M’Cheyne Bible Reading Plan
পৌল অমালেকীয়দের ধ্বংস করে দিলেন
15 একদিন শমূয়েল শৌলকে বলল, “প্রভু তোমায় ইস্রায়েলে তাঁর লোকদের রাজা হিসাবে অভিষেক করতে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তাই এখন প্রভুর বার্তা শোনো। 2 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন: ‘যখন ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে বেরিয়ে আসছিল তখন অমালেকীয়রা তাদের কনানে যেতে বাধা দিয়েছিল। অমালেকীয়রা কি করেছে আমি সব দেখেছি। 3 এখন যাও, অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। ওদের তোমরা একেবারে শেষ করে দাও, ওদের সব কিছু ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দাও। কাউকে বাঁচতে দিও না। ছেলে মেয়ে কাউকে বাদ দেবে না। তাদের সমস্ত গরু, মেষ উটও তোমরা শেষ করে দেবে।’”
4 শৌল টলায়ীমে সমস্ত সৈন্য জড়ো করলেন। পদাতিক সৈন্য 200,000 জন আর অন্যান্যরা 10,000 জন। এদের মধ্যে যিহূদার লোকরাও ছিল। 5 তারপর শৌল চলে গেলেন অমালেকীয়দের শহরে। উপত্যকায় গিয়ে তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। 6 কেনীয়দের শৌল বললেন, “তোমরা সবাই অমালেকীয়দের ছেড়ে দিয়ে চলে যাও। তাহলে আমি ওদের সঙ্গে তোমাদের বিনষ্ট করব না। যখন ইস্রায়েলীয়রা মিশর ছেড়ে চলে আসছিল, তোমরা ইস্রায়েলীয়দের দয়াদাক্ষিণ্য দেখিয়েছিলে।” একথা শুনে কেনীয়রা অমালেকীয়দের ছেড়ে চলে গেল।
7 শৌল অমালেকীয়দের হারিয়ে দিলেন। তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন সেই হবীলা থেকে শূর অবধি যেখানে মিশরের সীমানা। 8 অমালেকীয়দের রাজা ছিল অগাগ। শৌল জীবিত অবস্থায় অগাগকে বন্দী করেছিলেন এবং বাকী অমালেকীয়দের হত্যা করেছিলেন। 9 সব কিছু ধ্বংস করতে শৌলের এবং ইস্রায়েলীয়দের মন চাইল না। সেইজন্য তারা অগাগকে মেরে ফেলে নি। তাছাড়া পুষ্ট গাভী, সেরা মেষগুলোকেও তারা জীবিত রেখেছিল। সেই সঙ্গে আর যে সব জিনিস রেখে দেবার মতো, সেগুলোও রেখে দিয়েছিল। ঐগুলো তারা নষ্ট করতে চায় নি। যেগুলো রাখার যোগ্য নয়, সেগুলোকে তারা নষ্ট করে দিয়েছিল।
শমূয়েল শৌলকে তার পাপের কথা বলল
10 শমূয়েল প্রভুর কাছ থেকে একটি বার্তা পেল। 11 প্রভু বললেন, “শৌল আমাকে মানছে না। ওকে রাজা করেছিলাম বলে আমার অনুশোচনা হচ্ছে। সে আমার কথামত কাজ করছে না।” শমূয়েল একথা শুনে ক্রুদ্ধ হল। সারারাত ধরে কেঁদে কেঁদে সে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।
12 পরদিন খুব ভোরে শমূয়েল শৌলের সঙ্গে দেখা করতে গেল। কিন্তু লোকরা শমূয়েলকে বলল, “শৌল যিহূদার কর্মিল শহরে চলে গেছেন। সেখানে তিনি নিজের সম্মান বাড়াতে একটা পাথরের মূর্ত্তি তৈরী করেছেন। তিনি এখন নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সবশেষে তিনি গিল্গলে যাবেন।”
তাদের কথা শুনে শমূয়েল শৌল যেখানে ছিলেন সেখানে গেল। তখন শৌল সবে অমালেকীয়দের কাছ থেকে নেওয়া জিনিসগুলোর প্রথম অংশ প্রভুকে নিবেদন করেছিলেন। এগুলো সবই শৌল হোমবলি রূপে প্রভুকে উৎসর্গ করেছিলেন। 13 শমূয়েল শৌলের কাছে গেল। শৌল তাকে বললেন, “প্রভু তোমার মঙ্গল করুন। আমি প্রভুর নির্দেশ পালন করেছি।”
14 তখন শমূয়েল বলল, “তাহলে আমি কিসের শব্দ শুনলাম? আমি কেন মেষ আর গরুর ডাক শুনতে পেলাম?”
