M’Cheyne Bible Reading Plan
যিহূদার রাজা অমৎসিয়
25 পঁচিশ বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে অমৎসিয় মোট 29 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মাতা যিহোয়দ্দনও ছিলেন জেরুশালেম থেকেই। 2 অমৎসিয় প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ী সমস্ত কাজ করলেও তিনি সর্বান্তঃকরণে এইসব কাজ করেন নি। 3 অবশেষে তিনি রাজা হিসেবে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠিত করলেন এবং যে সমস্ত রাজকর্মচারীরা তাঁর পিতাকে খুন করেছিল তাদের হত্যা করলেন। 4 কিন্তু অমৎসিয় এইসব ব্যক্তিদের সন্তানদের হত্যা করেন নি। কারণ তিনি মোশির পুস্তকে লেখা বিধি অনুযায়ী কাজ কর়েছিলেন। প্রভু আদেশ দিয়েছিলেন, “সন্তানদের অপরাধের জন্য যেমন অভিভাবকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না, ঠিক একই রকমভাবে পিতামাতার কোনো অপরাধের জন্য কোন সন্তানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না। কোন ব্যক্তিকে কেবলমাত্র তার কৃত কোন কুকর্মের জন্যই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে।”
5 অমৎসিয় যিহূদা এবং বিন্যামীনের সমস্ত ব্যক্তিদের একত্রিত করলেন এবং তাদের পরিবার অনুযায়ী পৃথক করেছিলেন। তিনি তাদের সৈন্যাধ্যক্ষ ও অধিনায়কদের কর্ত্তৃত্বের অধীনে রেখেছিলেন। 20 বছর বা তার বেশী বয়স্ক লোকদের সৈনিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। এভাবে সব মিলিয়ে ঢাল ও বল্লমধারী মোট 300,000 যোদ্ধা ছিল। 6 এছাড়াও অমৎসিয় ইস্রায়েলের থেকে 3 3/4 টন রূপোর বিনিময়ে 100,000 সৈন্য ধার করেছিলেন। 7 কিন্তু এসময়ে একজন ভাববাদী এসে অমৎসিয়কে বললেন, “মহারাজ, ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীকে আপনার সঙ্গে যেতে দেবেন না। কারণ বর্তমানে প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে নেই, ইফ্রয়িম গোষ্ঠীর সঙ্গেও নেই। 8 যদি তোমরা যুদ্ধে যাও তোমরা অবশ্যই একটি কঠিন যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রেখো। ঈশ্বর হয়তো তোমাদের বাধা দেবেন কারণ ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে তোমাকে সাহায্য করতে অথবা তোমাকে বাধা দিতে।” 9 তখন অমৎসিয় তাকে বললেন, “কিন্তু আমি এর মধ্যে ইস্রায়েলীয়দের যে অর্থ দিয়েছি তার কি হবে?” ঈশ্বরের লোক উত্তর দিলেন, “প্রভুর ভাণ্ডার অফুরন্ত। তিনি চাইলে আপনাকে এর থেকেও বেশি দিতে পারেন!”
