Old/New Testament
যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের প্রতি সতর্কবাণী
34 প্রভুর বার্তা এলো যিরমিয়র কাছে। বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসর যখন জেরুশালেম এবং তার চারপাশের সমস্ত শহরগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল তখন প্রভুর বার্তা যিরমিয়র কাছে এসেছিল। নবূখদ্রিৎসরের সঙ্গে ছিল তার সমস্ত সৈন্য এবং তার সাম্রাজ্য। তার শাসনাধীন সমস্ত রাজ্যের সৈন্যসমূহ এবং লোকরা।
2 এই হল বার্তা: “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন: যিরমিয় যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে গিয়ে তাকে এই বার্তা দাও: ‘সিদিকিয়, প্রভু যা বলেছেন তা হল: আমি খুব শীঘ্রই বাবিলের রাজাকে জেরুশালেম দিয়ে দেব। এবং সে জেরুশালেমকে পুড়িয়ে দেবে। 3 সিদিকিয়, তুমি পালাতে পারবে না, ধরা পড়বেই। তোমাকেও বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে। তুমি বাবিলের রাজাকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। রাজার সঙ্গে তোমার মুখোমুখি কথা হবে এবং তোমাকে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে। 4 কিন্তু যিহূদার রাজা সিদিকিয়, প্রভুর প্রতিশ্রুতি শোন। প্রভু তোমার সম্বন্ধে এই কথা বলেছেন: তোমার মৃত্যু তরবারির আঘাতে হবে না। 5 তোমার মৃত্যু হবে শান্তিতে। অতীতে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া যাত্রার সময় তোমার পূর্বপুরুষদের জন্য, তোমার পূর্বে যে রাজা শাসন করেছিল তাদের যে ভাবে লোকে সম্মান দেখিয়েছিল, একই ভাবে তারাও তোমার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় তোমাকে সম্মান জানাবে। তারা তোমার জন্য চোখের জল ফেলবে এবং বিষন্নভাবে বলবে, “হে মনিব!” আমি নিজে আপনার কাছে প্রতিশ্রুতি করছি।’” এই হল প্রভুর বার্তা।
6 তাই যিরমিয় প্রভুর এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল জেরুশালেমে সিদিকিয়ের কাছে। 7 তখন বাবিলের রাজা জেরুশালেমের বিরুদ্ধে সৈন্যসামন্ত নিয়ে যুদ্ধ করছে। যিহূদার যে সমস্ত শহরগুলি তখনও অধিকৃত হয়নি সেগুলি অধিকার করবার লক্ষ্য নিয়ে বাবিলের সৈন্যদল যুদ্ধ করছিল। ঐ শহরগুলি ছিল লাখীশ এবং অসেকা—দুটি শহর যেগুলি দুর্গদ্বারা রক্ষিত ছিল।
লোকরা তাদের চুক্তি ভঙ্গ করল
8 ইব্রীয় দাসদের মুক্তির জন্য রাজা সিদিকিয় জেরুশালেমের লোকেদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। সিদিকিয় চুক্তি করবার পর যিরমিয়র কাছে ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি বার্তা এসেছিল। 9 প্রত্যেকেই তার ইব্রীয় দাসকে মুক্তি দেবে। স্ত্রী ও পুরুষ ইব্রীয় দাস দাসীরা দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে। কেউ যিহূদা পরিবারগোষ্ঠীর কাউকে দাসত্বের শৃঙ্খল পরাতে পারেনি। 10 সুতরাং সমস্ত নেতৃবৃন্দ ও লোকরা এই চুক্তি গ্রহণ করেছিল। প্রত্যেকেই রাজী হয়েছিল তাদের দাসদের মুক্তি দেবার প্রশ্নে এবং তাই প্রত্যেক দাসই স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল। 11 কিন্তু তারপর যাদের দাস ছিল তারা মত পরিবর্তন করে সেই সব দাসদের দাসত্বের জন্য ধরে এনেছিল।
