Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যিহোশূয় 24

যিহোশূয় বিদায় জানালেন

24 ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠীকে যিহোশূয় এক সঙ্গে শিখিমে জড়ো করলেন। প্রবীণ নেতাদের, পরিবারের কর্তাদের, বিচারকদের এবং পদস্থ কর্মচারীদের তিনি ডাকলেন। তারা সকলেই ঈশ্বরের সামনে দাঁড়ালো।

তারপর যিহোশূয় সকলকে বললেন, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাদের যা যা বলছেন আমি সেসব বলছি। ‘বহুকাল আগে তোমাদের পূর্বপুরুষরা থাকতেন ফরাৎ নদীর ওপারে। আমি অব্রাহামের পিতা, নাহোরের পিতা এবং তেরহ এঁদের মতো লোকদের কথাই বলছি। তখন তাঁরা অন্যান্য দেবতাদের আরাধনা করতেন। কিন্তু আমি প্রভু স্বয়ং তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামকে ফরাৎ নদীর ওপারের দেশ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং তাঁকে কনানের ভেতর দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম এবং তাঁর বংশবৃদ্ধি করেছিলাম। তারপর তাঁকে দিলাম অসংখ্য সন্তান। অব্রাহামকে আমি একটি সন্তান দিলাম। তার নাম ইস‌্হাক। ইস‌্হাককে আমি যাকোব এবং এষৌ নামে দুটি সন্তান দিলাম। এষৌকে দিলাম সেয়ীর পর্বতের চারিদিকের জমি। সেখানে যাকোব আর তার পুত্ররা থাকত না। তারা চলে গিয়েছিল মিশরে।

“‘তারপর আমি মোশি আর হারোণকে মিশরে পাঠালাম। পাঠানোর উদ্দেশ্য মিশর থেকে আমার লোকদের বার করে আনা। আমি মিশরের লোকদের ভয়ঙ্কর কষ্টের মুখে ফেলেছিলাম। আর এইভাবেই আমি তোমাদের লোকদের মিশর থেকে বার করে আনলাম। এভাবেই তোমাদের পূর্বপুরুষদের আমি মিশর থেকে নিয়ে এসেছিলাম। লোহিত সাগরের দিকে তারা চলে এসেছিল আর তাদের পিছু নিয়েছিল মিশরীয়রা। তাদের ছিল কত রথ, কত ঘোড়া আর কত লোক। তাই লোকরা আমার কাছে অর্থাৎ‌ প্রভুর কাছে সাহায্য ভিক্ষা করল। আমি মিশরের লোকদের ঘোর কষ্টের মধ্যে ফেললাম। আমি প্রভু সমুদ্র দিয়ে তাদের আড়াল করলাম। তোমরা তো নিজেরাই দেখেছিলে মিশরের সৈন্যবাহিনীর কি অবস্থা আমি করেছিলাম।

“‘তারপর তোমরা বহুদিন মরুভূমিতে কাটিয়েছিলে। এরপর আমি তোমাদের নিয়ে এসেছিলাম ইমোরীয়দের দেশে। দেশটা ছিল যর্দনের পূর্বতীরে। ওরা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল বটে, কিন্তু আমি তাদের হারাবার জন্য তোমাদের শক্তি দিয়েছিলাম। তাদের বিনাশ করার মতো ক্ষমতা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম। তারপর তোমরা সেই দেশের দখল নিলে।

“‘তারপর মোয়াবের রাজা বালাক সিপ্পোরের পুত্র ইস্রায়েলবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তোড়জোড় করতে লাগল। সে ডেকে পাঠাল বালামকে। বালাম হচ্ছে বিয়োরের পুত্র। সে বালামকে তোমাদের অভিশাপ দিতে বলল। 10 কিন্তু আমি প্রভু, বালামের অভিশাপ শুনতে সম্মত হলাম না। অভিশাপের বদলে সে তোমাদের করল আশীর্বাদ। একবার নয়, বারবার। এভাবেই আমি তোমাদের বাঁচিয়েছিলাম। আমি তোমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলাম।

11 “‘তারপর তোমরা যর্দন নদী পেরিয়ে যিরীহোয এলে। যিরীহোর লোকরা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করল। তাছাড়া ইমোরীয়, পরিষীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, গির্গাশীয়, হিব্বীয় আর যিবূষীয় লোকরাও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু সমস্ত যুদ্ধেই আমি তোমাদের জিতিয়ে দিলাম। 12 তোমাদের সৈন্যরা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি তাদের আগে আগে ভীমরুল পাঠালাম। ভীমরুলের ভয়েই লোকরা পালিয়ে গেল। তাই তরবারি, তীরধনুক ছাড়া তোমরা সেই দেশ জয় করে নিলে।

13 “‘আমি প্রভু তোমাদের সেই জমি-জায়গা দিয়েছিলাম। তোমরা ঐসব শহর তৈরী কর নি, আমিই সেসব তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আজ তোমরা সেই সব জায়গায় আর শহরে বসবাস করছ। দ্রাক্ষার বাগান, জলপাইগাছ সবই তোমাদের আছে। কিন্তু একটা গাছের চারাও তোমাদের পুঁতে দিতে হয় নি।’”