10 অমৎসিয় তখন ইস্রায়েলীয় সেনাদের ইফ্রয়িমে তাদের বাসভূমিতে পাঠিয়ে দিলেন। এর ফলে এরা সকলেই যিহূদার রাজা ও অধিবাসীদের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গেল।
11 এরপর অমৎসিয় বীর বিক্রমে তাঁর সেনাদের ইদোমের লবণ উপত্যকায় যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন। সেখানে তাঁর সেনাবাহিনী 10,000 সেয়ীর সৈন্যকে হত্যা করলো, 12 এবং আরও 10,000 সৈন্যকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে তাদের নীচে ফেলে দিল। নীচে কঠিন পাথরের ওপর পড়বার জন্য এইসব সৈনিকদের মৃত্যু হল।
13 কিন্তু এসময়ে যে সমস্ত ইস্রায়েলীয় সেনাদের অমৎসিয় ফেরৎ পাঠিয়েছিলেন তারা যিহূদার বৈৎ-হোরোণ থেকে শমরিয়া পর্যন্ত অঞ্চলের শহরগুলো আক্রমণ করতে শুরু করেছিল। এরা 3000 ব্যক্তিকে হত্যা করে বহু দামী দামী জিনিস লুঠ করেছিল।
14 ইদোমীয়দের যুদ্ধে পরাজিত করার পর অমৎসিয় স্বদেশে ফিরে এলেন। ফিরে আসার সময়ে অমৎসিয় সেয়ীরের লোকেদের সেই মূর্ত্তিগুলো এনেছিলেন। এরপর অমৎসিয় নিজে সেইসব মূর্ত্তি পূজো করতে শুরু করলেন। এদের সামনে তিনি নত হয়েছিলেন এবং তাদের কাছে ধুপধূনো জ্বালাতেন। 15 এতে প্রভু যারপরনাই ক্রুদ্ধ হলেন এবং অমৎসিয়ের কাছে এক ভাববাদীকে পাঠালেন। তিনি এসে অমৎসিয়কে বললেন, “তুমি কেন হঠাৎ ভিনদেশীয় মূর্ত্তির পূজো শুরু করলে? এইসব মূর্ত্তিগুলো তো এদের উপাসকদেরও তোমার বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারেনি।”
16 এর উত্তরে অমৎসিয় উদ্ধতভাবে সেই ভাববাদীকে বললেন, “চুপ কর, নয়তো মারা পড়বে। আমরা কি তোমাকে রাজার পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছি?” সেই ভাববাদী তখন বললেন, “প্রভু তাহলে সত্যি সত্যিই তোমার পাপ আচরণের জন্য তোমাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন যেহেতু তুমি আমার উপদেশ নিলে না।”
17 অমৎসিয় তাঁর মন্ত্রণাদাতাদের সঙ্গে পরামর্শ করার পর ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াহসের পুত্র যেহূর পৌত্র যিহোয়ামকে খবর পাঠালেন, “চলো আমরা সম্মুখ যুদ্ধ করি।”
18 ইস্রায়েলের রাজা যোয়াশ এর প্রত্যুত্তরে যিহূদার রাজা অমৎসিয়কে খবর পাঠালেন, “লিবানোনের এক কাঁটাঝাড়, এক মহীরূহকে বলেছিলেন, ‘তোমার কন্যার সঙ্গে আমার পুত্রের বিয়ে দাও।’ আর এদিকে এক বুনো জন্তু এসে কাঁটাঝাড় মাড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো। 19 শোনো, তোমরা ইদোমকে হারিয়ে দিয়েছ তাই তোমরা গর্বিত ও অহঙ্কারী হয়েছ। বাড়ীতে বসে থাক, আমাদের প্ররোচিত করো না। যদি তোমরা আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাও তোমরা তো বটেই, এমনকি যিহূদাও পরাজিত হবে।”
