Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ 6

মিদিয়নীয়দের সঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের যুদ্ধ

আবার ইস্রায়েলবাসীরা পাপ কর্মে মেতে উঠল। তাই সাত বছর ধরে প্রভু মিদিয়নদের সহায় হয়ে রইলেন যাতে তারা ইস্রায়েলীয়দের দমিয়ে রাখতে পারে।

মিদিয়ন সম্প্রদায়ের লোকরা ছিল ভীষণ শক্তিশালী। ইস্রায়েলবাসীদের ওপর তারা বেশ অত্যাচার করত। তাই ইস্রায়েলীয়রা পর্বতের নানা গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকত। সেখানেই খাবার দাবার লুকিয়ে রাখত। সেসব জায়গা খুঁজে পাওয়া খুব শক্ত ছিল। তারা যে এরকম সাবধান হয়ে গিয়েছিল তার কারণ মিদিয়নীয় এবং অমালেকীয় সম্প্রদায়ের লোকরা পূর্বদেশ থেকে সবসময় আক্রমণ করতো এবং তাদের ফসল নষ্ট করতো। আক্রমণকারীরা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শিবির গেড়েছিল। তারা অনেক দূরে ঘসা শহর পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত শস্য নষ্ট করে দিয়েছিল। তারা ইস্রায়েলীয়দের খাবার মতো কিছুই অবশিষ্ট রাখল না। তারা তাদের মেষ, গরু, গাধা এসবও কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল। মিদিয়নী়রা ওদের দেশে তাঁবু গেড়েছিল এবং সঙ্গে এনেছিল পরিবারের লোকজন, জীবজন্তু। পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো অগুনতি মানুষ তারা এবং তাদের আনা উটের সংখ্যা গোণা অসম্ভব ছিল। দেশটাকে ওরা একেবারে ছারখার করে দিল। মিদিয়নী়দের অত্যাচারে ইস্রায়েলীয়রা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল। তাই তারা প্রভুর দয়া পাবার জন্যে কেঁদে আকুল হয়ে উঠল।

মিদিয়নের লোকরা অত্যাচারে মেতে উঠেছিল। সেই জন্য ইস্রায়েলীয়রা প্রভুর কৃপার জন্য কেঁদে আকুল হয়ে উঠল। তাই প্রভু তাদের কাছে একজন ভাববাদীকে পাঠালেন। ভাববাদী ইস্রায়েলবাসীদের বললেন, “প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর কি বলেন তা শোন। তিনি বলেছেন, ‘মিশরে তোমরা ক্রীতদাস ছিলে। আমি তোমাদের মুক্ত করে সেই দেশ থেকে নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের মিশরের এবং যারা তোমাদের নির্যাতন করেছে, তাদের সকলের হাত থেকে রক্ষা করেছি। আমি আবার সেই লোকদের তাড়িয়ে বার করে দিয়েছি এবং তাদের দেশ তোমাদের দিয়েছি।’ 10 তারপর আমি তোমাদের বলেছিলাম, ‘আমি তোমাদের প্রভু ঈশ্বর। তোমরা ইমোরীয়দের দেশে বসবাস করবে বটে, কিন্তু কখনই তোমরা তাদের মূর্ত্তির পূজা করবে না।’ কিন্তু তোমরা আমার কথা শোনো নি।”

প্রভুর দূত গিদিয়োন দর্শন করলেন

11-12 সেই সময়, প্রভুর দূত একজন লোকের কাছে এলেন। তার নাম ছিল গিদিয়োন। প্রভুর দূত অফ্রা নামক একটি জায়গায় একটি ওক গাছের নীচে বসলেন। ওক গাছটা ছিল যোয়াশ নামে একজন লোকের। যোয়াশ, গিদিয়োনের পিতা, অবীয়েষ্রীয় বংশের লোক ছিলেন। গিদিয়োন একটি দ্রাক্ষা মাড়াবার জায়গায় কিছু গম মাড়াই করছিলেন। প্রভুর দূত গিদিয়োনের কাছে বসলেন। গিদিয়োন লুকিয়েছিলেন যাতে মিদিয়নরা তাঁকে দেখতে না পায়। প্রভুর দূত গিদিয়োনের সামনে দেখা দিয়ে তাকে বললেন, “হে মহাসৈনিক, প্রভু তোমার সহায়!”

13 গিদিয়োন বললেন, “মহাশয় আপনাকে একটা কথা বলব। প্রভু যদি সত্যিই আমাদের সহায়, তাহলে এত দুঃখ কষ্ট কেন? আমি শুনেছি আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য তিনি অনেক আশ্চর্য কাজ করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন যে প্রভু তাঁদের মিশর থেকে সরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কেবলমাত্র প্রভুর জন্যই মিদিয়নরা আমাদের পরাজিত করতে পেরেছে।”

14 প্রভু গিদিয়োনের দিকে ফিরে বললেন, “তোমার নিজের শক্তিকে কাজে লাগাও। যাও, মিদিয়নের হাত থেকে ইস্রায়েলবাসীদের রক্ষা করো। এ কাজে আমি তোমাকেই পাঠাচ্ছি।”

