Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যিরমিয় 37-39

যিরমিয়কে কারাগারে বন্দী করা হল

37 নবূখদ্‌রিৎসর ছিল বাবিলের রাজা। যিহোয়াকীমের পুত্র যিকনিয়ের পরিবর্তে সিদিকিয়কে যিহূদার রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিল নবূখদ্‌রিৎসর। সিদিকিয় ছিল রাজা যোশিয়ের পুত্র। কিন্তু সিদিকিয় ভাববাদী যিরমিয় মাধ্যমে প্রচারিত প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি। এবং সিদিকিয়ের ভৃত্যগণ ও যিহূদার লোকরাও প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি।

সিদিকিয় যিহূখল এবং যাজক সফনিয়কে যিরমিয়র কাছে পাঠিয়েছিল একটি বার্তা দিয়ে। যিহূখল ছিল শেলিমিয়ের পুত্র এবং সফনিয় ছিল মাসেয়ের পুত্র। বার্তাটি ছিল: “যিরমিয়, আমাদের জন্য প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো।”

সেই সময় যিরমিয়কে তখনও কারাগারে বন্দী করা হয়নি, তাই লোকদের মধ্যে যে কোন জায়গায় যেতে তার বাধা ছিল না। একই সময় ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে যিহূদার দিকে রওনা দিয়েছিল। এবং বাবিলের সৈন্যদল জেরুশালেমকে অধিকার করবার জন্য তাকে ঘিরে ফেলেছিল। কিন্তু যখন তারা শুনল ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে তখন তারা জেরুশালেম ত্যাগ করে মিশরের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আগুয়ান হয়েছিল।

ভাববাদী যিরমিয়র কাছে প্রভুর বার্তা এলো: “প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের ঈশ্বর যা বলেছেন তা হল: ‘যিহূখল ও সফনিয়, তোমাদের যে রাজা সিদিকিয় আমার কাছে পাঠিয়েছে তা আমি জানি। যাও সিদিকিয়র কাছে ফিরে গিয়ে বলো: ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে বাবিলের সৈন্যদের হাত থেকে তোমাদের বাঁচাতে এলেও তারা কিন্তু আবার মিশরেই ফিরে যাবে। তারপর বাবিলের সৈন্য আবার এখানে এসে জেরুশালেম আক্রমণ করবে। তখন বাবিলের সৈন্য জেরুশালেম দখল করে নেবে এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দেবে।’ প্রভু এরপর যা বললেন: ‘জেরুশালেমের লোকরা, তোমরা নিজেরাই নিজেদের বোকা বানিও না। নিজেদের একথা বলো না, “বাবিলের সৈন্যরা নিশ্চিত ভাবে আমাদের একলা ছেড়ে চলে যাবে।” তারা তা করবে না। 10 ওহে জেরুশালেমবাসী, তোমরা যদি বাবিলের সৈন্যদের যুদ্ধে পরাজিতও করতে পারতে তাহলেও তাদের তাঁবুতে কিছু আহত সৈনিক পড়ে থাকতো। এমনকি সেই আহত সৈনিকরাই উঠে এসে এই জেরুশালেম শহর পুড়িয়ে দিতে সক্ষম হতো।’”

11 বাবিলের সৈন্যরা যখন জেরুশালেম ত্যাগ করে মিশরের ফরৌণের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল তখন 12 বিন্যামীন দেশে[a] যাবার জন্য যিরমিয় জেরুশালেম ত্যাগ করল। সে এই শহরে ভ্রমণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। সে সেখানে যেতে চেয়েছিল পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ বাটোযারার জন্য। 13 কিন্তু যিরমিয় যখন জেরুশালেমের বিন্যামীন ফটকে পৌঁছেছিল তখনই তাকে ঐ ফটকের দায়িত্বে থাকা প্রধান রক্ষী গ্রেপ্তার করেছিল। সেই প্রধান রক্ষীর নাম ছিল যিরিয়। যিরিয় ছিল শেলিমিয়ের পুত্র এবং হনানিয়ের পৌত্র। যিরিয় যিরমিয়কে গ্রেপ্তার করার পর বলেছিল, “যিরমিয় তুমি আমাদের ত্যাগ করে বাবিলের পক্ষে যোগ দিতে যাচ্ছিলে।”

