আমরা জানি, ঈশ্বরের সন্তানরা পাপের জীবনযাপন করে না। ঈশ্বরের পুত্র তাদের রক্ষা করেন[a] এবং পাপাত্মা তাদের কোনভাবে ক্ষতি করতে পারে না। 19 আমরা জানি যে আমরা ঈশ্বরের লোক; কিন্তু সমস্ত জগত রয়েছে পাপাত্মা শক্তির কবলে। 20 আমরা জানি যে ঈশ্বরের পুত্র এসেছেন, আর তিনি আমাদের সেই বোধ বুদ্ধি দিয়েছেন যার দ্বারা আমরা সেই সত্যময় ঈশ্বরকে জানতে পারি। এখন আমরা সত্য ঈশ্বরে আছি, কারণ আমরা তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টেতে আছি। তিনিই সত্য ঈশ্বর ও অনন্ত জীবন। 21 তাই স্নেহের সন্তানরা, তোমরা মিথ্যা দেবদেবীর কাছ থেকে দূরে থেকো।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International