M’Cheyne Bible Reading Plan
শলোমনের মন্দির নির্মাণ
3 জেরুশালেমের মোরিয়া পর্বতের ওপর শলোমন প্রভুর মন্দির বানানোর কাজ শুরু করলেন। এইটি সেই জায়গা যেখানে প্রভু, শলোমনের পিতা, রাজা দায়ূদের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং সেটি ছিল যিবূষীয় অর্ণানের শস্য মাড়াইয়ের খামার। 2 শলোমন তাঁর রাজত্বের চতুর্থ বছরের দ্বিতীয় মাসে মন্দির বানানোর কাজ শুরু করেন।
3 ঈশ্বরের মন্দিরের ভিতের দৈর্ঘ্য ছিল 60 হাত আর প্রস্থ 20 হাত। 4 মন্দিরের সামনের গাড়ি বারান্দাটি উচ্চতায় ও দৈর্ঘ্যে ছিল 20 হাত। ভেতরের দিকের চত্বরটি শলোমন আগাগোড়া সোনায় মুড়ে দিয়েছিলেন। 5 তিনি মন্দিরের বড় ঘরের দেওয়ালে দেবদারু কাঠের আস্তরণ দিয়ে তার ওপরে সোনার আস্তরণ দিয়েছিলেন। সেই সব দেওয়ালে তালগাছ আর শিকলের ছবি খোদাই করা ছিল। 6 মন্দিরটিকে আরো সুন্দর দেখাবার জন্য শলোমন বহু মূল্যবান পাথর দিয়ে সাজিয়েছিলেন এবং তিনি পর্বয়িমের সোনা ব্যবহার করেছিলেন। 7 মন্দিরের কড়িকাঠগুলি, দরজার কাঠামোগুলি, দরজাগুলি এবং মন্দিরের দেওয়ালগুলি তিনি সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন এবং দেওয়ালের ওপর তিনি করূব দূতদের প্রতিকৃতি খোদাই করেছিলেন।
8 শলোমন মন্দিরের পবিত্রতম স্থানটিও নির্মাণ করেছিলেন। পবিত্রতম স্থানটি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ছিল 20 হাত। অর্থাৎ পবিত্রতম স্থানের মাপ আর মন্দিরের প্রস্থের মাপ ছিল এক। পবিত্রতম স্থানের দেওয়ালও 23 টন সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। 9 এক একটা সোনার পেরেকের ওজন ছিল 1 1/4 পাউণ্ড। মন্দিরের ওপর ঘরগুলোও শলোমন সোনা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন। 10 পবিত্রতম স্থানে রাখবার জন্য তিনি দুটি করূব দূতের মূর্ত্তি খোদাই করেছিলেন এবং সেগুলো সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। 11 এই করূব দূতদের এক একটা ডানার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় 5 হাত অর্থাৎ ডানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় 20 হাত। 12 করূব দূতের মূর্ত্তি দুটো এমনভাবে বসানো হয়েছিল যাতে মাঝামাঝি জায়গায় এদের একজনের ডানার সঙ্গে অন্যজনের ডানা ছুঁয়ে থাকে। 13 তাদের ডানাগুলি ছড়িয়ে দিয়ে তারা 20 হাত জায়গা ঢেকে দিয়েছিল এবং তাদের পায়ের ওপর এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল যে মনে হচ্ছিল যেন তারা ঘরের ভেতরের দিকে চেয়ে আছে।
14 নীল, বেগুনী এবং লাল রঙের কাপড় দিয়ে শলোমন পর্দাসমূহ বানিয়েছিলেন এবং সেগুলোর ওপর সূচীশিল্প দিয়ে করূব দূতও বানিয়েছিলেন।