20 কিন্তু অমৎসিয় একথায় কান দিতে চাইলেন না। আসলে এ ঘটনা প্রভুর অভিপ্রায় অনুসারেই ঘটেছিল। ইস্রায়েলীয়দের হাতে যিহূদাকে পরাজিত করার পরিকল্পনা স্বয়ং প্রভুই করেছিলেন কারণ তারা ইদোমীয়দের মূর্ত্তি পূজো করবার অপরাধ করেছিল। 21 ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াস যিহূদায় বৈৎ-শেমশেতে রাজা অমৎসিয়র মুখোমুখি হলেন। 22 যুদ্ধে ইস্রায়েল যিহূদাকে পরাজিত করল। যিহূদার প্রত্যেকে রণে ভঙ্গ দিয়ে বাড়ি পালালো। 23 রাজা যিহোয়াস বৈৎ-শেমশেতে যিহূদার রাজা অমৎসিয়কে বন্দী করে তাঁকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন। অমৎসিয় ছিলেন যোয়াশের পুত্র এবং যিহোয়াহসের পৌত্র। যিহোয়াস ইফ্রয়িমের ফটক থেকে কোণের ফটক পর্যন্ত জেরুশালেমের প্রাচীরের 600 ফুট ভেঙ্গে ফেললেন। 24 তিনি সমস্ত সোনা ও রূপো এবং ওবেদ ইদোম যা কিছু জিনিষপত্র মন্দিরে পাহারা দিত, প্রাসাদের সমস্ত কিছু সম্পদ এবং বন্দীদের নিয়েছিলেন। তিনি এইসব কিছু শমরিয়াতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।
25 যিহোয়াসের মৃত্যুর পর অমৎসিয় আরো 15 বছর বেঁচেছিলেন। 26 অমৎসিয় তাঁর রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি আর যা কিছু করেছিলেন সেসবই যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 27 অমৎসিয় যখন প্রভুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিলেন তখন জেরুশালেমের লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করলো। অমৎসিয় কোনোমতে লাখীশে পালিয়ে গেলেও লোকেরা সেখানে লোক পাঠিয়ে অমৎসিয়কে হত্যা করল। 28 তারপর তারা ঘোড়ার পিঠে করে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে এলো এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করলো।
একটি স্ত্রীলোক এবং বিশাল নাগ
12 তারপর স্বর্গে এক মহৎ ও বিস্ময়কর সঙ্কেত দেখা গেল। একটি স্ত্রীলোককে দেখা গেল, সূর্য যার বসন, যার পায়ের নীচে ছিল চাঁদ, আর বারোটি নক্ষত্রের এক মুকুট তার মাথায়। 2 স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী, প্রসব বেদনায় সে চিৎকার করছিল।
3 এরপর স্বর্গে আর এক নিদর্শন দেখা দিল। এক প্রকাণ্ড নাগ দেখা গেল, যার রঙ ছিল লাল, তার সাতটি মাথা, দশটি শিং আর সাতটি মাথায় সাতটি মুকুট। 4 সে তার লেজ দিয়ে আকাশের এক তৃতীয়াংশ নক্ষত্র টেনে নামিয়ে এনে পৃথিবীর ওপর ফেলল। যে স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করার অপেক্ষায় ছিল, সেই নাগটি তার সামনে দাঁড়াল, যেন স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করার সঙ্গে সঙ্গে সে তার সন্তানকে গ্রাস করতে পারে।
5 স্ত্রীলোকটি এক পুত্র সন্তান প্রসব করল, যিনি লৌহ দণ্ড দিয়ে সমস্ত জাতিকে শাসন করবেন। তার সন্তানকে ঈশ্বরের সিংহাসনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল; 6 আর সেই স্ত্রীলোকটি প্রান্তরে পালিয়ে গেল, সেখানে ঈশ্বর তার জন্য একটি স্থান প্রস্তুত করে রেখেছিলেন, সেখানে সে বারশো ষাট দিন পর্যন্ত প্রতিপালিতা হবে।
7 এরপর স্বর্গে এক যুদ্ধ বেধে গেল। মীখায়েল ও তার অধীনে অন্যান্য স্বর্গদূতরা সেই নাগের সঙ্গে যুদ্ধ করল। সেই নাগও তার অপদূতদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করতে লাগল; 8 কিন্তু সাপ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না, তাই তারা স্বর্গের স্থান হারালো। 9 সেই বিরাট নাগকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেলা হল। এই বিরাট নাগ হল সেই পুরানো নাগ যাকে দিয়াবল বা শয়তান বলা হয়, সে সমগ্র জগতকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যায়। সেই নাগ ও তার সঙ্গী অপদূতদের পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেলা হল।
