M’Cheyne Bible Reading Plan
দায়ূদ ইস্রায়েলের রাজা হলেন
11 হিব্রোণে ইস্রায়েলের সমস্ত লোক দায়ূদের কাছে এসে বলল, “আপনার সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। 2 আগে, রাজা শৌল জীবিত থাকা কালীন আপনি আমাদের যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রভু স্বয়ং আপনাকে বলেছিলেন, ‘দায়ূদ, তুমি আমার লোকদের, ইস্রায়েলের লোকদের মেষপালক হবে। একদিন তুমিই তাদের নেতা হবে।’”
3 ইস্রায়েলের সমস্ত নেতারাও হিব্রোণে দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে এলে, তিনি প্রভুর সাক্ষাতে তাঁদের সকলের সঙ্গে সেখানে চুক্তিবদ্ধ হলেন এবং নেতারা সকলে তাঁর গায়ে সুগন্ধী তেল ছিটিয়ে তাঁকে ইস্রায়েলের নতুন রাজা হিসেবে অভিষেক করলেন। শমূয়েলের মাধ্যমে প্রভু আগেই একথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন।
দায়ূদ জেরুশালেম দখল করলেন
4 দায়ূদ এবং ইস্রায়েলের সমস্ত লোকরা তখন জেরুশালেমে গেলেন। সে সময়ে জেরুশালেম শহরের নাম ছিল যিবূষ। আর সেখানে যারা বাস করত তাদের যিবূষীয় বলা হত। এই সমস্ত যিবূষীয়রা 5 দায়ূদকে তাদের শহরে ঢুকতে দিতে অস্বীকার করলে, দায়ূদ তাদের যুদ্ধে পরাজিত করে সিয়োনের দুর্গ দখল করলেন। এই অঞ্চলটিই পরবর্তী কালে দায়ূদ নগরী বা দায়ূদের শহর নামে পরিচিত হয়।
6 দায়ূদ বললেন, “যিবূষীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে আমার সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবে তাকেই আমি আমার সেনাবাহিনীর সেনাপতি করব।” তখন সরূয়ার পুত্র যোয়াব সেই আক্রমণের নেতৃত্ব দিলেন এবং তাঁকে ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীর সেনাপতি করা হল।
7-8 দায়ূদ ঐ দুর্গে তাঁর বসতি বিস্তার করে দুর্গের চারপাশে শহর বানিয়ে ছিলেন বলেই এই জায়গার নাম দায়ূদ নগরী হয়েছিল। দায়ূদ মিল্লো থেকে দুর্গের প্রাচীর পর্যন্ত অঞ্চলে শহর স্থাপন করেছিলেন। যোয়াব শহরের অন্যান্য অঞ্চলের সংস্কার সাধন করেছিলেন। 9 এদিকে সর্বশক্তিমান প্রভুর সহায়তায় উত্তরোত্তর দায়ূদের শক্তিবৃদ্ধি হতে থাকল।
তিন জন বীর সৈনিক
10 ইস্রায়েলে দায়ূদের শাসন কালে তিনজন নেতা ক্ষমতা ও খ্যাতির শিখর স্পর্শ করেছিলেন। এঁরা দায়ূদের বিশিষ্ট সেনাবাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব করতেন এবং ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের সঙ্গে একত্রিতভাবে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দায়ূদের রাজ্যকে সহায়তা করতেন।
11 এই তিন জন ব্যক্তির মধ্যে প্রথম জন হলেন হক্মোনীয়ের পুত্র যাশবিয়াম।
তিনি ছিলেন রথ-পরিচালক অধিকর্তাদের নেতা। একবার যাশবিয়াম তাঁর বর্শা দিয়ে এক সঙ্গে 300 জনকে হত্যা করেছিলেন।
12 দ্বিতীয় জন হলেন অহোহের দোদোর পুত্র ইলিয়াসর। 13-14 তিনি পস্-দম্মীমে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধের সময় দায়ূদকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলের লোকরা যখন পলেষ্টীয়দের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য পালাতে শুরু করেছিল সে সময় এই তিন জন বিরোধী সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এক ক্ষেত ভর্ত্তি যব রক্ষা করে এবং বিপক্ষীয় শত্রুদের প্রভুর সহায়তায় পরাজিত করে।