15 গিদিয়োন বলল, “ক্ষমা করবেন। কি করে আমি ইস্রায়েলকে রক্ষা করব? মনঃশি পরিবারগোষ্ঠীর মধ্যে আমার পরিবারই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল। তাছাড়া এই পরিবারে আমিই সবচেয়ে ছোট।”

16 প্রভু বললেন, “আমি তোমার সঙ্গে আছি। সুতরাং মিদিয়নদের তুমি সহজেই পরাজিত করতে পারবে। এতই সহজ যে, মনে হবে তুমি যেন শুধু একজনের সঙ্গেই যুদ্ধ করছ।”

17 তখন গিদিয়োন প্রভুকে বলল, “যদি আপনি সত্যিই আমার ওপর প্রসন্ন হন তাহলে আপনি যে স্বয়ং প্রভু তার একটা প্রমাণ দিন। 18 দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন চলে যাবেন না। আমি আপনার জন্য নৈবেদ্য আনতে যাচ্ছি। সেই নৈবেদ্য আপনার কাছে নিবেদন করব। আপনি দয়া করে অনুমতি দিন।”

প্রভু বললেন, “আমি তোমার ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।”

19 গিদিয়োন ভেতরে গিয়ে একটি কচি পাঁঠা গরম জলে ফোটালো। তাছাড়া সে প্রায় 20 পাউণ্ড ময়দা দিয়ে খামিরবিহীন রুটি তৈরী করালো। তারপর মাংসটা সে একটা ঝুড়িতে আর ঝোলটা একটা পাত্রে রাখলো। সে মাংস, ঝোল আর রুটি নিয়ে ওক গাছের নীচে প্রভুকে পরিবেশন করল।

20 প্রভুর দূত গিদিয়োনকে বললেন, “মাংস, রুটি ঐখানে পাথরের ওপর রাখো। ঝোলটা ঢেলে দাও।” গিদিয়োন তাই করলো।

21 প্রভুর দূতের হাতে একটি ছড়ি ছিল। মাংস আর রুটির ওপর ছড়িটার ডগা ছোঁয়াতেই পাথর থেকে আগুন ছিটকে বেরল। মাংস রুটি একেবারে পুড়ে গেল। তারপর প্রভুর দূত কোথায় মিলিয়ে গেলেন।

22 তখন গিদিয়োন বুঝতে পারলেন যে তিনি এতক্ষণ প্রভুর দূতের সঙ্গেই কথা বলছিলেন। গিদিয়োন চেঁচিয়ে উঠল, “সর্বশক্তিমান প্রভু! আমি প্রভুর দূতকে মুখোমুখি দেখেছি।”

23 প্রভু বললেন, “শান্ত হও! এর জন্য ভয় পেও না, তুমি মরবে না!”

24 অতঃপর গিদিয়োন সেই জায়গায় প্রভুর উপাসনার জন্য একটি বেদী তৈরী করলেন। সে বেদীর নাম দিলেন, “প্রভুই শান্তি।” অফ্রা শহরে সেই বেদী আজও রয়েছে। এখানেই অবীয়েষ্রীয়দের বংশের লোকরা বসবাস করে।

গিদিয়োন বালের বেদী ভেঙ্গে ফেললেন

25 সেই রাত্রেই প্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “তোমার পিতার একটা সাত বছরের বেশ শক্তসমর্থ ষাঁড় আছে, তাকে সঙ্গে নাও। বালের মূর্ত্তি পূজার জন্য একটি বেদী আছে যেটা তোমার পিতা তৈরী করেছিলেন। বেদীর পাশে একটা কাঠের খুঁটি রয়েছে। খুঁটিটা আশেরার মূর্ত্তিকে পূজা করার জন্য। এবার ঐ ষাঁড়টিকে কাজে লাগাও, যাতে সে ঐ বালের বেদী, আশেরার খুঁটি ভেঙ্গে ফেলতে পারে। 26 ভাঙ্গার পর তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের জন্য উপযুক্ত বেদী তৈরী করো। এই উঁচু জায়গাতেই সেটা তৈরি করো। তারপর এই বেদীতেই ঐ ষাঁড়টিকে বলি দিয়ে পুড়িয়ে দাও। জ্বালানোর জন্য আশেরার খুঁটিটাকে ব্যবহার করো।”

27 গিদিয়োন প্রভুর কথামতো দশ জন ভৃত্য নিয়ে কাজটি করলেন। কিন্তু তাঁর মনে ভয় হল যে, বাড়ির লোকরা আর শহরের সবাই তাঁর কাণ্ড দেখে ফেলবে। অথচ প্রভুর নির্দেশ তাঁকে পালন করতেই হবে। কাজটা তিনি দিনের বেলায় নয়, রাত্রিতেই করলেন।

28 পরদিন সকালে শহরের লোকরা ঘুম থেকে উঠে দেখল, বালের বেদীটা শেষ হয়ে গেছে। তারা এটাও দেখল যে আশেরার খুঁটিও কেটে ফেলা হয়েছে। বালের বেদীর পাশেই ছিল সেই খুঁটি। সেই সঙ্গে তারা দেখলো গিদিয়োনের তৈরি সেই বেদীটা। বেদীর উপর বলি দেওয়া ষাঁড়টিও তাদের চোখে পড়লো।

