Old/New Testament
জগৎ সৃষ্টির শুরু
1 শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী একেবারে শূন্য ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না। 2 অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
প্রথম দিন—আলো
3 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। 4 আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন। 5 ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।”
সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
দ্বিতীয় দিন—আকাশ
6 তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক্।” 7 তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল। 8 ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।
তৃতীয় দিন—শুকনো জমি ও গাছপালা
9 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক্ যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল। 10 ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
11 তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক্, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক্। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক্। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল। 12 পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উৎপন্ন হল। আবার ফলদায়ী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
13 সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।
চতুর্থ দিন—সূর্য্য, চাঁদ ও তারা
14 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভা[a] শুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে। 15 পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল।
16 তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন। 17 পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন। 18 দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
19 সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
পঞ্চম দিন—মাছ ও পাখী
20 তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক্ আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক্।” 21 সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখী আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে।
22 ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন।
23 সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল।
ষষ্ঠ দিন—ডাঙার জন্তু জানোয়ার ও মানুষ
24 তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উৎপন্ন হোক্। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক্ এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক্।” তখন যেমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল।
25 সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরী করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে।
26 তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।”
27 তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন। 28 ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তান-সন্ততি হোক্। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।”
29 ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদায়ী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উৎপাদন করে। এই সমস্ত শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য। 30 এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা। পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে যেসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে।” এবং এইসব কিছুই সম্পন্ন হল।
31 ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে।
সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।
সপ্তম দিন—বিশ্রাম
2 এইভাবে পৃথিবী, আকাশ এবং তাদের আভ্যন্তরীণ যাবতীয় জিনিস সম্পূর্ণ হল। 2 যে কাজ ঈশ্বর শুরু করেছিলেন তা শেষ করে সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নিলেন। 3 সপ্তম দিনটিকে আশীর্বাদ করে ঈশ্বর সেটিকে পবিত্র দিনে পরিণত করলেন। দিনটিকে ঈশ্বর এক বিশেষ দিনে পরিণত করলেন কারণ ঐ দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টির সমস্ত কাজ থেকে তিনি বিশ্রাম নিলেন।
মানব জাতির শুরু
4 এই হল আকাশ ও পৃথিবীর ইতিহাস। ঈশ্বর যখন পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন যা কিছু ঘটেছিল এটা তারই গল্প। 5 পৃথিবীতে তখন কোন গাছপালা ছিল না। মাঠে তখন কিছুই জন্মাতো না। কারণ প্রভু তখনও পৃথিবীতে বৃষ্টি পাঠান নি এবং ক্ষেতে চাষবাস করার জন্য তখন কেউ ছিল না।
6 পৃথিবী থেকে জল[b] উঠে চারপাশের জমিতে ছড়িয়ে পড়ল। 7 তখন প্রভু ঈশ্বর মাটি থেকে ধুলো তুলে নিয়ে একজন মানুষ তৈরী করলেন এবং সেই মানুষের নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণবায়ু প্রবেশ করালেন এবং মানুষটি জীবন্ত হয়ে উঠল। 8 তখন প্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে একটি বাগান বানালেন আর সেই বাগানটির নাম দিলেন এদন এবং প্রভু ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি করা মানুষটিকে সেই বাগানে রাখলেন। 9 এবং সেই বাগানে প্রভু ঈশ্বর সবরকমের সুন্দর বৃক্ষ এবং খাদ্যোপযোগী ফল দেয় এমন প্রতিটি বৃক্ষ রোপণ করলেন। বাগানের মাঝখানটিতে প্রভু ঈশ্বর রোপণ করলেন জীবন বৃক্ষটি যা ভাল এবং মন্দ বিষয়ে জ্ঞান দেয়।
10 এদন হতে এক নদী প্রবাহিত হয়ে সেই বাগান জলসিক্ত করল। তারপর সেই নদী বিভক্ত হয়ে চারটি ছোট ছোট ধারায় পরিণত হল। 11 প্রথম ধারাটির নাম পীশোন। এই নদী ধারা পুরো হবীলা দেশটিকে ঘিরে প্রবাহিত। 12 (সে দেশে সোনা রয়েছে আর তা উঁচু মানের। এছাড়া এই দেশে গন্ধদ্রব্য, গুগ্গুল আর মূল্যবান গোমেদকমণি পাওয়া যায়।) 13 দ্বিতীয় নদীর নাম গীহোন, এই নদীটি সমস্ত কুশ দেশটিকে ঘিরে প্রবাহিত। 14 তৃতীয় নদীটির নাম হিদ্দেকল। এই নদী অশূরিয়া দেশের পূর্ব দিকে প্রবাহিত। চতুর্থ নদীটির নাম ফরাৎ।
15 কৃষিকাজ আর বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে এদন বাগানে রাখলেন। 16 প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে এই আদেশ দিলেন, “বাগানের যে কোনও বৃক্ষের ফল তুমি খেতে পারো। 17 কিন্তু যে বৃক্ষ ভালো আর মন্দ বিষয়ে জ্ঞান দেয় সেই বৃক্ষের ফল কখনও খেও না। যদি তুমি সেই বৃক্ষের ফল খাও, তোমার মৃত্যু হবে!”
