M’Cheyne Bible Reading Plan
দায়ূদকে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি
17 প্রাসাদে ফিরে আসার পর দায়ূদ ভাববাদী নাথনকে বললেন, “আমি এরস কাঠের তৈরি রাজপ্রাসাদে বাস করি, কিন্তু সাক্ষ্যসিন্দুকটা পড়ে আছে তাঁবুতে। আমি ওটির জন্য একটা মন্দির বানাতে চাই।”
2 নাথন উত্তর দিলেন, “তুমি যা করতে চাও করো, ঈশ্বর স্বয়ং তোমার সহায়।”
3-4 সে দিন রাতে, ঈশ্বরের বার্তা নাথনের কাছে এলো। ঈশ্বর বললেন,
“যাও আমার নাম করে আমার সেবক দায়ূদকে গিয়ে বলো: ‘দায়ূদ আমার মন্দির তুমি বানাবে না। 5-6 ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি কোন মন্দিরে বাস করি নি। আমি তাঁবু থেকে তাঁবুতে ঘুরে বেড়িয়ে অধিষ্ঠান করেছি, ইস্রায়েলীয়দের জন্য নেতা নির্বাচন করেছি। ঐ সমস্ত নেতারা আমার ভক্ত ও সেবকদের দিশারী হবে। এক তাঁবু থেকে আরেক তাঁবুতে বাস করার সময় আমি কখনো এইসব নেতাদের বলিনি, তোমরা কেন আমার জন্য দামী কাঠের মন্দির বানাও নি?’
7 “এখন আমার সেবক দায়ূদকে গিয়ে বলো: সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন, ‘আমি তোমাকে মাঠ থেকে তুলে এনে মেষপালকের পরিবর্তে ইস্রায়েলে আমার ভক্তদের রাজা বানিয়েছি। 8 তুমি যখন যেখানে গিয়েছ আমি তোমার সহায় হয়ে, তোমার আগে আগে সেখানে গিয়ে তোমার শত্রুদের নিধন করেছি। এবার আমি তোমাকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা খ্যাতিমান ব্যক্তিদের একজনে পরিণত করব। 9 আমি এই জায়গা ইস্রায়েলীয়দের দিলাম। আমি ওদের এখানে বসালাম এবং ওরা এখানে বসবাস করবে। কেউ তাদের উত্যক্ত করবে না। দুষ্ট জাতিরাও আগের মতো তাদের আক্রমণ করবে না। 10 যেদিন থেকে আমি আমার লোকদের নেতৃত্ব দেবার জন্য বিচারকদের নিযুক্ত করেছি, সেই দিন থেকে আমি তোমাদের শত্রুদের জয় করে চলেছি।
“‘এবার, আমি তোমায় বলছি যে প্রভু তোমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করবেন।[a] 11 মৃত্যুর পর তুমি যখন তোমার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে যোগ দেবে আমি তোমার নিজের পুত্রকে নতুন রাজা করব এবং তার রাজত্ব সুদৃঢ় করব। 12 তোমার পুত্র আমার জন্য একটি মন্দির বানাবে আর আমি তোমার পুত্রের পরিবারকে আজীবন রাজত্ব করতে দেব। 13 তোমার আগে যিনি রাজা হিসাবে শাসন করতেন সেই শৌলের ওপর থেকে যদিও আমি আমার সমর্থন সরিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু তোমার পুত্রকে আমি সব সময়ই ভালবাসব। আমি হব তার পিতা এবং সে হবে আমার পুত্র। 14 তাকে চির জীবনের জন্য আমার মন্দির ও রাজত্বের ভার অর্পণ করব। আর তার শাসন চিরস্থায়ী হবে।’”
15 নাথন দায়ূদকে এই দর্শন এবং ঈশ্বর যা বলেছেন তা জানালেন।
দায়ূদের প্রার্থনা
16 রাজা দায়ূদ তখন পবিত্র তাঁবুতে গিয়ে প্রভুর সামনে বসে বললেন,
