M’Cheyne Bible Reading Plan
অশূররাজ হিষ্কিয়কে বিপদে ফেললেন
32 রাজা হিষ্কিয় এই সমস্ত কর্তব্য সুষ্ঠভাবে পালন ও সমাধা করার পর অশূররাজ সন্হেরীব যিহূদা আক্রমণ করতে আসেন। সন্হেরীব তাঁর সেনাবাহিনী সহ দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত যিহূদা শহরের বাইরে তাঁবুসমূহ গেড়েছিলেন কারণ তিনি সেগুলি নিজের জন্য দখল করতে চেয়েছিলেন। 2 যখন হিষ্কিয় জানতে পারলেন যে সন্হেরীব জেরুশালেম আক্রমণ করতে এসেছেন, 3 হিষ্কিয় তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও সৈন্যাধ্যক্ষদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করলেন দুর্গের বাইরের ঝর্ণার জলধারা বন্ধ করে দেবেন। 4 তখন সকলে মিলে দূর্গের বাইরে সমস্ত ঝর্ণা আর যিহূদার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীর জল বন্ধ করার ব্যবস্থা করলেন। তাঁরা বললেন, “অশূররাজ এখানে আসুন এবং দেখুন কত জলকষ্ট আছে।” 5 হিষ্কিয় জেরুশালেমের প্রাচীরের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করে প্রাচীরের ওপর নজরদারি স্তম্ভ বসিয়ে জেরুশালেমের সুরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করলেন। উপরন্তু, তিনি প্রথম প্রাচীরের চতুর্দিকে আরেকটা দেওয়াল তুলে পূর্ব দিকের পাঁচিল শক্ত করে গাঁথলেন। অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও ঢালও বানালেন। 6-7 যুদ্ধের সৈন্যাধ্যক্ষদের ওপর তিনি সাধারণ লোকদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। তিনি শহরের প্রবেশ পথে এই সমস্ত সৈন্যাধ্যক্ষদের সঙ্গে দেখা করে তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, “শক্তিশালী এবং সাহসী হও। অশূররাজের বিশাল সেনাবাহিনীর কথা ভেবে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। অশূররাজের থেকেও বড় শক্তি আমাদের সঙ্গে আছে। 8 অশূররাজের শুধু সৈন্যই আছে কিন্তু আমাদের সঙ্গে আমাদের প্রভু ঈশ্বর আছেন। তিনি আমাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদের জন্য যুদ্ধ করবেন।” এইভাবে যিহূদারাজ হিষ্কিয় সকলকে অনুপ্রাণিত করে তাদের মনের জোর বাড়িয়ে দিলেন।
9 ইতিমধ্যে, অশূররাজ সন্হেরীব আর তাঁর সেনারা লাখীশ শহরের কাছে শহরটা দখল করার জন্য তাঁবু ফেলেছিলেন। তখন সন্হেরীব রাজা হিষ্কিয় ও যিহূদার লোকদের কাছে একটি খবর পাঠালেন যাতে বলা হল,
10 “কোন্ বিশ্বাস এবং অবলম্বনের ওপর তোমরা ভরসা করছ যে তোমরা অবরুদ্ধ জেরুশালেমে রয়েছ? 11 হিষ্কিয় তোমাদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। চালাকি করে সে তোমাদের জেরুশালেমে আটকে রেখেছে, যাতে তোমরা খাবার ও জলের অভাবে বেঘোরে মারা পড়। হিষ্কিয় তোমাদের বলছে, ‘আমাদের প্রভু ঈশ্বর অশূররাজের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করবেন।’ 