Old/New Testament
সোর সমুদ্রে ব্যবসার মহান কেন্দ্র
27 প্রভুর বাক্য আবার আমার কাছে এল, তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, সোর সম্বন্ধে এই শোকের গান গাও। 3 সোরের সম্বন্ধে এই কথাগুলি বলো: ‘সোর, তুমি হলে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়া পথ। সমুদ্রের উপকূল বরাবর বহু উপজাতির জন্য তুমি বণিক। প্রভু, আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন:
“‘সোর তুমি নিজেকে খুব সুন্দরী ভাব!
4 ভূমধ্যসাগর তোমার শহরের সীমা।
তোমার নির্মাতারা তোমাকে সত্যিই সুন্দরী করে গড়েছিল।
সেই জাহাজগুলোর মতন, যারা তোমা হতে পাড়ি দেয়।
5 তোমার নির্মাতারা তক্তা তৈরী করার জন্য
সনীর পর্বত থেকে এরস কাঠ এনে ব্যবহার করত।
তারা লিবানোনের এরস গাছ ব্যবহার করে
তোমার মাস্তুল তৈরী করত।
6 তারা বৈঠা তৈরী করতে
বাশনের ওক কাঠ ব্যবহার করেছিল।
জাহাজের কুঠুরী তৈরী করার জন্য
সাইপ্রাসের পাইন কাঠ ব্যবহার করেছিল।
তারা থাকার জায়গাটা সাজিয়েছিল হাতির দাঁতে।
7 তোমার পাল তৈরী করতে ব্যবহৃত হয়েছিল
মিশরের তৈরী রঙ্গীন মসিনা।
সেই পালই ছিল তোমার পতাকা,
তোমার কুঠুরির আচ্ছাদন ছিল নীল ও বেগুনী রঙের।
ওসব সাইপ্রাস ইলীশা উপকূল থেকে এসেছিল।
8 সীদোন ও অর্বদের লোকরা তোমার জন্য নৌকা বেয়ে এসেছিল।
সোর, তোমার জ্ঞানী লোকরা জাহাজের নাবিক ছিল।
9 গবালের প্রবীণরা ও জ্ঞানবান লোকরা তক্তার মাঝে
ছেঁদা মেরামতের জন্য জাহাজে ছিল।
সমুদ্রের সব কটি জাহাজ ও তাদের নাবিকরা
তোমার সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য এসেছিল।
10 “‘পারস, লূদ ও পূটের লোকরা তোমার সেনাদলে যোদ্ধা হয়েছিল। তোমার দেওয়ালে তারা তাদের ঢাল ও শিরস্ত্রাণ ঝুলিয়ে রাখত। তারাই সম্মান ও গৌরব এনে তোমার শহরের শোভা বর্ধন করেছিল। 11 অর্বদ ও হেলেখের[a] লোকরা তোমার শহর ঘিরে যে প্রাচীর, তাকে পাহারা দিত। তোমার চূড়োগুলো ছিল গামাদের অধিকারভুক্ত। তোমার শহরের চারধারের দেওয়ালে তারা তাদের ঢাল ঝুলিয়ে রাখত। তারা তোমার সৌন্দর্যকে পূর্ণ রূপ দিয়েছিল।
12 “‘তোমার উত্তম বণিকদের মধ্যে তর্শীশ ছিল একজন। তারা রূপো, লোহা, দস্তা ও সীসা দিয়ে তোমার অপূর্ব জিনিসগুলি কিনত। 13 গ্রীস, তূবল এবং মেশক-এর লোকরা তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। তারা ক্রীতদাস ও পিতলের বিনিময়ে তোমার জিনিস কিনত। 14 তোগর্ম জাতির লোকেরা অশ্ব, যুদ্ধের অশ্ব ও গর্ধভ দিয়ে তোমার জিনিস কিনত। 15 দদানের লোকরাও তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। তোমার জিনিসপত্র তুমি বহু জায়গায় বেচতে। লোকে হাতির দাঁত ও আবলুশ কাঠ দিয়ে তোমার দাম মেটাত। 16 তোমার বহু উত্তম দ্রব্যের জন্য অরামও তোমার সাথে ব্যবসা করত। তারা পান্না, বেগুনি কাপড়, বুটি দেওয়া কাপড়, মিহি মসীনা, প্রবাল ও পদ্মরাগ মণি দিয়ে তোমার জিনিস কিনত।
