M’Cheyne Bible Reading Plan
বিন্হদদ ও আহাব যুদ্ধে গেলেন
20 বিন্হদদ ছিলেন অরামের রাজা। তিনি তাঁর সেনাবাহিনী এক জায়গায় জড়ো করলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে আরো 32 জন রাজা যোগদান করলেন। তাঁদের সঙ্গে ঘোড়া ও রথ ছিল। তারপর তারা সকলে মিলে শমরিয় আক্রমণ করে শমরিয় শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। 2 রাজা বিন্হদদ ইস্রায়েলের রাজা আহাবের কাছে শহরে বার্তাবাহক পাঠালেন। 3 তিনি বললেন, “তুমি আমাকে তোমার সোনা, রূপো, স্ত্রী, পুত্রকন্যা সবকিছু সমর্পণ করো।”
4 ইস্রায়েলের রাজা উত্তর দিলেন, “মহারাজ আমি আপনার আনুগত্য স্বীকার করলাম। আমার যা কিছু আছে এখন সবই আপনার হল।”
5 বার্তাবাহকরা ফিরে এসে আহাবকে জানালো বিন্হদদ বলেছেন, “আমি তোমাকে আগেই তোমার সোনা, রূপো, স্ত্রী পুত্রকন্যা সবই আমায় দিয়ে দিতে বলেছিলাম। 6 আগামীকাল আমার লোকরা গিয়ে তোমার ও তোমার কর্মচারীদের বাড়ি তল্লাশি করবে। তারা আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য যাবতীয় মূল্যবান সম্পদ নিয়ে নেবে।”
7 আহাব তখন দেশের সমস্ত প্রবীণদের এক বৈঠক ডাকলেন। আহাব বললেন, “দেখুন, বিন্হদদ একটা গোলমাল করবার চেষ্টায় আছে। প্রথমে ও আমার কাছে আমার স্ত্রী, পুত্রকন্যা, সোনা রূপো সব কিছু চেয়েছিল। আমি সে সবই ওকে দিতে রাজী হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ও সব কিছুই নিয়ে যেতে চাইছে।”
8 সমস্ত প্রবীণরা বললেন, “ওর কথা শোনার দরকার নেই। ও যা বলছে তা আপনি কোনো মতেই করবেন না।”
9 আহাব তখন বিন্হদদকে খবর পাঠালেন, “প্রথমে আপনি যা বলেছিলেন আমি তাতে সম্মত আছি, কিন্তু আপনার দ্বিতীয় নির্দেশ মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
বিন্হদদের দূতরা এ খবর রাজার কাছে নিয়ে গেল। 10 তারপর তারা বিন্হদদের কাছ থেকে এসে জানালো, “আমি শমরিয় শহরকে ধ্বংস করে ধূলোয় মিশিয়ে দেব। আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই শহর থেকে আমার লোকদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার মতো এক টুকরো স্মারক আমি অবশিষ্ট রাখবো না। যদি এ কাজ করতে না পারি আমার ঈশ্বর যেন আমাকেই ধ্বংস করেন।”
11 রাজা আহাব জবাব দিলেন, “যাও বিন্হদদকে গিয়ে বলো, যুদ্ধে যাওয়ার আগে বর্ম যে পরে তার যুদ্ধ করে এসে যে বর্ম খোলে তার মতো গলাবাজি সাজে না।”
12 বিন্হদদ তখন তাঁবুতে বসে অন্যান্য রাজাদের সঙ্গে দ্রাক্ষারস পান করছিলেন। সে সময় বার্তাবাহকরা রাজা আহাবের কাছ থেকে ফিরে এসে তাঁকে এই খবর দিতে তিনি তাঁর সেনাবাহিনীকে শহর আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। তখন তাঁর লোকরা যুদ্ধ করবার জন্য যে যার নিজের জায়গায় সরে গেল।
13 সে সময় এক ভাববাদী রাজা আহাবকে গিয়ে বলল, “প্রভু বলেছেন, ‘তুমি কি ঐ সুবিশাল সেনাবাহিনী দেখতে পাচ্ছো? আমি স্বয়ং আজ তোমায় ঐ বাহিনীকে যুদ্ধে হারাতে সাহায্য করবো। তাহলেই তুমি বুঝবে আমিই প্রভু।’”
14 আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “ওদের যুদ্ধে হারানোর জন্য আপনি কাকে ব্যবহার করবেন?”
সেই ভাববাদী উত্তর দিল, “প্রভু বলেছেন, ‘সরকারী রাজকর্মচারীদের তরুণ সহকারীদের আমি ব্যবহার করবো।’”
তখন রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “মূল সেনাবাহিনীর সেনাপতিত্ব কে করবে?”