14 তখন যিহোশূয় লোকদের বললেন, “এখন শুনলে তো প্রভুর বাণী। তাই বলছি তোমরা অবশ্যই প্রভুকে শ্রদ্ধাভক্তি করবে এবং আন্তরিকভাবে তাঁর সেবা করবে। তোমাদের পূর্বপুরুষরা যে সব মূর্ত্তির পূজা করেছিল, তাদের তোমরা ছুঁড়ে ফেলে দাও। বহুকাল আগে এইসব ঘটনা ঘটেছিল ফরাৎ নদীর ওপারে আর মিশরে। এখন থেকে তোমরা শুধু প্রভুরই সেবা করবে।

15 “কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে, তোমরা চাও না এই প্রভুর সেবা করতে। তাহলে আজই তোমরা নিজেরাই ঠিক করো কাকে তোমরা সেবা করবে। ফরাৎ নদীর অন্য পারে তোমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব দেবতাদের পূজা করত তোমরা কি তাদের সেবা করবে, নাকি এদেশের ইমোরীয়রা যে সব দেবতাদের উপাসনা করত তাদের সেবা করবে? নিজেরাই সেটা ঠিক করো। কিন্তু আমি আর আমার পরিবার সম্পর্কে বলতে পারি, আমরা প্রভুরই সেবা করব।”

16 তখন লোকরা উত্তর দিল, “আমরা প্রভুর সেবা থেকে কখনই বিরত হবো না। আমরা কখনই অন্য দেবতাদের পূজা করবো না। 17 আমরা জানি প্রভু আমাদের ঈশ্বরই মিশর থেকে আমাদের বার করে এনেছিলেন। সে দেশে আমরা ছিলাম ক্রীতদাস। কিন্তু প্রভু সেখানে আমাদের জন্য মহাকার্য সাধন করেছিলেন। সে দেশ থেকে তিনিই আমাদের উদ্ধার করেছিলেন। অন্যান্য দেশে যাবার সময় তিনিই আমাদের রক্ষা করেছিলেন। 18 সেই সব দেশে বসবাসকারী লোকদের পরাজিত করতে প্রভুই আমাদের সাহায্য করেছিলেন। আমরা আজ যেখানে রয়েছি সেখানে ইমোরীয়দের পরাজিত করতে তিনিই আমাদের সাহায্য করেছিলেন। তাই আমরা তাঁর সেবা করতে থাকব। কেন? কারণ তিনিই আমাদের ঈশ্বর।”

19 যিহোশূয় বললেন, “মিথ্যা কথা। তোমরা প্রভুর সেবা চিরকাল করতে পারবে না। প্রভু ঈশ্বর পরম পবিত্র। প্রভুর লোকরা যদি অন্য দেবতার পূজা করে ঈশ্বর তাদের ঘৃণা করেন। এইভাবে তোমরা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাও তাহলে তিনি তোমাদের ক্ষমা করবেন না। 20 কিন্তু তোমরা তো প্রভুকে ছেড়ে অন্যান্য দেবতাদেরই আরাধনা করবে। তাহলে প্রভু তোমাদের সাংঘাতিক দুর্ভোগ দেবেন এবং তিনি তোমাদের বিনাশ করবেন। প্রভু তোমাদের মঙ্গল সাধন করেছেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করলে তিনি তোমাদের ধ্বংস করবেন।”

21 লোকরা যিহোশূয়কে বলল, “না! আমরা তাঁর বিরুদ্ধে যাব না। আমরা প্রভুরই সেবা করব।”

22 যিহোশূয় বললেন, “তোমরা নিজেদের দিকে তাকাও। এখানে যারা এসেছে তাদের দিকে তাকাও। তোমরা কি সব জেনে শুনে সম্মত আছে যে তোমরা প্রভুর সেবা করবে? তোমরা সকলে এই ঘোষণার সাক্ষী আছ তো?”

তারা বলল, “হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী হলাম। আমরা প্রভুর সেবা করব বলে যে কথা দিলাম, তা যাতে পালন করতে পারি সে বিষয়ে আমরা লক্ষ্য রাখব।”

23 তখন যিহোশূয় বললেন, “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মূর্ত্তিগুলো আছে তা তোমরা ছুঁড়ে ফেলে দাও। ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরকে তোমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে ভালোবাসো।”

24 তারা যিহোশূয়কে বলল, “আমরা আমাদের প্রভু ঈশ্বরের সেবা করব। আমরা তাঁর আদেশ পালন করব।”

25 তাই সেদিন যিহোশূয় শিখিম শহরে তাদের সঙ্গে এক চুক্তি করলেন। শিখিম শহরে এই চুক্তি হল তাদের কাছে নিয়মের মতো, যে নিয়ম তারা পালন করবে। 26 যিহোশূয় সে সব ঈশ্বরের বিধির পুস্তকে লিখে রাখলেন। তারপর যিহোশূয় একটা বিরাট পাথর দেখতে পেলেন। সেই পাথরটাই হচ্ছে চুক্তির সাক্ষ্য প্রমাণ। প্রভুর পবিত্র তাঁবুর কাছে ওক গাছের নীচে সেই পাথরটিকে তিনি স্থাপন করলেন।