15 এক দিন যখন দায়ূদ অদুল্লমের গুহাতে আটকা পড়েছেন এবং রফায়ীম উপত্যকা পর্যন্ত পলেষ্টীয় সেনাবাহিনী এগিয়ে এসেছে, সে সময় এই তিন বীর হামাগুড়ি দিয়ে সমস্ত পথটুকু গিয়ে দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।
16 আর এক বার এক দল পলেষ্টীয় সেনা তখন বৈৎলেহমে আর দায়ূদ ছিলেন দুর্গের ভেতরে। 17 নিজের বাসভূমির এক গণ্ডুষ জল পান করার জন্য তৃষ্ণার্ত দায়ূদ কথা প্রসঙ্গে সবে বলেছেন, “ইস, কেউ যদি এখন আমায় বৈৎলেহমের সিংহদরজার পাশের কুঁয়োটা থেকে একটু জল পান করাতে পারত।” দায়ূদ সত্যি করে চাইছিলেন না, কেবল মাত্র বলছিলেন। 18 সঙ্গে সঙ্গে এই তিন বীর যোদ্ধা পলেষ্টীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে গিয়ে বৈৎলেহমের যে কুঁয়োর জল দায়ূদ পান করতে চেয়েছিলেন, সেই জল নিয়ে আসলেন। দায়ূদ তখন সেই জল নিজে পান না করে নৈবেদ্য স্বরূপ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে মাটিতে ঢেলে দিয়ে বললেন, 19 “হে প্রভু, নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে যারা এই জল আমার জন্য এনেছে তা পান করা আর তাদের রুধির পান করা সমতুল্য। তাই দায়ূদ জল পান করতে অস্বীকার করলেন।” দায়ূদের ঐ তিন জন নায়ক এই ধরণের আরো অনেক বীরত্বপূর্ণ কাজকর্ম করেছিলেন।
অন্যান্য বীর সৈনিকরা
20 যোয়াবের ভাই অবীশয় ছিলেন এই তিন বীরের নেতা। তিনি একবার বর্শা দিয়ে 300 জনকে হত্যা করেছিলেন। 21 অবীশয়ের খ্যাতি এদের কারো থেকে কম তো ছিলই না বরঞ্চ সেরা তিরিশ জন সেনার তুলনায়ও দ্বিগুণ ছিল। যদিও তিনি তিন বীরের একজন ছিলেন না, তবুও তিনি তাদের নেতা হয়েছিলেন।
22 যিহোয়াদার পুত্র বনায় একজন বীরযোদ্ধা ছিলেন। তিনি কব্সেলের লোক ছিলেন এবং বহু দুঃসাহসিক কাজ করেছিলেন। তিনি মোয়াবের দুই সাহসী যোদ্ধাকে হত্যা করা ছাড়াও একবার এক তুষারাচ্ছন্ন দিনে একটা গুহায় প্রবেশ করে একটা সিংহ মেরেছিলেন। 23 এছাড়াও বনায়, তাঁতীর দণ্ডের মত সুবিশাল বল্লমধারী 71/2 ফুট দীর্ঘ এক মিশরীয় সেনাকে মেরে ফেলেছিলেন। বনায়ের ছিল শুধু একটা লাঠি কিন্তু মিশরীয়র হাত থেকে তার বল্লমটা কেড়ে নিয়ে তিনি তাই দিয়েই ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। 24 যিহোয়াদার এই বীরপুত্রের খ্যাতি ঐ তিন জন নায়কের তুলনায় কোন অংশে কম ছিল না। 25 এমনকি ঐ তিন জনের একজন না হয়েও তাঁর খ্যাতি সেরা তিরিশ জন সৈনিকের থেকে বেশি ছিল। দায়ূদ তাঁকে তাঁর দেহরক্ষীদের নেতা নিযুক্ত করেছিলেন।
30 জন বীর সৈনিক
26 যোয়াবের ভাই অসাহেল,
বৈৎলেহমের দোদোর পুত্র ইল্হানন,
27 হরোরের শম্মোৎ,
পলোনের হেলস,
28 তকোয়ের ইক্কেশের পুত্র ঈরা,
অনাথোতের অবীয়েষর,
29 হূশাতীয় সিব্বখয়,
অহোহর ঈলয়,
30 নটোফার মহরয়,
নটোফার বানার পুত্র হেলদ,
31 বিন্যামীন পরিবারের গিবিয়ার রীবয়ের পুত্র ইথয়,
পিরিয়াথোনের বনায়,
32 গাশ-উপত্যকা নিবাসী হূরয়,
অর্ব্বতীয় অবীয়েল,
33 বাহরূমের অস্মাবৎ,
শাল্বোনের ইলিয়হবঃ,
34 গিষোণের হাষেমের পুত্র হরারী,
শাগির পুত্র যোনাথন,
35 হরারী সাখরের পুত্র অহীয়াম,
ঊরের পুত্র ইলীফাল,
36 মখেরাতের হেফর,
পলোনার অহিয়,
37 কর্মিলের হিষ্রো,
ইষ্বয়ের পুত্র নারয়,
38 নাথনের ভাই যোয়েল,
হগ্রির পুত্র মিভর,
39 অম্মোনের সেলক,
সরূয়ার পুত্র যোয়াবের অস্ত্রবাহক বেরোতের নহরয়,
40 যিত্রয়ের ঈরা
আর গারেব,
41 হিত্তীয়ের ঊরিয়,
অহলয়ের পুত্র সাবদ,
42 রূবেণ পরিবারগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান শীষার পুত্র অদীনা ও তাঁর ত্রিশ জন সঙ্গী,
43 মাখার পুত্র হানান,