প্রথম নারী
18 তারপরে প্রভু ঈশ্বর বললেন, “মানুষের নিঃসঙ্গ থাকা ভালো নয়। আমি ওকে সাহায্য করার জন্যে ওর মত আর একটি মানুষ তৈরী করব।”
19 প্রভু ঈশ্বর পৃথিবীর ওপরে সমস্ত পশু আর আকাশের সমস্ত পাখী তৈরী করবার জন্য মৃত্তিকার ধূলি ব্যবহার করেছিলেন। প্রভু ঈশ্বর ঐ সমস্ত পশুপাখীকে মানুষটির কাছে নিয়ে এলেন আর মানুষটি তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম দিল। 20 মানুষটি সমস্ত গৃহপালিত পশু, আকাশের সমস্ত পাখীর এবং অরণ্যের সমস্ত বন্য প্রাণীর নামকরণ করল। মানুষটি অসংখ্য পশু পাখী দেখল কিন্তু সে তার যোগ্য সাহায্যকারী কাউকে দেখতে পেল না। 21 তখন প্রভু ঈশ্বর সেই মানুষটিকে খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করলেন। মানুষটি যখন ঘুমোচ্ছিল তখন প্রভু ঈশ্বর তার পাঁজরের একটা হাড় বার করে নিলেন। তারপর প্রভু ঈশ্বর যেখান থেকে হাড়টি বার করেছিলেন সেখানটা চামড়া দিয়ে ঢেকে দিলেন। 22 প্রভু ঈশ্বর মানুষটির পাঁজরের সেই হাড় দিয়ে তৈরি করলেন একজন স্ত্রী। তখন সেই স্ত্রীকে প্রভু ঈশ্বর মানুষটির সামনে নিয়ে এলেন। 23 এবং সেই মানুষটি বলল,
“অবশেষে আমার সদৃশ একজন হল।
আমার পাঁজরা থেকে তার হাড়,
আর আমার শরীর থেকে তার দেহ তৈরী হয়েছে।
যেহেতু নর থেকে তার সৃষ্টি হয়েছে,
সেহেতু ‘নারী’ বলে এর পরিচয় হবে।”
24 এইজন্য পুরুষ পিতামাতাকে ত্যাগ করে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং এইভাবে দুজনে এক হয়ে যায়।
25 তখন নর-নারী উলঙ্গ ছিল, কিন্তু সেজন্যে তাদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না।
পাপের শুরু
3 প্রভু ঈশ্বর যত রকম বন্য প্রাণী সৃষ্টি করেছিলেন সে সবগুলোর মধ্যে সাপ সবচেয়ে চালাক ছিল। সাপ সেই নারীর সঙ্গে একটা চালাকি করতে চাইল। একদিন সাপটা সেই নারীকে জিজ্ঞেস করল, “নারী, ঈশ্বর কি বাগানের কোনও গাছের ফল না খেতে সত্যিই আদেশ দিয়েছেন?”