29 লোকরা এ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কে আমাদের বেদীটা ভেঙ্গেছে? কে আশেরার খুঁটি কেটেছে? কে এই নতুন বেদীটায ষাঁড় বলি দিয়েছে?” এই রকম নানা প্রশ্ন তারা নিজেদের মধ্যে করতে থাকল।

একজন বলল, “যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন এসব করেছে।”

30 তারা যোয়াশের কাছে এল। তারা তাঁকে বলল, “তোমার পুত্রকে নিয়ে এসো। সে বালের বেদী ভেঙ্গেছে। সেই বেদীর পাশে আশেরার খুঁটি সে কেটে ফেলেছে। তার মরণ কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাকে মরতে হবেই।”

31 ঘিরে থাকা লোকদের সামনে যোয়াশ বলল, “তোমরা কি বালের পক্ষ নিতে যাচ্ছ? তোমরা কি বালকে রক্ষা করতে যাচ্ছ? যদি কেউ তার পক্ষ নাও তাহলে কাল সকালের মধ্যেই তাকে মরতে হবে। বাল যদি সত্যিই দেবতা হয় তাহলে যে তার বেদী ভেঙেছে তার বিরুদ্ধে সে নিজেকে রক্ষা করুক।” 32 যোয়াশ বলল, “যদি গিদিয়োন বালের বেদী ভেঙে থাকে তবে বাল তার সঙ্গে বিবাদ করুক।” সেদিন থেকে যোয়াশ গিদিয়োনের একটা নতুন নাম দিলেন। যিরুব্বাল হচ্ছে সেই নতুন নাম।

গিদিয়োনের হাতে মিদিয়নীয়দের পরাজয়

33 মিদিয়নীয়, অমালেকীয় এবং পুর্বদেশের অন্যান্য লোকরা একসঙ্গে মিলে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল। যর্দন নদী পেরিয়ে তারা যিষ্রিয়েল উপত্যকায় শিবির গাড়ল। 34 প্রভুর আত্মা গিদিয়োনের ওপর ভর করলেন। তিনি তাকে প্রচণ্ড শক্তি দিলেন। গিদিয়োন অবীয়েষ্রীয় পরিবারকে আহ্বান করার জন্য শিঙা বাজাল। 35 মনঃশি পরিবারগোষ্ঠী সকলের কাছে সে বার্তাবাহক পাঠাল। বার্তাবাহকরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে বলল। তাছাড়া গিদিয়োন আশের, সবুলূন আর নপ্তালি পরিবারগোষ্ঠীর কাছেও বার্তাবাহক পাঠালেন। এই কথা বার্তাবাহকরা তাদের বললে তারাও গিদিয়োন ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করলো।

36 তখন গিদিয়োন ঈশ্বরকে বললেন, “আপনি আমাকে সাহায্য করবেন বলেছিলেন যাতে ইস্রায়েলবাসীরা রক্ষা পায়। এ কথা যে সত্যি তা প্রমাণ করুন। 37 যে জায়গায় শস্য ঝাড়াই হয় সেখানে আমি একটা মেষের ছাল রেখে দেব। যদি দেখি সব জায়গাই শুকনো অথচ সেই মেষের ছালে শিশির পড়েছে তাহলে বুঝব আপনি আমাকে দিয়ে ইস্রায়েল রক্ষা করবেন। এরকম কথাই তো আপনি বলেছিলেন।”

38 ঠিক সে রকমই ঘটল। পরদিন খুব ভোরে গিদিয়োন ঘুম থেকে উঠে মেষের ছাল নিংড়ে নিলে ছাল থেকে এক বাটি ভর্ত্তি জল বার হল।

39 গিদিয়োন ঈশ্বরকে বলল, “হে প্রভু আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন না। আমি আপনার কাছে শুধু আর একটি জিনিস চাইব। মেষের ছাল নিয়ে আর একবার আপনাকে পরীক্ষা করতে দিন। এবারে ছালটা যেন শুকিয়ে যায় আর চারিদিকের মাটি যেন শিশিরে ভিজে থাকে।”

40 সেদিন রাত্রে ঈশ্বর সে রকমই করলেন। মেষের ছালটাই শুধু শুকিয়ে গেলো আর চারপাশের সমস্ত মাটি শিশিরে শিশিরে ভেজা ভেজা হয়ে রইল।

প্রেরিত 10

পিতর ও কর্ণীলিয়াস

10 কৈসরিয়ায় কর্ণীলিয়াস নামে একজন লোক ছিলেন; ইনি ছিলেন ইতালীয় বাহিনীর একজন সেনাপতি। তিনি ছিলেন ঈশ্বর ভক্ত, তাঁর গৃহস্থ সমস্ত পরিজন সত্যময় ঈশ্বরের উপাসনা করত। তিনি ইহুদীদের মধ্যে গরীব দুঃখীদের অর্থ দিতেন আর সবসময়ই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাতেন। একদিন প্রায় তিনটের সময় এক দর্শনের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন যে ঈশ্বরের এক দূত তাঁর কাছে এসে বলছেন, “কর্ণীলিয়াস!”

কর্ণীলিয়াস স্বর্গদূতের দিকে চেয়ে ভয় পেয়ে বললেন, “মহাশয়, আপনি কি চান?”