15 শৌল বললেন, “ওগুলো সৈন্যরা অমালেকীয়দের কাছ থেকে নিয়ে এসেছে। তারা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের কাছে হোমবলি হিসেবে উৎসর্গ করবার জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মেষ আর গবাদি পশু প্রদান করেছিল। কিন্তু বাকি সবকিছুই আমরা শেষ করে দিয়েছি।”
16 শমূয়েল বলল, “চুপ করো। গত রাত্রে প্রভু আমাকে যা বলেছিলেন শোনো।”
শৌল বললেন, “বেশ, বলো তিনি কি বলেছিলেন।”
17 শমূয়েল বলল, “অতীতে তুমি ভাবতে তুমি গুরুত্বহীন ছিলে। কিন্তু পরে তুমি হয়ে গেলে ইস্রায়েলের পরিবারগোষ্ঠীর নেতা। প্রভু ইস্রায়েলের রাজা হিসাবে তোমাকে মনোনীত করেছিলেন। 18 প্রভু তোমাকে একটা বিশেষ কাজে পাঠিয়েছিলেন। প্রভু বললেন, ‘যাও, সমস্ত অমালেকীয়দের হত্যা কর। কারণ তারা সবাই পাপী। সবাইকে শেষ করে দাও। তারা নিঃশেষে বিনষ্ট না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাও।’ 19 কিন্তু তুমি প্রভুর সে কথা শোন নি। কারণ তুমি জিনিসপত্র নিজের কাছে রেখে দিতে চেয়েছিলে, তাই প্রভুর কথা অনুযায়ী কাজ করো নি। তাঁর মতে যা খারাপ, সেই কাজ তুমি করেছ!”
20 শৌল বললেন, “কিন্তু আমি তো প্রভুর কথা পালন করেছি। তিনি আমায় যেখানে যেতে বলেছিলেন সেখানে গিয়েছিলাম। আমি অমালেকীয়দের সবাইকে হত্যা করেছি। কেবলমাত্র একজনকেই আমি এনে রেখেছি। তিনি হচ্ছেন তাদের রাজা, অগাগ। 21 আর সৈন্যরা নিয়েছে সেরা মেষ এবং গরু। তাদের বলি দিতে হবে গিল্গলে তোমার প্রভু ঈশ্বরের কাছে।”
22 শমূয়েল বলল, “কিন্তু প্রভু কিসে সবচেয়ে বেশী খুশী হন? হোমবলিতে না তাঁর আদেশ পালনে? বলির চেয়ে তাঁর আদেশ পালন করাই শ্রেয়। ভেড়ার চর্বি উৎসর্গ করার চেয়ে ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া অনেক ভালো। 23 ঈশ্বরের অবাধ্যতা করা মায়াবিদ্যার পাপের মতোই খারাপ। একগুঁয়েমি করা এবং তুমি যা চাও তা করা মূর্ত্তি পূজো করার পাপের মতোই ততটা খারাপ। প্রভুর আদেশ তুমি অমান্য করেছ। তাই তিনি তোমাকে রাজা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করছেন।”
24 এর উত্তরে শৌল শমূয়েলকে বললেন, “আমি পাপ করেছি। প্রভুর আদেশ আমি শুনি নি, আপনার কথাও আমি শুনি নি। লোকদের আমি ভয় পাই, তারা যা চায় আমি তাই করেছি। 25 আমার এই পাপের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমার সঙ্গে ফিরে চলুন, যেন আমি প্রভুকে উপাসনা করতে পারি।”
26 শমূয়েল বলল, “না তোমার সঙ্গে যাব না। তুমি প্রভুর আদেশ মানো নি। তাই প্রভুও ইস্রায়েলের রাজা হিসাবে তোমাকে অস্বীকার করেছেন।”
