M’Cheyne Bible Reading Plan
যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দায়ূদ দেখা করতে গেলেন
21 দায়ূদ চলে গেলেন। যোনাথন শহরে ফিরে এলো। দায়ূদ নোব শহরে যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
অহীমেলক দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে এলেন। তিনি তো ভয়ে কাঁপছিলেন। তিনি দায়ূদকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার, তুমি একা কেন? তোমার সঙ্গে কাউকে দেখছি না কেন?”
2 দায়ূদ বললেন, “রাজা আমাকে একটি বিশেষ আদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘এই আসার উদ্দেশ্য নিয়ে তুমি কাউকে কিছু জানাবে না। আমি তোমাকে কি বলছি কেউ যেন জানতে না পারে।’ আমার লোকদের বলছি কোথায় ওরা আমার সঙ্গে দেখা করবে। 3 এখন বলো, তোমার সঙ্গে কি খাবার আছে? তোমার কাছে থাকলে পাঁচটি গোটা রুটি আমাকে দাও, না হলে অন্য কিছু খেতে দাও।”
4 যাজক বললেন, “আমার কাছে তো সাধারণ কোন রুটি নেই, কিন্তু পবিত্র রুটি আছে। তোমার লোকরা তা খেতে পারে, অবশ্য যদি কোন নারীর সঙ্গে তাদের যৌন সম্পর্ক না থেকে থাকে।”
5 দায়ূদ যাজককে বললেন, “না, এরকম কোন ব্যাপার নেই। যুদ্ধে যাবার সময় এবং সাধারণ কাজের সময়ও তারা তাদের দেহগুলিকে শুদ্ধ রাখে। তাছাড়া এখন আমরা একটি বিশেষ কাজে এসেছি, সুতরাং অশুদ্ধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।”
6 পবিত্র রুটি ছাড়া সেখানে অন্য কোন রুটি ছিল না। যাজক দায়ূদকে তা-ই দিলেন। এই রুটিই তারা প্রভুর সামনে পবিত্র টেবিলে রেখে দিত। প্রতিদিন তারা এগুলো বদলে টাটকা রুটি রেখে দিত।
7 সেদিন সেখানে শৌলের একজন অনুচর উপস্থিত ছিল। সে ছিল ইদোম বংশীয়, তার নাম দোয়েগ। সে ছিল শৌলের প্রধান মেষপালক। দোয়েগকে সেখানে প্রভুর সামনে রাখা হয়েছিল।
8 দায়ূদ অহীমেলককে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাছে কি বল্লম বা তরবারি কিছু একটা আছে? রাজার কাজটা জরুরি তাই তাড়াতাড়িতে আমি সঙ্গে কোনো তরবারি বা অস্ত্রশস্ত্র আনি নি।”
9 যাজক বললেন, “এখানে তো মাত্র একটাই তরবারি আছে, সেটা পলেষ্টীয় গলিয়াতের তরবারি। তুমি এলা উপত্যকায় তাকে হত্যা করার সময় ওর হাত থেকেই এটা কেড়ে নিয়েছিলে। ওটা কাপড়ে মুড়ে এফোদের পেছনে রাখা আছে। ইচ্ছা হলে এটা তুমি নিয়ে যেতে পারো।”
দায়ূদ বললেন, “ওটাই তুমি আমাকে দাও। গলিয়াতের তরবারির মতো তরবারি আর কোথাও পাওয়া যাবে না।”
দায়ূদ এক শত্রুর কাছ থেকে পালিয়ে গাতে গেলেন
10 সেদিন শৌলের কাছ থেকে দায়ূদ পালিয়ে গেলেন। তিনি গাতের রাজা আখীশের কাছে গেলেন। 11 আখীশের অনুচররা এটা ভাল মনে করলো না। তারা বলল, “ইনি হচ্ছেন দায়ূদ, ইস্রায়েলের রাজা। এঁকে নিয়েই ওদের লোকেরা গান গায়। ওরা নেচে নেচে এই গানটা করে:
“দায়ূদ মেরেছে শত্রু অযুতে অযুতে
শৌল তো কেবল হাজারে হাজারে।”