“হে প্রভু ঈশ্বর, তুমি কোন অজ্ঞাত কারণে আমার ও আমার পরিবারের প্রতি বরাবর অসীম করুণা করে এসেছো।” 17 ঈশ্বর এটা কি তোমার কাছে এত ক্ষুদ্র, যে তুমি আমায় দূর ভবিষ্যতে আমার পরিবারের ভাগ্য বলবে? হে ঈশ্বর, তুমি কি আমাকে সামান্য লোকের চেয়ে বেশী কিছু দেখো? 18 তুমি আমার জন্য এতো করেছ আমি আর কি-ই বা বলতে পারি! তুমি তো জানোই আমি তোমার আজ্ঞাবহ দাসানুদাস মাত্র। 19 হে প্রভু, শুধু তোমার ইচ্ছাতেই আমার জীবনে এইসব মহৎ ঘটনা ঘটেছে। তুমি এ সমস্ত মহৎ ঘটনাকে জ্ঞাত করতে চেয়েছিলে। 20 এ জগতে তোমার মতো আর কেই বা আছে? তুমি ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নেই। তুমি ছাড়া আর কোন দেবতা কখনো এতো বিস্ময়কর ও মহান কাজ করেননি! 21 ইস্রায়েলই পৃথিবীতে একমাত্র দেশ যার জন্য তুমি এত মহৎ ও শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয়ের কাজকর্ম করেছ। তুমিই আমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে মুক্ত করেছ। নিজ গুণেই তুমি খ্যাতি অর্জন করেছ। তোমার ভক্তদের নেতৃত্ব দিয়ে তুমি বিজাতীয়দের আমাদের জন্য তাদের নিজস্ব বাসভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করেছ। অন্য কোন লোকের ঈশ্বর এই রকম করেনি। 22 ইস্রায়েলীয়দের তুমি চিরকালের জন্য তোমার লোক হিসেবে বেছে নিয়েছো। এবং তুমিই তাঁদের ঈশ্বর হয়েছো।
23 “হে প্রভু, তুমি আমার ও আমার পরিবারের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করলে তা যেন চির দিন তোমার স্মরণে থাকে। তুমি যা বললে তাই যেন ঘটে। 24 তোমার নাম চিরকালের জন্য বিশ্বাস ভাজন ও মহান হোক্। লোকরা যেন বলে, ‘সর্বশক্তিমান প্রভু হলেন ইস্রায়েলের ঈশ্বর!’ যেন তোমার সেবক হিসাবে দায়ূদের গৃহ চিরকালের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
25 “হে প্রভু, তুমি আমাকে, তোমার দাসকে বলেছ যে, আমার বংশকে তুমি রাজবংশে পরিণত করবে। তাই আমি এতো সাহস করে তোমার কাছে এই সমস্ত প্রার্থনা করতে পারছি। 26 হে প্রভু, তুমিই ঈশ্বর, তুমি তোমার নিজের কথা দিয়েই আমার জন্য এইসব জিনিষ করতে সম্মত হয়েছিলে। 27 প্রভু, তুমি দয়া করে আমার পরিবারকে আশীর্বাদ করেছ এবং আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছ যে আমার পরিবার তোমায় সেবা করে চলবে। প্রভু যেহেতু তুমি স্বয়ং আমার পরিবারকে আশীর্বাদ করেছ তারা চিরকালই তোমার আশীর্বাদ-ধন্য থাকবে।”
নিজেকে ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ কর
4 তোমাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ কোথা থেকে আসে তা কি তোমরা জান? তোমাদের দেহের মধ্যে যে সব স্বার্থপর লালসা যুদ্ধ করছে, সেই সবের মধ্য থেকেই আসে। 2 তোমরা কিছু চাও কিন্তু তা পাও না, তখন খুন কর ও অপরকে হিংসা কর। কিন্তু তবুও তা পেতে পারো না, তাই তোমরা ঝগড়া কর, মারামারি কর। তোমরা যা চাও, তা পাও না, কারণ তোমরা ঈশ্বরের কাছে চাও না। 3 অথবা চাইলেও পাও না কারণ তোমরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে চাও। তোমরা কেবল নিজেদের ভোগ বিলাসে ব্যবহারের জন্য জিনিস চাও।
