M’Cheyne Bible Reading Plan
অবীমেলক রাজা হলেন
9 অবীমেলক হলেন যিরুব্বালের পুত্র। শিখিম শহরে তাঁর কাকা জ্যাঠারা বাস করতেন। সেখানে অবীমেলক চলে গেলেন। তাঁদের এবং মামার বাড়ির সকলের কাছে তিনি বললেন, 2 “এ কথাটা তোমরা শিখিম শহরে নেতাদের জিজ্ঞাসা কর: ‘যিরুব্বালের 70 জন পুত্রের শাসন ভাল না একজন লোকের শাসন ভাল? মনে রেখো আমি তোমাদের আত্মীয়।’”
3 অবীমেলকের কাকা শিখিমের নেতাদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। নেতারা অবীমেলককে অনুসরণ করা স্থির করল। নেতারা বলল, “যতই হোক্, অবীমেলক আমাদের ভাই।” 4 তারা তাকে 70 খানা রূপোর খণ্ড দান করল। তারা বাল-বরীতের মন্দির থেকে এইসব রূপো এনেছিল। সেই রূপো দিয়ে অবীমেলক কিছু লোক ভাড়া করলেন। এই লোকগুলো ছিল অপদার্থ, বেপরোয়া ধরণের। অবীমেলক যেখানেই যেতেন তারাও তার সঙ্গে সঙ্গে যেত।
5 অবীমেলক অফ্রায় তাঁর পিতার বাড়ীতে গিয়ে ভাইদের হত্যা করলেন। গিদিয়োনের 70 জন পুত্রকে তিনি একসঙ্গে হত্যা করলেন। কিন্তু যিরুব্বালের ছোট ছেলেটি লুকিয়ে ছিল। সে পালিয়ে গেল। তার নাম যোথম।
6 তারপর শিখিমের নেতারা আর মিল্লোর লোকরা সব একত্র হয়ে শিখিমে একটি বিরাট গাছের নীচে অবীমেলককে রাজা হিসাবে মেনে নিল।
যোথমের কাহিনী
7 যোথম শুনতে পেল যে শিখিমের নেতারা অবীমেলককে রাজা করেছে। তারপর সে গরিষীম পর্বতের মাথায় উঠে গিয়ে চিৎকার করে এই গল্পটি বলতে লাগল:
“শোনো, শিখিমের যত নেতারা শোনো। শোনার পরেই তোমাদের কথা ঈশ্বর শুনবেন।
8 “একদা বনের সমস্ত গাছপালা ভাবল জলপাই গাছ হোক্ না তাদের রাজা। সেই মতো তারা জলপাই গাছকে বলল, ‘তুমি আমাদের ওপর রাজত্ব কর।’
9 “জলপাই গাছ বলল, ‘দেখো, মানুষ, দেবতা সবাই আমার তেলের জন্য আমাকে প্রশংসা করে। তোমরা কি চাও আমি তেলের প্রস্তুতি বন্ধ করে দিই এবং অন্য গাছদের শাসন করি?’
10 “গাছরা তখন ডুমুর গাছকে বলল, ‘হও না তুমি আমাদের রাজা।’
11 “ডুমুর গাছটি বলল, ‘আমি কি ডুমুর ও মিষ্ট ফল ফলান বন্ধ করে শুধুই অন্য গাছদের ওপর শাসন করব?’
12 “তারপর তারা দ্রাক্ষালতার কাছে গিয়ে বলল, ‘দ্রাক্ষালতা, আমাদের রাজা হও।’
13 “দ্রাক্ষালতা বলল, ‘সকলেই আমার রসের গুনে খুশি। সে মানুষই হোক্ অথবা ঈশ্বর। তোমরা কি চাও আমি রসের জোগান বন্ধ করে অন্য গাছদের শাসন করি?’
14 “অবশেষে তারা কাঁটা ঝোপঝাড়ে গিয়ে বলল, ‘আমরা তোমাকে রাজা করব।’
15 “তখন কাঁটাগাছ তাদের বলল, ‘সত্যিই যদি তোমরা আমাকে তোমাদের রাজা কর, তবে চলে এসো আমার ছায়ায়, আশ্রয় নাও এখানে। তোমরা যদি তা না করো কাঁটাঝোপ থেকে দাউদাউ করে আগুন বেরোবে। এটা লিবানোনের এরস গাছগুলিকে পুড়িয়ে দেবে।’
16 “এখন সত্যিই যদি তোমরা মনে প্রাণে অবীমেলককে রাজা করো, তাহলে তাকে নিয়ে সুখে থাকো। আর যদি তোমরা যিরুব্বাল ও তার পরিবারের প্রতি সুবিচার করেছ বলে মনে কর সে তো ভালই। 17 কিন্তু একবার ভেবে দেখো, আমার পিতা তোমাদের জন্য কি করেছিলেন। তিনি তোমাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। মিদিয়নের হাত থেকে তোমাদের বাঁচানোর জন্য তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করেছিলেন। 18 কিন্তু আজ তোমরা আমার পিতার পরিবারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছ। তোমরা তাঁর 70 জন পুত্রকে একসঙ্গে হত্যা করেছ। তোমরা অবীমেলককে তোমাদের রাজা করেছ। তোমরা তাকে রাজা করেছ কারণ সে তোমাদের আত্মীয়। কিন্তু সে আমার পিতার ক্রীতদাসীর পুত্র, এছাড়া আর কিছু নয়। 19 তাই বলছি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি সত্যিই যদি তোমরা যথার্থ ব্যবহার করে থাকো, তাহলে অবীমেলককে রাজা হিসেবে পেয়ে তোমরা সুখী হও। সেও তোমাদের নিয়ে সুখী হোক্। 20 কিন্তু যদি তোমরা তার সঙ্গে যথার্থ ব্যবহার না করে থাকো তাহলে হে শিখিমের নেতারা, মিল্লোর লোকরা তোমাদের ধ্বংস করবে। সেই সঙ্গে অবীমেলক নিজেও ধ্বংস হবে।”
21 এই বলে যোথম বের নগরে পালিয়ে গেল। সেখানে সে থাকতে লাগল, কারণ সে তার ভাই অবীমেলককে ভয় করত।
শিখিমের সঙ্গে অবীমেলকের যুদ্ধ
