Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 বংশাবলি 10

রহবিয়ামের নির্বুদ্ধিতা

10 1-3 ইস্রায়েলের সমস্ত লোক রহবিয়ামকে নতুন রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করবার জন্য শিখিমে জমায়েত হয়েছিল, তাই রহবিয়াম সেখানে গিয়েছিলেন। নবাটের পুত্র যারবিয়াম যখন একথা শুনলেন, তিনি মিশর থেকে যেখানে তিনি রাজা শলোমনের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে ফিরে এলেন। ইস্রায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপজাতিরা তাঁকেও তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলল।

এবং তিনি ও ইস্রায়েলের সবাই রহবিয়ামের কাছে গিয়ে বললেন, “মহারাজ, আপনার পিতার জন্য আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। এখন আপনি দয়া করে সেই বোঝা কিছুটা হাল্কা করলে আমরা আপনার জন্য কাজ-কর্ম করতে পারি।”

রহবিয়াম তাদের বললেন, “তোমরা তিনদিন পরে আমার কাছে ফিরে এসো।” সুতরাং তারা তখনকার মতো চলে গেল।

তখন রাজা রহবিয়াম, তাঁর পিতার আমলে কাজ করেছেন এরকম সমস্ত প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। রহবিয়াম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা পরামর্শ দিন এখন আমি কি করব?”

প্রবীণরা তাঁকে বললেন, “আপনি যদি এই সমস্ত প্রজাদের সঙ্গে সদ্ববহার করেন এবং তাদের কষ্ট লাঘব করার ব্যবস্থা করেন তাহলে তারা চিরজীবন আপনার অনুগত হয়ে কাজ করবে।”

কিন্তু রহবিয়াম প্রবীণদের কথায় কর্ণপাত করলেন না। তার বদলে তিনি যাদের সঙ্গে বড় হয়েছিলেন সেই যুবকদের একই কথা জিজ্ঞাসা করলেন, “এই লোকদের আমি কি উত্তর দেব? ওরা আমাকে ওদের কাজের ভার কমাতে বলছে।”

10 তখন রহবিয়ামের বন্ধু ও সঙ্গীরা তাঁকে পরামর্শ দিলেন, “যেসব লোক তাদের কাজের ভার নিয়ে নালিশ করেছে, আপনি তাদের এই কথা বলুন। লোকরা আপনাকে বলছে, ‘আপনার পিতা আমাদের জীবন কঠিন করে তুলছে, এটা অত্যন্ত ভারী বোঝার মতো। কিন্তু আমরা চাই আপনি তা লঘু করুন।’ কিন্তু রহবিয়াম তাদের বলল, ‘ঐসব লোকদের ডাকুন আর বলুন, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় হয়। 11 তোমরা বলছো যে আমার পিতা নাকি তোমাদের খাটিয়ে মারছিলেন, তোমাদের ওপর বড্ড বোঝা পড়ছিল? বোঝা কাকে বলে এবার বুঝবে। আমি তোমাদের কি রকম কাজ করাই দেখো। আমার পিতা তোমাদের শুধু চাবকাতেন। আমি তোমাদের কাঁকড়া বিছে দিয়ে চাবকাবো।’”

12 তিনদিন পরে আমার কাছে রহবিয়ামের আদেশ মতো, যারবিয়াম সহ সবাই তাঁর কাছে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানতে এলো। 13 প্রবীণদের কথায় কান না দিয়ে সঙ্গীদের পরামর্শ মতো রহবিয়াম তাঁদের সঙ্গে খুব কর্কশভাবে কথা বললেন এবং 14 সঙ্গীদের উপদেশ অনুযায়ী বললেন, “আমার পিতা তোমাদের জোয়ালকে ভারী করেছিলেন, আমি তাকে আরো ভারী করব। আমার পিতা শুধু তোমাদের চাবকাতেন, কিন্তু আমি কাঁকড়া বিছে দিয়ে চাবকাবো।” 15 অর্থাৎ‌ রহবিয়াম প্রজা সাধারণের আবেদনে কোনো কর্ণপাত করলেন না। অবশ্য যাতে যারবিয়াম সম্পর্কে বলা শীলোনীয় অহিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয় তাই এসব ঘটনা প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ীঘটেছিল।

