Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
রূত 2

রূৎ‌ ও বোয়সের পরিচয়

বৈৎ‌লেহমে একজন ধনী বাস করত। তার নাম বোয়স। ইলীমেলক পরিবারের অন্তর্গত নয়মীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বোয়স ছিল একজন।

এক দিন রূৎ‌ নয়মীকে বলল, “আমি ভাবছি, মাঠে মাঠে একটু ঘুরে বেড়াই। এমনি করেই হয়তো এক দিন এমন কাউকে পাব যে আমায় দয়া করবে, যে আমায় মাঠের পড়ে থাকা শস্যের দানা তুলে নিতে বলবে।”

নয়মী বলল, “আচ্ছা বাছা, যাও।”

রূৎ‌ মাঠের দিকে চলে গেল। যারা সেখানে শস্য কাটছে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরল। ক্ষেতের পড়ে থাকা শস্যগুলো সে সংগ্রহ করল।[a] ঘটনাক্রমে এরকম একটা মাঠের মালিক ছিল বোয়স। বোয়স ছিল ইলীমেলক পরিবারের একজন।

এক দিন বৈৎ‌লেহম থেকে বোয়স তার জমিতে চলে এলো। চাষীদের সে আদর ভালবাসা জানিয়ে বলল, “প্রভু তোমাদের সহায় হোন!”

চাষীরাও বলল, “প্রভু আপনার মঙ্গল করুন!”

বোয়সের একজন ভৃত্য চাষীদের কাজের তদারকি করছিল। রূতকে দেখতে পেয়ে বোয়স ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করল, “এ কাদের মেয়ে?”

ভৃত্যটি বলল, “মেয়েটি একজন মোয়াবী। সে নয়মীর সঙ্গে মোয়াব থেকে এসেছে। আজ খুব ভোরবেলা সে আমার কাছে আসে অনুমতি চাইতে যাতে চাষীদের পিছু পিছু ঘুরে মাঠ থেকে সে শস্য কুড়িয়ে নিতে পারে। সেই সকাল থেকে সে এই মাঠে রয়েছে। ঐ তো ওখানে তার বাড়ী।”

বোয়স তখন রূতকে বলল, “শোনো মেয়ে, তুমি এই ক্ষেতেই থেকে যাও এবং তোমার জন্য শস্য কুড়িয়ে নিও। অন্য কোথাও আর তোমাকে যেতে হবে না। আমার ক্ষেতের দাসীদের সঙ্গে সঙ্গে তুমি ঘুরবে। কোন্ কোন্ জমিতে তারা যাচ্ছে দেখবে, তাদের সঙ্গে থাকবে। যুবকদের আমি সাবধান করে দিচ্ছি, তারা যেন তোমায় বিরক্ত না করে। পিপাসা পেলে আমার লোকরা যে মগ ব্যবহার করে তুমিও তা ব্যবহার করতে পারো। বুঝলে?”

10 রূৎ‌ মাথা নীচু করে শ্রদ্ধা জানাল। সে বোয়সকে বলল, “আমার মতো একজন সামান্য মেয়েকেও আপনি লক্ষ্য করেছেন, এতে আমি খুবই অবাক হয়ে গেছি! যদিও আমি একজন অপরিচিত কিন্তু তবুও আপনি আমার প্রতি কত সদয়।”

11 বোয়স উত্তর দিল, “তোমার শাশুড়ি নয়মীকে তুমি কি রকম সেবা করেছ আমি সবই জানি। আমি জানি তোমার স্বামী মারা গেলেও তুমি তাকে কত সাহায্য করেছ। আর আমি এও জানি মাতাপিতা, নিজের দেশ সব কিছু ছেড়ে তুমি এখানে চলে এসেছ। এদেশের কাউকেই তুমি চেন না, তা সত্ত্বেও নয়মীর সঙ্গে তুমি এদেশে এসেছ। 12 তোমার সৎ‌ কাজের জন্য প্রভু তোমায় পুরস্কার দেবেন। তুমি যা কিছু করেছ তার জন্য প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাকে সম্পূর্ণভাবে পুরস্কৃত করবেন। তুমি সুরক্ষার জন্য তাঁর কাছে এসেছো, সুতরাং তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন।”

13 রূৎ‌ বলল, “আপনি আমাকে খুবই দয়া করেছেন। আমি তো একজন দাসী মাত্র, তাও আপনার দাসীদের মধ্যে কারও সমান নই। তবুও আপনি কত দরদের কথা বলেছেন, আমায় সান্ত্বনা দিয়েছেন।”

