M’Cheyne Bible Reading Plan
22 দায়ূদ বললেন, “প্রভু ঈশ্বরের মন্দির ও ইস্রায়েলের লোকদের জন্য বেদী এখানেই বানানো হবে।”
দায়ূদ মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন
2 দায়ূদ ইস্রায়েলে বসবাসকারী সমস্ত বিদেশীদের এক জায়গায় জড়ো হতে নির্দেশ দিলেন। তারপর তিনি তাদের মধ্যে থেকে পাথর-কাটুরেদের বেছে নিলেন। এদের কাজ ছিল, ঈশ্বরের যে মন্দির হবে তার জন্য তখন থেকেই পাথর কেটে রাখা। 3 পেরেক ও দরজার কব্জা বানানোর জন্য দায়ূদ লোহা আনালেন এবং এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পিতল সংগ্রহ করলেন। 4 অজস্র এরস কাঠের গুঁড়িও আনা হল। সীদোন ও সোরীয়ের বাসিন্দারা অনেক অনেক দামী কাঠের গুঁড়ি এনে দিয়েছিল।
5 দায়ূদ বললেন, “আমরা প্রভুর জন্য সুবিশাল একটা মন্দির বানাতে চলেছি। কিন্তু আমার পুত্র শলোমনের বয়স এখনও কম। এসম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান তার হয়নি। প্রভুর এই সুবিশাল মন্দিরের খ্যাতি তার সৌন্দর্য্যের কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে যাতে ছড়িয়ে পড়ে সে কারণে আমি সেই মন্দিরের নকশা ও পরিকল্পনা করে যাচ্ছি।” কথা মতো তাঁর মৃত্যুর আগেই দায়ূদ মন্দিরের জন্য অনেক পরিকল্পনা ও নকশা করে গিয়েছিলেন।
6 দায়ূদ তাঁর পুত্র শলোমনকে ডেকে প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মন্দির বানানোর নির্দেশ দিয়ে বললেন, 7 “শলোমন, আমি প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের জন্য একটা মন্দির বানাতে চেয়েছিলাম। 8 কিন্তু প্রভু আমাকে জানালেন, ‘দায়ূদ তুমি অনেক যুদ্ধ করেছ। বহু ব্যক্তির রক্তে ঐ হাত রঞ্জিত করেছ। তাই আমার নামে তুমি কোন মন্দির বানাতে পারবে না। 9 কিন্তু তোমার এক পুত্র হবে শান্তির ধারক ও বাহক। তাকে আমি একটি শান্তিপূর্ণ জীবন দেব এবং তার আশেপাশের শত্রুরা যাতে তাকে উত্যক্ত না করে দেখব। 10 তার নাম শলোমন এবং তার শাসনকালে আমি ইস্রায়েলকে শান্তি দেব। আমি তাকে সন্তান-জ্ঞানে পালন করব এবং তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করব। তার পরিবারের কেউ না কেউ আজীবন ইস্রায়েলে শাসন করবে।’”
11 দায়ূদ শলোমনকে আরো বললেন, “প্রভু তোমার সহায় হোন, যাতে তুমি তাঁর কথা মতোই তোমার প্রভু ঈশ্বরের জন্য এই মন্দির বানাতে সফল হতে পারো। 12 প্রভু তোমায় ইস্রায়েলের রাজা করবেন। রাজ্য পরিচালনা এবং প্রভু তোমার ঈশ্বরের বিধি ও অনুশাসন অনুসরণ করার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার বিবেচনাও যেন তোমাকে দেন। 13 প্রভু প্রদত্ত মোশির বিধি অনুসরণ করে সতর্ক ভাবে জীবন কাটালে তুমি অবশ্যই সফল হবে। ভয়ের কোন কারণ নেই। সাহসে ভর করে বীরপুরুষের মতো জীবনযাপন করো।