2 তখন নারী সাপটাকে বলল, “না! ঈশ্বর তা বলেন নি! বাগানের সব গাছগুলো থেকে আমরা ফল খেতে পারি। 3 শুধু একটি গাছ আছে যার ফল কিছুতেই খেতে পারি না। ঈশ্বর আমাদের বলেছিলেন, ‘বাগানের মাঝখানে যে গাছটা আছে, তার ফল কোনমতেই খাবে না। এমন কি ঐ গাছটা ছোঁবেও না—ছুঁলেই মরবে।’”
4 কিন্তু সাপটা নারীকে বলল, “না, মরবে না। 5 ঈশ্বর জানেন, যদি তোমরা ঐ গাছের ফল খাও তাহলে তোমাদের ভালো আর মন্দের জ্ঞান হবে। আর তোমরা তখন ঈশ্বরের মত হয়ে যাবে!”
6 সেই নারী দেখল গাছটা সুন্দর এবং এর ফল সুস্বাদু, আর এই ভেবে সে উত্তেজিত হল যে ঐ গাছ তাকে জ্ঞান দেবে। তাই নারী গাছটার থেকে ফল নিয়ে খেল। তার স্বামী সেখানেই ছিল, তাই সে স্বামীকেও ফলের একটা টুকরো দিল আর তার স্বামীও সেটা খেল।
7 তখন সেই নারী ও পুরুষ দুজনের মধ্যেই একটা পরিবর্তন ঘটল। যেন তাদের চোখ খুলে গেল আর তারা সব কিছু অন্যভাবে দেখতে শুরু করল। তারা দেখল তাদের কোনও জামাকাপড় নেই। তারা উলঙ্গ। তাই তারা কয়েকটা ডুমুরের পাতা জোগাড় করে সেগুলোকে জুড়ে জুড়ে সেলাই করল এবং সেগুলোকে পোশাক হিসেবে পরল।
8 প্রভু ঈশ্বর বিকেল বেলা বাগানে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁর পায়ের শব্দ শুনে সেই পুরুষ ও নারী বাগানে গাছগুলির মাঝখানে গিয়ে লুকালো। 9 কিন্তু প্রভু ঈশ্বর পুরুষটিকে ডাকলেন, “তুমি কোথায়?”
10 পুরুষটি বলল, “আপনার পায়ের শব্দ শুনে ভয় পেলাম। আমি যে উলঙ্গ। তাই আমি লুকিয়ে আছি।”
11 প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে বললেন, “কে বলল যে তুমি উলঙ্গ? তোমার লজ্জা করছে কেন? যে গাছটার ফল খেতে আমি বারণ করেছিলাম তুমি কি সেই বিশেষ গাছের ফল খেয়েছ?”
12 সেই পুরুষ বলল, “আমার জন্য যে নারী আপনি তৈরী করেছিলেন সেই নারী গাছটা থেকে আমায় ফল দিয়েছিল, তাই আমি সেটা খেয়েছি।”
13 তখন প্রভু ঈশ্বর সেই নারীকে বললেন, “তুমি এ কি করেছ?”