12 তাদের কথাগুলো দায়ূদ বেশ মন দিয়ে শুনলেন। গাতের রাজা আখীশকে তিনি ভয় করতে লাগলেন। 13 শেষে আখীশ ও তার অনুচরদের সামনে দায়ূদ পাগলের ভান করলেন। ওদের কাছে তিনি ইচ্ছে করে পাগলামি করতে লাগলেন। তিনি দরজায় থুতু ছিটাতে লাগলেন। তাঁর দাড়ি দিয়ে থুতু গড়াতে দিলেন।
14 আখীশ তার অনুচরদের বলল, “আরে লোকটাকে দেখো, সত্যি মাথা খারাপ। একে আমার কাছে এনেছ কেন? 15 আমার আশপাশে যথেষ্ট পাগল রয়েছে। আমার কাছে ঐ জাতীয় লোক আর বেশী আনার দরকার নেই। এটাকে আবার আমার বাড়িতে ঢুকিও না।”
দায়ূদ বিভিন্ন জায়গায় গেলেন
22 দায়ূদ গাৎ থেকে চলে গেলেন। তিনি পালিয়ে অদুল্লমের গুহায় গেলেন। দায়ূদের ভাই আর আত্মীয়স্বজনরা এই সংবাদ জানতে পারল। তারা সেখানে দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে গেল। 2 অনেক লোক দায়ূদের সঙ্গে যুক্ত হল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কোন বিপদে পড়েছিল, কেউ অনেক টাকা ধার করেছিল, আবার কেউ জীবনে সুখ শান্তি পাচ্ছিল না। এরা সকলেই দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিল। দায়ূদ হলেন তাদের নেতা। তাঁর সঙ্গে ছিল এরকম 400 জন পুরুষ।
3 অদুল্লম থেকে দায়ূদ গেলেন মিস্পাতে। মিস্পা মোয়াবের একটা জায়গা। মোয়াবের রাজাকে দায়ূদ বললেন, “যতদিন না আমি জানতে পারছি ঈশ্বর আমার জন্য কি করবেন, ততদিন দয়া করে আপনি আমার পিতা-মাতাকে আপনার কাছে থাকতে দিন।” 4 তারপর দায়ূদ মোয়াবের রাজার কাছে তাঁর পিতামাতাকে রেখে চলে গেলেন। যতদিন দায়ূদ দুর্গে থেকেছিলেন ততদিন তাঁর পিতামাতা মোয়াবের রাজার কাছে রইলেন।
5 কিন্তু ভাববাদী গাদ দায়ূদকে বললেন, “দুর্গে থেকো না। যিহূদা দেশে চলে যাও।” দায়ূদ সেইমত দুর্গ ছেড়ে হেরৎ অরণ্যে চলে গেলেন।
শৌল অহীমেলকের পরিবার ধ্বংস করলেন
6 শৌল শুনতে পেলেন যে দায়ূদ আর তাঁর সঙ্গীদের সম্বন্ধে লোকরা খবর পেয়েছে। গিবিয়ার পাহাড়ে একটা গাছের নীচে শৌল বল্লম হাতে নিয়ে বসেছিলেন। তাঁর চারপাশে অনুচররা তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। 7 শৌল তাদের বললেন, “বিন্যামীনের লোকরা শোন, তোমরা কি মনে করো যিশয়ের পুত্র (দায়ূদ) তোমাদের ক্ষেত এবং দ্রাক্ষা ক্ষেতগুলি দেবে? তোমরা কি মনে করো দায়ূদ তোমাদের চাকরির উন্নতি করে দেবে এবং 1000 লোকের উপর বা 100 লোকের উপরে তোমাদের নিযুক্ত করবে? 8 তোমরা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছো। তোমরা চুপিচুপি আমার বিরুদ্ধে গোপনে মতলব আঁটছ। তোমাদের মধ্যে একজনও আমাকে বলেনি যে আমার পুত্র যোনাথন দায়ূদকে উৎসাহিত করেছে। তোমরা কেউ আমাকে গ্রাহ্য করো না। তোমরা কেউ বলনি আমার পুত্র যোনাথন দায়ূদকে উৎসাহ দিয়েছে। যোনাথন আমার ভৃত্য দায়ূদকে গা ঢাকা দিতে বলেছিল, যাতে সে আমাকে আক্রমণ করতে পারে। আর দায়ূদ এখন ঠিক এটাই করে যাচ্ছে।”
