M’Cheyne Bible Reading Plan
আসার শেষ কয়েক বছর
16 আসার রাজত্বের 36 বছরের মাথায় ইস্রায়েলের রাজা বাশা যিহূদা আক্রমণ করেছিলেন। তিনি রামা শহরটি নির্মাণ করে শহরটিকে দুর্গে পরিণত করেছিলেন, যাতে উত্তরের রাজ্যগুলির লোকরা যিহূদার রাজা আসার কাছে না যায়। 2 তখন আসা প্রভুর মন্দির ও রাজপ্রাসাদ থেকে সোনা ও রূপো নিলেন এবং দম্মেশকে অরাম দেশের রাজা বিন্হদদের কাছে দূত মারফৎ তা পাঠালেন, ও বললেন, 3 “আমার পিতা ও আপনার পিতার মধ্যে যেরকম চুক্তি হয়েছিল, চলুন আমরাও নিজেদের মধ্যে সেরকম একটা চুক্তি করি। আমি আপনার কাছে সোনা ও রূপো পাঠাচ্ছি। পরিবর্তে আপনি ইস্রায়েলরাজ বাশার সঙ্গে আপনার চুক্তি ভঙ্গ করুন যাতে তিনি আমাকে আর বিরক্ত না করেন এবং আমাকে নিজের মতো থাকতে দেন।”
4 বিন্হদদ রাজা আসার প্রস্তাবে রাজী হয়ে ইস্রায়েলের শহরগুলো আক্রমণ করার জন্য তাঁর সেনাবাহিনীর সেনাপতিদের নির্দেশ দিলেন। এইসব সেনাপতিরা ইয়োন, দান, আবেল-ময়িম ও নপ্তালি শহরগুলি, যেখানে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা হতো আক্রমণ করলেন। 5 যখন বাশা এই আক্রমণের খবর পেলেন তিনি রামার দুর্গ বানানোর কাজ বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হলেন। 6 তখন আসা যিহূদার সমস্ত পুরুষদের নিয়ে বাশা রামা নগর বানানোর জন্য যে সব পাথর আর কাঠ ব্যবহার করেছিলেন, সেইগুলো নিয়ে এলেন এবং গেবা ও মিস্পা দুটো দুর্গসহ শহর তৈরী করলেন।
7 এসময়ে ভাববাদী হনানি যিহূদার রাজা আসার সঙ্গে দেখা করতে এসে বললেন, “আসা তুমি সাহায্যের জন্য তোমার প্রভু ঈশ্বরের ওপর নয়, অরাম রাজের ওপর নির্ভর করেছিলে। এই কারণে, সিরিয়ার রাজার সৈন্যদলের ওপর তুমি তোমার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। 8 কূশীয় ও লূবীয়দের বহু রথ ও অশ্বারোহী সৈন্যসহ বিশাল সেনাবাহিনী ছিল, কিন্তু তুমি প্রভুর ওপর নির্ভর করেছিলে বলে তিনি তোমাকে ওদের পরাজিত করতে দিয়েছিলেন। 9 সমস্ত পৃথিবীতে খুঁজে বেড়ায় প্রভুর দৃষ্টি, যে সমস্ত ব্যক্তি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত, তিনি তাদের মধ্য দিয়েই তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। আসা তুমি মূর্খের মতো কাজ করেছো অতএব এরপর থেকে তোমায় শুধুই যুদ্ধ করে যেতে হবে।”
10 একথা শুনে, আসা হনানির ওপর রেগে গিয়ে তাঁকে কারাগারে পুরে দিলেন এবং কয়েকজনের সঙ্গে আসা নিষ্ঠুর ব্যবহারও করেছিলেন।
11 আসা তাঁর রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি যা কিছু করেছিলেন সেসবই যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 12 তাঁর রাজত্বের 39 বছরের মাথায় আসার পায়ে মারাত্মক ধরণের রোগ হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি প্রভুর সাহায্য প্রার্থনা না করে শুধুমাত্র ডাক্তারদের দিয়েই চিকিৎসা করিয়েছিলেন। 13 ফলস্বরূপ 41 বছর রাজত্ব করার পর অবশেষে তাঁর মৃত্যু হল। 14 মৃত্যুর পর আসাকে তাঁর পূর্বপুরুষদের পাশে দায়ূদ নগরীতে তাঁর জন্য বানিয়ে রাখা সমাধিস্তূপে সমাহিত করা হল। লোকরা সমাধিটিকে বিভিন্ন ধরণের মশলাপাতি ও সুগন্ধী আতরে ভরিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর সম্মানার্থে এক বিশাল আগুন জ্বালিয়েছিল।
পুঁথি খোলার যোগ্যতা কার আছে?