27 শমূয়েল যখন যাবার জন্য পা বাড়িয়েছে, এমন সময় শৌল তাঁর পোশাকটি খপ্ করে ধরে ফেললেন এবং সেটি ছিঁড়ে গেল। 28 শমূয়েল শৌলকে বলল, “তুমি যেভাবে আমার আলখাল্লা ছিঁড়ে নিয়েছ সেই ভাবেই প্রভু আজ ইস্রায়েল রাজ্য তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন। তিনি এই রাজ্য দিয়েছেন তোমারই বন্ধুদের মধ্যে একজনকে। সে তোমার চেয়ে ভাল লোক। 29 প্রভু হচ্ছেন ইস্রায়েলের ঈশ্বর। তিনি অমর। তিনি মিথ্যা বলেন না, মত বদলান না। তিনি মানুষের মতো নন। মানুষই ঘন ঘন মত বদলায়।”
30 শৌল বললেন, “স্বীকার করছি, আমি পাপ করেছি। কিন্তু দয়া করে আমার সঙ্গে ফিরে আসুন। প্রবীণদের এবং ইস্রায়েলের লোকদের সামনে আমার সম্মান রাখুন যেন আমি আপনার প্রভু ও ঈশ্বরকে প্রণাম করতে পারি।” 31 শমূয়েল শৌলের সঙ্গে ফিরে এলে শৌল প্রভুকে উপাসনা করলেন।
32 শমূয়েল বলল, “অমালেকীয়দের রাজা অগাগকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
অগাগ শমূয়েলের কাছে এল। তাকে শিকল দিয়ে বাঁধা হয়েছিল। অগাগ মনে করল, “সে নিশ্চয়ই আমাকে মেরে ফেলবে না।”
33 কিন্তু শমূয়েল অগাগকে বলল, “তোমার তরবারি কত মায়ের কোল খালি করেছে। এবার তোমার মায়েরও সেই দশা হবে।” এই বলে শমূয়েল গিল্গলে প্রভুর সামনে অগাগকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলল।
34 তারপর শমূয়েল রামাতে চলে গেল। শৌল গিবিয়ায় তাঁর বাড়িতে চলে গেলেন। 35 এরপর শমূয়েল তার জীবনে আর কখনও শৌলকে দেখতে পায় নি। সে শৌলের জন্যে খুব দুঃখ বোধ করল। এমনকি প্রভুও শৌলকে ইস্রায়েলের রাজা করেছিলেন বলে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন।
13 প্রত্যেক মানুষের উচিত দেশের শাসকদের অনুগত থাকা, কারণ দেশ শাসনের জন্য ঈশ্বরই তাদের ক্ষমতা দিয়েছেন। যারা এমন শাসন কার্য্যে নিযুক্ত, ঈশ্বরই তাদের সেই কাজের ক্ষমতা দিয়েছেন। 2 তাই তো কর্ত্তৃপক্ষের বিরোধিতা যে করে, সে ঈশ্বর যা স্থির করেছেন তারই বিরোধিতা করে। তেমন বিরোধিতা যারা করে তারা নিজেরাই নিজেদের শাস্তি ডেকে আনবে। 3 তোমরা ভাল কাজ করো, শাসকবৃন্দ তোমাদের প্রশংসা করবে। ভয় পাবার কারণ থাকে তাদেরই যারা মন্দ কাজ করে। যদি তোমরা কর্ত্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভয় পেতে না চাও, তবে যা ভাল তাই কর।
4 শাসনকর্তারা আসলে তোমাদের ভালোর জন্য ঈশ্বর নিয়োজিত দাস; কিন্তু তোমরা যদি অন্যায় কর তাহলে ভীত হবার কারণ নিশ্চয় থাকে। শাস্তি দেবার মতো ক্ষমতা শাসকের ওপর ন্যস্ত আছে, তিনি তো ঈশ্বরের দাস; তাই যারা অন্যায় করে, তাদের তিনি ঈশ্বরের হয়ে শাস্তি দেন। 5 তাই তোমরা শাসনকর্তাদের অনুগত থেকো। ঈশ্বরের ক্রোধের ভয়েই যে কেবল তাদের অধীনতা স্বীকার করবে তা নয়, কিন্তু তোমাদের বিবেক পরিষ্কার রাখার জন্যও করবে।