9 ইদোম পরিবারের দোয়েগ সেখানে শৌলের আধিকারিকদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। দোয়েগ বললেন, “আমি যিশয়ের পুত্রকে নোবে দেখেছিলাম। সে অহীটুবের পুত্র অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। 10 অহীমেলক দায়ূদের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিল। সে দায়ূদকে খাবারও দিয়েছিল। তাছাড়া পলেষ্টীয় গলিয়াতের তরবারিও দিয়েছিল।”
11 অতঃপর রাজা শৌল যাজককে ডেকে আনতে কয়েকজনকে পাঠালেন। তিনি অহীটুবের পুত্র অহীমেলক এবং তার সকল আত্মীয়দের ডেকে পাঠালেন। তাঁরা সকলেই নোবের যাজক ছিলেন। তাঁরা সকলেই রাজা শৌলের কাছে এলেন। 12 শৌল অহীমেলককে বললেন, “শোনো অহীটুবের পুত্র।”
অহীমেলক বললেন, “বলুন।”
13 শৌল বললেন, “কেন তুমি আর যিশয়ের পুত্র আমার বিরুদ্ধে গোপনে চক্রান্ত করছ? তুমি দায়ূদকে রুটি দিয়েছিলে। শুধু তাই নয়, একটা তরবারিও দিয়েছিলে। তুমি তার হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলে। আর এখন দায়ূদ আমাকে আক্রমণ করার জন্য সময় গুনছে!”
14 অহীমেলক বললেন, “দায়ূদ আপনার খুবই অনুগত। আপনার কোনো অনুচরই দায়ূদের মতো প্রভু ভক্ত নয়, সে আপনার জামাতা। আপনার রক্ষীদের দলপতি। আপনাদের বাড়ীর সকলেই দায়ূদকে সম্মান করে। 15 দায়ূদের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে এই প্রথমবারই যে প্রার্থনা করেছি তা নয়। এর জন্য, আমায় অথবা আমার কোন আত্মীয়কে আপনি দোষী করবেন না। আমরা আপনার ভৃত্য। কি হচ্ছে আমি তার কিছুই জানি না।”
16 তবু রাজা বললেন, “অহীমেলক, তুমি আর তোমার আত্মীয়স্বজন সকলকেই মরতে হবে।” 17 রাজা প্রহরীদের কাছে ডেকে বললেন, “যাও প্রভুর সমস্ত যাজকদের হত্যা করে এসো। তাদের হত্যা করো, কারণ তারা দায়ূদের দলে। তারা জানত দায়ূদ পালিয়ে যাচ্ছে, তবুও তারা আমাকে কিছু বলেনি।”
কিন্তু কেউই প্রভুর যাজকদের আঘাত করতে রাজি হল না।
18 তখন রাজা দোয়েগকে আদেশ দিলেন। শৌল বললেন, “দোয়েগ, তুমি যাজকদের হত্যা করো।” দোয়েগ গিয়ে যাজকদের হত্যা করলো। সেই দিন সে 85 জন যাজককে হত্যা করল। 19 নোব ছিল যাজকদের শহর। শহরের সকলকেই দোয়েগ হত্যা করল। পুরুষ, নারী, শিশু সকলকেই সে তরবারির কোপে শেষ করে দিল। সেই সঙ্গে মেরে ফেলল তাদের গরু, গাধা আর মেষগুলোকেও।
20 শুধু বেঁচে গেলেন অবিয়াথর। তাঁর পিতা অহীমেলক। অহীমেলকের পিতা অহীটুব। অবিয়াথর পালিয়ে গিয়ে দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিলেন। 21 তিনি দায়ূদকে বললেন শৌল সমস্ত যাজকদের হত্যা করেছে। 22 দায়ূদ বললেন, “আমি সেদিন নোবে ইদোমীয় দোয়েগকে দেখেছিলাম। আমি জানতাম শৌলকে সে সব বলবে। তোমার পিতার পরিবারের সকলের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। 23 যে লোকটা তোমাকে হত্যা করতে চায়, সে আমাকেও হত্যা করতে চায়। আমার সঙ্গে থাকো, ভয় পেও না। তুমি নিরাপদেই থাকবে।”