14 যিরমিয় যিরিয়কে বলেছিল, “তোমার অভিযোগ সত্যি নয়, আমি বাবিলের পক্ষে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম না।” কিন্তু যিরিয় যিরমিয়র সেই আপত্তি শুনতে অস্বীকার করেছিল এবং সে যিরমিয়কে গ্রেপ্তার করে রাজার সভাপরিষদদের সামনে এনে হাজির করেছিল। 15 ঐ সভাপরিষদরা যিরমিয়র প্রতি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। সভাসদরা যিরমিয়কে প্রহার করে কারাগারে বন্দী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যোনাথন নামক এক ব্যক্তির বাড়িটিকেই কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যোনাথন ছিল যিহূদার রাজার আজ্ঞাবাহী লেখক 16 যিরমিয়কে তারা সেই বাড়ির ভূগর্ভস্থ একটি অন্ধকার কারা কক্ষে বন্দী করে রেখেছিল। কক্ষটি ছিল মাটির নীচে। যিরমিয়কে সেখানে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছিল।

17 দীর্ঘদিন পর রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে তাঁর প্রাসাদে নিয়ে এসে একান্তে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রাজা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “প্রভুর আর কোন বার্তা আছে?”

যিরমিয় উত্তর দিয়ে বলেছিল, “হ্যাঁ, প্রভুর বার্তা হল, সিদিকিয় তোমাকে বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে।” 18 যিরমিয় এরপর রাজা সিদিকিয়কে বলেছিল, “আমার অন্যায়টা কি? আমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করবার মত কি এমন ভুল কাজ করেছি আপনার বিরুদ্ধে, আপনার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অথবা জেরুশালেমের লোকদের বিরুদ্ধে? 19 রাজা সিদিকিয় কোথায় এখন আপনার ভাববাদীরা? এই ভাববাদীরা আপনার কাছে ভুল বার্তা প্রচার করেছিল। তারা বলেছিল, ‘বাবিলের রাজা আপনাকে এবং ঐ দেশ যিহূদাকে আক্রমণ করবে না।’ 20 কিন্তু আমার প্রভু, যিহূদার রাজা এখন অনুগ্রহ করে আমার কথা শুনুন। আমাকে অনুগ্রহ করে অনুরোধ করতে দিন। এই হল আমার অনুরোধ: আমাকে আর এই লেখক যোনাথনের বাড়িতে কারাবন্দী করে রাখবেন না। যদি আপনি আবার আমাকে সেখানে পাঠান, আমি সেখানে মারা যাব।”

21 সুতরাং রাজা সিদিকিয় আদেশ দিয়েছিলেন যে, এবার থেকে যিরমিয়কে প্রহরীর পাহারায় মন্দির় চত্বরে বন্দী হয়ে থাকতে হবে এবং রাজার আদেশ ছিল যিরমিয়কে রুটি দেওয়া হবে রাস্তার হকারদের কাছ থেকে। শহরে যতদিন পর্যন্ত রুটি পাওয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত যিরমিয়কে রুটি দেওয়া হবে। তাই যিরমিয়কে উঠোনে রক্ষীর অধীনে রাখা হয়েছিল।

যিরমিয়কে চৌবাচ্চায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল

38 যিরমিয় যে বার্তাগুলি প্রচার করেছিল সেগুলি রাজার কয়েকজন সভাপরিষদরা শুনতে পেয়েছিলেন। তাঁরা হলেন: মত্তনের পুত্র শফটিয়, পশ‌্হূরের পুত্র গদলিয়, শেলিমিয়ের পুত্র যিহূখল এবং মল্কিয়ের পুত্র পশ‌্হূর। যিরমিয় সমস্ত লোকদের এই বাণী বলেছিল: “প্রভু যা বলেছেন তা হল এই: ‘জেরুশালেমে বসবাসকারী প্রত্যেকে হয় তরবারির আঘাতে নয় অনাহারে বা ভয়ঙ্কর মহামারীতে মারা যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজেকে বাবিলের সৈন্যবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে সে বেঁচে থাকবে।’ এবং প্রভু যা বলেছেন তা হল: ‘জেরুশালেম শহর বাবিলের রাজার সৈন্যবাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হবে এবং বাবিলের রাজাই দখল করবে এই শহর।’”