মিত্নর যোশাফট,
44 অষ্টরোতের উষিয়,
অরোয়েরবের হোথমের দুই পুত্র শাম ও যিয়ীয়েল,
45 শিম্রির পুত্র যিদীয়েল
আর তাঁর ভাই তীষীয় যোহা,
46 মহবীর ইলীয়েল,
ইল্নামের দুই পুত্র যিরীবয় আর যোশবিয়,
মোয়াবের যিৎমা,
47 ইলীয়েল, ওবেদ আর মসোবায়ের যাসীয়েল প্রমুখ সকলেই ছিলেন দায়ূদের “সেরা তিরিশ” সৈন্যদলের সেনা।
যে সমস্ত সাহসী লোকরা দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল
12 দায়ূদ যখন কীশের পুত্র শৌলের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন তখন যে সমস্ত যোদ্ধারা সিক্লগে তাঁর কাছে এসেছিল এটি হল তাদের তালিকা। তারা দায়ূদকে যুদ্ধে সাহায্য করেছিল। 2 এরা যে কোন হাতেই তীর ছুঁড়তে পারতো, দু’হাতে গুলতিও চালাতে পারতো। এরা সকলেই বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠীর সদস্য এবং শৌলের আত্মীয় ছিল।
3 অহীয়েষর ছিলেন এঁদের দলের নেতা, এছাড়াও এই দলে ছিলেন তাঁর ভাই যোয়াশ (এঁরা গিবিয়াতের শমায়ের পুত্র), অস্মাবতের পুত্র যিষীয়েল আর পেলট, অনাথোত শহরের বরাখা আর যেহূ, 4 গিবিয়োনের যিশ্ময়িয় (ইনি সেই ত্রিশ জন বীরের অন্যতম এবং তাদের অধ্যক্ষ ছিলেন।), যিরমিয়, যহসীয়েল, যোহানন, গদেরাথের যোষাবদ, 5 ইলিয়ূষয়, যিরীমোৎ, বালিয়, শমরিয়, হরূফের শফটিয়, 6 ইল্কানা, যিশিয়, অসরেল, যোয়েষর, যাশবিয়াম প্রমুখ কোরহ পরিবারগোষ্ঠীর যোদ্ধারা 7 আর গদোর শহরের যিরোহমের পুত্র যোয়েলা আর সবদিয়।
গাদীয় লোক
8 গাদ পরিবারগোষ্ঠীর একাংশও মরুভূমিতে দায়ূদের দুর্গে গিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। এরাও সকলেই সিংহের মত পরাক্রমশালী এবং কুশলী যোদ্ধা ছিলেন। বর্শা আর ঢাল নিয়ে যুদ্ধ করা ছাড়াও এঁরা সকলেই পাহাড়ী পথে হরিণের মত দৌড়তে পারতেন।
9 গাদ পরিবারগোষ্ঠীর এই দলের নেতা ছিলেন এষর; দ্বিতীয় ওবদিয় এবং তৃতীয় ইলীয়াব। 10 চতুর্থ মিশমান্না, পঞ্চম যিরমিয়, 11 ষষ্ঠ অত্তয়, সপ্তম ইলীয়েল, 12 অষ্টম যোহানন, নবম ইল্সাবাদ, 13 দশম যিরমিয় আর একাদশ মগ্বন্নয়।
14 এঁরা সকলেই গাদীয় সেনাবাহিনীর সেনাপতি ছিলেন এবং এই দলের দুর্বলতম ব্যক্তিও একাই 100 জনের সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখতেন। দলের সর্বাপেক্ষা যিনি শক্তিমান ছিলেন তিনি একা 1000 জনের মোকাবিলা করতে পারতেন। 15 গাদ পরিবারগোষ্ঠীর এই সমস্ত সৈনিকরা বছরের প্রথম মাসে, যখন যর্দন নদীতে প্রবল বন্যা হচ্ছে সে সময়ে নদী পার হয়ে উপত্যকার লোকদের পূর্ব ও পশ্চিমে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অন্যান্য সৈনিকরাও দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিলেন
16 বিন্যামীন ও যিহূদা পরিবারগোষ্ঠীর অন্যান্য ব্যক্তিরাও দুর্গে এসে দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। 17 দায়ূদ তাঁদের সঙ্গে দেখা করে বললেন, “আপনারা যদি শান্তিতে আমাকে সাহায্য করতে এসে থাকেন তাহলে আমি আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমি কিছু অন্যায় না করা সত্ত্বেও আপনারা যদি আমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে এসে থাকেন তাহলে আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর যেন তা দেখেন এবং আপনাদের শাস্তি দেন।”
18 অমাসয় ছিলেন সেই তিরিশ জন বীরের নেতা। তখন আত্মার ভর হলে তিনি বলে উঠলেন:
“দায়ূদ আমরা তোমার পক্ষে।
আমরা তোমার সঙ্গে আছি। হে যিশয়ের পুত্র—শান্তি!