12 আর এদিকে ও নিজে প্রভুর সমস্ত উচ্চস্থান ও বেদী ভেঙ্গে দিয়ে যিহূদা আর জেরুশালেমের লোকদের একটিমাত্র বেদীতে উপাসনা করতে ও ধুপধূনো দিতে বলছে। 13 তোমরা সকলে নিশ্চয়ই জানো আমি ও আমার পূর্বপুরুষরা অন্যান্য রাজ্যের লোকদের কি অবস্থা করেছি। এমন কি ঐ সব দেশের দেবতারাও সেসব লোককে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। 14 আমার পূর্বপুরুষরা একের পর এক রাজ্য ধ্বংস করেছেন। এমন কোনো দেবতা নেই যিনি আমাকে তাঁর ভক্তদের হত্যা করার থেকে থামাতে পারেন। তোমরা ভাবছো তোমাদের দেবতা তোমাদের আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে? 15 হিষ্কিয়র চালাকির ফাঁদে পড়ো না। কারণ কোনো দেশের কোনো দেবতাই তাঁর ভক্তদের আমার বা আমার পূর্বপুরুষের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। ভুলেও ভেবো না যে তোমাদের প্রভু তোমাদের মৃত্যু আটকাতে পারবে।”
16 অশূররাজের পদস্থ কর্মচারীরা সকলে প্রভু ঈশ্বর ও তাঁর দাস হিষ্কিয়র বিরুদ্ধে আরো নানা ধরণের বিরূপ মন্তব্য করেছিল। 17 অশূররাজ তাঁর চিঠিতেও প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর সম্পর্কে বিভিন্ন অপমানজনক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন: “অন্য দেশের দেবতারা যেমন তাদের ভক্তদের আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি, সে রকমই হিষ্কিয়র দেবতাও আমার হাত থেকে ওর ভক্তদের একটাকেও বাঁচাতে পারবে না।” 18 এরপর সন্হেরীবের আধিকারিকরা দুর্গপ্রাকারের ওপর যে সমস্ত জেরুশালেমের লোক দাঁড়িয়েছিলেন তাদের ভয় দেখানোর জন্য হিব্রু ভাষায় চেঁচিয়ে উঠলেন যাতে তিনি নগরীটি দখল করতে পারেন। 19 তারা জেরুশালেমের ঈশ্বর সম্পর্কেও এমনভাবে কথা বলল যেন তিনি অন্যান্য জাতির সেই সমস্ত দেবতাদের একজন যাদের মানুষ হাতে করে তৈরী করেছে।
20 রাজা হিষ্কিয় আর আমোসের পুত্র ভাববাদী যিশাইয় তখন এই সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা পেতে উচ্চস্বরে স্বর্গের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করলেন। 21 এবং প্রভু অশূররাজের শিবিরে একজন দূত পাঠালেন। সেই দূত তখন অশূরীয়দের সমস্ত সৈন্য, নেতা ও আধিকারিকদের হত্যা করলেন। অবশেষে, চরম লজ্জা নিয়ে অশূররাজ তাঁর রাজ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন। এরপর, যখন তিনি তাঁর দেবতার মন্দিরে গেলেন, তাঁর নিজেরই কয়েকজন পুত্র তরবারির সাহায্যে তাঁকে হত্যা করলো। 22 প্রভু এইভাবে হিষ্কিয় ও তাঁর লোকদের অশূররাজ সন্হেরীব ও অন্যান্যদের হাত থেকে রক্ষা করেন। প্রভু তাদের সব দিকেই শান্তি দিয়েছিলেন। 23 বহু ব্যক্তি জেরুশালেমে প্রভুর জন্য এবং যিহূদার রাজা হিষ্কিয়র জন্য মূল্যবান উপহার এনেছিলেন যাতে অন্য সমস্ত দেশ হিষ্কিয়কে সম্মান প্রদর্শন করে।
