M’Cheyne Bible Reading Plan
শস্য মাড়াইয়ের ক্ষেত্র
3 এক দিন নয়মী রূতকে বলল, “ওগো মেয়ে, হয়তো তোমার জন্য আমার একটি বর এবং একটি সুন্দর বাড়ী খোঁজা উচিৎ। তোমার ভালই হবে। 2 হয়তো বোয়সই উপযুক্ত পাত্র। সে আমাদের খুব কাছের লোক। তুমি তার দাসীদের সঙ্গে কাজ করো। আজ রাত্রে বোয়স শস্য মাড়াই করার জায়গায় যব মাড়াই করবে। 3 যাও গা ধুয়ে সাজগোজ করো। বেশ ভাল জামাকাপড় পরো। তারপর তুমি যেখানে শস্য ঝাড়াই হয় সেখানে অবশ্যই যাবে। কিন্তু বোয়সের রাতের খাওয়া না হওয়া পর্যন্ত সে যেন তোমায় দেখতে না পায়। 4 খাওয়ার পর সে বিশ্রাম করবে। দেখবে কোথায় সে শোয়। তারপর সেখানে গিয়ে তার পা থেকে ঢাকাটা তুলে সেখানে শুয়ে পড়বে। সে তোমাকে বলে দেবে বিয়ের ব্যাপারে তুমি কি করবে।”
5 রূৎ বলল, “তাই করব।”
6 শস্য মাড়াইয়ের জায়গায় রূৎ চলে গেল। শাশুড়ী যা বলেছে সেই মতো সবই করল। 7 খাওয়া-দাওয়ার পর বোয়স বেশ খুশি হয়ে শস্যের গাদার পাশে শুতে গেল। তারপর রূৎ চুপিচুপি তার কাছে গিয়ে পায়ের চাদরটা তুলে সেখানে শুয়ে পড়লো।
8 পরে, মধ্যরাত্রে ঘুমের মধ্যে বোয়স পাশ ফিরতে গেল আর তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এবং তার পায়ের কাছে শুয়ে থাকা একজন নারীকে দেখে খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। 9 বোয়স জিজ্ঞাসা করল, “কে তুমি?”
নারী বলল, “আমি রূৎ, আপনার দাসী। আপনার চাদর আমার গায়ে বিছিয়ে দিন। আপনি আমার রক্ষাকর্তা।”
10 বোয়স বলল, “প্রভু তোমার মঙ্গল করুন। আমার ওপর তুমি যথেষ্ট দয়া করেছ। আগে নয়মীকে তুমি যা দয়া করতে আমাকে তার চেয়ে বেশি দয়া করছ। তুমি একজন গরীব কিংবা ধনী যুবককে বিয়ে করতে পারতে। কিন্তু তুমি তা কর নি। 11 শোনো যুবতী, ভয় পেও না। তুমি যা চাইছ সে রকমই আমি করব। আমার শহরের সকলেই জানে তুমি খুব ভাল মেয়ে। 12 এটাও সত্যি যে, আমি তোমার একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। কিন্তু আমার চেয়েও ঘনিষ্ঠ লোক তোমার আছে। 13 আজ রাতটা এখানে থাকো। সকাল হলে দেখব সেই লোকটি তোমাকে সাহায্য করতে পারে কি না। যদি করে, খুবই ভাল। আর যদি না করে তাহলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমিই তোমাকে বিয়ে করবো। ইলীমেলকের জমি-জায়গা ছাড়িয়ে নিয়ে তোমার হাতে তুলে দেব। সকাল অবধি তুমি এখানে থেকে যাও।”
14 সুতরাং সকাল হওয়া পর্যন্ত বোয়সের পায়ের কাছে রূৎ শুয়ে থাকল। অন্ধকার থাকতে থাকতেই সে যাবার জন্য উঠে পড়লো যাতে লোকে তাকে চিনতে না পারে।
বোয়স তাকে বলল, “কাল রাত্রে যে তুমি আমার কাছে এসেছিলে সে কথা আমরা গোপন রাখবো।” 15 তারপর বোয়স বলল, “তোমার শালটা আমায় দাও তো। ওটাকে খুলে ধরো।”
রূৎ তাই করলো। বোয়স নয়মীকে দেবে বলে আন্দাজে এক বুশেল বার্লি ওজন করল। তারপর রূতের শালে বার্লি মুড়ে তার পিঠে চাপিয়ে দিলো। বোয়স শহরে বেরিয়ে গেল।
16 রূৎ তার শাশুড়ী নয়মীর বাড়ী চলে গেল। নয়মী দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কে ওখানে?”