10 তখন আমি স্বর্গে এক উচ্চস্বর শুনতে পেলাম, “এখন আমাদের ঈশ্বরের জয়, পরাক্রম, রাজত্ব, ধ্বনি ও তাঁর খ্রীষ্টের কর্তৃত্ত্ব এসে পড়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যে দোষারোপকারী, তাকে নীচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সে দিন রাত আমাদের ঈশ্বরের সামনে তাদের নামে দোষারোপ করত। 11 তারা মেষশাবকের রক্তে ও নিজের নিজের সাক্ষ্য দ্বারা সেই নাগকে পরাস্ত করেছে। তারা নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত ছিল। 12 তাই স্বর্গ এবং সেখানে বসবাসকারী তোমরা সকলে আনন্দ কর! কিন্তু পৃথিবী ও সমুদ্রের কি দুর্দশাই না হবে, কারণ দিয়াবল তোমাদের কাছে নেমে এসেছে। সে রাগে ফুঁসছে, কারণ সে জানে যে তার আর বেশী সময় বাকী নেই।”
13 পরে ঐ নাগ যখন দেখল যে পৃথিবীতে তাকে ছুঁড়ে ফেলা হল, তখন যে স্ত্রীলোকটি পুত্র প্রসব করেছিল, সেই স্ত্রীলোকটির পেছনে সে তাড়া করতে ছুটল। 14 কিন্তু সেই স্ত্রীলোকটিকে খুব বড় ঈগলের দুটি ডানা দেওয়া হল, যেন যে প্রান্তর তার জন্য নির্দিষ্ট সেই স্থানে সে উড়ে যেতে পারে; সেখানে সে ঐ নাগের দৃষ্টি থেকে দূরে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত নিরাপদে প্রতিপালিতা হবে। 15 তখন সেই নাগ স্ত্রীলোকটিকে লক্ষ্য করে তার মুখ থেকে নদীর জলের মতো জলপ্রবাহ বইয়ে দিল। সেই জল বন্যার মতো এমনভাবে ধেয়ে এল যেন তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। 16 কিন্তু পৃথিবী সেই স্ত্রীলোকটিকে সাহায্য করল; পৃথিবী তার মুখ খুলে নাগের মুখ থেকে নির্গত জল টেনে নিল। 17 তখন সেই নাগ স্ত্রীলোকের ওপর রেগে গিয়ে ঈশ্বরের আদেশ পালনকারী ও যীশুর সত্য শিক্ষাসকল ধারণকারী তাঁর বাকি সব সন্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল;
18 আর সেই নাগ সমুদ্রের তীরে বালুকার ওপর গিয়ে দাঁড়াল।
প্রভু জেরুশালেমকে আশীর্বাদ করার প্রতিশ্রুতি করলেন
8 সর্বশক্তিমান প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা এল। 2 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেছেন, “আমি সিয়োন পর্বতকে ভালোবাসি। আমি তাকে এতোই ভালোবাসি যে সে আমার প্রতি বিশ্বস্ত না হলে আমি তার ওপর খুব রেগে উঠলাম।” 3 প্রভু বলেছেন, “আমি সিয়োনে ফিরে এসেছি। আমি জেরুশালেমে বাস করছি। জেরুশালেমকে বলা হবে বিশ্বস্ত শহর। প্রভুর পর্বতকে বলা হবে পবিত্র পর্বত।”
4 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেছেন, “প্রবীন ব্যক্তিদের আবার জেরুশালেমের রাস্তায় ঘাটে দেখা যাবে। দীর্ঘ জীবন লাভ করবে বলে লোকেদের হাঁটার জন্য লাঠির প্রয়োজন হবে। 5 ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খেলাধূলার কোলাহলে রাস্তাগুলো ভরে থাকবে।” 6 অবশিষ্ট যারা থাকবে তারা এটাকে বিস্ময়কর বলে গণ্য করবে! প্রভু সর্বশক্তিমান এ কথা বলেছেন!
