Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 বংশাবলি 18

মীখায় রাজা আহাবকে সতর্ক করলেন

18 যিহোশাফট প্রভুত পরিমাণে সম্পদ ও সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন। তিনি ঐ দুটি রাজ্যের মধ্যে একটি সন্ধি স্থাপনের জন্য রাজা আহাবের সঙ্গেও একটি বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। কয়েকবছর পরে তিনি শমরিয়া শহরে রাজা আহাবের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আহাব তাঁর ও তাঁর সঙ্গের লোকদের সম্মানার্থে বহু মেষ ও গরু বলিদান করেন। আহাব যিহোশাফটকে রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। আহাব যিহোশাফটকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি আমার সঙ্গে রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করতে যাবেন?” যিহোশাফট, আহাবকে উত্তর দিয়েছিলেন, “আপনার আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, আমার প্রজারা তো আপনারও প্রজা। আমরা অবশ্যই আপনার সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেব।” যিহোশাফট আরো বললেন, “প্রথমে প্রভুর সন্মতি চাওয়া যাক।”

রাজা আহাব তাই 400 জন ভাববাদীকে জড়ো করলেন। তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা কি রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করতে পারি?”

তখন ভাববাদীরা বললেন, “যান, ঈশ্বর আপনাদের রামোৎ-গিলিয়দকে হারাতে সাহায্য করবেন।”

কিন্তু যিহোশাফট একথায় সন্তুষ্ট না হয়ে বললেন, “আমার প্রভুর কোনো ভাববাদী কি এখানে উপস্থিত আছেন? তাহলে তাঁর মাধ্যমে আমাদের প্রভুর সম্মতি নেওয়া উচিৎ‌।”

তখন রাজা আহাব যিহোশাফটকে জানালেন, “একজন আছেন যাঁর মাধ্যমে আমরা প্রভুকে প্রশ্ন করতে পারি। কিন্তু এই লোকটাকে আমার মোটেই পছন্দ নয় কারণ ও কখনও প্রভুর কাছ থেকে জেনে আমায় কোনো ভাল কথা বলেনি। ও সবসময় আমার সম্পর্কে খারাপ ভবিষ্যদ্বাণী করে। এ হল যিম্লের পুত্র মীখায়।”

যিহোশাফট বললেন, “আহাব আপনার মুখে একথা শোভা পায় না।”

রাজা আহাব তখন তাঁর এক কর্মচারীকে ডেকে বললেন, “তাড়াতাড়ি গিয়ে যিম্লের পুত্র মীখায়কে এখানে ডেকে নিয়ে এসো।”

ইস্রায়েলরাজ আহাব এবং যিহূদারাজ যিহোশাফট দুজনেই তখন তাঁদের রাজকীয় পোশাক পরে শমরিয়া শহরের সামনের দরজার কাছে এক শস্য মাড়াইয়ের জায়গায় নিজেদের সিংহাসনে বসেছিলেন। ঐ 400 জন ভাববাদী তাদের সামনে ভবিষ্যদ্বাণী করছিলেন। 10 কনানার পুত্র সিদিকিয় লোহা দিয়ে কয়েকটা শিং বানিয়ে বলল, “প্রভু বলেছেন: ‘ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আপনারা অরামীয়দের এই শিংগুলি দিয়ে বিদ্ধ করে যাবেন।’” 11 সমস্ত ভাববাদীরা একই সুরে কথা বলতে লাগলেন। তারা বললেন, “আপনারা রামোৎ-গিলিয়দে যান। প্রভুর সহায়তায় আপনারা নিশ্চয়ই অরামীয়দের পরাজিত করতে পারবেন।”

12 এদিকে বার্তাবাহকরা মীখায়কে গিয়ে বললেন, “শুনুন মীখায়, সমস্ত ভাববাদীরা রাজাদের যুদ্ধ জয়ের কথা শুনিয়েছেন। আপনিও এবার গিয়ে ভাল ভাল কথা বলুন।”

13 প্রত্যুত্তরে মীখায় বললেন, “জীবন্ত প্রভুর দিব্য, আমার ঈশ্বর যা বলেন আমি তাই বলব।”

14 তারপর মীখায় রাজা আহাবের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। রাজা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “মীখায় আমরা কি রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধ করতে যেতে পারি?”