24 সেই সময়ে, হিষ্কিয় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং প্রায় মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। তিনি তখন প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলে প্রভু তাঁকে দর্শন দিয়ে একটি দৈব সংকেতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে বলেন। 25 কিন্তু হিষ্কিয় এতো গর্বিত ছিলেন যে তিনি তখন ঈশ্বরের এই করুণার জন্য তাঁর প্রতি ধন্যবাদ পর্যন্ত জ্ঞাপন করেন নি। এতে ঈশ্বর হিষ্কিয় এবং যিহূদা ও জেরুশালেমের ওপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। 26 এই কারণে হিষ্কিয় ও এই সমস্ত লোকরা তাঁদের মনোভাব ও জীবনযাপনের ধারা পরিবর্তন করেছিলেন এবং গর্বিত হবার পরিবর্তে নম্রভাবে থাকতে শুরু করলেন। এর ফলে, হিষ্কিয়র জীবদ্দশায় প্রভুর ক্রোধাগ্নি তাদেরঁ স্পর্শ করেনি।
27 হিষ্কিয় বহু ধনসম্পদ ও সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন। তিনি সোনা, রূপো, গয়নাগাঁটি, মশলাপাতি অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার জন্য নতুন নতুন জায়গা বানিয়েছিলেন। 28 লোকরা তাঁকে যে সমস্ত খাদ্যশস্য, দ্রাক্ষারস, তেল ইত্যাদি পাঠাতো সেসব রাখার জন্যও ভাঁড়ার ঘর ছিল। গবাদি পশু, ঘোড়া এদের থাকার জন্য বানানো হয়েছিল গোয়াল ও আস্তাবল। 29 এছাড়াও হিষ্কিয় অনেক নতুন শহরের পত্তন করেছিলেন এবং মেষপাল ও অন্যান্য গবাদি পশুর অধিকারী হয়েছিলেন। ঈশ্বর হিষ্কিয়কে ধনবান করেছিলেন। 30 হিষ্কিয়ই জেরুশালেমের গীহোন ঝর্ণার উৎস মুখের স্রোত আটকে তার গতিপথ দায়ূদ নগরীর পশ্চিম প্রান্তে পরিবর্তিত করেছিলেন। তাঁর সমস্ত কাজেই হিষ্কিয় সফলতা লাভ করেন।
31 হিষ্কিয়র এই একটানা সফলতার কারণে বাবিলের নেতাদের তাঁর সাফল্যের গোপন কথা শিখতে পাঠানো হয়েছিল। হিষ্কিয়কে পরীক্ষা করার জন্য ঈশ্বর তাকে একা রেখে দিলেন, যাতে তিনি জানতে পারেন হিষ্কিয় সত্যি কতটা বিশ্বস্ত ছিল।
32 হিষ্কিয় আর যা কিছু করেছিলেন, তিনি কিভাবে প্রভুকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন সে সবই আমোসের পুত্র যিশাইয়র দর্শন পুস্তক এবং যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 33 হিষ্কিয়র মৃত্যুতে, লোকরা তাঁকে পাহাড়ের ওপর দায়ূদের পূর্বপুরুষের মধ্যে সমাধিস্থ করল এবং তাঁর মৃত্যুর পর যিহূদার ও জেরুশালেমের সমস্ত লোকরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়। হিষ্কিয়র মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মনঃশি নতুন রাজা হলেন।
বাবিল ধ্বংস হল
18 এইসব ঘটনার পর আমি আর একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তিনি মহাপরাক্রান্ত স্বর্গদূত, তাঁর জ্যোতি সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলল। 2 তিনি প্রবল শব্দে চেঁচিয়ে উঠলেন:
“পতন হল!
মহানগরী বাবিলের পতন হল!