14 “শোনো শলোমন, প্রভুর মন্দির বানানোর পরিকল্পনার জন্য আমি বহু পরিশ্রম করেছি। আমি 3750 টন সোনা আর 37,500 টন রূপো ছাড়াও যে পরিমাণ লোহা আর পিতল জমিয়েছি তা ওজন করা প্রায় অসম্ভব! আর আছে অজস্র কাঠ এবং পাথর। শলোমন, এইসব কিছুই তুমি বাড়াতে পার। 15 সুদক্ষ ছুতোর আর পাথর-কাটুরে ছাড়াও সব রকম কাজে দক্ষ কারিগর আর মিস্ত্রিও তোমার আছে। 16 সোনা, রূপো, লোহা, পিতলের কাজ জানা অসংখ্য কারিগর তুমি পাবে। এবার তোমার কাজ শুরু কর। প্রভু তোমার সহায় হোন।”
17 তারপর দায়ূদ ইস্রায়েলের সমস্ত নেতাদের তাঁর পুত্র শলোমনকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়ে বললেন, 18 “এখন স্বয়ং ঈশ্বর তোমাদের সহায়। তিনি আপনাদের শান্তির সময় দিয়েছেন, চারপাশের বহিঃশত্রুদের পরাজিত করতে আমায় সাহায্য করেছেন। প্রভু ও তাঁর লোকরা এখন এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। 19 এখন প্রভুকে সমস্ত মন-প্রাণ ঢেলে দাও এবং তিনি যা বলেন তাই কর। তাঁর উপযুক্ত করে মন্দির বানানোর কাজে আত্মনিয়োগ কর। তাঁর নামে মন্দির বানিয়ে সাক্ষ্যসিন্দুক ও আর যা কিছু পবিত্র জিনিস আছে মন্দিরে নিয়ে এসো।”
স্ত্রী এবং স্বামীদের জন্য উপদেশ
3 ঠিক সেইরকম স্ত্রীরা, তোমরা অবশ্যই তোমাদের স্বামীর বশ্যতা স্বীকার করো যাতে যারা ঈশ্বরের শিক্ষাকে অনুসরণ করে না এমন স্বামীরা তোমাদের ব্যবহারের দ্বারা খ্রীষ্টের দিকে আকৃষ্ট হয়। 2 তাদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই, তারা নিজেদের স্ত্রীদের শুদ্ধ ও সম্মানজনক আচার ব্যবহার দেখে আকৃষ্ট হবে। 3 চুলের খোঁপা, সোনার অলঙ্কার অথবা সূক্ষ্ম জামা কাপড় এইসব নশ্বর ভুষণ দ্বারা নয়, 4 বরং তোমাদের ভুষণ হওয়া উচিত তোমাদের অন্তরের মধ্যে লুকোনো সত্তা নম্রতা ও শান্ত স্বভাব, যা ঈশ্বরের চোখে মহামূল্যবান।
5 এইভাবেই সেই পবিত্র মহিলারা যারা অতীতে ঈশ্বরে ভরসা রাখত তারা স্বামীদের প্রতি তাদের সমীহপূর্ণ ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সুন্দরী করে তুলতো। 6 যেমন সারা অব্রাহামের অনুরক্তা ছিলেন এবং তাঁকে “মহাশয়” বলে ডাকতেন। মহিলারা, তোমরা যদি ভীত না হয়ে যা ঠিক তাই কর তবে তা প্রমাণ করবে যে তোমরা সারার যোগ্য সন্ততি।
7 সেইভাবে তোমরা স্বামীরাও, তোমাদের স্ত্রীদের সাথে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে বাস কর। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। কারণ তারা তোমাদের থেকে দুর্বল হলেও ঈশ্বর তাদেরও সমানভাবে আশীর্বাদ করেন, যে আশীর্বাদ অনুগ্রহের, যা সত্য জীবন দান করে। তাদের সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করা তোমাদের উচিত তা যদি না কর তবে তোমাদের প্রার্থনায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
সঠিক কর্মের জন্য কষ্ট
8 তোমরা সকলে শান্তিতে বাস কর, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও, ভাই ও বোনের প্রতি প্রেমময়, সমব্যথী এবং নম্র হও। 9 মন্দের পরিবর্তে মন্দ করো না, অথবা অপমান করলে অপমান ফিরিয়ে দিও না, বরং ঈশ্বরের কাছে তার জন্য প্রার্থনা কর যেন তিনি তাকে আশীর্বাদ করেন, কারণ এই করতেই তোমরা আহূত, যাতে তোমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে পারো। 10 শাস্ত্রে বলছে:
“যে জীবন উপভোগ করতে চায়
ও শুভ দিন দেখতে চায়,
সে মন্দ কথা থেকে তার জিভকে যেন সংযত রাখে,
আর মিথ্যা কথা বলা থেকে ঠোঁটকে যেন সামলে রাখে।
11 পাপের পথে না গিয়ে সে সৎ কর্ম করুক;
শান্তির চেষ্টা করে সেই মতো চলুক।
12 কারণ যারা ধার্মিক তাদের প্রতি প্রভুর সজাগ দৃষ্টি আছে
এবং তাদের প্রার্থনা শোনবার জন্য তাঁর কান খোলা আছে।
কিন্তু যারা মন্দ পথে চলে প্রভু তাদের দিক থেকে তাঁর মুখ ফিরিয়ে নেন।”(A)
13 তোমরা যদি সব সময় ভাল কাজই করতে চাও তবে কে তোমাদের ক্ষতি করবে? 14 কিন্তু যদি ন্যায় পথে চলার জন্য নির্যাতিত হও, তাহলে তোমরা ধন্য আর, “তোমরা ঐ লোকদের ভয় করো না বা তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না।”(B) 15 বরং অন্তরে খ্রীষ্টকে পবিত্র প্রভু বলে মেনে নাও। তোমাদের সবার যে প্রত্যাশা আছে সেই বিষয়ে তোমাদের যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে তখন তার যথাযথ জবাব দিতে তোমরা সব সময় প্রস্তুত থেকো। 16 কিন্তু এই জবাব বিনয় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দেবে। তোমাদের বিবেক শুদ্ধ রেখো, যাতে তোমরা সমালোচিত না হও, তাহলে যারা তোমাদের খ্রীষ্টীয় সৎ জীবনযাপনের প্রতি অপমান প্রদর্শন করে তারা লজ্জিত হবে।
17 কারণ অন্যায় করে দুঃখভোগ করার চেয়ে বরং ঈশ্বরের যদি এমন ইচ্ছা হয়, ভাল কাজ করে দুঃখভোগ করা অনেক ভাল।
18 কারণ খ্রীষ্ট নিজে পাপের জন্য একবার চিরকালের জন্য
সবার হয়ে কষ্টভোগ করেছিলেন।
সেই ন্যায়পরায়ণ মানুষ অন্যায়কারী মানুষের জন্য
মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
এই কাজ তিনি করেছিলেন ঈশ্বরের কাছে তোমাদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
দৈহিকভাবে তাঁকে মারা হয়েছিল,
কিন্তু আত্মায় তিনি জীবিত হলেন।
19 সেই অবস্থায় তিনি কারারুদ্ধ আত্মাদের কাছে গিয়ে প্রচার করলেন। 20 সেই কারারুদ্ধ আত্মারা বহুকাল আগে নোহের সময়ে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল। নোহের জাহাজ তৈরীর সময় ঈশ্বর তাদের জন্য ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন। সেই জাহাজে কেবল অল্প কিছু লোক (আট জন) জলের দ্বারা রক্ষা পেল। 21 সেই জল বাপ্তিস্মের মত যা এখন তোমাদের রক্ষা করে। শরীরের ময়লা সেই বাপ্তিস্মের দ্বারা ধুয়ে যায় না; কিন্তু তা ঈশ্বরের কাছে সৎ বিবেক বজায় রাখার জন্য এক আবেদন। যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের কারণে এটা তোমাদের রক্ষা করে। 22 যীশু স্বর্গারোহণ করে পিতা ঈশ্বরের ডানপাশে আছেন, আর স্বর্গদূতরা, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতগণ এবং শক্তিধররা এখন তাঁর অধীনে।
শমরিয়া এবং ইস্রায়েল শাস্তি পাবে
1 প্রভুর বাক্য মীখার কাছে এল। এটা ছিল যোথম, আহস এবং হিষ্কিয় এই রাজাদের রাজত্বের কাল। এঁরা ছিলেন যিহূদার রাজা। মীখা ছিলেন মোরেষ্টীয়ের বাসিন্দা। শমরিয়া এবং জেরুশালেমের সম্বন্ধে মীখার এই দর্শন হয়েছিল।
2 ওহে লোকেরা, তোমরা শোন!
পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত জিনিষ, তোমরা শোন!
আমার প্রভু সদাপ্রভু তাঁর পবিত্র মন্দির থেকে আসবেন।
আমার প্রভু তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসাবে আসবেন।
3 দেখো, প্রভু তাঁর স্থান হতে বার হয়ে আসছেন।
তিনি পৃথিবীর উচ্চ স্থানগুলির উপর দিয়ে হেঁটে যাবার জন্য আসছেন।
4 তাঁর পায়ের তলার পর্বতগুলি গলতে শুরু করবে,
যেমন মোম আগুনের সংস্পর্শে এসে গলে যায়।
উপত্যকাগুলি ফেটে যাবে
এবং উঁচু পাহাড় থেকে পড়া জলের মতো নীচের দিকে বইতে থাকবে।
5 কিন্তু কেন?
কারণ হল, যাকোবের পাপ এবং ইস্রায়েল জাতির পাপসমূহ।
শমরিয়া, পাপের কারণ
কি কারণে যাকোব পাপ করল?
শমরিয়াই তার কারণ।
যিহূদাতে আরাধনা করার উচ্চ স্থান কোথায়?
জেরুশালেমই কি সেই জায়গা নয়!
6 সেই কারণেই, আমি শমরিয়াকে একটি পাথরের স্তুপ বানিয়ে দেব
এবং দ্রাক্ষা ক্ষেতের জন্য তৈরী একটি স্থান।
আমি শমরিয়ার পাথরগুলোকে নীচের উপত্যকায় ঠেলে দেব,
ফলে কেবল তার ভিতটা পড়ে থাকবে!
7 তার সব মূর্ত্তিগুলি টুকরো টুকরো করে ভেঙে দেওয়া হবে।
বেশ্যাবৃত্তি করে যে অর্থ শমরিয়া রোজগার করেছিল তাও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে।
আমি তার সব ভ্রান্ত দেবদেবীর মূর্ত্তিগুলো ধ্বংস করব।
কিন্তু কেন? কারণ আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে শমরিয়া তার ধন লাভ করেছে।
তাই আমার প্রতি অবিশ্বস্ত লোকেরাই আবার সেই সব নিয়ে নেবে।
মীখার গভীর দুঃখ
8 যা ঘটবে তাতে আমি খুবই দুঃখিত হব।
আমি জুতো এবং জামা-কাপড় ছাড়াই যাব।
আমি শেয়ালের মতো উচ্চস্বরে চিৎকার করব;
পাখির মতো শোক করব।
9 শমরিয়ার ক্ষতের কোন রকম আরোগ্য সম্ভব নয়।
তার রোগ (পাপ) যিহূদাতে ছড়িয়েছে।
আর তা আমার প্রজাদের দরজার কাছে এসে পৌঁছেছে।
শেষে জেরুশালেমের সর্বত্র ছড়াচ্ছে।
10 একথা গাতে বোলো না।
আক্কোতে কেঁদো না।
বৈৎ-লি-অফ্রার ধূলোয় নিজেকে গড়িয়ে দাও।
11 শাফীরে বসবাসকারী তোমরা
নগ্ন ও লজ্জিত অবস্থায় রাস্তা পার হও।
সাননে বসবাসকারী লোকেরা বাইরে আসবে না।
বৈৎ-এৎসলের শোক বিগ্রহ
তোমাদের কাছ থেকে তার সম্মান নিয়ে নেবে।
12 ভালো খবর আসবার অপেক্ষায় থেকে
মরোতের লোকেরা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু কেন?