ভাববাদী উত্তর দিল, “আপনি।”
15 আহাব তখন সরকারী কর্মচারীদের তরুণ সহকারীদের জড়ো করলেন। সব মিলিয়ে এরা সংখ্যায় ছিল 232 জন। তারপর রাজা ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীকে ডেকে পাঠালেন। সব মিলিয়ে সেখানে 7000 জন ছিল।
16 দুপুর বেলায় যখন বিন্হদদ ও অন্যান্য 32 জন রাজা দ্রাক্ষারস পান করে তাঁবুতে বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন সে সময়ে রাজা আহাব আক্রমণ শুরু করলেন। 17 তরুণ সহকারীরাই প্রথম আক্রমণ করলো। রাজা বিন্হদদের লোকরা তাঁকে জানাল, শমরিয়া থেকে সেনারা যুদ্ধ করতে বেরিয়েছে। 18 বিন্হদদ বললেন, “হতে পারে ওরা যুদ্ধ করতে আসছে অথবা ওরা হয়তো শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আসছে। ওদের জীবন্ত ধরে ফেলো।”
19 রাজা আহাবের তরুণ যোদ্ধারা আক্রমণের সামনের দিকে ছিল আর ইস্রায়েলের সেনাবাহিনী ওদের অনুসরণ করছিল। 20 ইস্রায়েলের সমস্ত ব্যক্তি তাদের সামনে যাকে পেলো হত্যা করল। তখন অরামের লোকরা পালাতে শুরু করল। ইস্রায়েলের সেনাবাহিনী তাদের ধাওয়া করলো। রাজা বিন্হদদ কোনো মতে রথের একটা ঘোড়ায় চেপে পালালেন। 21 রাজা আহাব সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে অরামের সেনাবাহিনীর সমস্ত ঘোড়া ও রথ কেড়ে নিলেন। রাজা আহব এভাবেই অরামীয় সেনাবাহিনীকে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত করেছিলেন।
22 তারপর সেই ভাববাদী রাজা আহাবের কাছে গিয়ে বললেন, “আগামী বসন্তে অরামের রাজা বিন্হদদ আবার আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে ফিরে আসবে। এখন ফিরে গিয়ে আপনি আপনার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করুন আর তার বিরুদ্ধে রাজ্য রক্ষা করার জন্য সতর্ক ভাবে পরিকল্পনা করুন।”
বিন্হদদ আবার আক্রমণ করলেন
23 রাজা বিন্হদদের রাজকর্মচারীরা তাঁকে বললেন, “ইস্রায়েলের দেবতারা আসলে পর্বতের দেবতা। আর আমরা পর্বতে গিয়ে যুদ্ধ করেছি তাই ইস্রায়েলের লোকরা জিতে গিয়েছে। ওদের সঙ্গে এবার সমতল ভূমিতে যুদ্ধ করা যাক, তাহলে আমরা জিতে যাবো। 24 আপনি ঐ 32 জন রাজাকে সেনাবাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব করতে না দিয়ে সেনাপতিদের সেনাবাহিনী পরিচালনা করতে দিন। 25 প্রথমে আপনি ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেনাবাহিনীর মতো আরেকটা বাহিনী গড়ার জন্য সেনা জড়ো করুন। আগের সেনাবাহিনীর মতো ঘোড়া ও রথ জোগাড় করুন। তারপরে চলুন ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে সমতল ভূমিতে গিয়ে যুদ্ধ করি। তাহলেই আমরা জিতবো।” বিন্হদদ তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলেন।
26 বসন্তকাল এলে বিন্হদদ অরামের লোকদের জড়ো করে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অফেকে গেলেন।
27 ইস্রায়েলীয়রাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। তারাও অরামের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল এবং তাদের তাঁবুর ঠিক উল্টোদিকে নিজেদের তাঁবু গাড়ল। শত্রুপক্ষের তুলনায় ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীকে দুটো ছোট ছোট ছাগলের পালের মতো দেখাচ্ছিল। এদিকে অরামীয় সেনারা গোটা মাঠ ছেয়ে ফেললো।
28 ঈশ্বরের একজন লোক তখন এসে রাজা আহাবকে বলল, “প্রভু বলেছেন, ‘অরামীয়দের ধারণা আমি কেবলমাত্র পর্বতেরই প্রভু ও ঈশ্বর, সমতল ভূমির নয়। তাই আমি এবার তোমায় এই বিরাট সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে সাহায্য করব। তাহলে তুমি বুঝবে আমি সর্বশক্তিমান প্রভু।’”
29 দুই পক্ষের সেনাবাহিনী মুখোমুখি তাঁবু গেড়ে আরো সাতদিন বসে থাকল। সাত দিনের দিন যুদ্ধ শুরু হল। এক দিনেই ইস্রায়েলীয়রা অরামীয়দের 100,000 সৈন্যকে হত্যা করল। 30 যারা বেঁচে থাকল তারা পালিয়ে অফেক শহরে আশ্রয় নিল। কিন্তু শহরের দেওয়াল ভেঙে পড়ায় সেই সেনাবাহিনীর আরো 27,000 সৈন্যের মৃত্যু হল। বিন্হদদ ও অফেকে পালিয়ে গিয়ে একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। 31 তাঁর ভৃত্যরা তাঁকে বলল, “আমরা শুনেছি ইস্রায়েলের রাজারা দয়ালু হন। চলুন আমরা চটের পোশাক পরে মাথায় দড়ি দিয়ে ইস্রায়েলের রাজার সামনে যাই। তাহলে হয়তো তিনি আমাদের প্রাণে মারবেন না।”
32 তারা তখন সকলে চটের পোশাক পরে মাথায় দড়ি দিয়ে ইস্রায়েলের রাজার সামনে এসে বলল, “আপনার ভৃত্য বিন্হদদ প্রাণ ভিক্ষা চাইতে এসেছে।”
আহাব বললেন, “বিন্হদদ এখনও বেঁচে আছে, সে তো আমার ভাইয়ের মত।”
