M’Cheyne Bible Reading Plan
8 ইফ্রয়িমের লোকরা গিদিয়োনের উপর রেগে গেল। গিদিয়োনকে দেখতে পেয়ে তারা জিজ্ঞাসা করল, “আমাদের সঙ্গে কেন তুমি এমন ব্যবহার করলে? মিদিয়নদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাবার সময় কেন তুমি আমাদের ডাকো নি?”
2 গিদিয়োন বললেন, “দেখো তোমরা যা করেছ আমি তা করতে পারি নি। আমার অবীয়েষরের গোষ্ঠী যত ফসল তুলেছে, তোমরা ইফ্রয়িমরা তার চেয়ে অনেক বেশী ফসল তুলেছ। ফসল তোলার সময় ক্ষেতে তোমরা যত দ্রাক্ষা ফেলে রেখে যাও, আমার লোকরা তার চেয়ে কম কুড়ায়। ঠিক কি না? 3 একইভাবে তোমাদের ফসল এখন দারুণ ভালো হয়েছে। ঈশ্বরই তোমাদের হাতে মিদিয়ন নেতা ওরেব আর সেবকে পরাজিত করতে দিয়েছেন। তোমাদের কর্ম সাফল্যের সঙ্গে আমার সাফল্যের কি কোনো তুলনা চলে?” গিদিয়োনের উত্তর শুনে ইফ্রয়িমের লোকদের রাগ পডে গেল।
গিদিয়োন মিদিয়নের দুই রাজাকে ধরলেন
4 গিদিয়োন 300 জন লোক নিয়ে যর্দন নদীর ওপারে গেলেন। ওরা খুবই ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত ছিল। 5 গিদিয়োন সুক্কোৎ শহরের অধিবাসীদের বললেন, “আমার সৈন্যদের তোমরা কিছু খেতে দাও। ওরা খুব পরিশ্রান্ত। আমরা এখনও মিদিয়নদের রাজা সেরহ আর সলমুন্নকে ধরতে পারি নি।”
6 সুক্কোতের নেতারা বলল, “কেন আমরা তোমার সৈন্যদের খাওয়াব? তোমরা তো এখনও সেবহ আর সলমুন্নকে ধরতে পারো নি।”
7 তখন গিদিয়োন বললেন, “তোমরা আমাদের খাবার দিও না। সেবহ আর সলমুন্নকে ধরবার জন্য প্রভু স্বয়ং আমাদের সাহায্য করবেন। তারপর আমরা ফিরে এসে মরুভূমির কাঁটাঝোপ দিয়ে তোমাদের ছাল ছাড়াব।”
8 সুক্কোৎ শহর থেকে বেরিয়ে গিদিয়োন চলে গেল পনুয়েল শহরে। সুক্কোতবাসীদের কাছে সে যেমন খাদ্য চেয়েছিল তেমনি পনূয়েলবাসীদের কাছেও খাদ্য চাইল। তারাও সুক্কোতের লোকদের মতো একই কথা বলল। 9 পনূয়েলের লোকদের গিদিয়োন বললেন, “যুদ্ধে জিতে আমাকে ফিরে আসতে দাও। তারপর তোমাদের এই মিনার আমি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেব।”
10 সেবহ আর সলমুন্না আর তাদের সৈন্যদের শিবির ছিল কর্কোর শহরে। তাদের সৈন্যরা সংখ্যায় ছিল 15,000 জন। পূর্বদেশের সৈন্যদের মধ্যে এরাই শুধু বেঁচে ছিল। 120,000 সৈন্য ইতিমধ্যেই হত হয়েছিল। 11 গিদিয়োন সদলবলে তাঁবুবাসীদের রাস্তা ধরলেন। রাস্তাটা নোবহ আর যগবিহ শহরের পূর্বদিকে। কর্কোর শহরে এসে গিদিয়োন শত্রুদের আক্রমণ করলেন। শত্রুরা এই ধরণের আক্রমণের কথা ভাবতেই পারে নি। 12 মিদিয়নদের দুই রাজা সেবহ আর সল্মুন্ন পালিয়ে গেল। কিন্তু গিদিয়োন ঠিক তাদের ধরে ফেললেন। তাঁর সৈন্যরা শত্রু সৈন্যদের পরাজিত করল।
13 তারপর যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন ফিরে এলেন। তিনি এবং তাঁর লোকরা হেরসের গিরিপথ দিয়ে ফিরে এসেছিল। 14 সুক্কোৎ শহর থেকে একটি যুবককে গিদিয়োন ধরে এনেছিলেন। যুবকটিকে সে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে যুবকটি সুক্কোৎ শহরের দলপতি আর প্রবীণ লোকদের মিলিয়ে মোট 77 জনের নাম লিখে দিল।
