M’Cheyne Bible Reading Plan
ইল্কানা পরিবারের শীলোতে উপাসনা
1 পাহাড়ী দেশ ইফ্রয়িমের রামা অঞ্চলে ইল্কানা নামে একজন লোক ছিল। ইল্কানা সূফ পরিবার থেকে এসেছিল; তার পিতার নাম ছিল যিরোহম, যিরোহমের পিতা হচ্ছে ইলীহূ, ইলীহূর পিতা তোহূ, তোহূর পিতা সূফ। সে ইফ্রয়িমের পরিবারগোষ্ঠী থেকে এসেছিল।
2 ইল্কানার দুই স্ত্রী ছিল। একজনের নাম হান্না, অন্য জনের নাম পনিন্না। পনিন্নার সন্তানাদি ছিল, কিন্তু হান্না ছিল নিঃসন্তান।
3 প্রতি বছরই ইল্কানা রামা শহর থেকে শীলোতে চলে যেত। শীলোয় গিয়ে সে সর্বশক্তিমান প্রভুর উপাসনা করত ও তাঁকে বলি নিবেদন করত। সেখানে হফ্নি এবং পীনহস যাজক হিসেবে প্রভুর সেবা করত। এরা দুই জন ছিল এলির পুত্র। 4 প্রত্যেকবার ইল্কানা বলি দিয়ে এসে তার একটা ভাগ তার স্ত্রী পনিন্নাকে দিত এবং সে পনিন্নার সন্তানদেরও কিছুটা ভাগ দিত। 5 ইল্কানা আর একটা সমান অংশ হান্নাকেও দিত। প্রভু হান্নার কোলে সন্তান না দিলেও ইল্কানা তাকে বলির ভাগ দিত, কারণ সে হান্নাকে সত্যিই ভালবাসত।
পনিন্না হান্নাকে বিরক্ত করল
6 পনিন্না সব সময় হান্নাকে বিরক্ত করত। এতে হান্নার খুব মন খারাপ হত। হান্নার সন্তান হয়নি বলে পনিন্না তাকে এই রকম করত। 7 বছরের পর বছর এই ঘটনা ঘটত। যখনই ইল্কানা তার পরিবারের সঙ্গে শীলোয় প্রভুর গৃহে উপাসনা করতে যেত, পনিন্না হান্নাকে বিরক্ত করত। একদিন ইল্কানা সবাইকে যখন বলির ভাগ দিচ্ছিল, হান্না মনের দুঃখে কেঁদে ফেলল। সে কিছুই খেল না। 8 ইল্কানা তাকে বলল, “হান্না, তুমি কাঁদছ কেন? কেন তুমি কিছু খাচ্ছ না? কিসের জন্য তোমায় এমন শুকনো দেখাচ্ছে? তোমার জন্য তো আমি আছি। আমি তোমার স্বামী। দশটি পুত্রের চেয়ে আমাকে তোমার বেশী ভাল বলে বিবেচনা করা উচিৎ।”
হান্নার প্রার্থনা
9 খাওয়া দাওয়া এবং পান সেরে হান্না চুপচাপ উঠে পড়ল। সে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে গেল। প্রভুর পবিত্র মন্দিরের দরজার পাশে একটা চেয়ারে যাজক এলি বসেছিল। 10 দুঃখিনী হান্না প্রভুর কাছে প্রার্থনার সময় খুবই কাঁদল। 11 ঈশ্বরের কাছে সে এক বিশেষ ধরণের মানত করল। সে বলল, “হে সর্বশক্তিমান প্রভু, দেখো আমি বড় দুঃখী। আমাকে ভুলে যেও না। আমাকে মনে রেখ। তুমি যদি আমাকে একটি পুত্র দাও, আমি সেই পুত্রকে তোমাকেই উৎসর্গ করব। সে হবে নাসরতীয়। সে দ্রাক্ষারস বা কোন রকম কড়া পানীয় পান করবে না। কেউ কখনও তার চুল কাটবে না।”[a]
12 অনেকক্ষণ ধরে হান্না প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। হান্না যখন প্রার্থনা করছিল তখন এলি তার মুখগহ্বরের দিকে দেখছিল। 13 হান্না মনে মনে প্রার্থনা করছিল। সে শব্দ করে কিছু বলছিল না, শুধু তার ঠোঁট দুটো নড়ছিল। এলি মনে করল যে হান্না মাতাল হয়ে গেছে। 14 তাই এলি হান্নাকে বলল, “তুমি খুব বেশী পান করেছ! এখন দ্রাক্ষারস সরিয়ে রাখার সময় হয়েছে।”