14 দুপুরের খাওয়ার সময় বোয়স রূতকে বলল, “এদিকে এসো! আমাদের রুটি থেকে তুমিও কয়েকটা খাও। সিরকায় তোমার রুটি ডুবিয়ে নাও।”

রূৎ‌ চাষীদের পাশে বসে গেল। বোয়স তাকে সেঁকা শস্য দিল। রূৎ‌ পেট ভরে খেল। কিছু খাবার পড়ে রইলো।

15 খাবার পর রূৎ‌ আবার কাজে মেতে উঠলো।

বোয়স ভৃত্যদের বলল, “শস্যের গাদার পাশ থেকেও রূতকে দানা কুড়িয়ে নিতে দিও। ওকে বাধা দিও না। 16 কিছু দানা ভরা শীষ তার জন্য ফেলে দিয়ে তার কাজটা বরং আরও সহজ করে দিও। হ্যাঁ তাকে শস্য কুড়োতে দিও, বাধা দিও না।”

নয়মী বোয়সের সম্বন্ধে শুনল

17 সন্ধ্যে পর্যন্ত রূৎ‌ মাঠে কাজকর্ম করত। কাজের পর ভুষি থেকে শস্যদানা বেছে আলাদা করে রাখত। সে প্রায় 1/2 বুশেল বার্লি পেত। 18 সে ঐ শস্যগুলি নিয়ে শহরে তার শাশুড়ীর কাছে যেত। তাছাড়া তাকে পাতের বাড়তি খাবারটাবারও খেতে দিত।

19 শাশুড়ী তাকে জিজ্ঞাসা করল, “এইসব শস্য কোত্থেকে পেলে? তুমি কোথায় কাজ করো? তোমার প্রতি যে সদয় হয়েছিল তার কল্যাণ হোক্।”

তখন রূৎ‌ কার কাছে কাজ করছে বলল। সে বলল, “যার কাছে কাজ করছি তার নাম বোয়স।”

20 নয়মী পুত্রবধূকে বলল, “প্রভু তাঁর মঙ্গল করুন। কি জীবিত, কি মৃত সকলের প্রতিই তাঁর দয়ার শেষ নেই।” তারপর সে রূতকে বলল, “বোয়স আমাদের আত্মীয়দের একজন। বোয়স আমাদের রক্ষাকর্তা।”[b]

21 রূৎ‌ বলল, “বোয়স আমাকে ফিরে আসতে বলেছে। বলেছে কাজ করে যেতে। বোয়স বলেছে ফসল কাটার কাজ শেষ হওয়া অবধি আমি যেন তার ভৃত্যদের সঙ্গে ভাল ভাবে কাজকর্ম করি।”

22 নয়মী উত্তর দিল, “বোয়সের ভৃত্য দাসীদের সঙ্গে কাজ করাটা তোমার পক্ষে ভাল। অন্য কোনো ক্ষেতে কাজ করলে হয়তো কোনো ছেলে তোমার গায়ে হাত দিত।” 23 অতএব রূৎ‌ বোয়সের দাসীদের বার্লি এবং গম কাটার সময় পর্যন্ত থেকে গেল। শাশুড়ীর সঙ্গে রূৎ‌ থেকে গেল।

প্রেরিত 27

রোমের পথে পৌলের যাত্রা

27 যখন ঠিক হল যে আমরা জাহাজে করে ইতালিতে যাব, তখন পৌল ও অন্য কিছু বন্দীকে রাজকীয় রক্ষীবাহিনীর সেনাপতি যুলিয়র হাতে তুলে দেওয়া হল। আমরা আদ্রামুত্তীয় থেকে আসা একটি জাহাজে উঠলাম; এই জাহাজটির এশিয়া উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। থিষলনীকীয় থেকে আরিষ্টার্খ নামে একজন মাকিদনিয়ান আমাদের সঙ্গে ছিলেন।

