Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 বংশাবলি 27-28

যিহূদার রাজা যোথম

27 পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়ে যোথম মোট 16 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মাতা যিরূশা ছিলেন সাদোকের কন্যা। যোথম প্রভুর অভিপ্রায় অনুসারে তাঁর পিতা উষিয়র মতোই ঈশ্বরকে অনুসরণ করতেন। কিন্তু তিনি কখনও তাঁর পিতা উষিয়র মতো প্রভুর মন্দিরে ঢুকে ধুপধূনো দেবার দুঃসাহস প্রকাশ করেন নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও লোকেরা পাপ আচরণ করে যেতে লাগলো। যোথম প্রভুর মন্দিরের উত্তর দরজাটি পুনর্নির্মাণ করা ছাড়াও ওফলের প্রাচীরের ওপর অনেক কিছু স্থাপন করেন এবং যিহূদার পার্বত্য অঞ্চলে বেশ কিছু শহর স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি জঙ্গলে দুর্গ ও নজরদারির জন্য স্তম্ভ বানান। অম্মোনীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি যুদ্ধে অম্মোন-রাজকে পরাজিত করেন যার ফলস্বরূপ তিন বছর ধরে একটানা প্রত্যেক বছর অম্মোনীয়রা তাঁকে 3 3/4 টন রূপো, প্রায় 62,000 বুশেল গম ও যব নজরানা দিত।

প্রভু তাঁর ঈশ্বরকে অনুসরণ করে যোথম শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আর যা কিছু করেছিলেন সেসব ও তাঁর যুদ্ধের বিবরণী ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়ে 16 বছর জেরুশালেম শাসন করার পর তাঁর মৃত্যু হলে তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে দায়ূদ নগরীতে সমাধিস্থ করা হল। এরপর যোথমের জায়গায় রাজা হলেন তাঁরই পুত্র আহস।

যিহূদার রাজা আহস

28 আহস 20 বছর বয়সে রাজা হয়ে মোট 16 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি তাঁর ধর্মনিষ্ঠ পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতো বা প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ী জীবনযাপন করেন নি। আহস ইস্রায়েলের রাজাদের খারাপ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জীবনযাপন করেছিলেন। তিনি বালদেবতাদের আরাধনার জন্যও মূর্ত্তিসমূহ বানিয়েছিলেন। এছাড়া ইস্রায়েলীয়দের তাড়াবার আগে প্রভু যে কনানীয় জাতিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের ঘৃণ্য আচরনের মত আহস বিন্-হিন্নোমের উপত্যকায় ধুপধূনো দিয়েছিলেন ও তাঁর নিজের পুত্রদের আগুনে উৎসর্গ করেছিলেন। বলিদান করা ছাড়াও আহস উঁচু বেদীগুলোয় পাহাড়ে এবং প্রত্যেকটি সবুজ গাছের তলায় ধুপধূনো দিতেন।

5-6 যেহেতু আহস এই সমস্ত পাপ আচরণে লিপ্ত হয়েছিলেন সেহেতু প্রভু, তাঁর ঈশ্বর অরাম রাজের হাতে তাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। আহসের বহু সৈন্যকে বন্দী করে অরামরাজ তাদের দম্মেশকে নিয়ে যান। উপরন্তু, ইস্রায়েলের রাজা রমলিয়র পুত্র পেকহর হাতেও আহসের পরাজয় ঘটে। পেকহ ও তাঁর সেনাবাহিনী মিলে একদিনের মধ্যে যিহূদার 120,000 হাজার বীর সেনাকে হত্যা করেছিলেন। পেকহ এদের পরাজিত করতে পেরেছিলেন কারণ এরা তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেছিল। ইফ্রয়িম থেকে একজন শক্তিশালী যোদ্ধা সিখ্রি, আহসের পুত্র মাসেয়কে, প্রাসাদের অধ্যক্ষ অস্রীকামকে আর কর্তৃত্বে যিনি ছিলেন রাজার পরেই সেই ইল‌্কানাকে হত্যা করেন।

ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনী যিহূদায় বসবাসকারী তাদের 200,000 আত্মীয়স্বজনকে বন্দী করা ছাড়াও যিহূদা নারী ও শিশুসহ বহু মূল্যবান জিনিসপত্র অপহরণ করে শমরিয়াতে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সে সময়ে, ওদেদ নামে এক প্রভুর ভাববাদী বিজয়ী ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীকে বললেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষের দ্বারা পূজিত প্রভুর কৃপায় তোমরা যিহূদাকে হারাতে পেরেছো কারণ তিনি তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তোমরা খুব নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিতভাবে যিহূদার সৈন্যদের হত্যা করেছো, তাই এখন প্রভু তোমাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন। 10 তোমরা যিহূদা এবং জেরুশালেমের বন্দীদের ক্রীতদাস হিসেবে রাখবার পরিকল্পনা করেছিলে। কিন্তু তোমরা নিজেরাই প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছ। 11 এখন আমার কথা শোনো। তোমরা তোমাদের বন্দী ভাই-বোনদের মুক্তি দাও কারণ এই অপরাধের জন্য প্রভু তোমাদের প্রতি খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছেন।”

12 সেই সময় যিহোহাননের পুত্র অসরিয়, মশিল্লেমোতের পুত্র বেরিখিয়, শল্লুমের পুত্র যিহিষ্কিয় এবং হদ্লয়ের পুত্র অমাসা প্রমুখ ইফ্রয়িমের সৈন্যবাহিনীর এইসব নেতারা যুদ্ধ থেকে একদল ইস্রায়েলীয় সৈনিকদের ঘরে ফিরতে দেখে তাদের সতর্ক করে দিলেন। 13 তাঁরা ইস্রায়েলীয় সেনাদের বললেন, “যিহূদা থেকে কাউকে আর বন্দী করে এখানে নিয়ে এসো না কারণ তাতে প্রভুর প্রতি আমাদের পাপের বোঝা উত্তরোত্তর বাড়বে। এতে প্রভু আমাদের ও ইস্রায়েলের প্রতি খুবই ক্রুদ্ধ হবেন।”

14 তখন সেনারা তাদের নেতাদের হাতে সমস্ত বন্দীদের ও যাবতীয় লুঠ করা সম্পদ তুলে দিল। 15 বেরিখিয়, যিহিষ্কিয় এবং অমাসা নেতৃগণ ইস্রায়েলীয়রা যে সমস্ত পোশাক-আশাক এনেছিল তা থেকে উলঙ্গ বন্দীদের পরবার জন্য পোশাক দিলেন ও তাদের পরিচর্যা করতে লাগলেন। বন্দীদের সবাইকে খাবার ও পানীয় দেওয়া হল এবং তাদের মধ্যে যারা আহত হয়েছিল তাদের ক্ষতস্থানে তেল লাগিয়ে দেওয়া হল। তারপর নেতারা সমস্ত বন্দীদের, যারা খুব দুর্বল ছিল তাদের গাধার পিঠে তুলে দিলেন এবং তাদের বাড়ির কাছে তালগাছের দেশ যিরীহোতে তাদের নিয়ে গেলেন এবং শমরিয়াতে ফিরে এলেন।

16-17 এই সময়ে, ইদোমীয় সেনাবাহিনী আবার ফিরে এলো এবং যিহূদাকে অন্য একটি যুদ্ধে পরাজিত করে এবং তাদের বন্দীদের ইদোমে নিয়ে যায়। তখন রাজা আহস অশূররাজের সাহায্য প্রার্থনা করলেন। 18 পলেষ্টীয়রাও এসে দক্ষিণ যিহূদা ও যিহূদার পার্বত্য অঞ্চলে বৈৎ‌শেমশে, অয়ালোন, গদেরোৎ‌, সোখো, তিম্না, গিম্সো প্রমুখ শহর ও এইসব শহরের পাশ্ববর্তী গ্রামগুলো দখল করে বসবাস করতে শুরু করলো। 19 রাজা আহস যিহূদার লোকদের পাপের পথে পরিচালনা করার জন্যই প্রভু যিহূদাকে সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। আহস প্রভুতে মোটেই বিশ্বাসী ছিলেন না। 20 সাহায্যের পরিবর্তে অশূররাজ তিল্গত্‌ পিল্নেষর এসে আহসের সঙ্কট আরো বাড়িয়ে তুলেছিলেন। 21 প্রভুর মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও রাজপুত্রদের থাকা জায়গা থেকে বহু মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সেসব অশূররাজকে দিয়েও আহস তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেন নি।