15 হান্না বলল, “না মহাশয়, আমি দ্রাক্ষারস বা সুরা কিছুই পান করি নি। আমার হৃদয় তীব্র বেদনায় কাতর। আমি প্রভুর কাছে আমার সব কষ্টের কথা জানাচ্ছিলাম। 16 ভাববেন না যে আমি খারাপ মেয়ে। আমি সারাক্ষণ শুধু প্রার্থনাই করছিলাম। কারণ আমার অনেক দুঃখ এবং আমি খুবই বিচলিত।”
17 এলি বলল, “নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও। ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমার মনোবাঞ্ছা পূরণ করুন।”
18 হান্না বলল, “আশা করি আমার ওপর আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।” এই বলে হান্না চলে গেল এবং পরে কিছু মুখে দিল। তারপর থেকে সে আর দুঃখী ছিল না।
19 পরদিন খুব সকালে ইল্কানার বাড়ির সকলে ঘুম থেকে উঠল। তারা সকলে প্রভুর উপাসনা করল। তারপর তারা রামায় ফিরে গেল।
শমূয়েলের জন্ম
ইল্কানা হান্নার সঙ্গে মিলিত হল। প্রভু হান্নাকে মনে রেখেছিলেন। 20 পরের বছর হান্না একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। হান্না পুত্রের নাম রাখল, শমূয়েল। সে বলল, “আমি প্রভুর কাছে এর জন্যে প্রার্থনা করেছিলাম, তাই এর নাম দিয়েছি শমূয়েল।”
21 সেই বছর ইল্কানা শীলোতে গেল। ঈশ্বরের কাছে প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য এবং বলি দিতেই সে সেখানে সপরিবারে গিয়েছিল। 22 কিন্তু হান্না যেতে চাইল না। সে ইল্কানাকে বলল, “যখন পুত্র বড় হবে, শক্ত খাবার-দাবার খেতে শিখবে তখন আমি শীলোতে যাব। শীলোয় গিয়ে প্রভুর কাছে পুত্রকে দান করব। পুত্র হবে নাসরতীয়। সে শীলোতেই থাকবে।”
23 ইল্কানা তার স্ত্রী হান্নাকে বলল, “যা ভাল বোঝ তাই কর। পুত্র বড় না হওয়া পর্যন্ত, তার শক্ত খাবার খাওয়ার শক্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতেই থাকতে পারে। প্রভু তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করুন।”[b]
সুতরাং পুত্র শক্ত খাবার খাওয়ার উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হান্না পুত্রের সেবা শুশ্রূষার জন্য বাড়িতে থেকে গেল।
শমূয়েলকে নিয়ে হান্না শীলোয় এলির কাছে গেল
24 বালকটি যখন বেশ বড়সড় হল, খাবার চিবোতে শিখল, তখন হান্না তাকে নিয়ে শীলোয় প্রভুর গৃহে গেল। সে তিন বছরের একটা ষাঁড়ও সঙ্গে নিল। এ ছাড়াও সে নিল 20 পাউণ্ড ছাঁকা ময়দা এবং এক বোতল দ্রাক্ষারস।
25 তারা প্রভুর সামনে গেল। ইল্কানা ষাঁড়টিকে বলি দিল যেমন সে সাধারণতঃ করত। তারপর হান্না এলিকে তার পুত্র দিল। 26 হান্না এলিকে বলল, “মার্জনা করবেন মহাশয়। আমিই সেই মহিলা যে একদিন আপনার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি কথাই বলছি। 27 আমি এই ছেলের জন্যেই প্রার্থনা করেছিলাম এবং প্রভু আমার সেই প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। প্রভু এই ছেলেকে আমায় দিয়েছেন। 28 আমি এখন সেই ছেলেকে প্রভুর কাছে উৎসর্গ করছি। সে সারা জীবন তাঁর সেবা করবে।”
এই কথা বলে, হান্না ছেলেটিকে সেখানে রাখল এবং প্রভুর উপাসনা করল।