সেই স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “কর্ণীলিয়াস তোমার প্রার্থনা ঈশ্বর শুনেছেন; গরীবদের তুমি যে সাহায্য কর, তা তিনি দেখেছেন। ঈশ্বর তোমায় স্মরণ করেছেন। তুমি যাফো শহরে লোকদের পাঠাও, সেখানে শিমোন নামে একজন লোক আছে, যার অপর নাম পিতর; তোমার লোকরা সেখানে গিয়ে তাকে এখানে নিয়ে আসুক। সে চামড়ার ব্যবসায়ী শিমোনের বাড়িতে আছে, সেই বাড়ি সমুদ্রের ধারে।” স্বর্গদূত কথা বলে চলে যাওয়ার পর কর্ণীলিয়াস দুজন কর্মচারীকে ও একজন সৈনিককে ডেকে পাঠালেন। ঈশ্বরভক্ত এই সৈনিকটি কাজে সাহায্য করার ব্যাপারে সব সময়ই কর্ণীলিয়াসের কাছে কাছে থাকত। এই তিন ব্যক্তির কাছে কর্ণীলিয়াস সব কিছু বুঝিয়ে তাদের যাফোতে পাঠালেন।

পরের দিন তারা যখন যাফোর কাছাকাছি পৌঁছলো সেই সময়ে পিতর প্রার্থনা করার জন্য ছাদের উপর উঠে ছিলেন। বেলা তখন ভর দুপুর। 10 পিতরের খিদে পেল এবং তিনি খেতে চাইলেন। নীচে লোকরা তখন পিতরের জন্য খাবার প্রস্তুত করছে, এমন সময় তিনি আবিষ্ট হলেন। 11 তিনি দেখলেন আকাশ মুক্ত হয়েছে আর একটা কিছু নেমে আসছে। সেটা দেখতে একটা বড় চাদরের মত, তার চারটে খুঁট ধরে কেউ যেন তা মাটিতে নামিয়ে দিচ্ছে। 12 তার মধ্যে পৃথিবীর সব রকমের পশু ও সরীসৃপ এবং আকাশের নানা রকমের পক্ষী রয়েছে। 13 এরপর একটা রব পিতরকে বলল, “পিতর ওঠ, এদের মার এবং খাও।”

14 পিতর বললেন, “প্রভু কখনই না! কারণ আমি কখনও কোন অশুদ্ধ বা অপবিত্র কিছু খাই নি।”

15 তখন আবার এই রব শোনা গেল, “ঈশ্বর যা শুদ্ধ করেছেন তা তুমি ‘অশুদ্ধ’ বোলো না!” 16 এইভাবে তিন বার ঘটে যাবার পর সেই চাদরটি আকাশে তুলে নেওয়া হল। 17 পিতর যে দর্শন পেয়েছিলেন তার অর্থ কি হতে পারে তা যখন তিনি মনে মনে চিন্তা করছেন,

সেই সময় কর্ণীলিয়াসের পাঠানো ঐ লোকেরা শিমোনের বাড়ির খোঁজ করতে করতে বাড়ির ফটকে এসে হাজির হল। 18 তারা জিজ্ঞেস করল, “শিমোন, যাঁর অপর নাম পিতর, তিনি কি এ বাড়িতে রয়েছেন?”

19 পিতর তখনও সেই দর্শনের বিষয়ে চিন্তা করছেন, তখন আত্মা তাঁকে বললেন, “দেখ! তিন জন লোক তোমার খোঁজ করছে। 20 তুমি উঠে নীচে যাও, বিনা দ্বিধায় তাদের সঙ্গে যাও, কারণ আমিই তাদের পাঠিয়েছি।” 21 তখন পিতর নীচে গিয়ে সেই লোকদের বললেন, “দেখুন, আপনারা যাকে খুঁজছেন, আমিই সেই লোক। আপনারা এখানে কেন এসেছেন?”

22 তারা বলল, “আমরা সেনাপতি কর্ণীলিয়াসের কাছ থেকে এসেছি। তিনি একজন ধার্মিক লোক, তিনি ঈশ্বরের উপাসনা করেন। ইহুদীদের কাছেও তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। স্বর্গদূত কর্ণীলিয়াসকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনাকে তাঁর বাড়ীতে আসতে আমন্ত্রণ দেওয়া হয়। আপনি কি বলবেন তা যেন তিনি শুনতে পান।” 23 তখন পিতর তাদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে রাতটা তাঁর ওখানে থাকার ব্যবস্থা করলেন।

পর দিন পিতর প্রস্তুত হয়ে সেই লোকদের সঙ্গে রওনা হয়ে গেলেন। যাফো থেকে কয়েকজন বিশ্বাসী ভাইও পিতরের সঙ্গে গেলেন। 24 পরের দিন তাঁরা কৈসরিয়া শহরে এলেন। কর্ণীলিয়াস তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তিনি তাঁর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের তাঁর বাড়িতে ডেকেছিলেন।

25 পিতর যখন ভেতরে গেলেন তখন কর্ণীলিয়াস এসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন; আর উপুড় হয়ে পড়ে পিতরকে প্রণাম জানালেন। 26 কিন্তু পিতর তাঁকে বললেন, “আহা, কি করছেন, উঠুন! আমি তো একজন সামান্য মানুষ মাত্র।” 27 পিতর তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে ভেতরে গিয়ে দেখলেন, সেখানে বহুলোক এসে জড়ো হয়েছে।