মানুষকে অনুসরণ করা ভুল
3 আমার ভাই ও বোনেরা, আমি তোমাদের সঙ্গে আত্মিক লোকদের মতো কথা বলতে পারি নি। খ্রীষ্টীয় জীবনে তোমরা শিশু বলে তোমাদের কাছে জাগতিক ভাবাপন্ন লোকদের মতো কথা বলছি। 2 আমি তোমাদের শক্ত কোন খাদ্য না দিয়ে তোমাদের দুধ পান করিয়েছি, কারণ তখনও তোমরা শক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলে না; এমন কি তোমরা এখনও প্রস্তুত হও নি। 3 তোমরা এখনও আত্মিক লোক হয়ে ওঠো নি। তোমরা আজও জাগতিক ভাবাপন্ন, কারণ তোমাদের মধ্যে ঈর্ষা ও বিবাদ রয়েছে, আর তাতেই জানা যায় যে তোমরা আত্মিক লোক নও; তোমরা জাগতিক লোকদের মতোই চলছ। 4 কারণ তোমাদের মধ্যে যখন কেউ বলে, “আমি পৌলের লোক,” আবার কেউ বলে, “আমি আপল্লোর লোক” তখন কি তোমরা জাগতিক লোকদের মতোই ব্যবহার করছ না?
5 আপল্লো কে? আর পৌলই বা কে? আমরা ঈশ্বরের দাস মাত্র, যাদের দ্বারা তোমরা বিশ্বাসী হয়েছ। প্রভু আমাদের এক একজনকে যেমন কাজ দিয়েছেন আমরা তেমন করেছি। 6 আমি বীজ বুনেছি, আপল্লো জল দিয়েছেন, কিন্তু ঈশ্বরই বৃদ্ধি দান করেছেন। 7 তাই যে বীজ বোনে বা যে জল দেয় সে কিছু নয়, কিন্তু ঈশ্বর, যিনি বৃদ্ধি দান করেন তিনিই সব। 8 যে বীজ বোনে ও যে জল দেয় তাদের উদ্দেশ্য এক; তারা প্রত্যেকে নিজের নিজের কর্ম অনুসারে ফল পাবে। 9 কারণ আমরা পরস্পর ঈশ্বরেরই সহকর্মী। তোমরা এক শস্যক্ষেত্রের মতো, যার মালিক স্বয়ং ঈশ্বর।
তোমরা ঈশ্বরের গৃহ। 10 ঈশ্বর আমায় যে ক্ষমতা দিয়েছেন সেই অনুসারে আমি অভিজ্ঞ স্থপতির মতো ভিত গেঁথেছি। কিন্তু অন্যরা তার ওপর গাঁথছে, তবে প্রত্যেকে যেন লক্ষ্য রাখে কিভাবে তারা তার ওপর গাঁথে। 11 যে ভিত গাঁথা হয়েছে তা ছাড়া অন্য ভিত্তিমূল কেউ স্থাপন করতে পারে না, সেই ভিত হচ্ছেন যীশু খ্রীষ্ট। 12 এই ভীতের ওপরে কেউ যদি সোনা, রূপো, মূল্যবান পাথর, কাঠ, খড় বা বিছালি দিয়ে গাঁথে 13 তবে প্রত্যেক লোকের নিজস্ব কাজ স্পষ্টরূপে প্রকাশ পাবেই। সেই বিচারের দিন[a] তা প্রকাশ করে দেবে, কারণ সেই দিনটি আসবে আগুন নিয়ে আর সেই আগুনই প্রত্যেকের কাজ কি রকম তা যাচাই করবে। 14 যে যা গেঁথেছে তা যদি টিকে থাকে তবে সে পুরস্কার পাবে, 15 আর যদি কারোর কাজ পুড়ে যায় তবে তাকে ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। সে নিজে রক্ষা পাবে; কিন্তু তার অবস্থা আগুনের মধ্য দিয়ে পার হয়ে আসা লোকের মতো হবে।
16 তোমরা কি জান না যে তোমরা ঈশ্বরের মন্দির, আর ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন? 17 যদি কেউ ঈশ্বরের মন্দির ধ্বংস করে তবে ঈশ্বর তাকে ধ্বংস করবেন, কারণ ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র আর সেই মন্দির তোমাদেরই।