1 যীশু খ্রীষ্টের দাস পৌলের কাছ থেকে ঈশ্বর আমাকে প্রেরিত হবার জন্য আহ্বান করেছেন।
সমস্ত মানুষের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচারের জন্য আমাকে মনোনীত করা হয়েছিল। 2 ঈশ্বর বহুপূর্বেই মানুষের কাছে এই সুসমাচার পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই প্রতিশ্রুতি দিতে ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীদের ব্যবহার করেছিলেন। পবিত্র শাস্ত্রে এই প্রতিশ্রুতির কথা লেখা ছিল। 3-4 ঈশ্বরের পুত্র আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ই হল এই সুসমাচার। মানবরূপে তিনি দায়ূদের বংশে জন্মেছিলেন; কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট যে ঈশ্বরের পুত্র তা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে দেখানো হল। মৃতদের মধ্য হতে মহাপরাক্রমে তাঁর পুনরুত্থানও প্রমাণ করে যে তিনি ঈশ্বরের পুত্র।
5 খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর আমাকে প্রেরিতের এই বিশেষ কাজ দিয়েছেন, যেন সর্বজাতির লোকদের আমি বিশ্বাস ও বাধ্যতার পথে নিয়ে যাই। একাজ আমি খ্রীষ্টের জন্যই করেছি। 6 রোমানবাসীরা, তোমরাও তাদের মধ্যে যীশু খ্রীষ্টের আহুত লোক হিসাবে আছ।
7 হে রোমনিবাসীগণ, তোমরা যারা ঈশ্বরের পবিত্র লোক হবার জন্য আহুত তাদের সকলকে এই চিঠি লিখছি। তোমরা তাঁর ভালবাসার পাত্র।
আমাদের ঈশ্বর পিতা ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ ও শান্তি নেমে আসুক।
ধন্যবাদের প্রার্থনা
8 প্রথমেই আমি তোমাদের সকলের জন্য যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তাঁর প্রতি তোমাদের এই মহাবিশ্বাসের কথা জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। 9-10 আমার প্রার্থনার সময় প্রতিবারই আমি তোমাদের মনে করি। ঈশ্বর জানেন যে একথা সত্য। আমি তাঁর পুত্র বিষয়ক সুসমাচার লোকদের কাছে প্রচার দ্বারা আত্মাতে ঈশ্বরের উপাসনা করি। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যেন তোমাদের সবার কাছে যাবার অনুমতি পাই; আর ঈশ্বর যদি ইচ্ছা করেন তবেই তা সম্ভব হবে। 11 আমি তোমাদের দেখার জন্য বড়ই উৎসুক। তোমাদের শক্তিশালী করে তোলার জন্য আমি সকলকে কিছু আত্মিক বর দিতে চাই। 12 আমি বলতে চাই আমাদের যে বিশ্বাস রয়েছে, তার দ্বারা যেন পরস্পর উদ্ধুদ্ধ হই।
13 ভাই ও বোনরা, আমি চাই যে তোমরা জান যে আমি বহুবার তোমাদের কাছে যেতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাধা পেয়েছি। আমি তোমাদের কাছে যেতে চেয়েছি যাতে তোমাদের আত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করতে পারি। অন্যান্য অইহুদী লোকদের আমি যেমন সাহায্য করেছি, তেমনি আমি তোমাদেরও সাহায্য করতে চাই।
14 আমার উচিত সকলের সেবা করা, তা সে গ্রীক হোক্ বা না হোক্, বিজ্ঞ বা মূর্খ হোক্। 15 এই কারণেই রোমে তোমাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করবার জন্য আমি এত আগ্রহী।
