Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 বংশাবলি 8

শলোমনের তৈরী করা শহর

প্রভুর মন্দির ও নিজের রাজপ্রাসাদ বানাতে শলোমনের 20 বছর সময় লেগেছিল। এরপর হূরম তাঁকে যে শহরগুলো দিয়েছিলেন শলোমন সেগুলির সংস্কার করেন। ইস্রায়েলের বেশ কিছু লোককে তিনি ঐ সমস্ত শহরে বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি সোবাতের হমাৎ দখল করেন। তিনি মরু অঞ্চলে তদ্মোর শহরটি এবং হমাতে গুদাম শহরগুলিও বানিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি শক্তিশালী দূর্গ হিসেবে ঊর্দ্ধ বৈৎ‌-হোরোণ ও নিথ বৈৎ‌-হোরোণের শহরগুলো দেওয়াল ও ফটক সহ হুড়কো লাগিয়ে তৈরী করেছিলেন। জিনিসপত্র মজুত রাখার জন্য বালৎ সহ আরো কয়েকটি শহর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। রথ রাখার জন্য ও অশ্বারোহী সারথীদের বসবাসের জন্যও তাঁকে বেশ কিছু শহর বানাতে হয়েছিল। জেরুশালেমে লিবানোন সহ তাঁর সমগ্র রাজ্যে শলোমন যা কিছু বানাতে চেয়েছিলেন সবই বানিয়েছিলেন।

7-8 হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের সমস্ত উত্তরপুরুষরা এরা ইস্রায়েলীয় ছিল না। যাদের ইস্রায়েলীয়রা যিহোশূযার জয়যাত্রার সময় ধ্বংস করেনি তারা শলোমন দ্বারা ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা আজও তাই করে। এরা সকলেই ছিল ইস্রায়েলীয়দের ধ্বংস করা অন্যান্য শত্রু রাজ্যের বাসিন্দাদের উত্তরপুরুষ। কিন্তু শলোমন কোন ইস্রায়েলীয়কে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেননি। ইস্রায়েলীয়রা সকলেই ছিল তাঁর যোদ্ধা এবং তাঁর আধিকারিক যারা তাঁর রথবাহিনী ও অশ্বারোহী সৈনিকদের চালনা করতেন। 10 কেউ কেউ ছিলেন শলোমনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের আধিকারিক অথবা নেতা। 250 জন নেতা এই সমস্ত লোকদের তত্ত্বাবধান করতেন।

11 শলোমন দায়ূদ নগর থেকে ফরৌণের কন্যাকে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাকে তার জন্য বানানো এক সুন্দর বাড়িতে রেখেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমার স্ত্রী, ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের প্রাসাদে থাকবে না কারণ, সমস্ত জায়গাগুলো যেখানে যেখানে সাক্ষ্যসিন্দুকটি রাখা ছিল সেগুলো অতি পবিত্র জায়গা।”

12 এরপর শলোমন মন্দিরের সামনের দালানে প্রভুর জন্য তাঁর বানানো বেদীতে প্রভুকে হোমবলি নিবেদন করলেন। 13 মোশির আদেশ মতোই শলোমন প্রত্যেক দিন বলিদান করা ছাড়াও বিশ্রামের দিন, অমাবস্যায় ও তিনটে বাৎসরিক ছুটির দিনে নিয়মিত বলি উৎসর্গ করতেন। এই তিনটে বাত্‌সরিক ছুটির দিন হল খামিরবিহীন রুটির উৎসবের দিন, সাত সপ্তাহের উৎসবের দিন ও কুটিরবাস পর্বের দিন। 14 তাঁর পিতা রাজা দায়ূদের নির্দেশ মতোই তিনি মন্দিরের কাজকর্মের জন্য যাজক ও লেবীয়দের দলভাগ করে দিয়েছিলেন। লেবীয়রা মন্দিরের নিত্য নৈমিত্তিক কাজকর্মে যাজকদের সহায়তা করতেন। এছাড়াও মন্দিরের প্রত্যেকটি ফটকের জন্য শলোমন দ্বাররক্ষীদের দলও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। 15 ইস্রায়েলীয়রা কখনও যাজক ও লেবীয় সংক্রান্ত শলোমনের দেওয়া কোনো নির্দেশ অমান্য বা তার কোনো পরিবর্তন করেননি। এমনকি দুর্মূল্য জিনিসপত্র রাখার ব্যাপারেও তাঁরা শলোমনের বিধান মেনে নিয়েছিলেন।