18 তোমরা নিজেদের ফাঁকি দিও না। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজেকে এই জগতের দিক দিয়ে জ্ঞানী মনে করে, তবে সে মূর্খ হলেও যেন প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারে। 19 কারণ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এই জগতের জ্ঞান মূর্খতা স্বরূপ। শাস্ত্রে লেখা আছে: “তিনি (ঈশ্বর) জ্ঞানীদের তাদের ধূর্ততায় ধরে ফেলেন।”(A) 20 আবার লেখা আছে, “জ্ঞানীদের সমস্ত চিন্তাই যে অসার তা প্রভু জানেন।”(B) 21 তাই কেউ যেন মানুষকে নিয়ে গর্ব না করে, কারণ সবই তো তোমাদের; 22 তা সে পৌল, আপল্লো, কৈফা (পিতর) হোক্ বা এই জগৎ জীবন বা মৃত্যুই হোক্। বর্তমান বা ভবিষ্যত যা কিছু বল সব কিছু তোমাদের, 23 আর তোমরা খ্রীষ্টের ও খ্রীষ্ট ঈশ্বরের।
ভূমিকা
1 1-3 আমি যাজক বুষির পুত্র যিহিষ্কেল। আমি কবার নদী তীরে বাবিলে নির্বাসনে ছিলাম। সে সময় আকাশ খুলে গিয়েছিল এবং আমি ঈশ্বরীয় দর্শন পেয়েছিলাম। এটা ছিল ত্রিশতম বছরের চতুর্থ মাসের পঞ্চম দিন। যিহোয়াখীন রাজার রাজত্বের সময় নির্বাসনের পঞ্চম বছরের ঐ মাসের পঞ্চম দিনে প্রভুর এই কথাগুলি যিহিষ্কেলের কাছে এসেছিল। প্রভুর ক্ষমতাও ঐ জায়গায় তার ওপর এল।
প্রভুর রথ—ঈশ্বরের সিংহাসন
4 আমি (যিহিষ্কেল) দেখলাম উত্তর দিক থেকে একটা বড় ঝড় আসছে। জোরালো বাতাসের সঙ্গে এক বড় মেঘ, মেঘের মধ্যে থেকে আগুন ঝলসে উঠছিল। তার চারদিকে আলো চমকাচ্ছিল; মনে হচ্ছিল যেন উত্তপ্ত ধাতু আগুনে জ্বলছে। 5 মেঘের মধ্যে ছিল চারটি পশু যাদের মানুষের মত রূপ। 6 প্রত্যেক পশুর চারটি করে মুখ ও চারটি করে ডানা ছিল। 7 তাদের পাগুলো সোজা, দেখতে যেন গরুর পায়ের মত। আর তা পালিশ করা পিতলের মত চক্চক্ করছিল। 8 তাদের পাখার তলায় মানুষের হাত ছিল। চারটি পশুর প্রত্যেকের চারটি করে মুখ ও চারটি করে ডানা ছিল। ডানাগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। 9 যাবার সময় সেই পশুরা পিছন ফেরেনি। তারা সোজা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
10 প্রত্যেক পশুর চারটি করে মুখ ছিল। প্রত্যেকের সামনের মুখটা ছিল মানুষের মুখের মত, ডানদিকের মুখটা ছিল সিংহের মত, বাম দিকের মুখটা ছিল গরুর মত, আর পিছনের মুখটা ঈগলের মত। 11 পশুগুলির ডানা তাদের উপর ছড়িয়ে ছিল। প্রত্যেক পশু অপর পশুকে স্পর্শ করার জন্য দুটি করে ডানা বাড়িয়ে রেখেছিল। আর অন্য দুটি ডানা দিয়ে নিজের দেহ ঢেকে রেখেছিল। 12 প্রত্যেক পশু যে দিকে দেখছে সেই দিকেই যাচ্ছিল। আর বাতাস যে দিকে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল শুধু সেই দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু চলার সময় তারা যে দিকে যেত সেই দিকে তাকাচ্ছিল না। 13 পশুগুলো দেখতে একই রকম ছিল।
পশুদের মধ্যবর্তী স্থানটি দেখতে আগুনে জ্বলা কয়লার আভার মত লাগছিল। এই ছোট ছোট মশালের মত আগুনগুলো পশুদের মধ্য দিয়ে তাদের চারি দিকে ঘুরছিল। আগুন উজ্জ্বল ভাবে জ্বলছিল আর তার থেকে বিদ্যুত চমকাচ্ছিল! 14 সেই সব পশুরা সামনে পেছনে বিদ্যুতের মত দৌড়চ্ছিল!