12 তখন প্রভুর বার্তা এলো যিরমিয়র কাছে: 13 যিরমিয় প্রভু় ইস্রায়েলের ঈশ্বর যা বলেছেন তা হল: “মিশর থেকে আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এসেছিলাম। তারাও সেখানে দাসত্ব করত। যখন আমি তাদের নিয়ে এসেছিলাম তখন আমি তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলাম। 14 আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের বলেছিলাম: ‘প্রতি 7 বছর পর প্রত্যেককে তার ইব্রীয় দাসকে মুক্তি দিতে হবে। কোন ইব্রীয় যদি নিজেকে তোমার কাছে বিক্রিও করে দেয় তাহলেও 6 বছর পর তাকে তুমি মুক্তি দিয়ে দেবে।’ কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরা আমার কথা শোনেনি। 15 কিছু দিন আগে তোমরা তোমাদের মন পরিবর্তন করেছিলে এবং আমার মতে, তোমরা ঠিক কাজ করেছিলে। তোমরা ইব্রীয় দাসদের মুক্ত করেছিলে। এমন কি তোমরা মন্দিরেও এসেছিলে যেটি আমার নামে নামাঙ্কিত এবং আমার সামনে একটি চুক্তি করেছিলে। 16 কিন্তু এখন আবার তোমরা তোমাদের মন পরিবর্তন করেছো এবং আমার নামকে অসম্মান করেছো। কি করে তোমরা এটা করলে? তোমরা আবার সেই সব ইব্রীয় নারী পুরুষদের জোর করে ধরে এনে তোমাদের দাস করলে অথচ এদেরই কিছু দিন আগে তোমরা মুক্ত করে দিয়েছিলে।
17 “তাই প্রভু যা বলেছেন তা হল: ‘তোমরা আমাকে অমান্য করেছিলে। তোমরা তোমাদের ইব্রীয় দাসদের মুক্তি দাও নি। তোমরা চুক্তি রক্ষা করো নি। কিন্তু আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। এই হল প্রভুর বার্তা। তরবারিসমূহ, অনাহার এবং মারাত্মক রোগসমূহ দ্বারা মরবার জন্য আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। সারা বিশ্ব জানবে তোমাদের দুরবস্থার কথা। 18 যারা চুক্তিটি ভঙ্গ করেছিল আমি তাদের শত্রুদের হাতে তুলে দেব। তারা যে বাছুরটি দু-খণ্ড করেছিল এবং সেই দু-খণ্ডের মধ্য দিয়ে হেঁটেছিল, আমি তাদের সেই রকম করে দেব। 19 চুক্তি ভঙ্গকারীরা আমার সামনে বাছুরকে দু-খণ্ড করে বলি দিয়েছিল। তবু ওরা সেই চুক্তি মানে নি। যিহূদা ও জেরুশালেমের নেতৃবৃন্দ, রাজসভার গুরুত্বপর্তৃ সভাপরিষদ, যাজকগণ এবং সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকে আমার সামনে চুক্তি করবার সময় বাছুরটির দুই খণ্ডের মাঝখান দিয়ে হেঁটেছিল। 20 তাই আমি তাদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য শত্রুবাহিনীর হাতে তুলে দেব। তাদের মৃতদেহ হবে পশু ও শকুনের খাদ্য। 21 যিহূদার রাজা সিদিকিয় ও তার নেতৃবৃন্দকে আমি শত্রুবাহিনীর হাতে তুলে দেব। যদিও বাবিলের সৈন্যদল জেরুশালেম শহরটি ছেড়ে গেছে, আমি সিদিকিয় এবং তার নেতাদের তাদের হাতে তুলে দেব। 22 কিন্তু আমি আদেশ দেব বাবিলের সেনাদের আবার জেরুশালেমে ফিরে এসে যুদ্ধ করার জন্য। তারা জেরুশালেমকে কব্জা করে আগুন জ্বালিয়ে দেবে। এবং আমি যিহূদার শহরগুলিকেও ধ্বংস করে দেব। ঐ শহরগুলি একটি শূন্য মরুভূমিতে পরিণত হবে।’” এই হল প্রভুর বার্তা।