পরের দিন আমাদের জাহাজ সীদোনে পৌঁছল। যুলিয় পৌলের সঙ্গে বেশ ভাল ব্যবহার করলেন। তিনি পৌলকে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে যাবার অনুমতি দিলেন। সেই বন্ধুরা পৌলের প্রয়োজনীয় সামগ্রী যোগাতেন। সেখান থেকে আমরা জাহাজ খুলে সীদোন শহর ছেড়ে চললাম। প্রতিকূল বাতাসের জন্য কূপ্র দ্বীপের কাছাকাছি অঞ্চল দিয়ে চললাম আর কিলিকিয়ার ও পাম্ফুলিয়ার প্রদেশ ছেড়ে সমুদ্রপথে লুকিয়া প্রদেশের মুরা বন্দরে এলাম। সেখানে সেনাপতি ইতালিতে যাবার জন্য আলেকসান্দ্রীয়ায় এক জাহাজ দেখতে পেয়ে আমাদের সেই জাহাজে তুলে দিলেন।

বহুদিন ধরে আমরা খুব আস্তে আস্তে চললাম এবং বহুকষ্টে ক্লীদে এসে পৌঁছালাম। বাতাসের কারণে আমরা আর এগোতে পারলাম না, তাই সলমোনী বন্দরের উল্টো দিকে ক্রীতি দ্বীপের ধার ঘেঁসে চললাম। পরে বহুকষ্টে উপকূলের ধার ঘেঁসে চলতে চলতে লাসেয়া শহরের কাছে “সুন্দর” পোতাশ্রয়ে এসে পৌঁছালাম।

এইভাবে বহু সময় নষ্ট হল, আর জলযাত্রা তখন খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। এদিকে উপবাস পর্বের সময়ও চলে গেল। তাই পৌল তাদের সাবধান করে দিয়ে বললেন, 10 “মহাশয়রা, আমি দেখছি, এই যাত্রায় অনিষ্ট ও অনেক ক্ষতি হবে, তা যে কেবল মালের বা জাহাজের হবে তাই নয়, এমন কি আমাদের জীবনেরও ক্ষতি হবে।” 11 কিন্তু সেনাপতি পৌলের কথার চেয়ে জাহাজের কাপ্তেন ও তার মালিকের কথার গুরুত্ব দিলেন। 12 সেই বন্দরটি শীতকাল কাটাবার পক্ষে উপযুক্ত না হওয়াতে জাহাজের অধিকাংশ লোক একমত হলেন যেন জাহাজ খুলে যাত্রা শুরু করা হয় যাতে কোন রকমে ফৈনীকায় পৌঁছে সেখানে তারা শীতকালটা কাটাতে পারে। সেই স্থানটি ছিল দক্ষিণ পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম অভিমুখী ক্রীত দ্বীপের একটি বন্দর।

ঘুর্ণি ঝড়ের মধ্যে জাহাজ

13 আর যখন অনুকূল দক্ষিণা বাতাস বইতে শুরু করল তখন তাদের মনে হল তারা যা চাইছিল তা পেয়েছে, তাই তারা নোঙ্গর তুলে ক্রীতের ধার ঘেঁসে চলতে শুরু করল। 14 কিন্তু এর কিছু পরেই দ্বীপের ভেতর থেকে প্রচণ্ড এক ঘূর্ণি ঝড় উঠল, এই ঝড়কে “ঈশান বায়ু” বলে। 15 আমাদের জাহাজ সেই ঝড়ের মধ্যে পড়ল, ঝড় কাটিয়ে যেতে পারল না। তাই আমরা আমাদের জাহাজকে ভেসে যেতে দিলাম।

16 কৌদা নামে এক ছোট দ্বীপের আড়ালে চলার সময় জাহাজের সঙ্গে যে ছোট ডিঙিটা ছিল তা আমরা বহু কষ্টে টেনে তুলে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচালাম। 17 এটা তোলার পর লোকেরা জাহাজটাকে মোটা দড়ি দিয়ে ভাল করে বাঁধল। তারা ভয় করছিল যে জাহাজটি হয়তো সুর্ত্তীর চোরা বালিতে গিয়ে পড়তে পারে, তাই তারা পাল নামিয়ে নিয়ে জাহাজটাকে বাতাসের টানে চলতে দিল।

18 ঝড়ের প্রকোপ বাড়তে থাকায়, পর দিন খালাসীরা জাহাজের খোল থেকে ভারী ভারী মাল জলে ফেলে দিতে লাগল। 19 তৃতীয় দিনে তারা নিজেরাই হাতে করে জাহাজের কিছু সাজ-সরঞ্জাম জলে ফেলে দিল। 20 অনেক দিন যাবৎ যখন সূর্য কি নক্ষত্রের মুখ দেখা গেল না, আর ঝড়ও প্রচণ্ড উত্তাল হতে থাকল, তখন শেষ পর্যন্ত আমাদের বাঁচার আশা রইল না।