রাজার ঐ সমস্ত সভাপারিষদরা যিরমিয়র প্রচারিত ঐ বাণী শুনে রাজা সিদিকিয়ের কাছে গিয়ে বলল, “যিরমিয়কে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিৎ‌। সে আমাদের সৈন্যদের নিরুৎসাহিত করছে। তার কথা দিয়ে সে সমস্ত নাগরিককে নিরুৎসাহিত করেছে। যিরমিয় চায় না আমাদের ভাল কিছু হোক্। সে শুধু জেরুশালেমের লোকদের ক্ষতি কামনা করে।”

এইসব কথা শুনে রাজা সিদিকিয় ঐ সভাপরিষদদের বলল, “যিরমিয় পুরোপুরি তোমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সুতরাং তোমরা কিছু করতে চাইলে আমি তোমাদের থামাতে পারি না।”

সুতরাং সভাসদরা যিরমিয়কে নিয়ে গেল মল্কিয়ের চৌবাচ্চায় ফেলে দেবার জন্য (মল্কিয় ছিল রাজপুত্র)। চৌবাচ্চাটি ছিল উপাসনালয় চত্বরে, সেখানে থাকতো রাজার প্রহরীরা। সভাসদরা যিরমিয়কে দড়ি দিয়ে বাঁধল এবং জলাধারে ফেলে দিল। জলাধারটিতে জল ছিল না, ছিল শুধু কাদা। এবং যিরমিয় সেই কাদার ভেতরে ডুবে গেল।

কিন্তু এবদ-মেলক নামক এক ব্যক্তি শুনতে পেয়েছিল যে সভাসদরা যিরমিয়কে জলাধারে ফেলে দিয়েছে। এবদ-মেলক ছিল একজন কূশ দেশীয় (ইথিওপিয়ার) ব্যক্তি এবং সে ছিল রাজার প্রাসাদের সেবক, একজন নপুসংক। রাজা সিদিকিয় তখন বসেছিল বিন্যামীন ফটকে। তাই এবদ-মেলক রাজার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রওনা দিল।

8-9 রাজাকে সে বলেছিল, “আমার মনিব এবং মহারাজ, ঐ সভাসদরা অসৎ‌ উপায় অবলম্বন করেছে ভাববাদী যিরমিয়র বিরুদ্ধে। তারা যিরমিয়কে জলাধারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তারা তাকে সেখানে মরবার জন্য ছেড়ে রেখেছে।”[b]

10 তখন রাজা সিদিকিয় এবদ-মেলককে আদেশ দিয়েছিল, “এবদ-মেলক রাজপ্রাসাদ থেকে তিন জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাও এবং জলাধার থেকে যিরমিয়কে সে মরে যাবার আগে তুলে নাও।”

11 এবদ-মেলক তিনজন লোক সঙ্গে নিল কিন্তু তার আগে সে রাজপ্রাসাদের নীচে ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে কিছু পুরানো বস্ত্র ও কিছু জীর্ণ বস্ত্রখণ্ড জোগাড় করল। তারপর জলাধারের কাছে গিয়ে সে ঐ জীর্ণ বস্ত্রখণ্ডগুলি দড়ির সঙ্গে নীচে নামিয়ে দিয়ে 12 যিরমিয়র উদ্দেশ্যে বলল, “যিরমিয় এই জীর্ণ বস্ত্রখণ্ডগুলি তুমি তোমার কাঁধের নীচে ভাল করে জড়িয়ে নাও। আমরা যখন দড়ির সাহায্যে তোমায় টেনে তুলব তখন ঐ বস্ত্রখণ্ডগুলি দড়ির আঘাত থেকে তোমায় রক্ষা করবে।” এবদ-মেলকের কথা মতোই যিরমিয় বস্ত্রখণ্ডগুলি বাহুতে জড়িয়ে নিল। 13 তারপর তারা তাকে দড়িগুলো দিয়ে টেনে তুলল এবং জলাধারের থেকে বাইরে আনল। যিরমিয়কে আবার রক্ষীদের অধীনে উঠোনে রেখে দেওয়া হয়েছিল।