27 তখন যিহোশূয় সমস্ত লোকদের বললেন, “আজ আমরা তোমাদের যা বললাম এই পাথর সে সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবে। এই পাথরটি হবে সেই বস্তু যা তোমাদের মনে করিয়ে দেবে আজ কি হল এবং এটি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভু, ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ করতে বিরত করবার জন্য একটি সাক্ষী হয়ে থাকবে।”

28 তারপর যিহোশূয় সকলকে বাড়ী চলে যেতে বললেন। সকলে যে যার জায়গায় ফিরে গেল।

যিহোশূয়র মৃত্যু

29 তারপর নূনের পুত্র যিহোশূয় মারা গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 110 বছর। 30 তাঁর নিজের জায়গা তিন্নত্‌-সেরহে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। গাশ পর্বতের উত্তরে পাহাড়ী শহর ইফ্রয়িমে এই তিন্নত্‌ সেরহ অবস্থিত।

31 যিহোশূয় যতদিন বেঁচে ছিলেন ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুর সেবা করেছিল। এমনকি যিহোশূয়র মৃত্যুর পরও তারা প্রভুর সেবা চালিয়ে গেল। যতদিন তাদের নেতারা বেঁচেছিলেন লোকরা প্রভুর সেবা করেছিল। এই নেতারা ইস্রায়েলের জন্য প্রভুর সমস্ত কর্মকাণ্ড সচক্ষে দেখেছিলেন।

যোষেফের গৃহে প্রত্যাবর্তন

32 মিশর ছেড়ে চলে আসার সময় ইস্রায়েলবাসীরা সঙ্গে করে এনেছিল যোষেফের অস্থি। তারা শিখিমে তাঁর অস্থিগুলি সমাহিত করল। তারা সেই জায়গায় কবর দিল যে জায়গাটি যাকোব 100টি খাঁটি রূপোর মুদ্রা দিয়ে শিখিমের পিতা হমোরের কাছ থেকে কিনেছিলেন। এই জায়গাটিতে যোষেফের সন্তান সন্ততিরা বাস করছে।

33 হারোণের পুত্র ইলিয়াসর মারা গেলে গিবিয়ায় তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। গিবিয়া ইফ্রয়িমের পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত। ইলিয়াসরের পুত্র পীনহসকে গিবিয়া দান করা হয়েছিল।

প্রেরিত 4

ইহুদী মহাসভার সামনে পিতর ও যোহন

পিতর ও যোহন যখন লোকদের সাথে কথা বলছিলেন, তখন মন্দির থেকে ইহুদী যাজকরা, মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর সেনাপতি ও সদ্দূকীরা তাঁদের কাছে এসে হাজির হল। পিতর ও যোহন লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন ও মৃতদের মধ্য থেকে যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে লোকদের কাছে বলছিলেন বলে ঐ লোকরা বিরক্ত হয়েছিল। তারা পিতর ও যোহনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল ও পরের দিন পর্যন্ত তাদের কারাগারে রাখল কারণ তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনেকে যারা পিতর ও যোহনের মুখ থেকে সেই শিক্ষা শুনেছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই যীশুকে বিশ্বাস করল। যারা বিশ্বাস করল, সেই বিশ্বাসীদের মধ্যে পুরুষ মানুষই ছিল প্রায় পাঁচ হাজার।

পরের দিন তাদের ইহুদী নেতারা, সমাজপতি ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে জেরুশালেমে জড়ো হলেন। সেখানে হানন মহাযাজক, কায়াফা, যোহন, আলেকসান্দার ও মহাযাজকের পরিবারের সব লোক ছিলেন। পিতর ও যোহনকে তাদের সামনে দাঁড় করিয়ে ইহুদী নেতারা প্রশ্ন করলেন, “তোমরা কোন্ শক্তিতে বা অধিকারে এসব কাজ করছ?”

তখন পিতর পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন, “মাননীয় জন-নেতৃবৃন্দ ও সমাজপতিরা: একজন খোঁড়া লোকের উপকার করার জন্য যদি আজ আমাদের প্রশ্ন করা হয় যে সে কিভাবে সুস্থ হল, 10 তাহলে আপনারা সকলে ও ইস্রায়েলের সকল লোক একথা জেনে রাখুন, যে এটা সেই নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের শক্তিতে হল! যাঁকে আপনারা ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করেছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। হ্যাঁ, তাঁরই মাধ্যমে এই লোক আজ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 11 যীশু হলেন

‘সেই পাথর যাকে রাজমিস্ত্রিরা অর্থাৎ আপনারা অগ্রাহ্য করে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
    তিনিই এখন কোণের প্রধান পাথর হয়ে উঠেছেন।’(A)

