Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ 14

শিম্‌শোনের বিবাহ

14 শিম্‌শোন তিম্না শহরের দিকে নেমে এল। সেখানে সে একজন পলেষ্টীয় নারীকে দেখতে পেল। বাড়ি ফিরে শিম্‌শোন তার পিতামাতাকে বলল, “আমি তিম্নায় একজন পলেষ্টীয় নারী দেখেছি। তোমরা তাকে আমার কাছে এনে দাও। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।”

তার পিতামাতা বলল, “তুমি তো ইস্রায়েলের একজন মেয়েকে বিয়ে করতে পারো। পলেষ্টীয়দের মেয়েকে বিয়ে করতে তোমার এত ইচ্ছে কেন? এসব লোকদের এমনকি সুন্নৎ পর্যন্ত হয় নি।” শিম্‌শোন এসব কথা শুনল না।

সে বলল, “ঐ মেয়েটিকেই আমার জন্য এনে দাও। তাকেই শুধু আমি চাই।” (শিম্‌শোনের পিতামাতা তো জানত না, এটাই ছিল প্রভুর অভিপ্রায়। তিনি কিভাবে পলেষ্টীয়দের শায়েস্তা করা যায় সেই রাস্তাই খুঁজছিলেন। সে সময় ইস্রায়েলে ওদেরই রাজত্ব ছিল।)

পিতামাতাকে নিয়ে শিম্‌শোন তিম্না শহরে নেমে এল। শহরের কাছাকাছি দ্রাক্ষার ক্ষেত পর্যন্ত তারা চলে এল। সেখানে হঠাৎ‌‌ একটা য়ুব সিংহ গর্জে উঠে শিম্‌শোনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রভুর আত্মা মহাশক্তিতে শিম্‌শোনের উপর নেমে এল। খালি হাতেই শিম্‌শোন সিংহটাকে ছিঁড়ে দু-টুকরো করে ফেলল। অনায়াসেই সে এটা করে ফেলল। একটা কচি পাঁঠাকে চিরে ফেলার মতই কাজটা যেন সহজ হয়ে গেল শিম্‌শোনের কাছে। কিন্তু শিম্‌শোন ঘটনাটি পিতামাতার কাছে বলল না।

শিম্‌শোন শহরে গিয়ে পলেষ্টীয় মেয়েটির সঙ্গে কথাবার্তা বলল। মেয়েটি তাকে খুশি করেছিল। কয়েকদিন পর শিম্‌শোন ফিরে এসে ঐ পলেষ্টীয় মেয়েকে বিয়ে করতে এলে পথে মৃত সিংহটিকে সে দেখল। মৃত সিংহটির গায়ে মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে বসে। কিছু মধুও হয়েছে। শিম্‌শোন হাতে কিছুটা মধু তুলে নিল। মধু খেতে খেতে সে হাঁটতে লাগল। পিতামাতার কাছে এসে সে তাদেরও একটু মধু দিল। তারা সেই মধু খেল। কিন্তু শিম্‌শোন বলল না, সেই মধু মরা সিংহের গা থেকে পাওয়া।

10 শিম্‌শোনের পিতা পলেষ্টীয় মেয়েটিকে দেখতে গেল। এটাই ছিল প্রথা যে বর সে একটা ভোজসভা করবে। সেই অনুযায়ী শিম্‌শোন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেল। 11 পলেষ্টীয় যখন দেখল শিম্‌শোন এরকম একটা ভোজের ব্যবস্থা করছে তখন তারা ওর কাছে 30 জন পলেষ্টীয়কে পাঠাল।

12 ঐ 30 জনকে শিম্‌শোন বলল, “আমি তোমাদের একটা ধাঁধা বলতে চাই। এই আনন্দ অনুষ্ঠান সাতদিন ধরে চলবে। এর মধ্যে তোমাদের এই ধাঁধার উত্তর দিতে হবে। উত্তর দিতে পারলে আমি তোমাদের 30টি জামা আর 30টি কাপড় দেবো। 13 কিন্তু উত্তর না দিতে পারলে তোমরা আমাকে 30টি জামা আর 30টি কাপড় দেবে।” ওরা বলল, “বল কি তোমার ধাঁধা, আমরা শুনব।”