15 মন্দিরের সামনে প্রায় 35 হাত দীর্ঘ দুটি স্তম্ভ বানানো হয়েছিল। এই দুটি স্তম্ভের ওপরের অংশ দুটো ছিল 5 হাত দীর্ঘ। 16 তিনি শেকলের মত মালা তৈরী করেছিলেন এবং সেগুলো স্তম্ভ দুটির মাথায় রেখেছিলেন। এর পরে তিনি এক শত ডালিম তৈরী করেছিলেন এবং সেগুলো মালায় স্থাপন করেছিলেন। তারপর তিনি 100 টি ডালিম তৈরী করে সেই মালায় বসিয়ে দিয়েছিলেন। 17 মন্দিরের সামনে ডানদিকে যে স্তম্ভটা বসানো হয়েছিল শলোমন তার নাম দিয়েছিলেন “যাখীন” এবং বাঁদিকের স্তম্ভটার নাম দেওয়া হয় “বোয়স।”
মন্দিরের আসবাবপত্র
4 শলোমন পিতল দিয়ে মন্দিরের বর্গাকৃতি বেদীটি বানিয়েছিলেন। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে এটি ছিল 20 হাত এবং উচ্চতায় 10 হাত। 2 গলানো পিতল দিয়ে মন্দিরের সুবিশাল গোলাকার জলের চৌবাচ্চাটি ঢালাই করা হয়েছিল। এই জলাধারের ব্যাস ছিল 10 হাত, পরিধি 30 হাত এবং উচ্চতা প্রায় 5 হাত। 3 পিতলের তৈরী জলাধারটির নীচে সমস্ত বৃত্তটিকে ঘিরে দুটো সারিতে 10 হাত ষাঁড়ের প্রতিকৃতি রাখা ছিল। ষাঁড়গুলি এবং চৌবাচ্চাটি ছিল একটি খণ্ডে ঢালাই করা। 4 চৌবাচ্চাটি বারোটি ষাঁড়ের মূর্ত্তির ওপরে বসানো ছিল, যার মধ্যে তিনটে ষাঁড় ছিল উত্তরমুখী, তিনটে পশ্চিমমুখী, তিনটে দক্ষিণমুখী এবং তিনটে পূর্বমুখী। চৌবাচ্চাটি সেগুলোর মাথায় বসানো ছিল যাদের শরীরের পিছন দিকগুলো ছিল কেন্দ্রের দিক। 5 এই জলাধারের পরিধি দেওয়াল ছিল 3 ইঞ্চি পুরু এবং জলাধারের কানাটা ফুলকাটা পেয়ালার মতো করা ছিল। এটি প্রায় 17,500 গ্যালন জল ধারণ করতে পারত।
6 পিতলের জলাধারের বাঁ পাশে ও ডান পাশে পাঁচটি করে মোট দশটি গামলা তৈরী করেছিলেন। সেখানে হোমবলি নিবেদনের জিনিসপত্র ধোয়া হতো। আর বড় জলাধারের জল যাজকরা উৎসর্গের আগে ধোয়াধুয়ির কাজে ব্যবহার করতেন।
7 দায়ূদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শলোমন 10 টা বাতিদান বানালেন এবং তার মধ্যে পাঁচটিকে মন্দিরের উত্তরদিকে এবং পাঁচটিকে দক্ষিণ দিকে সাজিয়ে রেখেছিলেন। 8 একই ভাবে তিনি 10 টি টেবিলও বানিয়ে মন্দিরের মধ্যে রাখেন। মন্দিরের জন্য 100 টি বেসিন বা হাত ধোওযার জায়গা সোনা দিয়ে বানানো হয়েছিল। 9 এছাড়াও, শলোমন যাজকদের জন্য উঠোন, একটি বিরাট প্রাঙ্গণ এবং উঠোনের দরজাসমূহও বানিয়েছিলেন। এই দরজাগুলো পিতল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। 10 এসব শেষ হলে শলোমন বড় জলাধারটিকে মন্দিরের ডানদিকে দক্ষিণ পূর্বদিকে বসিয়ে দিয়েছিলেন।