সে ভূতের আবাসে পরিণত হয়েছে।
সেই নগরী হয়েছে সব রকমের অশুচি আত্মার আবাস।
সে যতো অশুচি পাখীদের বাসা এবং যতো নোংরা
ও ঘৃন্য পশুদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
3 পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তার অসৎ যৌন পাপের মদিরা
ও ঈশ্বরের রোষ মদিরা পান করেছে।
পৃথিবীর রাজারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করেছে;
আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার অসংযত বিলাসিতার সুবাদে ধনবান হয়ে উঠেছে।”
4 এরপর আমি স্বর্গ থেকে আর একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, সে বলছে:
“হে আমার প্রজারা, ওখান থেকে বেরিয়ে এস,
তোমরা যেন ওর পাপের ভাগী না হও;
আর ওর প্রাপ্য আঘাত যেন তোমাদের ওপর না আসে।
5 কারণ ওর পাপ স্তূপীকৃত হয়ে গগণচুম্বী হয়েছে;
আর ঈশ্বর ওর সব অপরাধ স্মরণ করেছেন।
6 সে অপরের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেছে, তোমরাও তার প্রতি সেরূপ ব্যবহার কর।
সে যেমন কাজ করেছে, তোমরা তার দ্বিগুণ প্রতিফল তাকে দাও।
অপরের জন্য পানপাত্রে সে যে পরিমাণ মেশাতো
তোমরা তার জন্য সেই পাত্রে দ্বিগুণ মেশাও।
7 সে (বাবিল) যত অহঙ্কার ও বিলাসিতায় জীবন কাটাতো
তোমরা তাকে তত যন্ত্রণা ও মনোকষ্ট দাও।
কারণ সে নিজের বিষয়ে বলত, ‘আমি রাণী, রাণীর মতোই সিংহাসনে বসে আছি।
আমি বিধবা নই,
আর আমি কখনই দুঃখ পাব না।’
8 অতএব এক দিনের মধ্যেই তার ওপর এই আঘাত আসবে;
মৃত্যু, শোক ও দুর্ভিক্ষ আর আগুনে
পুড়িয়ে তাকে ধ্বংস করা হবে।
কারণ প্রভু ঈশ্বর যিনি তার বিচার করেছেন তিনি সর্বশক্তিমান।
9 “জগতের যে সব রাজারা তার সঙ্গে যৌন পাপে লিপ্ত হয়েছে ও বিলাসে কাটিয়েছে, তারা তাকে জ্বলতে দেখে ও তার থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে বিলাপ ও হাহাকার করবে।” 10 তার যন্ত্রণার ভয়াবহতা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বলবে:
‘হায়! হায়! হে মহান নগরী!
ও শক্তিশালী বাবিল নগরী!
এক ঘন্টার মধ্যেই তোমার ওপর শাস্তি নেমে এল!’
11 “আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার (বাবিলের) জন্য কাঁদছে ও হাহাকার করছে, কারণ তাদের বাণিজ্য দ্রব্য আর কেউ কেনে না। 12 তাদের বাণিজ্যদ্রব্যগুলি ছিল: সোনা, রূপো, মণি, মুক্তা, মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়, রেশমের কাপড়, লাল রঙের কাপড়, সব রকমের চন্দন কাঠ, হাতির দাঁতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, মূল্যবান কাঠ, পিতলের, কাঁসার, লোহার ও মার্বেল পাথরের সব রকমের পাত্র, 13 আর দারুচিনি, মশলা, ধূপ, সুগন্ধি নির্যাস, মস্তকি, গুগ্গুল, মদ ও জলপাইয়ের তেল, ময়দা, আটা, গরু, মেষ, ঘোড়ার গাড়ী আর মানুষের দেহ এবং প্রাণও। সেই ব্যবসায়ীরা কেঁদে কেঁদে বলবে:
14 ‘হে বাবিল, যে সব ভাল ভাল জিনিসের ওপর তোমার মন পড়ে ছিল তার সবই তোমার কাছ থেকে চলে গেছে।
তোমার সব রকমের বিলাসিতা ও শোভা প্রাচুর্য্য সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।
তুমি তা আর কখনই দেখতে পাবে না।’
15 “ঐ সব জিনিসের ব্যবসায়ীরা তার ধনে ধনী হয়েছিল, তারা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদবে, আর হাহাকার করে বলবে:
16 ‘হায়! হায়! হায় মহানগরী!