16 সুসমাচারের জন্য আমি গর্ববোধ করি। সুসমাচারই হল সেই শক্তি, যে শক্তির দ্বারা ঈশ্বর তাঁর বিশ্বাসীদের উদ্ধার করেন; প্রথমে ইহুদীদের পরে অইহুদীদের। 17 ঈশ্বর কি করে মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন, তা এই সুসমাচারের মধ্য দিয়েই দেখানো হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস দ্বারাই মানুষ ঈশ্বরের সামনে নির্দোষ বলে গন্য হয়। শাস্ত্র যেমন বলে, “বিশ্বাসের দ্বারা যে ব্যক্তি ঈশ্বরের সামনে ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়েছে সে অনন্ত জীবনের অধিকারী হবে।”[a]
সকলেই অন্যায় করেছে
18 মানুষ নিজের অধর্ম দিয়ে ঈশ্বরের সত্যকে চেপে রাখে, তাই মানুষের কৃত সকল মন্দ এবং অন্যান্য কাজের জন্য স্বর্গ থেকে মানুষের উপর ঈশ্বরের ক্রোধ প্রকাশ পায়। ঈশ্বর সম্পর্কে যা জানা যেতে পারে তা পরিষ্কারভাবে তারা জেনেছে। 19 তাছাড়া মানুষের পক্ষে ঈশ্বরকে যতখানি জানা সম্ভব, তা তো তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।
20 ঈশ্বর সম্পর্কে এমন এমন বিষয় আছে যা মানুষ চোখে দেখতে পায় না, যেমন তাঁর অনন্ত পরাক্রম ও সেই সমস্ত বিষয়, যার কারণে তিনি ঈশ্বর। জগৎ সৃষ্টির শুরু থেকে ঈশ্বরের নানা কাজে সে সব প্রকাশিত হয়েছে। ঈশ্বরের সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে ঐসব পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে। তাই মানুষ যে মন্দ কাজ করছে তার জন্য উত্তর দেবার পথ তার নেই।
21 লোকরা ঈশ্বরকে জানত, কিন্তু তারা ঈশ্বরের গৌরব গান করেনি এবং তাঁকে ধন্যবাদও দেয় নি। লোকদের চিন্তাধারা অসার হয়ে গেছে এবং তাদের নির্বোধ মন অন্ধকারে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। 22 তারা নিজেদের বিজ্ঞ বলে পরিচয় দিলেও তারা মূর্খ। 23 তারা চিরজীবি ঈশ্বরের গৌরব করার পরিবর্তে, নশ্বর মানুষ, পাখি, চতুষ্পদের ও সরীসৃপের মূর্ত্তিগুলির উপাসনা করে সেই গৌরব তাদের দিয়েছে।
24 তারা ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে ঈশ্বর তাদের খুশি মতো পাপের পথে চলতে দিলেন এবং তাদের অন্তরের কামনা বাসনা অনুসারে মন্দ কাজ করতে ছেড়ে দিলেন। ফলে তারা তাদের দেহকে পরস্পরের সঙ্গে অসঙ্গত সংসর্গে ব্যবহার করে যৌনপাপে পূর্ণ হয়েছে। 25 ঈশ্বরের সত্যকে ফেলে তারা মিথ্যা গ্রহণ করেছে; আর সৃষ্টিকর্তাকে ছেড়ে দিয়ে তারা তাঁর সৃষ্ট বস্তুকে উপাসনা করেছে। চিরকাল ঈশ্বরের প্রশংসা করা উচিত। আমেন।
26 লোকরা ঐসব মন্দ কাজে লিপ্ত ছিল বলে ঈশ্বর তাদের ছেড়ে দিলেন ও তাদের লজ্জাজনক অভিলাষের পথে চলতে দিলেন। নারীরা পুরুষের সঙ্গে স্বাভাবিক সংসর্গ ত্যাগ করে নিজেদের মধ্যে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয়েছে। 27 ঠিক একইভাবে পুরুষরাও স্ত্রীদের সঙ্গে স্বাভাবিক সংসর্গ ছেড়ে দিয়ে অপর পুরুষের জন্য লালায়িত হয়ে লজ্জাকর কাজ করেছে; আর এই পাপ কাজের শাস্তি তারা তাদের শরীরেই পেয়েছে।