রূৎ ভেতরে গিয়ে বোয়স কি কি করেছে সব নয়মীকে বলল। 17 সে বলল, “বোয়স তোমার জন্য এই বার্লি উপহার দিয়েছে। সে বলেছে উপহার না নিয়ে যেন তোমার কাছে না আসি।”
18 নয়মী বলল, “বাছা, ধৈর্য্য ধরো। বোয়স যা করবে বলে মনে করে তা না করা পর্যন্ত ওর মনে শান্তি নেই। দিন ফুরোবার আগে কি ঘটে আমরা জানতে পারব।”
বোয়স ও অন্য আত্মীয়টি
4 শহরের ফটকের কাছে যেখানে লোকরা সব জড়ো হয়েছে সেখানে বোয়স গেল। সেখানে সে বসে রইল যতক্ষণ না সেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়টি আসে। এর কথাই সে রূতকে বলেছিল। তারপর এক সময় সেই লোকটি তার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। বোয়স তাকে ডাকল, “বন্ধু এই যে শোনো, এখানে বসো!”
2 তারপর বোয়স কয়েক জন সাথী জোগাড় করল। শহরের দশ জন প্রবীণ লোককে সে ডাকল। তাদের বলল, “বসো!” তারা বসল।
3 তারপর বোয়স সেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়টিকে বলল, “পাহাড়ি দেশ মোয়াব থেকে নয়মী ফিরে এসেছে। আমাদের আত্মীয় ইলীমেলকের জমি সে বিক্রী করছে। 4 এই শহরের লোকদের ও প্রবীণ ব্যক্তিদের সামনে আমি তোমাকে এই কথা বলছি। যদি তুমি সেই জমি কিনে নিতে চাও, কেনো। আর যদি জমিটা ছাড়িয়ে নিতে না চাও, তাও বলো। তুমি না পারলে আমিই ছাড়িয়ে নেব।”
5 বোয়স আরও বলল, “নয়মীর জমি কিনে নিলে তুমি মোয়াবীয়া বিধবা রূতকেও পেয়ে যাবে। যদি মোয়াবীয়া রূতের সন্তান হয় সেই হবে জমির মালিক। এইভাবে জমিটা ওদের পরিবারেই থেকে যাবে।”
6 আত্মীয়টি বলল, “আমি ঐ জমি কিনবো না। ওটা তো আমারই হওয়ার কথা। কিনলে আমার নিজের জমিই খোয়াব। ও তুমিই কেনো।” 7 (বহুকাল আগে ইস্রায়েলে কেউ কোনো সম্পত্তি কিনলে বা ছাড়িয়ে নিলে একজন লোক তার জুতো খুলে খদ্দেরকে দিয়ে দিত। এটাই ছিল বেচা-কেনার প্রমাণ।) 8 সেই মতো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়টি বলল, “জমি তুমি কিনে নাও।” তারপর সে তার জুতো খুলে বোয়সকে দিল।
9 তখন বোয়স সমবেত লোকদের এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের বলল, “তোমরা সকলে সাক্ষী রইলে যে আমি ইলীমেলক, কিলিয়োন এবং মহলোনের এই সমস্ত জমিজমা নয়মীর কাছ থেকে কিনে নিলাম। 10 সেইসঙ্গে রূতকেও আমার স্ত্রী হিসেবে কিনে নিলাম। এর ফলে মৃত স্বামীর সব সম্পত্তির অধিকারী হবে তারই পরিবারের লোকরা। এভাবেই তার নাম তার জমির ও পরিবার থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে না। তোমরা আজ সকলেই সাক্ষী থাকলে।”
11 সকলেই সাক্ষী থেকে গেল। তারা বলল, “ইস্রায়েলের গৃহ যারা তৈরী[a] করেছিল সেই রাহেল এবং লেয়ার মত করে প্রভু যেন গড়ে তোলেন এই নারীকে যে তোমার বাড়ীতে আসছে। তুমি ইফ্রাথাতে শক্তিশালী হও। তুমি বৈৎলেহমেও বিখ্যাত হও। 12 তামর যিহূদার পুত্র পেরসকে জন্ম দিয়েছিল এবং তার পরিবার মহান হয়েছিল। প্রভু যেন তেমনি করেই তোমাকেও রূতের গর্ভজাত বহু সন্তান দেন। এবং তোমার পরিবারও পেরসের মতোই মহান হয়ে ওঠে।”