15 অতঃপর গিদিয়োন সুক্কোৎ শহরে ফিরে এলেন। সেখানকার অধিবাসীদের কাছে এসে বললেন, “এই দেখো সেবহ আর সল্মুন্ন। তোমরা আমায় নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে বলেছিলে, ‘কেন আমরা তোমার সৈন্যদের খেতে দেব? তোমরা তো সেবহ আর সল্মুন্নকে ধরতে পার নি।’” 16 এই বলে, গিদিয়োন সুক্কোৎ শহরের প্রবীণদের নিলেন। তারপর মরুভূমির কাঁটাঝোপ দিয়ে তিনি তাদের উচিৎ শিক্ষা দিলেন। 17 গিদিয়োন পনূয়েল শহরের মিনার ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর তিনি সেই শহরের নাগরিকদের হত্যা করলেন।
18 সেবহ ও সল্মুন্নকে গিদিয়োন বললেন, “তাবোর পর্বতে কয়েকজনকে তোমরা হত্যা করেছিলে। তাদের কেমন দেখতে?”
তারা বলল, “তোমার মতই দেখতে। প্রত্যেকের চেহারাই ছিল রাজপুরুষের মতো।”
19 গিদিয়োন বললেন, “ওরা আমার ভাই ছিল, আমার সহোদর ভাই। তাদের তোমরা মেরে না ফেললে আমি আজ তোমাদের হত্যা করতে চাইতাম না।”
20 গিদিয়োন তাঁর জ্যোষ্ঠ পুত্র যেথরের দিকে ফিরে বললেন, “এই রাজাদের হত্যা করো।” কিন্তু যেথর একটি ছোট ছেলে ছিল বলে ভয় পেয়ে গেল। সে তরবারি তুলল না।
21 তারপর সেবহ ও সল্মুন্ন গিদিয়োনকে বলল, “তুমি নিজেই আমাদের হত্যা করো। এই কাজের পক্ষে তোমার যথেষ্ট শক্তি আছে।” গিদিয়োন তাদের মেরে ফেললেন। তিনি ওদের উটের ঘাড় থেকে চাঁদের আকারের সাজসজ্জাগুলি নিয়ে নিলেন।
গিদিয়োন এফোদ তৈরী করলেন
22 ইস্রায়েলবাসীরা গিদিয়োনকে বলল, “মিদিয়নদের হাত থেকে তুমি আমাদের রক্ষা করেছ। এখন আমাদের শাসন করো। আমরা তোমাকে চাই, তোমার ছেলে, তোমার নাতি—সবাইকে চাই। তোমরা সবাই আমাদের রাজা হও।”
23 কিন্তু গিদিয়োন বললেন, “স্বয়ং প্রভুই তোমাদের রাজা। আমি বা আমার পুত্র তোমাদের শাসন করব না।”
24 ইস্রায়েলীয়রা যাদের পরাজিত করেছিল, তাদের মধ্যে কিছু লোক ছিল ইশ্মায়েল বংশীয়। এরা সোনার দুল পরত। গিদিয়োন ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “আমার জন্য তোমরা একটা কাজ করো। যুদ্ধের সময় তোমরা তো অনেক জিনিসই পেয়েছিলে। তার থেকে তোমরা প্রত্যেকেই আমাকে একটি করে কানের দুল দিয়ে দাও।”
25 ইস্রায়েলবাসীরা বলল, “তুমি যা চাইছ আমরা তা খুশি হয়েই দেব।” এই বলে তারা মাটির ওপর একটা কাপড় পেতে দিল। প্রত্যেকে সেই কাপড়ের ওপর একটি করে দুল ফেলে দিল। 26 সেই সব দুল জড়ো করা হলে তাদের ওজন হল প্রায় 43 পাউণ্ড। এছাড়াও গিদিয়োনকে ইস্রায়েলীয়রা অন্যান্য উপহার দিয়েছিল। চাঁদের মতো, অশ্রুবিন্দুর মতো দেখতে জড়োয়া গয়নাও তারা তাকে দিয়েছিল। আর দিয়েছিল বেগুনী রঙের পোশাক। মিদিয়নরা এইসব জিনিস ব্যবহার করত। মিদিয়ন রাজাদের উটের শেকলও তারা তাকে দিয়েছিল।