22 সঙ্কটাবস্থায় আহস আরো বেশী করে পাপ আচরণ ও প্রভুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে শুরু করেন। 23 তিনি দম্মেশকের লোকদের দেবতার কাছে বলিদান নিবেদন করলেন। তাদের হাতে পরাজিত হয়ে আহস ভাবলেন, “তাহলে আমি অরামের দেবতার আরাধনা করি ও তাঁর কাছে বলিদান করি, তাহলে নিশ্চয়ই এইসব দেবতাগণ ও তাঁদের উপাসকরা আমাকে সাহায্য করবে।” যাইহোক্, তাঁরা তাঁকে সাহায্য করতে পারেন নি এবং তাঁর পতন ঘটিয়েছিলেন। এবং তাঁর সঙ্গে, সমগ্র ইস্রায়েলের পতন হয়েছিল।

24 ঈশ্বরের মন্দির থেকে সমস্ত জিনিসপত্র জড়ো করে আহস সেই সমস্ত টুকরো টুকরো করে ভেঙে প্রভুর মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিলেন। জেরুশালেমের রাস্তার মোড়ে মোড়ে বেদী বানিয়ে 25 যিহূদার সমস্ত শহরগুলিতে আহস অন্য দেবতাদের ধুপধূনা দেবার জন্য উঁচু স্থান বানিয়ে দিলেন। এইভাবে আহস তাঁর পূর্বপুরুষদের প্রভু ঈশ্বরকে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ করে তুললেন।

26 রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি আর যা কিছু আহস করেছিলেন সেসবই যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে। 27 আহসের মৃত্যুর পর তাঁকে জেরুশালেমে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়। তবে তাঁকে ইস্রায়েলের রাজাদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়নি। তাঁর পরে তাঁর পুত্র হিষ্কিয় তাঁর জায়গায় নতুন রাজা হলেন।

প্র.বা. 14

মুক্তির গীত

14 এরপর আমি সিয়োন পর্বতের ওপর এক মেষশাবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে 144,000 জন লোক। তাদের প্রত্যেকের কপালে তাঁর নাম ও তাঁর পিতার নাম লিখিত।

পরে আমি স্বর্গ থেকে শুনতে পেলাম প্রবল জলকল্লোলের মতো, প্রচণ্ড মেঘ গর্জনের মতো এক কন্ঠস্বর; যে স্বর আমি শুনলাম তাতে মনে হল যেন একটা বীণাবাদক দল তাঁদের বীণা বাজাচ্ছেন। তাঁরা সকলে সিংহাসনের সামনে ও সেই চারজন প্রাণী ও প্রাচীনদের সামনে এক নতুন গীত গাইছিলেন। পৃথিবী থেকে যাদের মূল্য দিয়ে কেনা হয়েছিল সেই 144,000 জন লোক ছাড়া আর অন্য কেউই সেই গান শিখতে পারল না।

এই 144,000 জন লোক হলেন তাঁরা যাঁরা স্ত্রীলোকদের সংসর্গে নিজেদের কলুষিত করেন নি, কারণ তাঁরা খাঁটি। মেষশাবক যেখানে যান তাঁরা সেখানেই তাঁকে অনুসরণ করেন। পৃথিবীর লোকদের মধ্য থেকে এই 144,000 জন লোককে মুক্ত করা হয়েছে। ঈশ্বর ও মেষশাবকের উদ্দেশ্যে তাঁরা মনুষ্যদের মধ্য থেকে অগ্রিমাংশরূপে গৃহীত হয়েছেন। তাঁদের মুখে কোন মিথ্যা কথা পাওয়া যায় নি। তাঁরা নির্দোষ।

তিনজন স্বর্গদূত

পরে আমি আর একজন স্বর্গদূতকে আকাশপথে উড়ে যেতে দেখলাম। পৃথিবীবাসী লোকদের কাছে, পৃথিবীর সকল জাতি, উপজাতি, সকল ভাষাভাষী লোকের কাছে ঘোষণা করার জন্য এই স্বর্গদূতের কাছে ছিল অনন্তকালীন সুসমাচার। স্বর্গদূত উদাত্ত কন্ঠে এই কথা বললেন, “ঈশ্বরকে ভয় করো ও তাঁর প্রশংসা করো, কারণ সময় হয়েছে যখন ঈশ্বর সমস্ত লোকদের বিচার করবেন। যিনি স্বর্গ, পৃথিবী, সমুদ্র ও সমস্ত জলের উৎস সৃষ্টি করেছেন, সেই ঈশ্বরেরই উপাসনা করো।”