17 “‘যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকরাও তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। গম, জলপাই, কচি ডুমুর, মধু, তেল ও মলম দিয়ে তারা তোমার জিনিসের দাম মেটাত। 18 দম্মেশক তোমার একজন ভাল ক্রেতা ছিল। তোমার কাছ থেকে বহু চমৎকার জিনিস নিয়ে সে তোমার সঙ্গে ব্যবসা চালাত। ঐসব জিনিসের জন্য তারা হিল্বোন থেকে দ্রাক্ষারস ও সাদা পশম নিয়ে আসত। 19 দম্মেশক এবং উষল থেকে গ্রীসীয় লোকরা তোমার কাছ থেকে জিনিষ কিনত। তারা পেটা লোহা, কাশ ও আখ নিয়ে আসত। 20 দদানের জন্য ভাল ব্যবসা হত। তারা তোমার সাথে জিনের নীচের কাপড়ের ব্যবসা করত। 21 আরব ও কেদরের নেতারা মেষশাবক, মেষ ও ছাগল দিয়ে তোমার দ্রব্য কিনত। 22 শিবা ও রামাহার বণিকরা তোমার সাথে ব্যবসা করত। তারা সমস্ত উত্তম মশলা, মূল্যবান পাথর ও সোনা দিয়ে তোমার জিনিস কিনত। 23 হারণ, কন্নী, এদন এবং শিবা, অশূর ও কিল্মদের বনিকরা তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। 24 তারা সুঁচের কাজ করা নীল কাপড়, বহু রঙের গালিচা, শক্ত করে পাকানো দড়ি এবং এরস কাঠের গুড়ি দিয়ে ব্যবসা করত। 25 তোমার বেচে দেওয়া জিনিসগুলি তর্শীশের জাহাজগুলি বয়ে নিয়ে যেত।
“‘সোর তুমি ঐ মালবাহী জাহাজের একটির মত।
তুমি সমুদ্রে বহু ধনের ভারে ভারী।
26 তোমার দাঁড়ীরা তোমাকে গভীর সমুদ্রে নিয়ে গেছে।
কিন্তু প্রবল পূর্বীয় বায়ু দ্বারা সমুদ্রেই তোমার জাহাজ ধ্বংস হবে।
27 তোমার ধনসম্পত্তি সব সমুদ্রে ছড়িয়ে ছত্রাকার হয়ে যাবে।
তোমার ধনসম্পত্তি—যা তুমি বেচো কেনো তা সমুদ্রে ছড়িয়ে যাবে।
তোমার নাবিকরা, কর্ণধাররা ও ছিদ্র মেরামতকারীরা
সব সমুদ্রে ছিটকে পড়বে।
তোমার শহরের বণিকরা ও সৈন্যরা সবাই
সমুদ্রে ডুবে যাবে।
তোমার ধ্বংসের দিনেই
এটা ঘটবে।
28 “‘তোমার নাবিকদের কান্না শুনে
প্রধান ভূখণ্ডটি ভয়ে কেঁপে উঠবে!
29 তোমার জাহাজের সমস্ত কর্মীরা সমুদ্রে ঝাঁপ দেবে।
দাঁড়িরা ও নাবিকরা জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পাড়ের দিকে সাঁতার কাটবে
30 তারা তোমার সম্বন্ধে দুঃখ করবে।
তারা কান্নাকাটি করে তাদের মাথার উপর ধূলো ছড়াবে ও ছাইয়ে গড়াগড়ি দেবে।
31 তারা তোমার জন্য মাথা কামাবে
ও শোক বস্ত্র পরবে।
মৃত ব্যক্তির জন্য শোক করার মত তোমাকে নিয়ে শোক করবে।
32 “‘তাদের সেই ভারী কান্নার মধ্যেও তারা তোমায় নিয়ে এই শোক গাথা গাইবে ও কাঁদবে।
“‘সোরের মত আর কে আছে!
তবু সোর হল ধ্বংস সমুদ্র মাঝে!
33 তোমার ব্যবসায়ীরা সমুদ্র পারাপার করল,
তোমার বিপুল ধনে ও পণ্যে তুমি বহু লোককে তুষ্ট করলে।
পৃথিবীর রাজাদের ধনী করলে!