21 অনেক দিন ধরেই সকলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেছিল। তখন পৌল তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন, “মহাশয়রা, আমার কথা শুনে ক্রীতি থেকে জাহাজ না ছাড়া আপনাদের উচিত ছিল, তাহলে আজকের এই ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারতেন। 22 কিন্তু এখনও আমি বলছি, সাহস করুন, একথা জানবেন আপনাদের কারোর প্রাণহানি হবে না, শুধু জাহাজটি হারাতে হবে। 23 কারণ আমি যে ঈশ্বরের উপাসনা করি সেই ঈশ্বরের এক স্বর্গদূত গত রাত্রে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, 24 ‘পৌল ভয় পেও না! তোমাকে কৈসরের সামনে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। ঈশ্বর তোমার জন্য এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি তোমার সহযাত্রীদের প্রাণ রক্ষা করবেন।’ 25 তাই মহাশয়রা, আপনারা সাহস করুন, কারণ ঈশ্বরের ওপর আমার বিশ্বাস আছে যে আমাকে যা বলা হয়েছে ঠিক সেরকমই ঘটবে। 26 কিন্তু কোন দ্বীপে গিয়ে আমাদের আছড়ে পড়তে হবে।”

27 এইভাবে ঝড়ের মধ্যে চৌদ্দ রাত আদ্রিয়া সমুদ্রে ইতস্ততঃ ভাসমান অবস্থায় থাকার পর মাঝ রাতে নাবিকদের মনে হল যে জাহাজটি কোন ডাঙার দিকে এগিয়ে চলেছে। 28 সেখানে তারা জলের গভীরতা মাপলে দেখা গেল তা একশো কুড়ি ফুট। এর কিছু পরে আবার জল মাপলে জলের গভীরতা নব্বুই ফুটে দাঁড়াল। 29 তারা ভয় করতে লাগল যে জাহাজটি হয়তো কিনারে পাথরের গায়ে ধাক্কা খাবে। তাই নাবিকরা জাহাজের পেছন দিক থেকে চারটি নোঙর নামিয়ে দিল, প্রার্থনা করল যেন শীঘ্র ভোর হয়। 30 নাবিকদের মধ্যে কেউ কেউ জাহাজ ছেড়ে পালাবার মতলব করল, তাই নোঙর ফেলার আছিলায় জাহাজের মধ্য থেকে ডিঙিখানি নীচে নামিয়ে দিল। 31 কিন্তু পৌল সেনাপতি ও সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এই লোকরা যদি জাহাজে না থাকে তবে আপনারা রক্ষা পাবেন না।” 32 তখন সৈন্যরা ডিঙির দড়ি কেটে দিল, আর তা জলে গিয়ে পড়ল।

33 এরপর ভোর হয়ে এলে পৌল সকলকে কিছু খেয়ে নেবার জন্য অনুরোধ করে বললেন, “আজ 14 দিন হল আপনারা অপেক্ষা করে আছেন, কিছু না খেয়ে উপোস করে আছেন। 34 আমি আপনাদের অনুরোধ করছি কিছু খেয়ে নিন, বেঁচে থাকার জন্য এর প্রয়োজন আছে, কারণ আপনাদের কারোর একগাছি চুলেরও ক্ষতি হবে না।” 35 এই কথা বলে পৌল রুটি নিয়ে তাদের সকলের সামনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, আর তা ভেঙে খেতে শুরু করলেন। 36 তখন সকলে উৎসাহ পেয়ে খেতে শুরু করল। 37 (আমরা মোট 276 লোক জাহাজে ছিলাম।) 38 সকলে পরিতৃপ্তির সঙ্গে খাবার পর বাকী শস্য সমুদ্রে ফেলে দিয়ে জাহাজটি হাল্কা করা হল।