27 গিদিয়োন সেই সোনা দিয়ে একটা এফোদ তৈরী করলেন। তাঁর নিজের শহর অফ্রাতে সেই এফোদকে তিনি স্থাপন করলেন। সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা এফোদটিকে পূজা করেছিল। এইভাবে তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকল না, কারণ তারা এফোদের পূজা করেছিল। এটা গিদিয়োন এবং তার পরিবারের কাছে একটা ফাঁদের মত হল এবং তাদের দিয়ে পাপ কাজ করালো।
গিদিয়োনের মৃত্যু
28 মিদিয়নদের বাধ্য হয়েই ইস্রায়েলীয়দের প্রভুত্ব মেনে নিতে হল। ওরা আর কোন অশান্তি করল না। 40 বছর ধরে দেশে শান্তি ছিল। যতদিন গিদিয়োন বেঁচেছিলেন ততদিন পর্যন্ত শান্তি ছিল।
29 যোয়াশের পুত্র যিরুব্বাল অতঃপর গিদিয়োন দেশে গেলেন। 30 তাঁর ছিল 70টি সন্তান। অনেকগুলি বিয়ে করেছিলেন বলেই তাঁর এতগুলো সন্তান। 31 শিখিমে গিদিয়োনের একজন উপপত্নী থাকত। তার গর্ভে গিদিয়োনের একটি পুত্র হল। গিদিয়োন তার নাম রাখলেন অবীমেলক।
32 যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন বৃদ্ধ বয়সে মারা গেলেন। যোয়াশের সমাধিস্থলেই তাঁকে কবর দেওয়া হল। সেই সমাধিটি অফ্রা শহরে অবস্থিত যেখানে অবীয়েষর পরিবার বাস করে। 33 গিদিয়োনের মৃত্যুর পর ইস্রায়েলীয়রা আবার ঈশ্বরকে ভুলে গেল। তারা বালের ভক্ত হয়ে গেল। তারা বাল বরীৎকে তাদের দেবতা মেনে নিল। 34 তারা তাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভুলে গেল। অথচ তিনিই তাদের চারিদিকের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। 35 যিরুব্বাল (গিদিয়োন) পরিবারের অনুগত হয়ে তারা আর রইল না। তিনি তাদের যথেষ্ট উপকার করলেও তাঁরা তাকে মনে রাখল না।
আগ্রিপ্পার মণ্ডলীর উপর হেরোদের অত্যাচার
12 সেই সময় রাজা হেরোদ বিশ্বাসী মণ্ডলীর কিছু লোকের ওপর নির্যাতন শুরু করলেন। 2 যোহনের ভাই যাকোবকে হেরোদ তরবারির আঘাতে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। 3 তিনি যখন দেখলেন এতে ইহুদীরা খুব খুশী হল, তখন তিনি পিতরকে গ্রেপ্তার করলেন। তখন ছিল ইহুদীদের নিস্তারপর্বের[a] সময়। 4 পিতরকে গ্রেপ্তার করে হেরোদ তাঁকে কারাগারে রাখলেন। তাঁকে পাহারা দেবার জন্য চারজন করে ষোল জন সৈনিককে নিয়োগ করলেন। তিনি মনে করলেন নিস্তারপর্বের পরে পিতরকে জনসাধারণের কাছে বিচারের জন্য হাজির করবেন। 5 তাই পিতরকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হল, কিন্তু বিশ্বাসী মণ্ডলী তাঁর জন্য ঈশ্বরের কাছে একাগ্রভাবে প্রার্থনা করতে থাকলেন।
পিতর কারাগার থেকে মুক্ত হলেন