16 প্রভুর মন্দিরের ভিত্তিস্থাপনের দিন থেকে সেটি শেষ হওয়া পর্যন্ত, শলোমনের সব কাজ তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়।

17 এরপর শলোমন লোহিত সাগরের তীরস্থ ইদোমের ইৎ‌সিয়োন গেবরে ও এলতে যান। 18 হূরম সেখানে তাঁর নিজস্ব দক্ষ নাবিকদের দ্বারা পরিচালিত জাহাজ পাঠান। শলোমনের দাসরা এদের সঙ্গে ওফীরে গিয়ে তাঁর জন্য 17 টন সোনা নিয়ে এসেছিল।

3 যোহন

আমার প্রিয় বন্ধু গায়েরকে, যাকে আমি সত্যে ভালবাসি, তার প্রতি এই প্রাচীনের পত্র।

প্রিয় বন্ধু, আমি জানি তুমি আত্মিকভাবে ভাল আছ; আর তাই আমি প্রার্থনা করি যেন তোমার সবকিছু ভালভাবে চলে এবং তুমি সুস্থ থাক। আমি খুব খুশী হলাম, কারণ আমাদের ভাইদের মধ্যে কয়েকজন এসে, তুমি যে সত্য ধরে রয়েছ ও যে সত্য পথে চলেছ সে বিষয়ে জানাল। আমার সন্তানরা যে সত্যের পথে চলছে, এই খবর শুনে আমার যে আনন্দ হয়, এর থেকে বেশী আনন্দ আমার আর কিছুতে হয় না।

প্রিয় বন্ধু, আমাদের ভাইদের, এমন কি যারা অপরিচিত, তাদের সকলকে তুমি যে সাহায্য করে থাক এ অতি উত্তম। তাঁদের প্রতি তোমার ভালবাসার কথা তাঁরা এখানকার মণ্ডলীর সকলকে বলেছেন। তাঁদের যাত্রা পথে সাহায্য করলে তুমি ভালোই করবে। এমনভাবে সাহায্য করো যেন ঈশ্বর খুশী হন, কারণ তাঁরা খ্রীষ্টের পরিচর্যার উদ্দেশ্যেই যাত্রা শুরু করেছেন; আর তাঁরা এর জন্য যাঁরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী নয় তাদের কাছ থেকে কিছুই গ্রহণ করেন না। তাই এই ধরণের লোকদের সাহায্য করতে আমরা বাধ্য, যেন আমরা সত্যের পক্ষে সহকর্মীরূপে কাজ করি।

আমি মণ্ডলীকে চিঠি লিখলাম; কিন্তু সেই দিয়ত্রিফি, যে তাদের নেতা হতে চায়, সে আমাদের কথা গ্রাহ্য করে না। 10 এই কারণে আমি ওখানে গেলে সে কি করছে তা প্রকাশ করব। সে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাবে মন্দ কথা বলে, কিন্তু এতেও সে খুশী নয়। এছাড়া ভাইদের সে স্বাগত জানাতে অস্বীকার করে। এমনকি যারা সেই ভাইদের সাহায্য করতে চায়, দিয়ত্রিফি তাদের সাহায্য করতে দেয় না, বরং তাদের মণ্ডলী থেকে বাইরে বার করে দেয়।

11 প্রিয় বন্ধু, যা কিছু মন্দ তার অনুকরণ করো না, কিন্তু যা কিছু ভাল তার অনুকরণ করো। যে ভাল কাজ করে সে ঈশ্বরের লোক, যে মন্দ কাজ করে সে ঈশ্বরকে দেখে নি।

12 সকলেই দীমীত্রিয়ের উচ্চ প্রশংসা করে, এমনকি সত্যও তার সাক্ষী, আমরাও সেই একই কথা বলব। তুমি জান যে আমরা যা বলি তা সত্য।