15-16 আমি পশুদের দিকে তাকালাম এবং সেই সময় আমি দেখলাম চারটি চাকা মাটি স্পর্শ করে রয়েছে। প্রত্যেক পশুর একটি করে চাকা ছিল। প্রত্যেকটা চাকা দেখতে একই রকম, দেখে মনে হচ্ছিল যেন স্বচ্ছ হলুদ রঙের কোন অলঙ্কার থেকে তৈরী। দেখে মনে হচ্ছিল যেন চাকার ভেতরে চাকা রয়েছে। 17 চাকাগুলি যে কোনো দিকে যাবার জন্য ঘুরতে পারত, কিন্তু চলবার সময় চাকাগুলো তাদের দিক্ পরিবর্ত্তন করেনি।
18 চাকার ধারগুলো ছিল লম্বা এবং ভয়ঙ্কর! চার চাকার ধার ছিল চোখে পূর্ণ।
19 চাকাগুলি সব সময় পশুদের সঙ্গেই যাচ্ছিল। পশুরা আকাশে গেলে চাকাগুলিও তাদের সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 20 বাতাস যেখানে তাদের নিয়ে যেতে চাইছিল তারা সেখানেই যাচ্ছিল, আর চাকাগুলোও তাদের সঙ্গে যাচ্ছিল। কারণ চাকার মধ্যে পশুগুলোর আত্মা ছিল। 21 তাই পশুরা চললে চাকাগুলোও চলছিল, থামলে চাকাগুলোও থামছিল। চাকাগুলো শূন্যে গেলে পশুরাও তাদের সঙ্গে যাচ্ছিল। কারণ চাকাগুলির মধ্যেই বাতাস ছিল।
22 পশুগুলির মাথার ওপর খুব আশ্চর্য কোন একটা জিনিস ছিল। সেটা ছিল ওলটানো এক পাত্রের মত কোন একটা জিনিষ আর সেই ওলটানো পাত্র ছিল স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। 23 এই পাত্রের ঠিক নীচেই একটি পশুর ডানাসমূহ পরবর্তী পশুকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছিল। দুটি ডানা এক দিকে ছড়িয়ে থাকছিল আর অন্য দুটি অন্যদিকে ছড়িয়ে দেহকে ঢেকে রেখেছিল।
24 তারপর আমি ঐ ডানাগুলোর শব্দ শুনলাম। প্রত্যেকবার ভ্রমণের সময় পশুদের ঐ ডানাগুলো খুব জোরে শব্দ করত, যেন একটি বিশাল জলপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের শব্দের মতোই উচ্চ ছিল। সেটা সৈন্যদলের আওয়াজের মত জোর ছিল। আর চলা শেষ হলে পশুগুলো তাদের ডানাগুলো নামিয়ে দিচ্ছিল।
25 পশুরা চলা বন্ধ করে তাদের ডানাগুলো নামাল। তারপর আরেকটি শব্দটি শোনা গেল; ঐ শব্দ তাদের মাথার ওপরের পাত্র থেকে এসেছিল। 26 সেই পাত্রের ওপরে সিংহাসনের মত একটা কিছু যেন দেখা গেল। আর তা ছিল নীলকান্ত মণির মত নীল। সেই সিংহাসনে মানুষের মত একজনকে বসে থাকতে দেখা গেল! 27 আমি তার কোমরের ওপরটা দেখতে পেলাম। তাকে দেখতে যেন গরম ধাতুর মত, যেন তার চারিদিকে আগুন! আর আমি তার কোমরের নীচেও তাকালাম, দেখলাম তার চারিদিকে তাপযুক্ত আগুন। 28 তার চারি দিকের জাজ্বল্যমান আলো ছিল মেঘের মধ্যে একটি ধনুর মত। যেটা প্রভুর মাহাত্ব্যের চিত্র। আমি তা দেখামাত্র মাটিতে পড়ে প্রণাম করলাম। তারপর শুনলাম একটি শব্দ আমায় কিছু বলছে।
দায়ূদের একটি গীত।
37 দুষ্ট লোকদের দেখে মর্মপীড়া বোধ করো না।
যারা মন্দ কাজ করে, ওদের দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ো না।