33 বিন্হদদের লোকরা চেয়েছিল রাজা আহাব এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দিন যাতে বোঝা যায় তিনি রাজা বিন্হদদকে হত্যা করবেন না। আহাবের মুখে ভাই সম্বোধন শুনে বিন্হদদের পরামর্শদাতারা সঙ্গে সঙ্গে বলল, “হ্যাঁ, মহারাজ বিন্হদদ আপনার ভাই হলেন।”
আহাব বললেন, “তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এসো।” বিন্হদদ রাজা আহাবের কাছে এলে আহাব তাঁকে তাঁর সঙ্গে রথে চড়তে বললেন।
34 বিন্হদদ তাঁকে বললেন, “আহাব, আমার পিতা তোমার পিতার কাছ থেকে যে সমস্ত শহর নিয়েছিলেন আমি সেই সমস্তই তোমাকে ফেরৎ দেব। আর তাছাড়া তুমি দম্মেশকে দোকান বসাতে পার যেমন আমার পিতা শমরিয়ায় বসিয়ে ছিলেন।”
আহাব উত্তর দিলেন, “তুমি যদি এই প্রতিশ্রুতি দাও তাহলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দিচ্ছি।” তারপর এই দুই রাজার মধ্যে শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হলে রাজা আহাব রাজা বিন্হদদকে মুক্তি দিলেন।
আহাবের বিরুদ্ধে জনৈক ভাববাদীর অভিযোগ
35 এক ভাববাদী আর এক ভাববাদীকে আঘাত করতে বললেন। তিনি এরকম বলেছিলেন কারণ প্রভু তাঁকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য ভাববাদী তাকে আঘাত করতে রাজী হলেন না। 36 তখন সেই প্রথম ভাববাদী বললেন, “তুমি প্রভুর আদেশ অমান্য করেছ, তাই এখান থেকে যাওয়ার পথে এক সিংহের হাতে তোমার মৃত্যু হবে।” দ্বিতীয় ভাববাদী সে জায়গা থেকে যাওয়ার সময় একটা সিংহ এসে তাকে হত্যা করল।
37 প্রথম ভাববাদী তখন আর এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে তাকে আঘাত করতে লাগল।
এই ব্যক্তি আঘাত করে ভাববাদীকে আহত করলে, 38 ভাববাদী একটি কাপড়ে মুখ ঢাকলেন। এর ফলে কেউ সেই ভাববাদীকে চিনতে পারছিল না। সেই ভাববাদী পথের ধারে রাজার যাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলেন। 39 রাজা এলে সেই ভাববাদী তাঁকে বললেন, “আমি যখন যুদ্ধে গিয়েছিলাম তখন আমাদের দলের একজন এক শত্রু সৈন্যকে নিয়ে এসে আমাকে তাকে পাহারা দিতে বলে। সে বলেছিল, ‘একে পাহারা দাও। যদি ও পালিয়ে যায় তাহলে তোমাকে ওর বদলে প্রাণ দিতে হবে, আর না হলে 75 পাউণ্ড রূপো জরিমানা দিতে হবে।’ 40 কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: আমি তখন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় শত্রু সেনাটি পালিয়ে যায়।”
ইস্রায়েলের রাজা উত্তর দিলেন, “তুমি বলছো তুমি বিপক্ষ দলীয় এক সেনাকে পালিয়ে যেতে দেওয়ার দোষে দোষী। এবার কি হবে তা তো তুমি জানোই। ঐ সেনাটির কথা মতোই তোমায় কাজ করতে হবে।”
41 তখন সেই ভাববাদী তাঁর মুখ থেকে কাপড় সরালে ইস্রায়েলের রাজা দেখে বুঝতে পারলেন যে তিনি একজন ভাববাদী। 42 সেই ভাববাদী রাজাকে বললেন, “প্রভু বলেছেন, ‘আমি যাকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলাম তুমি তাকে মুক্তি দিয়েছ। তাই তোমায় তার জায়গা নিতে হবে। তোমার মৃত্যু হবে। আর তোমার প্রজারা তোমার শত্রুর জায়গা নেবে এবং তারাও মারা যাবে।’”
43 রাজা তখন চিন্তিত ও দুঃখিত মনে শমরিয়ায় তাঁর বাড়িতে ফিরে এলেন।
3 যখন আমরা আর ধৈর্য্য ধরতে পারলাম না তখন আমরা আথীনীতে একাই থেকে যেতে মনস্থ করলাম। 2 তাই আমরা তীমথিয়কে তোমাদের কাছে পাঠালাম। তীমথিয় আমাদের ভাই, খ্রীষ্ট সম্পর্কে সুসমাচার প্রচারে তিনি আমাদের সাহায্য করেন। আমরা তাঁকে পাঠিয়েছিলাম যাতে তিনি তোমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে ও তোমাদের উৎসাহ দিতে পারেন, 3 যাতে তোমাদের যে সব শারীরিক ও মানসিক ক্লেশের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাতে তোমরা হতাশ না হও। তোমরা নিজেরাই জান যে এসব শারীরিক ও মানসিক দুঃখকষ্ট আমাদের জীবনে ভোগ করতেই হবে। 4 আমরা যখন তোমাদের ওখানে ছিলাম, তখন তোমাদের বলেছিলাম যে আমাদের সকলকে দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তোমরা জান যে আমরা যেমন বলেছিলাম তেমনিই হয়েছে। 5 আর এইজন্য আর ধৈর্য্য ধরতে না পারাতে আমি তীমথিয়কে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিলাম যে তোমরা বিশ্বাসে স্থির আছ কি না। আমার মনে ভয় ছিল যে শয়তান মানুষকে নানা প্রলোভনে ফেলে, সে তোমাদের পরাজিত করেছে; তা করলে আমাদের সমস্ত পরিশ্রম পণ্ড হয়ে যেত।