28 পিতর তাঁদের বললেন, “আপনারা জানেন, অন্য জাতের লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা বা তাদের বাড়ি যাওয়া ইহুদীদের পক্ষে বিধি-সম্মত কাজ নয়; কিন্তু ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, কোন মানুষকে ‘অশুচি’ বা ‘অপবিত্র’ বলা ঠিক নয়। 29 তাই আমাকে ডেকে পাঠান হল, আর আমি বিনা আপত্তিতে চলে এলাম। এখন আমি জানতে চাই আপনারা কি কারণে আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন।”

30 কর্ণীলিয়াস বললেন, “চারদিন আগে এই সময় আমি আমার ঘরে বসে প্রার্থনা করছিলাম বেলা তখন প্রায় তিনটে, সেই সময় হঠাৎ‌ এক ব্যক্তি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন, তাঁর গায়ে ছিল উজ্জ্বল পোশাক। 31 তিনি বললেন, ‘কর্ণীলিয়াস তোমার প্রার্থনা গ্রাহ্য হয়েছে, আর তুমি গরীব দুঃখীদের যে সাহায্য কর তা-ও ঈশ্বর দেখেছেন। ঈশ্বর তোমাকে স্মরণ করেছেন; 32 তাই তুমি যাফোয় কিছু লোক পাঠাও এবং শিমোন যাকে পিতর বলে তাকে এখানে নিয়ে এস। সমুদ্রের ধারে শিমোন নামে যে চামড়ার ব্যবসায়ী আছে, সে তার বাড়িতে আছে।’ 33 তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে আপনার কাছে লোক পাঠালাম; আর আপনি বড় অনুগ্রহ করে এখানে এসেছেন। এখন আমরা সকলে এখানে ঈশ্বরের সামনে আছি; প্রভু আপনাকে যে সব কথা বলতে আদেশ করেছেন আমরা সকলে তা শুনব।”

কর্ণীলিয়াসের বাড়িতে পিতরের কথা

34 তখন পিতর বলতে শুরু করলেন, “এখন আমি সত্যি সত্যিই বুঝতে পেরেছি যে ঈশ্বর কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না। 35 প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেউ ঈশ্বরের উপাসনা করে ও ন্যায় কাজ করে, ঈশ্বর এমন লোকদের গ্রহণ করেন। 36 তিনি ইস্রায়েলের লোকদের কাছে তাঁর সুসমাচার পাঠিয়েছিলেন। তিনি সেই সুসমাচারে জানালেন যে যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমেই শান্তি লাভ হয়। তিনি সকলেরই প্রভু!

37 “সমগ্র যিহূদাতে কি ঘটেছিল সে সব কথা আপনারা শুনেছেন। যোহন বাপ্তাইজক লোকেদের কাছে বাপ্তিস্মের কথা প্রচার করার পর গালীলে এই ঘটনাগুলি শুরু হয়। 38 আপনারা সেই নাসরতীয় যীশুর বিষয়ে শুনেছেন, শুনেছেন ঈশ্বর কিভাবে তাঁকে পবিত্র আত্মায় ও পরাক্রমের সঙ্গে অভিষেক করেছিলেন। যীশু সর্বত্র মানুষের মঙ্গল করে বেড়াতেন, আর যারা দিয়াবলের কবলে পড়ত তাদের তিনি মুক্ত করতেন, কারণ ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

39 “যিহূদা ও জেরুশালেমে যীশু যা কিছু করেছেন, আমরা তা স্বচক্ষে দেখেছি, আমরা তার সাক্ষী। তারা তাঁকে কাঠের তৈরী এক ক্রুশে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে; 40 কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় জীবিত করেছেন। ঈশ্বর লোকদের কাছে যীশুকে জীবিতরূপে দেখালেন। 41 কিন্তু তিনি সবাইকে দেখা দেন নি। ঈশ্বর পূর্বেই সাক্ষীরূপে যাদের মনোনীত করেছিলেন, কেবল তারাই তাঁকে দেখতে পেয়েছিলেন, আমরাই সেইসব সাক্ষী! মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হবার পর আমরা যীশুর সঙ্গে পান-আহার করেছি;

42 “আর তিনি আমাদের আদেশ দিলেন, যেন আমরা লোকদের মাঝে প্রচার করি আর সাক্ষ্য দিই যে তিনিই সেই ব্যক্তি, যাঁকে ঈশ্বর সমস্ত জীবিত ও মৃত সকলের বিচারকর্তা করে মনোনীত করেছেন। 43 যে কেউ যীশুকে বিশ্বাস করবে, সে পাপের ক্ষমা পাবে। যীশুর নামে ঈশ্বর সেইসব লোকদের পাপ ক্ষমা করবেন। সমস্ত ভাববাদী বলে গেছেন যে এ সত্য।”