12 যীশুই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। জগতে তাঁর নামই একমাত্র শক্তি যা মানুষকে উদ্ধার করতে পারে।”

13 পিতর ও যোহনের নির্ভীকতা দেখে ও তাঁরা যে লেখাপড়া না জানা সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পেরে পর্ষদ আশ্চর্য হয়ে গেল। তখন তারা বুঝতে পারল যে পিতর ও যোহন যীশুর সঙ্গে ছিলেন। 14 যে লোকটি সুস্থ হয়েছিল, সে পিতর ও যোহনের সঙ্গে আছে দেখে পর্ষদ কিছুই বলতে পারল না।

15 তারা পিতর ও যোহনকে সভাকক্ষ থেকে বাইরে যেতে বলল। তাঁরা বাইরে গেলে নেতৃবর্গ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল, 16 “এই লোকদের নিয়ে কি করা যায়? কারণ এটা ঠিক যে ওরা যে উল্লেখযোগ্য অলৌকিক কাজ করেছে তা জেরুশালেমের সকল লোক জেনে গেছে; আর আমরাও একথা অস্বীকার করতে পারি না। 17 কিন্তু একথা যেন লোকদের মধ্যে আর না ছড়ায়়, তাই এস আমরা এদের ভয় দেখিয়ে সাবধান করে দিই, যেন এই লোকের নামের বিষয় উল্লেখ করে তারা কোন কথা না বলে।”

18 তাই তারা পিতর ও যোহনকে আবার ভেতরে ডাকল; আর যীশুর নামে কোন কিছু বলতে বা শিক্ষা দিতে নিষেধ করল। 19 কিন্তু পিতর ও যোহন এর উত্তরে তাদের বললেন, “আপনারাই বিচার করুন, ঈশ্বরের বাক্যকে অমান্য করা বা আপনাদের বাধ্য থাকা কোনটি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক হবে? 20 কারণ আমরা যা দেখেছি ও শুনেছি তা না বলে থাকতে পারব না।”

21-22 এরপর তারা পিতর ও যোহনকে আরো কিছুক্ষণ শাসিয়ে ছেড়ে দিল। তারা ওঁদের শাস্তি দেবার মতো কোন কিছুই পেল না, কারণ যা ঘটেছিল তা দেখে সব লোক ঈশ্বরের প্রশংসা করছিল। আর যে লোকটির ওপর আরোগ্যদানের এই অলৌকিক কাজ হয়েছিল, তার বয়স চল্লিশের ওপর ছিল।

বিশ্বাসীদের কাছে পিতর ও যোহনের প্রত্যাবর্তন

23 পিতর ও যোহন ছাড়া পেয়ে নিজের লোকদের কাছে ফিরে গেলেন, আর প্রধান যাজকগণ ও ইহুদী নেতারা তাঁদের যা যা বলেছিলেন, সে সব কথা তাঁদের বললেন। 24 একথা শুনে বিশ্বাসীরা সকলে সমবেত কণ্ঠে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এই প্রার্থনা জানাল, “প্রভু, আকাশমণ্ডল, পৃথিবী, সমুদ্র আর এসবের মধ্যে যা কিছু আছে সে সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তুমিই। 25 তুমি তোমার দাস, আমাদের পিতৃপুরুষ দায়ূদের মুখ দিয়ে পবিত্র আত্মার দ্বারা বলেছ:

‘জাতিবৃন্দ কেন ক্রুদ্ধ হল?
কেনই বা লোকেরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অসার পরিকল্পনা করল?

26 ‘জগতের রাজারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল,
    আর শাসকরা প্রভু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ও তাঁর খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে এক হল।’(B)

27 হ্যাঁ, এই শহরেই তোমার পবিত্র দাস যীশুর বিরুদ্ধে, যাকে তুমি অভিষিক্ত করেছ তাঁর বিরুদ্ধে হেরোদ, পন্তীয়, পীলাত, ইহুদীরা ও অইহুদীরা এক হয়েছিল। 28 তোমার শক্তিতে ও তোমার ইচ্ছায় পূর্বেই যা ঘটবে বলে তুমি ঠিক করেছিলে, সেই কাজ করতেই তারা একত্র হয়েছিল। 29 আর এখন, হে প্রভু, তাদের এই শাসানি তুমি শোন। প্রভু, আমরা তোমার দাস; তোমার এই দাসদের সাহসের সঙ্গে তোমার কথা বলবার ক্ষমতা দাও। 30 লোককে সুস্থ করে দেবার জন্য তোমার হাত তুমি বাড়িয়ে দাও; তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে যেন অলৌকিক ও আশ্চর্য সব কাজ সম্পন্ন হয়।”

31 সেই বিশ্বাসীরা প্রার্থনা শেষ করলে, তাঁরা যেখানে একত্রিত হয়েছিলেন সেই জায়গা কেঁপে উঠল। তাঁরা সকলে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন আর অসীম সাহসে ঈশ্বরের কথা বলতে লাগলেন।

