M’Cheyne Bible Reading Plan
নাবোত এর দ্রাক্ষাক্ষেত
21 শমরিয়ায় রাজা আহাবের রাজপ্রাসাদের কাছেই একটা দ্রাক্ষাক্ষেত ছিল। যিষ্রিয়েলে নাবোত নামে এক ব্যক্তি ছিল এই ক্ষেতের মালিক। 2 এক দিন রাজা আহাব নাবোতকে বললেন, “আমাকে তোমার ক্ষেতটা দিয়ে দাও, আমি সব্জির বাগান করবো। তোমার ক্ষেতটা আমার রাজপ্রাসাদের কাছে। আমি তোমাকে এর বদলে আরো ভাল দ্রাক্ষা ক্ষেত দেব। কিংবা তুমি যদি চাও আমি ক্ষেতটা কিনেও নিতে পারি।”
3 নাবোত বলল, “এ আমার বংশের জমি। আমি আপনাকে কোনো মতেই দিতে পারব না।”
4 নাবোতের কথায় ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ আহাব তখন বাড়ি ফিরে গেলেন। যিষ্রিয়েলের এই ব্যক্তির কথা তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। নাবোত বলল যে সে তার পরিবারের জমি দেবে না। আহাব বিছানায় শুয়ে পড়লেন, মুখ ঘুরিয়ে রাখলেন এবং খেতে অস্বীকার করলেন।
5 আহাবের স্ত্রী ঈষেবল গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি হয়েছে? খেলে না কেন?”
6 আহাব বললেন, “আমি যিষ্রিয়েলের নাবোতকে ওর জমিটা আমায় দিয়ে দিতে বলেছিলাম। তার বদলে ওকে পুরো দাম দিতে বা আরেকটা জমি দিতে আমি রাজি আছি। কিন্তু নাবোত আমাকে ওর জমি দেবে না বলে দিয়েছে।”
7 ঈষেবল বলল, “তুমি ইস্রায়েলের রাজা। বিছানা ছেড়ে উঠে কিছু খাও, দেখবে তাহলেই অনেক ভাল লাগবে। নাবোতের জমি আমি তোমায় দেব।”
8 এরপর ঈষেবল আহাবের সীলমোহর দিয়ে তাঁর বকলমে কয়েকটা চিঠি লিখে নাবোত যে শহরে বাস করত সেখানকার প্রবীণদের পাঠিয়ে দিলেন। 9 ঈষেবল লিখলেন:
“একটি উপবাসের দিন ঘোষণা করুন যেদিন কেউ কোনো খাওয়া-দাওয়া করবে না। তারপর শহরের সমস্ত লোককে একটা বৈঠকে ডাকুন। সেখানে আমরা নাবোতের সম্পর্কে আলোচনা করব। 10 কিছু লোককে জোগাড় করুন যারা নাবোতের নামে মিথ্যা কথা বলবে। তারা বলবে তারা নাবোতকে রাজা ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছে। এরপর নাবোতকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলুন।”
11 যিষ্রিয়েলের প্রবীণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই নির্দেশ পালন করলেন। 12 তারা একটি উপবাসের দিনের কথা ঘোষণা করলেন যেদিন কেউ কিছু খেতে পারবে না। সেদিন তাঁরা সমস্ত লোকদের নিয়ে এক বৈঠক ডাকলেন। তাঁরা সমস্ত লোকের সামনে নাবোতকে একটি বিশেষ জায়গায় স্থাপিত করলেন। নাবোতকে সেখানে লোকদের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর 13 দুজন লোক বলল যে তারা নাবোতকে রাজা ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছে। তখন লোকরা নাবোতকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মেরে ফেলল। 14 তারপর নেতারা ঈষেবলকে খবর পাঠালেন, “নাবোতকে হত্যা করা হয়েছে।”
15 ঈষেবল যখন এখবর পেলেন তিনি আহাবকে বললেন, “নাবোত মারা গিয়েছে। তুমি যে ক্ষেতটা চেয়েছিলে, তা এবার নিয়ে নিতে পার।” 16 আহাব তখন গিয়ে সেই দ্রাক্ষার ক্ষেত নিজের জন্য দখল করলেন।