মীখায় উত্তর দিলেন, “যান আক্রমণ করুন। ঈশ্বর আপনাদের শত্রুকে পরাজিত করতে সাহায্য করবেন।”

15 রাজা আহাব তখন মীখায়কে বললেন, “বহুবার আমি তোমাকে বলেছি, প্রভুর নামে আমাকে সব সময়ে সত্যি কথা বলবে!”

16 একথা শুনে মীখায় বললেন, “আমি দেখলাম ইস্রায়েলের লোকরা মেষপালক ছাড়া মেষের পালের মত পাহাড়গুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়েছে। প্রভু বলেছেন: ‘এদের নেতৃত্ব দেবার মতো কেউ নেই, প্রত্যেকে যে যার বাড়িতে ফিরে যাক।’”

17 ইস্রায়েলের রাজা আহাব যিহোশাফটকে বললেন, “দেখেছেন, আমি আগেই আপনাকে বলেছিলাম মীখায় কখনও আমার সম্পর্কে ভাল কিছু বলেন না। শুধুই আমার অপবাদ দেন।”

18 মীখায় বললেন, “প্রভুর বার্তা শুনুন। আমি প্রভুকে তাঁর সিংহাসনে বসে থাকতে দেখেছি আর স্বর্গের সেনাবাহিনী তাঁকে দুদিকে ঘিরে রেখেছিল। 19 প্রভু জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমাদের মধ্যে কে রামোৎ-গিলিয়দে যাবে এবং আহাবকে প্রতারণা করে হত্যা করবে?’ তখন প্রভুর চারপাশে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন তাদের একেকজন একেক রকম কথা বলতে লাগলেন। 20 শেষ অবধি এক আত্মা এসে প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আমি যাবো আহাবের সঙ্গে ছলনা করতে।’ প্রভু সেই আত্মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিভাবে?’ 21 তখন সেই আত্মা বললো, ‘আমি যাবো এবং আহাবের ভাববাদীদের ওপর ভর করব এবং তাদের দিয়ে মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী করাব।’ তখন প্রভু বললেন, ‘যাও আহাবকে ছলনা করার কাজে তুমি অবশ্যই সফলকাম হবে।’

22 “দেখুন আহাব, প্রভু আপনার ভাববাদীদের মুখ দিয়ে মিথ্যা ভাষণ করিয়েছেন। আসলে প্রভু আপনার অমঙ্গল সাধন করতে চান।”

23 তখন কনানার পুত্র সিদিকিয় গিয়ে মীখায়ের মুখে আঘাত করে বলল, “মীখায়, আমাকে বল প্রভুর আত্মা কেমন করে আমাকে ছেড়ে গেল এবং তার বদলে তোমার সঙ্গে কথা বলল?”

24 মীখায় উত্তর দিলেন, “সিদিকিয় এ কথার উত্তর তুমি তখন পাবে যখন নিজের প্রাণ বাঁচাতে তোমায় একটা চোরা কুঠুরিতে গিয়ে লুকোতে হবে।”

25 রাজা আহাব হুকুম দিলেন, “মীখায়কে আটক কর এবং তাকে শহরের শাসনকর্তা আমোনার কাছে এবং রাজপুত্র যোয়াশের কাছে পাঠিয়ে দাও। 26 আর ওদের জানিয়ে দাও আমি মীখায়কে কারাগারে পুরতে বলেছি। আমি যুদ্ধ থেকে নিরাপদে ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন ওকে জল আর শুকনো রুটি ছাড়া আর কিছু খেতে না দেওয়া হয়।”

27 প্রত্যুত্তরে মীখায় বললেন, “আহাব আপনি যদি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসেন তাহলে বুঝবো প্রভু কোনোদিনই আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বলেননি। তোমরাও সকলে মন দিয়ে আমার একথা শুনে রাখো।”