13 বোয়স রূতকে বিয়ে করলো। প্রভুর আশীর্বাদে রূৎ গর্ভবতী হল। সে একটি পুত্রের জন্ম দিল। 14 শহরের রমনীরা নয়মীকে বলল, “প্রশংসা করো প্রভুকে যিনি তোমাকে উপহার হিসেবে এই মহান পুত্র দিলেন। সে ইস্রায়েলে বিখ্যাত হবে। 15 এই তোমাকে পুনর্জীবিত করবে এবং তোমার বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করবে। তোমার পুত্রবধূর সুবাদেই তাকে পেলে। তোমারই জন্য সে এই ছেলেকে জন্ম দিয়েছে। সে তোমায় ভালবাসে এবং সে তোমায় সাতটি ছেলের চেয়ে ঢের বেশি ভালবাসে।”
16 নয়মী ছেলেকে কোলে তুলে নিলো এবং তাকে আদর-যত্ন করল। 17 পাড়া প্রতিবেশীরা তার একটা নাম দিল। এই স্ত্রীলোকরা বলল, “এখন নয়মীর একটি পুত্র আছে!” তারা পুত্রটির নাম রাখল ওবেদ। ওবেদের পুত্রের নাম যিশয়। যিশয়ের পুত্রের নাম দায়ূদ।
রূৎ ও বোয়সের পরিবার
18 এই হচ্ছে পেরসের পরিবারের বংশপরিচয়:
পেরসের পুত্র হিষ্রোণ।
19 হিষ্রোণের পুত্র রাম।
রামের পুত্র অম্মীনাদব।
20 অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন।
নহশোনের পুত্র সল্মোন।
21 সল্মোনের পুত্র বোয়স।
বোয়সের পুত্র ওবেদ।
22 ওবেদের পুত্র যিশয়।
যিশয়ের পুত্র দায়ূদ।
পৌল মিলিতা দ্বীপে
28 এইভাবে সকলে নিরাপদে তীরে পৌঁছে জানতে পারলাম যে আমরা মিলিতা দ্বীপে উঠেছি। 2 সেখানকার লোকরা আমাদের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করল। বৃষ্টি পড়ার দরুন খুব ঠাণ্ডা হওয়ায় তারা আগুন জ্বেলে আমাদের সকলকে স্বাগত জানাল। 3 পৌল এক বোঝা শুকনো কাঠ যোগাড় করে এনে আগুনের ওপর ফেলে দিলে আগুনের হল্কায় একটা বিষধর সাপ বেরিয়ে এসে পৌলের হাতে জড়িয়ে ধরল। 4 তখন সেই দ্বীপের লোকরা তার হাতে সাপটাকে ঝুলতে দেখে বলাবলি করতে লাগল, “এ লোকটা নিশ্চয় খুনী, সমুদ্রের ঝড়ের হাত থেকে বাঁচলেও ন্যায় একে বাঁচতে দিল না।”
5 কিন্তু পৌল হাত ঝেড়ে সেই সাপটাকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিলেন, তাঁর কোন ক্ষতি হল না। 6 এই ব্যাপার দেখে তারা মনে করল হয় পৌলের শরীর ফুলে উঠবে, নয়তো তিনি হঠাৎ মারা যাবেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও তাঁর কিছুই ক্ষতি হল না দেখে তারা পৌল সম্বন্ধে তাদের মত বদল করে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “ইনি নিশ্চয়ই দেবতা।”
7 সেই জায়গার কাছেই দ্বীপের প্রধান কর্মকর্তা জমিদার পুব্লিয় থাকতেন। তিনি তাঁর বাড়িতে আমাদের সাদরে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাদের প্রতি খুব ভাল ব্যবহার করলেন আর তিন দিন ধরে আমাদের আতিথ্য করলেন। 8 সেই সময় পুব্লিয়ের বাবা খুব অসুস্থ ছিলেন। তিনি জ্বর ও আমাশা রোগে শয্যাশায়ী ছিলেন। পৌল তাঁকে দেখার জন্য ভেতরে গেলেন। এরপর তিনি প্রার্থনা করে তাঁর ওপর দুহাত রাখলে তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। 9 এই ঘটনার পর ঐ দ্বীপে অন্য যত রোগী ছিল তারা পৌলের কাছে এসে রোগ মুক্ত হল।
10-11 ঐ দ্বীপের লোকরা আমাদের অনেক উপহার দিয়ে সম্মান দেখাল। আমরা সেখানে তিন মাস থাকলাম আর আমাদের যাত্রা পথের জন্য যা যা প্রয়োজন সে সব জিনিস এনে তারা জাহাজে তুলে দিল।