14 শিম্‌শোন তখন এই ধাঁধাটা বলল:

“খাদকের মধ্য থেকে খাদ্য কিছু জোটে,
    বলবান হতে মিষ্টি কিছু ওঠে।”

30 জন লোক তিনদিন ধরে মাথা ঘামাল, কিন্তু উত্তর দিতে পারল না।

15 চতুর্থ দিনে তারা শিম্‌শোনের স্ত্রীর কাছে এসে বলল, “তোমরা কি আমাদের নিঃস্ব করার জন্য নেমন্তন্ন করেছ? তোমার স্বামীর কাছ থেকে কায়দা করে ধাঁধার উত্তরটা জেনে নাও। যদি উত্তর না জানতে পার তাহলে আমরা তোমাকে আর তোমার বাপের বাড়ির সবাইকে পুড়িয়ে মেরে ফেলবো।”

16 আর কোন উপায় না পেয়ে সে শিম্‌শোনের কাছে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। সে বলল, “তুমি তো আমায় শুধু ঘৃণাই করো! তুমি আমায় একটুও ভালবাস না! তুমি আমার দেশের লোকদের কাছে ধাঁধা বলেছ, কিন্তু কই আমাকে তো তুমি সেই ধাঁধার উত্তরটা বলো নি।” শিম্‌শোন উত্তর দিল, “আমার মাতাপিতাকেও যখন উত্তরটা বলি নি, তোমাকে বলতে যাব কেন?”

17 অনুষ্ঠানের বাকি দিনগুলোয় শিম্‌শোনের স্ত্রী কেঁদেই চলল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম দিনে শিম্‌শোন ধাঁধার উত্তরটি স্ত্রীকে বলেই ফেলল কারণ তার স্ত্রী এই নিয়ে তাকে বিরক্ত করছিল। তারপর তার স্ত্রী দেশের লোকদের কাছে সেই উত্তরটি বলে দিল।

18 সুতরাং সাত দিনের দিন সূর্যাস্তের আগে পলেষ্টীয়রা উত্তরটা পেয়ে গেল। শিম্‌শোনকে গিয়ে তারা বলল:

“মধুর চেয়ে মিষ্ট কি আছে?
    সিংহের চেয়ে বেশী শক্তিশালী কে?”

তখন শিম্‌শোন বলল:

“যদি তোমরা আমার গরু সঙ্গে নিয়ে না চাষ করতে
    তোমরা আমার ধাঁধার সমাধান করতেই পারতে না।”

19 শিম্‌শোন খুব রেগে গিয়েছিল। প্রভুর আত্মা প্রবল শক্তির সাথে তার ওপর নেমে এল। সে অস্কিলোন শহরে চলে গেল। সেখানে সে 30 জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করল। তাদের মৃতদেহ থেকে সে সমস্ত পোশাক তুলে নিল, ধন দৌলত সরিয়ে নিল। তারপর যারা তার ধাঁধার উত্তর দিয়েছিল, তাদের সে সব বিলিয়ে দিল। এরপর সে পিতার বাড়িতে চলে গেল। 20 স্ত্রীকে সে নিল না। বিয়ের জন্য একজন সেরা পাত্র তাকে ঘরে তুলেছিল।

প্রেরিত 18

করিন্থে পৌল

18 এরপর পৌল আথীনী ছেড়ে করিন্থে এলেন। সেখানে আক্কিলা নামে এক ইহুদীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়, তিনি ছিলেন পন্ত দেশের লোক। সম্প্রতি তিনি তাঁর স্ত্রী প্রিষ্কিল্লাকে নিয়ে ইতালী থেকে এসেছিলেন, কারণ ক্লৌদিয় সমস্ত ইহুদীদের রোম ছেড়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পৌল তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তাঁরা তাঁবু নির্মাণ করতেন যেমন পৌলও করতেন। এইজন্য তিনি তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে লাগলেন।