22 অবীমেলক তিন বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন। 23-24 অবীমেলক যিরুব্বালের 70 জন পুত্রকে হত্যা করেছিলেন। তারা সকলেই ছিল অবীমেলকের নিজের ভাই। শিখিমের নেতারা তার এই অন্যায় কাজ সমর্থণ করেছিল। সেইজন্য ঈশ্বর অবীমেলক ও শিখিমের নেতাদের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে দিলেন। শিখিমের নেতারা কিভাবে অবীমেলককে জখম করা যায় তার মতলব করছিল। 25 তারা আর অবীমেলককে চাইছিল না। পাহাড়ের মাথায় তারা লোকদের দাঁড় করিয়ে দিল। যারা ঐ পথ দিয়ে যেত তাদের ওপর চড়াও হয়ে ঐসব লোক সব কিছু কেড়ে নিত। অবীমেলক ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন।
26 এরদের পুত্র গাল তার ভাইদের সঙ্গে নিয়ে শিখিম শহরে উঠে গেলো। সেখানকার নেতারা ঠিক করলো, তারা গালকেই বিশ্বাস করবে এবং মেনে নেবে।
27 একদিন শিখিমের লোকরা ক্ষেত থেকে দ্রাক্ষা তুলতে গেল। দ্রাক্ষা নিংড়ে তারা দ্রাক্ষারস তৈরি করল। তারপর তারা তাদের দেবতার মন্দিরে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। সেখানে তারা দ্রাক্ষারস পান করে অবীমেলককে খুব গালমন্দ করতে লাগল।
28 এবদের পুত্র গাল বলল, “আমরা সবাই শিখিমের লোক। আমরা কেন অবীমেলককে মানব? নিজেকে সে কি মনে করে? অবীমেলক যিরুব্বালের পুত্রদের মধ্যে একজন? আর সে সবূলকে করেছে তার মন্ত্রী, ঠিক কিনা? আমরা অবীমেলককে মানছি না, মানব না। আমরা আমাদের নিজেদের লোককেই মানবো। আমরা শিখিমের পিতা হমোরের লোকদের মানব। কারণ তারা আমাদের নিজের লোক। 29 তোমরা যদি আমাকে সেনাপতি বলে স্বীকার করো তাহলে আমি অবীমেলককে পরাজিত করব। আমি ওকে বলব, ‘সৈন্য সাজাও এসো, যুদ্ধ করো।’”
30 শিখিমের শাসনকর্তা হল সবূল। এবদের পুত্র গালের কথা সবূল সব শুনল। শুনে সে খুব রেগে গেলো। 31 সে অরুমা শহরে অবীমেলকের কাছে বার্তাবাহক পাঠাল। বার্তাটি ছিল এরকম:
“এবদের পুত্র গাল তার ভাইদের নিয়ে শিখিম শহরে চলে এসেছে। তারা আপনার সঙ্গে একটা ঝগড়া বাধাতে চায়। গাল সারা শহরকে আপনার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে। 32 তাই আজ রাত্রেই আপনি অবশ্যই আপনার লোকদের নিয়ে শহরের বাইরে মাঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকবেন। 33 তারপর সকালে রোদ উঠলেই শহর আক্রমণ করবেন। গাল তার দলবল নিয়ে আপনার সঙ্গে লড়াই করতে এলে যা করবার করবেন।”
34 একথা শোনার পর অবীমেলক তাঁর সৈন্যদলসহ রাত্রে উঠে শহরের দিকে রওনা হলেন। সৈন্যরা চারটে দলে ভাগ হয়ে গেল। তারা শিখিম শহরের কাছাকাছি একটি জায়গায় লুকিয়ে থাকল। 35 এবদের পুত্র গাল বেরিয়ে গিয়ে শিখিম শহরের ফটকের মুখে দাঁড়িয়ে রইল। গাল যখন সেখানে দাঁড়িয়ে তখন অবীমেলক ও তাঁর সৈন্যদল লুকোনোর জায়গা থেকে বেরিয়ে এল।
36 গাল ওদের দেখল। সে সবুলকে বলল, “তাকিয়ে দেখ, লোকরা পর্বত থেকে নেমে আসছে।”
কিন্তু সবূল বলল, “তুমি শুধু পর্বতের ছায়াই দেখছ। ছায়াগুলোকে ঠিক মানুষের মত দেখতে।”
37 কিন্তু গাল আবার বলল, “তাকিয়ে দেখ, কিছু লোক ওখানে থেকে নাভেল দেশে নেমে আসছে। আমি যাদুকর বৃক্ষের ওপরে কার যেন মাথা দেখলাম।” 38 সবূল গালকে বলল, “তুমি কেন আগের মত হামবড়াই করছ না? তুমি বলেছিলে, ‘অবীমেলক কে? কেন আমরা তাকে মানব?’ তুমি এই মানুষগুলিকে উপহাস করেছিলে। এখন যাও, ওদের সঙ্গে লড়াই করো।”
39 গাল শিখিমের নেতাদের নিয়ে অবীমেলকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল। 40 অবীমেলক তাঁর লোকজন নিয়ে গাল ও তার সেনাবাহিনীকে তাড়া করলেন। গালের লোকরা শিখিম শহরের ফটকের দিকে পালিয়ে গেল। পালিয়ে যাবার সময় তাদের মধ্যে অনেকে নিহত হল।
41 তারপর অবীমেলক অরূমা শহরে ফিরে এলেন। গাল ও তার ভাইদের সবূল শিখিম শহর থেকে তাড়িয়ে দিলেন।
42 পরদিন শিখিমের লোকরা মাঠে কাজ করতে গেল। অবীমেলক তা দেখলেন। 43 তিনি তাঁর লোকদের তিনটি দলে ভাগ করলেন। শিখিমের অধিবাসীদের তিনি হঠাৎ আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন। সেই জন্য তিনি তাঁর লোকজনকে মাঠে লুকিয়ে রাখলেন। যখন তিনি দেখলেন লোকরা শহর থেকে বেরিয়ে পড়ছে, তিনি তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। 44 অবীমেলক সদলবলে দৌড়ে গিয়ে শিখিমের ফটকের কাছে একটা জায়গায় দাঁড়ালেন। অন্য দু-দলের লোকরা মাঠের দিকে ছুটে গিয়ে লোকদের মেরে ফেলল। 45 সারাদিন ধরে অবীমেলক শিখিমের সঙ্গে লড়াই করলেন। অবীমেলক শিখিম দখল করলেন আর সেখানকার লোকদের হত্যা করলেন। তারপর তিনি শহরটিকে তছনছ করে তার ওপর লবণ ছিটিয়ে দিলেন।
46 শিখিমের দুর্গে কিছু লোক বাস করত। যখন তারা শিখিমের ঘটনা শুনল তখন তারা এল-বরীত্ দেবতার মন্দিরের মধ্যে একটি মিনারে মিলিত হল।