6 এই জন্য পরস্পরকে তোমরা প্রাপ্য কর দাও, কারণ শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্যই তারা ঈশ্বর দ্বারা নিযুক্ত আছেন, আর সেই কার্য্যে তাঁরা ব্যস্তভাবে সময় ব্যয় করেন। 7 তোমাদের কাছে যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিয়ে দাও। যে কর আদায় করে তাকে কর দাও; যাদের শ্রদ্ধা করা উচিত তাদের শ্রদ্ধা কর; যাদের সম্মান পাওয়া উচিত তাদের সম্মান কর।
অপরকে ভালবাসাই একমাত্র বিধি-ব্যবস্থা
8 শুধু পরস্পরের প্রতি ভালবাসার ঋণ ছাড়া কারো কাছে ঋণী থেকো না, কারণ যারা প্রতিবেশীকে ভালবাসে, তারাই ঠিকভাবে বিধি-ব্যবস্থা মেনে চলছে। 9 আমি একথা বলছি কারণ ঈশ্বরের এই আজ্ঞাগুলি অর্থাৎ, “ব্যভিচার করবে না, নরহত্যা করবে না, চুরি করবে না, অপরের জিনিস আত্মসাৎ করবে না”(A) আর অন্য যা কিছু আদেশ তিনি দিয়েছেন সে সবগুলি সংক্ষেপে এই একটি আদেশের মধ্যেই চলে আসে, “নিজের মতো তোমার প্রতিবেশীকে ভালবাসো।”(B) 10 ভালবাসা কখনও কারোর ক্ষতি করে না, তাই দেখা যাচ্ছে ভালবাসাতেই বিধি-ব্যবস্থা পালন করা হয়।
11 এখন কোন্ সময় তা তো তোমাদের জানাই আছে। হ্যাঁ, এখন তো ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়, কারণ যখন আমরা খ্রীষ্টে প্রথম বিশ্বাস করেছিলাম তখন অপেক্ষা এখন পরিত্রাণ আমাদের আরো সন্নিকট। 12 “দিন” শুরু হতে আর দেরী নেই। “রাত” প্রায় শেষ হল তাই জীবন থেকে অন্ধকারের ক্রিয়াসকল পরিত্যাগ করে এস এখন পরিধান করি আলোকের রণসজ্জা। 13 লোকরা দিনের আলোয় যেমন চলে আসে আমরাও তাদের মত সৎ পথে চলি। আমরা যেন হৈ-হল্লা পূর্ণ ভোজে যোগ না দিই, মাতলামি না করি, যৌন দুরাচার, উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে দূরে থাকি; বিবাদ, ঈর্ষা ও তর্কের মধ্যে না যাই। 14 কিন্তু যেন নব বেশে প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে পরিধান করি ও দৈহিক কামনা বাসনা চরিতার্থ করার চিন্তায় আর মন না দিই।
জেরুশালেমের পতন
52 সিদিকিয় 21 বছর বয়সে যিহূদার রাজা হন। তিনি 11 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেন। সিদিকিয়ের মা হলেন হমুটল। তিনি ছিলেন যিরমিয়ের কন্যা। লিব্না নামক শহরে হমুটল থাকতেন। 2 সিদিকিয় পাপ কাজ করে বেড়াতেন। অনেকটা রাজা যিহোয়াকীমের মতো। সিদিকিয়ের এইসব অসৎ কর্মসমূহ প্রভু পছন্দ করেন নি। 3 প্রভু জেরুশালেম ও যিহূদার প্রতি এত রেগে গেলেন যে অবশেষে তিনি তাদের তাঁর সামনে থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