প্রতি বিশ্রামবারে পৌল সমাজ-গৃহে ইহুদী ও গ্রীকদের সঙ্গে কথা বলতেন। পৌল চেষ্টা করতেন যেন এইসব লোকরা যীশুতে বিশ্বাসী হয়। সীল ও তীমথিয় যখন মাকিদনিয়া থেকে করিন্থে এলেন, তখন পৌল সুসমাচার প্রচারের জন্য তাঁর সমস্ত সময় দিলেন। যীশুই যে ঈশ্বরের খ্রীষ্ট এই প্রমাণ তিনি ইহুদীদের দিচ্ছিলেন। কিন্তু ইহুদীরা পৌলের শিক্ষার বিরোধিতা করে তাঁকে গালাগাল দিতে লাগল। তখন তিনি তাঁর পোশাকের ধুলো ঝেড়ে তাদের বললেন, “তোমাদের যদি উদ্ধার না হয় তার জন্য তোমরা দায়ী। আমি দায়মুক্ত! এরপর আমি অইহুদীদের কাছে যাব!”

পৌল সেখান থেকে চলে গিয়ে সমাজ-গৃহের পাশে তিতিয় যুষ্ট নামে এক ঈশ্বরভক্ত অইহুদীর বাড়িতে উঠলেন; ইনি সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। সমাজ-গৃহের পরিচালক ক্রীষ্প ও তাঁর পরিবারের সকলে প্রভু যীশুতে বিশ্বাসী হল। করিন্থের আরো অনেকে পৌলের কথা শুনল, বিশ্বাস করল ও বাপ্তিস্ম নিল।

এক রাতে এক দর্শনে প্রভু পৌলকে বললেন, “ভয় পেয়ো না! কিন্তু কথা বলে যাও, চুপ করে থেকো না! 10 আমি তোমার সঙ্গে আছি; কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না, কারণ এই শহরে আমার লোকরা আছে।” 11 তাই পৌল সেখানে থেকে দেড় বছর ধরে তাদের ঈশ্বরের বাণী শিক্ষা দিলেন।

পৌলকে গাল্লিয়োর সামনে আনা হল

12 গাল্লিযো যখন আখায়ার রাজ্যপাল ছিলেন, তখন ইহুদীদের কিছু লোক জোট পাকিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে দাঁড়াল। তারা পৌলকে বিচারালয়ে নিয়ে হাজির করল। 13 এই ইহুদীরা গাল্লিযোকে বলল, “এই লোকটি আমাদের বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অন্য এক পদ্ধতিতে ঈশ্বরের উপাসনা করতে শিক্ষা দিচ্ছে!”

14 পৌল সেই সময় যখন কিছু বলতে যাচ্ছেন, তখন গাল্লিযো ইহুদীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “হে ইহুদীরা শোন! এ যদি কোন অপরাধ বা মারাত্মক রকম অন্যায় কোন কাজ করত তবে তোমাদের কথা শোনা আমার পক্ষে যুক্তিযুক্ত হত। 15 কিন্তু তোমরা যখন কোন ব্যক্তির নাম, তার বাণী বা তোমাদের বিধি-ব্যবস্থার বিষয়ে বিচারের প্রশ্ন তুলছ, তখন তোমরাই এর বিচার কর, আমি ওসব বিষয়ের বিচারকর্তা হতে চাই না!” 16 এই বলে তিনি তাদের সকলকে বিচারালয় থেকে যেতে বললেন।

17 তখন তারা সমাজ-গৃহে পরিচালক সোস্থিনীকে ধরে বিচারালয়ের সামনে প্রচণ্ড মারল; কিন্তু গাল্লিযো সে বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ করলেন না।