পৌল রোমে গেলেন
তিন মাস পর আমরা আলেকসান্দ্রীয় এক জাহাজে উঠে যাত্রা করলাম, সেই দ্বীপে শীতকাল এসে পড়ায় ঐ জাহাজটি নোঙ্গর করে রাখা ছিল। জাহাজটিতে যমজ দেবের মূর্তি খোদাই করা ছিল। 12 আমরা প্রথমে সুরাকুষে এলাম, সেখানে তিন দিন থাকলাম। 13 সেখান থেকে যাত্রা করে আমরা রীগিয়ে পৌঁছলাম। পরদিন দক্ষিণা বাতাস বইতে শুরু করলে আমরা জাহাজ ছাড়তে পারলাম, এবং দ্বিতীয় দিনে পূতিয়লীতে পৌঁছলাম। 14 সেখানে আমরা কয়েকজন ভাইয়ের দেখা পেলাম। তাঁরা সেখানে সাতদিন থাকার জন্য আমাদের অনুরোধ করলেন। এইভাবে আমরা রোমে এসে পৌঁছলাম। 15 রোমের ভাইরা আমাদের কথা জানতে পেরে আপ্পিয়ের বাজার ও তিন সরাই পর্যন্ত এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। তাঁদের দেখে পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন ও উৎসাহ বোধ করতে লাগলেন।
রোমে পৌল
16 রোমে পৌল একা থাকার অনুমতি পেলেন; কিন্তু একজন সৈনিককে তাঁর প্রহরায় রাখা হল।
17 তিন দিন পর তিনি ইহুদীদের প্রধান প্রধান লোকদের এক সভায় আহ্বান করলেন। তারা সমবেত হলে, তিনি তাদের বললেন, “আমার ইহুদী ভাইরা, যদিও আমি আমার নিজের লোকদের বিরুদ্ধে বা আমাদের পিতৃপুরুষদের দেওয়া রীতি-নীতির বিরুদ্ধে কিছুই করি নি, তবু জেরুশালেমের এক বন্দী হিসাবে আমাকে রোমানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। 18 তারা আমার বিচার করে, আর মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোন দোষ আমার মধ্যে না পেয়ে আমাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। 19 কিন্তু স্থানীয় ইহুদীরা তার বিরোধিতা করায় আমি কৈসরের কাছে আপীল করতে বাধ্য হলাম। আমি একথা বলছি না যে আমার স্বজাতির লোকরা কোন অন্যায় করেছে। 20 এই শৃঙ্খলে বন্দী আছি বলে আমি আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ও আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কারণ আমি ইস্রায়েলের প্রত্যাশাতে বিশ্বাসী।”
21 ইহুদী নেতারা পৌলকে বললেন, “যিহূদিয়া থেকে আমরা আপনার বিষয়ে কোন চিঠি পাই নি। ভাইদের মধ্যে থেকেও কেউ এখানে এসে আপনার বিষয়ে খারাপ কোন খবর দেয় নি বা কথাও বলে নি। 22 কিন্তু আপনার মত কি তা আপনার মুখ থেকেই আমরা শুনতে চাই, কারণ এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে লোকেরা সর্বত্র এর বিরুদ্ধে বলে থাকে।”
23 পরে তাঁরা একটা দিন স্থির করে সেই দিনে অনেকে তাঁর বাসায় এলেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে বললেন, বোঝালেন ও সাক্ষ্য দিলেন। মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের গ্রন্থগুলি থেকে তিনি যীশুর বিষয় তাঁদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। 24 তাঁর কথায় বেশ কিছু ইহুদী বিশ্বাস করল আবার অনেকে তা বিশ্বাস করল না। 25 এইভাবে তাদের মধ্যে মতের মিল না হওয়ায় তারা যে যার মত চলে যেতে শুরু করল। তাদের যাবার আগে পৌল তাদের এই কথাটি বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে আপনাদের পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে ভালই বলেছিলেন। যেমন:
26 ‘এই লোকদের কাছে যাও, আর তাদের বল,
তোমরা শুনবে আর শুনবে,
কিন্তু তোমরা বুঝবে না।
তোমরা কেবল তাকিয়ে থাকবে
কিন্তু দেখতে পাবে না।
27 কারণ এই লোকদের অন্তঃকরণ অসাড় হয়ে গেছে,
তাদের কান আছে বটে কিন্তু তারা শুনতে পায় না।
এই লোকরা সত্যের প্রতি চোখ বুজে রয়েছে।
এইসব ঘটেছে যাতে লোকরা তাদের চোখ দিয়ে দেখতে না পায়,
তাদের কান দিয়ে শুনতে না পায়
ও হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি না করে।
এইসব ঘটেছে যেন তারা আমার কাছে ফিরে না আসে, পাছে আমি তাদের আরোগ্য দান করি।’(A)
28 “তাই ইহুদী ভাইরা, আপনারা জেনে রাখুন, ঈশ্বরের দেওয়া এই পরিত্রাণ অইহুদীদের কাছেও পাঠানো হল, আর তারা তা শুনবে!” 29 [a]
30 পৌল তাঁর নিজের ভাড়া বাড়িতে পুরো দুই বছর থাকলেন। যতলোক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসত, তিনি তাদের সকলকে সাদরে গ্রহণ করতেন। 31 তিনি সম্পূর্ণ সাহসের সাথে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতেন। তিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন এবং কেউ তাঁকে প্রচারে বাধা দিত না।
যিরমিয়কে চৌবাচ্চায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল
38 যিরমিয় যে বার্তাগুলি প্রচার করেছিল সেগুলি রাজার কয়েকজন সভাপরিষদরা শুনতে পেয়েছিলেন। তাঁরা হলেন: মত্তনের পুত্র শফটিয়, পশ্হূরের পুত্র গদলিয়, শেলিমিয়ের পুত্র যিহূখল এবং মল্কিয়ের পুত্র পশ্হূর। যিরমিয় সমস্ত লোকদের এই বাণী বলেছিল: 2 “প্রভু যা বলেছেন তা হল এই: ‘জেরুশালেমে বসবাসকারী প্রত্যেকে হয় তরবারির আঘাতে নয় অনাহারে বা ভয়ঙ্কর মহামারীতে মারা যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজেকে বাবিলের সৈন্যবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে সে বেঁচে থাকবে।’ 3 এবং প্রভু যা বলেছেন তা হল: ‘জেরুশালেম শহর বাবিলের রাজার সৈন্যবাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হবে এবং বাবিলের রাজাই দখল করবে এই শহর।’”
4 রাজার ঐ সমস্ত সভাপারিষদরা যিরমিয়র প্রচারিত ঐ বাণী শুনে রাজা সিদিকিয়ের কাছে গিয়ে বলল, “যিরমিয়কে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিৎ। সে আমাদের সৈন্যদের নিরুৎসাহিত করছে। তার কথা দিয়ে সে সমস্ত নাগরিককে নিরুৎসাহিত করেছে। যিরমিয় চায় না আমাদের ভাল কিছু হোক্। সে শুধু জেরুশালেমের লোকদের ক্ষতি কামনা করে।”
5 এইসব কথা শুনে রাজা সিদিকিয় ঐ সভাপরিষদদের বলল, “যিরমিয় পুরোপুরি তোমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সুতরাং তোমরা কিছু করতে চাইলে আমি তোমাদের থামাতে পারি না।”
