M’Cheyne Bible Reading Plan
যিহূদার রাজা মনঃশি
33 মাত্র বারো বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে রাজা মনঃশি 55 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 2 মনঃশি প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। যে সমস্ত জাতির লোকদের প্রভু ইস্রায়েলীয়রা আসার আগে পাপ আচরণের জন্য তাদের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করেছিলেন, মনঃশি তাদের অনুসৃত ভয়ানক ও জঘন্য পথে জীবনযাপন করেন। 3 মনঃশি আবার নতুন করে তাঁর পিতার ভেঙ্গে দেওয়া উচ্চস্থান বানানো ছাড়াও বাল দেবতার বেদী ও দেবী আশেরার খুঁটি বসিয়েছিলেন। আকাশের নক্ষত্ররাজির সামনেও তিনি মাথা নত করেন ও তাদের পূজো করেন। 4 প্রভুর মন্দিরে, জেরুশালেমে যে মন্দিরে প্রভু আজীবন তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন প্রকাশের বাসনা করেছিলেন, সেই মন্দিরে মনঃশি মূর্ত্তিদের বেদী স্থাপন করেছিলেন। 5 প্রভুর মন্দিরের দুটো উঠোনে মনঃশি আকাশের তারকারাজির জন্য বেদী স্থাপন করেছিলেন। 6 বিন্হিন্নোমের উপত্যকায়, তিনি তাঁর নিজের সন্তানদের আগুনে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা, মোহক, যৌগিক ও মায়াক্রিয়ার মাধ্যমেও দুষ্ট আত্মা, প্রেতাত্মা ও যাদুকরদের সহায়তায় তাঁর মনঃস্কামনা পূর্ণ করতে চেয়েছিলেন। এইরকম নানাভাবে প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করে তিনি প্রভুকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিলেন। 7 তিনি মন্দিরে এক মূর্ত্তি স্থাপন করেছিলেন যেখানে প্রভু দায়ূদ ও তাঁর পুত্র শলোমনের কাছে ঘোষণা করেছিলেন, “আমি এই মন্দিরে এবং ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে থেকে যাকে মনোনীত করেছি সেই জেরুশালেমে আমার নাম চিরকাল রাখব। সেই মন্দিরে তিনি একটি মূর্ত্তি স্থাপন করলেন। 8 আমি মোশিকে যে বিধি ও নির্দেশগুলি দিয়েছিলাম শুধু যদি ইস্রায়েলীয়রা সেগুলি পালন করে তাহলে আমি তোমাদের পূর্বপুরুষকে যে জমি দিয়েছিলাম তা কখনো আবার ফিরিয়ে নেব না।”
9 কিন্তু যিহোশূয়র সময় প্রভু যে জাতিগুলিকে ধ্বংস করেছিলেন মনঃশি যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের, তার থেকেও বেশী পাপ আচরণে প্রবৃত্ত করেছিলেন।
10 প্রভু মনঃশি ও তাঁর প্রজাদের সতর্ক করলেও তাঁরা তাঁর কথায় কর্ণপাত করলেন না। 11 তখন প্রভু অশূররাজের সৈন্যাধ্যক্ষদের দিয়ে মনঃশির রাজত্ব আক্রমণ করালেন। এই সৈন্যাধ্যক্ষরা মনঃশিকে বন্দী করে তাঁর হাতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে, শেকলে বেঁধে তাঁকে বাবিলে নিয়ে গেলেন।
12 তারপর, যখন তিনি মহা সঙ্কটে পড়লেন, তখন মনঃশি প্রভু তাঁর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং গভীরভাবে তাঁর পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের কাছে নিজেকে অবনত করলেন। 13 তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং সাহায্য চাইলেন। ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনা শুনলেন এবং তাঁর অনুরোধ রাখলেন এবং তিনি তাঁকে জেরুশালেমে, তাঁর রাজত্বে ফিরে গিয়ে তাঁর সিংহাসনে বসতে দিলেন। মনঃশি বুঝতে পারলেন যে প্রভুই প্রকৃত ঈশ্বর।