অইহুদীদের কাছে পবিত্র আত্মা এলেন

44 পিতর যখন এইসব কথা বলছিলেন, তখন যারা সেখানে সেইসব কথা শুনছিল, তাদের সকলের ওপর পবিত্র আত্মা নেমে এলেন। 45 ইহুদী সম্প্রদায় থেকে যে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা পিতরের সঙ্গে সেখানে এসেছিলেন তাঁরা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন, কারণ অইহুদীদের ওপরও পবিত্র আত্মার দান নেমে এল। 46 কারণ তাঁরা ওদের নানা ভাষায় কথা বলতে ও ঈশ্বরের প্রশংসা করতে শুনলেন। 47 তখন পিতর বললেন, “কেউ কি এই লোকদের জলে বাপ্তাইজ করতে অস্বীকার করতে পারে? আমরা যেমন পবিত্র আত্মা পেয়েছি তারাও তো তেমনি পেয়েছে!” 48 তখন তিনি যীশু খ্রীষ্টের নামে কর্ণীলিয়াস, তার পরিবারের লোকদের ও তাদের বন্ধুদের জলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে আদেশ করলেন। এরপর তাঁরা পিতরকে তাঁদের সঙ্গে কিছু দিন থাকতে অনুরোধ করলেন।

যিরমিয় 19

ভাঙ্গা পাত্র

19 প্রভু আমাকে বলেছিলেন, “যিরমিয়, যাও কুমোরের কাছ থেকে একটা মাটির পাত্র কিনে আনো। খর্পর ফটকের কাছে বেন-হিন্নোম উপত্যকায় যাও। সঙ্গে কিছু নেতা ও যাজককে নাও। সেখানে তাদের আমি যা বলেছি তা বলো। তাদের বলো, ‘যিহূদার রাজা এবং জেরুশালেমের মানুষ, প্রভুর বার্তা শোন! প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর যা বলেছেন তা হল এই: আমি খুব শীঘ্রই এই স্থানে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটাবো। প্রত্যেকে এই ঘটনার কথা শুনে হতবাক হয়ে যাবে, ভয় পাবে। যিহূদার লোকরা আমাকে পরিত্যাগ করেছে বলে আমি এগুলো ঘটাবো। তারা এই দেশটাকে বিদেশী দেবতাদের জায়গা বানিয়ে তুলেছে। যিহূদার লোকরা অন্য দেবতাদের জন্য এই জায়গায় হোমবলি দিয়েছে। তারা অনেক আগে ঐ মূর্ত্তির পূজা করত না। তাদের পূর্বপুরুষরাও ঐ নতুন মূর্ত্তির পূজা করত না। এগুলি সব অন্যান্য দেশের নতুন দেবতা। যিহূদার রাজা এই দেশের মাটি নিরীহ শিশুদের রক্তে ভিজিয়েছে। যিহূদার রাজারা এই উচ্চ স্থানগুলি বাল মূর্ত্তির জন্য তৈরী করেছে। সেই স্থানকে তারা নিজেদের সন্তানদের বাল মূর্ত্তিকে হোমবলি উৎসর্গ হিসেবে ব্যবহার করত। বালের মূর্ত্তিকে হোমবলি দেওয়ার জন্য তারা নিজের সন্তানদের পুড়িয়ে মেরেছে। আমি তাদের এইসব করতে বলিনি। আমি বলিনি তাদের সন্তানকে এভাবে নৈবেদ্য হিসেবে বলি দিতে। আমি কখনো একথা ভাবতেও পারি না। এখন মানুষ এই জায়গাকে তোফত ও হিন্নোম উপত্যকা বলে ডাকে। কিন্তু আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি। এই বার্তাটি হল প্রভুর কাছ থেকে: দিন আসছে, যখন মানুষ এই জায়গাকে নিধন উপত্যকা বলে সম্বোধন করবে। এই জায়গাতেই আমি যিহূদা এবং জেরুশালেমের লোকদের পরিকল্পনাগুলি ধ্বংস করব। শত্রু এই লোকদের তাড়া করবে এবং আমি তরবারির আঘাতে তাদের মৃত্যু দেখব। তাদের মৃতদেহ শকুন এবং বন্য জন্তুরা ছিঁড়ে খাবে। আমি এই শহর পুরোপুরি ধ্বংস করে দেব। জেরুশালেমের পাশ দিয়ে যাবার সময় লোকরা শিস্ দিতে দিতে মাথা নাড়বে। যখন তারা দেখবে এই শহর কি করে ধ্বংস হয়েছিল তখন তারা আশ্চর্য হয়ে যাবে। শত্রু তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে এ শহর ঘিরে ফেলবে। সৈন্যরা লোকদের খাদ্যের সন্ধানে শহরের বাইরে যেতে দেবে না। ফলে তারা অনাহারে কষ্ট পাবে। অনাহারে যন্ত্রণায় তারা তাদের নিজের সন্তানদের শরীর ছিঁড়ে খাবে। এবং তারপর তারা নিজেরাই একে অন্যের মাংস ছিঁড়ে খাবে।’