পৌলের আন্তিয়খিয়ায় প্রত্যাবর্তন

18 পৌল সেই শহরে আরো কিছুদিন থাকার পর ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সমুদ্র পথে সুরিয়ার দিকে রওনা দিলেন। তাঁর সঙ্গে আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লাও ছিল। এক মানত পুরণ করতে পৌল কিংক্রিয়াতে এসে মাথা কামিয়ে ফেললেন। 19 সেখান থেকে তাঁরা ইফিষে পৌঁছালেন। প্রিষ্কিল্লা ও আক্কিলাকে সেখানে রেখে পৌল সমাজ-গৃহে গেলেন আর ইহুদীদের সঙ্গে শাস্ত্র আলোচনা করতে লাগলেন। 20 তারা সেখানে তাঁকে আরো কিছুদিন থাকার জন্য অনুরোধ করল বটে কিন্তু তিনি তাতে রাজী হলেন না। 21 সেখান থেকে যাবার সময় তিনি তাদের বললেন, “ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে আমি আবার তোমাদের কাছে আসব।” এরপর তিনি ইফিষ থেকে সমুদ্র যাত্রা করলেন।

22 তিনি কৈসরিয়া শহরে পৌঁছলেন। এরপর জেরুশালেমে সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা জানাবার পর পৌল সেখান থেকে আন্তিয়খিয়া শহরে গেলেন। 23 আন্তিয়খিয়ায় পৌল কিছু সময় থাকলেন। তারপর আন্তিয়খিয়া ছেড়ে গালাতিয়া ও ফরুগিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করে সেইসব স্থানের অনুগামীদের নতুন শক্তি জাগিয়ে তুললেন।

ইফিষে ও আখায়াতে আপল্লো

24 আপল্লো নামে একজন ইহুদী ইফিষে এলেন, ইনি আলেকসান্দ্রীয় নগরে জন্মেছিলেন। তিনি শিক্ষিত মানুষ ছিলেন এবং শাস্ত্র খুব ভাল করে জানতেন। 25 আপল্লো প্রভুর পথের বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি আত্মার আবেগে কথা বলতেন এবং যীশুর বিষয়ে নির্ভুলভাবে শিক্ষা দিতেন, কিন্তু তিনি কেবল যোহনের বাপ্তিস্মের বিষয়েই জানতেন। 26 আপল্লো যখন সমাজ-গৃহে নির্ভীকভাবে প্রচার করছিলেন, সেই সময় প্রিষ্কিল্লা ও আক্কিলা তাঁর কথা শুনে তাঁকে একান্তে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঈশ্বরের পথের বিষয়ে আরো নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দিলেন।

27 আপল্লো আখায়াতে যেতে চাইলে খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ভাইরা তাঁকে সে বিষয়ে উৎসাহ দিলেন। তাঁরা আখায়ার খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের চিঠি লিখে দিলেন যেন তাঁরা আপল্লোকে সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে পৌঁছালে যারা অনুগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বাসী হয়েছিল, আপল্লো তাদের অনেককে সাহায্য করলেন। 28 তিনি প্রকাশ্য বিতর্ক সভায় দৃঢ়তার সঙ্গে ইহুদীদের হারিয়ে দিলেন এবং শাস্ত্র থেকে প্রমাণ করলেন যে, যীশুই হলেন সেই খ্রীষ্ট।