14 এ ঘটনার পর মনঃশি নগরীর বাইরে আরেকটি পাঁচিল তুললেন। এই দেওয়ালটি গীহোন ঝর্ণার পশ্চিম প্রান্তের কিদ্রোণ উপত্যকা থেকে ওফেল পর্বতের মৎসদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত হল। এবারের পাঁচিলগুলো খুব উঁচু করে বানানো হয়। এরপর মনঃশি যিহূদার সমস্ত দুর্গবেষ্টিত শহরে সেনাপতিসমূহ নিয়োগ করেন। 15 তিনি সমস্ত মূর্ত্তি ও প্রতিকৃতিগুলি প্রভুর মন্দির থেকে সরিয়ে ফেলেন এবং মন্দিরের পর্বতের ওপর এবং জেরুশালেমে তাঁর বানানো বেদীগুলিও ভেঙে শহরের বাইরে ফেলে দিলেন। 16 তারপর তিনি প্রভুর জন্য বেদীটি উদ্ধার করলেন এবং মঙ্গল নৈবেদ্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন-সূচক নৈবেদ্য অর্পণ করলেন এবং যিহূদার সমস্ত লোকদের প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত হতে আদেশ দিলেন। 17 লোকরা উচ্চস্থলীতে বলি দিলেও তারা তা একমাত্র তাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই দিতেন।
18 মনঃশি আর যা কিছু করেছিলেন, ঈশ্বরের প্রতি তাঁর প্রার্থনা বা প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নামে যে সমস্ত ভাববাদী তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলেন সে সবই ইস্রায়েলের রাজাদের সরকারী নথিপত্র তে লিপিবদ্ধ আছে। 19 মনঃশির প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের তাতে সাড়া দেওয়া, তাঁর পাপ এবং বিশ্বাসহীনতা, যেখানে যেখানে তিনি উচ্চস্থান স্থাপন করেছিলেন সেই সব জায়গার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা, আশেরার খুঁটি সমূহ ও মূর্ত্তিসমূহ, নিজেকে নম্র করবার পূর্বে, এগুলি পরিপূর্ণভাবে ভাববাদীদের ইতিহাস গ্রন্থে লেখা আছে। 20 মনঃশির মৃত্যুর পর লোকরা তাকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করার পর তাঁর পুত্র আমোন নতুন রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা আমোন
21 আমোন 22 বছর বয়সে রাজা হয়ে মাত্র দু বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 22 আমোন প্রভুর প্রতি বহু পাপ আচরণ করেন। তাঁর পিতার বানানো খোদাই করা মূর্ত্তির সামনে বলিদান করা ছাড়াও আমোন এই সমস্ত মূর্ত্তি পূজো করতেন। 23 তিনি তাঁর পিতা মনঃশির মতো দীনভাবে প্রভুর কাছে আত্মসমর্পণও করেন নি। বরঞ্চ তিনি উত্তরোত্তর আরো অপরাধ করতে থাকেন। 24 আমোনের ভৃত্যরা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে রাজপ্রাসাদেই হত্যা করলো। 25 কিন্তু যিহূদার লোকরা এই সমস্ত চক্রান্তকারী ভৃত্যদের হত্যা করে আমোনের পুত্র যোশিয়কে সিংহাসনে বসালো।
স্বর্গের লোকরা ঈশ্বরের প্রশংসা করল
19 এরপর আমি স্বর্গে এক বিশাল জনতার কলরব শুনলাম। সেই লোকরা বলছে:
“হাল্লিলুইয়া!
জয়, মহিমা ও পরাক্রম আমাদের ঈশ্বরেরই,
2 কারণ তাঁর বিচারসকল সত্য ও ন্যায়।
তিনি সেই মহান গণিকার বিচার নিষ্পন্ন করেছেন,
যে তার যৌন পাপ দ্বারা পৃথিবীকে কলুষিত করত।
ঈশ্বরের দাসদের রক্তপাতের প্রতিশোধ নিতে ঈশ্বর সেই বেশ্যাকে শাস্তি দিয়েছেন।”
3 তারপর স্বর্গের সেই লোকেরা বলে উঠল:
“হাল্লিলুইয়া!