6 সেই রাতে পিতর দুজন প্রহরারত সৈনিকের মাঝখানে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, দুটি শেকল দিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং সৈনিকরা ফটকে পাহারা দিচ্ছিল। হেরোদ ঠিক করেছিলেন যে পরদিন সকালে বিচারের জন্য পিতরকে কারাগারের বাইরে আনবেন। 7 হঠাৎ প্রভুর এক দূত সেখানে এসে দাঁড়ালেন; আর কারাগারের মধ্যে একটা আলো ঝলসে উঠল। স্বর্গদূত পিতরের গায়ে মৃদু আঘাত দিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “শিগগির ওঠ!” তখন তাঁর দুহাতের শেকল খসে পড়ল। 8 এরপর সেই স্বর্গদূত পিতরকে বললেন, “পোশাক পর, আর পায়ে জুতো দাও।” পিতর সেই মত কাজ করলেন। তখন স্বর্গদূত পিতরকে বললেন, “তোমার আলখাল্লাটি গায়ে দিয়ে আমাকে অনুসরণ কর।”
9 স্বর্গদূত বার হলেন আর পিতর তাঁর পিছু পিছু বাইরে বেরিয়ে গেলেন; কিন্তু স্বর্গদূত যা করলেন তা যে বাস্তবে সত্য তা তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তিনি মনে করলেন হয়তো কোন দর্শন দেখছেন। 10 তাঁরা প্রথম ও দ্বিতীয় পাহারাদারদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন, আর যেখান দিয়ে শহরে যাওয়া যায়, লোহার সেই বিরাট ফটকের কাছে এলেন। সেই ফটক তাঁদের জন্য নিজে থেকে খুলে গেল আর তাঁরা সেখান দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। তাঁরা দুজনে যখন একটা রাস্তার শেষ পর্যন্ত গেলেন, অমনি সেই স্বর্গদূত পিতরের কাছ থেকে হঠাৎ কোথায় মিলিয়ে গেলেন।
11 তখন পিতর বুঝলেন কি ঘটেছে এবং বলে উঠলেন, “আমি নিশ্চয় জানলাম যে এসবই বাস্তব। প্রভু তাঁর দূতকে পাঠিয়েছিলেন আর তিনিই হেরোদের ও যে ইহুদীরা নির্যাতন দেখবে ভেবেছিল তাদের হাত থেকে আমায় উদ্ধার করেছেন।”
12 এই কথা বুঝতে পেরে তিনি মরিয়মের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। এই মরিয়ম হলেন যোহনের মা। এই যোহনকে আবার মার্কও বলে। এদের বাড়িতে অনেকে জড়ো হয়ে প্রার্থনা করছিলেন। 13 পিতর এসে বাইরের দরজায় ঘা দিলে রোদা নামে একজন চাকরানী এসে দরজায় কে তা জিজ্ঞেস করল। 14 পিতরের কন্ঠস্বর চিনতে পেরে তার এত আনন্দ হল যে সে দরজা খুলতে ভুলে গেল, আর দৌড়ে ভেতরে গিয়ে এই খবর জানাল। সে বলল, “পিতর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন!” 15 তাঁরা তাকে বললেন, “তোমার মাথা খারাপ হয়েছে!” কিন্তু সে যখন বারবার বলতে লাগল, তার কথাই ঠিক, তখন তাঁরা বললেন, “তবে ও নিশ্চয়ই স্বর্গদূত।”
16 কিন্তু পিতর দরজায় আঘাত করেই চললেন, আর তাঁরা দরজা খুলে তাঁকে দেখতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 17 তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিতে তাদের চুপ করতে বললেন এবং প্রভু কিভাবে সেই কারাগার থেকে তাঁকে উদ্ধার করে এনেছেন সে কথা জানালেন। তিনি বললেন, “তোমরা যাকোবকে ও অন্যান্য ভাইদের এই ঘটনার কথা জানাও।” পরে তিনি সেখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গেলেন।
18 সকাল হলে প্রহরারত সৈনিকদের মধ্যে একটা হৈচৈ পড়ে গেল। পিতরের কি হল, এই ভেবে তারা আশ্চর্য হয়ে গেল। 19 এরপর হেরোদ পিতরকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন, কিন্তু তাঁকে না পেয়ে প্রহরীদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি সেই প্রহরীদের প্রাণদণ্ডের আদেশ দিলেন।