7 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন, “দেখ পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলি হতে আমি আমার লোকেদের উদ্ধার করব। 8 আমি তাদের এখানে ফিরিয়ে আনব, তারা জেরুশালেমে বাস করবে। তারা আমার লোক হবে এবং আমি তাদের বিশ্বস্ত ঈশ্বর হব।”
9 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন, “শক্তিমান হও! সর্বশক্তিমান প্রভুর মন্দিরের প্রস্তর স্থাপন করবার সময় ভাববাদীরা এই বার্তা প্রচার করেছিলেন। আজও তোমরা সেই একই বার্তা শুনছ। 10 সেই সময়ের পূর্বে লোকদের মজুর বা গবাদি পশু ভাড়া করবার টাকা ছিল না। লোকদের পক্ষে ভ্রমণ বা যাতায়াত করাও নিরাপদ ছিল না। সংকট থেকে লোকে কোন সময়েই নিস্তার পেত না। আমি প্রতিটি লোককে অন্য লোকেদের বিরোধী করে তুলেছিলাম। 11 কিন্তু এখন সেইরকম নয়। অবশিষ্ট যারা রয়েছে তাদের জন্য সেরকম হবে না।” প্রভু সর্বশক্তিমান এইসব কথা বলেন।
12 “এই লোকরা শান্তিতে রোপণ করবে। দ্রাক্ষাও ফলানো হবে। দেশে ভাল ফসল হবে এবং জমি পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি পাবে। আমি এইসব কিছুই আমার লোকেদের দেব। 13 অন্য জাতিগণ অভিশাপ দেবার জন্য ইস্রায়েল ও যিহূদার নাম উদাহরণস্বরূপ ব্যবহার করত। কিন্তু আমি ইস্রায়েল ও যিহূদাকে রক্ষা করব এবং তাদের নাম আশীর্বাদজনক হয়ে উঠবে। সুতরাং ভয় পেও না, শক্তিমান হও!”
14 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন, “তোমার পূর্বপুরুষরা আমায় ক্রুদ্ধ করেছিল, তাই আমি তাদের ধ্বংস করব স্থির করেছিলাম। আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিনি।” সর্বশক্তিমান প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন। 15 “এখন আমি আমার মন পরিবর্তন করেছি আর জেরুশালেম ও যিহূদার লোকদের মঙ্গল করবার বিষয় স্থির করেছি। সুতরাং ভয় পেও না। 16 কিন্তু তোমাদের অবশ্যই এগুলো করতে হবে: তোমার প্রতিবেশীকে সত্য কথা বলো। আদালতে লোকের বিচার করবার সময় এমন সিদ্ধান্ত নেবে যা সত্য, ঠিক এবং যা লোকেদের মধ্যে শান্তি আনে। 17 তোমার প্রতিবেশীকে আঘাত করার জন্য কোন পরিকল্পনা করো না। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি করো না! এইসব কাজ করে আনন্দ পেও না কারণ আমি এইসব জিনিষ ঘৃণা করি!” প্রভু এইসব কথা বলেছেন।
18 আমি সর্বশক্তিমান প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেলাম। 19 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন, “চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম মাসের বিশেষ দিনে তোমরা উপবাস করতে থাকো। সেইসব শোকের দিন আনন্দের দিনে পরিণত হবে। সেইসব দিন, আনন্দের হবে ও আশীর্বাদ ধন্য হয়ে উঠবে। সত্য ও শান্তিকে তোমাদের ভালোবাসা উচিৎ!”
20 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন,
“ভবিষ্যতে বহু শহর থেকে লোকেরা জেরুশালেমে আসবে।
21 বিভিন্ন শহরের লোকেরা একে অপরকে অভ্যর্থনা জানাবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলবে,
‘আমরা সর্বশক্তিমান প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে ও তাঁর উপাসনা করতে যাচ্ছি।’
অন্যরা বলবে,
‘তোমাদের সঙ্গে আমরাও কি যোগদান করতে পারি?’”