17 এ সময় প্রভু তিশ্রের ভাববাদী এলিয়কে শমরিয়ায় নাবোতের দ্রাক্ষার ক্ষেতে গিয়ে আহাবের সঙ্গে দেখা করতে নির্দেশ দিলেন। 18-19 তিনি বললেন, “আহাব ঐ ক্ষেত নিজের জন্য দখল করতে গিয়েছেন। ওকে গিয়ে বল, ‘আহাব তুমি নাবোতকে হত্যা করে এখন ওর জমি দখল করছ। তাই আমি তোমায় শাপ দিলাম যে জায়গায় নাবোতের মৃত্যু হয়েছে সেই একই জায়গায় তোমারও মৃত্যু হবে। যেসব কুকুর নাবোতের রক্ত চেটে খেয়েছে তারা ঐ একই জায়গায় তোমারও রক্ত চেটে খাবে।’”
20 এলিয় তখন আহাবের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। আহাব এলিয়কে দেখতে পেয়ে বললেন, “তুমি আবার আমার পিছু নিয়েছ। তুমি তো সব সময়ই আমার বিরোধিতা করো।”
এলিয় উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, আমি আবার তোমাকে খুঁজে বার করেছি। তুমি আজীবন প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ আচরণ করে কাটালে। 21 তাই প্রভু তোমাকে জানিয়েছেন, ‘আমি তোমায় ধ্বংস করব। আমি তোমাকে ও তোমার পরিবারের সমস্ত পুরুষকে হত্যা করব। 22 তোমার পরিবারের দশাও নবাটের পুত্র যারবিয়ামের পরিবারের মতো হবে। কিংবা রাজা বাশার পরিবারের মতো। এই দুই পরিবারই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি একাজ করব কারণ আমি তোমার ব্যবহারে ক্রুদ্ধ হয়েছি। তুমি ইস্রায়েলের লোকদের পাপ আচরণের কারণ।’ 23 প্রভু আরো বললেন, ‘কুকুররা তোমার স্ত্রী ঈষেবলের দেহ যিষ্রিয়েল শহরের পথে ছিঁড়ে খাবে। 24 তোমার পরিবারের যে সমস্ত লোকের শহরে মৃত্যু হবে তাদের মৃতদেহ কুকুর খাবে আর মাঠেঘাটে যারা মারা যাবে তাদের মৃতদেহ চিল শকুনিতে ঠোকরাবে।’”
25 আহাবের মতো এতো বেশী অপরাধ বা পাপ আগে কেউ করেন নি। তাঁর স্ত্রী ঈষেবলই তাঁকে এসব করিয়েছিলেন। 26 আহাব ইমোরীয়দের মতোই কাঠের মূর্ত্তি পূজা করার মতো জঘন্য পাপ আচরণ করেছিলেন। এই অপরাধের জন্যই প্রভু ইমোরীয়দের ভূখণ্ড নিয়ে তা ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছিলেন।
27 এলিয়র কথা শেষ হলে আহাবের খুবই দুঃখ হল। তিনি তাঁর শোকপ্রকাশের জন্য পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর শোকপ্রকাশের পোশাক গায়ে দিলেন। খাওয়া-দাওয়া করে দুঃখিত ও শোকসন্তপ্ত আহাব ঐ পোশাকেই ঘুমোতে গেলেন।
28 প্রভু তখন ভাববাদী এলিয়কে বললেন, 29 “আমি দেখতে পাচ্ছি আহাব আমার সামনে বিনীত হয়েছে। তাই আমি ওর জীবদ্দশায় কোনো সংকটের সৃষ্টি না করে ওর ছেলে রাজা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর আমি আহাবের বংশের ওপর বিপদ ঘনিয়ে তুলব।”
ঈশ্বরকে সন্তষ্ট রাখ