সে মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়
ও লাল রঙের কাপড় পরত।
সে সোনা, মণি, মুক্তা খচিত গয়না পরত।
17 এক ঘন্টার মধ্যে তার সেই মহাসম্পদ ধ্বংস হল!’
“আর প্রত্যেক জাহাজের প্রধান কর্মচারীরা, জলপথের যাত্রীরা, নাবিকরা ও সমুদ্রেই জীবিকা যাদের, তারা সকলে বাবিল থেকে সরে দাঁড়ালো। 18 জ্বলন্ত বাবিলের ধোঁয়া দেখে তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আর কোন নগর এই মহানগরীর মত ছিল না!’ 19 তারা সকলে নিজেদের মাথায় ধুলো ছিটিয়ে হাহাকার করে বলতে লাগল:
‘হায়! হায়! ঐ মহানগরীর কি দুর্দশাই না হল!
যার সম্পদে সমুদ্রগামী জাহাজের কর্তারা ধনবান হত,
এক ঘন্টার মধ্যে সে ধ্বংস হয়ে গেল।
20 এই জন্য হে স্বর্গ, উল্লসিত হও!
হে ঈশ্বরের পবিত্র লোকরা! হে প্রেরিতরা আর ভাববাদীরা, উল্লসিত হও!
কারণ সে তোমাদের প্রতি যে অন্যায় করেছে, ঈশ্বর তার শাস্তি তাকে দিয়েছেন।’”
21 পরে এক পরাক্রান্ত স্বর্গদূত খুব বড় যাঁতার মতো পাথর তুলে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে বললেন:
“মহানগরী বাবিলকে এই পাথরটির মতো ছুঁড়ে ফেলা হবে;
আর চিরকালের মতো সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
22 তোমার মধ্যে বীণাবাদক, বাঁশীবাদক, তূরীবাদক ও গায়কদের গান-বাজনা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার মধ্যে আর কখনও কোন শিল্পকারকে পাওয়া যাবে না,
গম ভাঙার যাঁতার শব্দ আর কখনও শোনা যাবে না।
23 তোমার মধ্যে আর কখনও প্রদীপ জ্বলবে না,
বর-কণের কথাবার্তা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত হয়েছিল।
তোমার তন্ত্র-মন্ত্রের জাদুতে সমস্ত জাতি ভ্রান্ত হয়েছিল।
24 বাবিল সমস্ত ভাববাদী, ঈশ্বরের পবিত্র লোক,
আর পৃথিবীতে যত লোককে হত্যা করা হয়েছে, তার রক্তপাতের দোষে দোষী।”
বিচারের দিনের বর্ণনা
14 দেখ, বিচারের জন্য প্রভুর বিশেষ দিন আসছে। আর যে সম্পদ তুমি লুঠ করছ তা তোমার শহরে ভাগ করা হবে। 2 জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য আমি সমস্ত জাতিকে জড়ো করব। শত্রুরা শহর অধিকার করবে এবং ঘর বাড়ি ধ্বংস করবে। স্ত্রীলোকদের ওপর বলাৎকার করা হবে এবং অর্ধেক লোককে বন্দী করে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হবে। বাদবাকীরা পেছনে পড়ে থাকবে। 3 তখন সেইসব জাতির সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য প্রভু নিজে যাবেন অতীতে যেমন তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। 4 সেই সময় তিনি জৈতুন পর্বতের ওপরে দাঁড়াবেন, যে পর্বত জেরুশালেমের পূর্বে অবস্থিত। জৈতুন পর্বত চিরে যাবে এবং পর্বতের একভাগ উত্তরে, অপরভাগ দক্ষিণে সরে যাবে। পশ্চিম থেকে পূর্বে এক গভীর উপত্যকার সৃষ্টি হবে। 5 সেই উপত্যকা তোমার নিকটবর্তী হলে তোমরা পালাবার চেষ্টা করবে। যেমন যিহূদার রাজা উষিয়ের সময়ে ভূমিকম্পের দিনে তোমরা দৌড়েছিলে সেইরকম দৌড়ে পালাবে। ঈশ্বর আসবেন, এবং তাঁর সমস্ত পবিত্র লোকরা তাঁর সঙ্গে থাকবে।