সিদিকিয় যিরমিয়কে আরও কিছু প্রশ্ন করল

14 রাজা সিদিকিয় ভাববাদী যিরমিয়কে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য একজনকে পাঠাল। যিরমিয়কে প্রভুর মন্দিরের তৃতীয় প্রবেশ পথে আনা হয়েছিল। রাজা বললেন, “যিরমিয় আমি তোমাকে কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করব। তুমি কিন্তু আমার কাছে কোন কিছু লুকোবে না, সব কথা আমাকে খোলাখুলি বলবে।”

15 যিরমিয় সিদিকিয়কে বলল: “আমি যদি আপনার কথার উত্তর দিই, আপনি হয়ত আমায় মেরে ফেলবেন। আমি যদি আপনাকে উপদেশও দিই, আপনি আমার কথা শুনবেন না।”

16 কিন্তু রাজা সিদিকিয় গোপনে এই বলে যিরমিয়র কাছে একটি প্রতিশ্রুতি করলেন, “যিরমিয়, প্রভু হচ্ছেন সেই জন যিনি আমাদের জীবনের রুটি দেন। আমি প্রভুর নামে শপথ করছি, আমি তোমায় মেরে ফেলব না এবং যারা তোমায় মারতে চায় সেই কর্মচারীদের হাতেও তুলে দেব না।”

17 তখন যিরমিয় রাজা সিদিকিয়কে বলল, “প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘যদি আপনি বাবিলের রাজার সভাসদদের হাতে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে জীবন রক্ষা পাবে এবং জেরুশালেমকেও আগুনে পোড়ানো হবে না। আপনার পরিবারও জীবিত থাকবে। 18 কিন্তু যদি আপনি আত্মসমর্পণ না করেন, বাবিলীয় সৈন্যদল জেরুশালেমকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে এবং আপনি তাদের দ্বারা বন্দী হবেন।’”

19 কিন্তু রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি যিহূদার সেই সমস্ত লোকদের যারা ইতিমধ্যেই বাবিলের পক্ষ নিয়েছে। আমি ভীত কারণ বাবিলের সৈন্যরা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে যিহূদার ঐ মানুষগুলোর হাতে তুলে দেবে। তারা আমার ওপর নিদারুণ অত্যাচার চালাবে।”

20 কিন্তু উত্তরে যিরমিয় বলল, “বাবিলের সৈন্যরা আপনাকে যিহূদার লোকদের হাতে তুলে দেবে না। রাজা সিদিকিয়, আমি যা বলছি তা করে প্রভুকে মান্য করুন। তাহলে আপনার ভাল হবে। আপনি রক্ষা পাবেন। 21 কিন্তু আপনি যদি বাবিলের সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন তাহলে কি হবে তা প্রভু আমাকে আগেই দেখিয়েছেন। প্রভু বলেছেন: 22 রাজবাড়ির সমস্ত মহিলাকে বাবিলের গুরুত্বপূর্ণ সভাসদদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। রাজমহিলাগণ আপনাকে নিয়ে মজা করে গান গাইবে। ওরা গাইবে:

‘তোমার বন্ধুরা যাদের তুমি বিশ্বাস করতে,
    তোমাকে ভুল পথে চালিত করেছে।
তোমার পা কাদায় আটকে গিয়েছিল
    আর তারা তোমায় একা ফেলে পালিয়ে গিয়েছে।’

23 “তোমার স্ত্রীদের ও সন্তানদের বাবিলের সৈন্যরা ধরে নিয়ে আসবে। তুমিও পালাতে পারবে না। তুমি বন্দী হবে আর জেরুশালেমকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হবে।”