6 তীমথিয় তোমাদের কাছ থেকে ফিরে এসে তোমাদের বিশ্বাস ও ভালবাসার শুভ সংবাদ আমাদের দিয়েছেন। তীমথিয় জানিয়েছেন যে তোমরা সব সময় আনন্দের সঙ্গে আমাদের মনে রেখেছ এবং আমাদের দেখবার জন্য তোমরা বড়ই ব্যগ্র। ঐ একই কথা আমরাও বলতে চাই—তোমাদের দেখবার জন্য আমরাও উৎসুক। 7 তাই ভাই ও বোনেরা, তোমরা বিশ্বাসে প্রভুতে স্থির আছ জেনে শত দুর্দশা ও কষ্টের মধ্যেও আমরা সান্ত্বনা পেয়েছি। 8 তোমরা প্রভুতে সুস্থির আছ জেনে আমরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। 9 তোমাদের জন্য ঈশ্বরের সামনে আমাদের আনন্দের শেষ নেই, তাই আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই; কিন্তু আমরা যে পরিমাণে আনন্দ পাই তার জন্য ঈশ্বরকে যথেষ্ট ধন্যবাদ দিতে পারি না। 10 আমরা তোমাদের জন্য দিনরাত খুব প্রার্থনা করে চলেছি। আমরা প্রার্থনা করি যেন আমরা তোমাদের ওখানে যেতে পারি ও তোমাদের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করার জন্য তোমাদের সব ত্রুটি দূর করতে পারি।
11 আমরা প্রার্থনা করছি যেন আমাদের ঈশ্বর ও পিতা স্বয়ং এবং আমাদের প্রভু যীশু তোমাদের কাছে যাবার জন্য আমাদের পথ সুগম করেন। 12 আমরা প্রার্থনা করছি যেন প্রভু তোমাদের প্রেম বৃদ্ধি করেন। যেন তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা উপচে পড়ে এবং আমরা যেমন তোমাদের ভালবাসি তোমরাও তেমনি সমস্ত লোকদের ভালবাস। 13 আমরা প্রার্থনা করছি যেন তোমাদের হৃদয় সবল হয়। তাহলে আমাদের প্রভু যীশু যখন তাঁর পবিত্র দূতদের সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসবেন, তখন তোমরা তাঁর সামনে পবিত্র ও নির্দোষ অবস্থায় দাঁড়াতে পারবে।
নবূখদ্নিৎসরের স্বপ্ন
2 নবূখদ্নিৎসরের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে তিনি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে উদ্বিগ্ন হলেন যে তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। 2 সুতরাং রাজা তাঁর স্বপ্ন বুঝিয়ে বলবার জন্য মন্ত্রবেত্তা, মায়াবিদ্যা, যাদুকর এবং কলদীয়দের আদেশ দিলেন। তাই তারা রাজার সামনে এসেছিল।
3 তারপর রাজা তাদের বললেন, “আমি একটি স্বপ্ন দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছি। আমি স্বপ্নটির সম্বন্ধে সব কিছু জানতে চাই।”
4 তখন কলদীয়রা অরামীয় ভাষায় রাজাকে বলল, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হন! আমরা আপনার অনুগত। আপনি অনুগ্রহ করে আপনার স্বপ্নের কথা বলুন যাতে আমরা তার ব্যাখ্যা করতে পারি।”
5 রাজা নবূখদ্নিৎসর তাদের বললেন, “না, এই আমার সিদ্ধান্ত। তোমরাই আমাকে স্বপ্নটি সম্বন্ধে বলবে এবং তার ব্যাখ্যা দেবে। তোমরা যদি এটা না করতে পারো তবে আমি তোমাদের কেটে টুকরো করে ফেলার আদেশ জারি করব। আমি আরো একটি আদেশ দেব যাতে তোমাদের ঘর-বাড়ি জঞ্জালের স্তূপে পরিণত হয়। 6 কিন্তু তোমরা যদি আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ আমাকে বল, তাহলে আমি তোমাদের প্রচুর পুরস্কার ও সম্মান প্রদান করব।”
7 কিন্তু সেই জ্ঞানী ব্যক্তিরা রাজাকে অনুরোধ করল তাঁর স্বপ্নের কথা আর একবার বলতে যাতে তারা সেটা ব্যাখ্যা করতে পারে।
8 তখন নবূখদ্নিৎসর বললেন, “তোমরা জানো যে আমার কথাই আদেশ এবং আমি জানি যে তোমরা আরো সময় লাভ করতে চাইছ। 9 তোমরা জানো যে আমার স্বপ্ন কিসের সম্বন্ধে ছিল তা বলতে না পারলে তোমরা শাস্তি পাবে। তোমরা ইতিমধ্যেই আমাকে মিথ্যা কথা বলবার চক্রান্ত করেছ। তোমরা ভাবছ বেশী সময় নিলে আমি আমার আদেশের কথা ভুলে যাব। তাই এখন আমাকে বল আমার স্বপ্নটি কি যাতে আমি বুঝতে পারি যে তোমরা এর সঠিক অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারবে!”
10 উত্তরে কল্দীয়রা রাজাকে বলল, “পৃথিবীতে এমন কোন লোক নেই যে রাজা যা চাইছেন তা করতে পারে। এমনকি সব চেয়ে মহান ও সব চেয়ে শক্তিশালী রাজাও কোন মন্ত্রবেত্তা, যাদুকর অথবা কোন কলদীয়কে কখনও এরকম কথা জিজ্ঞাসা করেন নি। 11 রাজা এমন একটি কঠিন কথা বলছেন যা বস্তুতঃ অসম্ভব। কেবলমাত্র দেবগণই, যাঁরা মানুষের মধ্যে থাকেন না, এমন কথা বলতে পারেন।”
12 যখন রাজা একথা শুনলেন, তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। তাই তিনি বাবিলের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের হত্যা করার আদেশ দিলেন। 13 নবূখদ্নিৎসরের আদেশের কথা ঘোষণা করা হল। রাজার অনুচররা দানিয়েল ও তার সঙ্গীদের হত্যা করার জন্য অনুসন্ধান করতে লাগল।
14 রাজসেনাপতি অরিয়োক যখন বাবিলের জ্ঞানী মানুষদের হত্যার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তখন দানিয়েল তাঁর কাছে এসে বিবেচকের মত নম্রভাবে কথা বললেন। 15 দানিয়েল অরিয়োককে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন রাজা এমন নিষ্ঠুর আদেশ জারি করলেন?”