রেখবীয় পরিবারের ভাল উদাহরণ
35 যিহূদার রাজা যখন যিহোয়াকীম তখন যিরমিয়র কাছে প্রভুর বার্তা এলো। যিহোয়াকীম ছিলেন যোসিয়ের পুত্র। এই হল প্রভুর বার্তা: 2 “যিরমিয়, যাও রেখবীয় পরিবারকে মন্দিরের পাশের ঘরগুলির কোন একটি ঘরে আসবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে এসো। তাদের দ্রাক্ষারস পানের প্রস্তাব দাও।”
3 সুতরাং আমি (যিরমিয়) যাসিনিয়ের কাছে গিয়েছিলাম। যাসিনিয় ছিল যিরমিয়[a] নামক এক ব্যক্তির পুত্র এবং হবৎসিনিয়ের পৌত্র। আমি যাসিনিয়র অন্য ভাইদের এবং তার সব ছেলেদের রেখবীয় পরিবারের সকল সদস্যদের পেয়েছিলাম। 4 তারপর আমি রেখবীয় পরিবারকে প্রভুর মন্দিরে নিয়ে এলাম। আমরা হাননের পুত্রের ঘরে গেলাম। হানন ছিল ঈশ্বরের প্রিয় মানুষ। তার পিতার নাম ছিল যিগ্দলিয়। পাশের ঘরে থাকতেন যিহূদার যুবরাজগণ। নীচের ঘরে থাকতো শল্লুমের পুত্র মাসেয়। মাসেয় ছিল মন্দিরের প্রহরী। 5 তখন আমি (যিরমিয়) রেখবীয় পরিবারের আমন্ত্রিত সদস্যদের সামনে দ্রাক্ষারসের পাত্র রেখে বললাম, “সামান্য দ্রাক্ষারস পান করুন।”
6 কিন্তু তারা উত্তর দিল, “আমরা কখনও দ্রাক্ষারস পান করি না, কারণ আমাদের পূর্বপুরুষ রেখবীয় পুত্র যিহোনাদব আমাদের এই নির্দেশ দিয়েছিলেন: ‘তোমরা এবং তোমাদের উত্তরপুরুষ কেউ কখনো দ্রাক্ষারস পান করবে না। 7 তোমরা ঘরবাড়ি তৈরী করবে না, ফসল বুনবে না, দ্রাক্ষার চাষ করবে না। তোমরা কেবল তাঁবুতে থাকবে। তোমরা যদি এগুলি মেনে চলো তাহলে তোমরা যাযাবরের মতো স্থান পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন জীবিত থাকবে।’ 8 তাই আমরা রেখবীয় পরিবারের সদস্যরা আমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদবের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি। আমরা কেউ দ্রাক্ষারস পান করি না। আমাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে কেউ দ্রাক্ষারস পান করে না। 9 আমরা কখনও বাস করার জন্য বাড়ি তৈরী করি না। দ্রাক্ষার চাষ করি না, ফসল ফলানোর জন্য বীজ বুনি না। 10 আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদবের নির্দেশ পালন করেছি এবং আমরা তাঁবুতেই বসবাস করেছি। 11 কিন্তু যখন নবূখদ্রিৎসর, বাবিলের রাজা যিহূদা আক্রমণ করেছিল, আমরা বলেছিলাম, ‘বাবিলীয় এবং আর্মেনীয় সৈন্যদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমাদের জেরুশালেম শহরে যাওয়া যাক।’ তাই আমরা জেরুশালেমে পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং তারপর থেকে ওখানেই থেকেছি।”