11-16 হূরম পাত্র, বেলচা এবং গামলাসমূহ বানিয়েছিলেন। এইভাবে শলোমনের জন্য যে সমস্ত কাজ হাতে নিয়েছিলেন সে সমস্ত কাজ তিনি শেষ করেন। বাটির আকারের গম্বুজসহ স্তম্ভ দুটি, স্তম্ভের ওপর বাটি আকারের গম্বুজগুলিকে সাজাবার জন্য দুটি জাফরি; 400টি ছোট ছোট ডালিম; প্রত্যেকটি জাফরিতে এই ছোট ছোট ডালিমগুলি দুটি সারিতে সাজানো ছিল; ষাঁড়গুলির পিঠে পিতলের বড় চৌবাচ্চাটি; সমস্ত পাত্রগুলি, বেলচাসমূহ, কাঁটাগুলি এবং এগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য যন্ত্রপাতি। রাজা শলোমনের জন্য হূরম আবি এই সবই তৈরী করেছিলেন। প্রভুর মন্দিরে ব্যবহার যোগ্য পালিশ করা পিতল দিয়ে তৈরী করেছিলেন। 17 রাজা প্রথমে এই জিনিষগুলিকে মাটির ছাঁচে ফেলেছিলেন। মাটির ছাঁচ তৈরী হত যর্দন উপত্যকায় সুক্কোৎ ও সরেদার মধ্যবর্তী অঞ্চলে। 18 শলোমনের তৈরী পিতলের জিনিষগুলো এত বেশি ছিল যে কতখানি পিতল ব্যবহার করা হয়েছিল কেউ তার পরিমাপ করবার চেষ্টা করেনি।
19-22 তিনি নিথলিখিত জিনিষগুলিও তৈরী করেছিলেন: ঈশ্বরের মন্দিরের জন্য একটা সোনার বেদী, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পবিত্র রুটি রাখার জন্য টেবিল, 10টি খাঁটি সোনার বাতিদান এবং সেগুলোর বাতি যেগুলো ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে অভ্যন্তরস্থ পবিত্র স্থানে পোড়াবার কথা ছিল, ফুলগুলি, খাঁটি সোনার বাতি ও চিম্টেগুলি; কর্ত্তারিসমূহ, গামলাগুলি, ধুপপাত্রগুলি, এবং খাঁটি সোনার উনুন, অভ্যন্তর গৃহের দরজা, পবিত্রতম স্থানের দরজাগুলি এবং মন্দিরের খাঁটি সোনার দরজাগুলি।
আমরা ঈশ্বরের সন্তান
3 ভেবে দেখ, পিতা ঈশ্বর আমাদের কত ভালোই না বেসেছেন যাতে আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলে অভিহিত হই; বাস্তবিক আমরা তাই। জগতের লোক আমাদের চেনে না যে আমরা ঈশ্বরের সন্তান, কারণ তারা ঈশ্বরকে জানে না। 2 প্রিয় বন্ধুরা, এখন তো আমরা ঈশ্বরের সন্তান, আর ভবিষ্যতে আমরা আরো কি হব তা এখনও আমাদের কাছে প্রকাশ করা হয় নি। কিন্তু আমরা জানি যে যখন খ্রীষ্ট পুনরায় আসবেন তখন আমরা তাঁর সমরূপ হব, কারণ তিনি যেমন আছেন, তাঁকে তেমনি দেখতে পাব। 3 খ্রীষ্ট শুদ্ধ আর তাঁর ওপরে যে সমস্ত লোক এই আশা রাখে, তারা খ্রীষ্টের মত নিজেদের শুদ্ধ করে।
4 যে কেউ পাপ করে, সে বিধি-ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে, আর ব্যবস্থা লঙ্ঘন করাই পাপ। 5 তোমরা জান, মানুষের পাপ তুলে নেবার জন্যই খ্রীষ্ট প্রকাশিত হলেন; আর খ্রীষ্টের নিজের কোন পাপ নেই। 6 যে কেউ খ্রীষ্টে থাকে, সে পাপের জীবন-যাপন করে না। কেউ যদি পাপে জীবন-যাপন করে তবে সে খ্রীষ্টকে কখনও প্রকৃতভাবে উপলদ্ধি করে নি, এমন কি তাঁকে জানেও নি।
7 প্রিয় সন্তানরা, সতর্ক থেকো। কেউ যেন তোমাদের বিপথে না নিয়ে যায়। যে কেউ যথার্থ কাজ করে সে নীতিপরায়ণ, ঠিক যেমন খ্রীষ্ট নীতিপরায়ণ। 8 দিয়াবল সেই শুরু থেকেই পাপ করে চলেছে। যে ব্যক্তি পাপ করেই চলে সে দিয়াবলের। দিয়াবলের কাজকে ধ্বংস করার জন্যই ঈশ্বরের পুত্র প্রকাশিত হয়েছিলেন।