হেরোদ আগ্রিপ্পার মৃত্যু
এরপর হেরোদ যিহূদা ছেড়ে কৈসরিয়া শহরে গিয়ে কিছুকাল সেখানে থাকলেন। 20 হেরোদ সোরীয় ও সীদোনীয়ের লোকদের ওপর খুবই ক্রুদ্ধ ছিলেন। তারা দল বেঁধে হেরোদের সঙ্গে দেখা করতে এল। রাজার একান্ত সচিব ব্লাস্তকে নিজেদের দলে টেনে তারা হেরোদকে শাস্তির জন্য অনুরোধ করল, কারণ তাদের দেশ রাজার দেশের ওপর খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল ছিল।
21 এক নিরূপিত দিনে, হেরোদ রাজকীয় পোশাক পরে সিংহাসনে এসে বসলেন এবং লোকদের কাছে ভাষণ দিতে লাগলেন। 22 লোকরা চিৎকার করতে লাগল, “এ-তো মানুষের কন্ঠস্বর নয়, এ যে ঈশ্বরের কন্ঠস্বর!” 23 হেরোদ এই প্রশংসা কুড়ালেন। ঈশ্বরকে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দিলেন না। হঠাৎ প্রভুর এক দূত এসে হেরোদকে আঘাত করলে তিনি অসুস্থ হলেন। তাঁর শরীর কীটে খেয়ে ফেলল, ফলে তিনি মারা গেলেন।
24 এদিকে ঈশ্বরের বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল আর বহু লোক তাতে বিশ্বাস করল।
25 বার্ণবা ও শৌল জেরুশালেমে তাঁদের কাজ সেরে আন্তিয়খিয়ায় ফিরে গেলেন। তাঁরা যোহন, যাকে মার্ক বলে, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন।
ঈশ্বর রাজা সিদিকিয়ের অনুরোধ বাতিল করে দিলেন
21 যিরমিয়র কাছে এই বার্তা এসেছিল যখন যিহূদার রাজা সিদিকিয় যিরমিয়র কাছে দুজন লোককে পাঠিয়েছিল: পশ্হূর এবং যাজক সফনিয় তখন এই বার্তা যিরমিয়র কাছে এনেছিল। পশ্হূর ছিল মল্কিয়ের পুত্র এবং সফনিয় ছিল মাসেয়ের পুত্র। পশ্হূর এবং সফনিয় যিরমিয়র জন্য একটি বার্তা বয়ে এনেছিল। 2 পশ্হূর ও সফনিয় যিরমিয়কে বলেছিল, “আমাদের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো। প্রভুকে জিজ্ঞেস করো কি ঘটতে চলেছে। আমরা জানতে চাই কারণ বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসর আমাদের আক্রমণ করেছে। হয়তো প্রভু আমাদের জন্য অতীতে যেমন করেছিলেন তেমনি চমৎকার ও শক্তিশালী জিনিষগুলি তিনি করবেন। প্রভুই হয়তো নবূখদ্রিৎসরকে আমাদের প্রতি আক্রমণ থেকে বিরত করবেন।”
3 তখন যিরমিয়, পশ্হূর এবং সফনিয়কে উত্তরে বলল, “রাজা সিদিকিয়কে বলো: 4 প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর যা বলেছেন তা হল: ‘তোমার অস্ত্র সম্ভার আছে। এবং সেই অস্ত্র সম্ভার দিয়ে তুমি বাবিলের রাজা এবং বাবিলবাসীদের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করেছো। কিন্তু আমি তোমার সমস্ত অস্ত্র সম্ভার নষ্ট করে দেব। ওগুলো আর কোন কাজেই লাগবে না।