12 তখন প্রভুর বার্তা এলো যিরমিয়র কাছে। 13 প্রভু সর্বশক্তিমান ইস্রায়েলের ঈশ্বর বললেন: “যিরমিয় যাও। যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের গিয়ে বলো: তোমাদের শিক্ষা হওয়া উচিৎ এবং তোমরা আমার বার্তা পালন করবে।” 14 “রেখব তার উত্তরপুরুষদের নির্দেশ দিয়েছিল দ্রাক্ষারস পান না করতে। এবং সেই নির্দেশ আজও রেখবীয় পরিবারের সদস্যরা পালন করে আসছে। কিন্তু আমি প্রভু এবং আমি যিহূদার লোকরা, তোমাদের বারবার বার্তা পাঠানো সত্ত্বেও তোমরা আমাকে অগ্রাহ্য করেছ এবং অমান্য করেছ। 15 যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকদের কাছে বারবার আমার অনুচর এবং ভাববাদীদের পাঠিয়েছি। তারা তোমাদের বলেছে: ‘অসৎ হওয়া বন্ধ করো। ভালো কাজ কর। অন্য দেবতাদের অনুসরণ করো না ও তাদের সেবা করো না। তোমরা যদি আমাকে মেনে চলতে তাহলে তোমরা এই দেশে বসবাস করতে পারতে, যে দেশ তোমাদের পূর্বপুরুষকে আমি দিয়েছিলাম।’ কিন্তু তোমরা আমার বার্তাকে পাত্তাই দিলে না। 16 যিহোনাদবের নির্দেশ তার উত্তরপুরুষরা মেনে চলেছিল কিন্তু যিহূদার লোকরা আমাকে মান্য করেনি।”
17 “তাই প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বললেন: ‘আমি বলেছিলাম যিহূদা ও জেরুশালেমে লোকেদের ওপর বহু মারাত্মক ঘটনা ঘটবে। শীঘ্রই আমি সেগুলি ঘটাবো কারণ আমি ওই লোকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম কিন্তু তারা আমার কথা শুনতে অস্বীকার করেছিল। আমি তাদের চিৎকার করে ডেকেছিলাম কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি।’”
18 যিরমিয়, রেখবীয় পরিবারকে বলেছিল, “সর্বশক্তিমান প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন: ‘তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদবের সব নির্দেশ মেনে চলেছো। তোমরা যিহোনাদবের শিক্ষাকেই অনুসরণ করে গিয়েছো।’ 19 তাই সর্বশক্তিমান প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন সেখানে সর্বদাই রেখবের পুত্র যিহোনাদবের উত্তরপুরুষদের কোন একজন আমাকে সেবা করবার জন্য আমার সামনে থাকবে।”
রাজা যিহোয়াকীম যিরমিয়র পাকানো পুঁথি পুড়িয়ে ছিল
36 যিহূদার রাজা যোশিয়ের পুত্র যিহোয়াকীম যখন তার রাজত্বকালের চতুর্থ বছরে পা দিয়েছে তখন প্রভুর এই বার্তা যিরমিয়র কাছে এসেছিল। এই হল প্রভুর বার্তা: 2 “যিরমিয়, আমি তোমাকে যে সমস্ত বাণী শুনিয়েছি তা সব একটি পাকানো পুঁথিতে লিখে রাখো। যিহূদা, ইস্রায়েল এবং অন্যান্য দেশগুলি সম্বন্ধে যা যা বলেছি তাও লিখে রাখো। যোশিয়ের রাজত্বকাল থেকে আজ পর্যন্ত যে কথা বলেছি তার সব অক্ষরে অক্ষরে লিখে রাখো তোমার খাতায়। 3 যিহূদার পরিবারের জন্য আমি যে সমস্ত বাজে জিনিষের পরিকল্পনা করেছি তা হয়তো তারা জানতে পারবে এবং হয়তো তারা খারাপ কাজ করা বন্ধ করবে। যদি তারা তাই করে তাহলে আমি তাদের ক্ষমা করব। ক্ষমা করে দেব তাদের সমস্ত পাপ।”