9 যে কেউ ঈশ্বরের সন্তান হয়, সে ক্রমাগত পাপ করতে পারে না, কারণ নরজীবনদায়ী ঈশ্বরের শক্তি সেই ব্যক্তির মধ্যে থাকে। সে ঈশ্বরের সন্তানে পরিণত হয়েছে; তাই সে পাপে জীবন কাটাতে পারে না। 10 এভাবেই আমরা দেখতে পারি কারা ঈশ্বরের সন্তান আর কারাই বা দিয়াবলের সন্তান। যারা সত্কর্ম করে না তারা ঈশ্বরের সন্তান নয়, আর যে তার ভাইকে ভালবাসে না সে ঈশ্বরের সন্তান নয়।
পরস্পরকে ভালবাসতে হবে
11 তোমরা শুরু থেকে এই বার্তা শুনে আসছ, যে আমাদের পরস্পরকে ভালবাসা উচিত। 12 তোমরা কয়িনের[a] মতো হয়ো না। কয়িন দিয়াবলের ছিল এবং তার ভাই হেবলকে হত্যা করেছিল। কিসের জন্য সে তার ভাইকে হত্যা করেছিল? কারণ কয়িনের কাজগুলি ছিল মন্দ; কিন্তু তার ভাইয়ের কাজ ছিল ভাল।
13 ভাইরা, এই জগত যদি তোমাদের ঘৃণা করে তবে তাতে আশ্চর্য হয়ো না। 14 আমরা জানি যে আমরা মৃত্যু থেকে জীবনে উত্তীর্ণ হয়ে গেছি। আমরা এটা জানি কারণ আমরা আমাদের ভাইদের ও বোনদের ভালবাসি। যে কেউ ভালবাসে না সে মৃত্যুর মধ্যেই থাকে। 15 যে কেউ তার ভাইকে ঘৃণা করে সে তো একজন খুনী; আর তোমরা জান কোন খুনী অনন্ত জীবনের অধিকারী হয় না।
16 তিনি আমাদের জন্য নিজের প্রাণ দিলেন, এর থেকেই আমরা জানতে পারি প্রকৃত ভালবাসা কি। সেইজন্য আমাদেরও আমাদের ভাই বোনদের জন্য প্রাণ দেওয়া উচিত। 17 যার পার্থিব সম্পদ রয়েছে, সে যদি তার কোন ভাইকে অভাবে পড়তে দেখে তাকে সাহায্য না করে, তবে কি করে বলা যেতে পারে যে তার মধ্যে ঐশ্বরিক ভালবাসা আছে? 18 স্নেহের সন্তানরা, কেবল মুখে ভালবাসা না দেখিয়ে, এসো, আমরা কাজের মধ্য দিয়ে তাদের সত্যিকারের ভালবাসি।
19-20 এর দ্বারা আমরা জানব যে আমরা সত্যের। আমাদের অন্তর যদি আমাদের দোষী করে, তবুও ঈশ্বরের সামনে আমাদের বিবেক বিশ্বস্ত থাকবে। কারণ আমাদের বিবেকের থেকে ঈশ্বর মহান, ঈশ্বর তো সবই জানেন।
21 প্রিয় বন্ধুরা, যদি আমাদের বিবেকগুলি আমাদের দোষের অনুভূতি না দেয় তবে ঈশ্বরের সামনে আমরা নির্ভয়ে দাঁড়াতে পারব। 22 আর ঈশ্বরের কাছ থেকে যা কিছু চাই না কেন তা আমরা পাব, কারণ আমরা যা তাঁর সন্তোষজনক তাই করছি। 23 তাঁর আদেশ হল আমরা যেন তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের নামে বিশ্বাস করি ও পরস্পরকে ভালবাসি। 24 যে ঈশ্বরের আদেশগুলি মান্য করে সে ঈশ্বরে থাকে; আর ঈশ্বর তার অন্তরে থাকেন। ঈশ্বর যে আমাদের অন্তরে আছেন তা আমরা কি করে জানব? যে আত্মাকে ঈশ্বর দিয়েছেন, সেই আত্মাই আমাদের বলছে যে ঈশ্বর আমাদের মধ্যে আছেন।
নীনবী ধ্বংস হবে
2 একজন শত্রু তোমাকে আক্রমণ করার জন্য আসছে।
সেজন্য তোমার শহরের শক্ত জায়গাগুলিকে পাহারা দাও।
রাস্তায় নজর রাখো।
যুদ্ধের জন্য তৈরী হও।
সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হও!