10 “যিরমিয়, লোকদের এই কথাগুলি বলো। এবং যখন তারা তোমাকে লক্ষ্য করবে তখন তুমি পাত্রটিকে ভেঙে ফেলবে। 11 সেই সময় এই কথাগুলি বলো: ‘প্রভু সর্বশক্তিমান বললেন, এই মাটির পাত্রের মতোই আমি যিহূদা এবং জেরুশালেমকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। যেমন ঐ মাটির পাত্রটিকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। যিহূদার সম্বন্ধেও সেই একই ব্যাপার হবে। যিহূদার সমস্ত মৃত লোকদের তোফতে কবর দেওয়া হবে যতক্ষণ সেখানে কবর দেওয়ার মতো জায়গা অবশিষ্ট থাকবে। 12 আমি যিহূদার মানুষদের অবস্থাও তোফতের মতো করব।’ এই হল প্রভুর বার্তা। 13 ‘জেরুশালেমের প্রত্যেকটি বাড়ি তোফতের মতোই “অপবিত্র” হয়ে গিয়েছে। এমন কি রাজাদের প্রাসাদগুলিও তোফতের মতো ধ্বংস হয়ে যাবে। কেননা, ঐ সব বাড়ির ছাদে বসে মানুষ মূর্ত্তিসমূহের পূজা করেছে। তারা নক্ষত্রদেরও পূজা করেছে এবং তাদের সম্মান জানাতে তাদের উদ্দেশ্যে হোমবলি দিয়েছে। তারা মূর্ত্তিসমূহের পেয় নৈবেদ্য উৎসর্গ করেছে।’”

14 এরপর যিরমিয় তোফত ছেড়ে চলে গেল, সেই জায়গা যেখানে প্রভু তাকে ভাববাণী করতে পাঠিয়েছিলেন। যিরমিয় প্রভুর উপাসনাগৃহে গেল এবং উপাসনাগৃহের চত্বরে উন্মুক্ত জমিতে গিয়ে দাঁড়াল। যিরমিয় সমস্ত মানুষকে বলল: 15 “প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বললেন: ‘আমি বলেছিলাম, আমি জেরুশালেম এবং তার চারপাশের গ্রামগুলিতে অনেক দুর্বিপাক আনব। খুব শীঘ্রই ঐ ঘটনা ঘটাবো। কারণ ঐ লোকরা ভীষণ জেদী। ওরা আমার কথা শুনতে অস্বীকার করেছে এবং আমাকে অমান্য করেছে।’”

মার্ক 5

যীশু একজন অশুচি আত্মায় পাওয়া লোককে সুস্থ করলেন

(মথি 8:28-34; লূক 8:26-39)

এরপর যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা হ্রদের ওপারে গেরাসেনীদের দেশে এলেন। তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথে একটি লোক কবরস্থান থেকে তাঁর সামনে এল, তাকে অশুচি আত্মায় পেয়েছিল। সে কবরস্থানে বাস করত, কেউ তাকে শেকল দিয়েও বেঁধে রাখতে পারত না। লোকে বারবার তাকে বেড়ী ও শেকল দিয়ে বাঁধত; কিন্তু সে শেকল ছিঁড়ে ফেলত এবং বেড়ী ভেঙ্গে টুকরো করত, কেউ তাকে বশ করতে পারত না। সে রাত দিন সব সময় কবরখানা ও পাহাড়ি জায়গায় থাকত এবং চিৎকার করে লোকদের ভয় দেখাত এবং ধারালো পাথর দিয়ে নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করত।

সে দূর থেকে যীশুকে দেখে ছুটে এসে প্রণাম করল। 7-8 আর খুব জোরে চেঁচিয়ে বলল, “হে ঈশ্বরের সবচেয়ে মহান পুত্র যীশু, আপনি আমায় নিয়ে কি করতে চান? আমি আপনাকে ঈশ্বরের দিব্যি দিচ্ছি, আমাকে যন্ত্রণা দেবেন না!” কারণ তিনি তাকে বলেছিলেন, “ওহে অশুচি আত্মা, এই লোকটি থেকে বেরিয়ে যাও।”

তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?”

সে তাঁকে বলল, “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।” 10 তখন সে যীশুর কাছে মিনতি করতে লাগল, যেন তিনি তাদের সেই অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে না দেন।

11 সেখানে পর্বতের পাশে একদল শুয়োর চরছিল, 12 আর তারা (অশুচি আত্মারা) যীশুকে অনুনয় করে বলল, “আমাদের এই শুয়োরের পালের মধ্যে ঢুকতে হুকুম দিন।” 13 তিনি তাদের অনুমতি দিলে সেই অশুচি আত্মারা বাইরে এসে শুয়োরদের মধ্যে ঢুকে পড়ল। তাতে সেই শুয়োরের পাল, কমবেশী দুহাজার শুয়োর দৌড়ে ঢালু পাড় দিয়ে হ্রদে গিয়ে পড়ল এবং ডুবে মরল।

14 তখন যারা শুয়োরগুলোকে চরাচ্ছিল তারা পালিয়ে গেল এবং শহরে ও খামার বাড়িগুলিতে গিয়ে খবর দিল। তখন কি হয়েছে তা দেখার জন্য লোকরা এল। 15 তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, সেই অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকটি, যাকে ভূতে পেয়েছিল, সে কাপড় পরে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বসে আছে। তাতে তারা ভয় পেল, 16 আর যাঁরা ঐ অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকটির ও শুয়োরের পালের ঘটনা দেখেছিল তারা সমস্ত ঘটনা যা ঘটেছিল তা বলল। 17 তখন তারা যীশুকে অনুনয় করে তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বলল।