34 কিন্তু এখন তুমি সমুদ্র
ও তার গভীর জলের দ্বারা চূর্ণ হয়েছ।
তোমার বানিজ্যিক পণ্য
ও তোমার সমস্ত নাবিকদল তোমার সঙ্গে ডুবে গেছে।
35 উপকূলে বাসকারী সব লোকে
তোমার সম্বন্ধে বিস্মিত।
তাদের রাজারা ভয়ানকভাবে ভীত।
তাদের মুখ সেই বিস্ময় প্রকাশ করে।
36 অন্য দেশের বণিকরা তোমাকে নিয়ে শিস্ দেয়।
কারণ তুমি শেষ হয়ে গেছ,
আর কখনও তোমায় পাওয়া যাবে না।’”
সোর নিজেকে ঈশ্বরের মতন মনে করে
28 প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, সোরের শাসককে বল, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন:
“‘তুমি ভীষণ গর্বিতমনা!
বলে থাক, “আমি দেবতা!
আমি সমুদ্রের মাঝে
দেবতাদের আসনে বসি।”
“‘কিন্তু তুমি ঈশ্বর নও, মানুষ!
তুমি কেবল নিজেকে দেবতা ভাব।
3 তুমি নিজেকে দানিয়েলের চেয়েও জ্ঞানী মনে কর!
মনে কর সব গুপ্ত বিষয় তুমি বার করতে পার!
4 দর্শন ও জ্ঞান দ্বারা
তুমি তোমার ধন উপার্জন করেছ।
তোমার ধনভাণ্ডারে সোনা ও রূপো জমা করেছ।
5 তোমার মহা প্রজ্ঞা ও ব্যবসা দ্বারা
তুমি ধনসম্পত্তি বাড়িয়েছ।
আর এখন ঐসব ধনের জন্য তোমার মন গর্বিত।
6 “‘তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন:
সোর তুমি নিজেকে দেবতার মত মনে করতে।
7 আমি তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য বিদেশীদের আনব।
তারা জাতিগণের মধ্যে বড় ভয়ঙ্কর।
তারা খাপ থেকে তরবারি টেনে বার করবে
এবং তোমার সুন্দর জিনিসগুলির ওপর, যেগুলি তোমার প্রজ্ঞা থেকে অর্জিত, তার ওপর ব্যবহার করবে।
তারা তোমার গৌরবও ধ্বংস করে দেবে।
8 তারা তোমায় টেনে কবরে নামাবে।
তুমি সমুদ্রে মারা গেছ এমন নাবিকের মত হবে।
9 সেই ব্যক্তি তোমায় হত্যা করবে।
তাও কি তুমি বলবে, “আমি দেবতা?”
না! সে তোমাকে তার শক্তির অধীন করবে।
তুমি দেখতে পাবে যে তুমি ঈশ্বর নও—মানুষ!
10 তোমার সঙ্গে বিদেশীদের[b] মত আচরণ করা হবে
এবং তুমি অপরিচিতদের মধ্যে মারা যাবে।
এই সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটবে
কারণ আমি এরকমই আজ্ঞা দিয়েছিলাম!’”
প্রভু আমার সদাপ্রভু এইসব বলেছেন।
11 প্রভুর এই বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 12 “মনুষ্যসন্তান, সোরের রাজাকে নিয়ে এই শোকের গানটা গাও। তাকে বল, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেছেন:
“‘তুমি একজন আদর্শবান লোক ছিলে,
প্রজ্ঞায় পূর্ণ ও সর্বাঙ্গ সুন্দর।
13 তুমি ঈশ্বরের উদ্যান এদনে ছিলে।
তোমার কাছে সব ধরণের মূল্যবান পাথর
চুনি, পীতমনি, হীরে,
বৈদুর্য্যমণি গোমেদক সূর্যকান্ত,
নীলকান্ত, হরিম্মণি ও মরকত ছিল।
প্রতিটি পাথরই স্বর্নখচিত ছিল।
তোমার সৃষ্টির দিনে তুমি ঐ সৌন্দর্য্যে ভূষিত হয়েছিলে।
14 আমি বিশেষ ভাবে তোমার জন্যই একজন করূবকে
তোমার একজন অভিভাবক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলাম।
আমি তোমাকে ঈশ্বরের পবিত্র পর্বতের ওপর স্থাপন করেছিলাম।
আগুনের মত চকচকে ঐ মণি মানিক্যের মধ্যে দিয়ে তুমি যাতায়াত করতে।
15 তোমাকে যখন সৃষ্টি করেছিলাম তখন তুমি ধার্মিক ও সৎ ছিলে।
কিন্তু তারপর তোমার মধ্যে দুষ্টামি পাওয়া গেল।
16 তুমি ব্যবসা করে বিরাট ধন লাভ করলে।