16 যখন ইস্রায়েলের লোকরা দেখল যে রাজা রহবিয়াম তাদের আবেদনে কোনই মনোযোগ দিলেন না, তখন তারা উত্তর দিল, “আমরা কি দায়ূদের বংশের অধিকারভুক্ত অথবা যিশয়ের উত্তরাধিকারে আমাদের কোন দাবী আছে? না! সুতরাং ইস্রায়েল, চল আমরা আমাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাই এবং দায়ূদের বংশ নিজেই দেখাশোনা করুক।” সুতরাং ইস্রায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপজাতি সমস্ত লোক যে যার নিজের বাড়িতে ফিরে গেল। 17 সুতরাং, যারা যিহূদা অঞ্চলে বাস করত শুধুমাত্র সেই লোকদের ওপর রহবিয়াম রাজত্ব করেছিলেন।

18 হদোরাম ক্রীতদাসদের ওপর নজরদারির কাজ করতো। যখন রহবিয়াম তাকে উত্তরাঞ্চলের উপজাতি লোকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছিলেন, তারা সকলে পাথর ছুঁড়ে হদোরামকে হত্যা করেছিল। তখন রহবিয়াম তাড়াতাড়ি নিজের রথে চড়ে জেরুশালেমে পালিয়ে গেলেন। 19 এই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের জনগোষ্ঠী দায়ূদের বংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এসেছে।

প্র.বা. 1

যোহন এই পুস্তকের সম্বন্ধে বললেন

এই হল যীশু খ্রীষ্টের বাক্য। যেসব ঘটনা খুব শীঘ্রই ঘটবে তা তাঁর দাসদের দেখানোর জন্য ঈশ্বর যীশুকে তা দিয়েছিলেন; আর খ্রীষ্ট তাঁর স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে তাঁর দাস যোহনকে তা জানালেন। যোহন যা যা দেখেছিলেন সে সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ হল সেই সত্য যা যীশু খ্রীষ্ট তাঁর কাছে বলেছিলেন—যা কেবলমাত্র ঈশ্বরের বার্তা। ধন্য সেইজন, যে এই বার্তার বাক্যগুলি পাঠ করে এবং যারা তা শোনে ও তাতে লিখিত নির্দেশগুলি পালন করে তারাও ধন্য, কারণ সময় সন্নিকট।

যোহন খ্রীষ্ট মণ্ডলীর কাছে যীশুর বার্তা লিখলেন

এশিয়া প্রদেশের[a] সাতটি খ্রীষ্ট মণ্ডলীর কাছে আমি যোহন লিখছি।

ঈশ্বর যিনি আছেন, যিনি ছিলেন ও যিনি আসছেন এবং তাঁর সিংহাসনের সম্মুখবর্তী সপ্ত আত্মা ও যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের মধ্যে নেমে আসুক। বিশ্বস্ত সাক্ষী যীশু, যিনি মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিতদের মধ্যে প্রথম এবং এই পৃথিবীর রাজাদের শাসনকর্তা,

তিনি আমাদের ভালবাসেন এবং নিজের রক্ত দিয়ে আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করেছেন। যীশু আমাদের নিয়ে এক রাজ্য গড়েছেন এবং তাঁর পিতা ঈশ্বরের সেবার জন্য আমাদের যাজক করেছেন। যীশুর মহিমা ও পরাক্রম যুগে যুগে স্থায়ী হোক্। আমেন।

দেখ, যীশু মেঘ সহকারে আসছেন। আর প্রত্যেকে তাঁকে দেখতে পাবে, এমনকি যারা তাঁকে বর্শা[b] দিয়ে বিদ্ধ করেছিল, তারাও দেখতে পাবে। তখন পৃথিবীর সকল লোক তাঁর জন্য কান্নায় ভেঙে পড়বে। হ্যাঁ, তাই ঘটবে! আমেন।