সেই বেশ্যা ভস্মীভূত হবে এবং যুগ যুগ ধরে তার ধোঁয়া উঠবে।”
4 এরপর সেই চব্বিশজন প্রাচীন ও চারজন প্রাণী সিংহাসনে যিনি বসেছিলেন, সেই ঈশ্বরের চরণে মাথা নত করে তাঁর উপাসনা করে বললেন:
“আমেন, হাল্লিলুইয়া!”
5 পরে সিংহাসন থেকে এক বাণী নির্গত হল, কে যেন বলে উঠল:
“হে আমার দাসরা, তোমরা যারা তাঁকে ভয় কর,
তোমরা ক্ষুদ্র কি মহান, তোমরা সকলে ঈশ্বরের প্রশংসা কর!”
6 পরে আমি বিরাট জনসমুদ্রের রব, প্রবল জলকল্লোল ও প্রচণ্ড মেঘগর্জনের মতো এই বাণী শুনলাম:
“হাল্লিলুইয়া!
আমাদের প্রভু যিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর,
তিনি রাজত্ব শুরু করেছেন।
7 এস, আমরা আনন্দ ও উল্লাস করি, আর তাঁর মহিমা কীর্তন করি,
কারণ মেষশাবকের বিবাহের দিন এল।
তাঁর বধূও বিবাহের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে।
8 তাকে পরিধান করতে দেওয়া হল
শুচি শুভ্র উজ্জ্বল মসীনার বসন।”
(সেই মসীনার বসন হল ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের সত্কর্মের প্রতীক।)
9 এরপর তিনি আমায় বললেন, “তুমি এই কথা লেখ। ধন্য তারা, যারা মেষশাবকের বিবাহে নিমন্ত্রিত হয়েছে।” তারপর দূত আমায় বললেন, “এগুলি ঈশ্বরের সত্য বাক্য।”
10 আমি তাঁকে উপাসনা করার জন্য তাঁর চরণে মাথা নত করলাম। কিন্তু স্বর্গদূত আমায় বললেন, “আমার উপাসনা করো না! আমি তোমারই মত এবং তোমার যে ভাইরা যীশুর সাক্ষ্য ধরে রয়েছে তাদের মতো এক দাস। ঈশ্বরেরই উপাসনা কর, কারণ ভাববাদীর আত্মাই হল যীশুর সাক্ষ্য।”
শ্বেত অশ্বের চালক
11 এরপর আমি দেখলাম, স্বর্গ উন্মুক্ত, আর সেখানে সাদা একটা ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। তার ওপর যিনি বসে আছেন, তাঁর নাম “বিশ্বস্ত ও সত্যময়” আর তিনি ন্যায়সিদ্ধ বিচার করেন ও যুদ্ধ করেন। 12 আগুনের শিখার মতো তাঁর চোখ, আর তাঁর মাথায় অনেকগুলি মুকুট আছে; সেই মুকুটগুলির উপর এমন এক নাম লেখা আছে, যার অর্থ তিনি ছাড়া অন্য আর কেউ জানে না। 13 রক্তে ডোবানো পোশাক তাঁর পরণে; তাঁর নাম ঈশ্বরের বাক্য। 14 স্বর্গের সেনাবাহিনী সাদা ঘোড়ায় চড়ে তাঁর পেছনে পেছনে চলেছিল। তাদের পরণে ছিল শুচিশুভ্র মসীনার পোশাক। 15 একটি ধারালো তরবারি তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল, যা দিয়ে তিনি পৃথিবীর সমস্ত জাতিকে আঘাত করবেন। লৌহ যষ্টি হাতে জাতিবৃন্দের ওপর তিনি শাসন পরিচালনা করবেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধের কুণ্ডে তিনি সব দ্রাক্ষা মাড়াই করবেন। 16 তাঁর পোশাকে ও উরুতে লেখা আছে এই নাম:
“রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু।”