কারণ ঈশ্বরের, কাছে থেকে জেরুশালেম শহরের দরজায় কিছু খারাপ জিনিস নেমে আসছে।
13 হে লাখীশ কন্যা, তুমি রথের সঙ্গে একটি দ্রুতগামী ঘোড়া জুড়ে দাও।
সিয়োনের পাপগুলো লাখীশেই আরম্ভ হয়েছিল।
কিন্তু কেন?
কারণ, তুমি ইস্রায়েলের পাপের পথই অনুসরণ করেছ।
14 সেজন্য তুমি বিদায়ী উপহারগুলো
অবশ্যই মোরেষত্-গাৎকে দেবে।
অকষীবের বাড়ীগুলো
ইস্রায়েলের রাজাদের প্রতারিত করবে।
15 তোমরা যারা মারেশাতে বাস করছ,
আমি তোমাদের বিরুদ্ধে একজন লোককে আনব।
সেই লোকটি তোমাদের অধিকারের জিনিসগুলো নিয়ে নেবে।
ইস্রায়েলের মহিমা (ঈশ্বর) অদুল্লমে আসবে।
16 সেজন্য নিজেদের চুল কেটে ফেলো, মাথা টাক করে ফেলো।
কিন্তু কেন? কারণ তুমি সেই সমস্ত সন্তানদের জন্য কাঁদবে যাদের তুমি ভালোবাসো।
তোমাদের চুল কেটে ফেল এবং ঈগলের মতো নিজেদের মাথা টাক করে ফেলে তোমাদের দুঃখপ্রকাশ করো।
কিন্তু কেন? কারণ তোমাদের সন্তানদের তোমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।
যীশু বাহাত্তর জন লোককে পাঠালেন
10 এরপর প্রভু আরও বাহাত্তর[a] জন লোককে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে সমস্ত নগরে ও যে সমস্ত জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেই সব জায়গায় তাঁদের দুজন দুজন করে পাঠিয়ে দিলেন। 2 তিনি তাঁদের বললেন, “শস্য প্রচুর হয়েছে, কিন্তু তা কাটার জন্য মজুরের সংখ্যা অল্প, তাই শস্যের যিনি মালিক তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, যেন তিনি তাঁর ফসল কাটার জন্য মজুর পাঠান।
3 “যাও! আর মনে রেখো, নেকড়ে বাঘের মধ্যে ভেড়ার মতোই আমি তোমাদের পাঠাচ্ছি। 4 তোমরা টাকার বটুয়া, থলি বা জুতো সঙ্গে নিও না এবং পথের মধ্যে কাউকে শুভেচ্ছা জানিও না। 5 যে বাড়িতে তোমরা প্রবেশ করবে সেখানে প্রথমে বলবে, ‘এই গৃহে শান্তি হোক্!’ 6 সেখানে যদি শান্তির পাত্র কেউ থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তার সহবর্তী হবে। কিন্তু যদি সেরকম কেউ না থাকে, তাহলে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরে আসবে। 7 যে বাড়িতে যাবে সেখানেই থেকো, আর তারা যা খেতে দেয় তাই খেও, কারণ যে কাজ করে সে বেতন পাবার যোগ্য। এ বাড়ি সে বাড়ি করে ঘুরে বেড়িও না।
8 “তোমরা যখন কোন নগরে প্রবেশ করবে তখন সেই নগরের লোকেরা যদি তোমাদের স্বাগত জানায়, তবে সেখানকার লোকেরা তোমাদের সামনে যা কিছু ধরে, তা খেও। 9 সেই নগরের রোগীদের সুস্থ করো ও সেখানকার লোকদের বলো, ‘ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে।’
10 “তোমরা কোন নগরে প্রবেশ করলে যদি সেই নগরের লোকেরা তোমাদের স্বাগত না জানায়, তবে সেখানকার রাস্তায় বেরিয়ে এসে তোমরা বলো, 11 ‘এমনকি তোমাদের নগরের যে ধূলো আমাদের পায়ে লেগেছে তা আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে ফেললাম; তবে একথা জেনে রেখো যে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে গেছে।’ 12 আমি তোমাদের বলছি, সেই দিন এই নগরের থেকে সদোমের লোকদের অবস্থা অনেক বেশী সহনীয় হবে।
অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে যীশুর সতর্কবাণী
(মথি 11:20-24)
13 “কোরাসীন ধিক্ তোমাকে! বৈৎসৈদা ধিক্ তোমাকে! তোমাদের মধ্যে যে সব অলৌকিক কাজ করা হয়েছে তা যদি সোর ও সীদোনে করা হত, তবে সেখানকার লোকেরা অনেক আগেই চটের বস্ত্র পরে মাথায় ভস্ম ছিটিয়ে অনুতাপ করতে বসত। 14 যাইহোক্, বিচারের দিনে সোর সীদোনের অবস্থা বরং তোমাদের চেয়ে অনেক সহনীয় হবে। 15 তুমি কফরনাহূম! তুমি কি স্বর্গ পর্যন্ত উন্নীত হবে? না! তোমাকে নরক পর্যন্ত নামানো হবে!
16 “যারা তোমাদের কথা শোনে, তারা আমারই কথা শোনে; আর যারা তোমাদের অগ্রাহ্য করে, তারা আমাকেই অগ্রাহ্য করে। যারা আমাকে অগ্রাহ্য করে, তারা যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেই অগ্রাহ্য করে।”
শয়তানের পতন
17 এরপর সেই বাহাত্তরজন আনন্দের সঙ্গে ফিরে এসে বললেন, “প্রভু, আপনার নামে এমন কি ভূতরাও আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে!”
18 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আমি শয়তানকে বিদ্যুৎ ঝলকের মতো আকাশ থেকে পড়তে দেখলাম। 19 শোন! সাপ ও বিছেকে পায়ে দলবার ক্ষমতা আমি তোমাদের দিয়েছি; আর তোমাদের শত্রুর সমস্ত শক্তির ওপরে ক্ষমতাও আমি তোমাদের দিয়েছি; কোন কিছুই তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। 20 তবু আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, এ জেনে আনন্দ করো না; কিন্তু স্বর্গে তোমাদের নাম লেখা হয়েছে বলে আনন্দ কর।”
পিতার নিকট যীশুর প্রার্থনা
(মথি 11:25-27; 13:16-17)
21 ঠিক সেই মুহূর্তে পবিত্র আত্মার আনন্দে পূর্ণ হয়ে যীশু বললেন, “পিতা, আমি তোমার প্রশংসা করি, কারণ স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু, তুমি এসব বিষয় জ্ঞানীগুণী ও বুদ্ধিমান লোকদের কাছে গোপন রেখে শিশুদের কাছে প্রকাশ করেছ। হ্যাঁ, পিতা, এতেই তোমার আনন্দ।
22 “আমার পিতা আমায় সবই দিয়েছেন। পিতা ছাড়া আর কেউ জানে না পুত্র কে, আমার পুত্র ছাড়া আর কেউ জানে না পিতা কে। এছাড়া পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন, কেবল সে-ই জানে।”
23 এরপর শিষ্যদের দিকে ফিরে তিনি একান্তে তাঁদের বললেন, “তোমরা যা দেখছ, যে চোখ তা দেখতে পায় তা ধন্য! 24 কারণ আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যা দেখছ, অনেক ভাববাদী ও রাজা তা দেখার ইচ্ছা করলেও তা দেখতে পান নি; তোমরা যা শুনছ, তা শোনার ইচ্ছা করলেও তাঁরা তা শুনতে পান নি।”
দয়ালু শমরীয়ের দৃষ্টান্তমূলক কাহিনী
25 এরপর একজন ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুকে পরীক্ষার ছলে জিজ্ঞাসা করল, “গুরু, অনন্ত জীবন লাভ করার জন্য আমায় কি করতে হবে?”