4 প্রিয় ভাই ও বোনেরা, তোমাদের কাছে আমার আরও কিছু বলার আছে। কি করে ঈশ্বরকে সন্তষ্ট করে জীবনযাপন করতে হয়, এ বিষয়ে তোমরা আমাদের কাছে শিক্ষা পেয়েছ; আর সেইভাবেই তোমরা চলেছ। বেশ, এখন চাইছি ও তোমাদের উৎসাহ দিয়ে বলছি যে তোমরা আরো বেশী করে সেইভাবে চলো। 2 তোমরা শুনেছ এবং জান তোমাদের কি করণীয়; প্রভু যীশুর কাছ থেকে অধিকার পেয়ে সেই শিক্ষা তোমাদের দিয়েছিলাম। 3 ঈশ্বর চান যে তোমরা পবিত্র হও ও সবরকম যৌন পাপ থেকে দূরে থাক। 4 ঈশ্বর চান তোমরা পুরুষরা প্রত্যেকে জানো কিভাবে পবিত্র ও সম্মানজনকভাবে নিজের স্ত্রীর সাথে বাস করতে হয়। 5 বিজাতীয়রা, যারা ঈশ্বরকে জানে না তারা যেভাবে কামনা বাসনা দ্বারা চালিত হয়, সেইভাবে চলো না। 6 এই ব্যাপারে কেউ যেন তার বিশ্বাসী ভাইকে না ঠকায়, কারণ যারা ঐভাবে চলে প্রভু তাদের দণ্ড দেবেন। এই বিষয়ে এর আগেই তোমাদের জানিয়েছি ও তোমাদের সাবধান করে দিয়েছি। 7 কারণ ঈশ্বর আমাদের অশুচিভাবে চলার জন্য নয়, বরং পবিত্র হবার উদ্দেশ্যেই আহ্বান করেছেন। 8 তাই, যে এই শিক্ষা অনুসারে চলতে অস্বীকার করে সে মানুষকে নয় কিন্তু ঈশ্বরকেই অমান্য করে, যে ঈশ্বর আমাদের পবিত্র আত্মা দান করেন।
9 খ্রীষ্টেতে তোমাদের যে বিশ্বাসী ভাই ও বোনেরা আছে তাদের যে ভালবাসায় ভালবাসতে হবে, সে বিষয়ে তোমাদের কাছে লেখার দরকার নেই। কারণ পরস্পরকে ভালবাসার শিক্ষা তো তোমরা ঈশ্বরের কাছ থেকেই পেয়েছ। 10 বাস্তবিক তোমরা মাকিদনিয়ার সমস্ত ভাই ও বোনেদের ভালবাস। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এখন আমরা তোমাদের উৎসাহ দিয়ে বলছি যে তোমরা আরো গভীরভাবে পরস্পরকে ভালবাসবে।
11 শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আপ্রাণ চেষ্টা কর। এবিষয়ে যেমন তোমাদের বলেছি তেমনিভাবে নিজের নিজের কাজ যত্ন সহকারে কর, নিজের হাতে কাজ করে যাও। 12 এর ফলে মণ্ডলীর বাইরের মানুষ তোমাদের জীবন ধারা দেখে তোমাদের সম্মান করবে এবং কারো ওপর তোমাদের নির্ভর করতে হবে না।
প্রভুর আগমন
13 প্রিয় ভাই ও বোনেরা, যারা মারা গিয়েছে তাদের সম্পর্কে তোমাদের জানাতে চাই। যাদের কোন প্রত্যাশা নেই, তাদের মতো তোমরা শোকার্ত হও এ আমরা চাই না। 14 আমরা বিশ্বাস করি যে যীশু মারা গিয়েছিলেন এবং যীশু বেঁচে উঠেছেন। যীশু যখন ফিরে আসবেন তখন যে সব খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর মৃত্যু হয়েছে, ঈশ্বর খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাদেরও উত্থিত করে খ্রীষ্টের সঙ্গে ফিরিয়ে আনবেন।
15 আমরা যা বলছি তা আমরা প্রভুর কাছ থেকে তাঁর বাণীরূপে জানতে পেরে বলছি। আমরা যারা এখন জীবিত আছি তারা প্রভুর আগমনের সময়েও জীবিত থাকব, আর প্রভুর কাছে চলে যাব, কিন্তু কোনভাবেই সেই মৃতদের আগে যাব না। 16 কারণ যখন প্রধান স্বর্গদূতের গম্ভীর আদেশ ও ঈশ্বরের তূরীধ্বনি হবে, প্রভু নিজে স্বর্গ থেকে নেমে আসবেন। তখন যে সব খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের মৃত্যু হয়েছে তারা প্রথমে জেগে উঠবে। 17 তারপর আমরা যারা তখনও পৃথিবীতে জীবিত থাকব, প্রভুর সঙ্গে আকাশে সাক্ষাৎ করতে তাদের সাথে আমাদেরও মেঘের মধ্যে তুলে নেওয়া হবে; আর আমরা প্রভুর সঙ্গে চিরকাল থাকব। 18 সুতরাং এইসব কথার দ্বারা তোমরা পরস্পরকে সান্ত্বনা দিও।
সোনার মূর্ত্তি ও অগ্নিকুণ্ড