17 পরে আমি দেখলাম, একজন স্বর্গদূত সূর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি উঁচু আকাশ পথে যে সব পাখি উড়ে যাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে খুব জোরে চিৎকার করে বললেন: “এস, ঈশ্বর যে মহাভোজের আয়োজন করেছেন, তার জন্য এক জায়গায় জড়ো হও। 18 এক, রাজাদের, প্রধান সেনাপতিদের ও বীরপুরুষদের মাংস, ঘোড়া ও ঘোড়-সওয়ারদের মাংস, স্বাধীন অথবা ক্রীতদাস, ক্ষুদ্র অথবা মহান সকল মানুষের মাংস খেয়ে যাও।”
19 তখন আমি দেখলাম ঐ ঘোড়ার ওপর যিনি বসেছিলেন, তিনি ও তাঁর সৈন্যদের সঙ্গে সেই পশু ও পৃথিবীর রাজারা তাদের সমস্ত সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করার জন্য একত্র হল। 20 কিন্তু সেই পশু ও ভণ্ড ভাববাদীকে ধরা হল। এই সেই ভণ্ড ভাববাদী, যে পশুর জন্য অলৌকিক কাজ করেছিল। এই অলৌকিক কাজের দ্বারা ভণ্ড ভাববাদী তাদের প্রতারণা করেছিল যাদের সেই পশুর চিহ্ন ছিল এবং যারা তার উপাসনা করেছিল। ভণ্ড ভাববাদী এবং পশুটিকে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে ছুঁড়ে ফেলা হল। 21 যারা বাকী থাকল তারা সকলে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ধারালো তলোয়ারের আঘাতে মারা পড়ল; আর সমস্ত পাখি তাদের মাংস খেয়ে তৃপ্ত হল।
1 মালাখির মাধ্যমে ইস্রায়েলের প্রতি ঈশ্বরের এক ভাববাণীরূপ বার্তা।
ঈশ্বর ইস্রায়েলকে ভালোবাসেন
2 প্রভু বলেছেন, “আমি তোমাদের ভালোবাসি।”
কিন্তু তোমরা জিজ্ঞেস কর, “আপনি যে আমাদের ভালোবাসেন তার প্রমাণ কি?”
প্রভু বলেন, “এষৌ কি যাকোবের ভাই নয়? তবু আমি যাকোবকে ভালবেসেছি। 3 কিন্তু আমি এষৌকে ঘৃণা করতাম। আমি তার পর্বতগুলি ধ্বংস করেছি এবং তার দেশকে শিয়ালের বাসস্থানে পরিণত করেছি।”
4 ইদোমের লোকরা বলতে পারে, “যদিও আমরা ধ্বংস হয়েছিলাম কিন্তু আমরা ফিরে গিয়ে আবার আমাদের শহরগুলো গড়ব।”
কিন্তু সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন, “তারা আবার গড়তে পারে কিন্তু আমি আবার তা ভেঙে ফেলব!” তাই লোকরা ইদোমকে বলবে একটি দুষ্ট দেশ এবং একটি জাতি যাকে প্রভু চিরকালের তরে ঘৃণা করেন।
5 তোমাদের চোখ তা দেখবে এবং তোমরা বলবে, “প্রভু মহান, এমন কি ইস্রায়েলের সীমার বাইরেও!”
লোকরা ঈশ্বরকে সম্মান করে না
6 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন, “পুত্র তার পিতাকে সম্মান করে এবং দাস তার মনিবকে সম্মান করে। কিন্তু আমি যদি পিতা হই তবে কেন আমি সম্মান পাবো না? আমি তোমাদের প্রভু। কিন্তু কেন তোমরা আমাকে সম্মান কর না? তোমরা, যাজকরা আমার নামকে সম্মান করছ না।”
কিন্তু তোমরা বল, “আমরা কি এমন কিছু করেছি যা প্রমাণ করে যে আমরা আপনার নামকে সম্মান করি না?”
7 প্রভু বলেছেন, “তোমরা আমার বেদীতে অশুচি রুটি নিয়ে আসো।”
“কিন্তু তোমরা জিজ্ঞাসা কর, ‘কি করে আমরা আপনাকে অশুচি করেছি?’”