কিন্তু তা তোমাকে হিংস্র করে তুলল এবং তুমি পাপ করলে।
তাই আমি তোমাকে একটি অশুচি বস্তুর মত ব্যবহার করলাম।
আমি তোমাকে ঈশ্বরের পর্বত হতে ছুঁড়ে ফেললাম।
তুমি করূব দূতদের বিশেষ একজন ছিলে।
তোমার ডানা আমার সিংহাসন ঢেকে রাখত।
কিন্তু আমি তোমাকে আগুনের মত চক্মক্কারী
ঐ মণি মানিক্য থেকে জোর করে বার করে দিলাম।
17 তোমার সৌন্দর্যই তোমাকে গর্বিত করেছিল।
তোমার গৌরবই তোমার প্রজ্ঞা নষ্ট করল
তাই আমি তোমাকে মাটিতে আছাড় মারলাম।
এখন অন্য রাজারা তোমার দিকে তাকিয়ে দেখে।
18 অসাধু ব্যবসায়ী হিসাবে তুমি বহু অন্যায় কাজ করেছিলে।
এইভাবে পবিত্রস্থানগুলি অশুচি করলে।
তাই আমি তোমার মধ্যে থেকেই আগুন বার করলাম।
আর তা তোমাকে জ্বালিয়ে দিল
ও তুমি পুড়ে ছাই হলে।
আর এখন সবাই তোমার লজ্জা দেখতে পাচ্ছে।
19 “‘তোমার যা অবস্থা হল
তা দেখে অন্য জাতির লোকরা বিস্মিত।
তুমি লক্ষ্য করেছিলে, ভয় পেয়ে গিয়েছিলে
এবং শেষ হয়ে গিয়েছিলে।’”
সীদোন সম্বন্ধে বার্তা
20 প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল; তিনি বললেন, 21 “মনুষ্যসন্তান, সীদোনের দিকে তাকিয়ে আমার হয়ে সেই স্থানের বিরুদ্ধে কথা বল। 22 বল, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন:
“‘সীদোন আমি তোমার বিরুদ্ধে!
তোমার লোকেরা আমায় সম্মান করতে শিখবে!
আমি সীদোনকে শাস্তি দেব।
তখন লোকে জানবে যে আমিই প্রভু, আমিই পবিত্র।
আর সেই ভাবে আমার সঙ্গে ব্যবহার করবে।
23 আমি সীদোনে রোগ ও মৃত্যু পাঠাব
আর শহরের মধ্যে বহু লোক মারা যাবে।
খড়্গ শত্রু সৈন্য শহরের বাইরের বহু লোককেও হত্যা করবে।
তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু!
ইস্রায়েল জাতিকে দেখে আর কেউ হাসবে না
24 “‘ইস্রায়েলের চার ধারের দেশগুলো যারা তাদের ঘৃণা করেছিল, তারা ইস্রায়েলকে আঘাত করতে আর জ্বালাজনক হুল বা কাঁটার মত হবে না। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু, তাদের সদাপ্রভু।’”
25 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন, “আমি ইস্রায়েলের জনগণকে অন্যান্য জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু আমিই আবার তাদের পরিবারকে একত্র করব। তখন ঐ জাতিরা জানবে যে কেবল আমিই পবিত্র এবং আমার সাথে সেই অনুসারে ব্যবহার করবে। আমি আমার দাস যাকোবকে যে দেশ দিয়েছিলাম, ইস্রায়েলের জনগণ তখন সেই দেশে বাস করবে। 26 তারা সেই দেশে নিরাপদেই বাস করবে, ঘরবাড়ী বানাবে ও দ্রাক্ষা গাছ লাগাবে। চার পাশের যে জাতিরা তাদের ঘৃণা করত, আমি তাদের শাস্তি দেব। তখন ইস্রায়েলবাসী নিরাপদে বাস করবে, আর জানবে যে আমিই তাদের প্রভু ও ঈশ্বর।”
মিশরের বিরুদ্ধে বার্তা
29 নির্বাসনের দশম বছরের দশম মাসের (জানুযারী) দ্বাদশ দিনে প্রভুর, আমার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, মিশরের রাজা ফরৌণের দিকে তাকিয়ে তার বিরুদ্ধে ও মিশরের বিরুদ্ধে আমার হয়ে এই কথা বল। 3 বল, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন:
“‘মিশরের রাজা ফরৌণ, আমি তোমার বিরুদ্ধে।
তুমি নীলনদের মাঝখানে শুয়ে থাকা সেই সামুদ্রিক দানব।
তুমি বলে থাক, “এটা আমার নদী!