2 মন্দ লোকরা সবুজ ঘাস-পাতার মত,
যা তাড়াতাড়ি বিবর্ণ হয়ে মারা যায়।
3 যদি তুমি প্রভুতে আস্থা রাখ এবং ভালো কাজ কর,
তাহলে তুমি বেঁচে থাকবে এবং এই পৃথিবীর ভাল বস্তুগুলি উপভোগ করবে।
4 প্রভুর সেবা করে নিজে উপভোগ কর
এবং তাহলে তোমার যা প্রয়োজন, তিনি তোমায় তাই দেবেন।
5 প্রভুর ওপরে নির্ভর কর। তাঁকে বিশ্বাস কর,
যা করার তিনি তাই করবেন।
6 প্রভু তোমার ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়নীতি
মধ্যাহ্নের সূর্যের মত উজ্জ্বল করুন।
7 প্রভুকে বিশ্বাস কর এবং তাঁর সাহায্যের জন্য অপেক্ষা কর।
মন্দ লোকরা যখন জয়ী হয় তখন হতাশ হয়ো না।
দুষ্ট লোকেরা যখন কু-পরিকল্পনা করে জয়ী হয়, তখন মর্মপীড়া বোধ করো না।
8 ক্রুদ্ধ হয়ো না! রাগে আত্মহারা হয়ে যেও না!
এতখানি হতাশ হয়ে যেও না, যাতে তোমারও খারাপ কাজ করতে ইচ্ছা হয়।
9 কেন? কারণ মন্দ লোকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
কিন্তু যারা সাহায্যের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করবে, তারা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি পাবে।
10 খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুষ্ট লোকরা আর সেখানে থাকবে না।
তোমরা হয়তো তাদের খুঁজবে, কিন্তু ততদিনে তারা সবাই গত হয়েছে!
11 বিনয়ী লোকরা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি পাবে
এবং তারা শান্তি ভোগ করবে।
12 মন্দ লোকরা ভালো লোকদের বিরুদ্ধে মন্দ ফন্দি আঁটবে।
ভালো লোকদের দিকে দাঁত কিড়মিড় করে ওরা ওদের ক্রোধ প্রকাশ করবে।
13 কিন্তু আমাদের প্রভু ওদের দেখে দেখে হাসেন।
ওদের যে কি হবে, তা তিনি দেখতে পান।
14 মন্দ লোকরা তাদের তরবারি তুলে নেয়, ওদের তীর তাক করে।
ওরা দরিদ্র সহায়সম্বলহীন লোককে হত্যা করতে চায়।
সৎ এবং ভালো লোকদের ওরা হত্যা করতে চায়।
15 কিন্তু ওদের তরবারি ওদের বুকেই বিদ্ধ হবে,
ওদের তীরও ভেঙ্গে যাবে।
16 মন্দ লোকদের বিপুল সমাবেশের চেয়ে
মুষ্টিমেয় কিছু সৎ লোক অনেক ভালো।
17 কেন? কারণ মন্দ লোকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
কিন্তু প্রভু সৎ লোকদের প্রতি যত্ন নেন।
18 খাঁটি ভালো মানুষদের প্রভু আজীবন রক্ষা করেন।
ওরা অনন্তকাল ধরে পুরস্কার পাবে।
19 সংকট এলে সৎ লোকরা হতাশ হবে না।
দুর্ভিক্ষের সময় ভালো লোকদের জন্য প্রচুর আহার থাকবে।
20 কিন্তু মন্দ লোকরা প্রভুর শত্রু এবং ওরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
ওদের উপত্যকা শুকিয়ে যাবে এবং পুড়ে যাবে।
ওরা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হবে।
21 দুষ্ট লোকরা খুব তাড়াতাড়ি টাকা ধার করে, কিন্তু কখনও সেটা ফেরৎ দেয় না।