4 সুতরাং তোমরা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত নও। তোমাদের জানা উচিত যে জাগতিক বস্তুগুলিকে ভালবাসার অর্থ হল ঈশ্বরকে ঘৃণা করা। তাই যে কেউ জগতের বন্ধু হতে চায় সে ঈশ্বরের শত্রু হয়ে ওঠে। 5 তোমরা কি মনে কর যে শাস্ত্রের এইসব কথা অর্থহীন? শাস্ত্র বলে, “ঈশ্বর যে আত্মাকে আমাদের অন্তরে বাস করতে দিয়েছেন, তা চায় যেন আমরা শুধু তাঁরই হই।” 6 কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহদান তার থেকেও বড় বিষয়। তাই শাস্ত্রে লেখা আছে: “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু যাঁরা নম্র তিনি তাদের অনুগ্রহ প্রদান করেন।”(A)
7 তাই তোমরা নিজেদের ঈশ্বরের কাছে সঁপে দাও। দিয়াবলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও, তাহলে সে তোমাদের ছেড়ে পালিয়ে যাবে। 8 তোমরা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হও, তাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্তী হবেন। পাপীরা, তোমাদের জীবন থেকে পাপ দূর করো। তোমরা একই সাথে ঈশ্বরের ও জগতের সেবা করতে চেষ্টা করছ। তোমাদের অন্তঃকরণ পবিত্র কর। 9 তোমরা শোক কর, দুঃখে ভেঙে পড় ও কাঁদ, তোমাদের হাসি কান্নায় পরিণত হোক্, আর আনন্দ, বিষাদে পরিণত হোক্। 10 তোমরা প্রভুর সামনে নত হও, তাহলে তিনি তোমাদের উন্নীত করবেন।
বিচার কোরো না
11 ভাই ও বোনেরা, তোমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে নিন্দা করা বন্ধ কর। যদি কেউ তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে অথবা তার ভাইয়ের বিচার করে, সে বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই কথা বলে এবং ব্যবস্থার বিচার করে। যদি তুমি বিধি-ব্যবস্থার বিচার কর, তাহলে তুমি আর তার পালনকারী হলে না বরং বিধি-ব্যবস্থার বিচারক হলে। 12 একমাত্র ঈশ্বরই বিধি-ব্যবস্থা দিতে পারেন ও বিচার করতে পারেন। একমাত্র তিনিই বিচারকর্তা, কেবল তিনিই আমাদের রক্ষা করতে বা বিনষ্ট করতে পারেন। তাই অন্য কারুরই বিচার করা তোমার অধিকারে নেই।
তোমার জীবনের পরিকল্পনা ঈশ্বরের হাতে দাও
13 তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, “আজ বা কাল আমরা এমন শহরে যাব, যেখানে গিয়ে এক বছর থাকব আর ব্যবসা করে লাভ করব।” 14 একটু ভেবে দেখ, কাল কি হবে তা তুমি জান না। তোমাদের প্রাণ তো কুয়াশার মতো, ক্ষণকালের জন্য তা দৃষ্টিগোচর হয়, তারপর উবে যায়। 15 তাই তোমাদের বলা উচিত, “প্রভুর ইচ্ছা হলে, আমরা বেঁচে থাকব আর এটা ওটা করব।” 16 কিন্তু এখন তোমরা নিজেদের বিষয়ে নিজেরাই অহঙ্কার ও দর্প করছ; আর এই প্রকারের সব অহঙ্কার অন্যায়। 17 মনে রেখো, যে সৎ কর্ম করতে জানে অথচ তা না করে, সে পাপ করে।
ঈশ্বরের আহ্বান আর যোনার পলায়ন
1 প্রভু অমিত্তয়ের পুত্র যোনার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। প্রভু বলেছিলেন, 2 “নীনবী একটা বড় শহর। আমি শুনেছি, সেখানকার লোকরা নানা রকম খারাপ কাজকর্ম করছে। কাজেই সেই শহরে যাও এবং লোকদের বল তারা যেন সেই খারাপ কাজ করা বন্ধ করে।”