13 তোমাকে লেখবার অনেক কথাই আমার ছিল; কিন্তু কালি কলমে তা লিখতে ইচ্ছা করে না। 14 আশা করি শিগ্গিরই তোমাকে দেখব, তখন আমরা সামনা-সামনি কথাবার্তা বলব। 15 তোমার শান্তি হোক্। তোমার সব বন্ধুরা তোমায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমাদের বন্ধুদের প্রত্যেককে শুভেচ্ছা জানিও।

হবক‌্কূক 3

হবক‌্কূকের প্রার্থনা

শিগিয়োনোতের ওপর ভাববাদী হবক‌্কূকের একটি প্রার্থনা।

প্রভু, আমি আপনার সম্বন্ধে শুনেছি।
    প্রভু, অতীতে আপনি যে শক্তিশালী কাজগুলো করেছেন তার সম্বন্ধে আমি অভিভূত হয়ে গেছি।
এখন আমার প্রার্থনা এই যে, আপনি আমাদের এই সময়েও মহৎ‌‌ কাজ করুন।
    অনুগ্রহ করে আমাদের এই বর্তমান কালেও আপনি ঐ কাজগুলো করুন।
কিন্তু আপনার কাজের উত্তেজনার মধ্যে আমাদের কৃপা করবার কথাও মনে রাখবেন।

ঈশ্বর তৈমন পর্বত থেকে আসছেন।
    সেই পবিত্র জন পারণ পর্বত থেকে আসছেন।

প্রভুর মহিমা স্বর্গকে আচ্ছাদন করে।
    তাঁর প্রশংসায় পৃথিবী পূর্ণ হয়।
তাঁর হাত থেকে তীব্র, উজ্জ্বল আলোর রশ্মির ছটা বেরিয়ে আসছে।
    সেই হাতের মধ্যে এক রকম ক্ষমতাও লুকিয়ে রয়েছে।
মহামারী তাঁর আগে আগে চলেছে
    এবং ধ্বংসকারীরা তাঁর পিছনে অনুসরণ করছে।
প্রভু দাঁড়িয়ে পৃথিবীর বিচার করলেন।
    তিনি সমস্ত জাতির লোকদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন
    এবং তাদের ভয়ে শিহরিত করলেন।
বহু বছর ধরে যে পর্বতগুলো দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিল
    তারা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছে।
বহু পুরানো পুরানো পাহাড়গুলো পড়ে গেল।
ঈশ্বর সব সময় এই রকমই।

আমি কুশন শহরগুলিকে বিপত্তির মধ্যে দেখেছিলাম।
    মিদিয়নের দেশটি ভয়ে কাঁপছিল।
প্রভু, আপনি কি নদীগুলির উপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন?
    জলস্রোতের ওপর আপনি কি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন?
সমুদ্রের প্রতি আপনি কি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন?
    আপনি যখন ঘোড়া এবং রথের ওপর চড়ে জয়ী হয়েছিলেন তখন আপনি কি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন?

আপনি আপনার কোষ থেকে ধনুক বার করেন।
    সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আপনি আপনার তীর ব্যবহার করেন।

নদী দ্বারা আপনি পৃথিবী বিভক্ত করেন।
10     পাহাড়গুলো আপনাকে দেখেছিল এবং কেঁপে উঠেছিল।
জল জমির ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল।
    সমুদ্রের জল গর্জন করেছিল
    যেন সে জমির ওপর তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
11 সূর্য এবং চন্দ্র তাদের উজ্জ্বলতা হারিয়েছিল।
    তারা যখন বিদ্যুতের উজ্জ্বল ঝলক দেখেছিল, তখন তারা তাদের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলেছিল।
    সেই বিদ্যুতের ছটা বাতাসের মধ্যে ছুঁড়ে দেওয়া বল্লম এবং তীরের মতো দেখাচ্ছিল।
12 ক্রুদ্ধ হয়ে আপনি পৃথিবীর ওপর দুর্বার ভাবে হেঁটেছিলেন
    এবং জাতিগণকে শাস্তি দিয়েছিলেন।
13 আপনি আপনার লোকদের রক্ষা করার জন্য এসেছেন।
    আপনি আপনার মনোনীত রাজাকে জয়ের জন্য নেতৃত্ব দিতে এসেছেন।
আপনি দেশের নগণ্যতম ব্যক্তি থেকে
    সবচেয়ে গন্যমান্য ব্যক্তি পর্যন্ত
    প্রত্যেক দুষ্ট পরিবারের নেতাকে হত্যা করেছেন।