তখন অরিয়োক রাজার স্বপ্নের ব্যাপারে সমস্ত বৃত্তান্ত দানিয়েলকে বুঝিয়ে বললেন। 16 দানিয়েল রাজা নবূখদ্নিৎসরের কাছে গেলেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাক্ষাৎকারের সময় দিতে বললেন যাতে তিনি রাজার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে দিতে পারেন।
17 দানিয়েল বাড়ি ফিরে এসে তাঁর সঙ্গী হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়কে সব খুলে বললেন। 18 দানিয়েল তাঁর বন্ধুদের স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে বললেন যাতে ঈশ্বর দয়া করে অন্যদের কাছ থেকে যা লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা তাদের বলেন। তাহলে দানিয়েল ও তাঁর সঙ্গীদের বাবিলের অন্যান্য জ্ঞানী মানুষদের সঙ্গে মরতে হবে না।
19 রাত্রি বেলা এক দর্শনে ঈশ্বর সেই নিগূঢ় বিষয় দানিয়েলের কাছে প্রকাশ করলেন। তখন দানিয়েল ঈশ্বরকে তাঁর দয়ার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তাঁর গুণগান করলেন। 20 দানিয়েল বললেন,
“ঈশ্বরের নাম চিরকাল ধন্য হোক্!
ক্ষমতা ও জ্ঞান তাঁর অঙ্গীভূত!
21 তিনি সময় ও ঋতুসমূহ পরিবর্তন করেন।
তিনি রাজাদের নিয়োগ করেন
এবং তিনিই তাদের সরিয়ে দেন।
তিনি রাজাদের ক্ষমতা দেন ও তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন!
তিনি মানুষকে জ্ঞান দেন যাতে তারা জ্ঞানী হয়ে ওঠে, তিনি তাদের শিক্ষা দেন যাতে তারা জ্ঞান লাভ করে।
22 তিনি সেই সব গভীর ও গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন যেগুলো বোঝা শক্ত।
তিনি আলো ধরে থাকেন,
তাই তিনি জানেন অন্ধকারে কি আছে।
23 আমার পিতৃপুরুষের ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই ও তোমার প্রশংসা করি।
তুমি আমাকে জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়েছো।
আমি তোমার কাছে যা জানতে চেয়েছি তা তুমি আমার কাছে প্রকাশ করেছ।
তুমি আমাদের রাজার স্বপ্নের কথা বলেছ।”
দানিয়েল স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করলেন
24 তখন দানিয়েল অরিয়োকের কাছে গিয়ে বললেন, “বাবিলের জ্ঞানী মানুষদের হত্যা করবেন না। আমাকে রাজার কাছে নিয়ে চলুন। আমি রাজাকে তাঁর স্বপ্ন ও এর অর্থ কি ব্যাখ্যা করে বলব।”
25 অরিয়োক সঙ্গে সঙ্গে দানিয়েলকে রাজার কাছে নিয়ে গেলেন। অরিয়োক রাজাকে বললেন, “আমি যিহূদার নির্বাসিতদের মধ্যে এমন একজনকে খুঁজে পেয়েছি যে রাজার স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবে।”
26 রাজা দানিয়েলকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি আমাকে বলতে পারবে আমার স্বপ্নটি কি ও তার অর্থ কি?”
27 দানিয়েল উত্তর দিলেন, “রাজা নবূখদ্নিৎসর, আপনি যে গুপ্ত জিনিষগুলির কথা জানতে চেয়েছেন তা কোন জ্ঞানী, কোন যাদুবিদ বা কোন জ্যোতিষীর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। 28 কিন্তু স্বর্গে একজন ঈশ্বর আছেন যিনি মানুষের কাছে গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন। ঈশ্বর রাজাকে তাঁর স্বপ্নের মাধ্যমে দেখিয়েছেন অদূর ভবিষ্যতে কি ঘটবে। এটাই ছিল আপনার স্বপ্ন এবং এইগুলিই আপনি বিছানায় শুয়ে দেখেছিলেন: 29 মহারাজ আপনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলেন ভবিষ্যতে কি হবে। ঈশ্বর মানুষের কাছে গুপ্তকথা প্রকাশ করেন এবং তিনিই আপনাকে দেখিয়েছেন ভবিষ্যতে কি হবে। 30 ঈশ্বর আমাকেও এই গুপ্ত কথা জানিয়েছেন। তার অর্থ এই নয় যে আমি অন্যান্যদের তুলনায় বেশী জ্ঞানী। তিনি একথা আমার কাছে প্রকাশ করেছেন যাতে আপনি আপনার স্বপ্নের অর্থ বুঝতে পারেন ও আপনার মনের চিন্তা বুঝতে পারেন।