আমিই এর সৃষ্টিকর্তা!”
4-5 “‘কিন্তু আমি তোমার চোয়ালে বঁড়শি দিয়ে বিঁধিয়ে দেব।
নীলনদের মাছরা তোমার আঁশে ধরা পড়বে।
আমি তোমাকে মাছশুদ্ধ নদী থেকে
ডাঙ্গায় তুলে আনব।
আমি তোমাকে সবেগে নির্জন প্রান্তরে ছুঁড়ে ফেলে দেব।
তুমি মাটিতে পড়ে থাকবে, কেউ তোমায় তুলে কবর দেবে না।
আমি তোমাকে খাদ্যস্বরূপ বন্য পশু
ও পাখিদের কাছে দেব।
6 তখন মিশরে বসবাসকারী সবাই
জানবে যে আমিই প্রভু।
“‘আমি কেন এসব করব?
কারণ ইস্রায়েলের লোকরা সাহায্যের জন্য মিশরের ওপর নির্ভর করেছিল।
কিন্তু মিশর হচ্ছে একটি পাতলা খাগের লাঠির মত।
7 যখন ইস্রায়েল তোমার সঙ্গে লেগে রইল,
তখন তুমি ভেঙে পড়লে এবং সে তোমার ঘাড় মটকে দিল।
যখন ইস্রায়েল তোমার ওপর হেলান দিল,
তুমি ভেঙে পড়লে আর ওদের ফেলে দিলে।
কিন্তু মিশর কেবল তাদের হাত ও কাঁধ বিদ্ধ করেছে।
তারা সাহায্যের জন্য তোমার ওপর ভার দিয়েছিল, কিন্তু তুমি তার কাঁধ মুচড়ে ভেঙে দিয়েছ।’”
8 তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন:
“আমি তোমার বিরুদ্ধে তরবারি আনব,
এবং তোমার সমস্ত লোকজন ও পশুপাখি ধ্বংস করব।
9 মিশর শূন্য ও ধ্বংস হবে,
তখন তারা জানবে আমিই প্রভু।”
ঈশ্বর বললেন, “কেন আমি এসব কাজ করব? কারণ তুমি বলেছ, ‘এই নদী আমার, আমিই এর নির্মাতা।’ 10 তাই আমি (ঈশ্বর) তোমার বিরুদ্ধে। আমি তোমার নীলনদের বহু শাখা-প্রশাখাগুলিরও বিরুদ্ধে। আমি মিশরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করব। মিগ্দোল থেকে আসওয়ান পর্যন্ত এমনকি কূশ দেশের সীমানা পর্যন্ত শহরগুলি শূন্য হবে। 11 কোন লোক এমনকি পশুও মিশরের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করবে না। 40 বছর ধরে কেউ তার মধ্যে দিয়ে যাবেও না, বসবাসও করবে না। 40 বছর ধরে শহরগুলি ধ্বংসস্তুপ হয়ে পড়ে থাকবে 12 আমি মিশর ধ্বংস করব। শহরগুলো 40 বছর ধরে ধ্বংসের মধ্যে পড়ে থাকবে। আমি জাতিগণের মধ্যে মিশরীয়দের ছড়িয়ে দেব, বিদেশে তাদের আগন্তুকের মত করব।”
13 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “আমি মিশরের লোকদের বহু জাতির মধ্যে ছিন্ন ভিন্ন করব। কিন্তু 40 বছর পর আমি ঐ লোকদের আবার সংগ্রহ করব। 14 আমি মিশরীয়দের বন্দী দশা ফেরাব, তাদের জন্মভূমি পথ্রোষে ফিরিয়ে আনব কিন্তু তাদের রাজ্যও তার গুরুত্ব হারাবে। 15 অন্যান্য রাজ্যের থেকে সেই রাজ্য সব চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেটা আর কখনও অন্যান্য জাতির উপরে নিজেকে উন্নত করবে না। আমি তাদের এমন ন্যূন করব যে তারা আর জাতিগণের উপরে কর্তৃত্ব করবে না। 16 ইস্রায়েল পরিবার আর কখনও মিশরের উপরে নির্ভর করবে না। ইস্রায়েলীয়রা তাদের পাপ স্মরণ করবে—তারা স্মরণ করবে যে তারা মিশরের দিকে সাহায্যের জন্য ফিরেছিল (ঈশ্বরের দিকে নয়)। আর তারা জানবে যে আমিই প্রভু এবং সদাপ্রভু।”
বাবিল মিশর লাভ করবে