6-7 সেই দিন হবে বিশেষ দিন। সেই দিন আলো, ঠাণ্ডা বা হিম বলে কিছু থাকবে না। কেবল প্রভু জানেন তা কিভাবে হবে, কিন্তু দিন বা রাত বলে কিছু থাকবে না। সাধারণতঃ অন্ধকার যখন নেমে আসে সেই সময়তেও আলো থাকবে। 8 সেই দিন জেরুশালেম থেকে জীবন্ত জলের ধারা বইবে। সেই জলধারা দুটি স্রোতে ভাগ হয়ে এক ভাগ পূর্ব দিকে মৃত সাগরে এবং অপর ভাগ পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরে বইবে। সেই জলের ধারা সারা বছর ধরে থাকবে, কি গ্রীষ্মে, কি শীতে। 9 সেই সময়, প্রভু সমস্ত পৃথিবীর রাজা হবেন। সেই দিন প্রভু হবেন একজন। তাঁর নাম হবে একটিই। 10 সেই সময়, জেরুশালেমের চারধার মরুভূমিতে পরিণত হবে। গেবা থেকে নেগেভের রিম্মোণ পর্যন্ত মরুভূমির মত হয়ে যাবে। কিন্তু জেরুশালেমের পুরো শহরটি আবার নির্মাণ করা হবে। বিন্যামীন ফটক থেকে প্রথম ফটক (কোণের ফটক) পর্যন্ত এবং হননেলের দুর্গ থেকে রাজার দ্রাক্ষা কুণ্ড পর্যন্ত। 11 কোন শত্রু আর তাদের ধ্বংস করতে সেখানে আসবে না। জেরুশালেম নিরাপদ হবে।
12 কিন্তু যে সমস্ত জাতি জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, প্রভু তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের মাঝে তিনি প্লেগ রোগটি পাঠাবেন। জীবিতকালেই তাদের মাংস পচতে শুরু করবে। তাদের চোখগুলো কোটরে পচবে আর জিব মুখের মধ্যে পচতে শুরু করবে। 13-15 এই মারাত্মক রোগ শত্রু শিবিরগুলিতে ছড়িয়ে যাবে। সেই মারাত্মক রোগ তাদের ঘোড়া, উট এবং গাধাদের মধ্যেও ছড়িয়ে যাবে।
সেই সময়, ঐ লোকরা সত্যিই প্রভুকে ভয় পাবে। প্রত্যেকটি লোক অন্য লোকের হাত টেনে ধরবে আর তারা একে অপরের সঙ্গে লড়াই করবে। এমনকি যিহূদাও জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। সমস্ত লোকের কাছ থেকে সোনা, রূপো ও কাপড় চোপড় জড়ো করার পরও এটা ঘটবে। 16 জেরুশালেমে যারা যুদ্ধ করতে এসেছিল, তার থেকে বেঁচে থাকা লোকরা প্রতি বছর সেই রাজা যিনি সর্বশক্তিমান প্রভু, তাঁর উপাসনা করতে আসবে। এবং কুটিরবাস পর্ব পালন করতে জেরুশালেম পর্যন্ত যাবে। 17 আর পৃথিবীর কোন পরিবার যদি জেরুশালেমে সর্বশক্তিমান প্রভুর উপাসনা করতে না যায় তবে প্রভু তাদের বৃষ্টি দেবেন না। 18 যদি মিশরের কোন পরিবার কুটিরবাস পর্ব পালন করতে না আসে তবে প্রভু শত্রু জাতিদের ক্ষেত্রে যেমন করেছিলেন তেমনি তাদেরও সেই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত করবেন। 19 এই শাস্তি হবে মিশরীয়দের জন্য এবং অন্য যে কোন জাতি যারা কুটিরবাস পর্ব পালন করতে না আসে তাদের জন্য।