24 তখন সিদিকিয় যিরমিয়কে বলে উঠল, “কাউকে বলো না যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি তুমি বলে দাও তাহলে হয়তো তোমাকে হত্যা করা হবে। 25 ঐ সভাসদরা হয়তো জানতে পারবে যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তোমার কাছে এসে বলবে, ‘যিরমিয় রাজাকে কি বলেছো তা আমাদের বলো এবং রাজা তোমাকে কি বলেছে তাও আমাদের বলো। সৎ‌ভাবে আমাদের সব কিছু জানাও না হলে তোমাকে হত্যা করব।’ 26 যদি সভাসদরা এরকম বলে, তাহলে তোমার তাদের বলা উচিৎ‌: ‘আমি রাজার কাছে ভিক্ষা করেছিলাম আমাকে আবার যোনাথনের বাড়ীর নীচে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ না করতে, নাহলে আমি সেখানে মারা যাব।’”

27 তাই ঘটল। ঐ সভাসদরা জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যিরমিয়র কাছে এলো। সুতরাং যিরমিয় তাদের তাই বলল যা রাজা তাকে বলার জন্য আদেশ দিয়ে ছিলেন যখন ঐ সভাসদরা যিরমিয়কে একা ছেড়ে দিল। কেউ জানতে পারল না রাজা এবং যিরমিয়র মধ্যে কি কথা হয়েছিল।

28 অবশেষে যিরমিয় মন্দির চত্বরে প্রহরীদের নজরবন্দী হয়ে রয়ে গেল যতদিন পর্যন্ত না জেরুশালেম দখল হয় ততদিন পর্যন্ত।

জেরুশালেমের পতন

39 এইভাবে জেরুশালেম দখল হল: যিহূদার ওপর রাজা সিদিকিয়র নবম বছরের রাজত্বের দশম মাসে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌রিৎসর তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ জেরুশালেম শহর অধিগ্রহণের জন্য বেরিয়েছিলেন। তারা শহরটিকে অধিকার করবার জন্য তাকে ঘিরে ফেলেছিল। এবং সিদিকিয়র রাজত্ব কালের একাদশতম বছরের চতুর্থ মাসের নবম দিনে বাবিলের সৈন্যরা জেরুশালেমের প্রাচীর ভেঙে ফেলেছিল। তখন বাবিলের রাজার সভাসদরা জেরুশালেম শহরে প্রবেশ করেছিল। তারা এসে বসেছিল শহরের মাঝখানের ফটকে। সেই সভাসদদের নাম ছিল: সমগর জেলার রাজ্যপাল নের্গল-শরেৎসর, সমগরনবো নামের এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী এবং আরও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পারিষদবৃন্দও সেখানে উপস্থিত ছিল।

বাবিল থেকে আসা ঐ সভাসদদের সিদিকিয় দেখেছিলেন। অতএব, সেই রাত্রেই তিনি এবং তাঁর বিশ্বস্ত সৈন্যরা রাজার বাগানের মধ্যে দিয়ে একটি গোপন ফটক পেরিয়ে, দুটি প্রাচীরের মধ্যে দিয়ে জেরুশালেম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা যর্দন উপত্যকার দিকে পালিয়েছিলেন। বাবিলের সৈন্যদল সিদিকিয় ও তাঁর সৈন্যদের তাড়া করেছিল এবং তাদের যিরীহোর সমতলভূমিতে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে আসা হয় বাবিলের রাজা নবূখদ্‌রিৎসরের কাছে। নবূখদ্‌রিৎসর তখন ছিলেন হমাৎ প্রদেশের রিব‌্লা শহরে। সেখানে তিনি ঠিক করেছিলেন সিদিকিয়র প্রতি কি করা হবে। এই রিব‌্লা শহরেই সিদিকিয়র চোখের সামনেই সিদিকিয়র পুত্রদের নবূখদ্‌রিৎসর হত্যা করেছিলেন। এবং যিহূদার রাজসভার সমস্ত সভাপারিষদবৃন্দকেও হত্যা করা হয়েছিল। নবূখদ্‌রিৎসর সিদিকিয়র চোখ দুটো উপড়ে ফেলেছিলেন, তাকে পিতলের শেকল দিয়ে শৃঙ্খলিত করেছিলেন এবং তাকে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন।