14 আপনি সৈন্যদের মস্তক
    তাদের নিজেদের তীর দ্বারা বিদ্ধ করেছিলেন,
যারা ঘূর্ণিঝড়ের মত উড়ে এসেছিল
    আমাদের ছিন্নভিন্ন করার জন্য।
কেউ যেমন একটি দরিদ্র ব্যক্তিকে গোপনে খেয়ে ফেলে, ঠিক যেমন একটি বন্য জন্তু তার গুহায় করে,
    আপনি সেইভাবে উৎসব উদ্‌যাপন করলেন।
15 কিন্তু আপনার ঘোড়াগুলো গভীর জলের মধ্যে
    আলোড়িত করে ছুটে গিয়েছিল।
16 আমি এই গল্প শুনে খুব উত্তেজিত হয়েছিলাম।
    আমি জোরে শিস্ দিয়েছিলাম!
আমি আমার হাড়ের মধ্যে দুর্বলতা অনুভব করেছিলাম।
    আমি সেখানে কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়েছিলাম।
তাই ধ্বংসের দিনের জন্য আমি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করব,
    যখন তারা লোকদের আক্রমণ করবে।

সর্বদা প্রভুতে আনন্দ করো

17 হয়তো ডুমুর গাছে ডুমুর বৃদ্ধি পাবে না।
    দ্রাক্ষাগাছে দ্রাক্ষা হবে না।
জলপাইগাছে জলপাই জন্মাবে না।
    মাঠে শস্য হবে না।
খোঁয়াড়গুলোতে হয়তো কোন মেষ থাকবে না।
    কোন গবাদি পশু হয়তো গোলাবাড়ীগুলোতে থাকবে না।
18 কিন্তু আমি তবু প্রভুতে আনন্দ করব।
    যে ঈশ্বর আমার পরিত্রাতা, আমি তাতে আনন্দ করবো।

19 প্রভু, আমার সদাপ্রভু, আমাকে শক্তি দেন।
    হরিণের মতো দ্রুত দৌড়বার জন্য তিনি আমাকে সাহায্য করেন।
    তিনি আমাকে পাহাড়ের ওপরে নিরাপদে চালনা করেন।

সঙ্গীত পরিচালকের প্রতি, আমার তারবাদ্যে।

লূক 22

ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যা করতে চাইল

(মথি 26:1-5, 14-16; মার্ক 14:1-2, 10-11; যোহন 11:45-53)

22 সেই সময় খামিরবিহীন রুটির পর্ব এগিয়ে এলো, এই পর্বকে নিস্তারপর্ব বলা হত। এদিকে প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে হত্যা করার উপায় খুঁজতে লাগল, কারণ তারা লোকদের ভয় করত।

যীশুর বিরুদ্ধে যিহূদার ষড়যন্ত্র

(মথি 26:14-16; মার্ক 14:10-11)

এই সময় যিহূদা, যে ছিল বারো জন প্রেরিতের মধ্যে একজন, যাকে যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয় বলা হত, তার অন্তরে শয়তান ঢুকল। যিহূদা কেমন করে যীশুকে ধরিয়ে দেবে সে বিষয়ে পরামর্শ করতে প্রধান যাজকদের ও মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের কাছে গেল। তারা যিহূদার কথা শুনে খুবই খুশী হয়ে তাকে এর জন্য টাকা দিতে রাজী হল। যিহূদাও সম্মত হয়ে যখন লোকের ভীড় থাকবে না সেই সময় যীশুকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।

নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন

(মথি 26:17-25; মার্ক 14:12-21; যোহন 13:21-30)

এরপর খামিরবিহীন রুটির দিন এল, যে দিনে নিস্তারপর্বের মেষ বলি দিতে হত। তাই যীশু পিতর ও যোহনকে বললেন, “যাও, আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত কর, যেন আমরা তা গিয়ে খেতে পারি।”

তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কোথায় চান, আমরা কোথায় তা প্রস্তুত করব?”