সেই নারী বলল, “সাপটা আমার সঙ্গে চালাকি করেছে। সাপটা আমায় ভুলিযে দিল আর আমিও ফলটা খেয়ে ফেললাম।”
14 সুতরাং প্রভু ঈশ্বর সাপটাকে বললেন,
“তুমি ভীষণ খারাপ কাজ করেছ;
তার ফলে তোমার খারাপ হবে।
অন্যান্য পশুর চেয়ে
তোমার পক্ষে বেশী খারাপ হবে।
সমস্ত জীবন তুমি বুকে হেঁটে চলবে
আর মাটির ধুলো খাবে।
15 তোমার এবং নারীর মধ্যে
আমি শত্রুতা সৃষ্টি করব
এবং তার সন্তান-সন্ততি এবং তোমার সন্তান সন্ততির মধ্যে
এই শত্রুতা বয়ে চলবে।
তুমি কামড় দেবে তার সন্তানের পায়ে
কিন্তু সে তোমার মাথা চূর্ণ করবে।”
16 তারপর প্রভু ঈশ্বর নারীকে বললেন,
“তুমি যখন গর্ভবতী হবে,
আমি সেই দশাটাকে দুঃসহ করে তুলব,
তুমি অসহ্য ব্যথায়
সন্তানের জন্ম দেবে।
তুমি তোমার স্বামীকে আকুলভাবে কামনা করবে
কিন্তু সে তোমার উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।”
17 তারপর প্রভু ঈশ্বর পুরুষকে বললেন,
“আমি তোমায় ঐ গাছের ফল খেতে বারণ করেছিলাম।
তবু তুমি নারীর কথা শুনে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছ।
তাই তোমার কারণে আমি এই ভূমিকে শাপ দেব।
ভূমি তোমাদের যে খাদ্য দেবে তার জন্যে এখন থেকে সারাজীবন তোমায় অতি কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।
18 ভূমি তোমার জন্য কাঁটাঝোপ জন্ম দেবে
এবং তোমাকে বুনো গাছপালা খেতে হবে।[c]
19 তোমার খাদ্যের জন্যে তুমি কঠোর পরিশ্রম করবে
যে পর্যন্ত না মুখ ঘামে ভরে যায়।
তুমি মরণ পর্যন্ত পরিশ্রম করবে,
তারপর পুনরায় ধূলি হয়ে যাবে।
আমি ধুলি থেকে তোমায় সৃষ্টি করেছি
এবং যখন তোমার মৃত্যু হবে পুনরায় তুমি ধূলিতে পরিণত হবে।”
20 আদম তার স্ত্রীর নাম রাখল হবা, কারণ সে সমস্ত জীবিত মানুষের জননী হল।
21 প্রভু ঈশ্বর পশুর চামড়া দিয়ে আদম ও হবার জন্য পোশাক বানিয়ে তাদের পরিয়ে দিলেন।
22 প্রভু ঈশ্বর বললেন, “দেখ, ওরা এখন ভালো আর মন্দ বিষয়ে জেনে আমাদের মত হয়ে গেছে। এখন মানুষটা জীবনবৃক্ষের ফল পেড়েও খেতে পারে। আর তা যদি খায় তাহলে ওরা চিরজীবি হবে।”
23 সুতরাং প্রভু ঈশ্বর মানুষকে এদন উদ্যান ত্যাগ করতে বাধ্য করলেন। যে ভুমি থেকে আদমকে তৈরী করা হয়েছিল, বাধ্য হয়ে সে সেই ভুমিতেই কাজ করতে থাকল। 24 প্রভু ঈশ্বর মানুষকে ঐ উদ্যান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। প্রভু করূব দূতদের উদ্যানের প্রবেশ পথে পাহারায় রাখলেন এবং তিনি আগুনের একটা তরবারিকেও সেখানে রাখলেন। জীবনবৃক্ষের কাছে যাবার পথটি পাহারা দেবার জন্য ঐ তরবারিটি চারদিকে জ্বলজ্বল করছিল।
যীশু খ্রীষ্টের বংশ তালিকা
(লূক 3:23-38)
1 এই হল যীশু খ্রীষ্টের বংশ তালিকা। ইনি ছিলেন রাজা দায়ূদের বংশধর, দায়ূদ ছিলেন অব্রাহামের বংশধর।
2 অব্রাহামের ছেলে ইস্হাক।
ইস্হাকের ছেলে যাকোব।
যাকোবের ছেলে যিহূদা ও তার ভাইরা।
3 যিহূদার ছেলে পেরস ও সেরহ। (এদের মায়ের নাম তামর।)
পেরসের ছেলে হিষ্রোণ।
হিষ্রোণের ছেলে রাম।
4 রামের ছেলে অম্মীনাদব।
অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন।
নহশোনের ছেলে সল্মোন।
5 সল্মোনের ছেলে বোয়স। (এঁর মায়ের নাম রাহব।)
বোয়সের ছেলে ওবেদ। এর মায়ের নাম রূৎ।