2 হ্যাঁ, প্রভু যাকোবের মাহাত্ম্য পাল্টে দেবেন।
তার শ্রী ইস্রায়েলের মতোই হবে।
শত্রুরা তাদের ধ্বংস করেছে
এবং তাদের দ্রাক্ষা ক্ষেতগুলি ধ্বংস করেছে।
3 ঐসব সৈন্যদের বর্মগুলো লাল।
তাদের উর্দিগুলো উজ্জ্বল লাল।
তাদের রথগুলো যুদ্ধের জন্য সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
এবং আগুনের শিখার মতো চক্চক্ করছে
এবং তাদের ঘোড়াগুলো যাবার জন্য প্রস্তুত।
4 রথগুলো রাস্তার ওপর উন্মত্তের মত এগোচ্ছে।
প্রশস্ত জায়গায় তারা হুড়োহুড়ি করে সামনে পেছনে যাচ্ছে।
তাদের জ্বলন্ত মশালের মতো চক্চকে দেখাচ্ছে।
এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বিদ্যুতের মতো ঝলসে উঠছে!
5 শত্রু পক্ষ তার সব থেকে ভালো সৈন্যদের ডাকছে।
কিন্তু দৌড়ে যেতে গিয়ে তারা হোঁচট খাচ্ছে।
তারা প্রাচীরের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে
এবং অবরোধ যন্ত্র বসাচ্ছে।
6 কিন্তু নদীর ধারের দরজাগুলো খোলা রয়েছে
এবং শত্রুরা এর মধ্যে দিয়ে বন্যার মত প্রবেশ করে রাজার বাড়ী ধ্বংস করছে।
7 শত্রুরা রাণীকে নিয়ে চলে যাচ্ছিল।
তার ক্রীতদাসীরা ঘুঘু পাখীর মত দুঃখে বিলাপ করছিলো।
দুঃখ বোঝাবার জন্য তারা তাদের বুক চাপড়াচ্ছিল।
8 নীনবীর অবস্থা জলাশয়ের মত,
যার জল নর্দমা দিয়ে বয়ে চলে যাচ্ছে।
জনসাধারণ তীব্রস্বরে গর্জন করছে, “থামো! পালিয়ে যেও না!”
কিন্তু তাতে কোন ভালো ফল হচ্ছে না।
9 সৈন্যরা, তোমরা যারা নীনবী ধ্বংস করেছো,
তোমরা রূপো নিয়ে যাও!
সোনা নিয়ে যাও!
নেবার অনেক কিছু আছে।
এখানে অনেক সম্পদ আছে।
10 এখন নীনবী শূন্য।
সব জিনিষই চুরি হয়ে গেছে।
শহরটি ধ্বংস হয়েছে।
জনসাধারণ তাদের সাহস হারিয়েছে।
তাদের হৃদয় ভয়ে গলে যাচ্ছে,
তাদের হাঁটুগুলো ঠক্-ঠক্ শব্দে কাঁপছে।
তাদের শরীর কাঁপছে,
তাদের মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গেছে।
11 সিংহের গুহাস্বরূপ নীনবী এখন কোথায়
যেখানে পুরুষ এবং স্ত্রী-সিংহরা থাকত?
তাদের শিশুরা ভয় পেত না।
12 সিংহ (নীনবীর রাজা) তার বাচ্চাদের
এবং সিংহকে খাওয়াবার জন্য বহু লোক হত্যা করেছে।
সে তার গুহা (নীনবী) মনুষ্যদেহ দিয়ে ভরে দিয়েছিল।
যে নারীদের সে হত্যা করেছিল তাদের দেহগুলি দিয়ে তার গুহা পূর্ণ করেছে।
13 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন,
“নীনবী, আমি তোমার বিরূদ্ধে!