তোমার শান্তি হোক্।
এবং যারা তোমায় সাহায্য করে তাদের শান্তি হোক্। কারণ তোমার ঈশ্বর তোমায় সাহায্য করেন।”
দায়ূদ তখন এই সমস্ত ব্যক্তিকেই তাঁর দলে স্বাগত জানিয়ে, তাঁদের ওপর নিজের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দিলেন।
19 মনঃশি পরিবারগোষ্ঠীর অনেকেই দায়ূদ যখন পলেষ্টীয়দের সঙ্গে শৌলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তবে পলেষ্টীয় নেতাদের আপত্তি থাকায় শেষ পর্যন্ত দায়ূদ শৌলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পলেষ্টীয়দের সাহায্য করেন নি। এই সমস্ত পলেষ্টীয় নেতারা বলেছিল, “দায়ূদ যদি তাঁর মনিব, শৌলের কাছে ফিরে যান তবে আমাদের মুণ্ড কাটা পড়বে।” 20 মনঃশি পরিবারগোষ্ঠীর যে সমস্ত ব্যক্তি সিক্লগ শহরে এসে দায়ূদের দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন—অদ্ন, যোষাবদ, যিদীয়েল, মীখায়েল, যোষাবদ, ইলীহূ আর সিল্লথয়। এঁরা সকলেই মনঃশি পরিবারে সৈন্যাধ্যক্ষ ছিলেন। 21 অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁরা দায়ূদকে সাহায্য করেছিলেন। এই সমস্ত অসৎ ব্যক্তিরা সারা দেশে সুযোগ সুবিধে মত চুরি-চামারি চালিয়ে যাচ্ছিল। মনঃশি পরিবারের বীর যোদ্ধারা দায়ূদের সেনাবাহিনীর নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।
22 প্রতি দিন দলে দলে লোক এসে দায়ূদের পাশে দাঁড়ানোয় এমশঃ তিনি এক সুবিশাল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুললেন।
হিব্রোণে দায়ূদের সঙ্গে যোগদানকারী অন্যান্য লোকরা
23 এইসব ব্যক্তিবর্গ যাঁরা হিব্রোণ শহরে দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং প্রভু যা বলেছিলেন সেই অনুযায়ী শৌলের রাজধানী দায়ূদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন, তাঁরা সংখ্যায় হলেন নিম্নরূপ:
24 যিহূদা পরিবারগোষ্ঠীর 6800 জন কুশলী ও তৎপর যোদ্ধা। এঁরা সকলেই বর্শা ও বল্লমধারী ছিলেন।
25 শিমিয়োনের পরিবারগোষ্ঠীর 7100 জন বীর যোদ্ধা ছিলেন।
26 লেবি পরিবারগোষ্ঠীর 4600 জন। 27 হারোণ বংশের নেতা যিহোয়াদাও 3700 জন নিয়ে এই দলে যোগ দিয়েছিলেন। 28 এছাড়া পরিবারের আরো 22 জন নেতাসহ যোগ দিয়েছিলেন সাহসী ও তরুণ সেনা সাদোক।
29 শৌলের আত্মীয় এবং তখনও পর্যন্ত তার প্রতি অনুগত বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর 3000 জনও যোগ দিয়েছিলেন এই দলে।
30 ইফ্রয়িমের পরিবারগোষ্ঠী থেকে এসেছিলেন 20,800 জন বীরযোদ্ধা। তারা তাদের পরিবারে বিখ্যাত ছিল।
31 মনঃশি পরিবারগোষ্ঠী থেকে এসেছিলেন 18,000 জন দায়ূদকে রাজা বানাতে।
32 ইষাখরের পরিবার থেকে আত্মীয়সহ এসেছিলেন 200 জন প্রাজ্ঞ নেতা। তাঁরা হলেন সেই সব লোক যাঁরা ইস্রায়েলের মঙ্গলের জন্য কখন কি করা প্রয়োজন তা ভাল ভাবেই বুঝতেন।
33 সবূলূনের পরিবারগোষ্ঠী থেকে যোগ দিয়েছিলেন সর্বাস্ত্রে পারদর্শী 50,000 জন কুশলী যোদ্ধা। এঁরা সকলেই দায়ূদের একান্ত অনুগত ছিলেন।
34 নপ্তালির পরিবারগোষ্ঠী থেকে 1000 জন অধ্যক্ষ ছিল। তাঁদের সঙ্গে 37,000 জন ব্যক্তি ছিল। তাঁরা বর্শা ও ঢাল নিয়ে এসেছিলেন।
35 দান পরিবারগোষ্ঠী থেকে এসেছিলেন 28,600 জন রণ-কুশলী যোদ্ধা।
36 আশের পরিবারগোষ্ঠী থেকেও রণ-কুশলী 40,000 জন এসেছিলেন।
37 এবং যর্দন নদীর পূর্বদিক থেকে রূবেণ, গাদ ও অর্ধেক মনঃশি পরিবার মিলিয়ে মোট 120,000 ব্যক্তি বিভিন্ন রকমের অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এই দলে যোগ দিয়েছিলেন।