রামোৎ-গিলিয়দে আহাবের মৃত্যু

28 অতঃপর ইস্রায়েলের রাজা আহাব আর যিহূদার রাজা যিহোশাফট দুজনে মিলে রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করতে গেলেন। 29 রাজা আহাব যিহোশাফটকে বললেন, “যুদ্ধে যাবার আগে আমি ছদ্মবেশ পরে যেতে চাই। আপনি আপনার পোশাকেই চলুন।” তখন ইস্রায়েলের রাজা আহাব ছদ্মবেশ ধারণ করলেন এবং তারপর দুজনে যুদ্ধে গেলেন।

30 অরামের রাজা তাঁর রথবাহিনীর সেনাপতিদের আদেশ দিলেন, “কোন সৈন্যর সঙ্গে যুদ্ধ করো না। তোমরা শুধু ইস্রায়েলের রাজা আহাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।” 31 রথ বাহিনীর সেনাপতিরা প্রথমে যিহোশাফটকে দেখে ভাবলেন, “ঐ বুঝি ইস্রায়েলের রাজা আহাব!” তারা সকলে মিলে যেই যিহোশাফটকে আক্রমণ করতে গেল যিহোশাফট সাহায্যের জন্য প্রভুকে চিৎকার করে ডাকলেন। ঈশ্বর রথের সেনাপতিদের অভিমুখ যিহোশাফটের দিক থেকে ঘুরিয়ে দিলেন। 32 যখন রথের সেনাপতিরা যিহোশাফটকে দেখল তারা হৃদয়ঙ্গম করল যে তিনি আসলে ইস্রায়েলের রাজা আহাব নন, তাই তারা আর তাঁকে তাড়া করলো না।

33 ইতিমধ্যে, একজন সেনা তার ধনুক থেকে একটা তীর লক্ষ্যহীনভাবে ছুঁড়েছিল এবং সেই তীরটা ইস্রায়েলের রাজা আহাবের গায়ে গিয়ে বিঁধলো। তীরটা তাঁর শরীরের এমন জায়গায় বিঁধল যেখানটা বক্ষত্রাণ দিয়ে ঢাকা ছিল না। আহাব তাঁর রথের সারথীকে বললেন, “রথের মুখ ঘোরাও এবং আমাকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাও। আমি আহত।”

34 সেদিন যুদ্ধ এমশঃ প্রচণ্ড হয়ে উঠল। সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজা আহাব তাঁর রথে অধিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধের সামনা করলেন। তারপর সূর্যাস্তের সময় তিনি মারা গেলেন।

প্র.বা. 7

ইস্রায়েলের 144,000 লোক

এরপর আমি দেখলাম, পৃথিবীর চার কোনে চারজন স্বর্গদূত দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা পৃথিবীর চারটি বায়ুপ্রবাহকে আটকে রেখেছেন, যেন পৃথিবীর বা সমুদ্রের বা গাছের ওপর দিয়ে বাতাস না বয়। এরপর আমি আর এক স্বর্গদূতকে পূর্বদিক থেকে উঠে আসতে দেখলাম। তাঁর হাতে ছিল জীবন্ত ঈশ্বরের সীলমোহর। ঈশ্বর যে চারজন স্বর্গদূতকে পৃথিবী ও সমুদ্রে আঘাত করবার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে তিনি চিৎকার করে বললেন, “দাঁড়াও, আমরা যতক্ষণ না আমাদের ঈশ্বরের দাসদের কপালে মোহর দ্বারা চিহ্ন না দিই, সে পর্যন্ত তোমরা পৃথিবী, সমুদ্র বা গাছের কোন ক্ষতি করো না।”

এরপর আমি শুনলাম কত লোকের কপালে চিহ্ন দেওয়া হল। মোট একলক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার লোক। তারা ছিল সমস্ত ইস্রায়েল গোষ্ঠীর ও জাতির।