বাবিলের সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ এবং সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং তারা জেরুশালেমের পাঁচিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। বাবিলের রাজার বিশেষ রক্ষীদের প্রধান নবূষরদন যারা তখনও বেঁচে ছিল তাদের সবাইকে বন্দী করেছিল এবং বাবিলে নিয়ে গিয়েছিল। যারা আগেই আত্মসমর্পণ করেছিল তাদেরও নবূষরদন বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিল। 10 কিন্তু যিহূদার কিছু গরীব লোককে নবূষরদন বন্দী করে নিয়ে না গিয়ে বরং তাদের সে জমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত দান করে দিয়েছিল।

11 কিন্তু নবূখদ্‌রিৎসর যিরমিয়র ব্যাপারে নবূষরদনকে কিছু আদেশ দিয়েছিলেন। নবূষরদন ছিল নবূখদ্‌রিৎসরের বিশেষ দেহরক্ষীদের প্রধান। আদেশ ছিল: 12 “যিরমিয়কে খুঁজে বার করো এবং ভালো করে তার দেখাশোনা কর। তাকে আঘাত করো না। সে যা চায় তাই তাকে দাও।”

13 সুতরাং নবূষরদন, নবূখদ্‌রিৎসরের বিশেষ রক্ষীদের প্রধান, বাবিলের বিশেষ রক্ষসুদর মুখ্য আধিকারিক নবূশস্বন, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী নের্গল-শরেৎসর এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের যিরমিয়র সন্ধানে পাঠানো হয়েছিল। 14 তারা যিরমিয়কে উপাসনালয় চত্বরে খুঁজে পেয়েছিল। সেখানে তাকে নজরবন্দী করে রেখেছিল যিহূদার রাজার রক্ষীরা। ঐ আধিকারিকরা যিরমিয়কে গদলিয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। গদলিয় ছিল অহীকামের পুত্র এবং শাফনের পৌত্র। গদলিয়কে নির্দেশ দেওয়া ছিল যিরমিয়কে তার নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সুতরাং যিরমিয় তার নিজের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছিল।

এবদ-মেলকের প্রতি প্রভুর বার্তা

15 মন্দির চত্বরে প্রহরীদের পাহারায় যিরমিয় যখন বন্দী ছিল তখন তার কাছে প্রভুর বার্তা এসেছিল। 16 এই ছিল সেই বার্তা: “যাও এবং কূশীয় এবদ-মেলককে বল: ‘প্রভু সর্বশক্তিমান ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেন: জেরুশালেম সম্বন্ধে আমার বাণী খুব শীঘ্রই আমি সত্যে পরিণত করব। আমার বার্তা সত্য হবে বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে, ভালো জিনিষ দিয়ে নয়। তোমরা তা তোমাদের নিজেদের চোখেই দেখতে পাবে। 17 কিন্তু এবদ-মেলক, আমি তোমাকে সেদিন রক্ষা করব।’ যাদের তুমি ভয় পাও তোমাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। 18 আমি তোমাকে রক্ষা করব। তরবারির আঘাতে তোমার মৃত্যু হবে না। কিন্তু তুমি পালিয়ে যাবে এবং বাঁচবে। তুমি আমার ওপর তোমার বিশ্বাস রেখেছিলে বলেই তুমি বেঁচে যাবে।” এই হল প্রভুর বার্তা।