“‘বাবিলের রাজার সৈন্যরা শহর ঘিরে ফেলছে। শীঘ্রই আমি তাদের জেরুশালেমের অভ্যন্তরে নিয়ে আসব। 5 স্বয়ং আমি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। যিহূদার লোকেদের, আমি আমার শক্তিশালী এই হাত দিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। আমি তোমাদের ওপর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ এবং আমি কতখানি ক্রুদ্ধ তা বোঝানোর জন্যই আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ করব। 6 আমি সমস্ত জেরুশালেমবাসীকে হত্যা করব। হত্যা করব পশুদেরও। তারা একটি ভয়ঙ্কর রোগে মারা যাবে যেটি সারা শহরে ছড়িয়ে যাবে।’” 7 ঐটি ঘটবার পর, প্রভু বললেন, “‘আমি বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসরের হাতে যিহূদার রাজা সিদিকিয় ও তার মন্ত্রী মণ্ডলীকে তুলে দেব। জেরুশালেমে যারা মহামারী, যুদ্ধ এবং অনাহারের পরও জীবিত থাকবে তাদেরও আমি তুলে দেব নবূখদ্রিৎসরের হাতে। রাজা নবূখদ্রিৎসরের সেনাবাহিনী যিহূদার লোককে হত্যা করতে চাইবে। তাই যিহূদা এবং জেরুশালেমের লোক মারা যাবে তরবারির আঘাতে। নবূখদ্রিৎসর অবশ্য কোন দয়া দেখাবে না। সে ঐ লোকদের জন্য কোন রকম দুঃখও অনুভব করবে না।’
8 “জেরুশালেমের লোককে এটাও বলে দাও। প্রভু এই কথাগুলি বললেন: ‘আমি তোমাদের জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে বাছতে দেব। 9 জেরুশালেমে যারা বাস করে তারা মরবে। তারা মারা যাবে তরবারির আঘাতে, অথবা মহামারীতে অথবা অনাহারে। কিন্তু কেউ যদি জেরুশালেম থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাবিল সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাহলে সে বেঁচে যাবে। পুরো শহরটাই বাবিলীয় সৈন্য ঘিরে রেখেছে। কেউ বাইরে যেতে পারবে না এবং শহরের ভেতর খাবার আনতে পারবে না। কিন্তু কেউ যদি বাইরে যায় এবং বাবিলের সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণ করে, সে তার জীবন রক্ষা করবে। 10 আমি ঠিক করেছি জেরুশালেম শহরকে বিপদে জর্জরিত করে দেব কিন্তু কোন সাহায্য করব না।’” এই হল প্রভুর বার্তা। আমি জেরুশালেম শহর বাবিলের রাজাকে দিয়ে দেব। সে এই শহরে আগুন লাগিয়ে দেবে।
11 “এই বার্তা যিহূদার রাজপরিবারকে জানিয়ে দাও: ‘প্রভুর বার্তা শোন। 12 দায়ূদ পরিবার, প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন:
“‘তুমি প্রতিদিন লোকদের ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে।
অভিযুক্তদের অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচাবে।
যদি তুমি তা না করো তাহলে আমি ক্রুদ্ধ হব।
আমার ক্রোধ হল আগুনের মতো।
একবার সেই ক্রোধের আগুন জ্বললে কেউ আর তা নেভাতে পারবে না।
এটি ঘটবে কারণ তোমরা পাপ কাজ করেছিলে।’
13 “জেরুশালেম, আমি তোমার বিরুদ্ধে।
তুমি পাহাড়ের চূড়ায় বসে থাকো।
তুমি এই উপত্যকার ওপর রাণীর মত বসে থাকো।
জেরুশালেমের লোকরা তোমরা বলছো,
‘কেউ আমাদের আক্রমণ করতে পারে না।
কেউ আমাদের এই দূর্গসমন্বিত শহরগুলিতে প্রবেশ করতে পারে না।’”