সিদিকিয় বাবিলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। 4 সুতরাং সিদিকিয়ের শাসনের নবমতম বছরের দশম মাসের দশম দিনে বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসর জেরুশালেম আক্রমণ করেন। বাবিলের রাজার সঙ্গে তাঁর সমস্ত সেনাবাহিনী ছিল। তারা জেরুশালেমের বাইরে অস্থায়ী শিবির গড়ে। তারপর তারা উঁচু প্রাচীরের মত বাঁধ তৈরী করল যাতে এই প্রাচীরগুলির ওপর উঠে অনায়াসে জেরুশালেমে প্রবেশ করা যায়। 5 জেরুশালেম শহর বাবিলের সেনাদের দ্বারা সিদিকিয়ের রাজত্ব কালের প্রায় একাদশ বছর পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিল। 6 ঐ বছরের চতুর্থ মাসের নবম দিনে শহরের সমস্ত খাদ্য নিঃশেষিত হয়ে গেল। লোকদের জন্য আর কোন খাদ্যই রইল না। 7 ক্ষুধায় পাগল প্রায় অবরুদ্ধ শহরবাসীদের ঠিক ঐ সময়ই বাবিলের সৈন্যরা আক্রমণ করল। যিরমিয়র সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে দুই প্রাচীরের মধ্যবর্তী প্রবেশদ্বার দিয়ে পালাতে লাগল। বাবিলের সেনারা চারিদিক ঘিরে থাকলেও রাজার বাগানের কাছের গেট দিয়ে জেরুশালেমের সেনারা শহর ছাড়তে থাকে। এই পলায়নরত সেনাদের গন্তব্যস্থল ছিল দূরবর্তী মরুভূমি।
8 বাবিলের সৈন্যদল সিদিকিয়কে তাড়া করল। অবশেষে যিরীহোর সমতলভূমিতে তারা তাকে ধরতে সফল হয়। সিদিকিয়ের সব সৈন্যরা পালিয়ে যায়। 9 বন্দী সিদিকিয়কে রিব্লা শহরে বাবিলের রাজার কাছে হাজির করানো হয়। হমাৎ দেশেই রিব্লা শহর। এখানে বাবিলের রাজা সিদিকিয়ের শাস্তি নির্ধারণ করে। 10 বাবিলের রাজা প্রথমে সিদিকিয়ের পুত্রকে হত্যা করে। নিজ সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে সিদিকিয়কে। বাবিলের রাজা সিদিকিয়কে তাঁর পুত্রদের হত্যা সাক্ষী হতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি যিহূদার রাজকর্মচারীদেরও রিব্লাতে হত্যা করেছিলেন। 11 এর পর বাবিলের রাজার নির্দেশে সিদিকিয়ের দুই চোখ উপড়ে নেওয়া হয়। পিতলের চেনে বেঁধে সিদিকিয়কে বাবিলে এনে কারারুদ্ধ করা হয়। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সিদিকিয় এই কারাগারেই ছিলেন।