প্রভু ঈশ্বর বলেন, “আমিই আল‌্ফা ও ওমেগা।[c] আমিই সেই সর্বশক্তিমান। আমিই সেই জন যিনি আছেন, যিনি ছিলেন এবং যিনি আসছেন।”

আমি যোহন, খ্রীষ্টেতে তোমাদের ভাই। আমরা একসাথে যীশুতে রয়েছি এবং আমরা কয়েকটি ব্যাপারে পরস্পরের সহভাগী: দুঃখ-কষ্ট, রাজ্য, ও সহ্য করবার ধৈর্য্য। আমি পাটম্[d] দ্বীপে ছিলাম কারণ আমি ঈশ্বরের বাক্য এবং যীশুর প্রকাশিত সত্য প্রচার করেছিলাম। 10 আমি প্রভুর দিনে আত্মাবিষ্ট হলাম; আর পেছন থেকে এক উচ্চস্বর শুনতে পেলাম। মনে হল তূরীধ্বনি হচ্ছে। 11 ঘোষিত হল, “তুমি যা দেখছ তা একটি পুস্তকে লেখ, আর ইফিষ, স্মুর্ণা, পর্গাম, থুয়াতীরা, সার্দ্দি, ফিলাদিলফিয়া ও লায়দিকেয়া এই সাতটি মণ্ডলীর কাছে তা পাঠিয়ে দাও।”

12 আমার সঙ্গে কে কথা বলছেন তা দেখার জন্য আমি পেছন ফিরে তাকালাম এবং দেখলাম, সাতটি সুবর্ণ দীপাধার। 13 সেই দীপাধারগুলির মাঝখানে দাঁড়িয়ে, “মানবপুত্রের মতন একজন।” পরণে তাঁর লম্বা পোশাক, আর বুকে জড়ানো সোনালী কটিবন্ধ। 14 তাঁর মাথা ও চুল ছিল পশমের মত—যে পশম তুষারের মত শুভ্র; তাঁর চোখ ছিল আগুনের শিখার মতো। 15 তাঁর পা যেন আগুনে পোড়ানো উজ্জ্বল পিতল, বন্যার জল কল্লোলের মতো তাঁর কন্ঠস্বর। 16 তাঁর ডান হাতে সাতটি তারা, তাঁর মুখ থেকে নিঃসৃত হচ্ছিল এক তীক্ষ্ণ দ্বিধারযুক্ত তরবারি। পূর্ণ তেজে জ্বলন্ত সূর্যের মত তাঁর রূপ।

17 তাঁকে দেখে আমি মুর্চ্ছিত হয়ে তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়লাম। তখন তিনি আমার গায়ে তাঁর ডান হাত রেখে বললেন, “ভয় করো না! আমি প্রথম ও শেষ। 18 আমি সেই চির জীবন্ত, আমি মরেছিলাম, আর দেখ আমি চিরকাল যুগে যুগে জীবিত আছি। মৃত্যু ও পাতালের[e] চাবিগুলি আমি ধরে আছি। 19 তাই তুমি যা যা দেখলে, যা যা এখন ঘটছে আর এরপর যা ঘটবে তা লিখে নাও। 20 আমার ডানহাতে যে সাতটি তারা ও সাতটি সুবর্ণ দীপাধার দেখলে তাদের গুপ্ত অর্থ হচ্ছে এই-সাতটি তারা ঐ সাতটি মণ্ডলীর স্বর্গদূত আর সেই সাতটি দীপাধারের অর্থ সেই সাতটি মণ্ডলী।

সফনিয় 2

ঈশ্বর লোককে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে বলছেন

ওহে নির্লজ্জ লোকেরা, খড় যেমন একদিনের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায় তোমরা সেরকম হওয়ার আগে, প্রভুর ক্রোধাগ্নি তোমাদের ওপর পড়ার আগে, প্রভুর ক্রোধের দিন তোমাদের ওপর এসে পড়ার আগে, তোমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্ত্তন কর! সমস্ত লোকেরা, তোমরা যারা বিনয়ী, তারা প্রভুর কাছে এসো। তোমরা সকলে তাঁর আদেশ পালন করো।