কিন্তু প্রভুর এই বার্তা শোন।
14 “তুমি যোগ্য শাস্তি পাবে।
আমি তোমার অরণ্যে আগুন লাগাবো।
সেই আগুন তোমার চারিদিকের সব কিছু পুড়িয়ে দেবে।”
প্রভুর এই বার্তা শোন।
ঈশ্বরের নিয়ম এবং মানুষের চিরাচরিত প্রথা
(মথি 15:1-20)
7 কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক জেরুশালেম থেকে যীশুর কাছে এলেন। 2 তাঁরা দেখলেন যে, তাঁর কয়েকজন শিষ্য হাত না ধুয়ে খাবার খাচ্ছেন। 3 ফরীশী সম্প্রদায়ের লোকেরা এবং সমস্ত ইহুদীরা প্রাচীন রীতি অনুসারে ভাল করে হাত না ধুয়ে খাবার খেতো না। 4 আর বাজার থেকে কোন কিছু কিনলে তা বিশেষভাবে না ধুয়ে খেতো না। আরও বহু প্রাচীন রীতি নীতি তারা মেনে চলত, যেমন পানপাত্রটি, কলসী ও পিতলের নানা পাত্র ধোওয়া ইত্যাদি।
5 সেই ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার শিষ্যরা প্রাচীন রীতিনীতি অনুসারে চলে না, তারা হাত না ধুয়ে তাদের খাবার খায়, এর কারণ কি?”
6 যীশু তাঁদের বললেন, “ভণ্ডরা, ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই বলেছেন, যেমন লেখা আছে,
‘এই লোকেরা মুখেই শুধু আমাকে সম্মান করে,
কিন্তু তাদের মন আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
7 এরা অনর্থক আমার উপাসনা করে।
কারণ এরা মানুষের তৈরী রীতি-নীতি ঈশ্বরের আদেশ বলে লোকদের শিক্ষা দেয়।’(A)
8 তোমরা ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে মানুষের প্রচলিত প্রথা পালন করে থাকো।”
9 যীশু তাদের আরো বললেন, “তোমরা নিজেদের ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য খুব বুদ্ধি খাটিয়ে ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করছ। 10 মোশি বলেছেন, ‘তুমি নিজের বাবা, মাকে সম্মান করো,’(B) আর ‘যে লোকটি বাবা কিংবা মায়ের নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’(C) 11 কিন্তু তোমরা বল লোকটি যদি তার বাবা-মাকে বলে, ‘আমি যা কিছু দিয়ে তোমাদের উপকার করতে পারতাম, তা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করেছি,’ 12 তখন এমন লোককে তোমরা বাবা বা মায়ের জন্য কিছুই করতে দাও না। 13 ঈশ্বরের বাক্য তোমাদের বংশানুক্রমে পালন করা ঐতিহ্য দ্বারা তোমরা নিষ্ফল কর।”
14 তিনি সমস্ত লোককে আবার তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “তোমরা সকলে আমার কথা শোন এবং বোঝ। 15 মানুষের বাইরে এমন কিছু নেই যা ভেতরে গিয়ে তাকে কলুষিত করতে পারে কিন্তু যা যা মানুষের ভেতর থেকে বেরোয় সেটাই মানুষকে কলুষিত করে।” 16 [a]
17 পরে তিনি লোকদের ছেড়ে বাড়িতে ঢুকলে, তাঁর শিষ্যরা তাঁকে সেই দৃষ্টান্তটির অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন। 18 তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরাও কি অবোধ? তোমরা কি বোঝ না, বাইরে থেকে যা কিছু মানুষের ভেতরে যায় তা তাকে কলুষিত করতে পারে না? 19 কারণ এটা তার অন্তরে যেতে পারে না, পাকস্থলীতে যায় এবং তারপর দেহের বাইরে গিয়ে পড়ে।” এই কথার মাধ্যমে তিনি সমস্ত খাবারকেই শুদ্ধ বললেন।