5 সিংহাসনে যিনি বসেছিলেন তাঁর ডানহাতে আমি একটি পুঁথি[a] দেখলাম যার ভেতরে ও বাইরে উভয়দিকে লেখা ও তা সাতটি মোহর দিয়ে সীলমোহর করে বন্ধ করা ছিল। 2 আর আমি এক শক্তিমান স্বর্গদূতকে দেখলাম, যিনি চিৎকার করে বলছেন, “এটি খুলতে পারে ও তার সীলমোহরগুলি ভাঙতে পারে কার এমন যোগ্যতা আছে?” 3 কিন্তু স্বর্গে, পৃথিবীতে অথবা পৃথিবীর নীচে কেউ পুস্তকটি না পারল খুলতে, না পারল তার ভেতরে কি আছে তা দেখতে। 4 সেই পুঁথিটি খোলবার ও তার ভেতরে দেখবার যোগ্য কাউকে পাওয়া গেল না দেখে আমি অঝোরে কাঁদতে থাকলাম। 5 তখন সেই প্রাচীনদের মধ্যে একজন আমাকে বললেন, “তুমি কেঁদো না! দেখ, যিনি যিহূদা বংশের সিংহ, দায়ূদের বংশধর, তিনি বিজয়ী হয়েছেন, তিনি সাতটি সীলমোহর ভাঙ্গার ও পুঁথিটি খোলার যোগ্য হয়েছেন।”
6 পরে আমি দেখলাম ঐ সিংহাসনের সামনে চার জন প্রাণীর সঙ্গে এবং প্রাচীনদের সঙ্গে এক মেষশাবক দাঁড়িয়ে আছেন; সেই মেষশাবককে এমন দেখাচ্ছিল যেন তাঁকে বধ করা হয়েছে। তাঁর সাতটি শৃঙ্গ ও সাতটি চক্ষু, সেই চক্ষুগুলি হল ঈশ্বরের সপ্ত আত্মা যাদের পৃথিবীর সর্বত্র পাঠানো হয়েছে। 7 এরপর সেই মেষশাবক এসে যিনি সিংহাসনে বসে আছেন তাঁর হাত থেকে সেই পুঁথিটি নিলেন। 8 তিনি যখন পুঁথিটি নিলেন, তখন ঐ চারজন প্রাণী ও চব্বিশজন প্রাচীন মেষশাবকের সামনে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করলেন। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে ছিল একটি করে বীণা ও সোনার বাটিতে সুগন্ধি ধূপ, সেই ধূপ হচ্ছে ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের প্রার্থনাস্বরূপ। 9 তাঁরা মেষশাবকের জন্য এক নতুন গীত গাইছিলেন:
“তুমি ঐ পুঁথিটি নেবার
ও তার সীলমোহর ভাঙার যোগ্য,
কারণ তুমি বলি হয়েছিলে;
আর তোমার রক্ত দিয়ে সমস্ত উপজাতি, ভাষা, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্য থেকে
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে লোকদের কিনেছ।
10 তুমি তাদের নিয়ে এক রাজ্য গড়েছ ও আমাদের ঈশ্বরের যাজক করেছ
আর তারা সমস্ত পৃথিবীতে রাজত্ব করবে।”
11 পরে আমি তাকালাম, আর সেই সিংহাসন, জীবন্ত প্রাণী ও প্রাচীনদের চারদিকে অনেক স্বর্গদূতের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম। তারা সংখ্যায় লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি। 12 তারা উদাত্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন:
“সেই মেষশাবক, যিনি হত হয়েছিলেন,
তিনিই পরাক্রমী, সম্পদ, বিজ্ঞতা, ক্ষমতা,
সম্মান, মহিমা ও প্রশংসা পাবার পরম যোগ্য।”
13 পরে আমি স্বর্গে, পৃথিবীতে, পৃথিবীর নীচে ও সমুদ্রের মধ্যে সমস্ত প্রাণী এবং আর যা কিছু সেইসব জায়গাতে ছিল তাদের এই বাণী শুনলাম:
“যিনি সিংহাসনে বসে আছেন
তাঁর ও মেষশাবকের প্রতি প্রশংসা, সম্মান,
মহিমা ও পরাক্রম যুগে যুগে বর্ষিত হোক্।”
14 সেই চারজন প্রাণী তখন বললেন, “আমেন!” এরপর সেই প্রাচীনরা মাথা নীচু করে প্রণাম ও উপাসনা করলেন।
ঈশ্বর তাঁর লোকেদের প্রত্যাবর্তন চান
1 বেরিখিয়ের পুত্র সখরিয় প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেয়েছিলেন। এটা ঘটেছিল পারস্যের রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের অষ্টম মাসে (সখরিয় ছিলেন বেরিখিয়ের পুত্র, যিনি ছিলেন ভাববাদী ইদ্দোর পুত্র) বার্তাটি ছিল:
2 প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষের উপর খুব ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। 3 সুতরাং তোমরা অবশ্যই লোকেদের এই কথাগুলি বলবে। প্রভু বলেন, “তোমরা আমার কাছে ফিরে এস, তাহলে আমিও তোমাদের কাছে ফিরব।” সর্বশক্তিমান প্রভুই এই কথা বলেছেন।
4 প্রভু বলেছেন, “তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের মতো হয়ো না। অতীতে, ভাববাদীরা তাদের কাছে বলতেন, ‘সর্বশক্তিমান প্রভু চান তোমরা তোমাদের অসৎ জীবনযাপনের ধারা বদলে দাও আর কোন মন্দ কাজ করো না!’ কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরা আমার কথা শোনেনি।” প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন।
5 ঈশ্বর বলেছেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষরা আজ আর নেই। সেই ভাববাদীরা চিরকালের জন্য বেঁচে থাকেনি। 6 ঐ ভাববাদীরা আমার দাস ছিল। আমার বিধি ও শিক্ষামালা সম্বন্ধে তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে জানাবার জন্য আমি তাদের ব্যবহার করতাম। অবশেষে, তোমাদের পূর্বপুরুষরা শিক্ষা গ্রহণ করে বলেছিল, ‘প্রভু হলেন সর্বশক্তিমান, তিনি যা বলেছিলেন তাই-ই করেছেন। আমাদের মন্দ কাজের জন্য ও অসৎভাবে জীবনযাপনের জন্য তিনি আমাদের শাস্তি দিয়েছেন।’ এইভাবে তারা ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিল।”
চারটি ঘোড়া
7 রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের একাদশতম মাসের 24তম দিনে সখরিয় প্রভুর কাছ থেকে আরেকটি বার্তা পেলেন। বার্তাটি এইরকম ছিল:
8 রাত্রে আমি একটি দর্শন পেলাম। সেই দর্শনে আমি একটি লোককে একটা লাল রঙের ঘোড়ার ওপর দেখলাম। সে উপত্যকায় কিছু সুগন্ধ পত্রবিশিষ্ট গুল্মের ঝোপের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। তার পেছনে ছিল লাল, খয়েরী এবং সাদা রং এর ঘোড়া। 9 আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মহাশয়, এই ঘোড়াগুলি কিসের জন্য?”