3 রাজা নবূখদ্নিৎসর একটি সোনার মূর্ত্তি তৈরী করলেন। মূর্ত্তিটি ছিল 60 হাত উঁচু এবং 6 হাত চওড়া। তারপর তিনি সেই মূর্ত্তিটি বাবিল প্রদেশে দূরা সমতলের ওপর স্থাপন করলেন। 2 তারপর রাজা প্রাদেশীয় রাজ্যপাল, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারীগণ, উপদেশকগণ, কোষাধ্যক্ষগণ, বিচারকগণ, শাসকগণ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ঐ মূর্ত্তির উৎসর্গীকরণ অনুষ্ঠানে আসতে আদেশ দিলেন।
3 তাই তারা সবাই এলেন এবং নবূখদ্নিৎসরের স্থাপিত মূর্ত্তির সামনে দাঁড়ালেন। 4 তারপর রাজার ঘোষক উচ্চকণ্ঠে বললেন, “হে বিভিন্ন দেশ ও নানা ভাষাবিদগণ তোমরা আমার কথা শোন। তোমাদের এই আদেশ দেওয়া হচ্ছে: 5 যে মূহুর্তে শিঙা, বাঁশি, বীণা এবং অন্যান্য সমস্ত বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনবে তখনই তোমরা আভূমি নত হবে এবং রাজার স্থাপনা করা মূর্ত্তির পূজো করবে। 6 যদি কোন ব্যক্তি আভূমি নত না হয়ে পূজো করে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে।”
7 তাই, যে মূহুর্তে শিঙা, বাঁশি, বীণা এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শোনা গেল, সমস্ত দেশসমূহ ও সমস্ত ভাষাবিদগণ আভূমি নত হল এবং নবূখদ্নিৎসরের প্রতিষ্ঠিত মূর্ত্তির পূজা করল।
8 সেই সময়, কিছু কল্দীয় লোকরা রাজার কাছে এল এবং ইহুদীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগল। 9 তারা রাজা নবূখদ্নিৎসরকে বলল, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হোন! 10 মহারাজ আপনি আদেশ করেছিলেন যে শিঙা, বাঁশি, বীণা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের বাদন শোনা মাত্র সকলকে মাথা নত করে সোনার মূর্ত্তিটির পূজা করতে। 11 আপনি আরো বলেছিলেন যে যদি কেউ এই মূর্ত্তির পূজা না করে তাহলে তাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। 12 কিন্তু হে মহারাজ, কিছু ইহুদী আপনার আদেশ অমান্য করেছে। আপনি পূর্বে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীর পদে বহাল করেছিলেন। তারা হল শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো। তারা আপনার দেবতার পূজা করেনি। তারা আভূমি নত হয়নি এবং আপনার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তিটি পূজো করেনি।”
13 তখন রাজা ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে ডেকে পাঠালেন। তাদের রাজার সামনে আনা হল। 14 নবূখদ্নিৎসর ঐ লোকেদের বললেন, “শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্-নগো, এটা কি সত্যি যে তোমরা আমার দেবতাদের পূজো কর না আর তোমরা আভূমি নত হও নি এবং আমার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তিকে পূজো করনি? 15 এবার যখনই তোমরা শিঙা, বীণা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনবে তখনই তোমরা মাথা নত করে সোনার মূর্ত্তির পূজা করবে। যদি তোমরা এই মূর্ত্তির পূজা করতে রাজী থাকো তবে ভাল, নয়তো তোমাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। তখন কোন দেবতাই তোমাদের আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না!”