3 যোনা ঈশ্বরের আদেশ মানতে চাননি সেজন্য যোনা প্রভুর কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। যোনা যাফোতে গেলেন। যোনা সেখানে একটা নৌকা দেখতে পেয়েছিলেন যেটা অনেক দূরের শহর তর্শীশে যাচ্ছিল। যোনা নৌকাতে উঠে যাবার ভাড়া দিলেন। ঈশ্বরের কাছ থেকে পালিয়ে যাবার জন্য যোনা ঐ নৌকায় তর্শীশ পর্যন্ত ভ্রমন করতে চেয়েছিলেন।
ভারী ঝড়
4 কিন্তু প্রভু সমুদ্রে একটা বড় রকমের ঝড় আনলেন। বাতাস সমুদ্রকে খুবই রুক্ষ করে তুললো। ঝড়টা এতই শক্তিশালী ছিল যে নৌকাটি ভেঙে টুকরো টুকরো হবার উপক্রম হল। 5 ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য লোকরা নৌকাটিকে হাল্কা করতে চেষ্টা করল। সে জন্য তারা নৌকার মালগুলো ছুঁড়ে সমুদ্রে ফেলে দিতে আরম্ভ করল। মাঝিরা খুবই ভয় পেয়ে গেল। প্রত্যেকে তাদের দেবতাদের উদ্দেশ্যে প্রার্থণা করতে আরম্ভ করল।
যোনা নৌকার একেবারে পশ্চাদ্ভাগে চলে গেলেন এবং তিনি শুয়ে পড়লেন ও ঘুমোতে গেলেন। 6 নৌকার প্রধান মাঝি যোনাকে দেখতে পেল এবং বলল, “উঠে পড়ো! তুমি কেন ঘুমাচ্ছো? তুমি তোমার দেবতার কাছে প্রার্থনা করো! দেবতা হয়তো তোমার প্রার্থনা শুনবেন এবং আমাদের রক্ষা করবেন!”
এই ঝড়ের কারণ কি ছিল?
7 তখন লোকরা একে অপরকে বলল, “আমরা অবশ্যই ঘুঁটি চেলে জানতে চেষ্টা করব এই দুর্যোগগুলো কেন আমাদের ভাগ্যে ঘটছে।”
সে জন্য লোকে ঘুঁটি চালল এবং দেখা গেল, যোনার জন্যেই এই দুর্যোগগুলো ঘটছে। 8 তখন লোকরা যোনাকে বলল, “দেখ তোমার দোষেই এই ভয়ঙ্কর ঝড় আমাদের ভাগ্যে ঘটছে! সেজন্য আমাদের বল তুমি কি করেছো? তোমার পেশা কি? তুমি কোথা থেকে আসছো? তোমার দেশ কোথায়? তোমার লোকরা কারা?”
9 যোনা লোকদের বললেন, “আমি একজন ইব্রীয় (ইহূদী)। আমি প্রভু, স্বর্গের ঈশ্বরের উপাসনা করি, তিনি সেই ঈশ্বর যিনি সমুদ্র ও ভূমি সৃষ্টি করেছেন।”
10 যোনা লোক জনদের বললেন, তিনি প্রভুর কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকরা এই কথা জেনে খুবই ভয় পেয়ে গেল। যোনাকে তখন তারা জিজ্ঞেস করল, “তুমি তোমার ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কেন এমন ভয়ঙ্কর কাজ করেছ?”
11 বাতাস ও সমুদ্রের ঢেউ ক্রমশঃ শক্তিশালী হতে আরম্ভ করছিল। তাই লোকরা যোনাকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা আমাদের রক্ষা করার জন্য কি করবো? সমুদ্রকে শান্ত করবার জন্য আমরা তোমার প্রতি কি করব?”
12 যোনা লোকদের বললেন, “আমি জানি আমি ভুল করেছি সেই জন্যই সমুদ্রে ঝড় এসেছে। আমাকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দাও। তাহলে সমুদ্র শান্ত হয়ে যাবে।”
13 কিন্তু লোকরা যোনাকে সমুদ্র ছুঁড়ে দিতে চাইল না। নৌকাটিকে তীরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু তারা সফল হল না। প্রচণ্ড বাতাস এবং উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগল!