22 অনেক লোক এবং অনেক বলবান জাতি জেরুশালেমে সর্বশক্তিমান প্রভুর উপাসনা করতে ও তাঁর অনুগ্রহের অন্বেষণ করতে আসবে। 23 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেছেন, “সেই সময়, বিদেশ থেকে বিভিন্ন ভাষাভাষী দশজন বিদেশী একজন ইহুদীর কাছে এসে তার কাপড় টেনে ধরে বলবে, ‘আমরা শুনেছি যে ঈশ্বর আপনার সঙ্গে রয়েছেন। আমরা কি এসে আপনার সঙ্গে উপাসনা করতে পারি?’”
লাসারের মৃত্যু
11 লাসার নামে একটি লোক অসুস্থ ছিলেন; তিনি বৈথনিয়া গ্রামে থাকতেন। সেই গ্রামেই মরিয়ম ও তাঁর বোন মার্থাও থাকতেন। 2 এই মরিয়মই বহুমূল্য সুগন্ধি আতর যীশুর উপরে ঢেলে নিজের চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিয়েছিলেন। লাসার ছিলেন এই মরিয়মেরই ভাই। 3 তাই লাসারের বোনেরা একটি লোক পাঠিয়ে যীশুকে বলে পাঠালেন, “প্রভু, আপনার প্রিয় বন্ধু লাসার অসুস্থ।”
4 যীশু একথা শুনে বললেন, “এই রোগে তার মৃত্যু হবে না; কিন্তু তা ঈশ্বরের মহিমার জন্যই হবে, যেন ঈশ্বরের পুত্র মহিমান্বিত হন।” 5 যীশু মার্থা, তার বোন ও লাসারকে ভালবাসতেন। 6 তাই তিনি যখন শুনলেন যে লাসার অসুস্থ, তখন যেখানে ছিলেন সেই জায়গায় আরো দুদিন রয়ে গেলেন। 7 এরপর তিনি শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরা আবার যিহূদিয়াতে যাই।”
8 তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “গুরু, সম্প্রতি সেখানকার লোকেরা আপনাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে চাইছিল। তবে কেন আপনি আবার সেখানে যেতে চাইছেন?”
9 এর উত্তরে যীশু বললেন, “দিনে বারো ঘন্টা আলো থাকে। কেউ যদি দিনের আলোতে চলে তবে সে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় না, কারণ সে জগতের আলো দেখতে পায়। 10 কিন্তু কেউ যদি রাতের আঁধারে চলে তবে সে হোঁচট খায়, কারণ তার সামনে কোন আলো নেই।”
11 তিনি একথা বলার পর তাদের আবার বললেন, “আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে; কিন্তু আমি তাকে জাগাতে যাচ্ছি।”
12 তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “প্রভু, সে যদি ঘুমিয়ে থাকে তবে সে ভাল হয়ে যাবে।” 13 যীশু লাসারের মৃত্যুর বিষয়ে বলছিলেন, কিন্তু তাঁরা মনে করলেন তিনি তাঁর স্বাভাবিক ঘুমের কথা বলছেন।
14 তাই যীশু তখন তাদের স্পষ্ট করে বললেন, “লাসার মারা গেছে। 15 আর তোমাদের কথা ভেবে আমি আনন্দিত যে আমি সেখানে ছিলাম না, কারণ এখন তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে। চল, এখন আমরা তার কাছে যাই।”
16 তখন থোমা (যাঁকে দিদুমঃ বলে) অন্য শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, “চল, আমরাও যাবো, আমরাও যীশুর সঙ্গে মরব।”
বৈথনিয়াতে যীশু
17 যীশু বৈথনিয়াতে এসে জানতে পারলেন যে গত চারদিন ধরে লাসার কবরে আছেন। 18 বৈথনিয়া থেকে জেরুশালেমের দূরত্ব ছিল প্রায় দুই মাইল। 19 তাই ইহুদীদের অনেকেই মার্থা ও মরিয়মকে তাঁদের ভাইয়ের মৃত্যুর পর সান্ত্বনা দিতে এসেছিল।
20 মার্থা যখন শুনলেন যে যীশু এসেছেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, কিন্তু মরিয়ম ঘরেই থাকলেন। 21 মার্থা যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন তাহলে আমার ভাই মরত না। 22 কিন্তু এখনও আমি জানি যে, আপনি ঈশ্বরের কাছে যা কিছু চাইবেন, ঈশ্বর আপনাকে তাই দেবেন।”
23 যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার ভাই আবার উঠবে।”
24 মার্থা তাঁকে বললেন, “আমি জানি শেষ দিনে পুনরুত্থানের সময় সে আবার উঠবে।”
25 যীশু মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান, আমিই জীবন। যে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে, সে মরবার পর জীবন ফিরে পাবে। 26 যে কেউ জীবিত আছে ও আমায় বিশ্বাস করে, সে কখনও মরবে না। তুমি কি একথা বিশ্বাস কর?”