47 অবীমেলক শিখিম দুর্গের নেতাদের জড়ো হবার খবর জানতে পারলেন। 48 তাই তিনি তাঁর লোকদের নিয়ে সলমোন পর্বতে উঠে এলেন। একটা কুড়ুল দিয়ে অবীমেলক গাছ থেকে কয়েকটা ডাল কেটে নিলেন। ডালগুলো কাঁধে নিয়ে সঙ্গের লোকদের অবীমেলক বললেন, “আমি যা করলাম তোমরা তা চট্পট্ করে ফেল।” 49 এই কথা শুনে তাঁর দেখাদেখি তারাও ডালগুলো কেটে ফেলল। তারপর এল্-বরীৎ মন্দিরের সবচেয়ে নিরাপদ ঘরের গায়ে সেগুলো তারা জড়ো করল। আগুন লাগিয়ে দিল ডালগুলোয়। সেখানে যারা ছিল তাদের পুড়িয়ে মারল। এইভাবে শিখিম দুর্গের কাছে বসবাসকারী প্রায় 1000 নর-নারী মারা গেল।
অবীমেলক মারা গেলেন
50 তারপর সদলবলে অবীমেলক তেবস শহরে গেলেন। তারা শহরটি দখল করল। 51 শহরের মধ্যে একটা বেশ মজবুত মিনার ছিল। শহরের লোকরা আর নেতারা পালিয়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিল। মিনারের দরজায় তালাচাবি দিয়ে তারা ছাদে উঠে গেল। 52 অবীমেলক দুর্গ আক্রমণ করলেন এবং দুর্গটা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবার জন্য দুর্গের দরজার কাছে গেলেন। 53 কিন্তু তিনি যখন দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে, সেই সময় দুর্গের ছাদ থেকে একজন নারী তাঁর মাথা লক্ষ্য করে একটা পেষাই করবার পাথরের চাঁই ফেলে দিল। অবীমেলকের মাথার খুলি সেই পাথরের ঘায়ে গুঁড়িয়ে গেল। 54 সেই মূহুর্তে অবীমেলক তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “তরবারিটা বার করে আমাকে মেরে ফেল। তোমাকেই এ কাজটা করতে হবে। লোক যেন না বলে, ‘একটা স্ত্রীলোক আমাকে মেরে ফেলেছে।’” তাই হল। ভৃত্যটি তাঁকে তরবারির কোপে মেরে ফেলল। অবীমেলক মারা গেলন। 55 অবীমেলক মারা গেছে দেখে ইস্রায়েলের লোকরা সকলে দেশে ফিরে গেল।
56 অবীমেলক তাঁর অসৎ কর্মের জন্য ঈশ্বর এভাবেই শাস্তি দিলেন। তাঁর 70 জন ভাইকে হত্যা করে অবীমেলক তাঁর পিতার বিরুদ্ধে পাপ করেছিলেন। 57 ঈশ্বর শিখিম শহরের লোকদেরও অন্যায় কর্মের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন। এভাবেই যোথমের কথা ফলে গিয়েছিল। (যোথম যিরুব্বালের কনিষ্ঠ পুত্র। আর যিরুব্বালই ছিল গিদিয়োন।)
বার্ণবা ও শৌল বিশেষ কাজে মনোনীত
13 সেই সময় আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলীতে কয়েকজন ভাববাদী ও শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা হলেন; বার্ণবা, শিমোন যাকে নীগের বলা হত, কুরীনীয় শহরের লুকিয়, মনহেম ইনি শাসনকর্তা হেরোদের সঙ্গে মানুষ হয়েছিলেন ও শৌল। 2 তাঁরা প্রভুর সেবায় রত ছিলেন ও উপবাস করছিলেন। সেই সময় একদিন পবিত্র আত্মা বললেন, “বার্ণবা ও শৌলকে আমার জন্য পৃথক করে দাও; কারণ একটি বিশেষ কাজের জন্য আমি তাদের মনোনীত করেছি।”
3 তখন তাঁরা উপবাস ও প্রার্থনার পর বার্ণবা ও শৌলের ওপর হাত রেখে তাঁদের বিদায় দিলেন।
বার্ণবা ও শৌল কুপ্রীয়তে গেলেন
4 এইভাবে পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চালিত হয়ে তাঁরা সিলুকিয়া শহরে গেলেন ও সেখান থেকে জাহাজে করে কুপ্র দ্বীপে রওনা দিলেন। 5 তাঁরা সালামী শহরে পৌঁছে ইহুদীদের সমাজ-গৃহগুলিতে গিয়ে ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করলেন। যোহন মার্ক তাঁদের সহকারীরূপে কাজ করছিলেন।
6 তাঁরা সেই দ্বীপের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে পরে পাফোসে এসে উঠলেন। সেখানে তাঁরা বর যীশু নামে এক ইহুদী যাদুকর ও ভণ্ড ভাববাদীর দেখা পেলেন। 7 সে সেই রাজ্যের রাজ্যপাল সের্গীয় পৌলের উপদেষ্টা ছিল। সের্গীয় পৌল ছিলেন একজন বুদ্ধিমান লোক। তিনি বার্ণবা ও শৌলকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ঈশ্বরের বার্তা শুনতে চাইলেন। 8 কিন্তু সেই যাদুকর ইলুমা (এই ছিল বর যীশুর গ্রীক নাম) বার্ণবা ও পৌলের বিরুদ্ধাচরণ করে রাজ্যপালকে খ্রীষ্টে বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে লাগল। 9 তখন শৌল, যাকে পৌলও বলে, তিনি পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে ইলুমার দিকে সোজাসুজি তাকালেন। 10 বললেন, “তুই ছল-চাতুরীতে ভরা লোক! তুই দিয়াবলের ছেলে! যা কিছু ঠিক, তুই তার শত্রু! তুই কি প্রভুর সত্য পথকে বিকৃত করতে ক্ষান্ত হবি না? 11 দেখ, প্রভুর হাত এখন তোর ওপর। তুই অন্ধ হয়ে যাবি, আর কিছু দিন সূর্যের আলো আর দেখতে পাবি না।”