16 শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো রাজাকে বলল, “এর ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই। 17 যদি আপনি আমাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন তাহলে আমরা যে দেবতার পূজা করি তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। তিনি ইচ্ছা করলে আমাদের আপনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। 18 কিন্তু যদি আমাদের ঈশ্বরও আমাদের রক্ষা না করেন, তাহলেও আমরা আপনার দেবতার সেবা করব না এবং আপনার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তির পূজাও করব না।”
19 তখন নবূখদ্নিৎসর ভীষণ রেগে গেলেন এবং শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর দিকে ভর্ৎসনাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তিনি অগ্নিকুণ্ডটিকে সাতগুণ বেশী উত্তপ্ত করবার আদেশ দিলেন। 20 তারপর নবূখদ্নিৎসর তাঁর সব চেয়ে শক্তিশালী সৈন্যদের কয়েক জনকে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে বেঁধে ফেলে তাদের অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিতে আদেশ দিলেন।
21 তাই সৈন্যরা আঙরাখা, পায়জামা, টুপি ও অন্যান্য বস্ত্রে পূর্ণসজ্জিত শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে বেঁধে ফেলল এবং জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ফেলে দিল। 22 রাজার আদেশ এত নিষ্ঠুর ছিল বলে এবং অগ্নিকুণ্ডটি এত উত্তপ্ত ছিল বলে যে সৈন্যরা শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্-নগোকে নিয়ে গিয়েছিল তারাই আগুন পুড়ে মারা গেল। 23 শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে দৃঢ় ভাবে বেঁধে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
24 সেই সময় নবূখদ্নিৎসর বিস্ময়ে লাফিয়ে উঠলেন। তিনি তাঁর উপদেশকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কি ঠিক যে আমরা মাত্র তিন জনকে বেঁধে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিলাম?”
উপদেশকরা বললেন, “হ্যাঁ, মহারাজ।”
25 রাজা বললেন, “দেখ, আমি দেখছি চার জন মানুষ আগুনের ভেতর হেঁটে বেড়াচ্ছে। তারা বাঁধনমুক্ত এবং তারা কেউই আগুনে পুড়ে যাচ্ছে না। চতুর্থ জনকে দেখতে যেন একজন দেবদূতের মতো।”
26 তখন নবূখদ্নিৎসর অগ্নিকুণ্ডের মুখের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললেন, “পরাৎপর ঈশ্বরের অনুগত শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো তোমরা এখানে বেরিয়ে এসো!”
তাই শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো আগুনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। 27 তারা বেরিয়ে আসার পর প্রাদেশীয় রাজ্যপাল, উচ্চপদস্থ কর্মচারী, অধিপতি ও রাজার উপদেশকরা তাদের ঘিরে ধরল। তারা দেখল যে আগুন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর আঙরাখা অথবা অন্য কিছু, এমন কি তাদের মাথার একটা চুলও পোড়ায়নি এবং তারা যে আগুনের কাছে ছিল এমন কোন গন্ধও তাদের গা থেকে বেরোচ্ছিল না।
28 এরপর নবূখদ্নিৎসর বললেন, “শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর ঈশ্বরের প্রশংসা করো। তিনি তাঁর দূত পাঠিয়েছেন এবং তাঁর দাসদের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। এই তিন জন লোক তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। তারা আমার আদেশ অমান্য করে মৃত্যুবরণ করতেও রাজী ছিল, কিন্তু তবুও তারা অন্য কোন দেবতার আরাধনা করতে রাজী হয়নি। 29 তাই আমি এই নিয়ম করলাম: কোন দেশের এবং কোন ভাষার কোন ব্যক্তি যদি শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে তবে তাদের টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হবে। তাদের বাড়ি-ঘর সর্বসাধারণের শৌচালয় হয়ে উঠবে কারণ অন্য কোন দেবতা তাঁর লোকদের এভাবে বাঁচাতে পারেন না।” 30 তখন রাজা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়ে বাবিল প্রদেশে পাঠালেন।
পঞ্চম খণ্ড
(গীতসংহিতা 107–150)
107 প্রভুকে ধন্যবাদ দাও, কেননা তিনি মঙ্গলময়।
তাঁর প্রেম চিরন্তন!