31 “মহারাজ, স্বপ্নে আপনি আপনার সামনে এক বিশাল মূর্ত্তিকে দেখেছিলেন। সেই মূর্ত্তিটি ছিল প্রকাণ্ড এবং চকচকে। এই মূর্ত্তি দেখলে যে কেউ বিস্ময়ে তার চোখ বিস্তারিত করে ফেলবে। 32 মূর্ত্তিটির মাথা ছিল খাঁটি সোনার, বুক ও হাতগুলো এবং করযুগল ছিল রূপার। পেট ও ঊরু ছিল পিতলের। 33 পায়ের নিচের দিক ছিল লোহার। সেই মূর্ত্তিটির পায়ের পাতা ছিল লোহা এবং মাটির মিশ্রনে তৈরী। 34 মূর্ত্তিটির দিকে তাকিয়ে থাকাকালীন আপনি এক টুকরো পাথর দেখেছিলেন যেটা একটা পর্বত থেকে কেটে বার করা, কোন ব্যক্তির দ্বারা নয়। সেই পাথরের টুকরোটি এসে মূর্ত্তিটির লোহা এবং মাটির পায়ে আঘাত করল এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিল। 35 এরপর লোহা, মাটি, পিতল, রূপা ও সোনা সব কিছু এক সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তারপর এগুলো গ্রীষ্মকালীন শস্যাদি মাড়াবার জায়গায় কিছুই ফেলে না রেখে তুষের মতো বাতাসের সঙ্গে উড়ে গেল। তারপর সেই পাথরের খণ্ডটি এক বিরাট পর্বতের আকার নিল ও সারা পৃথিবী ঢেকে ফেলল।
36 “এই ছিল আপনার স্বপ্ন। এখন আমরা আপনাকে বলব এর অর্থ কি। 37 মহারাজ, আপনি হলেন সমস্ত রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। ঈশ্বর আপনাকে রাজত্ব, পরাক্রম, শক্তি ও মহিমা দিয়েছেন। 38 যেখানে মানুষ, বন্য পশু ও পাখীরা বাস করে ঈশ্বর আপনাকে সেই সমস্ত জায়গার ওপর শাসন করবার ক্ষমতা দিয়েছেন। মহারাজ আপনিই হলেন সেই মূর্ত্তির সোনার মাথাটি।
39 “আপনার পরে যে রাজ্যের উত্থান হবে তা হল সেই মূর্ত্তির রূপার অংশটি। কিন্তু সেই রাজ্য আপনার মত মহান হবে না। এরপর একটি তৃতীয় রাজ্য আসবে। এটি হল মূর্ত্তির পিতলের অংশটি। এটি পুরো পৃথিবীর ওপর শাসন করবে। 40 চতুর্থ রাজ্য লৌহবৎ দৃঢ় হবে। চতুর্থ রাজ্যটি অন্য আর সমস্ত রাজ্যের ধ্বংসের কারণ হবে যেমন লোহা সব কিছু টুকরো টুকরো করে ভেঙে দেয়।
41 “আপনি দেখেছেন যে মূর্ত্তিটির পায়ের পাতার খানিকটা ছিল কুমোরের মাটি দিয়ে তৈরী এবং খানিকটা লোহার তৈরী। এর অর্থ হল এটা হবে একটা বিভক্ত রাজ্য কারণ আপনি মাটির সঙ্গে লোহার মিশ্রন দেখেছেন। 42 তাই চতুর্থ রাজ্যটির একটা অংশ হবে লোহার মত দৃঢ় ও অপর অংশটি হবে মাটির মত ভঙ্গুর। 43 আপনি মাটির সাথে লোহার মিশ্রণ দেখেছেন কিন্তু মাটি ও লোহা সম্পূর্ণ ভাবে মেশে না। তাই চতুর্থ রাজ্যের লোকরা অন্তর্বিবাহ করবে। কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ লোকের মত হবে না।
44 “চতুর্থ রাজ্যের রাজাদের সময় স্বর্গের ঈশ্বর আর একটি রাজ্য স্থাপন করবেন। এই রাজ্যটি চিরকালের জন্য থাকবে। এটি ধ্বংস হবে না এবং এটি সেই জাতীয় রাজ্য হবে না যেটা একটি জাতি থেকে আর একটিকে দেওয়া হবে। এই রাজ্য অন্য সমস্ত রাজ্যকে ধ্বংস করে ফেলবে কিন্তু নিজে চিরস্থায়ী হবে।
45 “এটাই হল সেই পাথরের টুকরোটা যেটা আপনি দেখেছিলেন। আপনা আপনি পর্বত কেটে বেরিয়ে এসেছিল এবং তারপর লোহা, পিতল, মাটি, রূপো ও সোনা সব কিছুকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে দিয়েছিল। এইভাবেই ঈশ্বর আপনাকে দেখিয়েছেন ভবিষ্যতে কি হবে। স্বপ্নটি সত্যি ও আপনি এর ব্যাখ্যাকে সঠিক বলে বিশ্বাস করতে পারেন।”
46 তখন নবূখদ্নিৎসর মাথা নীচু করে দানিয়েলের সামনে নতজানু হলেন এবং দানিয়েলকে সম্মান জানাবার জন্য সুগন্ধি নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে আদেশ দিলেন। 47 তারপর রাজা দানিয়েলকে বললেন, “আমি নিশ্চিত যে তুমি এবং তোমার বন্ধুদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈশ্বর হলেন সব চেয়ে পরাক্রমী। এবং তিনি সব রাজার প্রভু। মানুষ যা জানতে পারে না ঈশ্বর তা বলে দেন। আমি জানি এটা সত্য কারণ তুমি আমাকে এই গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছো।”
48 তারপর রাজা দানিয়েলকে সম্মানিত করলেন এবং তাঁকে প্রচুর বহুমূল্য উপহার দিলেন। নবূখদ্নিৎসর তাঁকে সমগ্র বাবিল প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করলেন। তাঁকে বাবিলের সমস্ত জ্ঞানী মানুষের অধিপতি করা হল। 49 দানিয়েল রাজাকে বললেন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে প্রদেশের শাসনকার্যে নিয়োগ করতে এবং দানিয়েল যেমন চেয়েছিলেন রাজা তাই করলেন। এবং দানিয়েল নিজে রাজার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে রাজদ্বারে থাকলেন।
106 প্রভুর প্রশংসা কর!