জাহাজ ধ্বংস হল

39 দিন হলে পর তারা সেই জায়গাটা চিনতে পারল না; কিন্তু এমন এক খাড়ি দেখতে পেল যার বড় বালুতট ছিল। তারা ঠিক করল যদি সম্ভব হয় তবে ঐ বালুতটের ওপরে জাহাজটা তুলে দেবে। 40 এই আশায় তারা নোঙ্গর কেটে দিল আর তা সমুদ্রেই পড়ে রইল। এরপর হালের বাঁধন খুলে দিয়ে বাতাসের সামনে পাল তুলে সেই বেলাভূমি লক্ষ্য করে এগিয়ে চলল। 41 কিন্তু একটু এগোতেই তারা বালিয়াড়িতে ধাক্কা পেল, জাহাজের সামনের দিকটা বালিতে বসে গিয়ে অচল হয়ে পড়ল, ফলে ঢেউয়ের আঘাতে পিছনের দিকটা ভেঙে যেতে লাগল।

42 তখন সৈন্যরা বন্দীদের হত্যা করবে বলে ঠিক করল, পাছে তাদের কেউ সাঁতার কেটে পালায়। 43 কিন্তু সেনাপতি পৌলকে বাঁচাবার আশায় তাদের এই কাজ করতে নিষেধ করলেন, হুকুম দিলেন যেন যারা সাঁতার জানে তারা ঝাঁপ দিয়ে আগে ডাঙ্গায় ওঠে। 44 বাকী সকলে যেন জাহাজের ভাঙ্গা তক্তা বা কোন কিছু ধরে কিনারে যেতে চেষ্টা করে। এইভাবে সকলেই নিরাপদে তীরে এসে পৌঁছলো।

যিরমিয় 37

যিরমিয়কে কারাগারে বন্দী করা হল

37 নবূখদ্‌রিৎসর ছিল বাবিলের রাজা। যিহোয়াকীমের পুত্র যিকনিয়ের পরিবর্তে সিদিকিয়কে যিহূদার রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিল নবূখদ্‌রিৎসর। সিদিকিয় ছিল রাজা যোশিয়ের পুত্র। কিন্তু সিদিকিয় ভাববাদী যিরমিয় মাধ্যমে প্রচারিত প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি। এবং সিদিকিয়ের ভৃত্যগণ ও যিহূদার লোকরাও প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি।

সিদিকিয় যিহূখল এবং যাজক সফনিয়কে যিরমিয়র কাছে পাঠিয়েছিল একটি বার্তা দিয়ে। যিহূখল ছিল শেলিমিয়ের পুত্র এবং সফনিয় ছিল মাসেয়ের পুত্র। বার্তাটি ছিল: “যিরমিয়, আমাদের জন্য প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো।”

সেই সময় যিরমিয়কে তখনও কারাগারে বন্দী করা হয়নি, তাই লোকদের মধ্যে যে কোন জায়গায় যেতে তার বাধা ছিল না। একই সময় ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে যিহূদার দিকে রওনা দিয়েছিল। এবং বাবিলের সৈন্যদল জেরুশালেমকে অধিকার করবার জন্য তাকে ঘিরে ফেলেছিল। কিন্তু যখন তারা শুনল ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে তখন তারা জেরুশালেম ত্যাগ করে মিশরের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আগুয়ান হয়েছিল।

ভাববাদী যিরমিয়র কাছে প্রভুর বার্তা এলো: “প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের ঈশ্বর যা বলেছেন তা হল: ‘যিহূখল ও সফনিয়, তোমাদের যে রাজা সিদিকিয় আমার কাছে পাঠিয়েছে তা আমি জানি। যাও সিদিকিয়র কাছে ফিরে গিয়ে বলো: ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে বাবিলের সৈন্যদের হাত থেকে তোমাদের বাঁচাতে এলেও তারা কিন্তু আবার মিশরেই ফিরে যাবে। তারপর বাবিলের সৈন্য আবার এখানে এসে জেরুশালেম আক্রমণ করবে। তখন বাবিলের সৈন্য জেরুশালেম দখল করে নেবে এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দেবে।’ প্রভু এরপর যা বললেন: ‘জেরুশালেমের লোকরা, তোমরা নিজেরাই নিজেদের বোকা বানিও না। নিজেদের একথা বলো না, “বাবিলের সৈন্যরা নিশ্চিত ভাবে আমাদের একলা ছেড়ে চলে যাবে।” তারা তা করবে না। 10 ওহে জেরুশালেমবাসী, তোমরা যদি বাবিলের সৈন্যদের যুদ্ধে পরাজিতও করতে পারতে তাহলেও তাদের তাঁবুতে কিছু আহত সৈনিক পড়ে থাকতো। এমনকি সেই আহত সৈনিকরাই উঠে এসে এই জেরুশালেম শহর পুড়িয়ে দিতে সক্ষম হতো।’”