2 প্রভু যাদের রক্ষা করেছেন, তারা প্রত্যেকে অবশ্যই এই একই কথাগুলি উচ্চারণ করবে।
প্রভু ওদের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
3 প্রভু বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর লোকদের জড় করেছেন।
তাদের তিনি পূর্ব ও পশ্চিম এবং উত্তর ও দক্ষিণ থেকে নিয়ে এসেছেন।
4 ওদের কেউ কেউ মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো।
ওরা বাঁচার জন্য অন্য জায়গা খুঁজছিলো
কিন্তু ওরা কোন শহর খুঁজে পাচ্ছিলো না।
5 ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ওরা ক্রমশঃই
দুর্বল হয়ে পড়ছিলো।
6 তখন ওরা সাহায্যের জন্য প্রভুকে ডাকলো
তাই তিনি ওদের বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন।
7 ঈশ্বর সোজা তাদের সেই শহরে নিয়ে গেলেন যেখানে তারা বাস করতে পারে।
8 প্রভুকে তাঁর প্রেমের জন্য এবং তাঁর আশ্চর্য কার্য,
যা তিনি লোকদের জন্য করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ দাও।
9 ঈশ্বর তৃষিত আত্মার তৃষ্ণা নিবৃত্ত করেন;
ঈশ্বর সুন্দর জিনিস দিয়ে ক্ষুধিত আত্মার সন্তুষ্টি করেন।
10 ঈশ্বরের কিছু লোক বন্দী ছিল,
ওরা অন্ধকার গারদে বদ্ধ হয়েছিলো।
11 কেন? কারণ ঈশ্বর যা বলেছেন, ওরা তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো।
তারা পরাৎপরের উপদেশসমুহ মান্য করতে অস্বীকার করেছিলো।
12 ওদের কুকর্মের জন্য ঈশ্বর ওদের জীবনকে কঠিনতর করে তুলেছিলেন।
ওরা হোঁচট খেয়ে পড়লো কিন্তু ওদের সাহায্যের জন্য কেউ ছিল না।
13 ওরা সমস্যায় পড়েছিলো, তাই ওরা সাহায্যের জন্য প্রভুকে ডেকেছিলো
এবং তিনি তাদের সমস্যাসমূহ থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
14 ঈশ্বর ওদের অন্ধকার কারাগার থেকে বাইরে বার করে এনেছিলেন।
যে দড়ি দিয়ে ওদের বেঁধে রাখা হয়েছিলো, ঈশ্বর তা ছিন্ন করেছিলেন।
15 প্রভুর প্রেমের জন্য এবং মানুষের জন্য
তিনি যে সব আশ্চর্য কার্য করেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দাও।
16 শত্রুদের পরাজিত করতে ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করেন।
ঈশ্বর ওদের পিতলের দরজা ভেঙে দিতে পারেন।
ঈশ্বর ওদের ফটকের লোহা ভেঙে দিতে পারেন।
17 কিছু লোক ওদের পাপসমূহ ও অন্যায়গুলোকে, নিজেদের নির্বোধে পরিণত করতে দেয়।
তারা তাদের পাপসমূহের জন্য ভয়ঙ্কর ভাবে ভুগবে।
18 ওরা আহার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলো
এবং প্রায় মারা গিয়েছিলো।
19 ওরা সমস্যায় পড়েছিলো, তাই ওরা প্রভুর কাছে সাহায্য চেয়েছিলো।
এবং ওদের সমস্যা থেকে তিনি ওদের বাঁচিয়েছিলেন।
20 ঈশ্বর আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং ওদের সমস্যা মুক্ত করেছিলেন।
তাই ওই লোকরা মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছিলো।
21 প্রভুকে তাঁর প্রেমের জন্য এবং লোকদের জন্য
তিনি যে সব আশ্চর্য কার্য করেন তার জন্য ধন্যবাদ দাও।