প্রভু বলেছেন, “প্রভুর বেদী শ্রদ্ধার উপযুক্ত নয় এই বলে তোমরা আমার বেদীকে সম্মান করছ না। 8 এটা কি খারাপ কাজ নয় যে তোমরা উৎসর্গ করার জন্য অন্ধ পশুদের নিয়ে আসো? তোমরা উৎসর্গের জন্য যখন খোঁড়া ও অসুস্থ পশু নিয়ে আসো, সেটা কি খারাপ কাজ নয়? তোমাদের রাজ্যপালকে অসুস্থ পশুসমূহ দেবার চেষ্টা করে দেখ তো, তিনি কি তা গ্রহণ করবেন? তিনি কি তোমাদের ওপর খুশী হবেন?” সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন।
9 “যাজকরা, তোমরা প্রভুকে আমাদের প্রতি ভালো হতে অনুরোধ কর। কিন্তু তিনি তোমাদের কথা শোনেন না। তোমরাই এর জন্য দায়ী।” সর্বশক্তিমান প্রভু এইসব কথা বলেন।
10 “তোমাদের মধ্যে কেউ মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিক্ যাতে তোমরা আমার বেদীর ওপর অকেজো আলো জ্বালাতে না পারো। আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট নই এবং আমি তোমাদের হাত থেকে কোন নৈবেদ্য নেবো না।” সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন।
11 “সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন: সমস্ত পৃথিবীতে লোকে আমার নাম সম্মান করে এবং আমার জন্য শুদ্ধ ধূপ এবং নৈবেদ্য সমূহ নিয়ে আসে। কারণ আমার নাম সমস্ত জাতির মধ্যে সম্মানিত।”
12 “কিন্তু তোমরা ‘প্রভুর বেদী অশুদ্ধ’ একথা বলে দেখাও যে তোমরা আমার নামকে শ্রদ্ধা কর না এবং বেদীর ওপর নিবেদন করা খাদ্যও তোমরা চাও না, এতে তোমরা আমার নামের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাও। 13 তোমরা এও বলো, কি আপদ! সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন, তোমরা এমন পশু উৎসর্গ করার জন্য উপহার স্বরূপ নিয়ে আস যা চুরি করা, খোঁড়া অথবা অসুস্থ। তোমাদের হাতে করে আনা এই উপহার কি আমি গ্রহণ করব?” প্রভু এই কথাগুলি বলেন। 14 “সেই প্রতারক অভিশপ্ত, যার পালে পুরুষ পশু রয়েছে আর তা দিতে মানত করা সত্ত্বেও সে প্রভুর উদ্দেশ্যে এমন পশু উৎসর্গ করে যা দোষ যুক্ত। আমিই এই কথা বলছি কারণ আমি শক্তিমান রাজা এবং সমস্ত জাতির লোক আমাকে ভয় করে।” সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথা বলেন।
যীশুকে গ্রেপ্তার
(মথি 26:47-56; মার্ক 14:43-50; লূক 22:47-53)
18 এই প্রার্থনার পর যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে কিদ্রোণ উপত্যকার ওপারে চলে গেলেন। সেখানে একটি বাগান ছিল। যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেই বাগানের মধ্যে ঢুকলেন।
2 যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে প্রায়ই সেখানে আসতেন। এইজন্য যিহূদা সেই স্থানটি জানত। এই যিহূদা যীশুর সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। 3 সে ফরীশীদের ও প্রধান যাজকদের কাছ থেকে একদল সৈনিক ও কিছু রক্ষী নিয়ে সেখানে এল। তাদের হাতে ছিল মশাল, লন্ঠন ও নানা অস্ত্র।
4 তখন যীশু, তাঁর প্রতি কি ঘটতে চলেছে সে সবই তাঁর জানা থাকার ফলে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “তোমরা কাকে খুঁজছ?”
5 তারা তাঁকে বলল, “নাসরতীয় যীশুকে।”
যীশু বললেন, “আমিই তিনি।” (যে যিহূদা যীশুর বিরুদ্ধে গিয়েছিল সেও তাদেরই সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল।) 6 তিনি যখন তাদের বললেন, “আমিই তিনি।” তখন তারা পিছু হটে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
7 তাই আবার একবার তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কাকে খুঁজছ?”