তখন যে দেবদূত আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি বললেন, “আমি তোমায় দেখাচ্ছি এই ঘোড়াগুলো কিসের জন্য।”
10 তখন লোকটি সুগন্ধী ঝোপগুলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল, “পৃথিবীর চারিদিকে এদিক ওদিক যাবার জন্য প্রভু এই ঘোড়াগুলোকে পাঠিয়েছেন।”
11 তখন সুগন্ধী ঝোপঝাড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা প্রভুর দূতকে তারা বলল, “আমরা পৃথিবীর এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছি এবং লক্ষ্য করেছি যে সমগ্র পৃথিবী শান্ত ও স্থির।”
12 তখন প্রভুর দূত বললেন, “প্রভু, জেরুশালেম ও যিহূদার শহরগুলোকে স্বস্তি দিতে আপনি আর কত দেরী করবেন? আপনি 70 বছর ধরে এই শহরগুলোর প্রতি আপনার ক্রোধ দেখিয়েছেন।”
13 তখন প্রভু আমার সঙ্গে কথোপকথনরত দেবদূতটিকে অনেক সদয় ও স্বস্তিপূর্ণ কথা বললেন। 14 তখন প্রভুর দূত আমাকে লোকেদের এই কথা বলতে বললেন:
প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন:
“জেরুশালেম ও সিয়োনের জন্য আমার একটি গভীর অনুভূতি আছে।
15 এবং যে জাতিরা নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করে, তাদের প্রতি আমি অতিশয় ক্রোধান্বিত।
আমি যখন তেমন রেগে ছিলাম না,
তখন আমি ঐ জাতিদের ব্যবহার করেছিলাম আমার লোকদের শাস্তি দিতে।
কিন্তু ঐ জাতিগুলো ক্ষতি সাধন করেছে।”
16 তাই প্রভু বলেন,
“আমি জেরুশালেমে ফিরে আসব এবং তাকে স্বস্তি দেব।”
প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
“জেরুশালেমকে আবার গড়া হবে
আর সেখানে আমার গৃহও নির্মাণ করা হবে।”
17 দেবদূতরা বলল লোকদের বল:
“প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
‘আমার শহর আবার ধনী হয়ে উঠবে।
আমি সিয়োনকে স্বস্তি দেব।
আমি জেরুশালেমকে আবার আমার বিশেষ শহর হিসাবে মনোনীত করব।’”
চারটি শিং আর চারজন কারীগর
18 তখন আমি উপরের দিকে তাকিয়ে চারটে শিং দেখতে পেলাম। 19 তারপর আমি আমার সঙ্গে আলাপচারী সেই দূতকে জিজ্ঞেস করলাম, “এই শিংগুলির অর্থ কি?”
তিনি আমাকে বললেন, “এই শিংগুলি হল সেই শিং যারা ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল।”
20 প্রভু আমায় চারজন কারিগর দেখালেন। 21 আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “ঐ চারজন কারিগর কি করতে আসছে?”
তিনি বললেন, “এই শিংগুলি সেই জাতিগুলির প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা যিহূদার লোকদের আক্রমণ করেছিল এবং জোর করে তুলে তাদের নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তারা তাদের বিদেশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এই চারজন কারিগর ঐ চারটি শিংকে ভয় দেখাতে এবং তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে এসেছে!”
শমরীয়ার এক স্ত্রীলোকের সঙ্গে যীশুর কথাবার্তা
4 ফরীশীরা জানতে পারল যে যীশু যোহনের চেয়ে বেশী শিষ্য করেছেন ও বাপ্তাইজ করছেন। 2 যদিও যীশু নিজে বাপ্তাইজ করছিলেন না, বরং তাঁর শিষ্যরাই তা করছিলেন। 3 তারপর তিনি যিহূদিয়া ছেড়ে চলে গেলেন এবং গালীলেই ফিরে গেলেন। 4 গালীলে যাবার সময় তাঁকে শমরিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হল।
5 যাকোব তাঁর ছেলে যোষেফকে যে ভূমি দিয়েছিলেন তারই কাছে শমরীয়ার শুখর নামে এক শহরে যীশু গেলেন। 6 এখানেই যাকোবের কুয়াটি ছিল, যীশু সেই কুয়ার ধারে এসে বসলেন কারণ তিনি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তখন বেলা প্রায় দুপুর। 7 একজন শমরীয়া স্ত্রীলোক সেখানে জল তুলতে এল। যীশু তাকে বললেন, “আমায় একটু জল খেতে দাও তো।” 8 সেই সময় শিষ্যরা শহরে কিছু খাবার কিনতে গিয়েছিল।
9 সেই শমরীয় স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “একি আপনি একজন ইহুদী হয়ে আমার কাছ থেকে খাবার জন্য জল চাইছেন? আমি একজন শমরীয় স্ত্রীলোক!” (ইহুদীরা শমরীয়দের সঙ্গে কোনরকম মেলামেশা করত না।)