সঙ্গে সঙ্গে এক গভীর অন্ধকার তার ওপর নেমে এল আর সে চারদিকে হাতড়াতে লাগল, তাকে হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে যাবার জন্য লোকদের অনুরোধ করতে লাগল। 12 তখন সেই ঘটনা দেখে রাজ্যপাল বিশ্বাস করলেন, কারণ তিনি প্রভুর বিষয়ে শিক্ষার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
পৌল এবং বার্ণবার কুপ্রীয় ত্যাগ
13 পৌল ও তাঁর সঙ্গীরা পাফঃ থেকে জলপথে রওনা দিয়ে পাম্ফুলিয়ার পর্গাতে এলেন, কিন্তু যোহন তাঁদের ছেড়ে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 14 তাঁরা পর্গা থেকে আবার যাত্রা শুরু করে পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় এসে উপস্থিত হলেন।
এক বিশ্রামবারে পৌল ও বার্ণবা ইহুদীদের এক সমাজ-গৃহে গিয়ে বসলেন। 15 মোশির বিধি-ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হলে পরে সমাজ-গৃহের অধ্যক্ষ তাদের বলে পাঠালেন, “ভাইরা, লোকদের কাছে শিক্ষা দেবার ও উৎসাহ যোগাবার মত যদি আপনাদের কিছু থাকে তবে এগিয়ে এসে তা বলুন।”
16 তখন পৌল উঠে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বলতে থাকলেন, “হে ইস্রায়েলী লোকেরা ও অইহুদীরা, আপনারা যাঁরা সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করেন তারা আমার কথা শুনুন। 17 এই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদের মনোনীত করেছিলেন, আর মিশর দেশে প্রবাসীরূপে থাকার সময় তিনি আমাদের লোকদের উন্নত করেছিলেন। সেই দেশ থেকে ঈশ্বর মহাপরাক্রমে তাদের বার করে আনলেন। 18 প্রায় 40 বছর ধরে প্রান্তরের মধ্যে ঈশ্বর তাদের সব রকমের ব্যবহার সহ্য করলেন। 19 তিনি কনানের সাতটি জাতিকে উচ্ছেদ করে সেইসব জাতির দেশ ইস্রায়েলীয়দের দিলেন। 20 এইভাবে প্রায় চারশো পঞ্চাশ বছর কেটে গেল।
“এরপর ভাববাদী শমূয়েলের সময় পর্যন্ত ঈশ্বর কয়েকজন বিচারক দিলেন; 21 তারপর তারা একজন রাজা চাইলে বিন্যামীন গোষ্ঠীর কীশের ছেলে শৌলকে ঈশ্বর দিলেন, যে চল্লিশ বছর ধরে তাদের ওপর রাজত্ব করল। 22 পরে তিনি তাকে সরিয়ে, দায়ূদকে তাদের রাজা করলেন। ঈশ্বর তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বললেন, ‘আমি যিশয়ের ছেলে দায়ূদকে পেয়েছি, সে আমার মনের মত লোক। আমি তাকে যা করতে বলব সে তা করবে।’
23 “দায়ূদের বংশে ঈশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুসারে ইস্রায়েলের জন্য এক ত্রাণকর্তা আনলেন, তিনি যীশু। 24 তাঁর আসার আগে যোহন সমস্ত ইস্রায়েল জাতির কাছে মন-ফিরানোর এক বাপ্তিস্ম ঘোষণা করলেন। 25 যোহন তাঁর কাজের শেষের দিকে বলতেন, ‘আমি কে, তোমরা কি মনে কর? আমি সেই খ্রীষ্ট নই। আমার পর যিনি আসছেন, তাঁর জুতোর ফিতে খোলার যোগ্যতাও আমার নেই।’
26 “ভাইরা, অব্রাহামের বংশধররা, আর অইহুদীদের মধ্যে যাঁরা ঈশ্বরের উপাসনা করেন, আপনারা সকলে জানুন যে আমাদেরই কাছে পরিত্রাণের এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। 27 জেরুশালেমের অধিবাসীরা ও তাদের নেতারা যীশুকে ত্রাণকর্তা হিসেবে চিনতে পারে নি, যদিও ভাববাদীদের বাক্য যা প্রভু যীশুর সম্বন্ধে বলে তা তাদের কাছেই প্রতি বিশ্রামবারে পাঠ করা হত। যিহূদিরাই তাকে দোষী সাব্যস্ত করল, আর এইভাবে তারা ভাববাদীদের বাক্য সফল করেছে। 28 মৃত্যুদণ্ড দেবার মতো তাঁর কোন দোষ না পেলেও তারা পীলাতের কাছে তাঁকে হত্যা করার জন্য দাবী জানায়।
29 “যীশুর বিষয়ে যা কিছু শাস্ত্রে লেখা হয়েছে তার সবকিছু সম্পন্ন করবার পর, তারা তাঁর মৃতদেহ সেই ক্রুশ থেকে নামিয়ে এক কবরে রেখেছিল। 30 কিন্তু ঈশ্বর যীশুকে পুনর্জীবিত করলেন। 31 যাঁরা তাঁর সঙ্গে গালীল থেকে জেরুশালেমে এসেছিলেন, তাঁদের তিনি অনেক দিন পর্যন্ত দেখা দিয়েছিলেন। তাঁরাই এখন লোকদের কাছে সর্বসমক্ষে তাঁর সাক্ষী।
32 “আমরা আপনাদের কাছে এই সুসমাচার জানাচ্ছি, যা ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষের কাছে প্রতিশ্রুতি স্বরূপ দিয়েছিলেন; 33 যীশুকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করে ঈশ্বর আমাদের কাছে অর্থাৎ তাঁর সন্তানদের জন্যে সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। যেমন দ্বিতীয় গীতে লেখা আছে:
‘তুমি আমার পুত্র,
আজই আমি তোমার পিতা হয়েছি।’(A)