যিহূদা গোষ্ঠীর12,000
রূবেণ গোষ্ঠীর12,000
গাদ গোষ্ঠীর12,000
আশের গোষ্ঠীর12,000
নপ্তালি গোষ্ঠীর12,000
মনঃশি গোষ্ঠীর12,000
শিমিয়োন গোষ্ঠীর12,000
লেবি গোষ্ঠীর12,000
ইষাখর গোষ্ঠীর12,000
সবূলূন গোষ্ঠীর12,000
যোষেফ গোষ্ঠীর12,000
বিন্যামীন গোষ্ঠীর12,000

বিশাল জনতা

এরপর আমি দেখলাম প্রত্যেক জাতির, প্রত্যেক বংশের এবং প্রত্যেক গোষ্ঠীর ও ভাষার অগণিত লোক সেই সিংহাসন ও মেষশাবকের সামনে এসে তারা দাঁড়িয়েছে। তাদের পরণে শুভ্র পোশাক এবং হাতে খেজুর পাতা। 10 তারা সকলে চিৎকার করে বলছে, “যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, এই জয় সেই ঈশ্বরের ও মেষশাবকের দান।”

11 সমস্ত স্বর্গদূত সিংহাসনের প্রাচীনদের ও চারজন প্রাণীর চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা সিংহাসনের সামনে মাথা নীচু করে প্রণাম করলেন ও ঈশ্বরের উপাসনা করতে থাকলেন। 12 তাঁরা বললেন, “আমেন! প্রশংসা, মহিমা, প্রজ্ঞা, ধন্যবাদ, সম্মান, পরাক্রম ও ক্ষমতা যুগপর্যায়ের যুগে যুগে আমাদের ঈশ্বরেরই হোক্। আমেন!”

13 এরপর সেই প্রাচীনদের মধ্যে একজন আমায় জিজ্ঞেস করলেন, “শুভ্র পোশাক পর! এই লোকরা কে, আর এরা সব কোথা থেকে এসেছে?”

14 আমি তাঁকে বললাম, “মহাশয়, আপনি জানেন।”

তিনি আমায় বললেন, “এরা সেই লোক যারা মহানির্যাতন সহ্য করে এসেছে; আর মেষশাবকের রক্তে নিজের পোশাক ধুয়ে শুচীশুভ্র করেছে। 15 এই কারণেই এরা ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে; আর দিন রাত তাঁর মন্দিরে তাঁর উপাসনা করে চলেছে। যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, তিনি এদের রক্ষা করবেন। 16 এরা আর কখনও ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত হবে না, এদের গায়ে রোদ বা তার প্রখর তাপও লাগবে না। 17 কারণ সিংহাসনের ঠিক সামনে যে মেষশাবক আছেন তিনি এদের মেষপালক হবেন, তাদের জীবন জলের প্রস্রবণের কাছে নিয়ে যাবেন আর ঈশ্বর এদের সমস্ত চোখের জল মুছিয়ে দেবেন।”

সখরিয় 3

মহাযাজক

দেবদূতটি আমাকে মহাযাজক যিহোশূয়কে দেখালেন। যিহোশূয় প্রভুর দূতের সামনে দাঁড়ালেন আর শয়তান তাঁর ডানদিকে দাঁড়াল। শয়তান যিহোশূয়কে মন্দ কাজ করবার জন্য দোষারোপ করেছিল। তখন প্রভুর দূত বললেন, “প্রভু তোমাকে ভর্ৎসনা করছেন এবং তিনি তোমাকে তিরস্কার করতে থাকবেন! প্রভু জেরুশালেমকে তাঁর বিশেষ শহর হিসেবে মনোনীত করেছেন। আগুন থেকে টেনে বার করা একটি জ্বলন্ত কাঠির মত তিনি ঐ শহর রক্ষা করেছেন।”

যিহোশূয় সেই দেবদূতটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যিহোশূয়ের পরণে ছিল নোংরা কাপড়-চোপড়। তখন দেবদূতটি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অপর দেবদূতদের বললেন, “যিহোশূয়র ঐ মলিন বস্ত্র খুলে নাও।” তখন সেই দেবদূত যিহোশূয়কে বললেন, “এখন আমি তোমার পাপ দূর করে দিয়েছি এবং আমি তোমাকে নতুন আধিকারিক বস্ত্রে সাজাব।”