প্রভু ইস্রায়েলের প্রতিবেশীদের শাস্তি দেবেন

কেউ গাজাতে পড়ে থাকবে না। অস্কিলোন ধ্বংস হবে। দুপুরের মধ্যে জনসাধারণকে অস্‌দোদ ছাড়ার জন্য বল প্রয়োগ করা হবে। ইক্রোণ খালি হয়ে যাবে! সমুদ্রের নিকট বসবাসকারী পলেষ্টীয়দের জন্য প্রভুর এই বার্তা। কনান, পলেষ্টীয়দের দেশ, ধ্বংস করা হবে। কোন লোক সেখানে বাস করবে না! মেষপালক ও তাদের মেষের জন্য সমুদ্রের ধারে তোমাদের দেশ শূন্য মাঠ হয়ে যাবে। তখন সেই জায়গাটি যিহূদা থেকে জীবিত অবস্থায় পালিয়ে আসা লোকেদের অধিকারে আসবে। যিহূদা থেকে আসা ঐ লোকদের প্রভু স্মরণ করবেন। তারা একটি বিদেশে কয়েদী হয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রভু তাদের ফিরিয়ে আনবেন। তখন ঐসব মাঠে যিহূদাবাসীরা তাদের মেষদের ঘাস খাওয়াবে। সন্ধ্যেবেলায়, তারা অস্কিলোনের খালি বাড়ীগুলোয় শুয়ে পড়বে।

প্রভু বলেছেন, “মোয়াব এবং অম্মোনবাসীরা কি করেছে তা আমি জানি। ঐ লোকরা আমার লোকজনদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। ঐ লোকরা তাদের নিজের দেশকে বাড়াবার জন্য তাদের জমি নিয়েছে। অতএব, আমি আমার নামে শপথ করে বলছি যে, সদোম এবং ঘমোরার মতো মোয়াব এবং অম্মোনবাসীরা ধ্বংস হবে। আমিই প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এবং আমি প্রতিশ্রুতি করেছি যে চিরকালের জন্য ঐ দেশগুলিকে ধ্বংস করব। ঐ দেশগুলি কাঁটায় ভরে যাবে। তাদের দেশ একটি লবণের গহবরে পরিনত হবে। জীবিত অবস্থায় পালিয়ে আসা আমার লোকেরা সেই দেশটাকে এবং যেসব সম্পদ তার মধ্যে রয়ে গেছে তাও নিয়ে নেবে।”

10 মোয়াব এবং অম্মোনে এগুলি ঘটবে কারণ তারা ছিল গর্বিত এবং সর্বশক্তিমান প্রভুর লোকেদের প্রতি নিষ্ঠুর এবং তাদের অপমান করেছিল। 11 ঐসব লোকেরা প্রভুর ভয়ে ভীত হবে। কেন? কারণ প্রভু তাদের মূর্ত্তিগুলিকে ধ্বংস করবেন। তখন দূর দেশের লোকেরাও প্রভুর উপাসনা করবে। 12 ওহে কূশীয়রা, এই হবে তোমাদের পরিনতি। প্রভুর তরবারি তোমার লোকেদের জীবন নাশ করবে। 13 প্রভু উত্তরে ঘুরে যাবেন এবং অশূরকে শাস্তি দেবেন। তিনি নীনবীকে ধ্বংস করবেন—সেই শহরটি শূন্য এবং শুকনো মরুভূমির মতো হয়ে যাবে। 14 তখন কেবল মেষ এবং বন্য প্রাণীরা ঐ বিধ্বস্ত শহরে বাস করবে। যে স্তম্ভগুলি দাঁড়িয়ে আছে সেগুলির উপর পেঁচা ও কাকেরা বসবে। কালো পাখীরা ঐ খালি বাড়িগুলিতে বসবে। 15 নীনবী এখন খুব গর্বিত। এটি একটি সুখী নগর। নগরের জনসাধারণ ভাবছে তারা নিরাপদে আছে। তারা ভাবছে, পৃথিবীর মধ্যে নীনবীই হচ্ছে সেই মহান জায়গা। কিন্তু এই দেশটি ধ্বংস হবে। নগরটি এমন একটি খালি জায়গা হয়ে যাবে যেখানে বন্য প্রাণীরাই বিশ্রাম নিতে যায়। লোকেরা যারা ঐ জায়গা দিয়ে যাবে তারা যখন দেখতে পাবে কি বিশ্রীভাবে ঐ শহরটি ধ্বংস হয়েছিল তখন তারা শিষ দেবে আর অবাক হয়ে মাথা নাড়াবে।