22 প্রভু যা কিছু করেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে, প্রভুর কাছে বলি উৎসর্গ কর।
প্রভু যা যা করেছেন তা আনন্দের সঙ্গে বল।
23 কিছু লোক নৌকা করে সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিলো,
ওদের জীবিকা ওদের মহাসমুদ্রে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো।
24 ওই সব লোক দেখেছে প্রভু কি করতে পারেন।
সমুদ্রে তিনি যে সব বিস্ময়কর কাজ করেছেন, তা ওরা দেখেছে।
25 ঈশ্বর আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং প্রবল বাতাস বইতে শুরু করেছিলো।
ঢেঊগুলো ক্রমেই উচ্চ থেকে উচ্চতর হয়েছিল।
26 ঢেউগুলো ওদের আকাশে তুলে দিচ্ছিলো
এবং সমুদ্রের গভীরে নামিয়ে দিচ্ছিলো।
সে এমন ভয়ঙ্কর ঝড় ছিলো যে ওরা সাহস হারিয়ে ফেলেছিলো।
27 ওরা টল্মল করছিলো এবং নেশাগ্রস্তের মত বোধ করছিলো।
নাবিক হিসেবে তাদের ক্ষমতা কোন কাজেই লাগেনি।
28 ওরা সমস্যায় পড়েছিলো তাই ওরা সাহায্যের জন্য প্রভুকে ডেকেছিলো
এবং তিনি সমস্যাসমুহ থেকে ওদের রক্ষা করেছিলেন।
29 ঈশ্বর ঝড় থামিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি সমুদ্রকে শান্ত করে দিয়েছিলেন।
30 সমুদ্র শান্ত দেখে নাবিকরা খুশী হয়েছিলো
এবং তারা যেখানে যেতে চেয়েছিলো সেখানে ঈশ্বর তাদের নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
31 তাঁর প্রেমের জন্য এবং লোকদের জন্য তিনি যে সব আশ্চর্য কার্য করেন,
তার জন্য প্রভুকে ধন্যবাদ দাও।
32 বিরাট মহাসমাজের সামনে প্রভুর মহাসভায় প্রশংসা কর।
প্রবীণ নেতারা যখন একত্রিত হবে তখন তাঁর প্রশংসা করো।
33 ঈশ্বর নদীগুলিকে মরুভূমিতে পরিণত করেছেন।
ঈশ্বর ঝর্ণার প্রবাহ বন্ধ করেছেন।
34 উর্বর জমিকে ঈশ্বর পরিবর্তিত করেছেন এবং তা অকাজের নোনা জমিতে পরিণত হয়েছে।
কেন? কারণ সেই অঞ্চলে মন্দ লোকরা বসবাস করতো।
35 ঈশ্বর মরুভূমিকে জলময় সরোবরে পরিবর্তিত করলেন।
শুকনো জমি থেকে তিনি ঝর্ণার প্রবাহ বইয়ে দিলেন।
36 ক্ষুধার্ত মানুষকে ঈশ্বর সেই দেশে নিয়ে এলেন
এবং তারা বসবাসের জন্য শহর নির্মাণ করলো।
37 ওরা ওদের জমিতে বীজ বুনলো।
ওরা জমিতে দ্রাক্ষালতা পুঁতলো এবং ওরা খুব ভাল ফসল পেলো।
38 ঈশ্বর ওদের আশীর্বাদ করলেন, ওদের পরিবার বেড়ে উঠতে লাগলো।
ওদের বহুবিধ গৃহপালিত পশু হলো।
39 দুর্যোগ এবং সমস্যার জন্য
ওদের পরিবারগুলো ছোট এবং দুর্বল ছিলো।
40 ঈশ্বর ওদের নেতাদের লজ্জিত ও বিব্রত করালেন।
ঈশ্বর ওদের মরুভূমির সেই স্থানে ঘোরালেন যেখানে কোন রাস্তাই নেই।
41 কিন্তু ঈশ্বর তারপর ওই ভাগ্যহত লোকদের দূর্দশা থেকে উদ্ধার করলেন।
এবং এখন ওদের পরিবার মেষের পালের মত বড় হয়েছে।
42 সৎ লোকরা এটা দেখে এবং তারা সুখী হয়।
কিন্তু, মন্দ লোকরা এটা দেখে এবং তারা জানে না কি বলবে।
43 কোন ব্যক্তি যদি জ্ঞানী হয় তবে সে এইসব গুলো স্মরণে রাখবে
এবং সে হৃদয়ঙ্গম করবে, ঈশ্বরের প্রকৃত প্রেম কি।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International