আমি তোমার রথগুলোকে জ্বালিয়ে দেব।
যুদ্ধে আমি তোমার ‘সিংহ শাবকদের’ মেরে ফেলব।
তুমি পৃথিবীতে কাউকে শিকার করতে সমর্থ হবে না।
লোকরা আর কখনোই তোমার দূতদের কাছ থেকে
কোন খারাপ খবর শুনবে না।”
ঈশ্বর তাঁর লোকদের উত্তর দেবেন
18 নিরাশ না হয়ে তাদের যে সব সময় প্রার্থনা করা উচিত, তা বোঝাতে গিয়ে যীশু তাদের এই দৃষ্টান্তটি দিলেন, 2 তিনি বললেন, “কোন এক শহরে একজন বিচারক ছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন না, আবার মানুষকেও গ্রাহ্য করতেন না। 3 সেই শহরে একজন বিধবা ছিল। সে বার বার সেই বিচারকের কাছে এসে বলত, ‘আপনাকে দেখতে হবে যেন আমার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমি ন্যায় বিচার পাই!’ 4 কিছু দিন ধরে সেই বিচারক তার কোন কথাই শুনতে চাইলেন না। কিন্তু এক সময় তিনি মনে মনে বললেন, ‘যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না আর মানুষকে মানি না, 5 তবু এই বিধবা যখন আমায় এত বিরক্ত করছে তখন আমি দেখব সে যেন ন্যায় বিচার পায়, তাহলে সে আর বার বার এসে আমাকে জ্বালাতন করবে না।’”
6 এরপর প্রভু বললেন, “লক্ষ্য কর! ঐ অধার্মিক বিচারকর্তা কি বলল। 7 তাহলে ঈশ্বর কি তাঁর মনোনীত লোকেরা, যাঁরা দিন-রাত তাঁকে ডাকছে, তারা যেন ন্যায় বিচার পায় তা দেখবেন না? তিনি কি তাদের সাহায্য করতে অযথা দেরী করবেন? 8 আমি তোমাদের বলছি, তিনি তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার করবেনই আর তা তাড়াতাড়িই করবেন। যাইহোক্, মানবপুত্র যখন আসবেন, তখন কি তিনি এই পৃথিবীতে বিশ্বাস দেখতে পাবেন?”
ঈশ্বরের চোখে ধার্মিকহওয়া
9 যাঁরা নিজেদের ধার্মিক মনে করত আর অন্যকে তুচ্ছ করত, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এই দৃষ্টান্তটি দিলেন, 10 “দুজন লোক মন্দিরে প্রার্থনা করার জন্য গেল; তাদের মধ্যে একজন ফরীশী আর অন্য জন কর-আদায়কারী। 11 ফরীশী দাঁড়িয়ে নিজের সম্বন্ধে এইভাবে প্রার্থনা করতে লাগল, ‘যে ঈশ্বর, আমি তোমায় ধন্যবাদ দিচ্ছি যে আমি অন্য সব লোকদের মতো নই; দস্যু, প্রতারক, ব্যভিচারী অথবা এই কর-আদায়কারীর মতো নই। 12 আমি সপ্তাহে দুদিন উপোস করি, আর আমার আয়ের দশ ভাগের একভাগ দান করি।’
13 “কিন্তু সেই কর-আদায়কারী দাঁড়িয়ে স্বর্গের দিকে মুখ তুলে তাকাতেও সাহস করল না, বরং সে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, ‘হে ঈশ্বর, আমি পাপী! আমার প্রতি দয়া কর!’ 14 আমি তোমাদের বলছি, এই কর-আদায়কারী ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়ে বাড়ি চলে গেল কিন্তু ঐ ফরীশী নয়। যে কেউ নিজেকে বড় করে তাকে ছোট করা হবে; আর যে নিজেকে ছোট করে তাকে বড় করা হবে।”
ঈশ্বরের রাজ্যে কে প্রবেশ করবে?
(মথি 19:13-15; মার্ক 10:13-16)
15 লোকেরা একসময় তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে এল যেন তিনি তাদের স্পর্শ করে আশীর্বাদ করেন। এই দেখে শিষ্যরা তাদের খুব ধমক দিলেন। 16 কিন্তু যীশু সেই ছেলেমেয়েদের তাঁর কাছে ডাকলেন, আর বললেন, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, তাদের বারণ করো না, কারণ এই শিশুদের মতো লোকদের জন্যই তো ঈশ্বরের রাজ্য। 17 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যদি কেউ শিশুর মতো ঈশ্বরের রাজ্যকে গ্রহণ না করে তবে সে কোনমতে তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না!”
এক ধনী লোকের প্রশ্ন
(মথি 19:16-30; মার্ক 10:17-31)
18 ইহুদীদের একজন দলনেতা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “হে সদগুরু, অনন্ত জীবন পেতে হলে আমাকে কি করতে হবে?”