বিশ্বাসীদের সহভাগীতা

32 বিশ্বাসীদের সকলের হৃদয় ও মন এক ছিল। একজনও নিজের সম্পত্তির কোন কিছুই নিজের বলে মনে করতেন না, কিন্তু তাঁদের সকল জিনিস তাঁরা পরস্পর ভাগ করে নিতেন। 33 প্রেরিতরা মহাশক্তিতে মৃতদের মধ্য থেকে প্রভু যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, আর তাঁদের সকলের ওপর মহা আশীর্বাদ ছিল। 34 তাঁদের দলের মধ্যে কারোর কোন কিছুর অভাব ছিল না, কারণ যাঁদের জমি-জমা বা বাড়ি ছিল তাঁরা তা বিক্রি করে সেই সম্পত্তির মূল্য নিয়ে এসে প্রেরিতদের দিতেন। 35 পরে যাঁর যেমন প্রয়োজন, প্রেরিতরা তাঁকে তেমনি দিতেন।

36 বিশ্বাসীবর্গের একজনের নাম ছিল যোষেফ; প্রেরিতরা তাঁকে বার্ণবা বলে ডাকতেন; এই নামের অর্থ “উৎসাহদাতা।” ইনি ছিলেন লেবীয়, কুপ্রীয়ে তাঁর জন্ম হয়। 37 যোষেফের একটি জমি ছিল, তিনি তা বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে এসে প্রেরিতদের কাছে দিলেন।

যিরমিয় 13

কটিবস্ত্রের সংকেত

13 প্রভু আমাকে যা বলেছেন তা হল: “যিরমিয়, যাও একটি ক্ষৌম কটি বস্ত্র কিনে আনো এবং ওটি তোমার কটিদেশের চারপাশে শক্ত করে জড়াও। ওটিকে ভিজতে দিও না।”

সুতরাং আমি একটি কটি বস্ত্র কিনে আনলাম। প্রভুর কথা মতো কোমরে জড়িয়ে নিলাম। দ্বিতীয়বার প্রভুর বার্তা আমার কাছে এলো। এই ছিল বার্তা: “যিরমিয়, কিনে আনা কটিটি পরে তুমি ফরাৎ নদীর কাছে যাও। সেখানে কটিটি একটি পাথরের ফাঁকে লুকিয়ে রাখো।”

সুতরাং আমি প্রভুর কথা মতো ফরাৎ নদীর কাছে গিয়ে কটিটি লুকিয়ে রাখলাম। অনেকদিন পরে প্রভু আমাকে বললেন, “যিরমিয়, এখন তুমি আবার ফরাৎ নদীর কাছে গিয়ে লুকোনো কটিটি নিয়ে এসো।”

তখন আমি আবার ফরাতের কাছে গিয়ে পাথরের ফাঁক থেকে কটিটি বার করার পর দেখলাম যে ওটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর কোন মতেই ওটা পরার মতো অবস্থায় নেই।

তখন আবার প্রভুর বার্তা আমার কাছে এলো। প্রভু যা বলেছিলেন, “যেমন ঐ কটিটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ঠিক তেমনি আমি যিহূদা এবং জেরুশালেমের অহঙ্কারী মানুষদের ধ্বংস করে দেব। তাদের দর্প চূর্ণ করব। 10 আমি যিহূদার সমস্ত দুষ্ট ও অহঙ্কারী লোকদের ধ্বংস করে দেব। তারা আমার বার্তাসমূহ শুনতে অস্বীকার করেছিল। তারা একগুঁয়ে, জেদী। তারা নিজের মতো করে চলেছে। তারা অন্য দেবতাদের পূজা করেছে। যিহূদার লোকদের অবস্থা হবে ঐ কটির মতো। তারা ধ্বংস হবেই। 11 একজন ব্যক্তি যেমন করে কোমরে কটি বস্ত্র জড়ায ঠিক তেমন করে আমি ইস্রায়েল এবং যিহূদার সমস্ত লোককে আমার কোমরের চারপাশে জড়িয়ে নিলাম।” এটি হল প্রভুর বার্তা। “আমি ঐ সব মানুষদের নিজের লোকে পরিণত করার জন্যই এটা করেছিলাম। ওরা আমার নিজস্ব লোকে পরিণত হলে আমি মান সম্মান খ্যাতি সব কিছু পেতাম। কিন্তু ওরা আমার কথা শুনল না।”

যিহূদার প্রতি সতর্কবাণী

12 “যিরমিয়, যিহূদার লোকদের বলো: ‘প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর যা বললেন তা হল: চামড়ার তৈরী প্রত্যেকটি দ্রাক্ষারস রাখার থলি দ্রাক্ষারসে ভরে থাকা উচিৎ‌।’ ওরা তোমাকে মৃদু হেসে বলবে, ‘আমরা কি জানি না যে প্রতিটি চামড়ার তৈরী দ্রাক্ষারস রাখার থলি দ্রাক্ষারসে পূর্ণ থাকা উচিৎ‌?’ 13 তখন তুমি তাদের বলবে, ‘প্রভু যা বলেছেন তা হল: আমি এই দেশের সমস্ত লোককে অর্থাৎ‌ দায়ূদের সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজাদের, যাজকদের, ভাববাদীদের এবং জেরুশালেমের সমস্ত লোকদের মত্ততায় পূর্ণ করব। 14 যিহূদার লোকরা আমার কারণে হোঁচট খাবে এবং পরস্পরের ঘাড়ে পড়বে। পিতাপুত্র মিলেও পা জড়াজড়ি করবে আর হোঁচট খেয়ে আছড়ে পড়বে।’ এই হল প্রভুর বার্তা। ‘আমার সমবেদনাকে আমি যিহূদার লোকদের ধ্বংস করা থেকে বিরত করতে দেব না। যিহূদার লোকদের ধ্বংস করার ক্ষেত্রে আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত হব না।’”