28 তারা ঈশ্বরের সম্বন্ধে সত্য জ্ঞান থাকা মোটেই গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে করে নি। তাই ঈশ্বর তাদের ছেড়ে দিয়েছেন যাতে তারা নিজেদের অসার চিন্তায় ডুবে থাকে এবং যেসব কাজ তাদের করা উচিত নয় তা করে। 29 সেই লোকদের জীবন সব রকমের পাপ, অসাধুতা, স্বার্থপরতা ও হিংসায় ভরা। তাদের জীবন দ্বেষ, হত্যা, বিবাদ, মিথ্যা ছল ও দুর্বুদ্ধিতে পূর্ণ। 30 তারা ঈশ্বর ঘৃণাকারী, দুর্বিনীত, উদ্ধত, আত্মশ্লাঘী, মন্দ বিষয়ের উৎপাদক, পিতামাতার আদেশ অমান্যকারী। 31 তারা নির্বোধ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী, স্নেহরহিত ও নির্দয়। 32 তারা ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থা জানে। তারা জানে যে বিধি-ব্যবস্থা বলে, যারা এমন আচরণ করে তারা মৃত্যুর যোগ্য। কিন্তু তা জেনেও তারা সেই সব মন্দ কাজ করে চলে। তাদের ধারণা, যারা ঐসব মন্দ কাজ করে তারা সবাই ঠিকই করেছে।
জেরুশালেমের পতন
39 এইভাবে জেরুশালেম দখল হল: যিহূদার ওপর রাজা সিদিকিয়র নবম বছরের রাজত্বের দশম মাসে বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসর তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ জেরুশালেম শহর অধিগ্রহণের জন্য বেরিয়েছিলেন। তারা শহরটিকে অধিকার করবার জন্য তাকে ঘিরে ফেলেছিল। 2 এবং সিদিকিয়র রাজত্ব কালের একাদশতম বছরের চতুর্থ মাসের নবম দিনে বাবিলের সৈন্যরা জেরুশালেমের প্রাচীর ভেঙে ফেলেছিল। 3 তখন বাবিলের রাজার সভাসদরা জেরুশালেম শহরে প্রবেশ করেছিল। তারা এসে বসেছিল শহরের মাঝখানের ফটকে। সেই সভাসদদের নাম ছিল: সমগর জেলার রাজ্যপাল নের্গল-শরেৎসর, সমগরনবো নামের এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী এবং আরও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পারিষদবৃন্দও সেখানে উপস্থিত ছিল।
4 বাবিল থেকে আসা ঐ সভাসদদের সিদিকিয় দেখেছিলেন। অতএব, সেই রাত্রেই তিনি এবং তাঁর বিশ্বস্ত সৈন্যরা রাজার বাগানের মধ্যে দিয়ে একটি গোপন ফটক পেরিয়ে, দুটি প্রাচীরের মধ্যে দিয়ে জেরুশালেম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা যর্দন উপত্যকার দিকে পালিয়েছিলেন। 5 বাবিলের সৈন্যদল সিদিকিয় ও তাঁর সৈন্যদের তাড়া করেছিল এবং তাদের যিরীহোর সমতলভূমিতে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে আসা হয় বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসরের কাছে। নবূখদ্রিৎসর তখন ছিলেন হমাৎ প্রদেশের রিব্লা শহরে। সেখানে তিনি ঠিক করেছিলেন সিদিকিয়র প্রতি কি করা হবে। 6 এই রিব্লা শহরেই সিদিকিয়র চোখের সামনেই সিদিকিয়র পুত্রদের নবূখদ্রিৎসর হত্যা করেছিলেন। এবং যিহূদার রাজসভার সমস্ত সভাপারিষদবৃন্দকেও হত্যা করা হয়েছিল। 7 নবূখদ্রিৎসর সিদিকিয়র চোখ দুটো উপড়ে ফেলেছিলেন, তাকে পিতলের শেকল দিয়ে শৃঙ্খলিত করেছিলেন এবং তাকে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন।