6 সুতরাং সভাসদরা যিরমিয়কে নিয়ে গেল মল্কিয়ের চৌবাচ্চায় ফেলে দেবার জন্য (মল্কিয় ছিল রাজপুত্র)। চৌবাচ্চাটি ছিল উপাসনালয় চত্বরে, সেখানে থাকতো রাজার প্রহরীরা। সভাসদরা যিরমিয়কে দড়ি দিয়ে বাঁধল এবং জলাধারে ফেলে দিল। জলাধারটিতে জল ছিল না, ছিল শুধু কাদা। এবং যিরমিয় সেই কাদার ভেতরে ডুবে গেল।
7 কিন্তু এবদ-মেলক নামক এক ব্যক্তি শুনতে পেয়েছিল যে সভাসদরা যিরমিয়কে জলাধারে ফেলে দিয়েছে। এবদ-মেলক ছিল একজন কূশ দেশীয় (ইথিওপিয়ার) ব্যক্তি এবং সে ছিল রাজার প্রাসাদের সেবক, একজন নপুসংক। রাজা সিদিকিয় তখন বসেছিল বিন্যামীন ফটকে। তাই এবদ-মেলক রাজার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রওনা দিল।
8-9 রাজাকে সে বলেছিল, “আমার মনিব এবং মহারাজ, ঐ সভাসদরা অসৎ উপায় অবলম্বন করেছে ভাববাদী যিরমিয়র বিরুদ্ধে। তারা যিরমিয়কে জলাধারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তারা তাকে সেখানে মরবার জন্য ছেড়ে রেখেছে।”[a]
10 তখন রাজা সিদিকিয় এবদ-মেলককে আদেশ দিয়েছিল, “এবদ-মেলক রাজপ্রাসাদ থেকে তিন জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাও এবং জলাধার থেকে যিরমিয়কে সে মরে যাবার আগে তুলে নাও।”
11 এবদ-মেলক তিনজন লোক সঙ্গে নিল কিন্তু তার আগে সে রাজপ্রাসাদের নীচে ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে কিছু পুরানো বস্ত্র ও কিছু জীর্ণ বস্ত্রখণ্ড জোগাড় করল। তারপর জলাধারের কাছে গিয়ে সে ঐ জীর্ণ বস্ত্রখণ্ডগুলি দড়ির সঙ্গে নীচে নামিয়ে দিয়ে 12 যিরমিয়র উদ্দেশ্যে বলল, “যিরমিয় এই জীর্ণ বস্ত্রখণ্ডগুলি তুমি তোমার কাঁধের নীচে ভাল করে জড়িয়ে নাও। আমরা যখন দড়ির সাহায্যে তোমায় টেনে তুলব তখন ঐ বস্ত্রখণ্ডগুলি দড়ির আঘাত থেকে তোমায় রক্ষা করবে।” এবদ-মেলকের কথা মতোই যিরমিয় বস্ত্রখণ্ডগুলি বাহুতে জড়িয়ে নিল। 13 তারপর তারা তাকে দড়িগুলো দিয়ে টেনে তুলল এবং জলাধারের থেকে বাইরে আনল। যিরমিয়কে আবার রক্ষীদের অধীনে উঠোনে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
সিদিকিয় যিরমিয়কে আরও কিছু প্রশ্ন করল
14 রাজা সিদিকিয় ভাববাদী যিরমিয়কে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য একজনকে পাঠাল। যিরমিয়কে প্রভুর মন্দিরের তৃতীয় প্রবেশ পথে আনা হয়েছিল। রাজা বললেন, “যিরমিয় আমি তোমাকে কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করব। তুমি কিন্তু আমার কাছে কোন কিছু লুকোবে না, সব কথা আমাকে খোলাখুলি বলবে।”
15 যিরমিয় সিদিকিয়কে বলল: “আমি যদি আপনার কথার উত্তর দিই, আপনি হয়ত আমায় মেরে ফেলবেন। আমি যদি আপনাকে উপদেশও দিই, আপনি আমার কথা শুনবেন না।”
16 কিন্তু রাজা সিদিকিয় গোপনে এই বলে যিরমিয়র কাছে একটি প্রতিশ্রুতি করলেন, “যিরমিয়, প্রভু হচ্ছেন সেই জন যিনি আমাদের জীবনের রুটি দেন। আমি প্রভুর নামে শপথ করছি, আমি তোমায় মেরে ফেলব না এবং যারা তোমায় মারতে চায় সেই কর্মচারীদের হাতেও তুলে দেব না।”