10 যীশু তাঁদের বললেন, “শোন! তোমরা শহরে ঢোকার মুখেই দেখতে পাবে একজন লোক এক কলসী জল নিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে পেছনে গিয়ে সে যে বাড়িতে ঢুকবে, 11 সেই বাড়ির মালিককে বলবে, ‘গুরু বলেছেন, আপনার সেই অতিথিঘর কোনটা, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি।’ 12 তখন সেই লোকটি তোমাদের ওপর তলার একটি বড় সাজানো ঘর দেখিয়ে দেবে। তোমরা সেখানেই আয়োজন করো।”

13 যীশু যেমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সেরকমই দেখতে পেলেন আর নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।

প্রভুর ভোজ

(মথি 26:26-30; মার্ক 14:22-26; 1 করিন্থীয় 11:23-25)

14 তারপর সময় হলে যীশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে এলেন। 15 তিনি তাঁদের বললেন, “আমার কষ্টভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে আমি খুবই ইচ্ছা করেছি। 16 কারণ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না ঈশ্বরের রাজ্যে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত আমি এই ভোজ আর খাবো না।”

17 এরপর তিনি দ্রাক্ষারসের পেয়ালা হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “এই নাও, নিজেদের মধ্যে এটা ভাগ করে নাও। 18 কারণ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্য না আসা পর্যন্ত আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না।”

19 এরপর তিনি রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তা খণ্ড খণ্ড করলেন, আর তা প্রেরিতদের দিয়ে বললেন, “এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া হল। আমার স্মরনার্থে তোমরা এটা করো।” 20 খাবার পর সেইভাবে দ্রাক্ষারসের পেয়ালা নিয়ে বললেন, “আমার রক্তের মাধ্যমে মানুষের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া যে নতুন নিয়ম শুরু হল। এই পানপাত্রটি তারই চিহ্ন। এই রক্ত তোমাদের সকলের জন্য পাতিত হল।”

কে যীশুর বিরুদ্ধে যাবে?

21 “কিন্তু দেখ! যে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার সঙ্গে এই টেবিলের ওপরেই আছে। 22 কারণ যেমন নির্ধারিত হয়েছে সেই অনুসারেই মানবপুত্রকে মরতে হবে, কিন্তু ধিক্ সেই লোককে যে তাঁকে ধরিয়ে দেবে।”

23 তাঁরা নিজেদের মধ্যে তখন একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “আমাদের মধ্যে কে এমন লোক হতে পারে, যে এই কাজ করবে?”

দাসের মতো হও

24 সেই সময় তাঁদের মধ্যে কাকে সব থেকে বড় বলা হবে, এই নিয়ে তর্ক শুরু হল। 25 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “অইহুদীদের মধ্যেই রাজারা তাদের প্রজাদের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করে, আর যারা তাদের শাসন করে থাকে তাদেরই আবার ‘উপকারক’ বলা হয়। 26 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমনটি হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে সব থেকে বড় সে হোক্ সবার চেয়ে ছোটর মতো আর যে নেতা সে হোক্ দাসের মতো। 27 কে প্রধান, যে খেতে আসে, না যে পরিবেশন করে? যে খেতে আসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে দাসের মতো আছি।

28 “আমার পরীক্ষার সময় তোমরাই তো আমার পাশে দাঁড়িয়েছ। 29 তাই আমার পিতা যেমন আমার রাজত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন, তেমনি আমিও তোমাদের সেই ক্ষমতা দান করছি। 30 যেন আমার রাজ্যে তোমরা আমার সঙ্গে পান আহার করতে পার, আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে।

বিশ্বাস হারিও না

(মথি 26:31-35; মার্ক 14:27-31; যোহন 13:36-38)