লূক 24

যীশুর পুনরুত্থানের সংবাদ

(মথি 28:1-10; মার্ক 16:1-8; যোহন 20:1-10)

24 সপ্তাহের প্রথম দিন, সেই স্ত্রীলোকরা খুব ভোরে ঐ সমাধিস্থলে এলেন। তাঁরা যে গন্ধদ্রব্য ও মশলা তৈরী করেছিলেন তা সঙ্গে আনলেন। তাঁরা দেখলেন সমাধিগুহার মুখ থেকে পাথরখানা একপাশে গড়িয়ে দেওয়া আছে; কিন্তু ভেতরে ঢুকে সেখানে প্রভু যীশুর দেহ দেখতে পেলেন না। তাঁরা যখন অবাক বিস্ময়ে সেই কথা ভাবছেন, সেই সময় উজ্জ্বল পোশাক পরে দুজন ব্যক্তি হঠাৎ‌ এসে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন। ভয়ে তাঁরা মুখ নীচু করে নতজানু হয়ে রইলেন। ঐ দুজন তাঁদের বললেন, “যিনি জীবিত, তোমরা তাঁকে মৃতদের মাঝে খুঁজছ কেন? তিনি এখানে নেই, তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন। তিনি যখন গালীলে ছিলেন তখন তোমাদের কি বলেছিলেন মনে করে দেখ।” তিনি বলেছিলেন, “মানবপুত্রকে অবশ্যই পাপী মানুষদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হবে; আর তিন দিনের দিন তিনি আবার মৃত্যুর মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।” তখন যীশুর সব কথা তাঁদের মনে পড়ে গেল।

তারপর তাঁরা সমাধিগুহা থেকে ফিরে এসে সেই এগারো জন প্রেরিতকে ও তাঁর অনুগামীদের এই ঘটনার কথা জানালেন। 10 এই স্ত্রীলোকরা হলেন মরিয়ম মগ্দলীনী, যোহানা আর যাকোবের মা মরিয়ম। তাঁদের সঙ্গে আরো কয়েকজন এইসব ঘটনা প্রেরিতদের জানালেন। 11 কিন্তু প্রেরিতদের কাছে সে সব প্রলাপ বলে মনে হল, তাঁরা সেই স্ত্রীলোকদের কথা বিশ্বাস করলেন না। 12 কিন্তু পিতর উঠে দৌড়ে সমাধিগুহার কাছে গেলেন। তিনি নীচু হয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখলেন, কেবল যীশুর দেহে জড়ানো কাপড়গুলো সেখানে পড়ে আছে; আর যা ঘটেছে তাতে আশ্চর্য হয়ে ঘরে ফিরে গেলেন।

ইম্মায়ুর পথে

(মার্ক 16:12-13)

13 ঐ দিনই দুজন অনুগামী জেরুশালেম থেকে সাত মাইল দূরে ইম্মায়ু নামে একটি গ্রামে যাচ্ছিলেন। 14 এই যে সব ঘটনাগুলি ঘটে গেল, যেতে যেতে তাঁরা সে বিষয়েই পরস্পর আলোচনা করছিলেন। 15 তাঁরা যখন এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন, এমন সময় যীশু নিজে এসে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলেন। 16 (ঘটনাটি এমনভাবেই ঘটল যাতে তাঁরা যীশুকে চিনতে না পারেন।) 17 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা যেতে যেতে পরস্পর কি নিয়ে আলোচনা করছ?”