17 তখন যিরমিয় রাজা সিদিকিয়কে বলল, “প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘যদি আপনি বাবিলের রাজার সভাসদদের হাতে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে জীবন রক্ষা পাবে এবং জেরুশালেমকেও আগুনে পোড়ানো হবে না। আপনার পরিবারও জীবিত থাকবে। 18 কিন্তু যদি আপনি আত্মসমর্পণ না করেন, বাবিলীয় সৈন্যদল জেরুশালেমকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে এবং আপনি তাদের দ্বারা বন্দী হবেন।’”
19 কিন্তু রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি যিহূদার সেই সমস্ত লোকদের যারা ইতিমধ্যেই বাবিলের পক্ষ নিয়েছে। আমি ভীত কারণ বাবিলের সৈন্যরা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে যিহূদার ঐ মানুষগুলোর হাতে তুলে দেবে। তারা আমার ওপর নিদারুণ অত্যাচার চালাবে।”
20 কিন্তু উত্তরে যিরমিয় বলল, “বাবিলের সৈন্যরা আপনাকে যিহূদার লোকদের হাতে তুলে দেবে না। রাজা সিদিকিয়, আমি যা বলছি তা করে প্রভুকে মান্য করুন। তাহলে আপনার ভাল হবে। আপনি রক্ষা পাবেন। 21 কিন্তু আপনি যদি বাবিলের সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন তাহলে কি হবে তা প্রভু আমাকে আগেই দেখিয়েছেন। প্রভু বলেছেন: 22 রাজবাড়ির সমস্ত মহিলাকে বাবিলের গুরুত্বপূর্ণ সভাসদদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। রাজমহিলাগণ আপনাকে নিয়ে মজা করে গান গাইবে। ওরা গাইবে:
‘তোমার বন্ধুরা যাদের তুমি বিশ্বাস করতে,
তোমাকে ভুল পথে চালিত করেছে।
তোমার পা কাদায় আটকে গিয়েছিল
আর তারা তোমায় একা ফেলে পালিয়ে গিয়েছে।’
23 “তোমার স্ত্রীদের ও সন্তানদের বাবিলের সৈন্যরা ধরে নিয়ে আসবে। তুমিও পালাতে পারবে না। তুমি বন্দী হবে আর জেরুশালেমকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হবে।”
24 তখন সিদিকিয় যিরমিয়কে বলে উঠল, “কাউকে বলো না যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি তুমি বলে দাও তাহলে হয়তো তোমাকে হত্যা করা হবে। 25 ঐ সভাসদরা হয়তো জানতে পারবে যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তোমার কাছে এসে বলবে, ‘যিরমিয় রাজাকে কি বলেছো তা আমাদের বলো এবং রাজা তোমাকে কি বলেছে তাও আমাদের বলো। সৎভাবে আমাদের সব কিছু জানাও না হলে তোমাকে হত্যা করব।’ 26 যদি সভাসদরা এরকম বলে, তাহলে তোমার তাদের বলা উচিৎ: ‘আমি রাজার কাছে ভিক্ষা করেছিলাম আমাকে আবার যোনাথনের বাড়ীর নীচে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ না করতে, নাহলে আমি সেখানে মারা যাব।’”
27 তাই ঘটল। ঐ সভাসদরা জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যিরমিয়র কাছে এলো। সুতরাং যিরমিয় তাদের তাই বলল যা রাজা তাকে বলার জন্য আদেশ দিয়ে ছিলেন যখন ঐ সভাসদরা যিরমিয়কে একা ছেড়ে দিল। কেউ জানতে পারল না রাজা এবং যিরমিয়র মধ্যে কি কথা হয়েছিল।
28 অবশেষে যিরমিয় মন্দির চত্বরে প্রহরীদের নজরবন্দী হয়ে রয়ে গেল যতদিন পর্যন্ত না জেরুশালেম দখল হয় ততদিন পর্যন্ত।
পরিচালকের প্রতি: দায়ূদের গীত।
11 আমি প্রভুর ওপর বিশ্বাস রাখি। তবে কেন তোমরা আমায় দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলে?