38 এই সমস্ত বীর যোদ্ধারা দায়ূদকে ইস্রায়েলের রাজা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে হিব্রোণে এসেছিলেন। ইস্রায়েলের অবশিষ্ট লোকদেরও এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন ছিল। 39 এঁরা সকলে হিব্রোণে দায়ূদের সঙ্গে তিন দিন পানাহার করে ও তাঁদের আত্মীয়-পরিজনের বানানো খাবার-দাবার খেয়ে কাটালেন। 40 ইষাখর, সবূলূন ও নপ্তালি পরিবারগোষ্ঠীরা উট, ঘোড়া, গাধা ও ষাঁড়ের পিঠে চড়িয়ে ময়দা, ডুমুরের পিঠে, কিস্মিস্, দ্রাক্ষারস, তেল, ছাগল এবং মেষ প্রভৃতি এনেছিলেন। ইস্রায়েলের সকলেই খুব খুশী হয়েছিলেন।
ঈশ্বরকে তুষ্ট করার উপাসনা
13 তোমরা পরস্পরকে সাথী খ্রীষ্টীয়ান হিসেবে ভালবেসে যেও। 2 অতিথি সেবা করতে ভুলো না। অতিথি সেবা করতে গিয়ে কেউ কেউ না জেনে স্বর্গদূতদের আতিথ্য করেছেন। 3 যাঁরা বন্দী অবস্থায় কারাগারে আছেন তাঁদের সঙ্গে তোমরা নিজেরাও যেন বন্দী এ কথা মনে করে তাঁদের কথা ভুলো না। যাঁরা যন্ত্রণা পাচ্ছেন তাঁদের ভুলো না; মনে রেখো তোমরাও তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণা পাচ্ছো।
4 বিবাহ বন্ধনকে তোমরা সবাই অবশ্য মর্যাদা দেবে, যাতে দুটি মানুষের মধ্যে পবিত্র সম্পর্ক রক্ষিত হয়, কারণ যারা ব্যভিচারী ও লম্পট, ঈশ্বর তাদের বিচার করবেন। 5 তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হোক্। তোমাদের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাক কারণ তিনি বলেছেন,
“আমি তোমাকে কখনও ত্যাগ করবো না;
আমি কখনও তোমাকে ছাড়বো না।”(A)
6 তাই আমরা সাহসের সঙ্গে বলতে পারি,
“প্রভুই আমার সহায়;
আমি ভয় করবো না;
মানুষ আমার কি করতে পারে?”(B)
7 তোমাদের নেতাদের কথা স্মরণ কর যাঁরা তোমাদের কাছে ঈশ্বরের বাণী প্রচার করে গেছেন। তাঁদের জীবনের আদর্শ ও উত্তম বিষয়গুলির চিন্তা কর ও তাঁদের যে বিশ্বাস ছিল তার অনুসারী হও। 8 যীশু খ্রীষ্ট কাল, আজ আর চিরকাল একই আছেন। 9 নানাপ্রকার অদ্ভুত সব শিক্ষার দ্বারা বিপথে চলে যেও না। হৃদয়কে ঈশ্বরের অনুগ্রহে শক্তিমান করো তবে খাওয়ার নিয়মকানুন পালনের দ্বারা নয় কারণ যারা খাদ্যাভ্যাসের খুঁটিনাটি মেনে চলেছে তার কোনও সুফলই তারা পায় নি।
10 আমাদের এক নৈবেদ্য আছে। যে যাজকরা পবিত্র তাঁবুতে উপাসনা করেন তাঁদের সেই নৈবেদ্য ভোজন করার কোন অধিকার নেই। 11 মহাযাজক পশুদের রক্ত নিয়ে মন্দিরের মহাপবিত্রস্থানে যেতেন পাপের বলি হিসেবে কিন্তু পশুদের দেহগুলি শিবিরের বাইরে পুড়িয়ে ফেলা হত। 12 ঠিক সেই মতোই যীশু নগরের বাইরে দুঃখভোগ করলেন। যীশু বলি হলেন যেন তাঁর নিজের রক্তে তাঁর লোকদের পবিত্র করতে পারেন। 13 তাই আমাদেরও ঐ শিবিরের বাইরে যীশুর কাছে যাওয়া উচিত। যীশু যেমন লজ্জা, অপমান সহ্য করেছিলেন, আমাদের উচিৎ সেই লজ্জা, অপমান বহন করা, 14 কারণ এখানে আমাদের এমন কোন নগর নেই যা চিরস্থায়ী; কিন্তু যে নগর ভবিষ্যতে আসছে আমরা তারই প্রত্যাশায় রয়েছি। 15 তাই যীশুর মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে স্তব স্তুতি উৎসর্গ করতে যেন বিরত না হই। সেই বলিদান হল স্তব স্তুতি, যা আমরা তাঁর নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরে করে থাকি। 16 অপরের উপকার করতে ভুলো না। যা তোমার নিজের আছে তা অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ভুলো না, কারণ এই ধরণের বলিদান উৎসর্গে ঈশ্বর প্রীত হন।
17 তোমাদের নেতাদের আদেশ মেনে চলো, তাঁদের কর্তৃত্ত্বের অধীন হও, কারণ তোমাদের আত্মাকে নিরাপদে রাখার জন্য তাঁরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। তাঁদের কথা মেনে চলো কারণ তাঁদের এব্যাপারে হিসেব নিকেশ করতে হবে, যাতে তাঁরা আনন্দে এই কাজ করতে পারেন, যন্ত্রণা ও দুঃখ নিয়ে নয়। তাঁদের কাজকে কঠিন করে তুললে তোমাদের লাভ হবে না।
18 আমাদের জন্য প্রার্থনা করো। আমরা নিশ্চয় করে বলতে পারি যে, আমাদের শুদ্ধ বিবেক আছে; আর জীবনে যা কিছু করি তা শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য নিয়ে করি। 19 আমি তোমাদের বিশেষভাবে এই প্রার্থনা করতে বলছি যে, আমি যেন শীঘ্রই তোমাদের কাছে ফিরে যেতে পারি। এটাই আমি অন্য সব কিছু থেকে বেশী করে চাইছি।