ওবেদের ছেলে যিশয়।
6 যিশয়ের ছেলে রাজা দায়ূদ।
দায়ূদের ছেলে রাজা শলোমন। (এর মা ছিলেন ঊরিয়ের বিধবা স্ত্রী।)
7 শলোমনের ছেলে রহবিয়াম।
রহবিয়ামের ছেলে অবিয়।
অবিয়ের ছেলে আসা।
8 আসার ছেলে যিহোশাফট।
যিহোশাফটের ছেলে যোরাম।
যোরামের ছেলে উষিয়।
9 উষিয়ের ছেলে যোথম।
যোথমের ছেলে আহস।
আহসের ছেলে হিষ্কিয়।
10 হিষ্কিয়ের ছেলে মনঃশি।
মনঃশির ছেলে আমোন।
আমোনের ছেলে যোশিয়।
11 যোশিয়ের ছেলে যিকনিয় ও তার ভাইরা। বাবিলে ইহুদীদের নির্বাসনের সময় এঁরা জন্মেছিলেন।
12 যিকনিয়ের ছেলে শল্টীয়েল। ইনি বাবিলে নির্বাসনের পর জন্মেছিলেন। শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল।
13 সরুব্বাবিলের ছেলে অবীহূদ।
অবীহূদের ছেলে ইলীয়াকীম।
ইলীয়াকীমের ছেলে আসোর।
14 আসোরের ছেলে সাদোক।
সাদোকের ছেলে আখীম।
আখীমের ছেলে ইলীহূদ।
15 ইলীহূদের ছেলে ইলিয়াসর।
ইলিয়াসরের ছেলে মত্তন।
মত্তনের ছেলে যাকোব।
16 যাকোবের ছেলে যোষেফ।
এই যোষেফই ছিলেন মরিয়মের স্বামী
এবং মরিয়মের গর্ভে যীশুর জন্ম হয়, যাঁকে মশীহ বা খ্রীষ্ট বলে।
17 এইভাবে অব্রাহাম থেকে দায়ূদ পর্যন্ত মোট চৌদ্দ পুরুষ। দায়ূদের পর থেকে বাবিলে নির্বাসন পর্যন্ত মোট চৌদ্দ পুরুষ এবং বাবিলে নির্বাসনের পর থেকে খ্রীষ্টের আগমন পর্যন্ত মোট চৌদ্দ পুরুষ।
যীশু খ্রীষ্টের জন্ম
(লূক 2:1-7)
18 এই হল যীশু খ্রীষ্টের জন্ম সংক্রান্ত বিবরণ: যোষেফের সঙ্গে তাঁর মা মরিয়মের বাগদান হয়েছিল; কিন্তু তাঁদের বিয়ের আগেই জানতে পারা গেল যে পবিত্র আত্মার শক্তিতে মরিয়ম গর্ভবতী হয়েছেন। 19 তাঁর ভাবী স্বামী যোষেফ ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন। তিনি মরিয়মকে লোক চক্ষে লজ্জায় ফেলতে চাইলেন না, তাই তিনি মরিয়মের সাথে বিবাহের এই বাগদান বাতিল করে গোপনে তাকে ত্যাগ করতে চাইলেন।
20 তিনি যখন এসব কথা চিন্তা করছেন, তখন প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, “যোষেফ, দায়ূদের সন্তান, মরিয়মকে তোমার স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে ভয় করো না, কারণ তার গর্ভে যে সন্তান এসেছে, তা পবিত্র আত্মার শক্তিতেই হয়েছে। 21 দেখ, সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তুমি তাঁর নাম রেখো যীশু, কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন।”
22 এইসব ঘটেছিল যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে প্রভু যা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়। 23 “শোন এক কুমারী গর্ভবতী হবে, আর সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তারা তাঁকে ইম্মানূয়েল (A) (যার অর্থ ‘আমাদের সঙ্গে ঈশ্বর’) বলে ডাকবে।”
24 যোষেফ ঘুম থেকে উঠে প্রভুর দূতের আদেশ অনুসারে কাজ করলেন। তিনি মরিয়মকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে গেলেন। 25 কিন্তু মরিয়মের সেই সন্তানের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত যোষেফ মরিয়মের সঙ্গে সহবাস করলেন না। যোষেফ সেই সন্তানের নাম রাখলেন যীশু।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International