তখন আমি বললাম, “ওর মাথায় একটা পরিষ্কার শিরস্ত্রাণ পরিয়ে দাও।” সুতরাং, যখন প্রভুর দূত কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন, তারা পরিষ্কার জামাকাপড় ও শিরস্ত্রাণ দিয়ে তাকে সজ্জিত করলেন। তখন যিহোশূয়কে দূত বলল,

প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
“আমি যা বলি তা শোন
    এবং আমার উপদেশ মত জীবনযাপন কর।
তাহলে তুমি আমার মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক হবে
    এবং মন্দির প্রাঙ্গণের যত্ন নেবে।
এবং কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ দেবদূতদের মত
    তুমিও মন্দিরের ভেতর তোমার ইচ্ছানুযায়ী যেতে পারবে।
ওহে মহাযাজক যিহোশূয়
    এবং তোমার সামনে যে মহাযাজকরা বসে আছে, তোমরা সবাই দয়া করে শোন।
অদূর ভবিষ্যতে আমার বিশেষ দাসকে যখন আমি আনব তখন কি ঘটবে তা দেখাবার জন্য এই লোকরা তার উদাহরণস্বরূপ।
    তাকে ‘শাখা’ এই নামে ডাকা হয়।
দেখ, আমি যিহোশূয়র সামনে একটা বিশেষ ধরণের পাথর রাখছি।
    ঐ পাথরটার সাতটা দিক রয়েছে।
আমি একটি বিশেষ বার্তা তাতে খোদাই করব।
    এটাই দেখাবে যে আমি একদিনে এই দেশের প্রতিটি পাপ দূর করব।”

10 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন,
“সেই সময় লোকরা
    তাদের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে একত্রে বসবে।
তারা একে অপরকে ডুমুর গাছ ও দ্রাক্ষালতার তলায় বসবার জন্য নিমন্ত্রণ জানাবে।”

যোহন 6

যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মথি 14:13-21; মার্ক 6:30-44; লূক 9:10-17)

এরপর যীশু গালীল হ্রদের অপর পারে গেলেন, এই হ্রদকে তিবিরিয়াও বলে। বহু লোক তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগল, কারণ রোগীদের সুস্থ করতে তিনি যে সব অলৌকিক চিহ্ন করতেন তা তারা দেখেছিল। যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা পাহাড়ের উপরে গিয়ে সেখানে বসলেন। সেই সময় ইহুদীদের নিস্তারপর্ব এগিয়ে আসছিল।

যীশু যখন দেখলেন বহু লোক তাঁর কাছে আসছে তখন তিনি ফিলিপকে বললেন, “এই লোকদের খেতে দেবার জন্য আমরা কোথায় রুটি কিনতে পাব?” যীশু তাঁকে পরীক্ষা করবার জন্যই একথা বললেন, কারণ যীশু কি করবেন তা তিনি আগেই জানতেন।

ফিলিপ যীশুকে বললেন, “প্রত্যেকের হাতে এক টুকরো করে রুটি দিতে গেলে সারা মাসের রোজগারে রুটি কিনলেও তা যথেষ্ট হবে না।”

যীশুর শিষ্যদের মধ্যে আর একজন, যার নাম আন্দ্রিয়, ইনি শিমোন পিতরের ভাই, তিনি যীশুকে বললেন, “এখানে একটা ছোট ছেলে আছে, যার কাছে যবের পাঁচটা রুটি আর ছোট দুটো মাছ আছে, কিন্তু এত লোকের জন্য নিশ্চয়ই সেগুলি যথেষ্ট হবে না।”

10 যীশু বললেন, “লোকদের বসিয়ে দাও।” সেই জায়গায় অনেক ঘাস ছিল। তখন সব লোকেরা বসে গেল। সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল। 11 এরপর যীশু সেই রুটি কখানা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং যারা সেখানে বসেছিল তাদের সেগুলি ভাগ করে দিলেন। আর তিনি মাছও ভাগ করে দিলেন। যে যত চাইল তত পেল।