31 “শিমোন, শিমোন, শয়তান গমের মতো চেলে বার করবার জন্য তোমাদের সকলকে চেয়েছে। 32 কিন্তু শিমোন, আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করছি, যেন তোমার বিশ্বাসে ভাঙ্গন না ধরে; আর তুমি যখন আবার পথে ফিরে আসবে তখন তোমার ভাইদের বিশ্বাসে শক্তিশালী করে তুলো।”

33 কিন্তু পিতর বললেন, “প্রভু, আমি আপনার সঙ্গে কারাগারে যেতে, এমনকি মরতেও প্রস্তুত।”

34 যীশু বললেন, “পিতর আমি তোমায় বলছি, আজ রাতে মোরগ ডাকার আগেই তুমি তিনবার অস্বীকার করে বলবে যে তুমি আমায় চেন না।”

কষ্টের জন্য প্রস্তুত হও

35 এরপর যীশু তাঁর প্রেরিতদের বললেন, “আমি যখন টাকার থলি, ঝুলি ও জুতো ছাড়াই তোমাদের প্রচারে পাঠিয়েছিলাম তখন কি তোমাদের কোন কিছুর অভাব হয়েছিল?”

তাঁরা বললেন, “না, কিছুরই অভাব হয় নি।”

36 যীশু তাঁদের বললেন, “কিন্তু এখন বলছি, যার টাকার থলি বা ঝুলি আছে সে তা নিয়ে যাক; আর যার কাছে তলোয়ার নেই সে তার পোশাক বিক্রি করে একটা তলোয়ার কিনুক। 37 কারণ আমি তোমাদের বলছি:

‘তিনি দোষীদের একজন বলে গন্য হবেন।’(A)

শাস্ত্রের এই যে কথা তা অবশ্যই আমাতে পূর্ণ হবে: হ্যাঁ, আমার বিষয়ে এই যে কথা লেখা আছে তা পূর্ণ হতে চলেছে।”

38 তাঁরা বললেন, “প্রভু, দেখুন দুটি তলোয়ার আছে!”

তিনি তাঁদের বললেন, “থাক, এই যথেষ্ট।”

যীশু প্রেরিতদের প্রার্থনা করতে বললেন

(মথি 26:36-46; মার্ক 14:32-42)

39-40 এরপর তিনি তাঁর নিয়ম অনুসারে জৈতুন পর্বতমালায় চলে গেলেন। শিষ্যরা তাঁর পেছন পেছনে চললেন। সেই জায়গায় পৌঁছে তিনি তাঁদের বললেন, “প্রার্থনা কর যেন তোমরা প্রলোভনে না পড়।”

41 পরে তিনি শিষ্যদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন। 42 তিনি বললেন, “পিতা যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও। হ্যাঁ, তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক্!” 43 এরপর স্বর্গ থেকে একজন স্বর্গদূত এসে তাঁকে শক্তি জোগালেন। 44 নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে যীশু আরও আকুলভাবে প্রার্থনা করতে লাগলেন। সেই সময় তাঁর গা দিয়ে রক্তের বড় বড় ফোঁটার মতো ঘাম ঝরে পড়ছিল।[a] 45 প্রার্থনা থেকে উঠে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন, মনের দুঃখে অবসন্ন হয়ে তারা সকলে ঘুমিয়ে পড়েছেন। 46 তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠ, প্রার্থনা কর যেন প্রলোভনে না পড়।”

যীশু বন্দী হলেন

(মথি 26:47-56; মার্ক 14:43-50; যোহন 18:3-11)

47 তিনি তখনও কথা বলছেন, সেই সময় যিহূদার নেতৃত্বে একদল লোক সেখানে এসে হাজির হল। যিহূদা চুমু দিয়ে অভিবাদন করার জন্য যীশুর দিকে এগিয়ে গেল।

48 যীশু তাকে বললেন, “যিহূদা তুমি কি চুমু দিয়ে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেবে?” 49 যীশুর চারপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তখন বুঝতে পারলেন কি ঘটতে চলেছে। তাঁরা বললেন, “প্রভু, আমরা কি তলোয়ার নিয়ে ওদের আক্রমণ করব?” 50 তাঁদের মধ্যে একজন মহাযাজকের চাকরের ডান কান কেটে ফেললেন।