12 বাবিলের রাজার বিশেষ রক্ষী ছিল নবূষরদন। রাজা নবূখদ্রিৎসরের শাসনের উনবিংশতি বছরের[a] পঞ্চম মাসের দশম দিনে নবূষরদন জেরুশালেমে আসেন। 13 প্রভুর উপাসনালয় সে পুড়িয়ে দেয়। জেরুশালেমে সমস্ত বাড়িসমূহ এবং রাজপ্রাসাদ নবূষরদনের নির্দেশে পুড়িয়ে ফেলা হয়। 14 বাবিলীয় সৈন্যদল জেরুশালেমের চারিদিকের প্রাচীরগুলো ভেঙে দিয়েছিল। এই সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন নবূষরদন। 15 সমস্ত লোকরা যারা জেরুশালেম শহরে বন্দী হয়েছিল, তাদের বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাছাড়া আগেই যারা আত্মসমর্পণ করেছিল তাদেরও বন্দী করে বাবিলে নিয়ে আসে নবূষরদন। দক্ষ কারিগরদেরও সে বাবিলে আনে। 16 কিন্তু নবূষরদন কিছু খুব গরীব লোকেদের ফেলে রেখে যায়। সে তাদের ক্ষেতগুলিতে এবং দ্রাক্ষা ক্ষেগুলিতে কাজ করবার জন্য রেখে যায়।
17 বাবিলের সেনারা উপাসনালয়ের পিতলের থাম ভেঙে দেয়। তারা প্রভুর উপাসনাগৃহে খুঁটিগুলি ও পিতলের ট্যাঙ্কও ভেঙে দেয়। সমস্ত পিতলই তারা বাবিলে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল। 18 বাবিলের সেনারা উপাসনালয়ের ব্যবহৃত পিতলের সমস্ত মূল্যবান সামগ্রী লুঠ করে নেয়। ধাতুর তৈরি ছোট বড় মাপের পাত্র, বেলচা, মোমবাতিদান তারা নিয়ে যায়। 19 রাজার বিশেষ রক্ষীদের নেতা এইসব জিনিসগুলি লুট করে নিয়ে গিয়েছিল: লুণ্ঠিত সামগ্রীর মধ্যে বেসিন, বাতিদান, আগুনের পাত্র, বড় আকারের পাত্র, পেয় নৈবেদ্যর সাজ সরঞ্জাম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সে সোনা ও রূপোর তৈরী সমস্ত জিনিসপত্র লুঠ করেছিল। 20 সে আরো নিয়েছিল: স্তম্ভ দুটি, নীচে 12টি ষাঁড়সহ সমুদ্রটি এবং অস্থাবর খুঁটিগুলি। এগুলো সব রাজা শলোমন তৈরী করেছিলেন। এটাও সে লুঠ করে। পিতলের তৈরী এইসব জিনিসগুলি এত ভারী ছিল যে তা ওজন করা যেত না।
21 স্তম্ভগুলির উচ্চতা ছিল 27 ফুট। প্রতিটি স্তম্ভ ছিল 18 ফুট চওড়া ও ফাঁপা। প্রতিটি স্তম্ভের দেওয়াল 4 ইঞ্চি পুরু ছিল। 22 স্তম্ভের ওপরের পিতলের চূড়া ছিল 7 1/2 ফুট উঁচু। ওটা একটি জালের মত নকশা ও পিতলের তৈরী বেদানা দিয়ে সাজানো ছিল। 23 স্তম্ভের দেওয়ালে 96 টি এবং সব মিলিয়ে মোট 100 টি খোদাই করা বেদানা দেখা যেত।
24 নবূষরদন ও তারা বিশেষ রক্ষী বাহিনী সরায় এবং সফনিয়কে বন্দী করে। সরায় ছিলেন প্রধান যাজক। সফনিয়র পদ ছিল পরবর্তী উচ্চতম যাজক। উপাসনালয়ের তিন দ্বাররক্ষীও বন্দী হয়। 25 বিশেষ রক্ষী বাহিনীর প্রধান যুদ্ধরত লোকদের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে বন্দী করল। রাজার সাত উপদেষ্টা বন্দী হয়। 60 জন সাধারণ লোকসহ একজন লেখক যিনি লোকদের সেনাবিভাগে দেবার ভারপ্রাপ্ত ছিলেন, সবাই বন্দী হয়েছিল। সমস্ত বন্দীদের জেরুশালেম থেকে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 26 নবূষরদন, সৈন্যাধক্ষ ঐ সমস্ত লোকেদের রিব্লা, যেখানে বাবিলের রাজা ছিলেন সেখানে নিয়ে গেল। 27 বন্দীদের নিয়ে নবূষরদন রিব্লা শহরে আসে। রিব্লা হমাৎ দেশে অবস্থিত। এই শহরেই বাবিলের রাজা অবস্থান করছিলেন। রাজার নির্দেশে সমস্ত বন্দীদের হত্যা করা হয়। একইভাবে যিহূদা থেকে লোকেদের বন্দী করে এনে হত্যা করা হল।