8 বাবিলের সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ এবং সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং তারা জেরুশালেমের পাঁচিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। 9 বাবিলের রাজার বিশেষ রক্ষীদের প্রধান নবূষরদন যারা তখনও বেঁচে ছিল তাদের সবাইকে বন্দী করেছিল এবং বাবিলে নিয়ে গিয়েছিল। যারা আগেই আত্মসমর্পণ করেছিল তাদেরও নবূষরদন বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিল। 10 কিন্তু যিহূদার কিছু গরীব লোককে নবূষরদন বন্দী করে নিয়ে না গিয়ে বরং তাদের সে জমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত দান করে দিয়েছিল।
11 কিন্তু নবূখদ্রিৎসর যিরমিয়র ব্যাপারে নবূষরদনকে কিছু আদেশ দিয়েছিলেন। নবূষরদন ছিল নবূখদ্রিৎসরের বিশেষ দেহরক্ষীদের প্রধান। আদেশ ছিল: 12 “যিরমিয়কে খুঁজে বার করো এবং ভালো করে তার দেখাশোনা কর। তাকে আঘাত করো না। সে যা চায় তাই তাকে দাও।”
13 সুতরাং নবূষরদন, নবূখদ্রিৎসরের বিশেষ রক্ষীদের প্রধান, বাবিলের বিশেষ রক্ষসুদর মুখ্য আধিকারিক নবূশস্বন, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী নের্গল-শরেৎসর এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের যিরমিয়র সন্ধানে পাঠানো হয়েছিল। 14 তারা যিরমিয়কে উপাসনালয় চত্বরে খুঁজে পেয়েছিল। সেখানে তাকে নজরবন্দী করে রেখেছিল যিহূদার রাজার রক্ষীরা। ঐ আধিকারিকরা যিরমিয়কে গদলিয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। গদলিয় ছিল অহীকামের পুত্র এবং শাফনের পৌত্র। গদলিয়কে নির্দেশ দেওয়া ছিল যিরমিয়কে তার নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সুতরাং যিরমিয় তার নিজের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছিল।
এবদ-মেলকের প্রতি প্রভুর বার্তা
15 মন্দির চত্বরে প্রহরীদের পাহারায় যিরমিয় যখন বন্দী ছিল তখন তার কাছে প্রভুর বার্তা এসেছিল। 16 এই ছিল সেই বার্তা: “যাও এবং কূশীয় এবদ-মেলককে বল: ‘প্রভু সর্বশক্তিমান ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেন: জেরুশালেম সম্বন্ধে আমার বাণী খুব শীঘ্রই আমি সত্যে পরিণত করব। আমার বার্তা সত্য হবে বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে, ভালো জিনিষ দিয়ে নয়। তোমরা তা তোমাদের নিজেদের চোখেই দেখতে পাবে। 17 কিন্তু এবদ-মেলক, আমি তোমাকে সেদিন রক্ষা করব।’ যাদের তুমি ভয় পাও তোমাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। 18 আমি তোমাকে রক্ষা করব। তরবারির আঘাতে তোমার মৃত্যু হবে না। কিন্তু তুমি পালিয়ে যাবে এবং বাঁচবে। তুমি আমার ওপর তোমার বিশ্বাস রেখেছিলে বলেই তুমি বেঁচে যাবে।” এই হল প্রভুর বার্তা।
পরিচালকের প্রতি: দায়ূদের একটি গীত।
13 হে প্রভু, আর কতক্ষণ আপনি আমায় ভুলে থাকবেন?