যিরমিয় 27

প্রভু নবূখদ্‌রিৎসরকে শাসক বানিয়েছিলেন

27 যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের শাসনকালে যিরমিয়র কাছে প্রভুর একটি বার্তা এলো। যোশিয়ের পুত্র সিদিকিয়ের রাজত্ব কালের চতুর্থ বছরে এই বার্তা এসেছিল। প্রভু আমাকে যা বলেছিলেন তা হল এই: “যিরমিয় একটি জোয়াল তৈরী করো এবং সেই জোয়ালটিকে তোমার কাঁধের ওপর স্থাপন কর। তারপর ইদোম, মোয়াব, অম্মোন, সোর এবং সীদোনের রাজাদের কাছে খবর পাঠিয়ে দাও। এইসব বার্তাগুলি দূতদের মারফৎ সব রাজাদের কাছে পাঠিয়ে দাও, যারা যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে জেরুশালেমে দেখতে এসেছিল। এই বার্তাবাহকদের বলো তাদের মনিবকে গিয়ে বলতে প্রভু সর্বশক্তিমান ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন: ‘তোমাদের মনিবকে গিয়ে বলো আমি এই পৃথিবী এবং তার মানুষদের সৃষ্টি করেছি। এই পৃথিবীর সমস্ত পশু পাখীও আমার সৃষ্টি। আমি আমার শক্তি এবং শক্তিশালী বাহু দিয়ে তা সৃষ্টি করেছি। আমি যাকে খুশী এই পৃথিবী দিয়ে দিতে পারি। এখন আমি পৃথিবীর সমস্ত দেশ বাবিলের রাজা নবূখদ্‌রিৎসরকে দিয়ে দিলাম। সে হল আমার অনুচর। সমস্ত বন্য জন্তুদেরও আমি তাকে মান্য করতে বাধ্য করবো। সবগুলো জাতি নবূখদ্‌রিৎসর তাঁর পুত্র এবং তাঁর পৌত্রদের সেবা করবে। তারপর বাবিলের পরাজয় ঘটবে। অনেক রাষ্ট্রের মহান রাজারা মিলে বাবিলকে তাঁদের দাসে পরিণত করবেন।

“‘কিন্তু কয়েকটি দেশ হয়ত বাবিলের রাজা নবূখদ্‌রিৎসরের সেবা করতে অস্বীকার করবে। তারা তার জোয়াল টানতে অস্বীকার করবে। যদি তা হয় তাহলে আমি ঐ দেশগুলিকে শাস্তি দেব। তারা সইবে তরবারির আঘাত, অনাহার এবং মহামারীর যন্ত্রণা।’” এই হল প্রভুর বার্তা। “‘যতক্ষণ না দেশগুলি ধ্বংস হয় ততক্ষণ আমি ঐ শাস্তি বহাল রাখব। আমি নবূখদ্‌রিৎসরকে দিয়ে যুদ্ধ করিয়ে ঐ জাতিগুলিকে ধ্বংস করাবো। সুতরাং তোমরা ভাববাদীদের কথা শুনবে না। শুনবে না সমস্ত লোকদের কথা যারা ভোজবাজি দেখিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে। যারা স্বপ্ন ব্যাখ্যা করতে পারে বলে দাবী করে তাদের কথা শুনো না। যারা মৃতদের সঙ্গে কথা বলে অথবা যাদু কৌশল করে তাদের কথা শুনো না। তারা প্রত্যেকে বলবে, “বাবিলের রাজার দাসত্ব তোমাদের করতে হবে না।” 10 কিন্তু তারা তোমাদের মিথ্যে বলবে। তারাই তোমাদের দেশত্যাগী হবার কারণ হবে। আমি তোমাদের জোর করে মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য করাবো এবং তোমরা বিদেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করবে।

11 “‘কিন্তু দেশগুলোর সমস্ত লোকরা যারা বাবিলের রাজার কাছে আত্মসমর্পন করবে, তাকে সেবা করতে রাজী হবে এবং তার জোয়ালে নিজেদের গলা দেবে, তারা বাঁচবে। আমি সেই লোকদের তাদের স্বদেশে বাস করতে দেব এবং তাদের জমি চাষ করতে দেব।’” এই হল প্রভুর বার্তা।