20 সেই সময়, প্রভু সব কিছুর মালিক হবেন। এমনকি ঘোড়ার গলার ঘণ্টিগুলিতেও লেখা থাকবে, প্রভুর জন্য পবিত্র।[a] আর প্রভুর মন্দিরে ব্যবহৃত সমস্ত বাসন-কোষন বেদীর বাটীর মত পাত্রগুলির মতোই গুরুত্বপূর্ণ হবে। 21 প্রকৃতপক্ষে জেরুশালেম ও যিহূদার প্রতিটি পাত্রেই এই কথা লেখা থাকবে। প্রভু সর্বশক্তিমানের জন্য পবিত্র। নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে যে সমস্ত লোক এসেছিল তারা এসে সেই সমস্ত পাত্র নিয়ে তাতে তাদের বিশেষ খাবার রান্না করবে।
সেই সময়, সর্বশক্তিমান প্রভুর মন্দিরে কোন ব্যবসায়ীকে আর দেখতে পাওয়া যাবে না।
শিষ্যদের জন্য যীশুর প্রার্থনা
17 এইসব কথা বলার পর যীশু স্বর্গের দিকে তাকিয়ে এই কথা বললেন, “পিতা, এখন সময় হয়েছে; তোমার পুত্রকে মহিমান্বিত কর, যেন তোমার পুত্রও তোমাকে মহিমান্বিত করতে পারে। 2 সমস্ত মানুষের উপর পুত্রকে তুমি অধিকার দিয়েছ যাতে তিনি তাদের সকলকে অনন্ত জীবন দিতে পারেন। 3 এই হল অনন্ত জীবন; তারা তোমাকে জানে যে তুমি একমাত্র সত্য ঈশ্বর ও তুমি যাঁকে পাঠিয়েছ সেই যীশু খ্রীষ্টকে জানে। 4 তুমি যে কাজ করার দায়িত্ব আমায় দিয়েছিলে, তা আমি শেষ করেছি ও পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করেছি। 5 তাই এখন তোমার সান্নিধ্যে আমায় মহিমান্বিত কর। হে পিতা, জগত সৃষ্টির পূর্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় এখন আমায় মহিমান্বিত কর।
6 “এই জগতের মধ্যে থেকে তুমি যে সব লোকদের আমায় দিয়েছ, আমি তাদের কাছে তোমার পরিচয় দিয়েছি। তারা তোমারই ছিল এবং তুমি তাদেরকে আমায় দিয়েছ, আর তারা তোমার শিক্ষানুসারে চলেছে। 7 এখন তারা বুঝেছে যে তুমি যা কিছু আমায় দিয়েছ তা তোমার কাছ থেকেই এসেছে। 8 তুমি আমায় যে শিক্ষা দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি, আর তা তারা গ্রহণও করেছে। তারা সত্যিই বুঝেছে যে আমি তোমারই কাছ থেকে এসেছি, আর তারা বিশ্বাস করে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। 9 আমি তাদের জন্য এখন প্রার্থনা করছি। আমি সারা জগতের জন্য প্রার্থনা করছি না, কেবল সেই সকল লোকদের জন্য প্রার্থনা করছি যাদের তুমি দিয়েছ, কারণ তারা তোমার। 10 আমার যা কিছু তা তোমার, আর তোমার যা তা আমার। আর এদের মাধ্যমে আমি মহিমান্বিত হয়েছি।