প্রভুকে ধন্যবাদ দাও কারণ তিনি মঙ্গলময়!
ঈশ্বরের প্রেম চিরন্তন!
2 ঈশ্বর যে প্রকৃতপক্ষে কত মহান তা কেউই বর্ণনা করে বলতে পারবে না।
কোন ব্যক্তিই ঈশ্বরের যথেষ্ট প্রশংসা করতে পারে না।
3 যারা ঈশ্বরের নির্দেশ মানে তারা সুখী হয়।
ওই সব লোক সর্বদাই ভালো কাজ করে।
4 হে প্রভু, যখন আপনি আপনার লোকদের দয়া করবেন, তখন আমার কথা স্মরণে রাখবেন।
যখন আপনি আপনার লোকদের রক্ষা করবেন তখন আমায় মনে রাখতে ভুলে যাবেন না।
5 আপনার পছন্দ করা লোকদের জন্য আপনি যে সব ভালো কাজ করেন,
আমাকেও তার অংশীদার হতে দিন।
আপনার জাতির সঙ্গে আমাকেও আনন্দ করতে দিন।
আপনার লোকদের সঙ্গে আমাকেও আপনার প্রশংসা করতে দিন।
6 যেমন ভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা পাপ করেছে, আমরাও তেমন ভাবেই পাপ করেছি।
আমরা ভুল করেছি। আমরা গর্হিত কাজ করেছি!
7 হে প্রভু, মিশরে আপনি যে সব অলৌকিক কাজ করেছিলেন
তা থেকে আমাদের পূর্বপুরুষরা কিছুই শেখেনি।
তারা আপনার ভালবাসা ও দয়া মনে রাখে নি।
লোহিত সাগরের ধারে, আমাদের পূর্বপুরুষরা, আপনার বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।
8 কিন্তু তাঁর পবিত্র নামের মহিমার জন্য ঈশ্বর তাদের রক্ষা করেছিলেন।
তাঁর মহৎ শক্তি প্রদর্শনের জন্য ঈশ্বর ওদের রক্ষা করেছিলেন।
9 ঈশ্বর আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং লোহিত সাগর শুকিয়ে গিয়েছিলো।
শুকনো মরুভূমি দিয়ে চলার মত, তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের সমুদ্রের গভীরতার ভেতর দিয়ে ডাঙায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
10 ঈশ্বর আমাদের পূর্বপুরুষদের শত্রুদের হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়েছিলেন!
তাদের শত্রুদের হাত থেকে ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করেছিলেন।
11 ঈশ্বর সমুদ্র দ্বারা ওদের শত্রুদের আবৃত করেছিলেন!
ওদের একজন শত্রুও পালাতে পারে নি!
12 তারপর আমাদের পূর্বপুরুষরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছিলেন।
তাঁরা তাঁর প্রশংসা করেছিলেন।
13 কিন্তু ঈশ্বর যা করেছিলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা খুব তাড়াতাড়ি তা ভুলে গিয়েছিলেন।
তাঁরা ঈশ্বরের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করেন নি।
14 আমাদের পূর্বপুরুষরা মরুভূমিতে ক্ষুধার্ত হয়েছিলেন।
উষর প্রান্তরে তাঁরা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করেছিলেন।
15 কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা যা চেয়েছিলেন, ঈশ্বর ওঁদের তাই দিয়েছিলেন।
কিন্তু ঈশ্বর ওঁদের এক ভয়াবহ রোগও দিয়েছিলেন।
16 পবিত্র শিবিরে লোকরা বিশ্বস্ত রইল
এবং মোশি ও হারোণের প্রতি তাদের উদ্যম দেখাল।
17 কিন্তু দাথন এবং অবীরামের গোষ্ঠীর দিকে মাটি দ্বিধাবিভক্ত হল,
তাদের গিলে ফেলল এবং ঢেকে দিল।[a]
18 তারপর এক আগুনের হল্কা সেই জনতাকে পুড়িয়ে দিলো।
তারপর আগুন সেই সব দুষ্ট লোকদের পুড়িয়ে দিলো।
19 হোরেব পর্বতে তারা একটা সোনার বাছুর তৈরী করেছিল।
তারা সেই মূর্ত্তিকে পূজো করেছিলো।
20 এইভাবে তৃণগ্রাসী বলদ মূর্ত্তির সঙ্গে
ওদের মহিমাময় ঈশ্বরের আদান-প্রদান করেছিলো!