26 যীশু তাকে বললেন, “বিধি-ব্যবস্থায় এ বিষয়ে কি লেখা আছে? সেখানে তুমি কি পড়েছ?”
27 সে জবাব দিল, “‘তোমার সমস্ত অন্তর, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে অবশ্যই তোমার প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসো।’(A) আর ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসো।’(B)”
28 তখন যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক উত্তরই দিয়েছ; ঐ সবই কর, তাহলে অনন্ত জীবন লাভ করবে।”
29 কিন্তু সে নিজেকে ধার্মিক দেখাতে চেয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করল, “আমার প্রতিবেশী কে?”
30 এর উত্তরে যীশু বললেন, “একজন লোক জেরুশালেম থেকে যিরীহোর দিকে নেমে যাচ্ছিল, পথে সে ডাকাতের হাতে ধরা পড়ল। তারা লোকটির জামা কাপড় খুলে নিয়ে তাকে মারধোর করে আধমরা অবস্থায় সেখানে ফেলে রেখে চলে গেল।
31 “ঘটনাক্রমে সেই পথ দিয়ে একজন ইহুদী যাজক যাচ্ছিল, যাজক তাকে দেখতে পেয়ে পথের অন্য ধার দিয়ে চলে গেল। 32 সেই পথে এরপর একজন লেবীয়[b] এল। তাকে দেখে সেও পথের অন্য ধার দিয়ে চলে গেল।
33 “কিন্তু একজন শমরীয় ঐ পথে যেতে যেতে সেই লোকটির কাছাকাছি এল। লোকটিকে দেখে তার মমতা হল। 34 সে ঐ লোকটির কাছে গিয়ে তার ক্ষতস্থান দ্রাক্ষারস দিয়ে ধুয়ে তাতে তেল ঢেলে বেঁধে দিল। এরপর সেই শমরীয় লোকটিকে তার নিজের গাধার ওপর চাপিয়ে একটি সরাইখানায় নিয়ে এসে তার সেবা যত্ন করল। 35 পরের দিন সেই শমরীয় দুটি রৌপ্যমুদ্রা বার করে সরাইখানার মালিককে দিয়ে বলল, ‘এই লোকটির যত্ন করবেন আর আপনি যদি এর চেয়ে বেশী খরচ করেন, তবে আমি ফিরে এসে আপনাকে তা শোধ করে দেব।’”
36 এখন বল, “এই তিন জনের মধ্যে সেই ডাকাত দলের হাতে পড়া লোকটির প্রকৃত প্রতিবেশী কে?”
37 সে বলল, “যে লোকটি তার প্রতি দয়া করল।”
তখন যীশু তাকে বললেন, “সে যেমন করল, যাও তুমি গিয়ে তেমন কর।”
মরিয়ম ও মার্থা
38 এরপর যীশু ও তাঁর শিষ্যরা জেরুশালেমের পথে যেতে যেতে কোন এক গ্রামে প্রবেশ করলেন। সেখানে মার্থা নামে একজন স্ত্রীলোক তাঁদের সাদর অভ্যর্থনা করলেন। 39 মরিয়ম নামে তাঁর একটি বোন ছিল, তিনি যীশুর পায়ের কাছে বসে তাঁর শিক্ষা শুনছিলেন। 40 কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার নানা রকম আয়োজন করতে মার্থা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি যীশুর কাছে এসে বললেন, “প্রভু, আপনি কি দেখছেন না, আমার বোন সমস্ত কাজ একা আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়েছে? ওকে বলুন ও যেন আমায় সাহায্য করে।”
41 প্রভু তখন মার্থাকে বললেন, “মার্থা, মার্থা তুমি অনেক বিষয় নিয়ে বড়ই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হয়ে পড়েছ। 42 কিন্তু কেবলমাত্র একটা বিষয়ের প্রয়োজন আছে। আর মরিয়ম সেই উত্তম বিষয়টি মনোনীত করেছে, যা তার কাছ থেকে কখনও কেড়ে নেওয়া হবে না।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International