15 মনোযোগ দিয়ে শোন।
    প্রভু তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
    তোমরা গর্ব করো না।
16 তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে সম্মান করো।
তাঁর প্রশংসা করো, না হলে তিনি অন্ধকার বয়ে আনবেন।
    যেখানে তোমরা আলোর জন্য অপেক্ষা করছ এবং আশা করছ,
সেই অন্ধকার পাহাড়গুলিতে হোঁচট খাবার আগে এবং পড়বার আগে
    প্রভুর প্রশংসা কর, নাহলে তিনি সেটাকে ভয়াবহ অন্ধকারে পরিণত করবেন।
    তিনি আলোটিকে গাঢ় অন্ধকারে পরিবর্তিত করবেন।
17 যদি তোমরা প্রভুর কথা না শোন,
    তোমাদের অহঙ্কার আমাকে ভীষণ দুঃখ দেবে।
আমি মুখ লুকিয়ে চিৎকার করে কাঁদব।
    আমার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু-ধারা বইতে থাকবে।
    কারণ প্রভুর পালকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে।
18 রাজা এবং তাঁর স্ত্রীকে বলো,
    “সিংহাসন থেকে নেমে এসো।
    তোমাদের চোখ ধাঁধানো রাজমুকুট মাথা থেকে খসে পড়ছে।”
19 নেগেভের মরু শহরগুলিতে তালা লাগানো হয়েছে
    এবং কোন ব্যক্তি তা খুলতে পারবে না।
যিহূদার সমস্ত মানুষকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।
    তাদের জেলের কয়েদীদের মতো বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

20 জেরুশালেম দেখ! উত্তর দিক থেকে শত্রুরা আসছে।
    তোমার মেষের পাল[a] কোথায়?
ঈশ্বর তোমাদের ঐ চমৎ‌‌কার মেষের পালটি দিয়েছিলেন।
    তোমাদের ওটার দেখাশোনা করবার কথা ছিল।
21 প্রভু যখন তোমার কাছে তোমার মেষের পালের হিসেব দিতে বলবেন,
    তখন তুমি কি বলবে?
    কথা ছিল তুমি তোমার লোকদের ঈশ্বর সম্বন্ধে শিক্ষা দেবে।
তোমার নেতাদের তাদের নেতৃত্ব দেবার কথা ছিল।
    কিন্তু তারা তাদের কাজ করেনি।
তাই তোমাকে বেশী দুঃখ যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।
    সে যন্ত্রণা হবে একজন মহিলার প্রসব যন্ত্রণার মতো।
22 তুমি হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করবে,
    “আমার ক্ষেত্রে এইসব খারাপ ব্যাপারগুলো কেন ঘটল?”
তোমার অনেক পাপের জন্য ঐ সব ঘটেছে।
    তোমার পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং তোমার জুতোকেই নিয়ে চলে গেছে।
    তারা তোমাকে বিব্রত, বিরক্ত করার জন্যই ওগুলো করেছে।
23 একজন কালো চামড়ার মানুষ কখনও তার গায়ের রক্ত পাল্টাতে পারে না।
    এবং চিতাও তার গায়ের দাগ পাল্টাতে পারে না।
সেই রকম ভাবে জেরুশালেম তুমি কোনদিন পালটাবে না এবং ভাল কাজ করতে পারবে না।
তুমি সর্বদাই খারাপ কাজ করবে।

24 “আমি তোমাকে জোর করে ঘর ছাড়া করবো।
    তুমি দিক্‌বিদিকে ছোটাছুটি করবে।
    তুমি ভূষির মতো মরু ঝড়ে উড়ে যাবে।
25 এসবই তোমাদের ভাগ্যে ঘটবে।
    তোমাদের ব্যাপারে আমার এটাই পরিকল্পনা।”
এই হল প্রভুর বার্তা।
“কেন এটা ঘটবে?
    কারণ তুমি আমায় ভুলে গিয়েছিলে।
    তুমি মূর্ত্তিদের বিশ্বাস করেছিলে।
26 জেরুশালেম আমি তোমাকে উলঙ্গ করে ছাড়ব।
সবাই তোমাকে দেখবে।
    তুমি লজ্জিত হবে।
27 তোমার ভয়াবহ কাজ আমি দেখেছি।
    আমি তোমাকে একজন ব্যাভিচারিণীর মত হাসিমুখে
    তোমার প্রেমিকদের সঙ্গে যৌনসহবাস করতে দেখেছি।
আমি তোমাকে মাঠে-ঘাটে এবং পাহাড় চূড়ায় বেশ্যার মত ব্যবহার করতে দেখেছি।
জেরুশালেম! এর জন্য তোমার জীবনে চরম দুর্দিন ঘনিয়ে আসবে।
    আমি অবাক হয়ে ভাবছি আর কতদিন তুমি এইসব নোংরা পাপ কাজ করে যাবে।”