তারা বলল, “নাসরতীয় যীশুকে।”
8 এর উত্তরে যীশু বললেন, “আমি তো তোমাদের আগেই বলেছি, আমিই তিনি। সুতরাং যদি তোমরা আমাকেই খুঁজছ, তাহলে এদের যেতে দাও।” 9 এটা ঘটল যাতে তাঁর আগের বক্তব্য যথার্থ প্রতিপন্ন হয়, “তুমি আমায় যাদের দিয়েছ তাদের কাউকে আমি হারাই নি।”
10 তখন শিমোন পিতরের কাছে একটা তরোয়াল থাকায় তিনি সেটা টেনে বার করে মহাযাজকের চাকরকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। (সেই চাকরের নাম মল্ক।) 11 তখন যীশু পিতরকে বললেন, “তোমার তরোয়াল খাপে ভরো, যে পানপাত্র পিতা আমায় দিয়েছেন, আমাকে তা পান করতেই হবে।”
হাননের কাছে যীশুকে আনা হল
(মথি 26:57-58; মার্ক 14:53-54; লূক 22:54)
12 এরপর সৈন্যরা ও তাদের সেনাপতি এবং ইহুদী রক্ষীরা যীশুকে গ্রেপ্তার করে বেঁধে প্রথমে হাননের কাছে নিয়ে গেল। 13 সেই বছর যিনি মহাযাজক ছিলেন সেই কায়াফার শ্বশুর এই হানন। 14 এই কায়াফা ইহুদী নেতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে জনস্বার্থে একজনের মরণ হওয়া ভালো।
পিতরের যীশুকে অস্বীকার
(মথি 26:69-70; মার্ক 14:66-68; লূক 22:55-57)
15 শিমোন পিতর ও আর একজন শিষ্য যীশুর পেছনে পেছনে গেলেন। এই শিষ্যর সঙ্গে মহাযাজকের চেনা পরিচয় ছিল, তাই তিনি যীশুর সঙ্গে মহাযাজকের বাড়ির উঠোনে ঢুকলেন; কিন্তু পিতর ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন। 16 তখন মহাযাজকের পরিচিত শিষ্য বাইরে এসে যে বালিকাটি ফটক পাহারায় ছিল তাকে বলে পিতরকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। 17 তখন দ্বাররক্ষীরা পিতরকে বলল, “তুমিও সেই লোকটার শিষ্যদের মধ্যে একজন নও কি?”
পিতর বললেন, “না, আমি নই!”
18 চাকররা ও মন্দিরের রক্ষীরা শীতের জন্য কাঠ কয়লার আগুন তৈরী করে তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিল। পিতরও তাদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিলেন।
যীশুকে মহাযাজকের প্রশ্ন
(মথি 26:59-66; মার্ক 14:55-64; লূক 22:66-71)
19 এরপর মহাযাজক যীশুকে তাঁর শিষ্যদের বিষয়ে ও তাঁর শিক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন। 20 যীশু এর উত্তরে তাঁকে বললেন, “আমি সর্বদাই সকলের কাছে প্রকাশ্যে কথা বলেছি। আমি মন্দিরের মধ্যে ও সমাজ-গৃহে যেখানে ইহুদীরা একসঙ্গে সমবেত হয় সেখানে সব সময় শিক্ষা দিয়েছি। আর আমি কখনও কোন কিছু গোপনে বলিনি। 21 তোমরা আমায় কেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করছ? যাঁরা আমার কথা শুনেছে তাদেরই জিজ্ঞেস কর আমি তাদের কি বলেছি। আমি কি বলেছি তারা নিশ্চয়ই জানবে!”
22 তিনি যখন একথা বলছেন, তখন সেই মন্দির রক্ষীবাহিনীর একজন যে সেখানে দাঁড়িয়েছিল সে যীশুকে এক চড় মেরে বলল, “তোর কি সাহস, তুই মহাযাজককে এরকম জবাব দিলি!”
23 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “আমি যদি অন্যায় কিছু বলে থাকি, তবে সকলকে বল কি অন্যায় বলেছি; কিন্তু আমি যদি সত্যি কথা বলে থাকি তাহলে তোমরা আমায় মারছ কেন?”