27 মার্থা তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, প্রভু! আমি বিশ্বাস করি যে জগতে যাঁর আসার কথা আছে আপনিই সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র।”
যীশু কাঁদলেন
28 এই কথা বলার পর মার্থা সেখান থেকে চলে গেলেন ও তার বোন মরিয়মকে একান্তে ডেকে বললেন, “গুরু এসেছেন, আর তিনি তোমায় ডাকছেন।” 29 মরিয়ম একথা শুনে তাড়াতাড়ি করে যীশুর কাছে গেলেন। 30 যীশু তখনও গ্রামের মধ্যে ঢোকেন নি। মার্থা যেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি সেখানেই ছিলেন। 31 যে ইহুদীরা মরিয়মের সঙ্গে বাড়িতে ছিল ও তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, তারা যখন দেখল যে মরিয়ম তাড়াতাড়ি করে উঠে বাইরে যাচ্ছেন, তখন তারাও তাঁর পিছনে পিছনে চলল। তারা মনে করল যে তিনি হয়তো লাসারের কবরের কাছে যাচ্ছেন ও সেখানে গিয়ে কাঁদবেন। 32 যীশু যেখানে ছিলেন, মরিয়ম সেখানে এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ের ওপর পড়ে বললেন, “প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন, আমার ভাই মরত না।”
33 যীশু যখন দেখলেন যে মরিয়ম কাঁদছেন আর তাঁর সঙ্গে যে সব ইহুদীরা এসেছিল তারাও কাঁদছে, তখন তিনি দুঃখিত হয়ে উঠলেন এবং অন্তরে গভীরভাবে বিচলিত হলেন। 34 তখন তিনি বললেন, “তোমরা তাকে কোথায় রেখেছ?”
তারা বললেন, “প্রভু, আসুন, এসে দেখুন।”
35 যীশু কেঁদে ফেললেন।
36 তখন সেই ইহুদীরা সকলে বলতে লাগল, “দেখ! উনি লাসারকে কত ভালোবাসতেন।”
37 কিন্তু তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ বলল, “যীশু তো অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন তাহলে কেন তিনি লাসারকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন না?”
যীশু লাসারকে জীবন দান করেন
38 এরপর যীশু আবার অন্তরে বিচলিত হয়ে উঠলেন। লাসারকে যেখানে রাখা হয়েছিল, যীশু সেই কবরের কাছে গেলেন। কবরটি ছিল একটা গুহা, যার প্রবেশ পথ একটা পাথর দিয়ে ঢাকা ছিল। 39 যীশু বললেন, “ঐ পাথরটা সরিয়ে ফেল।”
সেই মৃত ব্যক্তির বোন মার্থা বললেন, “প্রভু চারদিন আগে লাসারের মৃত্যু হয়েছে। এখন পাথর সরালে এর মধ্য থেকে দুর্গন্ধ বার হবে।”
40 যীশু তাঁকে বললেন, “আমি কি তোমায় বলিনি, যদি বিশ্বাস কর তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে?”