20-21 শান্তির ঈশ্বর যিনি মৃতদের মধ্য থেকে আমাদের প্রভু যীশুকে ফিরিয়ে এনেছেন, রক্তের মাধ্যমে শাশ্বত চুক্তি অনুযায়ী যিনি মহান মেষপালক, প্রার্থনা করি সেই ঈশ্বর যেন তোমাদের প্রয়োজনীয় সব উত্তম বিষয়গুলি দেন যাতে তোমরা তাঁর ইচ্ছা পালন করতে পার। আমি নিবেদন করি যেন যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমেই তিনি তা সাধন করেন। যুগে যুগে যীশুর মহিমা অক্ষয় হোক্।
22 প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এই চিঠিতে আমি সংক্ষেপে যে উৎসাহজনক কথা তুলে ধরলাম তা ধৈর্য্য ধরে শুনবে। 23 তোমাদের জানাচ্ছি আমাদের ভাই তীমথিয় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি যদি শীঘ্রই আসেন তবে আমি তাঁকে নিয়ে তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে যাব।
24 তোমাদের নেতাদের ও ঈশ্বরের সকল লোককে আমাদের শুভেচ্ছা জানিও। যাঁরা ইতালী থেকে এখানে এসেছেন তাঁরা সকলে তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
25 ঈশ্বরের অনুগ্রহ তোমাদের সকলের সহবর্তী হোক্।
পঙ্গপাল বিষয়ক দর্শন
7 প্রভু এই জিনিসটি আমাকে দেখিয়েছিলেন: যখন দ্বিতীয়বার শস্য বাড়তে আরম্ভ করেছে সেই সময়ে তিনি পঙ্গপালদের তৈরী করেছিলেন। রাজা প্রথম শস্য কেটে নেওয়ার পর এটা ছিল দ্বিতীয় শস্য চাষ। 2 যখন পঙ্গপাল দেশের সমস্ত ঘাস ধ্বংস করে ফেলেছিল, তখন আমি বলেছিলাম, “হে প্রভু, আমার সদাপ্রভু, দয়া করে আমাদের ক্ষমা করুন! যাকোব কিভাবে উদ্ধার পাবে? সে এত ক্ষুদ্র! কারণ সে খুব দুর্বল!”
3 তখন প্রভু এই বিষয়ে তার মন পরিবর্তন করে বললেন, “এই রকম ঘটবে না।”
আগুনের দর্শন
4 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই বিষয়গুলি আমাকে দেখালেন: আমি দেখলাম প্রভু ঈশ্বর বিচারের জন্য আগুনকে ডাকছেন। সেই আগুন গভীর সাগরকে ধ্বংস করেছিল এবং ভূমিকেও গ্রাস করতে শুরু করেছিল। 5 তখন আমি বললাম, “হে প্রভু ঈশ্বর, দয়া করে ক্ষান্ত হোন। যাকোব কিভাবে রক্ষা পাবে? কারণ সে ক্ষুদ্র।”
6 তখন প্রভু এবিষয়ে তাঁর মন পরিবর্তন করে বললেন, “এই ঘটনাও ঘটবে না।”
ওলন দড়ির দর্শন
7 প্রভু আমাকে এই দর্শন দেখালেন: প্রভু তাঁর হাতে ওলন দড়ি নিয়ে এক দেওয়ালের ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। 8 প্রভু আমায় বললেন, “আমোষ, তুমি কি দেখছ?”
আমি বললাম, “একটি ওলন-দড়ি।”
তখন আমার সদাপ্রভু বললেন, “দেখ, আমি ইস্রায়েলের লোকের মধ্যে ওলন-দড়ি রাখব। তাদের ‘অসাধুতাকে’ আমি আর ফস্কাতে দেব না। আমি কালো দাগগুলি[a] 9 সরিয়ে দেব। ইস্হাকের উচ্চ স্থানগুলি ধ্বংস হবে। ইস্রায়েলের পবিত্র স্থানগুলো পাথরের ঢিবিতে পরিণত করা হবে। আমি যারবিয়ামের পরিবারকে আক্রমণ করে তরবারি দ্বারা হত্যা করব।”
অমৎসিয় আমোষকে থামাতে চেষ্টা করলেন
10 অমৎসিয়, বৈথেলের প্রধান যাজক ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের কাছে এই বার্তা পাঠালেন: “আমোষ আপনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। ইস্রায়েলের লোকরা যাতে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সে তার চেষ্টা করছে। সে এত কথা বলছে যে তার সব কথা এই দেশ ধরে রাখতে পারছে না। 11 আমোষ বলছে, ‘যারবিয়াম তরবারি দ্বারা নিহত হবে এবং ইস্রায়েলের লোকদের বন্দী হিসাবে তাদের দেশ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হবে।’”
12 আর অমৎসিয় আমোষকে বলল, “হে দর্শক যিহূদায় চলে যাও, সেখানে খাও দাও আর প্রচার কর। 13 কিন্তু বৈথেলে আর কখনও ভাববাণী কর না। এ হল যারবিয়ামের পবিত্র জায়গা, ইস্রায়েলের মন্দির!”