11 বাবিলের সৈন্যরা যখন জেরুশালেম ত্যাগ করে মিশরের ফরৌণের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল তখন 12 বিন্যামীন দেশে[a] যাবার জন্য যিরমিয় জেরুশালেম ত্যাগ করল। সে এই শহরে ভ্রমণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। সে সেখানে যেতে চেয়েছিল পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ বাটোযারার জন্য। 13 কিন্তু যিরমিয় যখন জেরুশালেমের বিন্যামীন ফটকে পৌঁছেছিল তখনই তাকে ঐ ফটকের দায়িত্বে থাকা প্রধান রক্ষী গ্রেপ্তার করেছিল। সেই প্রধান রক্ষীর নাম ছিল যিরিয়। যিরিয় ছিল শেলিমিয়ের পুত্র এবং হনানিয়ের পৌত্র। যিরিয় যিরমিয়কে গ্রেপ্তার করার পর বলেছিল, “যিরমিয় তুমি আমাদের ত্যাগ করে বাবিলের পক্ষে যোগ দিতে যাচ্ছিলে।”

14 যিরমিয় যিরিয়কে বলেছিল, “তোমার অভিযোগ সত্যি নয়, আমি বাবিলের পক্ষে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম না।” কিন্তু যিরিয় যিরমিয়র সেই আপত্তি শুনতে অস্বীকার করেছিল এবং সে যিরমিয়কে গ্রেপ্তার করে রাজার সভাপরিষদদের সামনে এনে হাজির করেছিল। 15 ঐ সভাপরিষদরা যিরমিয়র প্রতি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। সভাসদরা যিরমিয়কে প্রহার করে কারাগারে বন্দী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যোনাথন নামক এক ব্যক্তির বাড়িটিকেই কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যোনাথন ছিল যিহূদার রাজার আজ্ঞাবাহী লেখক 16 যিরমিয়কে তারা সেই বাড়ির ভূগর্ভস্থ একটি অন্ধকার কারা কক্ষে বন্দী করে রেখেছিল। কক্ষটি ছিল মাটির নীচে। যিরমিয়কে সেখানে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছিল।

17 দীর্ঘদিন পর রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে তাঁর প্রাসাদে নিয়ে এসে একান্তে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রাজা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “প্রভুর আর কোন বার্তা আছে?”

যিরমিয় উত্তর দিয়ে বলেছিল, “হ্যাঁ, প্রভুর বার্তা হল, সিদিকিয় তোমাকে বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে।” 18 যিরমিয় এরপর রাজা সিদিকিয়কে বলেছিল, “আমার অন্যায়টা কি? আমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করবার মত কি এমন ভুল কাজ করেছি আপনার বিরুদ্ধে, আপনার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অথবা জেরুশালেমের লোকদের বিরুদ্ধে? 19 রাজা সিদিকিয় কোথায় এখন আপনার ভাববাদীরা? এই ভাববাদীরা আপনার কাছে ভুল বার্তা প্রচার করেছিল। তারা বলেছিল, ‘বাবিলের রাজা আপনাকে এবং ঐ দেশ যিহূদাকে আক্রমণ করবে না।’ 20 কিন্তু আমার প্রভু, যিহূদার রাজা এখন অনুগ্রহ করে আমার কথা শুনুন। আমাকে অনুগ্রহ করে অনুরোধ করতে দিন। এই হল আমার অনুরোধ: আমাকে আর এই লেখক যোনাথনের বাড়িতে কারাবন্দী করে রাখবেন না। যদি আপনি আবার আমাকে সেখানে পাঠান, আমি সেখানে মারা যাব।”

21 সুতরাং রাজা সিদিকিয় আদেশ দিয়েছিলেন যে, এবার থেকে যিরমিয়কে প্রহরীর পাহারায় মন্দির় চত্বরে বন্দী হয়ে থাকতে হবে এবং রাজার আদেশ ছিল যিরমিয়কে রুটি দেওয়া হবে রাস্তার হকারদের কাছ থেকে। শহরে যতদিন পর্যন্ত রুটি পাওয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত যিরমিয়কে রুটি দেওয়া হবে। তাই যিরমিয়কে উঠোনে রক্ষীর অধীনে রাখা হয়েছিল।