10 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “তুমি যদি জানতে যে ঈশ্বরের দান কি আর কে তোমার কাছ থেকে খাবার জন্য জল চাইছেন তাহলে তুমিই আমার কাছে জল চাইতে আর আমি তোমাকে জীবন্ত জল দিতাম।”
11 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “মহাশয়, আপনি কোথা থেকে সেই জীবন্ত জল পাবেন? এই কুয়াটি যথেষ্ট গভীর। জল তোলার কোন পাত্রও আপনার কাছে নেই। 12 আপনি কি আমাদের পিতৃপুরুষ যাকোবের চেয়ে মহান? তিনি আমাদের এই কুয়াটি দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই এই কুয়ার জল খেতেন এবং তাঁর সন্তানরা ও তাঁর পশুপালও এর থেকেই জল পান করত।”
13 যীশু তাকে বললেন, “যে কেউ এই জল পান করবে তার আবার তেষ্টা পাবে। 14 কিন্তু আমি যে জল দিই তা যে পান করবে তার আর কখনও পিপাসা পাবে না। সেই জল তার অন্তরে এক প্রস্রবনে পরিণত হয়ে বইতে থাকবে, যা সেই ব্যক্তিকে অনন্ত জীবন দেবে।”
15 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “মশায়, আমাকে সেই জল দিন, যেন আমার আর কখনও পিপাসা না পায় আর জল তুলতে আমায় এখানে আসতে না হয়।”
16 তিনি তাকে বললেন, “যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডেকে নিয়ে এস।”
17 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “আমার স্বামী নেই।”
যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ যে তোমার স্বামী নেই। 18 তোমার পাঁচ জন স্বামী হয়ে গেছে; আর এখন যে লোকের সঙ্গে তুমি আছ সে তোমার স্বামী নয়, তাই তুমি যা বললে তা সত্যি।”
19 সেই স্ত্রীলোকটি তখন তাঁকে বলল, “মহাশয়, আমি দেখতে পাচ্ছি যে আপনি একজন ভাববাদী। 20 আমাদের পিতৃপুরুষরা এই পর্বতের ওপর উপাসনা করতেন। কিন্তু আপনারা ইহুদীরা বলেন যে জেরুশালেমই সেই জায়গা যেখানে লোকেদের উপাসনা করতে হবে।”
21 যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, আমার কথায় বিশ্বাস কর! সময় আসছে যখন তোমরা পিতা ঈশ্বরের উপাসনা এই পাহাড়ে করবে না, জেরুশালেমেও নয়। 22 তোমরা শমরীয়রা কি উপাসনা কর তোমরা তা জানো না। আমরা ইহুদীরা কি উপাসনা করি আমরা তা জানি, কারণ ইহুদীদের মধ্য থেকেই পরিত্রাণ আসছে। 23 সময় আসছে, বলতে কি, তা এসে গেছে, যখন প্রকৃত উপাসনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতা ঈশ্বরের উপাসনা করবে। পিতা ঈশ্বরও এইরকম উপাসনাকারীদেরই চান। 24 ঈশ্বর আত্মা, যাঁরা তাঁর উপাসনা করে তাদের আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করতে হবে।”
25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “আমি জানি, মশীহ আসছেন। মশীহকে তারা খ্রীষ্ট বলে। যখন তিনি আসবেন, তখন আমাদের সব কিছু জানাবেন।”
26 যীশু তাকে বললেন, “তোমার সঙ্গে যে কথা বলছে আমিই সেই মশীহ।”
27 সেই সময় তাঁর শিষ্যরা ফিরে এলেন। একজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে যীশুকে কথা বলতে দেখে তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তবু কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন না, “আপনি কি চাইছেন?” বা “আপনি কি জন্য ওর সঙ্গে কথা বলছেন?”
28 সেই স্ত্রীলোকটি তখন তার কলসী ফেলে রেখে গ্রামে গেল, আর লোকদের বলল, 29 “তোমরা এস, একজন লোককে দেখ, আমি যা কিছু করেছি, তিনি আমাকে সে সব বলে দিলেন। তিনিই কি সেই মশীহ নন?” 30 তখন লোকেরা শহর থেকে বার হয়ে যীশুর কাছে আসতে লাগল।
31 এরই মাঝে তাঁর শিষ্যরা তাঁকে অনুরোধ করে বললেন, “গুরু, আপনি কিছু খেয়ে নিন!”
32 কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, “আমার কাছে এমন খাবার আছে যার কথা তোমরা কিছুই জান না।”
33 তখন তাঁর শিষ্যরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “তাহলে কি কেউ তাঁকে কিছু খাবার এনে দিয়েছে?”