20 তিনি আরও বললেন, “মানুষের অন্তর থেকে যা বার হয়, সেটাই মানুষকে কলুষিত করে। 21 কারণ মানুষের ভেতর অর্থাৎ মন থেকে বার হয় কুৎসিত চিন্তা, লালসা, চুরি, খুন, 22 যৌন পাপ, লোভ, দুষ্টামি, প্রতারণা, অশ্লীলতা, ঈর্ষা, নিন্দা, অভিমান ও অহঙ্কার। 23 এই সমস্ত খারাপ বিষয় মানুষের ভেতর থেকে বার হয় ও মানুষকে কলুষিত করে।”
যীশু একটি অইহুদী স্ত্রীলোককে সাহায্য করলেন
(মথি 15:21-28)
24 পরে তিনি সেই স্থান ছেড়ে সোর অঞ্চলে গিয়ে সেখানে একটা বাড়িতে ঢুকলেন, আর তিনি যে সেখানে এসেছেন সেটা গোপন রাখতে চাইলেন: কিন্তু পারলেন না। 25 যীশুর আসার কথা শুনে একটি স্ত্রীলোক, যার মেয়ের ওপর অশুচি আত্মা ভর করেছিল, সে সঙ্গে সঙ্গে এসে যীশুর পায়ে লুটিয়ে পড়ল। 26 স্ত্রীলোকটি ছিল জাতিতে গ্রীক, সুরফৈনীকী। সে মিনতি করে যীশুকে বলল যেন তিনি তার মেয়ের ভেতর থেকে ভূতকে তাড়িয়ে দেন।
27 তিনি স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “প্রথমে ছেলেমেয়েরা তৃপ্ত হোক্, কারণ ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরকে খাওয়ানো ঠিক নয়।”
28 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “প্রভু এটা সত্য; কিন্তু কুকুররাও তো খাবার টেবিলের নীচে ছেলেমেয়েদের ফেলে দেওয়া খাবারের টুকরোগুলো খেতে পায়।”
29 তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি ভালোই বলেছ, বাড়ি যাও, গিয়ে দেখ ভূত তোমার মেয়েকে ছেড়ে চলে গেছে।”
30 তখন সে বাড়ি গিয়ে দেখতে পেল, মেয়েটি বিছানায় শুয়ে আছে এবং ভূত তার মধ্য থেকে বেরিয়ে গেছে।
এক বধিরের আরোগ্যলাভ
31 পরে তিনি সোর থেকে সীদোন হয়ে দিকাপলি অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গালীল হ্রদের কাছে ফিরে এলেন। 32 তখন কিছু লোক একটা বোবা কালাকে তাঁর কাছে এনে তাঁকে তার ওপর হাত রাখতে মিনতি করল।
33 তিনি তাকে ভীড়ের মধ্যে থেকে এক পাশে এনে তার দুই কানে নিজের আঙ্গুল দিলেন। তারপর থুথু ফেলে তার জিভ ছুঁলেন। 34 আর স্বর্গের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “ইপফাথা!” যার অর্থ “খুলে যাক!” 35 সঙ্গে সঙ্গে লোকটি কানে শুনতে পেল, তার জিভের জড়তা কেটে গেল আর সে ভালভাবেই কথা বলতে লাগল।
36 পরে তিনি তাদের একথা আর কাউকে বলতে নিষেধ করলেন; কিন্তু তিনি যতই বারণ করলেন ততই তারা আরো বেশী করে বলতে লাগল। 37 যীশুর এই কাজ দেখে তারা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গিয়ে বলল, “তিনি যা কিছু করেন তা অপূর্ব। তিনি কালাকে শোনার শক্তি, বোবাকে কথা বলার শক্তি দেন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International