তাঁরা থমকে দাঁড়ালেন, তাঁদের খুবই বিষন্ন দেখাচ্ছিল। 18 তাঁদের মধ্যে ক্লিয়পা নামে একজন তাঁকে বললেন, “জেরুশালেমের অধিবাসীদের মধ্যে আমাদের মনে হয় আপনিই একমাত্র লোক, যিনি জানেন না গত কদিনে সেখানে কি কাণ্ডটাই না ঘটে গেছে।”

19 যীশু তাঁদের বললেন, “কি ঘটেছে, তোমরা কিসের কথা বলছ?”

তাঁরা যীশুকে বললেন, “নাসরতীয় যীশুর বিষয়ে বলছি। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি তাঁর কথা ও কাজের শক্তিতে ঈশ্বর ও সমস্ত মানুষের চোখে নিজেকে এক মহান ভাববাদীরূপে প্রমাণ করেছেন। 20 কিন্তু আমাদের প্রধান যাজকরা ও নেতারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য ধরিয়ে দিল, তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারল। 21 আমরা আশা করেছিলাম যে তিনিই সেই যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন।

“কেবল তাই নয়, আজ তিন দিন হল এসব ঘটে গেছে। 22 আবার আমাদের মধ্যে কয়েকজন স্ত্রীলোক আমাদের অবাক করে দিলেন। তাঁরা আজ খুব ভোরে সমাধির কাছে গিয়েছিলেন; 23 কিন্তু সেখানে তাঁরা যীশুর দেহ দেখতে পান নি। সেখান থেকে ফিরে এসে তাঁরা আমাদের বললেন যে তাঁরা স্বর্গদূতদের দর্শন পেয়েছেন, আর সেই স্বর্গদূতরা তাঁদের বলেছেন যে যীশু জীবিত। 24 এরপর আমাদের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন সেই সমাধির কাছে গিয়েছিলেন; আর তাঁরা দেখলেন স্ত্রীলোকরা যা বলেছেন তা সত্য। তাঁরা যীশুকে সেখানে দেখতে পান নি।”

25 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা সত্যি কিছু বোঝ না, তোমাদের মন বড়ই অসাড়, তাই ভাববাদীরা যা কিছু বলে গেছেন তোমরা তা বিশ্বাস করতে পার না। 26 খ্রীষ্টের মহিমায় প্রবেশ লাভের পূর্বে কি তাঁর এইসব কষ্টভোগ করার একান্ত প্রয়োজন ছিল না?” 27 আর তিনি মোশির পুস্তক থেকে শুরু করে ভাববাদীদের পুস্তকে তাঁর বিষয়ে যা যা লেখা আছে, শাস্ত্রের সে সব কথা তাঁদের বুঝিয়ে দিলেন।

28 তাঁরা যে গ্রামে যাচ্ছিলেন তার কাছাকাছি এলে পর যীশু আরো দূরে যাবার ভাব দেখালেন। 29 তখন তাঁরা যীশুকে খুব অনুরোধ করে বললেন, “দেখুন, বেলা পড়ে গেছে, এখন সন্ধ্যা হয়ে এল, আপনি আমাদের এখানে থেকে যান।” তাই তিনি তাঁদের সঙ্গে থাকবার জন্য ভেতরে গেলেন।

30 তিনি যখন তাঁদের সঙ্গে খেতে বসলেন, তখন রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। পরে সেই রুটি টুকরো টুকরো করে তাঁদের দিলেন। 31 সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চোখ খুলে গেল, তাঁরা যীশুকে চিনতে পারলেন, আর তিনি সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। 32 তখন তাঁরা পরস্পর বলাবলি করলেন, “তিনি যখন রাস্তায় আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ও শাস্ত্র থেকে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আমাদের অন্তর কি আবেগে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে নি?”