14 তখন আমোষ উত্তরে অমৎসিয়কে বললেন, “আমি একজন পেশাগত ভাববাদী নই; এমনকি ভাববাদীদের পরিবার থেকেও নই। আমি গো-পালন করি ও ডুমুর গাছের যত্ন নিই। 15 আমি একজন মেষপালক ছিলাম। কিন্তু প্রভু মেষপাল তত্ত্বাবধানের কাজ থেকে আমায় ডেকে নিলেন এবং বললেন, ‘যাও এবং আমার লোক ইস্রায়েলকে ভবিষ্যদ্বাণী কর।’ 16 তাই প্রভুর বার্তা শোন। তুমি আমায় ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কোন ভাববাণী বলতে ও ইস্হাক পরিবারের কাছে প্রচার করতে নিষেধ করেছ। 17 কিন্তু প্রভু বলেন, ‘তোমার স্ত্রী নগরের মধ্যে বেশ্যা হবে। তোমার পুত্র-কন্যাদের তরবারি দ্বারা হত্যা করা হবে। অন্য লোকরা তোমার জমি হস্তগত করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে আর এক বিজাতীয় দেশে তোমার মৃত্যু হবে। ইস্রায়েলের লোকদের নিশ্চিতভাবে এই দেশ থেকে বন্দী হিসাবে নিয়ে যাওয়া হবে।’”
যীশুর জন্ম
(মথি 1:18-25)
2 সেই সময় আগস্ত কৈসর হুকুম জারি করলেন যে, রোম সাম্রাজ্যের সব জায়গায় লোক গণনা করা হবে। 2 এটাই হল সুরিয়ার রাজ্যপাল কুরীণিয়ের সময়ে প্রথম আদমশুমারি। 3 আর প্রত্যেকে নিজের নিজের শহরে নাম লেখাবার জন্য গেল।
4 যোষেফ ছিলেন রাজা দায়ূদের বংশধর, তাই তিনি গালীল প্রদেশের নাসরৎ থেকে রাজা দায়ূদের বাসভূমি বৈৎলেহমে গেলেন। 5 যোষেফ তাঁর বাগ্দত্তা স্ত্রী মরিয়মকে সঙ্গে নিয়ে নাম লেখাতে চললেন। এই সময় মরিয়ম ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। 6 তাঁরা যখন সেখানে ছিলেন, তখন মরিয়মের প্রসব বেদনা উঠল। 7 আর মরিয়ম তাঁর প্রথম সন্তান প্রসব করলেন। তিনি সদ্যোজাত সেই শিশুকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে জড়িয়ে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ ঐ নগরের অতিথিশালায় তাঁদের জন্য জায়গা ছিল না।
মেষপালকরা যীশুর সম্পর্কে শুনলেন
8 সেখানে গ্রামের বাইরে মেষপালকরা রাতে মাঠে তাদের মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল। 9 এমন সময় প্রভুর এক স্বর্গদূত তাদের সামনে উপস্থিত হলে প্রভুর মহিমা চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল। এই দেখে মেষপালকরা খুব ভয় পেয়ে গেল। 10 সেই স্বর্গদূত তাদের বললেন, “ভয় নেই, দেখ আমি তোমাদের কাছে এক আনন্দের সংবাদ নিয়ে এসেছি। এই সংবাদ সকলের জন্য মহা আনন্দের হবে। 11 কারণ রাজা দায়ূদের নগরে আজ তোমাদের জন্য একজন ত্রাণকর্তার জন্ম হয়েছে। তিনি খ্রীষ্ট প্রভু। 12 আর তোমাদের জন্য এই চিহ্ন রইল, তোমরা দেখবে একটি শিশুকে কাপড়ে জড়িয়ে একটা জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখা হয়েছে।”
13 সেই সময় হঠাৎ স্বর্গীয় বাহিনীর এক বিরাট দল ঐ স্বর্গদূতদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বললেন,
14 “স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমা,
পৃথিবীতে তাঁর প্রীতির পাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”
15 স্বর্গদূতরা তাদের কাছ থেকে স্বর্গে ফিরে গেলে মেষপালকরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “চল, আমরা বৈৎলেহমে যাই, প্রভু আমাদের যে ঘটনার কথা জানালেন সেখানে গিয়ে তা দেখি।”
16 তারা সেখানে ছুটে গেলে মরিয়ম, যোষেফ এবং সেই শিশুটিকে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শোওয়া অবস্থায় দেখল। 17 মেষপালকেরা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে, সেই শিশুটির বিষয়ে তাদের যা বলা হয়েছিল সেকথা সকলকে জানাল। 18 মেষপালকদের মুখে ঐ কথা যারা শুনল তারা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেল। 19 কিন্তু মরিয়ম এই কথা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়ে সব সময় এবিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। 20 এরপর মেষপালকরা তাদের কাছে যা বলা হয়েছিল সেই অনুসারে সব কিছু দেখে ও শুনে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে ঘরে ফিরে গেল।
21 এর আট দিন পরে সুন্নত করার সময়ে শিশুটির নাম রাখা হল যীশু। মাতৃগর্ভে আসার আগেই স্বর্গদূত তাঁর এই নাম রেখেছিলেন।
যীশুকে মন্দিরে আনা হল
22 মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে শুচিকরণ অনুষ্ঠানের সময় হলে তাঁরা যীশুকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন, যেন সেখানে প্রভুর সামনে তাঁকে উৎসর্গ করতে পারেন। 23 কারণ প্রভুর বিধি-ব্যবস্থায় লেখা আছে, “স্ত্রীলোকের প্রথম সন্তানটি যদি পুত্র হয়, তবে তাকে ‘প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে হবে,’”[a] 24 আর প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে, “এক জোড়া ঘুঘু অথবা দুটি পায়রার বাচ্চা উৎসর্গ করতে হবে।”(A) সুতরাং যোষেফ এবং মরিয়ম সেইমত কাজ করবার জন্য জেরুশালেমে গেলেন।