আপনি কি চিরদিনের জন্য আমায় ভুলে যাবেন?
আর কতদিন আমার কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন?
2 আর কতকাল আমি এই চিন্তাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করব?
আর কতকাল আমার হৃদয় এই দুঃখ ভোগ করবে?
আর কতদিন আমার শত্রুরা আমায় পরাজিত করবে?
3 হে প্রভু আমার ঈশ্বর, আমার দিকে তাকান! আমার প্রশ্নের উত্তর দিন!
আমার প্রশ্নের উত্তর আমায় জানিয়ে দিন; নয়তো আমি মরে যাবো!
4 যদি তাই ঘটে, আমার শত্রুরা বলবে, “আমি ওকে মেরেছিলাম!”
আমাকে পরাজিত করতে পারলে আমার শত্রুরা খুশী হবে।
5 হে প্রভু, আমি আপনার প্রকৃত ভালবাসার ওপর আস্থা রেখেছিলাম।
আপনি আমায় রক্ষা করেছেন এবং সুখী করেছেন!
6 আমি প্রভুর উদ্দেশ্যে আনন্দ গান গাই,
কারণ তিনি আমার জন্য হিতকর কাজ করেছেন।
পরিচালকের প্রতি: দায়ূদের একটি গীত।
14 একজন দুষ্ট নির্বোধ লোক মনে মনে বলে, “ঈশ্বর নেই।”
এইসব লোকরা ভয়ঙ্কর ও দুষ্ট কাজকর্ম করে।
তাদের মধ্যে একজনও নেই যে ভালো কাজ করে।
2 ওদের মধ্যে ঈশ্বরের সাহায্য কামনা করে
এমন দেখবার জন্য প্রভু স্বর্গ থেকে
লোকদের প্রতি লক্ষ্য রেখেছিলেন। (জ্ঞানী লোকরা সাহায্যের জন্য ঈশ্বরমুখী হয়।)
3 কিন্তু প্রত্যেকটি লোকই ঈশ্বরের থেকে বিমুখ হয়ে গেছে।
সব লোকই, মন্দ লোকে পরিণত হয়েছে।
না, একটা লোকও ভালো কাজ করে নি!
4 মন্দ লোকরা আমার লোকদের বিনষ্ট করেছে।
ওই সব মন্দ লোকরা ঈশ্বরকে চেনে না।
মন্দ লোকদের জন্য গলাধঃকরণ করার মত প্রচুর খাদ্য রয়েছে।
এমনকি তারা প্রভুর উপাসনা পর্যন্ত করে না।
5 ঐসব মন্দ লোক, একজন দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে উপদেশ শুনতে চায় না।
কেন? কারণ ওই দরিদ্র লোকটি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে।
6 কিন্তু ঈশ্বর তাঁর সৎ লোকদের সঙ্গে থাকেন।
সুতরাং মন্দ লোকদের ভয়ের অনেক কারণ আছে।
7 সিয়োন পর্বত থেকে কে ইস্রায়েলকে রক্ষা করে?
তিনি স্বয়ং প্রভু যিনি ইস্রায়েলকে রক্ষা করেন!
প্রভু যখন আবার তাঁর লোকদের তাদের দেশ থেকে সমৃদ্ধশালী করেন,
তখন যাকোবের পরিবার আনন্দ করুক।
ইস্রায়েলের লোকেরা সুখী হোক্।[a]
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International