12 তারা পরিতৃপ্ত হলে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যে সব টুকরো টাকরা পড়ে আছে তা জড়ো কর, যেন কোন কিছু নষ্ট না হয়।” 13 তখন তাঁরা সে সব জড়ো করলেন। লোকেরা খাবার পরে যবের সেই পাঁচ খানা রুটির টুকরো-টাকরা যা পড়ে ছিল শিষ্যরা তা জড়ো করলে বারো টুকরী ভর্ত্তি হয়ে গেল।

14 লোকেরা যীশুকে এই অলৌকিক চিহ্ন করতে দেখে বলতে লাগল, “জগতে যাঁর আগমনের কথা আছে ইনি নিশ্চয়ই সেই ভাববাদী।”

15 এতে যীশু বুঝলেন লোকেরা তাঁকে রাজা করবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই তিনি তাদের ছেড়ে একাই সেই পাহাড়ে উঠে গেলেন।

যীশু জলের ওপর দিয়ে হাঁটলেন

(মথি 14:22-27; মার্ক 6:45-52)

16 সন্ধ্যা হলে যীশুর শিষ্যরা হ্রদের ধারে নেমে গেলেন। 17 তাঁরা একটা নৌকায় উঠে হ্রদের অপর পারে কফরনাহূমের দিকে যেতে থাকলেন। তখন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, আর যীশু তখনও তাদের কাছে আসেন নি। 18 আর খুব জোরে ঝোড়ো বাতাস বইছিল, ফলে হ্রদে বড় বড় ঢেউ উঠছিল। 19 এরই মধ্যে তিন চার মাইল নৌকা বেয়ে যাবার পর যীশুর শিষ্যরা দেখলেন, যীশু জলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসছেন। তিনি যখন নৌকার কাছাকাছি এলেন, তখন শিষ্যরা খুব ভয় পেয়ে গেলেন। 20 কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, “এই যে আমি; ভয় পেও না।” 21 তখন তাঁরা খুশী হয়ে যীশুকে নৌকাতে তুলে নিলেন। আর তাঁরা যেখানে যাচ্ছিলেন নৌকা তখনই সেখানে পৌঁছে গেল।

লোকেরা যীশুকে খুঁজতে লাগল

22 হ্রদের অপর পারে যে জনতা ছিল, পরের দিন তারা বুঝতে পারল যে কেবলমাত্র একটা নৌকাই সেখানে ছিল আর যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে তাতে ওঠেন নি। তাঁর শিষ্যরা নিজেরাই চলে গিয়েছিলেন। 23 কিন্তু যেখানে প্রভুকে ধন্যবাদ দেওয়ার পর লোকেরা রুটি খেয়েছিল, সেইখানে তখন তিবিরিয়া থেকে কয়েকটা নৌকা এল। 24 কিন্তু যখন লোকেরা দেখল যে যীশু বা তাঁর শিষ্যরা কেউই সেখানে নেই, তখন তারা নৌকায় চড়ে যীশুর খোঁজে কফরনাহূমে চলে গেল।

যীশুই আমাদের জীবন রুটি

25 তারা হ্রদের অপর পারে যীশুকে দেখতে পেয়ে বলল, “গুরু, আপনি এখানে কখন এসেছেন?”

26 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা অলৌকিক চিহ্ন দেখেছ বলে যে আমার খোঁজ করছ তা নয়, কিন্তু তোমরা রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়েছিলে বলেই আমার খোঁজ করছ। 27 খাদ্যের মতো নশ্বর বস্তুর জন্য কাজ করো না। কিন্তু যে খাদ্য প্রকৃতই স্থায়ী ও যা অনন্ত জীবন দান করে, তার জন্য কাজ কর যা মানবপুত্র তোমাদের দেবেন। কারণ পিতা ঈশ্বর তোমাদের দেখিয়েছেন যে তিনি মানবপুত্রের সঙ্গেই আছেন।”

28 তারা তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের কাজ করার জন্য আমাদের কি করতে হবে?”