34 ঈশ্বর যীশুকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। যীশু আর কখনও ক্ষয় পাবেন না। এই বিষয়ে ঈশ্বর বলেছেন:
‘আমি দায়ূদের কাছে যে পবিত্র ও সত্য প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়েছিলাম, তা তোমাকে দেব।’(B)
35 আবার আর এক জায়গায় ঈশ্বর বলেছেন:
‘তুমি তোমার পবিত্রতমকে ক্ষয় দেখতে দেবে না।’(C)
36 “দায়ূদ তাঁর সময়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার পর মারা গেলে পিতৃপুরুষের কবরের মধ্যে তাঁকেও কবর দেওয়া হল ও তাঁর দেহও ক্ষয় পেল। 37 কিন্তু ঈশ্বর যাঁকে (যীশুকে) মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, তিনি ক্ষয় দেখেন নি। 38-39 তাই ভাইরা, আমি চাই আপনারা জানুন যে এই যীশুর মাধ্যমেই পাপের ক্ষমা লাভের কথা আপনাদের কাছে ঘোষণা করে হচ্ছে। মোশির বিধি-ব্যবস্থায় আপনারা পাপ থেকে মুক্ত হতে পারতেন না; কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি যে যীশুর ওপর বিশ্বাস করে, সে পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। 40 তাই সাবধান! ভাববাদীরা যা বলে গেছেন, তা যেন আপনাদের জীবনে ফলে না যায়। ভাববাদীরা বললেন,
41 ‘শোন, তোমরা যারা উপহাস কর!
তোমরা দেখ, অবাক হও ও ধ্বংস হয়ে যাও,
কারণ আমি তোমাদের সময়ে এমন কাজ করেছি,
যে কাজের কথা তোমাদের বলা হলেও
তোমরা বিশ্বাস করবে না।’”(D)
42 পৌল ও বার্ণবা যখন সমাজ-গৃহ থেকে চলে যাচ্ছেন, তখন লোকেরা অনুরোধ করল যেন পরের বিশ্রামবারে তারা আরো বিস্তারিতভাবে ঐসব কথা তাদের জানান। 43 সমাজ-গৃহের সভা শেষ হলে, অনেক ইহুদী ও ইহুদী ধর্মাবলম্বী ভক্ত লোকেরা পৌল ও বার্ণবার পিছনে পিছনে গেল। পৌল ও বার্ণবা ঐসব লোকদের সঙ্গে কথা বললেন ও ঈশ্বরের অনুগ্রহে আস্থা রেখে চলার পরামর্শ দিলেন।
44 পরের বিশ্রামবারে সেই শহরের প্রায় সমস্ত লোক প্রভুর কথা শোনার জন্য সমবেত হল; 45 কিন্তু ইহুদীরা অতো লোকের সমাগম দেখে ঈর্ষাতে জ্বলতে লাগল। তারা পৌলের কথার প্রতিবাদ করে তাদের অপমানও করতে লাগল। 46 কিন্তু পৌল ও বার্ণবা নির্ভীকভাবে বলতে থাকলেন, “প্রথমে তোমরা যারা ইহুদী তোমাদেরই কাছে ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু তোমরা যখন তা অগ্রাহ্য করে নিজেদের অনন্ত জীবনের অযোগ্য মনে করছ, তখন আমরা অইহুদীদের কাছেই যাব। 47 কারণ প্রভু আমাদের এমনই আদেশ করেছেন:
‘আমি তোমাদের অইহুদীদের কাছে দীপ্তিস্বরূপ করেছি,
যেন তোমরা জগতের সমস্ত লোকের কাছে পরিত্রাণের পথ জানাতে পারো।’”(E)
48 অইহুদীরা পৌলের এই কথা শুনে আনন্দিত হল ও প্রভুর বার্তার সম্মান করল। আর যারা অনন্ত জীবনের জন্য মনোনীত হয়েছিল, তারা বিশ্বাস করল।
49 প্রভুর এই বার্তা সেই অঞ্চলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। 50 এদিকে কিছু ইহুদীরা ভক্তিমতি ও সম্মানীয় মহিলাদের ও শহরের নেতাদের উত্তেজিত করে পৌল ও বার্ণবার প্রতি নির্যাতন শুরু করল, আর নিজেদের অঞ্চল থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দিল। 51 তখন তাঁরা তাদের বিরুদ্ধে পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলে ইকনিয়ে চলে গেলেন। 52 এদিকে আন্তিয়কে অনুগামীরা আনন্দে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হতে থাকলেন।
শয়তান রাজাদের বিচার
22 প্রভু বললেন: “যিরমিয়, রাজপ্রাসাদে যাও। যিহূদার রাজার কাছে গিয়ে এই ধর্মোপদেশ প্রচার করো: 2 ‘যিহূদার রাজা, প্রভুর বার্তা শোন। তুমি দায়ূদের সিংহাসন থেকে শাসন করছ, তাই শোন হে রাজা, তুমি এবং তোমার সভা পরিষদগণও শোন। জেরুশালেমের ফটক দিয়ে আসা তোমার লোকদেরও ঈশ্বরের বার্তা শুনতে হবে। 3 প্রভু বললেন: যা ঠিক তাই করো। ডাকাতকে নয়, যার ডাকাতি হয়েছে তাকে রক্ষা করো। বিধবা মহিলাদের এবং অনাথ শিশুদের কোন ক্ষতি করো না। নিরীহ লোকদের মেরো না। 4 যদি এই নির্দেশগুলো তোমরা মেনে চলো তাহলে এগুলি ঘটবে: দায়ূদের সিংহাসনে যে সব রাজারা অধিষ্ঠিত রয়েছে তারা জেরুশালেম শহরের ফটক দিয়ে আসা চালিয়ে যাবে। সঙ্গে থাকবে তাদের সভা পরিষদগণ। তারা সবাই রথে ঘোড়ায় চড়ে আসবে। 5 কিন্তু যদি এই নির্দেশগুলি মানা না হয়, তাহলে প্রভু বলেছেন: আমি, প্রভু, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি রাজার প্রাসাদ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সব কিছু জঞ্জালের স্তূপে পরিণত হবে।’”