শিমিয়োন যীশুকে দেখলেন
25 জেরুশালেমে সেই সময় শিমিয়োন নামে একজন ধার্মিক ও ঈশ্বরভক্ত লোক বাস করতেন। তিনি ইস্রায়েলের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পবিত্র আত্মা তাঁর ওপর অধিষ্ঠান করছিলেন। 26 পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর কাছে একথা প্রকাশ করা হয়েছিল যে প্রভু খ্রীষ্টকে না দেখা পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হবে না। 27 পবিত্র আত্মার প্রেরণায় তিনি সেদিন মন্দিরে এসেছিলেন। যীশুর বাবা-মা মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে যীশুকে নিয়ে সেখানে এলেন। 28 তখন শিমিয়োন যীশুকে কোলে তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন,
29 “হে প্রভু, তোমার প্রতিশ্রুতি অনুসারে তুমি তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও।
30 কারণ আমি নিজের চোখে তোমার পরিত্রাণ দেখেছি।
31 যে পরিত্রাণ তুমি সকল লোকের সাক্ষাতে প্রস্তুত করেছ।
32 তিনি অইহুদীদের অন্তর আলোকিত করার জন্য আলো;
আর তিনিই তোমার প্রজা ইস্রায়েলের জন্য সম্মান আনবেন।”
33 তাঁর বিষয়ে যা বলা হল তা শুনে যোষেফ ও মরিয়ম আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 34 এরপর শিমিয়োন তাঁদের আশীর্বাদ করে যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, “ইনি হবেন ইস্রায়েলের মধ্যে বহু লোকের পতন ও উত্থানের কারণ। ঈশ্বর হতে আগত এমন চিহ্ন যা বহু লোকই অগ্রাহ্য করবে। 35 এতে বহু লোকের হৃদয়ের গোপন চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে। যা যা ঘটবে তাতে তোমার হৃদয় বিদীর্ণ হবে।”
হান্না যীশুকে দেখলেন
36 সেখানে হান্না নামে একজন ভাববাদিনী ছিলেন। তিনি আশের গোষ্ঠীর পনুয়েলের কন্যা। তাঁর অনেক বয়স হয়েছিল। বিবাহের পর সাত বছর তিনি স্বামীর ঘর করেন, 37 তারপর চুরাশি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বৈধব্য জীবনযাপন করেছিলেন। মন্দির ছেড়ে তিনি কোথাও যেতেন না; উপবাস ও প্রার্থনাসহ সেখানে দিন-রাত ঈশ্বরের উপাসনা করতেন।
38 ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে আরম্ভ করলেন; আর যারা জেরুশালেমের মুক্তির অপেক্ষায় ছিল তাদের সকলের কাছে সেই শিশুটির বিষয় বলতে লাগলেন।
যোষেফ ও মরিয়মের গৃহে প্রত্যাবর্তন
39 প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে যা যা করণীয় তা সম্পূর্ণ করে যোষেফ ও মরিয়ম তাঁদের নিজেদের নগর নাসরতে ফিরে গেলেন। 40 শিশুটি ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠতে লাগলেন ও বলিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। তিনি জ্ঞানে পূর্ণ হতে থাকলেন, তাঁর ওপরে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল।
বালক যীশু
41 নিস্তারপর্ব[b] পালনের জন্য তাঁর মা-বাবা প্রতি বছর জেরুশালেমে যেতেন। 42 যীশুর বয়স যখন বারো বছর, তখন তাঁরা যথারীতি সেই পর্বে যোগ দিতে গেলেন। 43 পর্বের শেষে তাঁরা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বালক যীশু জেরুশালেমেই রয়ে গেলেন, এবিষয়ে তাঁর মা-বাবা কিছুই জানতে পারলেন না। 44 তাঁরা মনে করলেন যে তিনি দলের সঙ্গেই আছেন। তাঁরা এক দিনের পথ চলার পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন। 45 কিন্তু তাঁকে না পেয়ে তাঁরা যীশুর খোঁজ করতে করতে আবার জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
46 শেষ পর্যন্ত তিন দিন পরে মন্দির চত্বরে তাঁর দেখা পেলেন। সেখানে তিনি ধর্ম শিক্ষকদের সাথে বসে তাঁদের কথা শুনছিলেন ও তাঁদের নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন। 47 যাঁরা তাঁর কথা শুনছিলেন তাঁরা সকলে যীশুর বুদ্ধি আর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া দেখে অবাক হয়ে গেলেন। 48 যীশুর মা-বাবা তাঁকে সেখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাছা, তুমি আমাদের সঙ্গে কেন এমন করলে? তোমার বাবা ও আমি ভীষণ ব্যাকুল হয়ে তোমার খোঁজ করে বেড়াচ্ছি।”
49 যীশু তখন তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না যে যেখানে আমার পিতার কাজ, সেখানেই আমাকে থাকতে হবে?” 50 কিন্তু তিনি তাঁদের যা বললেন তার অর্থ তাঁরা বুঝতে পারলেন না।
51 এরপর তিনি তাঁদের সঙ্গে নাসরতে ফিরে গেলেন, আর তাঁদের বাধ্য হয়ে রইলেন। তাঁর মা এসব কথা মনের মাঝে গেঁথে রাখলেন। 52 এইভাবে যীশু বয়সে ও জ্ঞানে বড় হয়ে উঠলেন, আর ঈশ্বর ও মানুষের ভালবাসা লাভ করলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International