যোনার শাস্তি
14 সেই জন্য লোকরা প্রভুর কাছে চিৎকার করে বলল, “প্রভু আমরা এই লোকটিকে তার খারাপ কাজের জন্য সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি। কাজেই দয়া করে বলবেন না যে আমরা এক নির্দোষ লোককে মেরে ফেলার জন্য দয়া করে আমাদের মেরে ফেলবেন না। আমরা জানি আপনি হচ্ছেন প্রভু, এবং আপনি যা চাইছেন তা সবকিছুই করতে পারেন। কিন্তু দয়া করে আপনি আমাদের প্রতি সদয় হোন।”
15 সেই জন্য লোকরা যোনাকে সমুদ্রে ফেলে দিল। ঝড় থেমে গেল—সমুদ্র আবার শান্ত হল! 16 লোকরা এই ঘটনা দেখে ভয় পেয়ে গেল এবং তারা প্রভুকে খুব ভয় পেত। তারা প্রভুর নামে বিশেষ শপথ নিল এবং নৈবেদ্য উৎসর্গ করল।
17 আর প্রভু যোনাকে গিলে ফেলার জন্য একটা বড় মাছ ঠিক করে রেখেছিলেন। যোনা মাছের পেটের মধ্যে তিন দিন ও তিন রাত্রি রইলেন।
যীশুই বিশ্রামবারের প্রভু
(মথি 12:1-8; মার্ক 2:23-28)
6 কোন এক বিশ্রামবারে যীশু একটি শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা শীষ ছিঁড়ে হাতে মেড়ে মেড়ে খাচ্ছিলেন। 2 এই দেখে কয়েকজন ফরীশী বলল, “যে কাজ করা বিশ্রামবারে বিধি-সম্মত নয় তা তোমরা করছ কেন?”
3 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তাঁরা কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? 4 তিনি তো ঈশ্বরের গৃহে ঢুকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত রুটি নিয়ে খেয়েছিলেন, আর তাঁর সঙ্গীদের তা দিয়েছিলেন, যা যাজক ছাড়া অন্য কারো খাওয়া বিধি-সম্মত ছিল না।” 5 যীশু তাদের আরও বললেন, “মানবপুত্রই বিশ্রামবারের প্রভু।”
বিশ্রামবারে যীশু এক ব্যক্তিকে সুস্থ করলেন
(মথি 12:9-14; মার্ক 3:1-6)
6 আর এক বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। সেখানে একজন লোক ছিল যার ডান হাতটি শুকিয়ে গিয়েছিল। 7 তিনি তাকে বিশ্রামবারে সুস্থ করেন কি না দেখার জন্য ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর ওপর নজর রাখছিল, যেন তারা যীশুর বিরুদ্ধে দোষ দেবার কোন সূত্র খুঁজে পায়। 8 যীশু তাদের মনের চিন্তা জানতেন, তাই যে লোকটির হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তাকে বললেন, “তুমি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াও!” তখন সেই লোকটি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াল। 9 যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের একটা প্রশ্ন করি, বিশ্রামবারে কি করা বিধিসম্মত, ভাল করা না ক্ষতি করা? কাউকে প্রাণে বাঁচানো না ধ্বংস করা?”
10 চারপাশে তাদের সকলের দিকে তাকিয়ে তিনি লোকটিকে বললেন, “তোমার হাতখানা বাড়াও।” সে তাই করলে তার হাত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেল। 11 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা রাগে জ্বলতে লাগল। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল, “যীশুর প্রতি কি করা হবে?”