মথি 27

রাজ্যপাল পীলাতের কাছে যীশু

(মার্ক 15:1; লূক 23:1-2; যোহন 18:28-32)

27 ভোর হলে প্রধান যাজকরা ও সমাজপতিরা সবাই মিলে যীশুকে হত্যা করার চক্রান্ত করল। তারা তাঁকে বেঁধে রোমীয় রাজ্যপাল পীলাতের কাছে হাজির করল।

যিহূদার আত্মহত্যা

(প্রেরিত 1:18-19)

যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল, সেই যিহূদা যখন দেখল যীশুকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তখন তার মনে খুব ক্ষোভ হল। সে তখন যাজকদের ও সমাজপতিদের কাছে গিয়ে সেই ত্রিশটা রূপোর টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “একজন নিরপরাধ লোককে হত্যা করার জন্য আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁর প্রতি আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি, আমি মহাপাপ করেছি।”

ইহুদী নেতারা বলল, “তাতে আমাদের কি? তুমি বোঝগে যাও।”

তখন যিহূদা সেই টাকা মন্দিরের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিল, পরে বাইরে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরল।

প্রধান যাজকরা সেই রূপোর টাকাগুলি কুড়িয়ে নিয়ে বললেন, “মন্দিরের তহবিলে এই টাকা জমা করা আমাদের বিধি-ব্যবস্থা বিরুদ্ধ কাজ, কারণ এটা খুনের টাকা।” তাই তাঁরা পরামর্শ করে ঐ টাকায় কুমোরদের একটা জমি কিনলেন যাতে জেরুশালেমে যেসব বিদেশী মারা যাবে, তাদের সেখানে কবর দেওয়া যেতে পারে। সেই জন্য ঐ কবরখানাকে আজও লোকে “রক্তক্ষেত্র” বলে। এর ফলে ভাববাদী যিরমিয়র ভাববাণী পূর্ণ হল:

“তারা সেই ত্রিশটা রূপোর টাকা নিল, এটাই হল তাঁর মূল্য, ইস্রায়েলের জনগণই তাঁর মূল্য নির্ধারণ করেছিল। 10 আর প্রভুর নির্দেশ অনুসারেই সেই টাকা দিয়ে তারা কুমোরের জমি কিনেছিল।”[a]

রাজ্যপাল পীলাত ও যীশু

(মার্ক 15:2-5; লূক 23:3-5; যোহন 18:33-38)

11 এদিকে যীশুকে রাজ্যপালের সামনে হাজির করা হল; রাজ্যপাল যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”

যীশু বললেন, “হ্যাঁ, আপনি যেমন বললেন।”

12 কিন্তু প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা সমানে যখন তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিচ্ছিল, তখন তিনি তার একটারও জবাব দিলেন না।

13 তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “ওরা, তোমার বিরুদ্ধে কত দোষ দিচ্ছে, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না?”

14 কিন্তু যীশু তাঁকে কোন জবাব দিলেন না, এমন কি তাঁর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগেরও উত্তর দিলেন না। এতে পীলাত আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

যীশুকে মুক্তি দেবার বিফল চেষ্টা

(মার্ক 15:6-15; লূক 23:13-25; যোহন 18:39–19:16)

15 রাজ্যপালের রীতি অনুসারে প্রত্যেক নিস্তারপর্বের সময় জনসাধারণের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন কয়েদীকে তিনি মুক্ত করে দিতেন। 16 সেই সময় বারাব্বা[b] নামে এক কুখ্যাত আসামী কারাগারে ছিল।

17 তাই লোকরা সেখানে একসঙ্গে জড়ো হলে পীলাত তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের জন্য আমি কাকে ছেড়ে দেব? তোমরা কি চাও, বারাব্বাকে বা যীশু, যাকে খ্রীষ্ট বলে তাকে?” 18 কারণ পীলাত জানতেন, তারা যীশুর ওপর ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিল।

19 পীলাত যখন বিচার আসনে বসে আছেন, সেই সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলে পাঠালেন, “ঐ নির্দোষ লোকটির প্রতি তুমি কিছু করো না, কারণ রাত্রে স্বপ্নে আমি তাঁর বিষয়ে যা দেখেছি তাতে আজ বড়ই উদ্বেগে কাটছে।”

20 কিন্তু প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা জনতাকে প্ররোচনা দিতে লাগল, যেন তারা বারাব্বাকে ছেড়ে দিতে ও যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলে।

21 তখন রাজ্যপাল তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “এই দুজনের মধ্যে তোমরা কাকে চাও যে আমি তোমাদের জন্য ছেড়ে দিই?”