29 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন তোমরা যেন তাঁকে বিশ্বাস কর। এই হল ঈশ্বরের কাজ।”

30 তারা তাঁকে বলল, “আপনি কি এমন অলৌকিক কাজ করছেন, যা দেখে আমরা জানতে পারব যে আপনিই সেই ব্যক্তি যাঁকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন ও আপনার ওপর বিশ্বাস করব? 31 আমাদের পিতৃপুরুষরা মরুপ্রান্তরে মান্না খেয়েছিল। যেমন শাস্ত্রে লেখা আছে: ‘তিনি তাদের খাবার জন্য স্বর্গ থেকে রুটি দিলেন।’”(A)

32 তখন যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মোশি স্বর্গ থেকে সেই রুটি তোমাদের দেন নি, কিন্তু আমার পিতাই স্বর্গ থেকে সত্যিকারের রুটি তোমাদের দেন। 33 স্বর্গ থেকে নেমে এসে যিনি জগত সংসার জীবন দান করেন তিনিই ঈশ্বরের দেওয়া রুটি।”

34 তারা তাঁকে বলল, “মহাশয়, সেই রুটি সব সময় আমাদের দিন।”

35 যীশু তাদের বললেন, “আমিই সেই রুটি যা জীবন দান করে। যে কেউ আমার কাছে আসে সে কখনও ক্ষুধার্ত হবে না, আর যে কেউ আমার ওপর বিশ্বাস রাখে কখনও তার পিপাসা পাবে না। 36 কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা আমায় দেখেছ অথচ আমায় বিশ্বাস কর না। 37 পিতা আমাকে যাদের দেন, তারা প্রত্যেকেই আমার কাছে আসবে। আর যারা আমার কাছে আসে, আমি তাদের কখনই ফিরিয়ে দেব না। 38 কারণ আমি আমার খুশী মত কাজ করতে স্বর্গ থেকে নেমে আসি নি, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করতে এসেছি। 39 যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা এই যে যাদের তিনি আমায় দিয়েছেন তাদের একজনকেও যেন আমি না হারাই; বরং শেষ দিনে যেন তাদের সকলকে আমি উত্থিত করি। 40 আমার পিতা এই চান, যে কেউ তাঁর পুত্রকে দেখে ও তাঁকে বিশ্বাস করে, সে যেন অনন্ত জীবন লাভ করে; আর আমিই তাকে শেষ দিনে ওঠাব।”

41 তখন ইহুদীরা যীশুর সম্পর্কে গুঞ্জন শুরু করল, কারণ তিনি বলেছিলেন, “আমিই সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে।” 42 তারা বলল, “তিনি কি যোষেফের ছেলে নন? আমরা কি এর বাবা মাকে চিনি না? তাহলে এখন কেমন করে তিনি বলছেন, ‘আমি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি?’”

43 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “নিজেদের মধ্যে ওসব বচসা বন্ধ কর। 44 যিনি আমায় পাঠিয়েছেন সেই পিতা না আনলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না; আর আমিই তাকে শেষ দিনে জীবিত করে তুলব। 45 ভাববাদীদের পুস্তকে লেখা আছে: ‘তারা সকলেই ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা লাভ করবে।’(B) যে কেউ পিতার কাছে শুনে শিক্ষা পেয়েছে সেই আমার কাছে আসে। 46 আমি বলছি না যে, কেউ পিতাকে দেখেছেন। কেবলমাত্র যিনি পিতার কাছ থেকে এসেছেন তিনিই পিতাকে দেখেছেন।

47 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে কেউ বিশ্বাস করেছে সেই অনন্ত জীবন পেয়েছে। 48 আমিই সেই রুটি যা জীবন দেয়। 49 তোমাদের পিতৃপুরুষরা মরুপ্রান্তরে মান্না খেয়েছিল, কিন্তু তবু তারা মারা গিয়েছিল। 50 এ সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে আসে, আর কেউ যদি তা খায়, তবে সে মরবে না। 51 আমিই সেই জীবন্ত রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। কেউ যদি এই রুটি খায় তবে সে চিরজীবি হবে। যে রুটি আমি দেব তা হল আমার দেহের মাংস। তা আমি দিই যাতে জগত জীবন পায়।”

52 এই কথা শুনে ইহুদীদের মধ্যে তর্ক বেধে গেল। তারা বলতে লাগল, “এই লোকটা কেমন করে তার দেহের মাংস আমাদের খেতে দিতে পারে?”