21 ঈশ্বর আমাদের পূর্বপুরুষদের রক্ষা করেছিলেন! কিন্তু তাঁরা তাঁকে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলেন।
মিশরে যে ঈশ্বর বিরাট অলৌকিক কাজ করেছিলেন, তাঁকে তাঁরা ভুলে গেলেন।
22 হামের দেশে ঈশ্বর আশ্চর্য কার্য করেছিলেন।
লোহিত সাগরের ধারে ঈশ্বর ভয়ঙ্কর কাজ করেছিলেন।
23 ঈশ্বর ওসব লোককে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু মোশি, যাকে তিনি মনোনীত করেছিলেন তিনি ঈশ্বরকে নিরস্ত করেন।
ঈশ্বর ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু মোশি পথ রোধ করে দাঁড়ান
তাই ঈশ্বর সেইসব লোকদের আর ধ্বংস করেন নি।
24 কিন্তু তারপর এইসব লোক কনানের চমৎকার রাজ্যে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে।
ওরা বিশ্বাস করেনি যে, ওই দেশে (কনানে) বসবাসকারী মানুষদের পরাজিত করতে ঈশ্বর ওদের সাহায্য করবেন।
25 আমাদের পূর্বপুরুষরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ করতে তাঁবুর ভেতরে রয়ে গিয়েছিলেন।
তাঁরা প্রভুর কন্ঠস্বর শুনতে অস্বীকার করেছিলেন।
26 তাই ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি করেছিলেন যে তাঁরা মরুভূমিতে মারা যাবেন।
27 ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি অন্য লোকদের তাদের উত্তরপুরুষদের পরাজিত করতে দেবেন।
ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের তিনি বিভিন্ন জাতিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন।
28 তারপর, বাল-পিয়োরে, ঈশ্বরের লোকরা বাল মূর্ত্তির পূজা করায় যোগ দিয়েছিলো।
ঈশ্বরের লোকরা জংলী দলটিতে যোগ দিয়েছিলো এবং মৃত লোকের সম্মানে উৎসর্গ করা বলি আহার করেছিলো।
29 ঈশ্বর তাঁর লোকদের প্রতি ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন
এবং তিনি তাদের ভীষণ অসুস্থ করে দিয়েছিলেন।
30 কিন্তু পীনহস ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলো
এবং ঈশ্বর অসুস্থতা রদ করেছিলেন।
31 ঈশ্বর জানতেন যে পীনহস খুব ভালো একটা কাজ করেছিলো।
ঈশ্বর সেটা চিরদিন, অনন্তকালের জন্য স্মরণে রাখবেন!
32 মরীবার কাছে লোকজন প্রচণ্ড ক্রোধান্বিত হল।
তারা মোশিকে দিয়ে কিছু কু-কাজ করালো।
33 কারণ ওই লোকরা মোশিকে ভীষণ বিমর্ষ করে তুলল[b]
এবং সে কিছু চিন্তা-ভাবনা না করেই কথা বলল।
34 ঈশ্বর তাঁর লোকদের কনানে অন্য জাতিসমূহ যারা বাস করছিল তাদের ধ্বংস করে দিতে বললেন।
কিন্তু ইস্রায়েলের লোকরা ঈশ্বরের কথা মান্য করে নি!
35 তারা অন্য জাতিগুলোর সঙ্গে মেলামেশা করেছিল
এবং তারা যা করত ওরা তাই করতে শিখেছিল।
36 ওই লোকগুলো ঈশ্বরের লোকদের জন্য ফাঁদের মতই ভয়ঙ্কর হল।
ঈশ্বরের লোকরাও সেইসব মূর্ত্তিসমূহের পূজা করতে শুরু করলো যাদের ওরা পূজা করত।
37 এমনকি ঈশ্বরের লোকেরা তাদের সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করেছিলো
এবং ওই দানবদের কাছে উৎসর্গ করেছিলো।
38 ঈশ্বরের লোকরা নিস্পাপ লোকদের হত্যা করেছিলো।
ওরা ওদের নিজেদের সন্তানদেরও হত্যা করেছিলো
এবং তাদের মূর্ত্তিসমূহের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলো।
39 তাই অন্য লোকদের পাপে ঈশ্বরের লোকরা অপবিত্র হয়ে উঠেছিল।
ঈশ্বরের লোকরা তাদের ঈশ্বরের কাছে অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলো এবং অন্য লোকরা যা করতো ওরাও তাই করতে শুরু করেছিল।
40 ঈশ্বর তাঁর লোকজনের ওপরে চটে গেলেন।
তাদের ব্যাপারে ঈশ্বর ক্লান্ত হয়ে গেলেন!
41 ঈশ্বর তাঁর লোকেদের,[c] কেউ চায় নি এমন কিছুতে পরিবর্তন করে দিলেন।
ঈশ্বর ওদের শত্রুদের দিয়ে ওদের শাসন করালেন।
42 ঈশ্বরের লোকদের শত্রুরা ওদের দাবিয়ে রাখলো
এবং তাদের নিজেদের ক্ষমতার মধ্যে রাখলো।
43 ঈশ্বর তাদের বহুবার রক্ষা করেছিলেন
কিন্তু তারা ঈশ্বরের উপদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।[d]
অতএব, এই কারণে লোকদের সম্মানে খাটো করা হয়েছিল।
44 কিন্তু ঈশ্বরের লোকরা যখনই সমস্যায় পড়েছে ওরা সাহায্যের জন্য ঈশ্বরকে ডেকেছে
এবং প্রত্যেকবারই ঈশ্বর ওদের প্রার্থনা শুনেছেন।
45 ঈশ্বর সর্বদাই তাঁর চুক্তির কথা স্মরণে রেখেছিলেন
এবং তাঁর মহৎ প্রেম দিয়ে তিনি সর্বদাই ওদের স্বস্তি দিয়েছিলেন।
46 অন্য জাতিরা ওদের বন্দী হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলো।
কিন্তু তাঁর লোকদের প্রতি ওদের সদয় করেন।
47 হে প্রভু, আমাদের ঈশ্বর, আমাদের রক্ষা করুন!
আমাদের অন্য সব জাতি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন
যাতে আমরা আপনার পবিত্র নামের প্রশংসা করতে পারি
এবং বন্দনা গান করে আপনাকে সম্মান করতে পারি।
48 ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরের বন্দনা কর। ঈশ্বর চির বিরাজমান
এবং তিনি চিরদিন বিরাজিত থাকবেন।
সব লোকরা বলল, “আমেন!”
প্রভুর প্রশংসা কর!
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International