যীশু বারোজন প্রেরিতকে মনোনীত করলেন
(মথি 10:1-4; মার্ক 3:13-19)
12 যীশু সেই সময় একবার প্রার্থনা করার জন্য একটি পর্বতে গেলেন। সারা রাত ধরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় কাটালেন। 13 সকাল হলে তিনি তাঁর অনুগামীদেব নিজের কাছে ডাকলেন ও তাঁদের মধ্য থেকে বারোজনকে মনোনীত করে তাঁদের “প্রেরিত” পদে নিয়োগ করলেন। তাঁরা হলেন,
14 শিমোন যার নাম রাখলেন তিনি পিতর
আর তার ভাই আন্দ্রিয়,
যাকোব
ও যোহন
আর ফিলিপ
ও বর্থলময়,
15 মথি,
থোমা,
আলফেয়ের ছেলে যাকোব,
শিমোন যে ছিল দেশ ভক্ত দলের লোক।
16 যাকোবের ছেলে যিহূদা
আর যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়, যে পরে বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিল।
যীশু শিক্ষা দিলেন ও আরোগ্যদান করলেন
(মথি 4:23-25; 5:1-12)
17 যীশু তাঁর প্রেরিতদের[a] সঙ্গে নিয়ে পর্বত থেকে নেমে একটা সমতল জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। সেখানে তাঁর আরো অনুগামী এসে জড়ো হয়েছিল। সমস্ত যিহূদা জেরুশালেম এবং সোর সীদোনের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে বিস্তর লোক তাঁর কাছে এসে জড় হল। 18 তাঁরা তার কথা শুনতে ও তাদের রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ হতে তাঁর কাছে এসেছিল। যাঁরা মন্দ আত্মার প্রকোপে কষ্ট পাচ্ছিল তারাও সুস্থ হল। 19 সকলেই তাঁকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বার হয়ে তাদের আরোগ্য দান করছিল।
20 যীশু তাঁর অনুগামীদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
“দরিদ্ররা তোমরা ধন্য,
কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই।
21 তোমরা এখন যারা ক্ষুধিত, তারা ধন্য
কারণ তোমরা পরিতৃপ্ত হবে।
তোমরা এখন যারা চোখের জল ফেলছ, তারা ধন্য,
কারণ তোমরা আনন্দ করবে।
22 “ধন্য তোমরা যখন মানবপুত্রের লোক বলে অন্যরা তোমাদের ঘৃণা করে, সমাজচ্যুত করে, অপমান করে, তোমাদের নাম মুখে আনতে চায় না এবং তোমাদের কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। 23 সেই দিন তোমরা আনন্দ করবে, আনন্দে নৃত্য করবে কারণ দেখ স্বর্গে তোমাদের জন্য পুরস্কার সঞ্চিত আছে। ওদের পূর্বপুরুষরা ভাববাদীদের সঙ্গে এই রকমই ব্যবহার করেছে।
24 “কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা, ধিক্ তোমাদের,
কারণ তোমরা তো এখনই সুখ পাচ্ছ।
25 তোমরা যারা আজ পরিতৃপ্ত, ধিক্ তোমাদের,
কারণ তোমরা ক্ষুধার্ত হবে।
তোমরা যারা আজ হাসছ, ধিক্ তোমাদের,
কারণ তোমরা কাঁদবে, শোক করবে।
26 “ধিক্ তোমাদের যখন সব লোক তোমাদের প্রশংসা করে, কারণ এইসব লোকদের পূর্বপুরুষরা ভণ্ড ভাববাদীদেরও প্রশংসা করত।
শত্রুদের ভালবাসো
(মথি 5:38-48; 7:12)
27 “তোমরা যারা শুনছ, আমি কিন্তু তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো। যারা তোমাদের ঘৃণা করে, তাদের মঙ্গল করো। 28 যারা তোমাদের অভিশাপ দেয়, তাদের আশীর্বাদ করো। যারা তোমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তাদের জন্য প্রার্থনা করো। 29 কেউ যদি তোমার একগালে চড় মারে, তার কাছে অপর গালটি বাড়িয়ে দাও। কেউ যদি তোমার চাদর কেড়ে নেয়, তাকে তোমার জামাটিও নিতে দাও। 30 তোমার কাছে যে চায় তাকে দাও। আর তোমার কোন জিনিস যদি কেউ নেয়, তবে তা ফেরত চেও না। 31 অন্যের কাছ থেকে তুমি যেমন ব্যবহার পেতে চাও, তাদের সঙ্গেও তুমি তেমনি ব্যবহার করো।