তাই, যিহূদার লোকদের তাদের দেশ থেকে নির্বাসন দেওয়া হল। 28 এইভাবে নবূখদ্রিৎসর অনেক লোককে বন্দী করেন:
নবূখদ্রিৎসরের রাজত্ব কালের সপ্তম বছরে যিহূদা থেকে 3023 জনকে বন্দী করে আনা হয়েছিল।
29 তাঁর রাজত্ব কালের অষ্টাদশ বছরে জেরুশালেম থেকে নেওয়া বন্দীদের সংখ্যা ছিল 832 জন।
30 রাজা নবূখদ্রিৎসরের ত্রয়োবিংশতিতম বছরের রাজত্বের সময় নবূষরদন যিহূদা থেকে 745 জনকে বন্দী করে আনেন।
মোট 4600 মানুষ বন্দী হয়েছিল রাজার এই নির্দেশে। এদের বন্দী করেছিল বিশেষ রক্ষীবাহিনীর নেতা নবূষরদন।
যিহোয়াখীন মুক্ত হল
31 যিহূদার রাজা যিহোয়াখীন 37 বছর বাবিলের কারাগারে বন্দী ছিল। যিহোয়াখীনের কারাবাসের সাঁইত্রিশতম বর্ষে বাবিলের রাজা ইবিল মরোদক করুণা করে তাকে মুক্তি দেন। তিনি দ্বাদশ মাসের 25তম দিনে যিহোয়াখীনকে মুক্তি দেন। ইবিল ঐ বছরেই বাবিলের রাজা হয়েছিল। 32 রাজা ইবিল-মরোদক যিহূদার রাজা যিহোয়াখীনের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ভাল ব্যবহার করেন। অন্য রাজারা যারা তাঁর সঙ্গে বাবিলে ছিল, তাদের তুলনায় যিহোয়াখীনকে উচ্চতর পদে সম্মানিত করেছিলেন। 33 যিহোয়াখীন তার কারা-বস্ত্র খুলে ফেলেছিল এবং তাকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয় সে জীবনের বাকী সময় রাজার টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছিল। 34 বাবিলের রাজা প্রতিদিন যিহোয়াখীনকে অনুদান দিত। এই অনুদান যিহোয়াখীনের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চালু ছিল।
পরিচালকের প্রতি: দায়ূদের একটি গীত।
31 প্রভু, আমি আপনার ওপর নির্ভর করি।
আমাকে হতাশ করবেন না।
আমার প্রতি সদয় হোন এবং আমায় রক্ষা করুন।
2 হে ঈশ্বর, আমার কথা শুনুন।
শীঘ্রই আপনি এসে আমায় রক্ষা করুন।
আপনি আমার নিরাপদ আশ্রয় হোন।
আপনি আমার নিরাপদ দুর্গ হোন এবং আমায় সুরক্ষিত করুন!
3 ঈশ্বর, আপনিই আমার শিলা;
তাই, আপনার নামের স্বার্থে আমায় পরিচালিত করুন।
4 আমার শত্রুরা আমার সামনে এক ফাঁদ পেতে রেখেছে।
ওদের ফাঁদ থেকে আমায় উদ্ধার করুন।
আপনিই আমার নিরাপদ আশ্রয়।
5 প্রভু, আপনিই সেই ঈশ্বর যাকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি।
আমার জীবন আমি আপনার হাতে সমর্পণ করলাম।
আমায় উদ্ধার করুন!