41 এরপর তারা সেই পাথরখানা সরিয়ে দিল, আর যীশু উর্দ্ধ দিকে তাকিয়ে বললেন, “পিতা, আমি তোমায় ধন্যবাদ দিই, কারণ তুমি আমার কথা শুনেছ। 42 আমি জানি তুমি সব সময়ই আমার কথা শুনে থাক। কিন্তু আমার চারপাশে যাঁরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের জন্য আমি একথা বলছি, যেন তারা বিশ্বাস করে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ।” 43 এই কথা বলার পর যীশু জোর গলায় ডাকলেন, “লাসার বেরিয়ে এস!” 44 মৃত লাসার সেই কবর থেকে বাইরে এল। তার হাত-পা টুকরো কাপড় দিয়ে তখনও বাঁধা ছিল আর তার মুখের ওপর একখানা কাপড় জড়ানো ছিল।
যীশু তখন তাদের বললেন, “বাঁধন খুলে দাও এবং ওকে যেতে দাও।”
ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যার চক্রান্ত করতে লাগল
(মথি 26:1-5; মার্ক 14:1-2; লূক 22:1-2)
45 তখন মরিয়মের কাছে যারা এসেছিল, সেই সব ইহুদীদের মধ্যে অনেকে যীশু যা করলেন তা দেখে যীশুর ওপর বিশ্বাস করল। 46 কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন ফরীশীদের কাছে গিয়ে যীশু যা করেছিলেন তা তাদের জানালো। 47 এরপর প্রধান যাজক ও ফরীশীরা পরিষদের এক মহাসভা ডেকে সেখানে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “আমরা এখন কি করব? এই লোকটা তো অনেক অলৌকিক চিহ্নকার্য করছে। 48 আমরা যদি ওকে এইভাবেই চলতে দিই তাহলে তো সকলেই এর ওপর বিশ্বাস করবে। তখন রোমীয়রা এসে আমাদের এই মন্দির ও আমাদের জাতিকে ধ্বংস করবে।”
49 কিন্তু তাদের মধ্যে একজন, যাঁর নাম কায়াফা, যিনি সেই বছরের জন্য মহাযাজকের পদ পেয়েছিলেন, তাদের বললেন, “তোমরা কিছুই জানো না। 50 আর তোমরা এও বোঝ না যে গোটা জাতি ধ্বংস হওয়ার পরিবর্তে সেই মানুষের মৃত্যু হওয়া তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।”
51 একথা কায়াফা যে নিজের থেকে বললেন তা নয়, কিন্তু সেই বছরের জন্য মহাযাজক হওয়াতে তিনি এই ভাববাণী করলেন, যে সমগ্র জাতির জন্য যীশু মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। 52 যীশু যে কেবল ইহুদী জাতির জন্য মৃত্যুবরণ করবেন তা নয়, সারা জগতে যে সমস্ত ঈশ্বরের সন্তানরা চারদিকে ছড়িয়ে আছে, তাদের সকলকে একত্রিত করার জন্য যীশু মৃত্যুবরণ করবেন।
53 তাই সেই দিন থেকে তারা যীশুকে হত্যা করার জন্য চক্রান্ত করতে লাগল। 54 যীশু তখন প্রকাশ্যে ইহুদীদের মধ্যে চলাফেরা বন্ধ করে দিলেন। তিনি সেখান থেকে মরুপ্রান্তরের কাছে ইফ্রয়িম নামে এক শহরে চলে গেলেন এবং সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে থাকলেন।
55 ইহুদীদের নিস্তারপর্ব এগিয়ে আসছিল, আর অনেক লোক নিজেদের শুচি করবার জন্য নিস্তারপর্বের আগেই দেশ থেকে জেরুশালেমে গেল। 56 তারা সেখানে যীশুর খোঁজ করতে লাগল। তারা মন্দির চত্বরে দাঁড়িয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “তোমরা কি মনে কর? তিনি কি এই পর্বে আসবেন?” 57 প্রধান যাজকরা ও ফরীশীরা এই আদেশ দিল যে, যীশু কোথায় আছেন তা যদি কেউ জানে তবে তাদের যেন জানানো হয় যাতে তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International