তুমি আমায় বলেছিলে, “পাখীর মত তোমার পর্বতে উড়ে যেতে!”
2 মন্দ লোকরা শিকারীর মত, তারা অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে।
তারা ধনুকের ছিলা টেনে ধরে।
তারা তাদের তীর লোকের দিকে তাক করে এবং সাধু ও সৎ লোকের হৃদয়ে তা সরাসরি বিদ্ধ করে।
3 সমাজে ভিতগুলোই যদি নষ্ট হয়ে যায়,
তবে সৎ লোকরা কি করবে?
4 প্রভু তাঁর পবিত্র মন্দিরে রয়েছেন।
প্রভু স্বর্গে তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন।
এই পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে, তার সবই তিনি দেখতে পান।
লোকরা সত্যিকারের ভাল না মন্দ তা জানবার জন্য প্রভু লোকেদের খুব কাছ থেকে ভালভাবে নিরীক্ষণ করেন।
5 প্রভু সৎ লোকদের খোঁজেন।
কিন্তু হিংসাশ্রয়ী বদ লোকদের পরিত্যাগ করেন।
6 মন্দ লোকদের ওপর তিনি জ্বলন্ত কয়লা ও গন্ধক বর্ষণ করবেন।
ঐসব মন্দ লোক উত্তপ্ত ও অগ্নিময় বাতাস ছাড়া আর কিছুই পাবে না।
7 কিন্তু প্রভু ভালো। যেসব লোক ভাল কাজ করে তিনি তাদের ভালোবাসেন।
সৎ লোকরা তাঁরই সঙ্গে থাকবে এবং তাঁকে দেখতে পাবে।
পরিচালকের প্রতি: শমীনীৎ সহযোগে দায়ূদের একটি গীত।
12 হে প্রভু, আমায় রক্ষা করুন!
ভালো লোকরা সবাই চলে গেছে।
প্রকৃত বিশ্বাসীদের এই পৃথিবীর লোকদের সঙ্গে রাখা হয় না।
2 লোকে তার প্রতিবেশীদের মিথ্যা কথা বলে।
প্রত্যেকটি লোক তার প্রতিবেশীকে তোষামোদ করে এবং ঠকাবার জন্য মিথ্যে কথা বলে।
3 যে ঠোঁট দিয়ে মানুষ মিথ্যা কথা বলে, সেই ঠোঁটগুলি প্রভুর কেটে ফেলা উচিৎ।
যে জিভ দিয়ে তারা বড় বড় গল্প বলেছে, প্রভুর সেই জিভগুলিও কেটে ফেলা উচিৎ।
4 সেই লোকেরা বলছে, “আমরা প্রকৃত পক্ষে মিথ্যা কথা বলবো এবং গুরুত্বপূর্ণ লোক হব।
আমরা জানি কি বলতে হবে,
তাই কেউই আমাদের মনিব হবে না।”
5 কিন্তু প্রভু বলছেন: “মন্দ লোকরা দুর্বলদের কাছ থেকে চুরি করেছে।
নিঃসহায় লোকদের জিনিষ ওরা নিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু এখন আমি নিজে দাঁড়িয়ে,
ঐসব ভারাক্রান্ত লোকদের রক্ষা করবো।”
6 প্রভুর কথাগুলি, জ্বলন্ত আগুনে গলানো রূপোর মত সত্য ও খাঁটি।
কথাগুলি সেই রূপোর মত খাঁটি
যাকে সাতবার গলিয়ে শুদ্ধ করা হয়েছে।
7 হে প্রভু, নিঃসহায় মানুষের দেখাশুনা করুন।
তাদের এখন এবং চিরদিনের জন্য রক্ষা করুন!
8 মন্দ লোকরা আমাদের চারদিকে রয়েছে।
তারা সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ লোকের মত ব্যবহার করে।
এদিকে মানুষের নির্লজ্জ কাজগুলি প্রশংসা পায়।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International