6 যিহূদার রাজার রাজপ্রাসাদের সম্বন্ধে প্রভু যা বলেছেন তা হল:
“এই প্রাসাদ হল গিলিয়দের অরণ্যের মতো উচ্চ।
এই রাজপ্রাসাদ হল লিবানোনের পর্বতের মতো উচ্চ,
কিন্তু এই প্রাসাদকে মরুভূমিতে পরিণত করব।
এই প্রাসাদ নির্জন শহরের মতো একাকি দাঁড়িয়ে থাকবে।
7 আমি ধ্বংসকারীদের এই প্রাসাদ ধ্বংস করতে পাঠাব।
তারা প্রাসাদের সুদৃশ্য এরস কড়িকাঠগুলো কেটে ফেলবে
এবং সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেবে।
8 “অনেক জাতির লোকরা এই শহরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে একে অন্যকে প্রশ্ন করবে, ‘মহান শহর জেরুশালেমের ওপর প্রভু এমন একটা সাংঘাতিক কাণ্ড কেন করলেন?’ 9 এই হবে তাদের প্রশ্নের উত্তর: যিহূদার লোকরা তাদের প্রভু ঈশ্বরের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তা তারা অমান্য করেছিল বলে ঈশ্বর জেরুশালেমকে ধ্বংস করেছেন। যিহূদার লোকরা মূর্ত্তি পূজা করেছিল বলে তাদের এই ভয়ানক ফল ভোগ করতে হল।”
রাজা যেহোয়াজের বিরুদ্ধে বিধান
10 মৃত রাজাদের জন্য না কেঁদে
বরং যে রাজাকে এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে
তার জন্য কাঁদো।
কারণ সে আর কখনো ফিরে আসবে না।
আর কোন দিন সে নিজের মাতৃভূমিকে দেখতে পাবে না।
11 যোশিয়ের পুত্র শল্লুম (যেহোয়াজ) সম্বন্ধে প্রভু যা বলেছেন তা হল, (যোশিয় মারা যাবার পর তার পুত্র শল্লুম যিহূদার রাজা হয়েছিল।) “যেহোয়াজ জেরুশালেম ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সে আর কোন দিন জেরুশালেমে ফিরে আসে নি। 12 মিশরের লোকেরা তাকে যেখানে ধরে নিয়ে গিয়েছে সেখানেই তার মৃত্যু হবে। সে আর কোনদিন এই দেশকে দেখতে পাবে না।”
রাজা যিহোয়াকীমের বিরুদ্ধে বিধান
13 “রাজা যিহোয়াকীমের জীবনে খারাপ সময় ঘনিয়ে আসছে।
সে তার রাজপ্রাসাদ তৈরী করতে বহু অসৎ কাজ করেছে।
লোক ঠকিয়ে প্রাসাদের ঘর সমেত উচ্চতা বাড়িয়েছে।
তার প্রজাদের দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে
সে কাজ করিয়ে নিয়েছে।”
14 যিহোয়াকীম বলল,
“আমি নিজের জন্য একটি বিশাল প্রাসাদ তৈরী করব।
সেই প্রাসাদের ওপরের তলায় বড় বড় ঘর থাকবে।”
তাই সে বড় বড় জানালা তৈরী করল।
এরস বৃক্ষের কাঠ দিয়ে তৈরী জানালার চারিদিকে সে লাল রঙ করল।
15 যিহোয়াকীম, তোমার প্রাসাদে অসংখ্য এরস বৃক্ষের কাঠ
তোমাকে মহান রাজা করে দিতে পারবে না।
তোমার পিতা যোশিয় খাদ্য ও পানীয় পেয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন।
তিনি সঠিক পথে সঠিক কাজ করেছিলেন।
অতএব তাঁর ক্ষেত্রে সব কিছুই ভালো হয়েছিল।
16 যোশিয় গরীব দুঃখী লোকদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বলে
তার সঙ্গে খারাপ কোন ঘটনা ঘটেনি।
যিহোয়াকীম, “ঈশ্বরকে জানার অর্থ কি?”
এর অর্থ সৎভাবে জীবনযাপন করা
এবং যারা গরীব ও আর্ত্ত তাদের সাহায্য করা।
এই হল প্রভুর বার্তা:
17 “যিহোয়াকীম, তোমার চোখ দুটো শুধু তোমার লাভের দিকটাই দেখে।
তোমার সমস্ত ভাবনা হল লাভ নিয়ে এবং কি করে আরো বেশী কিছু পাবে তাই নিয়ে।
তুমি ইচ্ছা করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছো।
স্বেচ্ছায় অন্যের জিনিস চুরি করেছো।”
18 সুতরাং যোশিয়র পুত্র যিহোয়াকীমকে প্রভু এই কথাগুলি বললেন:
“যিহূদার লোকেরা কখনও যিহোয়াকীমের জন্য কাঁদবে না।
তারা একে অপরকে বলবে না;
‘হে আমার ভাই, আমি যিহোয়াকীমের জন্য খুব দুঃখিত!
হে আমার ভগিনী, আমি যিহোয়াকীমের জন্য খুব দুঃখিত!’
তারা যিহোয়াকীমের জন্য দুঃখিত হবে না।
তারা তার সম্বন্ধে বলবে না,
‘হে মনিব, আমরা দুঃখিত!
হে রাজা আমরা মর্মাহত!’
19 জেরুশালেমের লোকরা যিহোয়াকীমকে কবর দেবে একটি মৃত গাধার সৎকারের ভঙ্গিতে।
তারা তার মৃতদেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে জেরুশালেমের ফটকের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
20 “যিহূদা, যাও লিবানোনের পাহাড়ে উঠে চিৎকার করে কাঁদো
যাতে তোমাদের সেই কান্নার রোল বসনের পাহাড় থেকে শোনা যায়।
অবারীম পাহাড় থেকে চেঁচিয়ে ওঠো।
কারণ তোমার ‘প্রেমিকরা’ সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
21 “যিহূদা, তুমি নিজেকে নিরাপদ মনে করেছিলে
কিন্তু আমি তোমাকে সতর্ক করেছিলাম!