12 আমি যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের কাছেও এই বার্তা পাঠিয়েছি। আমি তাকে বলেছি, “তোমাকে জোয়ালের নীচে কাঁধ রাখতে হবে। তোমাকে বাবিলের রাজাকে সেবা করতে হবে ও তার বাধ্য হতে হবে। যদি তুমি বাবিলের রাজা ও লোকদের সেবা করো তাহলে জীবিত থাকবে। 13 আর যদি তুমি রাজি না হও তাহলে তুমি ও তোমার দেশের মানুষ মারা যাবে শত্রুর তরবারির আঘাতে অথবা অনাহার ও মহামারীর দাপটে। প্রভু উল্লেখ করেছিলেন যে যারা বাবিলের রাজাকে মানতে অস্বীকার করবে সেই দেশে এগুলি ঘটবে। 14 কিন্তু ভ্রান্ত ভাববাদীরা বলতে থাকলো: ‘তোমরা কখনও বাবিলের রাজার দাস হবে না।’

“ঐ কপট ভাববাদীদের মিথ্যে প্রচারে কান দিও না। 15 ‘আমি তাদের পাঠাই নি,’ প্রভু এই কথা বলেন। ‘তারা মিথ্যে বলছে এবং বলছে যে এই বার্তাগুলি আমার কাছে থেকে এসেছে। তাই, যিহূদার লোকরা, আমি তোমাদের দূরে পাঠিয়ে দেব। তোমাদের মৃত্যু ঘটবে এবং ঐ মিথ্যুক ভাববাদীদেরও মৃত্যু ঘটবে।’”

16 তখন আমি (যিরমিয়) যাজক এবং সাধারণ লোকেদের বলেছিলাম যে প্রভু বলেছেন: “ঐ কপট ভাববাদীরা বলে বেড়াচ্ছে, ‘বাবিলের লোকেরা প্রভুর মন্দির থেকে অনেক কিছু নিয়ে গিয়েছে। ঐ জিনিসগুলি খুব শীঘ্রই নিয়ে আসা হবে।’ ঐ ভাববাদীদের কথায় তোমরা কান দিও না। কারণ তারা মিথ্যা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। 17 ঐ ভাববাদীদের কথা শুনো না। বাবিলের রাজার সেবা কর তাহলে তোমরা বেঁচে থাকবে। জেরুশালেমের শহর কেন ধ্বংস হবে এবং কেন শূন্য হয়ে যাবে? 18 যদি ঐ মানুষগুলোই ভাববাদী হয় এবং তারাই যদি প্রভুর বার্তা পেয়ে থাকে তাহলে তাদেরই প্রার্থনা করতে দাও। প্রভুর মন্দিরের বাদবাকী জিনিষগুলির সম্বন্ধে তারা প্রার্থনা করুক। তারা প্রার্থনা করুক যে মন্দিরের, জেরুশালেম শহরের এবং প্রাসাদের জিনিষপত্র বাবিলে বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না। ঐ ভাববাদীদের প্রার্থনা করতে দাও যাতে আর কোন জিনিষ তার জন্য বাবিলে নিয়ে যাওয়া না হয়।”

19 “প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন যে, জেরুশালেমের মন্দিরে কিছু জিনিষপত্র আছে: পড়ে থাকা জিনিষগুলির মধ্যে আছে স্তম্ভগুলো, পিতলের সমুদ্র, অস্থাবর দণ্ডসমূহ এবং অন্যান্য জিনিষপত্র। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌রিৎসর ওগুলি আর নিয়ে যায় নি তাই রয়ে গিয়েছে। 20 যিহূদার রাজা যিকনিয়কে যখন বাবিলের রাজা নবূখদ্‌রিৎসর বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল তখন সে আর ঐ জিনিসগুলো নিয়ে যায় নি। যিকনিয় ছিল যিহোয়াকীমের পুত্র, নবূখদ্‌রিৎসর যিহূদা এবং জেরুশালেমের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। 21 সর্বশক্তিমান প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেন যে প্রভুর মন্দিরে, রাজপ্রাসাদে এবং জেরুশালেমে পড়ে থাকা জিনিসপত্র বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে। 22 ‘যতদিন না সেই দিনটি আসে যেদিন আমি যাব এবং সেগুলি নিয়ে আসব ততদিন পর্যন্ত এইসব জিনিষগুলি বাবিলে থাকবে।’”