6 যারা মূর্ত্তিসমূহের পূজা করে, তাদের আমি ঘৃণা করি।
আমি একমাত্র প্রভুকেই বিশ্বাস করি।
7 হে ঈশ্বর, আপনার করুণায় আমি খুব খুশী।
আপনি আমার দুর্ভোগ দেখেছেন।
আমার যে সব সমস্যা ছিল তাও আপনি জানেন।
8 আপনি আমাকে আমার শত্রুদের হস্তগত করবেন না।
ওদের ফাঁদ থেকে আপনি আমায় মুক্ত করবেন।
9 প্রভু, আমার অসংখ্য সমস্যা আছে।
তাই আমার প্রতি সদয় হন।
আমি মানসিকভাবে এমন বিপর্যস্ত যে কেঁদে কেঁদে আমার চোখ ব্যথা করছে।
আমার গলা ও পেট জ্বালা করছে।
10 আমার জীবন দুঃখে শেষ হতে চলেছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে আমার বছরগুলি কাটছে।
আমার সংকটগুলি আমার সব শক্তিকে কেড়ে নিচ্ছে।
আমার সব শক্তি, আমায় ত্যাগ করছে।[a]
11 শত্রুরা আমায় ঘৃণা করছে।
আমার প্রতিবেশীরাও আমায় ঘৃণা করছে।
সমস্ত আত্মীয়রা আমার সঙ্গে রাস্তায় দেখা করে।
তারা আমাকে ভয় পায় এবং এড়িয়ে চলে।
12 হারিয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতির মত
লোকরা আমাকে ভুলে গেছে।
13 লোকরা আমার সম্পর্কে যে সব ভয়ঙ্কর কথা বলে, তা আমি শুনি।
ঐসব লোক আমার বিরুদ্ধে গেছে।
ওরা আমায় মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছে।
14 হে প্রভু, আমি আপনাতে আস্থা রাখি।
আপনিই আমার ঈশ্বর।
15 আমার জীবন আপনার হাতে রয়েছে।
আমার শত্রুদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করুন।
কিছু লোক আমায় তাড়া করছে।
ওদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করুন।
16 দয়া করে আপনার দাসকে অভ্যর্থনা করুন এবং গ্রহণ করুন।
আমার প্রতি সদয় হোন এবং আমাকে রক্ষা করুন!
17 প্রভু, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করেছি,
তাই আমি হতাশ হবো না,
মন্দ লোকেরা হতাশ হবে।
ওরা নীরবে কবরে যাবে।
18 ঐসব মন্দ লোক নিজেদের সম্পর্কে বড়াই করে
এবং সৎ লোকেদের সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে।
ঐসব মন্দ লোকেরা প্রচণ্ড উদ্ধত।
কিন্তু যে মুখ দিয়ে ওরা মিথ্যা কথা বলে তা নীরব হয়ে যাবে।
19 হে ঈশ্বর, আপনার অনুগামীদের জন্য আপনি অনেক ভালো জিনিষ বাঁচিয়ে রেখেছেন।
যারা আপনাকে বিশ্বাস করে তাদের জন্য সকলের সামনেই আপনি ভাল কাজ করেন।
20 সৎ লোকদের আঘাত করার জন্য মন্দ লোকরা একসঙ্গে জড় হয়।
ঐসব মন্দ লোক লড়াই শুরু করতে চায়।
কিন্তু আপনি সেই সব সৎ লোকদের লুকিয়ে রাখেন এবং তাদের রক্ষা করেন।
আপনার নিজের আশ্রয়ে আপনি তাদের রক্ষা করেন।
21 প্রভু ধন্য! সারা শহর যখন শত্রুদের দ্বারা বেষ্টিত,
তখন তিনি আমার প্রতি, তাঁর আশ্চর্য করুণা দেখিয়েছেন।
22 আমি ভীত হয়ে বলেছিলাম, “আমি এমন এক জায়গায় রয়েছি সেখানে ঈশ্বরও আমাকে দেখতে পাবেন না।”
কিন্তু হে ঈশ্বর, আপনার সাহায্য চেয়ে আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম এবং আপনি আমার উচ্চস্বরের প্রার্থনা শুনেছিলেন।
23 হে ঈশ্বরের অনুগামীরা, তোমরা অবশ্যই প্রভুকে ভালোবেসো!
যারা প্রভুর প্রতি নিষ্ঠাবান, প্রভু তাদের রক্ষা করেন।
কিন্তু যারা নিজের ক্ষমতা নিয়ে দম্ভ করে প্রভু তাদের শাস্তি দেন।
তারা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পায়।
24 তোমরা যারা প্রভুর সাহায্যের জন্য প্রতীক্ষা করছো, তারা সাহসী হও, শক্তিশালী হও!
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International