32 “যারা তোমাদের ভালবাসে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই ভালবাস, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? কারণ পাপীরাও তো একই রকম করে। 33 যারা তোমাদের উপকার করে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই উপকার কর, তাতে প্রশংসার কি আছে? পাপীরাও তো তাই করে। 34 যারা ধার শোধ করতে পারে এমন লোকদেরই যদি কেবল তোমরা ধার দাও, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? এমন কি পাপীরাও তা ফিরে পাবার আশায় তাদের মতো পাপীদের ধার দেয়।
35 “কিন্তু তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো, তাদের মঙ্গল করো, আর কিছুই ফিরে পাবার আশা না রেখে ধার দিও। তাহলে তোমাদের মহাপুরস্কার লাভ হবে, আর তোমরা হবে পরমেশ্বরের সন্তান, কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ ও দুষ্টদের প্রতিও দয়া করেন। 36 তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু তোমরাও তেমন দয়ালু হও।
নিজেদের দিকে তাকাও
(মথি 7:1-5)
37 “অপরের বিচার করো না, তাহলে তোমাদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না। অপরের দোষ ধরো না, তাহলে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে না। অন্যকে ক্ষমা করো, তাহলে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে। 38 দান কর, প্রতিদান তুমিও পাবে। তারা তোমাদের অনেক বেশী করে, চেপে চেপে, ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে উপচে দেবে। কারণ অন্যদের জন্য যে মাপে মেপে দিচ্ছ, সেই মাপেই তোমাদের মেপে দেওয়া হবে।”
39 যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, “একজন অন্ধ কি অন্য একজন অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? তাহলে কি তারা উভয়েই গর্তে পড়বে না? 40 কোন ছাত্র তার শিক্ষকের উর্দ্ধে নয়; কিন্তু শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে প্রত্যেক ছাত্র তার শিক্ষকের মতো হতে পারে।
41 “তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে তুমি সেটা দেখছ, কিন্তু তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে সেটা দেখছ না, কেন? 42 তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে তা যখন লক্ষ্য করছ না, তখন কেমন করে তোমার ভাইকে বলতে পার, ‘ভাই তোমার চোখে যে কুটোটা আছে, এস তা বার করে দিই।’ কেন তুমি একথা বল? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তা বার করে ফেল, আর তবেই তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে, তা বার করার জন্য স্পষ্ট করে দেখতে পাবে।
দু’প্রকার ফল
(মথি 7:17-20; 12:34-35)
43 “এমন কোন ভাল গাছ নেই যাতে খারাপ ফল ধরে, আবার এমন কোন খারাপ গাছ নেই যাতে ভাল ফল ধরে। 44 প্রত্যেক গাছকে তার ফল দিয়েই চেনা যায়। লোকে কাঁটা-ঝোপ থেকে ডুমুর ফল তোলে না, বা বুনো ঝোপ থেকে দ্রাক্ষা সংগ্রহ করে না। 45 সৎ লোকের অন্তরের ভাল ভাণ্ডার থেকে ভাল জিনিসই বার হয়। আর দুষ্ট লোকের মন্দ অন্তর থেকে মন্দ বিষয়ই বার হয়। মানুষের অন্তরে যা থাকে তার মুখ সে কথাই বলে।
দু’প্রকার লোক
(মথি 7:24-27)
46 “তোমরা কেন আমাকে ‘প্রভু, প্রভু’ বলে ডাক, অথচ আমি যা বলি তা কর না? 47 যে কেউ আমার কাছে আসে ও আমার কথা শুনে সেসব পালন করে, সে কার মতো? 48 সে এমন একজন লোকের মতো, যে বাড়ি তৈরী করতে গভীর ভাবে খুঁড়ে পাথরের ওপর ভিত গাঁথল। তাই যখন বন্যা এল, তখন নদীর জলের ঢেউ এসে সেই বাড়িটিতে আঘাত করল, কিন্তু তা নড়াতে পারল না, কারণ তার ভিত ছিল মজবুত।
49 “যে আমার কথা শোনে অথচ সেই মতো কাজ না করে, সে এমন একজন লোকের মতো, যে মাটির উপর ভিত ছাড়াই বাড়ি তৈরী করেছিল। পরে নদীর স্রোত এসে তাতে আঘাত করলে তখনই বাড়িটা ভেঙে পড়ল এবং একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International