51 এই দেখে যীশু বললেন, “থামো! খুব হয়েছে।” আর তিনি সেই চাকরের কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন।

52 এরপর যীশু, যারা তাঁকে ধরতে এসেছিল, সেই প্রধান যাজক, মন্দির রক্ষী বাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের ও ইহুদী সমাজপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, “ডাকাত ধরতে লোকে যেমন বার হয় তোমরাও কি সেরকম ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ? 53 প্রত্যেক দিনই তো আমি তোমাদের মাঝে মন্দিরেই ছিলাম, তখন তো তোমরা আমায় স্পর্শ কর নি! কিন্তু এই তোমাদের সময়, অন্ধকারের রাজত্বের এই তো সময়।”

যীশুকে স্বীকার করতে পিতরের ভয়

(মথি 26:57-58, 69-75; মার্ক 14:53-54, 66-72; যোহন 18:12-18, 25-27)

54 তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে মহাযাজকের বাড়িতে নিয়ে চলল। পিতর কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখে তাদের পেছনে পেছনে চললেন। 55 মহাযাজকের বাড়ির উঠোনের মাঝখানে লোকেরা আগুন জ্বেলে তার চারপাশে বসল, পিতরও তাদের সঙ্গে বসলেন। 56 একজন চাকরাণী দেখল যে পিতর সেই আগুনের ধারে বসেছেন। সে পিতরকে খুব ভালভাবে দেখে নিয়ে বলল, “আরে, এই লোকটাও তো ওর সঙ্গী ছিল!”

57 কিন্তু পিতর অস্বীকার করে বললেন, “এই মেয়ে, আমি ওঁকে চিনি না।” 58 এর কিছুক্ষণ পরে আর একজন পিতরকে দেখে বলল, “আরে, তুমিও তো ওদেরই দলের একজন!”

কিন্তু পিতর বললেন, “না, মশায়, আমি নই।”

59 এর প্রায় একঘন্টা পরে আর একজন বেশ জোর দিয়ে বলল, “নিঃসন্দেহে এ লোকটা ওরই সঙ্গী ছিল, কারণ এ তো একজন গালীলীয়!”

60 কিন্তু পিতর বললেন, “মশায়, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আপনি কি বলছেন।”

পিতরের কথা শেষ না হতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল। 61 তখন প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে তাকালেন, আর প্রভুর কথা পিতরের মনে পড়ে গেল, প্রভু বলেছিলেন, “আজ রাতে মোরগ ডাকার আগে, তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” 62 তখন তিনি বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

লোকেরা যীশুকে উপহাস করল

(মথি 26:67-68; মার্ক 14:65)

63 যারা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা এই সময় তাঁকে বিদ্রূপ করতে ও মারতে শুরু করল। 64 তারা যীশুর চোখ বেঁধে দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, “ভাববাণী বল দেখি, কে তোকে মারল!” 65 তাঁকে অপমান করার জন্য তারা অনেক কথা বলল।

ইহুদী নেতাদের সামনে যীশু

(মথি 26:59-66; মার্ক 14:55-64; যোহন 18:19-24)

66 দিন শুরু হলে প্রবীন নেতারা, প্রধান যাজরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে মিলে সভা ডাকল আর সেই সভায় তারা যীশুকে হাজির করল। 67 তারা বলল, “তুমি যদি খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদের বল!”

যীশু তাদের বললেন, “আমি যদি বলি, তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস করবে না: 68 আর আমি যদি তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করি, তোমরা তার জবাব দেবে না। 69 কিন্তু মানবপুত্র এখন থেকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে বসে থাকবেন।”

70 তখন তারা সকলে বলল, “তাহলে তুমি ঈশ্বরের পুত্র?” তিনি জবাব দিলেন, “তোমরা ঠিকই বলেছ যে আমি সেই।”

71 তারা বলল, “আমাদের আর অন্য সাক্ষ্যের কি দরকার? আমরা তো ওর নিজের মুখের কথাই শুনলাম।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International