তোমায় সতর্ক করেছিলাম
কিন্তু আমার কথা শোননি।
ছেলেমানুষ ছিলে বলে তুমি ভুলপথে জীবনযাপন করেছিলে।
যিহূদা, তুমি তোমার যৌবনকাল থেকে
আমাকে অমান্য করেছ।
22 যিহূদা আমি তোমাকে যে শাস্তি দেব তা আসবে ঝড়ের মতো
এবং সেই ঝড় তোমার সমস্ত মেষপালকদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
তুমি ভেবেছিলে অন্যান্য জাতিগুলি তোমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে,
কিন্তু তারাও পরাজিত হবে।
তখন তুমি সত্যি সত্যি নিরাশ হয়ে পড়বে।
লজ্জিত হবে নিজের অতীতের কৃতকর্মের কথা ভেবে।
23 “রাজা, তুমি পাহাড়ের একেবারে ওপরে এরস বৃক্ষের তৈরী সুদৃশ্য প্রাসাদে বাস করো।
এটা অনেকটা তোমার কাছে লিবানোনে বাস করার মতোই যেখান থেকে ঐ কাঠ আসে।
যেহেতু পাহাড়ের ওপর বিশাল প্রাসাদে তুমি বাস করো তাই তুমি নিজেকে নিরাপদ ভাবছো।
কিন্তু যখন শাস্তি তোমার কাছে আসবে তখন তুমি আঘাত পাবে এবং প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মহিলার মত আর্তনাদ করবে।”
রাজা যিহোয়াকীণের বিরুদ্ধে রায়
24 প্রভু বললেন, “আমি আছি এটা যেমন নিশ্চিৎ,” এই হল প্রভুর বার্তা, “তেমনি ভাবে আমি এটা করব। যিহোয়াকীমের পুত্র যিহোয়াকীণ, যিহূদার রাজা, তুমি যদি আমার ডান হাতের মোহর করা আংটিও[a] হও, আমি তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেব। 25 যিহূদারাজ কনিয়, তুমি যাদের ভয়ে ভীত সেই বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসরের ও বাবিলের লোকদের হাতে আমি তোমাকে তুলে দেব। তারা তোমাকে হত্যা করতে চায়। 26 আমি তোমাকে ও তোমার মাকে এমন এক দেশে পাঠিয়ে দেব যেটা তোমাদের কারোরই জন্মস্থান নয়। তোমরা সেখানে মারা যাবে। 27 যিহোয়াকীণ তুমি যদি স্বদেশ কাতর হয়ে যাও এবং তোমার নিজের দেশে ফিরেও যেতে ইচ্ছা কর, তুমি কখনও ফিরে যাবার অনুমতি পাবে না।”
28 যিহোয়াকীণ হল এক ভাঙ্গা পাত্রের মত যাকে কোন মানুষ বাতিল করে ফেলে দিয়েছে।
সে এমনই এক পাত্র যাকে কেউ চায় না।
যিহোয়াকীণ ও তার সন্তানদের কেন ফেলে দেওয়া হবে?
কেন তাদের অন্য দেশে নিক্ষিপ্ত করা হবে?
29 ভূমি, যিহূদার দেশ,
প্রভুর বার্তা শোন।
30 প্রভু বললেন, “যিহোয়াকীণ সম্বন্ধে এই কথাগুলো লিখে নাও।
‘সে হবে এমনই এক মানুষ যার আর কোন সন্তান থাকবে না।
সে কখনো জীবনে সফল হবে না।
তার কোন সন্তান কখনো দায়ূদের সিংহাসনে বসতে পারবে না।
তার কোন সন্তান কখনো যিহূদায় রাজত্ব করবে না।’”
যীশু চার হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন
(মথি 15:32-39)
8 সেই দিনগুলিতে আবার একবার অনেক লোকের ভীড় হল। তাদের কাছে খাবার ছিল না, তাই তিনি তাঁর শিষ্যদের ডেকে বললেন, 2 “এই লোকদের জন্য আমার মমতা হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিনদিন ধরে আমার কাছে রয়েছে, এদের কাছে কিছু খাবার নেই। 3 যদি আমি এদের ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত অবস্থায় বাড়ি পাঠাই, তবে এরা রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়বে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বহু দূর থেকে এসেছে।”
4 তাঁর শিষ্যেরা এর উত্তরে বললেন, “এই জনমানবহীন জায়গায় আমরা কোথা থেকে এতগুলো লোকের খাবার জোগাড় করব?”
5 তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের কখানা রুটি আছে?”
তারা বলল, “সাতখানা।”
6 তখন তিনি লোকেদের মাটিতে বসতে আদেশ দিলেন। পরে সেই সাতটা রুটি তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে রুটি গুলোকে টুকরো টুকরো করে পরিবেশনের জন্য শিষ্যদের হাতে তুলে দিলেন। তাঁরাও লোকদের মধ্যে পরিবেশন করলেন। 7 তাঁদের কাছে কতগুলো ছোট মাছ ছিল; তিনি সেগুলোর জন্যও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে শিষ্যদের বললেন এগুলো পরিবেশন করে দাও।
8 লোকরা খেয়ে তৃপ্তি পেল। অবশিষ্ট টুকরো দিয়ে তারা সাতটি ঝুড়ি ভর্ত্তি করল। 9 সেদিন প্রায় চার হাজার লোক খেয়েছিল। এরপর তিনি তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন; 10 আর সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিষ্যদের নিয়ে নৌকা করে দল্মনুথা অঞ্চলে চলে এলেন।
ফরীশীদের যীশুকে পরীক্ষার চেষ্টা
(মথি 16:1-4; লূক 11:16, 29)
11 পরে সেখানে ফরীশীরা এসে যীশুর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিল। তাঁর কাছে আকাশ থেকে কোন অলৌকিক চিহ্ন দেখতে চাইল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে পরীক্ষা করা। 12 তখন তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, “এই যুগের লোকরা কেন অলৌকিক চিহ্ন দেখতে চায়? আমি তোমাদের সত্যি বলছি কোন অলৌকিক চিহ্ন এই লোকদের দেখানো হবে না।” 13 তখন তিনি তাদের ছেড়ে নৌকা করে হ্রদের অপর পারে গেলেন।
ইহুদী নেতাদের সম্পর্কে যীশুর সতর্কবাণী
(মথি 16:5-12)
14 কিন্তু শিষ্যরা রুটি আনতে ভুলে গিয়েছিলেন: নৌকায় তাদের কাছে কেবল একখানা রুটি ছাড়া আর কোন রুটি ছিল না। 15 তখন তিনি তাদের সতর্ক করে দিয়ে বললেন, “সাবধান! তোমরা হেরোদ এবং ফরীশীদের খামিরের বিষয়ে সাবধান থেকো!”