18 পরে তিনি নৌকায় উঠছেন, এমন সময় যে লোকটিকে ভূতে পেয়েছিল, সে তাঁকে অনুনয় করে বলল, যেন সে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারে। 19 কিন্তু যীশু তাকে অনুমতি দিলেন না, বরং বললেন, “তুমি তোমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে ফিরে যাও আর ঈশ্বর তোমার জন্য যা যা করেছেন ও তোমার প্রতি যে দয়া দেখিয়েছেন তা তাদের বুঝিয়ে বল।”

20 তখন সে চলে গেল এবং প্রভু তার জন্য যা যা করেছেন, তা দিকাপলি অঞ্চলে প্রচার করতে লাগল, তাতে সকলে অবাক হয়ে গেল।

মৃত বালিকার জীবন লাভ ও অসুস্থ স্ত্রীলোকের আরোগ্য লাভ

(মথি 9:18-26; লূক 8:40-56)

21 পরে যীশু নৌকায় আবার হ্রদ পার হয়ে অন্য পাড়ে এলে অনেক লোক তাঁর কাছে ভীড় করল। তিনি হ্রদের তীরেই ছিলেন। 22 আর সমাজগৃহের নেতাদের মধ্যে যায়ীর নামে এক ব্যক্তি এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ে পড়লেন 23 এবং অনেক অনুনয় করে তাঁকে বললেন, “আমার মেয়ে মর মর, আপনি এসে মেয়েটির ওপর হাত রাখুন যাতে সে সুস্থ হয় ও বাঁচে।”

24 তখন তিনি তার সঙ্গে গেলেন। বহুলোক তাঁর পেছন পেছন চলল, আর তাঁর চারদিকে ঠেলাঠেলি করতে লাগল।

25 একটি স্ত্রীলোক বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। 26 অনেক চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে এবং সর্বস্ব ব্যয় করেও এতটুকু ভাল না হয়ে বরং আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।

27 সে যীশুর বিষয় শুনে ভীড়ের মধ্যে তাঁর পিছন দিকে এসে তাঁর পোশাক স্পর্শ করল। 28 সে মনে মনে ভেবেছিল, “যদি কেবল তাঁর পোশাক ছুঁতে পারি, তবেই আমি সুস্থ হব।” 29 আর সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হল এবং সে তার শরীরে অনুভব করল যে সেই রোগ থেকে সুস্থ হয়েছে। 30 যীশু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলেন যে তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বার হয়েছে। তাই ভীড়ের মধ্যে মুখ ফিরিয়ে বললেন, “কে আমার পোশাক স্পর্শ করেছে?”

31 তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “আপনি দেখছেন, লোকরা আপনার ওপরে ঠেলাঠেলি করে পড়ছে, তবু বলছেন, ‘কে আমাকে স্পর্শ করল?’”

32 কিন্তু যে এই কাজ করেছে, তাকে দেখবার জন্য তিনি চারদিকে দেখতে লাগলেন। 33 তখন সেই স্ত্রীলোকটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তার প্রতি কি করা হয়েছে তা জানাতে তাঁর পায়ে পড়ল এবং সমস্ত সত্যি কথা তাঁকে বলল। 34 তখন যীশু তাকে বললেন, “তোমার বিশ্বাস তোমাকে ভাল করেছে, শান্তিতে চলে যাও ও তোমার রোগ থেকে সুস্থ থাক।”

35 তিনি এই কথা বলছেন, সেই সময় সমাজগৃহের নেতা যায়ীরের বাড়ি থেকে লোক এসে বলল, “আপনার মেয়ে মারা গেছে, গুরুকে আর কষ্ট দেবার কোন কারণ নেই।”

36 কিন্তু যীশু তাদের কথায় কান না দিয়ে যায়ীরকে বললেন, “ভয় করো না, কেবল বিশ্বাস রাখো।”

37 আর তিনি পিতর, যাকোব ও যাকোবের ভাই যোহনকে ছাড়া আর কাউকে নিজের সঙ্গে যেতে দিলেন না। 38 পরে তাঁরা সমাজগৃহের নেতার বাড়িতে এসে দেখলেন সেখানে গোলমাল হচ্ছে, কেউ কেউ শোকে চিৎকার করে কাঁদছে ও বিলাপ করছে। 39 তিনি ভিতরে গিয়ে তাদের বললেন, “তোমরা গোলমাল করছ ও কাঁদছ কেন? মেয়েটি তো মরে নি, সে ঘুমিয়ে আছে।” 40 এতে তারা তাঁকে উপহাস করল।

কিন্তু তিনি সকলকে বাইরে বার করে দিয়ে, মেয়েটির বাবা, মা ও নিজের শিষ্যদের নিয়ে যেখানে মেয়েটি ছিল সেখানে গেলেন। 41 আর মেয়েটির হাত ধরে বললেন, “টালিথা কুমী!” যার অর্থ “খুকুমনি, আমি তোমাকে বলছি ওঠ!” 42 মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে উঠে হেঁটে বেড়াতে লাগল। তার বয়স তখন বারো বছর ছিল। তাই দেখে তারা সকলে খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। 43 পরে তিনি তাদের এই দৃঢ় আদেশ দিলেন যাতে কেউ এটা জানতে না পারে; আর মেয়েটিকে কিছু খেতে দিতে বললেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International