এরপর প্রথম স্বর্গদূতদের পিছন পিছন দ্বিতীয় স্বর্গদূত উড়ে এসে বললেন, “পতন হল! মহানগরী বাবিলের পতন হল! সে সমস্ত জাতিকে ঈশ্বরের ক্রোধের ও তার ব্যভিচারের মদিরা পান করিয়েছে।”

এরপর ঐ দুজন স্বর্গদূতের পেছনে আর এক স্বর্গদূত এসে চিৎকার করে বললেন, “যদি কেউ সেই পশু ও তার প্রতিমার আরাধনা করে আর কপালে অথবা হাতে তার ছাপধারণ করে 10 তবে সেও ঈশ্বরের সেই রোষ মদিরা পান করবে যা ঈশ্বরের ক্রোধের পাত্রে অমিশ্রিত অবস্থায় ঢালা হচ্ছে। পবিত্র স্বর্গদূতদের ও মেষশাবকের সামনে জ্বলন্ত গন্ধকে ও আগুনে পুড়ে তাকে কি নিদারুণ যন্ত্রণাই না পেতে হবে। 11 তাদের যন্ত্রণার ধোঁয়া যুগপর্যায়ে যুগে যুগে উপরে উঠতে থাকবে। যাঁরা সেই পশু ও তাঁর মূর্তির আরাধনা করে অথবা যে কেউ তার নামের ছাপ ধারণ করে, তারা দিনে কি রাতে কখনও বিশ্রাম পাবে না।” 12 এখানেই ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের ধৈর্য্য্য্যের প্রয়োজন, যারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করবে ও যীশুর প্রতি বিশ্বাসে স্থির থাকবে।

13 এরপর আমি স্বর্গ থেকে একটা রব শুনলাম, “তুমি এই কথা লেখ; এখন থেকে মৃত লোকেরা ধন্য, যারা প্রভুর সঙ্গে যুক্ত থেকে মৃত্যুবরণ করেছে।”

আত্মা একথা বলছেন, “হ্যাঁ, এ সত্য। তারা তাদের কঠোর পরিশ্রম থেকে বিশ্রাম লাভ করবে, কারণ তাদের সব সত্কর্ম তাদের অনুসরণ করে।”

পৃথিবীর শস্য কর্তন

14 পরে আমি তাকিয়ে দেখলাম, আমার সামনে একখণ্ড সাদা মেঘ। সেই মেঘের ওপর মানবপুত্রের[a] মতো একজন বসে আছেন। তাঁর মাথায় সোনার মুকুট ও তাঁর হাতে একটা ধারালো কাস্তে। 15 এরপর মন্দির থেকে আর একজন স্বর্গদূত বাইরে এলেন। যিনি মেঘের ওপরে বসে আছেন তাঁকে তিনি বললেন, “আপনার কাস্তে চালান ও শস্য সংগ্রহ করুন, কারণ শস্য সংগ্রহের সময় হয়েছে। পৃথিবীর সব শস্য পেকেছে।” 16 তাই যিনি সেই মেঘের ওপর বসেছিলেন তিনি পৃথিবীর ওপর কাস্তে চালালেন আর পৃথিবীর ফসল তোলা হল।

17 এরপর স্বর্গের মন্দির থেকে আর একজন স্বর্গদূত বেরিয়ে এলেন। এই স্বর্গদূতের হাতে এক ধারালো কাস্তে ছিল, 18 আর যজ্ঞবেদী থেকে অন্য এক স্বর্গদূত উঠে এলেন, যাঁর আগুনের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করার ক্ষমতা ছিল। তিনি ঐ ধারালো কাস্তে হাতে যে স্বর্গদূত ছিলেন তার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে এই কথা বললেন, “তোমার ধারালো কাস্তে লাগাও, পৃথিবীর সমস্ত আঙ্গুর ক্ষেতের আঙ্গুরের থোকাগুলি কাট, কারণ সমস্ত আঙ্গুর পেকে গেছে।” 19 তখন সেই স্বর্গদূত পৃথিবীর ওপর কাস্তে চালিয়ে পৃথিবীর সমস্ত আঙ্গুর সংগ্রহ করে ঈশ্বরের ক্রোধের মাড়াইকলে ঢেলে দিলেন। 20 নগরের বাইরে মাড়াইকলে আঙ্গুরগুলি মাড়াই করা হলে পরে সেই মাড়াইকল থেকে রক্ত নিঃসৃত হল। সেই রক্ত উচ্চতায় ঘোড়ার এক বলগা পর্যন্ত এবং দুরত্বে 200 মাইল প্রবাহিত হল।