34 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা পালন করা ও তাঁর যে কাজ তিনি আমায় করতে দিয়েছেন তা সম্পন্ন করাই হল আমার খাবার। 35 তোমরা প্রায়ই বলে থাক, ‘আর চার মাস বাকী আছে, তারপরই ফসল কাটার সময় হবে।’ কিন্তু তোমরা চোখ মেলে একবার ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দেখ, ফসল কাটবার মতো সময় হয়েছে। 36 যে ফসল কাটছে সে এখনই তার মজুরী পাচ্ছে, আর সে তা করছে অনন্ত জীবন লাভের জন্য। তার ফলে বীজ যে বোনে আর ফসল যে কাটে উভয়েই একই সঙ্গে আনন্দিত হয়। 37 এই প্রবাদ বাক্যটি সত্য যে, ‘একজন বীজ বোনে আর অন্যজন কাটে।’ 38 আমি তোমাদের এমন ফসল কাটতে পাঠিয়েছি, যার জন্য তোমরা কোন পরিশ্রম করনি। তার জন্য অন্যরা খেটেছে আর তোমরা তাদের কাজের ফসল তুলছ।”
39 সেই শহরের অনেক শমরীয় তাঁর ওপর বিশ্বাস করল, কারণ সেই স্ত্রীলোকটি সাক্ষ্য দিচ্ছিল, “আমি যা যা করেছি সবই তিনি আমাকে বলে দিয়েছেন।” 40 শমরীয়রা তাঁর কাছে এসে যীশুকে তাদের সঙ্গে থাকতে অনুরোধ করল। তখন তিনি দুদিন সেখানে থাকলেন। 41 আরও অনেক লোক তাঁর কথা শুনে তাঁর ওপর বিশ্বাস করল।
42 তারা সেই স্ত্রীলোকটিকে বলল, “প্রথমে তোমার কথা শুনে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু এখন আমরা নিজেরা তাঁর কথা শুনে বিশ্বাস করেছি ও বুঝতে পেরেছি যে ইনি সত্যিই জগতের উদ্ধারকর্তা।”
এক রাজকর্মচারীর ছেলেকে যীশু সুস্থ করলেন
(মথি 8:5-13; লূক 7:1-10)
43 দুদিন পর তিনি সেখান থেকে গালীলে চলে গেলেন। 44 কারণ যীশু নিজেই বলেছিলেন যে একজন ভাববাদী কখনও তাঁর নিজের দেশে সম্মান পান না। 45 তাই তিনি যখন গালীলে এলেন, গালীলের লোকরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করল। জেরুশালেমে নিস্তারপর্বের সময় তিনি যা যা করেছিলেন তা তারা দেখেছিল, কারণ তারাও সেই পর্বের সময় সেখানে গিয়েছিল।
46 পরে যীশু আবার গালীলের কান্না নগরে গেলেন। এখানেই তিনি জলকে দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন। কফরনাহূম শহরে একজন রাজকর্মচারীর ছেলে খুবই অসুস্থ ছিল। 47 তিনি যখন শুনলেন যে যীশু যিহূদিয়া থেকে গালীলে এসেছেন, তখন যীশুর কাছে গিয়ে তাঁকে মিনতি করে বললেন, তিনি যেন কফরনাহূমে গিয়ে তাঁর ছেলেকে সুস্থ করেন, কারণ তাঁর ছেলে তখন মৃত্যুশয্যায় ছিল। 48 যীশু তাঁকে বললেন, “তোমরা কেউই কোন অলৌকিক চিহ্ন ও বিস্ময়কর কাজের নিদর্শন না পেলে আমার উপর বিশ্বাস করবে না।”
49 সেই রাজকর্মচারী তাঁকে বললেন, “মহাশয়, আমার ছেলেটি মারা যাবার আগে অনুগ্রহ করে আসুন!”
50 যীশু তাঁকে বললেন, “বাড়ি যাও, তোমার ছেলে বেঁচে গেল।”
যীশু তাঁকে যে কথা বললেন, সে কথা তিনি বিশ্বাস করে বাড়ি চলে গেলেন। 51 তিনি যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন তখন পথে তাঁর চাকররা তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলল, “আপনার ছেলে ভাল হয়ে গেছে।”
52 তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “সে কখন ভাল হয়েছে?”
তারা বলল, “গতকাল দুপুর একটার সময় তার জ্বর ছেড়েছে।”
53 ছেলেটির বাবা বুঝতে পারলেন যে ঠিক সেই সময়ই যীশু তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার ছেলে বাঁচল।” তখন সেই রাজকর্মচারী ও তাঁর পরিবারের সকলে যীশুর ওপর বিশ্বাস করলেন।
54 যিহূদিয়া থেকে গালীলে আসার পর যীশু এই দ্বিতীয় বার অলৌকিক কাজ করলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International