33 তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে উঠে জেরুশালেমে গেলেন। সেখানে তাঁরা সেই এগারোজন প্রেরিত ও তাঁদের সঙ্গে আরো অনেককে দেখতে পেলেন। 34 প্রেরিত ও অন্যান্য যাঁরা সেখানে ছিলেন তাঁরা বললেন, “প্রভু, সত্যি জীবিত হয়ে উঠেছেন। তিনি শিমোনকে দেখা দিয়েছেন।”

35 তখন সেই দুজন অনুগামীও রাস্তায় যা ঘটেছিল তা তাঁদের কাছে ব্যক্ত করলেন। আর যীশু যখন রুটি টুকরো টুকরো করছিলেন তখন কিভাবে তাঁরা তাঁকে চিনতে পারলেন তাও জানালেন।

অনুগামীদের সামনে যীশুর আবির্ভাব

(মথি 28:16-20; মার্ক 16:14-18; যোহন 20:19-23; প্রেরিত 1:6-8)

36 তাঁরা যখন এসব কথা তাদের বলছেন, এমন সময় যীশু তাঁদের মাঝে এসে দাঁড়ালেন আর বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক্!”

37 কিন্তু তাঁরা ভয়ে চমকে উঠলেন। তাঁরা মনে করলেন বোধ হয় কোন ভূত দেখছেন। 38 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা এত অস্থির হচ্ছ কেন? আর তোমাদের মনে সন্দেহই বা জাগছে কেন? 39 আমার হাত ও পা দেখ, আমায় স্পর্শ করে দেখ, আত্মার এইরূপ হাড় মাংস থাকে না, কিন্তু তোমরা দেখতে পাচ্ছ আমার আছে।”

40 এই কথা বলে তিনি তাঁদের হাত ও পা দেখালেন। 41 তাঁদের এতই আনন্দ হয়েছিল যে তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাঁরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কিছু খাবার আছে কি?” 42 তাঁরা তাঁকে এক টুকরো ভাজা মাছ দিলেন। 43 তিনি সেটি নিয়ে তাঁদের সামনে গেলেন।

44 তিনি তাঁদের বললেন, “আমি যখন তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখনই তোমাদের এসব কথা বলেছিলাম, আমার সম্বন্ধে মোশির বিধি-ব্যবস্থায়, ভাববাদীদের পুস্তকে ও গীতসংহিতায় যা কিছু লেখা হয়েছে তা পূর্ণ হতেই হবে।”

45 এরপর তিনি তাঁদের বুদ্ধি খুলে দিলেন, যেন তাঁরা শাস্ত্রের কথা বুঝতে পারেন। 46 যীশু তাঁদের বললেন, “একথা লেখা আছে, খ্রীষ্টকে অবশ্যই কষ্ট ভোগ করতে হবে, আর তিনি মৃত্যুর তিন দিনের দিন মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন। 47-48 এবং পাপের জন্য অনুশোচনা ও পাপের ক্ষমার কথা অবশ্যই সমস্ত জাতির কাছে ঘোষণা করা হবে। জেরুশালেম থেকেই একাজ শুরু হবে আর তোমরাই এসবের সাক্ষী। 49 আমার পিতা যা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব; কিন্তু তোমরা যে পর্যন্ত না উর্দ্ধ থেকে আসা শক্তি পরিধান করছ, সেই পর্যন্ত এই শহরেই থাক।”

যীশুর স্বর্গে প্রত্যাবর্তন

(মার্ক 16:19-20; প্রেরিত 1:9-11)

50 এরপর যীশু তাঁদের বৈথনিয়া পর্যন্ত নিয়ে গেলেন এবং হাত তুলে তাদের আশীর্বাদ করলেন। 51 তিনি আশীর্বাদ করতে করতে তাঁদের ছেড়ে আকাশে উঠে যেতে লাগলেন আর স্বর্গে উন্নীত হলেন। 52 শিষ্যরা যীশুকে প্রণাম জানিয়ে মহানন্দের সঙ্গে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 53 আর সর্বক্ষণ মন্দিরে উপস্থিত থেকে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International