ইব্রীয় 3

যীশু মোশির থেকে মহান

তাই তোমরা সকলে যীশুর বিষয়ে চিন্তা কর। ঈশ্বর যীশুকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের মহাযাজক। আমার পবিত্র ভাই ও বোনেরা, আমি তোমাদের বলছি তোমরা এক স্বর্গীয় আহ্বান পেয়েছ। ঈশ্বর যীশুকে আমাদের কাছে পাঠালেন আর তাঁকে তিনি আমাদের মহাযাজক করলেন। মোশির মতন যীশুও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। যীশুর কাছে ঈশ্বর যা কিছু চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের সেই গৃহরূপ মণ্ডলীতে তিনি সে সবই করলেন। কেউ যখন কোন গৃহ নির্মাণ করে তখন গৃহ থেকে গৃহনির্মাতার মর্যাদা অধিক হয়, যীশুর বেলায়ও ঠিক তাই হয়েছে, সুতরাং মোশির থেকে অধিক সম্মান যীশুরই প্রাপ্য। প্রত্যেক গৃহ কেউ না কেউ নির্মাণ করে, কিন্তু ঈশ্বর সবকিছু নির্মাণ করেছেন। মোশি ঈশ্বরের গৃহে সেবকরূপে বিশ্বস্তভাবে কাজ করেছিলেন আর ঈশ্বর ভবিষ্যতে যা বলবেন তা লোকদের কাছে মোশিই বললেন। কিন্তু খ্রীষ্ট পুত্র হিসাবে ঈশ্বরের গৃহের কর্তা; আমরা বিশ্বাসীরাই তাঁর গৃহ, আর তাই থাকব যদি আমরা আমাদের সেই মহান প্রত্যাশা সম্পর্কে সাহস ও গর্ব নিয়ে চলি।

আমরা অবশ্যই নিয়ত ঈশ্বরকে অনুসরণ করব

তাই পবিত্র আত্মা যেমন বলছেন:

“আজ, তোমরা যদি ঈশ্বরের রব শোন,
    অতীত দিনের মতো হৃদয় কঠিন করো না, যে দিন তোমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলে;
    সেদিন তোমরা প্রান্তরে ঈশ্বরের পরীক্ষা করেছিলে।
সেই প্রান্তরে তোমাদের পিতৃপুরুষরা চল্লিশ বছর ধরে আমার সমস্ত কীর্তি দেখতে পেয়েছিল,
    তবু তারা আমার ধৈর্য্য পরীক্ষা করল।
10 তাই আমি এই জাতির ওপর ক্রুদ্ধ হলাম ও বললাম,
    ‘এরা সব সময় ভুল চিন্তা করে,
    এই লোকেরা কখনও আমার পথ বুঝল না।’
11 তখন আমি ক্রুদ্ধ হয়ে এই শপথ করলাম:
    ‘তারা কখনই আমার বিশ্রাম স্থানে প্রবেশ করতে পারবে না।’”(A)

12 আমার ভাই ও বোনেরা, দেখো, তোমরা সতর্ক থেকো, তোমাদের মধ্যে কারো যেন দুষ্ট ও অবিশ্বাসী হৃদয় না থাকে যা জীবন্ত ঈশ্বর থেকে তোমাদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। 13 তোমরা দিনের পর দিন একে অপরকে উৎসাহিত কর যতক্ষণ সময় “আজ” আছে। পাপের ছলনা যেন তোমাদের হৃদয়কে নির্মম না করে। 14 শুরুতে আমাদের যে বিশ্বাস ছিল যদি শেষ পর্যন্ত আমরা সেই বিশ্বাসে স্থির থাকি তাহলে আমরা সকলেই খ্রীষ্টের সহভাগী। 15 শাস্ত্র তো এই কথা বলে:

“আজ যদি তোমরা ঈশ্বরের রব শোন,
    তাহলে তোমাদের অন্তর কঠোর করো না, যেমন সেই বিদ্রোহের দিনে করেছিলে।”(B)

16 যারা ঈশ্বরের রব শোনার পরও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, প্রশ্ন হল তারা কারা? মোশি যাদের মিশর থেকে বার করে নিয়ে এসেছিলেন তারাই কি নয়? 17 আর কাদের ওপরই বা ঈশ্বর চল্লিশ বছর ধরে ক্রুদ্ধ ছিলেন? সেই লোকদের ওপরে নয় কি যারা পাপ করেছিল ও তার ফলে প্রান্তরে মারা পড়েছিল? 18 তিনি কাদের বিরুদ্ধেই বা শপথ করে বলেছিলেন, “এরা আমার বিশ্রামের স্থানে প্রবেশ করতে পারবে না?” যারা অবাধ্য হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কি নয়? 19 তাহলে এখন আমরা দেখলাম যে, অবিশ্বাসের দরুনই তারা ঈশ্বরের বিশ্রামের স্থানে প্রবেশ করতে পারল না।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International