11 “আমি আর এই জগতে থাকছি না, কিন্তু তারা এই জগতে থাকছে, আমি তোমারই কাছে যাচ্ছি। পবিত্র পিতা, যে নাম তুমি আমায় দিয়েছ, তোমার সেই নামের শক্তিতে তুমি তাদের রক্ষা কর। আমরা যেমন এক, তেমনি তারা যেন সকলে এক হতে পারে। 12 আমি যখন তাদের সঙ্গে ছিলাম, আমি তাদের নিরাপদে রেখেছিলাম। তুমি আমায় যে নাম দিয়েছ সেই নামের শক্তিতে তখন আমি তাদের রক্ষা করেছিলাম। আমি তাদের সাবধানে রক্ষা করেছি। তাদের মধ্যে কেউ বিনষ্ট হয় নি, একমাত্র ব্যতিক্রম সেই লোকটি, ধ্বংস হওয়াই যার পরিণতি। শাস্ত্রের কথা সফল করার জন্যেই এই পরিণতি।
13 “এখন আমি তোমার কাছে আসছি, কিন্তু এই জগতে থাকতে থাকতে আমি এসব কথা বলছি, যেন তারা আমার যে আনন্দ তা পরিপূর্ণরূপে পায়। 14 আমি তাদের তোমার শিক্ষা জানিয়েছি, কিন্তু জগত সংসার তাদের ঘৃণা করে, কারণ তারা এই জগতের নয়, যেমন আমিও এই জগতের নই।
15 “তাদের এই জগত থেকে নিয়ে যাবার জন্য আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি না, কিন্তু তাদের মন্দ শক্তির হাত থেকে রক্ষা কর। 16 তারা এই জগতের নয়, যেমন আমিও এ জগতের নই। 17 সত্যের দ্বারা তোমার সেবার জন্য তুমি তাদের পবিত্র কর। তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ। 18 তুমি যেমন এ জগতে আমাকে পাঠিয়েছ, আমিও তাদের তেমনি জগতের মাঝে পাঠিয়েছি। 19 তাদের জন্য আমি তোমার সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করেছি, যেন তারাও সত্যের মাধ্যমে তোমার সেবায় নিজেদের নিযুক্ত করতে পারে।
20 “আমি কেবল এদের জন্যই প্রার্থনা করছি না, এদের শিক্ষার মধ্য দিয়ে যারা আমায় বিশ্বাস করবে তাদের জন্যও করছি। 21 পিতা, যেমন তুমি আমাতে রয়েছ, আর আমি তোমাতে রয়েছি, তেমনি তারাও যেন এক হয়। তারা যেন আমাদের মধ্যে থাকে যাতে জগত সংসার বিশ্বাস করে যে তুমি আমাকে পাঠিয়েছ। 22 আর তুমি আমায় যে মহিমা দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি, যাতে আমরা যেমন এক, তারাও তেমনি এক হতে পারে। 23 আমি তাদের মধ্যে, আর তুমি আমার মধ্যে থাকবে, এইভাবে তারা যেন সম্পূর্ণভাবে এক হয়। জগত যাতে জানে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। আর তুমি যেমন আমায় ভালবেসেছ, তেমনি তুমি তাদেরও ভালবেসেছ।
24 “পিতা, আমি চাই, আমি যেখানে আছি, তুমি যাদের আমায় দিয়েছ, তারাও যেন আমার সঙ্গে সেখানে থাকে। আর তুমি আমায় যে মহিমা দিয়েছ তারা আমার সেই মহিমা যেন দেখতে পায়, কারণ জগত সৃষ্টির আগেই তুমি আমায় ভালবেসেছ। 25 ন্যায়বান পিতা, জগত তোমায় জানে না, কিন্তু আমি তোমায় জানি। আর আমার এই শিষ্যরা জানে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। 26 তুমি কে আমি তাদের কাছে তা প্রকাশ করেছি, আর এরপরেও আমি তাদের কাছে তা করতেই থাকব। তাহলে তুমি আমায় যেমন ভালবেসেছ, তারা একইভাবে অন্যদের ভালবাসবে আর আমি তাদের মধ্যেই থাকব।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International