সখরিয় 10

প্রভুর প্রতিশ্রুতি সকল

10 প্রভুর কাছে বসন্তকালে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা কর। প্রভু বজ্র পাঠাবেন এবং বৃষ্টি পড়বে। প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেতে শস্য বৃদ্ধির জন্য ঈশ্বর বৃষ্টি দেন।

লোকে মূর্ত্তি ও যাদুর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জানতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেটা কোন কাজের নয়। যাদুকররা সবসময় তাদের স্বপ্ন ও দর্শন সম্পর্কে কথা বলে কিন্তু সেগুলো সবই নিছক মিথ্যা। তাই লোকরা সাহায্যের জন্য ভুল পথে চালিত মেষের মত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাদের চালনা করবার জন্য কোন মেষপালক নেই।

প্রভু বলেন, “আমি মেষপালকদের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ। আমি তাদের শাস্তি দেব। ঐ নেতারা আমার লোকেদের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য।” (যিহূদার লোকেরা ঈশ্বরের পাল। ঈশ্বর তাদের যত্ন নেন, ঠিক যেমন একজন সৈন্য তার সুন্দর যুদ্ধের অশ্বের যত্ন নেয়।)

“কোণের পাথর, তাঁবুর কীলক, যুদ্ধের ধনু এবং আধিকারিকরা একসঙ্গে আসবে। তারা হবে যোদ্ধারা শত্রু সৈন্যবাহিনীর ওপর রাস্তা ঘাটে কাদা মাড়িয়ে চলে যাবার মত। তারা যখন লড়াই করবে প্রভু তাদের সঙ্গে থাকবেন। তারা অশ্বারোহী সৈন্যদেরও হারাবে। আমি যিহূদার পরিবারকে বলবান করব। যুদ্ধ জেতার জন্য আমি যোষেফের পরিবারকে সাহায্য করব। আমি তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনব। তাদের এমন সান্ত্বনা দেব মনে হবে আমি যেন কখনই তাদের ছেড়ে যাই নি। আমিই প্রভু তাদের ঈশ্বর তাদের সাহায্য করব। ইফ্রয়িমের লোকেরা যোদ্ধাদের মত খুশী হবে, যারা পান করবার জন্য প্রচুর দ্রাক্ষারস পেয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরাও উল্লাস করবে। তাদের হৃদয় প্রভুতে আনন্দিত হয়ে উঠবে।

“আমি শিস্ দিয়ে তাদের সবাইকে ডাকব। আমি তাদের সংগ্রহ করব। আমি তাদের সত্যিই রক্ষা করব এবং তারা অতীতের মত বংশবৃদ্ধি করবে। হ্যাঁ, আমি আমার লোকেদের বিভিন্ন জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি। সেইসব দূরবর্তী স্থানে তারা আমায় স্মরণ করবে। তারা ও তাদের সন্তানরা জীবন্ত ফিরে আসবে। 10 আমি তাদের মিশর ও অশূর থেকে ফিরিয়ে আনব, তাদের গিলিয়দ ও লিবানোন অঞ্চলে নিয়ে আসব এবং তাদের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকবে না। 11 তিনি দুর্যোগপূর্ণ সমুদ্র পার হবেন এবং দুরন্ত জলরাশিতে আঘাত হানবেন। নীল নদীর গভীরতম জল তিনি শুকিয়ে ফেলবেন। অশূরের গর্বের পতন হবে এবং মিশরের ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া হবে। 12 প্রভু তাঁর লোকেদের শক্তিশালী করবেন এবং তারা তাঁর কর্ত্তৃত্বে এবং নামে বাঁচবে।” প্রভু এইসব কথা বলেছেন।