17 নির্বাসনের সাতাশতম বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে প্রভুর এই বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 18 “মনুষ্যসন্তান, নবূখদ্রিৎসর বাবিলের রাজা সোরের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে তার সৈন্যদের দিয়ে যুদ্ধ করিয়েছিলেন। তারা প্রত্যেক সৈন্যের মাথা কামিয়েছিল। ভারী মাল বহন করা কালীন ঘর্ষন দ্বারা প্রত্যেক সৈন্য নগ্ন হয়েছিল। নবূখদ্রিৎসর ও তার সেনাদল সোরকে পরাজিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছিল কিন্তু তারা সেই সব কঠোর পরিশ্রম দ্বারা কিছুই লাভ করেনি।” 19 তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “আমি মিশর দেশ বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসরকে দেব আর সে মিশরের লোকদের বহন করে নিয়ে যাবে। সেটাই হবে নবূখদ্রিৎসরের সেনাদলের বেতন। 20 আমি নবূখদ্রিৎসরকে তার কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার হিসাবে মিশর দেশ দিয়েছি। কারণ তারা আমার জন্য কাজ করেছে।” প্রভু আমার সদাপ্রভুই এসব কথা বলেছেন!
21 “সেই দিন আমি ইস্রায়েল পরিবারকে শক্তিশালী করব, তখন হে যিহিষ্কেল আমি তোমাকে তাদের কাছে কথা বলতে দেব আর তারা জানবে যে আমিই প্রভু।”
স্ত্রী এবং স্বামীদের জন্য উপদেশ
3 ঠিক সেইরকম স্ত্রীরা, তোমরা অবশ্যই তোমাদের স্বামীর বশ্যতা স্বীকার করো যাতে যারা ঈশ্বরের শিক্ষাকে অনুসরণ করে না এমন স্বামীরা তোমাদের ব্যবহারের দ্বারা খ্রীষ্টের দিকে আকৃষ্ট হয়। 2 তাদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই, তারা নিজেদের স্ত্রীদের শুদ্ধ ও সম্মানজনক আচার ব্যবহার দেখে আকৃষ্ট হবে। 3 চুলের খোঁপা, সোনার অলঙ্কার অথবা সূক্ষ্ম জামা কাপড় এইসব নশ্বর ভুষণ দ্বারা নয়, 4 বরং তোমাদের ভুষণ হওয়া উচিত তোমাদের অন্তরের মধ্যে লুকোনো সত্তা নম্রতা ও শান্ত স্বভাব, যা ঈশ্বরের চোখে মহামূল্যবান।
5 এইভাবেই সেই পবিত্র মহিলারা যারা অতীতে ঈশ্বরে ভরসা রাখত তারা স্বামীদের প্রতি তাদের সমীহপূর্ণ ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সুন্দরী করে তুলতো। 6 যেমন সারা অব্রাহামের অনুরক্তা ছিলেন এবং তাঁকে “মহাশয়” বলে ডাকতেন। মহিলারা, তোমরা যদি ভীত না হয়ে যা ঠিক তাই কর তবে তা প্রমাণ করবে যে তোমরা সারার যোগ্য সন্ততি।
7 সেইভাবে তোমরা স্বামীরাও, তোমাদের স্ত্রীদের সাথে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে বাস কর। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। কারণ তারা তোমাদের থেকে দুর্বল হলেও ঈশ্বর তাদেরও সমানভাবে আশীর্বাদ করেন, যে আশীর্বাদ অনুগ্রহের, যা সত্য জীবন দান করে। তাদের সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করা তোমাদের উচিত তা যদি না কর তবে তোমাদের প্রার্থনায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
সঠিক কর্মের জন্য কষ্ট
8 তোমরা সকলে শান্তিতে বাস কর, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও, ভাই ও বোনের প্রতি প্রেমময়, সমব্যথী এবং নম্র হও। 9 মন্দের পরিবর্তে মন্দ করো না, অথবা অপমান করলে অপমান ফিরিয়ে দিও না, বরং ঈশ্বরের কাছে তার জন্য প্রার্থনা কর যেন তিনি তাকে আশীর্বাদ করেন, কারণ এই করতেই তোমরা আহূত, যাতে তোমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে পারো। 10 শাস্ত্রে বলছে:
“যে জীবন উপভোগ করতে চায়
ও শুভ দিন দেখতে চায়,
সে মন্দ কথা থেকে তার জিভকে যেন সংযত রাখে,
আর মিথ্যা কথা বলা থেকে ঠোঁটকে যেন সামলে রাখে।
11 পাপের পথে না গিয়ে সে সৎ কর্ম করুক;
শান্তির চেষ্টা করে সেই মতো চলুক।
12 কারণ যারা ধার্মিক তাদের প্রতি প্রভুর সজাগ দৃষ্টি আছে
এবং তাদের প্রার্থনা শোনবার জন্য তাঁর কান খোলা আছে।
কিন্তু যারা মন্দ পথে চলে প্রভু তাদের দিক থেকে তাঁর মুখ ফিরিয়ে নেন।”(A)
13 তোমরা যদি সব সময় ভাল কাজই করতে চাও তবে কে তোমাদের ক্ষতি করবে? 14 কিন্তু যদি ন্যায় পথে চলার জন্য নির্যাতিত হও, তাহলে তোমরা ধন্য আর, “তোমরা ঐ লোকদের ভয় করো না বা তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না।”(B) 15 বরং অন্তরে খ্রীষ্টকে পবিত্র প্রভু বলে মেনে নাও। তোমাদের সবার যে প্রত্যাশা আছে সেই বিষয়ে তোমাদের যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে তখন তার যথাযথ জবাব দিতে তোমরা সব সময় প্রস্তুত থেকো। 16 কিন্তু এই জবাব বিনয় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দেবে। তোমাদের বিবেক শুদ্ধ রেখো, যাতে তোমরা সমালোচিত না হও, তাহলে যারা তোমাদের খ্রীষ্টীয় সৎ জীবনযাপনের প্রতি অপমান প্রদর্শন করে তারা লজ্জিত হবে।
17 কারণ অন্যায় করে দুঃখভোগ করার চেয়ে বরং ঈশ্বরের যদি এমন ইচ্ছা হয়, ভাল কাজ করে দুঃখভোগ করা অনেক ভাল।
18 কারণ খ্রীষ্ট নিজে পাপের জন্য একবার চিরকালের জন্য
সবার হয়ে কষ্টভোগ করেছিলেন।
সেই ন্যায়পরায়ণ মানুষ অন্যায়কারী মানুষের জন্য
মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
এই কাজ তিনি করেছিলেন ঈশ্বরের কাছে তোমাদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
দৈহিকভাবে তাঁকে মারা হয়েছিল,
কিন্তু আত্মায় তিনি জীবিত হলেন।
19 সেই অবস্থায় তিনি কারারুদ্ধ আত্মাদের কাছে গিয়ে প্রচার করলেন। 20 সেই কারারুদ্ধ আত্মারা বহুকাল আগে নোহের সময়ে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল। নোহের জাহাজ তৈরীর সময় ঈশ্বর তাদের জন্য ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন। সেই জাহাজে কেবল অল্প কিছু লোক (আট জন) জলের দ্বারা রক্ষা পেল। 21 সেই জল বাপ্তিস্মের মত যা এখন তোমাদের রক্ষা করে। শরীরের ময়লা সেই বাপ্তিস্মের দ্বারা ধুয়ে যায় না; কিন্তু তা ঈশ্বরের কাছে সৎ বিবেক বজায় রাখার জন্য এক আবেদন। যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের কারণে এটা তোমাদের রক্ষা করে। 22 যীশু স্বর্গারোহণ করে পিতা ঈশ্বরের ডানপাশে আছেন, আর স্বর্গদূতরা, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতগণ এবং শক্তিধররা এখন তাঁর অধীনে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International