4 তাই যিরমিয় বারূককে ডাকল। বারূক ছিল নেরিয়ের পুত্র। যিরমিয় প্রভুর বার্তা বলছিল। যিরমিয় যখন সেই বার্তাগুলি বলছিল তখন বারূক তা খাতায় লিখে নিচ্ছিল। 5 তখন যিরমিয় বারূককে বলেছিল, “আমি প্রভুর উপাসনা গৃহে যেতে পারব না। আমার সেখানে যাওয়া নিষেধ। 6 তাই আমি চাই তুমি প্রভুর উপাসনা গৃহে যাও। সেখানে একটি উপবাসের দিন যাও এবং এই পুঁথি থেকে প্রভুর কথাগুলি লোকেদের পড়ে শোনাও। আমি যা বলেছি তুমি তা লিখেছো। এগুলো সবই প্রভুর বার্তা। যাও গিয়ে যিহূদার বিভিন্ন শহর থেকে জেরুশালেমে আসা সমস্ত লোককে এই বার্তা খাতা থেকে পাঠ করে শোনাও। 7 হয়তো লোকরা প্রভুর কাছে এসে সাহায্য চাইবে। হয়তো তারা তাদের অসৎ কাজগুলি করা বন্ধ করবে। প্রভু আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি তাদের ওপর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন।” 8 সুতরাং বারূক তাই করল যা তাকে ভাববাদী যিরমিয় করতে বলেছিল। সুরূক প্রভুর উপাসনাগৃহে খাতায় লিপিবদ্ধ করা প্রভুর বার্তা উচ্চস্বরে পাঠ করতে লাগল।
9 যিহোয়াকীমের রাজত্বকালের পঞ্চম বছরের নবম মাসে উপবাসের একটি দিন ঘোষিত হয়েছিল। জেরুশালেমের নাগরিক এবং যিহূদার সমস্ত শহর থেকে জেরুশালেম শহরে আসা প্রত্যেক লোককে প্রভুর সামনে উপবাস করতে হবে। 10 সে সময় বারূক খাতায় লেখা যিরমিয়র মুখ থেকে উচ্চারিত প্রভুর বার্তা পড়ে শোনাচ্ছিল উপাসনা গৃহে উপস্থিত লোকেদের। বারূক তখন থাকতো গমরিয়ের ঘরে। ঘরটি ছিল উপাসনাগৃহের নতুন ফটকের কাছে। গমরিয়ের পিতা ছিল শাফন। গমরিয় উপাসনাগৃহের লিপিকার ছিল।
11 বারূক যখন পড়ছিল তখন গমরিয়ের পুত্র মীখায় শুনছিল। গমরিয় ছিল শাফনের পুত্র। 12 মীখায় যখন পুঁথির সব বার্তা শুনল, তখন সে রাজপ্রাসাদের সচিবের ঘরে গেল। সেই ঘরে তখন রাজপরিবারের সমস্ত সভাসদরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সভাসদদের নামগুলি হল: রাজার আপ্ত সহায়ক ইলীশামা, শময়িয়ের পুত্র দলায়, অক্বোরের পুত্র ইল্নাথন, শাফনের পুত্র গমরিয়, হনানিয়ের পুত্র সিদিকিয় এবং অন্যান্য রাজসভার সভাসদরাও সেই ঘরে উপস্থিত ছিলেন। 13 পুঁথি থেকে বারূক যা কিছু পড়ে শুনিয়েছিল তা সব মীখায় গিয়ে সভাপারিষদদের বলেছিল।
14 তখন সেই সভাসদরা বারূকের কাছে যিহূদীকে পাঠাল। যিহূদী ছিল নথনিয়ের পুত্র এবং শেলিমিয়ের পৌত্র। শেলিমিয়ের পিতার নাম ছিল কূশি। যিহূদী বারূককে বলেছিল: “তুমি যে খাতাটি পাঠ করেছিলে সেই খাতাটি নিয়ে আমার সঙ্গে চলো।”
বারূক সেই খাতা সঙ্গে নিয়ে যিহূদীর সঙ্গে সভাপরিষদদের কাছে গেল।
15 রাজার সেই সভাসদরা বারূককে বললেন, “এখানে বসো এবং পুঁথিতে লেখা বাণীগুলি পড়ে শোনাও।”
সুতরাং বারূক খাতায় লেখা বাণীগুলি পাঠ করতে শুরু করল।
16 রাজার সভাসদরা সমস্ত বাণীগুলি শুনলেন এবং তারপর তারা ভয়ে একে অন্যের দিকে তাকালেন। তাঁরা বারূককে বললেন, “রাজা যিহোয়াকীমকে আমাদের এই খাতার সম্বন্ধে জানানো উচিৎ।” 17 তখন তাঁরা বারূককে একটি প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা বারূক বলো তো এই খাতায় যে বাণী তুমি লিখেছো তা তুমি কোত্থেকে পেলে? যিরমিয় তোমাকে যে সব জিনিসের কথা বলেছিল সে সব কি তুমি লিখেছিলে?”