মার্ক 13

ভবিষ্যতে মন্দিরের বিনাশ

(মথি 24:1-25; লূক 21:5-24)

13 যীশু যখন মন্দির ছেড়ে যাচ্ছেন, সেই সময় শিষ্যদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “হে গুরু, দেখুন কত চমৎ‌‌কার বিশাল বিশাল পাথর ও কত সুন্দর দালান।”

তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি এইসব বড় বড় দালান দেখছ? এর একটাও পাথর আর একটা পাথরের ওপরে থাকবে না; সবই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।”

পরে তিনি মন্দিরের সামনে জৈতুন পর্বতমালায় বসলে, পিতর, যাকোব, যোহন এবং আন্দ্রিয় তাঁকে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাদের বলুন দেখি, এই সমস্ত ঘটনা কখন ঘটবে? আর কি চিহ্ন দেখেই বা বুঝতে পারব যে এই সমস্ত ঘটনা ঘটতে চলেছে?”

তখন যীশু তাঁদের বলতে লাগলেন, “সতর্ক থেকো, কেউ যেন তোমাদের না ভোলায়। সেদিন অনেকে আমার নাম নিয়ে আসবে এবং বলবে, ‘আমিই তিনি’ এবং তারা আরও অনেকের মন ভোলাবে। কিন্তু তোমরা যখন যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনবে, তখন অস্থির হয়ো না; এটা ঘটবেই, কিন্তু তখনও শেষ নয়। কারণ জাতির বিরুদ্ধে জাতি এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে রাজ্য জেগে উঠবে। স্থানে স্থানে ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ হবে। এসব কেবল জন্ম যন্ত্রণার আরম্ভ মাত্র।

“তোমরা নিজেদের ব্যাপারে সাবধান! লোকে তোমাদের আদালতে হাজির করবে এবং সমাজগৃহের মধ্যে তোমাদের ধরে মারবে। আমার জন্য তোমরা দেশের শাসনকর্তা ও রাজাদের কাছে সাক্ষী দেবার জন্য তাদের সামনে দাঁড়াবে। 10 আর সব কিছু শেষ হবার আগে সমস্ত জাতির কাছে সুসমাচার প্রচার করা হবে। 11 কিন্তু লোকে যখন তোমাদের গ্রেপ্তার করে বিচার সভায় নিয়ে যাবে তখন তাদের সামনে কি বলবে তা আগে থেকে ভেবো না, বরং সেই সময়ে পবিত্র আত্মা যা বলতে বলবেন তাই বলবে। কারণ তোমরাই যে কথা বলবে তা নয়, পবিত্র আত্মাই তোমাদের মধ্যে দিয়ে কথা বলবেন।

12 “তখন ভাই ভাইকে ও বাবা সন্তানকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেবে এবং সন্তানরা বাবা-মার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাদের হত্যার জন্য ধরিয়ে দেবে। 13 আর আমার নামের জন্য সকলে তোমাদের ঘৃণা করবে। কিন্তু যে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সেই রক্ষা পাবে।

14 “যখন তোমরা দেখবে, ‘ধ্বংসের সেই ঘৃণার বস্তু যেখানে দাঁড়াবার নয় সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।’[a] পাঠকের বোঝা উচিৎ এর অর্থ কি, তখন যারা যিহূদিয়াতে থাকে তারা পাহাড়ে পালিয়ে যাক। 15 এবং কেউ যদি ছাদে থাকে, সে যেন বাড়ি থেকে কোন কিছু নেবার জন্য নীচে না নামে বা ঘরে না ঢোকে। 16 কেউ যদি মাঠে থাকে, সে যেন জামাকাপড় নেবার জন্য ফিরে না যায়।