19 যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি আমায় সৎ বলছ, কেন? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সৎ নয়। 20 তুমি তো ঈশ্বরের সব আজ্ঞা জান, ব্যভিচার করো না, নরহত্যা করো না, চুরি করো না, মিথ্যা সাক্ষী দিও না, তোমার বাবা-মাকে সম্মান করো।”(A)
21 সে বলল, “আমি ছোটবেলা থেকেই সে সব পালন করে আসছি।”
22 একথা শুনে যীশু তাকে বললেন, “কিন্তু তোমার মধ্যে একটি বিষয়ের এখনও ত্রুটি আছে। তোমার যা কিছু আছে সে সব বিক্রি করে তা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দাও, তাহলে স্বর্গে তোমার ধন-সম্পদ জমা হবে, তারপর আমায় অনুসরণ কর।” 23 কিন্তু এই কথা শুনে তার খুবই দুঃখ হল, কারণ তার প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল।
24 যীশু তাকে দুঃখিত হতে দেখে বললেন, “যাদের ধন-সম্পদ আছে তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কত কঠিন! 25 হ্যাঁ, একজন ধনীর পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা অপেক্ষা ছুঁচের মধ্য দিয়ে উটের পার হওয়া সহজ।”
কারা উদ্ধার পাবে?
26 যে সব লোক একথা শুনল তারা বলে উঠল, “তাহলে কে উদ্ধার পেতে পারে?”
27 যীশু বললেন, “মানুষের পক্ষে যা সম্ভব নয় ঈশ্বরের পক্ষে তা সম্ভব।”
28 তখন পিতর বললেন, “দেখুন, আমরা তো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে আপনার অনুসারী হয়েছি।”
29 যীশু তখন তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি যারা ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ঘর-বাড়ি, স্ত্রী, ভাই-বোন, মা-বাবা কিংবা ছেলে-মেয়ে ত্যাগ করেছে, 30 তারা প্রত্যেকে এ জীবনেই সেই সব বহুগুণে ফিরে পাবে, এছাড়া আগামী যুগে লাভ করবে অনন্ত জীবন।”
যীশু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবেন
(মথি 20:17-19; মার্ক 10:32-34)
31 যীশু তাঁর বারোজন প্রেরিতকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, “শোন! আমরা জেরুশালেমে যাচ্ছি; আর ভাববাদীরা মানবপুত্রের বিষয়ে যা কিছু লিখে গেছেন, সে সবই পূর্ণ হবে। 32 হ্যাঁ, অইহুদীদের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়া হবে, তারা তাঁকে উপহাস করবে, গালাগালি দেবে, তাঁর গায়ে থুতু ছেটাবে। 33 তারা তাঁকে কশাঘাত করবে ও শেষ পর্যন্ত হত্যাই করবে; আর তৃতীয় দিনে মৃত্যুর মধ্য থেকে তিনি পুনরুত্থিত হবেন।” 34 তিনি কি বলতে চাইছেন, প্রেরিতেরা কিন্তু তার কিছুই বুঝতে পারলেন না। তিনি যে কি বলছেন তা তাঁরা বুঝতে পারলেন না, কারণ এসব কথার অর্থ তাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল।
যীশু অন্ধকে দৃষ্টি দান করলেন
(মথি 20:29-34; মার্ক 10:46-52)
35 যীশু যখন যিরীহোর কাছাকাছি পৌঁছালেন, তখন সেখানে রাস্তার ধারে বসে একজন অন্ধ ভিক্ষা করছিল। 36 অনেক লোকজন যাওযার আওয়াজ শুনে সেই ভিখারী ব্যাপার কি তা জিজ্ঞাসা করল।
37 লোকেরা তাকে বলল, “নাসরতীয় যীশু সেখান দিয়ে যাচ্ছেন।”
38 তখন সে চিৎকার করে বলে উঠল, “হে দায়ূদের বংশধর যীশু, আমাকে দয়া করুন।”
39 যে সব লোক সেই ভীড়ের সামনে ছিল তারা তাকে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও চিৎকার করে বলল, “হে দায়ূদের বংশধর, আমায় দয়া করুন!”
40 যীশু থেমে গেলেন, তিনি সেই অন্ধকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে বললেন। সেই অন্ধ তাঁর কাছে এলে পর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, 41 “তুমি কি চাও? তোমার জন্য আমি কি করব?”
সে বলল, “প্রভু, আমি যেন দেখতে পাই।”
42 যীশু তাকে বললেন, “বেশ! তুমি চোখে দেখতে পাও, তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করল।”
43 সঙ্গে সঙ্গে সে দেখতে পেল আর ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে যীশুর পেছনে পেছনে চলল। যাঁরা এই ঘটনা দেখল তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International