18 বারূক উত্তর দিল, “হ্যাঁ! যিরমিয় আমাকে বলে গিয়েছে আর কালি দিয়ে সেই বাণী খাতায় আমি লিখে নিয়েছি।”
19 তখন রাজার পারিষদরা বারূককে বললেন, “তুমি আর যিরমিয় গিয়ে আত্মগোপন করে থাকো কিন্তু কোথায় আত্মগোপন করবে তা কাউকে জানিও না।”
20 তখন পারিষদরা ইলীশামার ঘরে সেই খাতাটি তুলে রেখে রাজা যিহোয়াকীমের কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন।
21 সব শুনে রাজা যিহোয়াকীম খাতাটি নিয়ে আসার জন্য যিহূদীকে পাঠালেন। যিহূদী ইলীশামার ঘর থেকে পুঁথিটি নিয়ে এলো। তারপর সে রাজাকে এবং তার চার পাশের দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের পুঁথিতে লেখা বাণীগুলি পড়ে শোনাতে লাগল। 22 এটা ঘটেছিল নবম মাসে, সুতরাং রাজা যিহোয়াকীম তাঁর শীতকালীন আবাসে বসেছিলেন। ঘরকে উষ্ণ রাখার জন্য তার সামনে তখন আগুন জ্বলছে। 23 যিহূদী আস্তে আস্তে খাতা থেকে লিপিবদ্ধ করা বাণী পড়ে যেতে থাকল। কিন্তু সে দুই বা তিন অনুচ্ছেদ পড়ার পরই রাজা তার কাছ থেকে খাতা ছিনিয়ে নিয়ে ছুরি দিয়ে খাতা থেকে পাতাগুলি কেটে কেটে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিতে লাগলেন। এইভাবে পুরো খাতাটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। 24 এবং রাজা যিহোয়াকীম ও তাঁর অনুচররা এই বাণী শুনেও ভীত হল না। শোকের চিহ্ন হিসেবে তারা তাদের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলল না।
25 ইল্নাথন, দলায় এবং গমরিয় চেষ্টা করেছিল রাজার সঙ্গে কথা বলার যাতে তিনি খাতাটি না পোড়ান। কিন্তু রাজা তাদের কথা শোনেননি। 26 বরং উল্টে রাজা যিরহমেল, সরায় এবং শেলিমিয়কে আদেশ দিলেন ভাববাদী যিরমিয় এবং লিপিকার (লেখক) বারূককে গ্রেপ্তার করতে। যিরহমেল হল যুবরাজ ও সরায় হল অস্রীয়েলের পুত্র এবং শেলিমিয় হল অব্দিয়েলের পুত্র। কিন্তু তারা কেউই বারূক এবং যিরমিয়কে খুঁজে বার করতে পারল না। কারণ প্রভু তাদের লুকিয়ে রেখেছিলেন।
27 যিহোয়াকীম খাতাটি পুড়িয়ে ফেলার পর প্রভুর বার্তা এলো যিরমিয়র কাছে। ঐ খাতাতেই লিপিবদ্ধ ছিল প্রভুর সমস্ত বার্তা যা যিরমিয় বলে গিয়েছিল আর বারূক লিপিবদ্ধ করেছিল। ঐ খাতার প্রতিটি পাতায় এই ছিল সেই বার্তা যা পুনরায় প্রভু যিরমিয়কে বললেন:
28 “যিরমিয় আরেকটি খাতা নাও এবং সমস্ত বার্তাগুলি পুনরায় লিপিবদ্ধ করো। 29 যিরমিয়, আবার যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমকে একথাগুলি বলো। প্রভু যা বললেন: ‘যিহোয়াকীম তুমি খাতাটি পুড়িয়ে ফেলে বলেছিলে, “যিরমিয় কেন একথা লিখলো যে বাবিলের রাজা নিশ্চিতভাবেই এসে এই দেশ ধ্বংস করে দেবে? কেন সে লিখল যে বাবিলের রাজা এই দেশের মানুষ এবং পশু প্রাণী সবাইকে হত্যা করবে?” 30 তাই প্রভু যিহূদার রাজা যিহোয়াকীম সম্বন্ধে বললেন: যিহোয়াকীমের উত্তরপুরুষরা কেউ দায়ূদের সিংহাসনে বসতে পারবে না। এমনকি যিহোয়াকীম তার মৃত্যুর পরে সৎকারের সময় রাজকীয় মর্যাদাও পাবে না। তার মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে মাঠের মধ্যে। দিনের প্রখর তাপ ও রাতের প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যে খোলা মাঠে তার মৃতদেহ পড়ে থাকবে। 31 আমি প্রভু, যিহোয়াকীমকে তার সন্তানদের এবং তার পারিষদদেরও শাস্তি দেব। আমি তাদের প্রত্যেককে শাস্তি দেব কারণ তারা অসৎ এবং মন্দ। আমি প্রতিশ্রুতি করেছি তাদের শাস্তি দেব। আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জেরুশালেম এবং যিহূদার লোকদের জীবনে ভয়ঙ্কর প্রলয় ঘটানোর জন্য। সমস্ত অমঙ্গল বয়ে আনব তাদের জীবনে। তারা আমার কথা শোনেনি।’”
32 তখন যিরমিয় অন্য একটি পুঁথি নিল এবং সেটি নেরিয়র পুত্র, লেখক বারূককে দিল লিপিবদ্ধ করার জন্য। যিরমিয় যা যা বলে যেতে থাকল বারূক তা লিপিবদ্ধ করতে থাকল। রাজা যিহোয়াকীম যে বার্তাগুলি পুড়িয়ে দিয়েছিল সেগুলি আবার নতুন খাতায় লিপিবদ্ধ করতে থাকল বারূক। এরই সঙ্গে যোগ হল আরো নতুন নতুন বার্তা।
আমাদের পরিত্রাণ বিধি-ব্যবস্থা থেকে মহান
2 এই জন্য যে বাণী আমরা শুনেছি, তাতে আরো ভালভাবে মন দেওয়া আমাদের উচিত, যেন আমরা তার প্রকৃত পথ থেকে বিচ্যুত না হই। 2 যে শিক্ষা স্বর্গদূতদের মুখ দিয়ে ঈশ্বর জানিয়েছিলেন ও যা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল, সেই শিক্ষা যখনই ইহুদীরা অমান্য করে অবাধ্যতা দেখিয়েছে—তাদের শাস্তি হয়েছে, 3 তখন এমন মহত্ এই পরিত্রাণ যা আমাদেরই জন্য এসেছে তা অগ্রাহ্য করলে আমরা কিভাবে রক্ষা পাব? এই পরিত্রাণের কথা প্রভু স্বয়ং ঘোষণা করেছিলেন; আর যাঁরা তাঁর কাছ থেকে এই বাণী শুনেছিল, তারাই আমাদের কাছে এই পরিত্রাণের সত্যতা প্রমাণ করল। 4 ঈশ্বরও নানা সঙ্কেত, আশ্চর্যজনক কাজ, অলৌকিক ঘটনা ও মানুষকে দেওয়া পবিত্র আত্মার নানা বরদানের মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছানুয়াযী এবিষয়ে সাক্ষ্য রেখেছেন।
খ্রীষ্ট তাদের রক্ষার্থে মানুষের মতো হয়েছিলেন
5 বাস্তবিক যে জগতের বিষয়ে আমরা বলছি, ঈশ্বর সেই ভাবী জগতকে তাঁর স্বর্গদূতদের কর্তৃত্ত্বাধীন রাখেন নি। 6 এটা শাস্ত্রের কোন এক জায়গায় লেখা আছে:
“হে ঈশ্বর, মানুষ এমন কি যে
তার বিষয়ে তুমি চিন্তা কর?