17 “হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী বা যাদের কোলে শিশু থাকবে তাদের কত কষ্ট! 18 আর প্রার্থনা কর যেন এটা শীতকালে না ঘটে, 19 কারণ সেই সময় হবে বড়ই কষ্টের সময়। তেমনটি প্রথম যখন ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তখন থেকে এখন পর্যন্ত কখনই হয় নি আর কখনও হবেও না। 20 আর প্রভু যদি সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে না দিতেন, তবে কোন প্রাণই রক্ষা পেত না। কিন্তু তিনি যাদের মনোনীত করেছেন, সেই মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন।

21 “কেউ যদি তখন তোমাদের বলে, ‘দেখ, খ্রীষ্ট এখানে বা ওখানে আছেন, তোমরা বিশ্বাস কোরো না। 22 কারণ ভণ্ড খ্রীষ্টেরা এবং ভাববাদীরা উঠবে এবং নানা চিহ্ন ও অলৌকিক কাজ করে দেখাবে, এমন কি সম্ভব হলে মনোনীত লোকদেরও ভোলাবে। 23 কিন্তু তোমরা সাবধান থেকো। আমি তোমাদের আগেই সমস্ত কিছু বলে দিলাম।

24 “কিন্তু সেই সময়, সেই কষ্টের শেষে,

‘সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে
    এবং চাঁদ আর আলো দেবে না।
25 আকাশ থেকে তারা খসে পড়বে,
    আকাশের সমস্ত শক্তি বিচলিত হবে।’[b]

26 “তখন লোকেরা দেখবে, মানবপুত্র মহামহিমায় ও পরাক্রমের সঙ্গে মেঘরথে আসছেন। 27 তখন মানবপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আকাশের অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চারি বায়ু থেকে তাঁর মনোনীত লোকদের সংগ্রহ করবেন।

28 “ডুমুর গাছ থেকে এই দৃষ্টান্ত শেখো; যখন তার শাখা-প্রশাখা কোমল হয়ে পাতা দেখা দেয়, তখন তোমরা জানতে পার গরম কাল এসে গেল। 29 ঠিক তেমনি ঐ সমস্ত ঘটনা ঘটতে দেখলেই তোমরা বুঝতে পারবে যে সময়[c] খুব কাছে, এমনকি দরজার সামনে। 30 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সমস্ত ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত এই প্রজন্মের শেষ হবে না। 31 আকাশ এবং পৃথিবীর লোপ হবে, কিন্তু আমার কথা লোপ কখনও হবে না।

32 “সেই দিনের বা সেই সময়ের কথা কেউ জানে না; স্বর্গদূতরাও নয়, মানবপুত্রও নয়, কেবলমাত্র পিতাই জানেন। 33 সাবধান! তোমরা সতর্ক থেকো। কারণ কখন যে সেই সময় হবে তোমরা তা জানো না।

34 “সেই দিনটা এমনভাবেই আসবে যেমন কোন লোক নিজের বাড়ি ছেড়ে বিদেশে বেড়াতে যায় এবং তার চাকরদের দায়িত্ব দিয়ে প্রত্যেকের কাজ ঠিক করে দেয় আর দ্বাররক্ষককে সজাগ থাকতে বলে। 35 তাই তোমরা সতর্ক থাকবে, কারণ তোমরা জান না কখন বাড়ির মালিক আসবেন, সন্ধ্যাবেলায়, কি মাঝরাতে, কুকড়া ডাকের সময় কি ভোরবেলায়। 36 হঠাৎ‌ তিনি এসে যেন না দেখেন যে তোমরা ঘুমিয়ে রয়েছ। 37 আমি তোমাদের যা বলছি, তা সবাইকে বলি, ‘সজাগ থেকো।’”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International