53 যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি; তোমরা যদি মানবপুত্রের মাংস না খাও ও তাঁর রক্ত পান না কর, তাহলে তোমাদের মধ্যে জীবন নেই। 54 যে কেউ আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে সে অনন্ত জীবন পায়, আর শেষ দিনে আমি তাকে ওঠাবো। 55 আমার মাংসই প্রকৃত খাদ্য ও আমার রক্তই প্রকৃত পানীয়। 56 যে আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে সে আমার মধ্যে থাকে, আর আমিও তার মধ্যে থাকি।

57 “যেমন জীবন্ত পিতা আমাকে পাঠিয়েছেন, আর পিতার জন্য আমি জীবিত আছি, ঠিক সেরকম যে আমাকে খায় সে আমার দরুন জীবিত থাকবে। 58 এ সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিল। এটা তেমন রুটি নয় যা তোমাদের পিতৃপুরুষরা খেয়েছিল এবং তা সত্ত্বেও পরে তারা সকলে মারা গিয়েছিল। এই রুটি যে খায় সে চিরজীবি হবে।”

59 কফরনাহূমের সমাজ-গৃহে শিক্ষা দেবার সময় যীশু এইসব কথা বললেন।

অনন্ত জীবনের বাক্যসকল

60 যীশুর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে তাঁর এই কথা শুনে বলল, “এ বড়ই কঠিন কথা; কে এ গ্রহণ করতে পারে?”

61 যীশু অন্তরে টের পেলেন যে তাঁর শিষ্যরা এই বিষয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে। তাই তিনি তাদের বললেন, “এই শিক্ষায় কি তোমরা ধাক্কা পেয়েছ? 62 তবে মানবপুত্র আগে যেখানে ছিলেন উর্দ্ধে সেখানে তাঁকে ফিরে যেতে দেখলে তোমরা কি বলবে? 63 আত্মাই জীবন দান করে, রক্ত মাংসের শরীর কোন উপকারে আসে না। আমি তোমাদের সকলকে যে সব কথা বলেছি তা হল আধ্যাত্মিক আর তাই জীবন দান করে। 64 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বিশ্বাস করে না।” কারণ যীশু শুরু থেকেই জানতেন কে কে তাঁকে বিশ্বাস করে না, আর কেই বা তাঁকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে। 65 তাই তিনি বললেন, “এজন্য আমি তোমাদের বলেছি, ‘পিতা ইচ্ছা না করলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না।’”

66 এই কারণেই তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে পিছিয়ে গেল, তাঁর সঙ্গে চলাফেরা বন্ধ করে দিল।

67 তখন যীশু সেই বারোজন প্রেরিতকে বললেন, “তোমরাও কি চলে যেতে চাইছ?”

68 শিমোন পিতর বললেন, “প্রভু, আমরা কার কাছে যাব? আপনার কাছে সেই বাণী আছে যা অনন্ত জীবন দান করে। 69 আমরা বিশ্বাস করি ও জানি যে আপনিই সেই পবিত্র একজন, যিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।”

70 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “আমি কি তোমাদের বারোজনকে মনোনীত করি নি? তবু তোমাদের মধ্যে একজন দিয়াবল আছে।” 71 তিনি শিমোন ঈষ্করিয়োতের ছেলে যিহূদার বিষয়ে বলছিলেন, কারণ যিহূদা সেই বারো জনের মধ্যে একজন হলেও পরে যীশুকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International