গীতসংহিতা 10

10 প্রভু, আপনি এত দূরে থাকেন কেন?
    সমস্যা জর্জরিত মানুষ আপনাকে দেখতে পায় না।
অহঙ্কারী এবং দুষ্ট লোকরা মন্দ ফন্দি আঁটছে
    এবং তারা দরিদ্র লোকেদের আঘাত করে।
মন্দ লোকরা যা চায় তার বড়াই করে।
    ঐসব লোভী লোকরা ঈশ্বরের নিন্দা করে।
    এইভাবেই মন্দ লোকেরা প্রকাশ করে যে তারা প্রভুকে ঘৃণা করে।
মন্দ লোকরা ঈশ্বরকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাম্ভিক।
    তারা রাশি রাশি মন্দ ফন্দি আঁটে।
    তারা এমন ভাব করে যেন ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই।
মন্দ লোকরা সর্বদাই কুটিল কাজকর্ম করে।
    এমনকি তারা ঈশ্বরের বিধিসকল ও মহান শিক্ষামালাকে লক্ষ্য করে না।[a]
    ঈশ্বরের শত্রুরা তাঁর শিক্ষামালাকে উপেক্ষা করে।
ঐসব লোকজন মনে করে, কোনদিন ওদের খারাপ কিছু হবে না।
    তারা বলে, “আমরা সব দিনই মজা করবো, আমাদের কোন শাস্তি হবে না।”
ঐসব লোকরা সর্বদা অভিশাপ দিচ্ছে।
    অন্যান্য লোকজন সম্পর্কে তারা সর্বদাই কটু ও মিথ্যা কথা বলে চলেছে।
    সর্বদাই তারা অহিতকর কাজ করার ফন্দি আঁটে।
ঐসব লোক অন্যান্য লোকদের ধরার জন্য গোপন স্থানে লুকিয়ে থাকে।
    তারা লুকিয়ে থাকে, মানুষকে আঘাত করার জন্য খুঁজতে থাকে।
    নির্দোষ লোকদের ওরা হত্যা করে।
মন্দ লোকরা সেই সব সিংহের মত
    যারা তাদের আহার্য পশুকে ধরার জন্য ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করতে থাকে।
তারা দরিদ্র লোকদের আক্রমণ করে।
    মন্দ লোকদের তৈরী ফাঁদে দরিদ্র লোকরা ধরা পড়ে।
10 ঐসব লোক হতভাগ্য ও বিড়ম্বিত মানুষকে
    বার বার আঘাত করে।
11 এই কারণে ভাগ্যহত লোকরা ভাবে, “ঈশ্বর আমাদের ভুলেই গেছেন
    আমাদের থেকে তিনি চিরদিনের জন্য বিমুখ হয়েছেন!
    আমাদের ওপর যা যা ঘটে চলেছে প্রভু তা দেখছেন না!”

12 প্রভু জেগে উঠুন এবং কিছু করুন!
    ঈশ্বর, ঐসব মন্দ লোককে শাস্তি দিন!
    ঐসব বঞ্চিত দরিদ্র লোকদের ভুলে যাবেন না!

13 মন্দ লোকরা কেন ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করে?
    কারণ তারা ভাবে, ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন না।
14 প্রভু, মন্দ লোকরা যে সব নির্দয় ও অহিতকর কাজ করে, নিশ্চয় আপনি তা দেখতে পান।
    ঐসবের দিকে দেখুন এবং কিছু করুন!
সমস্যাগ্রস্ত মানুষ আপনার সাহায্যের দিকে চেয়ে রয়েছে।
    হে প্রভু, আপনিই সেইজন যিনি অনাথদের সাহায্য করেন।
    অতএব তাদের সাহায্য করুন!

15 প্রভু, মন্দ লোকদের বিনাশ করুন।
16 প্রভু চিরকালের এবং অনন্তকালের রাজা।
    বিদেশী জাতিগুলি তাঁর দেশ থেকে অদৃশ্য হয়েছে।
17 হে প্রভু, দরিদ্র লোকরা কি চায় তা আপনি শুনেছেন।
    তাদের প্রার্থনা শুনুন এবং তারা যা চায় তাই করুন!
18 প্রভু পিতৃ-মাতৃহীন সন্তানদের রক্ষা করুন।
    দুঃখী লোকেদের অধিক যন্ত্রণার সম্মুখীন করবেন না।
    এমন করুন যেন মন্দ লোকরা এখানে থাকতে ভয় পায়।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International