যোহন 13

যীশু শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিলেন

13 ইহুদীদের নিস্তারপর্বের ঠিক পূর্বে যীশু বুঝতে পারলেন, যে এই জগত ছেড়ে পিতার কাছে তাঁর যাবার সময় হয়ে এসেছে। যীশু পৃথিবীতে তাঁর আপনজনদের সব সময় ভালবেসেছেন। এবার তিনি তাদের প্রতি তাঁর ভালবাসার চূড়ান্ত প্রমাণ দিলেন।

যীশু ও তাঁর শিষ্যরা সান্ধ্য আহার করছিলেন। দিয়াবল ইতিমধ্যে শিমোন ঈষ্করিয়োতের ছেলে যিহূদাকে প্ররোচিত করেছে যীশুকে শত্রুর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। যীশু বুঝলেন যে পিতা তাঁকে সব কিছুর ওপর ক্ষমতা দিয়েছেন, তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন, আর ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। তখন তিনি ভোজের আসর থেকে উঠে দাঁড়ালেন, তাঁর উপরের জামাটা খুলে রেখে একটি গামছা কোমরে জড়ালেন। তারপর গামলায় জল ঢেলে শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিতে লাগলেন, আর যে গামছাটি কোমরে জড়িয়ে ছিলেন সেটি দিয়ে তাঁদের পা মুছিয়ে দিতে লাগলেন।

এইভাবে তিনি শিমোন পিতরের কাছে এলে পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি কেন আমার পা ধুইয়ে দেবেন?”

এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “আমি যা করছি, তুমি এখন তা বুঝতে পারছ না, কিন্তু পরে বুঝবে।”

পিতর তাঁকে বললেন, “আপনি কখনও আমার পা ধুইয়ে দেবেন না।”

যীশু তাঁকে বললেন, “আমি যদি তোমার পা না ধুইয়ে দিই, তাহলে আমার সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক থাকবে না।”

শিমোন পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, আপনি কেবল আমার পা নয়, হাত ও মাথা ধুইয়ে দিন!”

10 যীশু তাঁকে বললেন, “যে স্নান করেছে তার পা ধোয়া ছাড়া আর কিছু দরকার নেই, আর তো সর্বাঙ্গ পরিষ্কার হয়েছে। তোমরাও পরিষ্কার হয়েছ, কিন্তু সকলে নও।” 11 যীশু জানতেন যে একজন তাঁকে ধরিয়ে দেবে, সেই কারণেই তিনি বললেন, “তোমরা সকলে পরিষ্কার নও।”

12 তাদের পা ধোয়ানো শেষ করে তিনি আবার তাঁর উপরের জামাটি পরলেন ও টেবিলে তাঁর জায়গায় ফিরে এসে তাদের বললেন, “আমি তোমাদের প্রতি কি করলাম তা বুঝতে পারলে? 13 তোমরা আমায় ‘গুরু’ ও ‘প্রভু’ বলে থাকো; আর তোমরা তা ঠিকই বল, কারণ আমি তা-ই। 14 তাই আমি প্রভু ও গুরু হয়ে যদি তোমাদের পা ধুইয়ে দিই, তাহলে তোমাদেরও উচিত পরস্পরের পা ধোয়ানো। 15 আমি তোমাদের কাছে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম, যেন আমি তোমাদের প্রতি যেমন করলাম, তোমরাও তেমনি কর। 16 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, চাকর তার মনিবের থেকে বড় নয়, আর দূত তার প্রেরণকর্তার থেকে বড় নয়। 17 যেহেতু তোমরা এসব জান, এইগুলি পালন কর, তাহলে তোমরা সুখী হবে।

18 “আমি তোমাদের সকলের বিষয়ে বলছি না। আমি জানি, কাদের আমি মনোনীত করেছি। কিন্তু শাস্ত্রে যে কথা লেখা হয়েছে তা অবশ্যই পূর্ণ হবে, ‘যে আমার সঙ্গে আহার করল, সেই আমার বিরুদ্ধে গেল।’(A) 19 এসব ঘটবার আগেই আমি তোমাদের এসব বলছি, যাতে যখন এসব ঘটবে, তোমরা বিশ্বাস করবে যে আমিই তিনি। 20 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমি যাকে পাঠাবো তাকে যে গ্রহণ করবে, সে আমাকেই গ্রহণ করবে। আর যে আমাকে গ্রহণ করে, আমায় যিনি পাঠিয়েছেন, সে তাঁকেও গ্রহণ করে।”