অথবা মানবসন্তানই বা কে
যে তুমি তার কথা ভাব?
7 তুমি তাকে অল্প সময়ের জন্যই স্বর্গদূতদের থেকে নীচুতে রেখেছিলে;
কিন্তু তুমি তাকেই পরালে সম্মান ও মহিমার মুকুট।
8 আর সব কিছুই তুমি রাখলে তার পদতলে।”(A)
সবকিছু তার অধীন করাতে কোন কিছুই তার কর্তৃত্বের বাইরে রইল না, যদিও এখন আমরা অবশ্য সব কিছু তার অধীনে দেখছি না। 9 কিন্তু আমরা যীশুকে দেখেছি, যাঁকে অল্পক্ষণের জন্য স্বর্গদূতদের থেকে নীচে স্থান দেওয়া হয়েছিল। সেই যীশুকেই এখন সম্মান আর মহিমার মুকুট পরানো হয়েছে। কারণ তিনি মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহে সকল মানুষের জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন।
10 কেবল ঈশ্বরই সেই জন যাঁর দ্বারা সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং সবকিছুই তাঁর মহিমার জন্য, তাই অনেক সন্তানকে তাঁর মহিমার ভাগীদার করতে ঈশ্বর প্রয়োজনীয় কাজটিই করলেন। তিনি তাদের পরিত্রাণের প্রবর্তক যীশুকে নির্যাতন ভোগের মাধ্যমে সিদ্ধ ত্রাণকর্তা করেছেন।
11 যিনি পবিত্র করেন আর যারা পবিত্র হয়, তারা সকলে এক পরিবারভুক্ত। সেই কারণেই তিনি তাদের ভাই বলে ডাকতে লজ্জিত নন। 12 যীশু বলেন,
“হে ঈশ্বর, আমি আমার ভাই-বোনেদের কাছে তোমার নাম প্রচার করব,
মণ্ডলীর মধ্যে তোমার প্রশংসা গান করব।”(B)
13 তিনি আবার বলেছেন,
“আমি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করব।”(C)
তিনি আবার এও বলেছেন,
“দেখ, এই আমি ও আমার সঙ্গে সেই সন্তানদের, ঈশ্বর আমাকে যাদের দিয়েছেন।”(D)
14 ভাল, সেই সন্তানরা যখন রক্তমাংসের মানুষ, তখন যীশু নিজেও তাদের স্বরূপের অংশীদার হলেন। যীশু এইরকম করলেন যেন মৃত্যুর মাধ্যমে মৃত্যুর অধিপতি দিয়াবলকে ধ্বংস করতে পারেন; 15 আর যারা মৃত্যুর ভয়ে যাবজ্জীবন দাসত্বে কাটাচ্ছে তাদের মুক্ত করেন। 16 কারণ এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে তিনি স্বর্গদূতদের সাহায্য করেন না, কেবল অব্রাহামের বংশধরদেরই সাহায্য করেন। 17 সেই জন্য সবদিক থেকে যীশুকে নিজের ভাইয়ের মতো হতে হয়েছে যাতে তিনি মানুষের পাপের ক্ষমার জন্য একজন দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাযাজকরূপে ঈশ্বরের সাক্ষাতে দাঁড়াতে পারেন। 18 যীশু নিজে পরীক্ষা ও দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে গেছেন বলে যারা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের যীশু সাহায্য করতে পারেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International