16 তখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলেন, “আমাদের কাছে কোন রুটি নেই।”
17 তাঁরা যা বলছেন, তা বুঝতে পেরে যীশু বললেন, “তোমাদের রুটি নেই বলে কেন আলোচনা করছ? তোমরা এখনও কি দেখ না বা বোঝ না, তোমাদের মন কি এতই কঠিন? 18 চোখ থাকতে কি তোমরা দেখতে পাও না? কান থাকতে কি শুনতে পাও না? আর তোমাদের কি মনেও পড়ে না? 19 যখন আমি পাঁচ হাজার লোকের মধ্যে পাঁচটি রুটি টুকরো করে দিয়েছিলাম: তখন তোমরা কত টুকরি উদ্বৃত্ত রুটির টুকরো কুড়িয়ে নিয়েছিলে?”
তাঁরা বললেন, “বারো টুকরি।”
20 যীশু আবার বললেন, “আমি যখন সাতটা রুটি চার হাজার লোকের মধ্যে টুকরো করে দিয়েছিলাম তখন কত টুকরি উদ্বৃত্ত রুটির টুকরো তোমরা তুলে নিয়েছিলে?”
তাঁরা বললেন, “সাত টুকরি।”
21 তখন তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এখনও বুঝতে পারছ না?”
বৈৎসৈদাতে যীশু এক অন্ধকে দৃষ্টি দিলেন
22 তারপর তাঁরা বৈৎসৈদায় এলেন: আর লোকরা তাঁর কাছে একটা অন্ধ লোককে নিয়ে এসে মিনতি করল যাতে তিনি তাকে স্পর্শ করেন। 23 তখন তিনি অন্ধ লোকটির হাত ধরে তাকে গ্রামের বাইরে নিয়ে গেলেন। তিনি লোকটির চোখে খানিকটা থুথু লাগিয়ে তার ওপরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ?”
24 সে চোখ তুলে চেয়ে বলল, “আমি মানুষ দেখতে পাচ্ছি; গাছের মত দেখতে, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
25 তখন তিনি আবার তার চোখের ওপর হাত রাখলেন। এইবার লোকটি চোখ বড় বড় করে তাকাল। তার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণভাবে ফিরে পেল এবং সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখতে পেল। 26 তারপর তিনি তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, “এই গ্রামে যেও না।”
পিতরের স্বীকৃতি—যীশুই খ্রীষ্ট
(মথি 16:13-20; লূক 9:18-21)
27 তারপর যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা সেখান থেকে কৈসরিযা ফিলিপীয় অঞ্চলে চলে গেলেন। রাস্তার মধ্যে তিনি তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে, এ বিষয়ে লোকের কি বলে?”
28 তাঁরা বললেন, “অনেকে বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন। কেউ কেউ বলে, আপনি এলিয়। আবার কেউ কেউ বলে, আপনি ভাববাদীদের মধ্যে একজন।”
29 তখন তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?”
পিতর তাঁকে বললেন, “আপনি সেই খ্রীষ্ট।”
30 তখন তিনি তাঁদের সাবধান করে দিয়ে বললেন, “তোমরা এ কথা কাউকে বলো না।”
যীশু বললেন তাঁর মৃত্যু অনিবার্য
(মথি 16:21-28; লূক 9:22-27)
31 এরপর তিনি তাঁদের এই শিক্ষা দিতে শুরু করলেন যে, মানবপুত্রকে অনেক দুঃখ ভোগ করতে হবে এবং বয়স্ক ইহুদী নেতারা, প্রধান যাজক ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে, হত্যা করবে এবং মৃত্যুর তিনদিন পর তিনি আবার বেঁচে উঠবেন। 32 এই কথা তিনি তাঁদের স্পষ্টভাবে বললেন।
তাতে পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করতে লাগলেন। 33 কিন্তু যীশু তাঁর শিষ্যদের দিকে মুখ ফিরিয়ে পিতরকে ধমক দিয়ে বললেন, “আমার সামনে থেকে দূর হও, শয়তান! কারণ তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছার সমাদর করছ না; তুমি মানুষের মতোই ভেবে এই কথা বলছ।”
34 এরপর তিনি শিষ্যদেব সঙ্গে অন্যান্য লোকদেরও নিজের কাছে ডেকে বললেন, “কেউ যদি আমার সঙ্গে আসতে চায়, সে নিজেকে অস্বীকার করুক এবং তার নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসারী হোক্। 35 কারণ কেউ যদি নিজের প্রাণ রক্ষা করতে চায় তবে সে তা হারাবে; কিন্তু কেউ যদি আমার এবং সুসমাচারের জন্য নিজের প্রাণ হারায় তবে তার জীবন চিরস্থায়ী হবে। 36 মানুষ যদি নিজের জীবন হারিয়ে সমস্ত জগৎ লাভ করে তবে তার কি লাভ? 37 কিংবা মানুষ তার প্রাণের বিনিময়ে কি দিতে পারে? 38 যে কেউ এই ব্যভিচারী ও পাপীদের যুগে আমাকে এবং আমার শিক্ষাকে লজ্জার বিষয় মনে করে, মানবপুত্র যখন তাঁর পিতার মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে পবিত্র স্বর্গদূতদের সঙ্গে ফিরে আসবেন, তখন তিনিও সেই লোকের বিষয়ে লজ্জাবোধ করবেন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International