কিন্তু ভালো লোকরা দয়ালু এবং উদারহস্ত।
22 প্রভুর আশীর্বাদপূত প্রত্যেকে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত দেশ পাবে।
কিন্তু প্রভু যাকে অভিশাপ দেন সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
23 যে সৈন্য সাবধানে চলে, প্রভু তাকে সাহায্য করেন।
প্রভু তাকে পড়ে যেতে দেন না।
24 যদি সেই সৈন্য দৌড়ে গিয়ে শত্রুকে আক্রমণ করে,
প্রভু সেই সৈন্যের হাত ধরে তাকে পতন থেকে রক্ষা করেন।
25 একসময় আমি তরুণ ছিলাম, এখন আমি বৃদ্ধ হয়েছি।
আমি কখনও ঈশ্বরকে ভালো লোকেদের পরিত্যাগ করতে দেখি নি।
ভালো লোকেদের সন্তানদের আমি কখনও খাবার ভিক্ষা করতে দেখি নি।
26 একজন সৎ লোক মুক্ত হাতে অন্যকে দেয়।
সৎ লোকদের সন্তানরা আশীর্বাদের মত।
27 যদি তুমি খারাপ কাজ না কর, যদি তুমি ভালো কাজ কর,
তুমি অনন্তকাল বেঁচে থাকবে।
28 প্রভু ন্যায় ভালবাসেন।
সাহায্য না করে তিনি তাঁর অনুগামীদের পরিত্যাগ করেন না।
প্রভু তাঁর অনুগামীদের সর্বদাই রক্ষা করেন।
কিন্তু দুষ্ট লোকদের তিনি বিনাশ করেন।
29 সৎ লোকরা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত রাজ্য পাবে।
সেখানে তারা চিরদিন বাস করবে।
30 একজন সৎ লোক সর্বদাই সুপরামর্শ দেয়।
সে প্রত্যেকের জন্যই ন্যায্য সিদ্ধান্ত দেয়।
31 তার মনের মধ্যে সর্বদাই প্রভুর শিক্ষামালা থাকে।
তাই সে সৎ পথে বাঁচা থেকে বিরত হবে না।
32 কিন্তু দুষ্ট লোকরা সব সময় সৎ লোকদের হত্যা করবার সুযোগ খোঁজে।
33 সৎ লোকরা যখন মন্দ লোকদের ফাঁদে পড়ে, তখন প্রভু সৎ লোকদের ত্যাগ করেন না।
ঈশ্বর কখনই সৎ লোকদের দোষী বলে বিচারে সাব্যস্ত হতে দেবেন না।
34 ঈশ্বর যা বলেন তা কর এবং তাঁর সাহায্যের প্রতীক্ষা কর।
যখন তিনি মন্দ লোকদের জোর করে তাড়িয়ে দেবেন,
তখন প্রভু তোমাকেই জয়ী করবেন এবং তুমিই প্রভুর প্রতিশ্রুত রাজ্য পাবে।
35 আমি একজন দুষ্ট লোককে দেখেছিলাম যে ছিল ক্ষমতাশালী।
তার ছিল একটা স্বাস্থ্যবান সবুজ গাছের মতো একটি শক্তিশালী দেহ।
36 পরে আমি সেই পথে গিয়েছি।
আমি তাকে খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি।
37 সৎ এবং পবিত্র হও।
শান্তিপ্রিয় লোকরা অনেক উত্তরপুরুষ পাবে।
38 কিন্তু যারা ঈশ্বরের বিধান ভাঙে তারা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হবে।
এবং তাদের উত্তরপুরুষদেরও দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
39 প্রভু সৎ লোকেদের রক্ষা করেন।
সৎ লোকেরা যখন সংকটে পড়ে, তখন প্রভুই তাদের আশ্রয়।
40 প্রভু সৎ লোকদের সাহায্য করেন, রক্ষা করেন।
সৎ লোকরা প্রভুতে বিশ্বাস রাখে এবং তিনি তাদের দুষ্ট লোকদের হাত থেকে রক্ষা করেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International