24 এরপর হানন যীশুকে মহাযাজক কায়াফার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। যীশু তখনও বাঁধা অবস্থায় ছিলেন।
পিতর আবার মিথ্যা বললেন
(মথি 26:71-75; মার্ক 14:69-72; লূক 22:58-62)
25 এদিকে শিমোন পিতর সেখানে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিলেন, লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “তুমিও কি ওঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন?”
কিন্তু তিনি একথা অস্বীকার করে বললেন, “না, আমি নই।”
26 মহাযাজকের একজন চাকর, পিতর যার কান কেটে ফেলেছিলেন তার এক আত্মীয় বলল, “আমি ওর সঙ্গে তোমাকে সেই বাগানের মধ্যে দেখেছি, ঠিক বলেছি না?”
27 তখন পিতর আবার একবার অস্বীকার করলেন; আর তখনই মোরগ ডেকে উঠল।
যীশুকে পীলাতের কাছে আনা হল
(মথি 27:1-2, 11-31; মার্ক 15:1-20; লূক 23:1-25)
28 এরপর তারা যীশুকে কায়াফার বাড়ি থেকে রাজ্যপালের প্রাসাদে নিয়ে গেল। তখন ভোর হয়ে গিয়েছিল। তারা নিজেরা রাজ্যপালের প্রাসাদের ভেতরে যেতে চাইল না, পাছে অশুচি[a] হয়ে পড়ে, কারণ তারা নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে চাইছিল। 29 তারপর রাজ্যপাল পীলাত তাদের সামনে বেরিয়ে এসে বললেন, “তোমরা এই লোকটার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ এনেছ?”
30 এর উত্তরে তারা পীলাতকে বলল, “এই লোক যদি দোষী না হত, তাহলে আমরা তোমার হাতে একে তুলে দিতাম না।”
31 তখন পীলাত তাদের বললেন, “একে নিয়ে যাও এবং তোমাদের বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে এর বিচার কর।”
ইহুদীরা তাকে বলল, “আমরা কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারি না।” 32 (কিভাবে তাঁর মৃত্যু হবে সে বিষয়ে যীশু যা ইঙ্গিত করেছিলেন তা পূরণ করতেই এই ঘটনাগুলি ঘটল।)
33 তখন পীলাত আবার প্রাসাদের মধ্যে গিয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”
34 যীশু বললেন, “তুমি কি নিজে থেকে একথা বলছ, অথবা অন্য কেউ আমার বিষয়ে তোমাকে বলেছে?”
35 পীলাত বললেন, “আমি কি ইহুদী? তোমার নিজের লোকেরা ও প্রধান যাজকরা তোমাকে আমার হাতে সঁপে দিয়েছে। তুমি কি করেছ?”
36 যীশু বললেন, “আমার রাজ্য এই জগতের নয়। যদি আমার রাজ্য এই জগতের হত তাহলে আমার লোকেরা ইহুদীদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করত; কিন্তু না, আমার রাজ্য এখানকার নয়।”
37 তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “তাহলে তুমি একজন রাজা?”
যীশু এর উত্তরে বললেন, “আপনি বলছেন যে আমি রাজা। আমি এই জন্যই জন্মেছিলাম, আর এই উদ্দেশ্যেই আমি জগতে এসেছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেউ সত্যের পক্ষে আছে, সে আমার কথা শোনে।”
38 পীলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “সত্য কি?” এই কথা জিজ্ঞেস করে তিনি পুনরায় ইহুদীদের কাছে গেলেন, আর তাদের বললেন, “আমি তো এই লোকটির মধ্যে কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না। 39 কিন্তু তোমাদের এমন এক রীতি আছে, সেই অনুসারে নিস্তারপর্বের সময়ে একজন বন্দীকে মুক্তি দিয়ে থাকি। বেশ তোমাদের কি ইচ্ছা, আমি তোমাদের জন্য ‘ইহুদীদের রাজাকে’ ছেড়ে দেব?”
40 তারা আবার চিৎকার করে বলল, “একে নয়! বারাব্বাকে!” (এই বারাব্বা ছিল একজন বিদ্রোহী।)
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International