কে তাঁর বিপক্ষে যাবে যীশু তা জানালেন

(মথি 26:20-25; মার্ক 14:17-21; লূক 22:21-23)

21 এই কথা বলার পর যীশু খুবই উদ্বিগ্ন হলেন, আর খোলাখুলিই বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে ধরিয়ে দেবে।”

22 শিষ্যরা পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলেন, আদৌ বুঝতে পারলেন না কার বিষয়ে তিনি বলছেন। 23 যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিলেন যাকে যীশু খুবই ভালবাসতেন, তিনি যীশুর গায়ের ওপর হেলান দিয়ে ছিলেন। 24 শিমোন পিতর এই শিষ্যকে ইশারা করলেন এবং যীশুকে জিজ্ঞেস করতে বললেন যে উনি কার সম্পর্কে বলছেন।

25 তখন তিনি যীশুর বুকের উপর ঝুঁকে পড়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “প্রভু, সে কে?”

26 যীশু বললেন, “আমি রুটির টুকরোটি বাটিতে ডুবিয়ে যাকে দেব সে-ই সেই লোক।” এরপর তিনি রুটির টুকরো ডুবিয়ে শিমোন ঈষ্করিয়োতের ছেলে যিহূদাকে দিলেন। 27 যিহূদা রুটির টুকরোটি নেওযার পর শয়তান তার মধ্যে ঢুকে পড়ল। এরপর যীশু তাকে বললেন, “তুমি যা করতে যাচ্ছ তা তাড়াতাড়ি করোগে যাও।” 28 কিন্তু যাঁরা তাঁর সঙ্গে খাবার টেবিলে খেতে বসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউই বুঝতে পারলেন না তিনি কেন তাকে একথা বললেন। 29 কেউ কেউ মনে করলেন, যিহূদার কাছে টাকার থলি আছে, তাই হয়তো যীশু তাকে বললেন, পর্বের জন্য যা যা প্রয়োজন তা কিনে আনতে যাও; অথবা হয়তো গরীবদের ওর থেকে কিছু দান করতে বলেছেন।

30 যিহূদা রুটির টুকরোটি গ্রহণ করে সঙ্গে সঙ্গে বাইরে চলে গেল। তখন রাত হয়ে গেছে।

যীশু তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বললেন

31 যিহূদা সেখান থেকে চলে যাবার পর যীশু বললেন, “মানবপুত্র এখন মহিমান্বিত হলেন, আর ঈশ্বরও তাঁর মাধ্যমে মহিমান্বিত হলেন। 32 ঈশ্বর যদি তাঁর মাধ্যমে মহিমান্বিত হন, তবে ঈশ্বরও মানবপুত্রকে নিজের মাধ্যমে মহিমান্বিত করবেন, তিনি খুব শিগ্গিরই তা করবেন।”

33 আমার প্রিয় সন্তানরা, আমি আর কিছু সময় তোমাদের সঙ্গে থাকব। তোমরা আমায় খুঁজবে, আর আমি যেমন ইহুদী নেতাদের বলেছিলাম, আমি যেখানে যাচ্ছি তোমরা সেখানে যেতে পার না, সেই কথাই এখন তোমাদেরও বলছি।

34 “আমি তোমাদের এক নতুন আদেশ দিচ্ছি, তোমরা পরস্পরকে ভালবেসো। আমি যেমন তোমাদের ভালবাসি, তোমরাও তেমনি পরস্পরকে ভালবেসো। 35 তোমাদের পরস্পরের মধ্যে যদি ভালবাসা থাকে তবে এর দ্বারাই সকলে জানবে যে তোমরা আমার শিষ্য।”

যীশু বললেন পিতর তাঁকে অস্বীকার করবেন

(মথি 26:31-35; মার্ক 14:27-31; লূক 22:31-34)

36 শিমোন পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

যীশু বললেন, “যেখানে এখন আমি যাচ্ছি, তুমি আমার পেছনে সেখানে আসতে পারবে না; কিন্তু পরে তুমি আমায় অনুসরণ করবে।”

37 পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, এখন কেন আমি আপনার সঙ্গে যেতে পারি না? আমি আপনার জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেব।”

38 যীশু তাকে বললেন, “তুমি কি সত্যি আমার জন্য প্রাণ দেবে? আমি তোমাকে সত্যি বলছি; কাল ভোরে মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International