তারা বলল, “বারাব্বাকে!”

22 পীলাত তখন তাদের বললেন, “তাহলে যীশু যাকে মশীহ বলে তাকে নিয়ে কি করব?”

তারা সবাই বলল, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক্।”

23 পীলাত বললেন, “কেন? ও কি অন্যায় করেছে?”

কিন্তু তারা তখন আরো জোরে চিৎকার করতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও!”

24 পীলাত যখন দেখলেন যে তাঁর চেষ্টার কোন ফল হল না, বরং আরো গোলমাল হতে লাগল, তখন তিনি জল নিয়ে লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, “এই লোকের রক্তপাতের জন্য আমি দায়ী নই। এটা তোমাদেরই দায়!”

25 এই কথার জবাবে লোকেরা সমস্বরে বলল, “আমরা ও আমাদের সন্তানরা ওর রক্তের জন্য দায়ী থাকব।”

26 তখন পীলাত তাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দিলেন; কিন্তু যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশে দেবার জন্য সঁপে দিলেন।

পীলাতের সৈন্যরা যীশুকে বিদ্রূপ করতে লাগল

(মার্ক 15:16-20; যোহন 19:2-3)

27 এরপর রাজ্যপালের সেনারা যীশুকে রাজভবনের সভাগৃহে নিয়ে গিয়ে সেখানে সমস্ত সেনাদলকে তাঁর চারধারে জড়ো করল। 28 তারা যীশুর পোশাক খুলে নিল, আর তাঁকে একটা লাল রঙের পোশাক পরাল। 29 পরে কাঁটা লতা দিয়ে একটা মুকুট তৈরী করে তা তাঁর মাথায় চেপে বসিয়ে দিল, আর তাঁর ডান হাতে একটা লাঠি দিল। পরে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, “ইহুদীদের রাজা, দীর্ঘজীবি হোন্!” 30 তারা তাঁর মুখে থুথু দিল ও তাঁর লাঠিটি নিয়ে তাঁর মাথায় মারতে লাগল। 31 এইভাবে তাঁকে বিদ্রূপ করবার পর তারা সেই পোশাকটি তাঁর গা থেকে খুলে নিয়ে তাঁর নিজের পোশাক আবার পরিয়ে দিল, তারপর তাঁকে ক্রুশে দেবার জন্য নিয়ে চলল।

যীশুকে ক্রুশে হত্যা করা হল

(মার্ক 15:21-32; লূক 23:26-39; যোহন 19:17-19)

32 সৈন্যরা যখন যীশুকে নিয়ে নগরের বাইরে যাচ্ছে, তখন পথে শিমোন নামে কুরীশীয় অঞ্চলের একজন লোককে দেখতে পেয়ে যীশুর ক্রুশ বইবার জন্য তাকে তারা জোর করে বাধ্য করল। 33 পরে তারা “গলগথা” নামে এক জায়গায় এসে পৌঁছল। (গলগথা শব্দটির অর্থ “মাথার খুলিস্থান।”) 34 সেখানে পৌঁছে তারা যীশুকে মাদক দ্রব্য মেশানো তিক্ত দ্রাক্ষারস পান করতে দিল; কিন্তু তিনি তা সামান্য আস্বাদ করে আর খেতে চাইলেন না। 35 তারা তাঁকে ক্রুশে দিয়ে তাঁর জামা কাপড় খুলে নিয়ে ঘুঁটি চেলে সেগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। 36 আর সেখানে বসে যীশুকে পাহারা দিতে লাগল। 37 তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের এই লিপি ফলকটি তাঁর মাথার উপরে ক্রুশে লাগিয়ে দিল, “এ যীশু, ইহুদীদের রাজা।”

38 তারা দুজন দস্যুকেও যীশুর সঙ্গে ক্রুশে দিল, একজনকে তাঁর ডানদিকে ও অন্যজনকে তাঁর বাঁ দিকে। 39 সেই সময় ঐ রাস্তা দিয়ে যে সব লোক যাতায়াত করছিল, তারা তাদের মাথা নেড়ে তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, 40 “তুমি না মন্দির ভেঙ্গে আবার তা তিন দিনের মধ্যে তৈরী করতে পার! তাহলে এখন নিজেকে রক্ষা কর। তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে ক্রুশ থেকে নেমে এস।”

41 সেইভাবেই প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ইহুদী নেতারা বিদ্রূপ করে তাঁকে বলতে লাগলেন, 42 “এ লোক তো অপরকে রক্ষা করত, কিন্তু এ নিজেকে বাঁচাতে পারে না! ও তো ইস্রায়েলের রাজা, তাহলে এখন ও ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা ওর ওপর বিশ্বাস করব। 43 ঐ লোকটি ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করে। যদি তিনি চান, তবে ওকে এখনই রক্ষা করুন, কারণ ও তো বলেছে, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র।’” 44 তাঁর সঙ্গে যে দুজন দস্যুকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, তারাও সেইভাবেই তাঁকে বিদ্রূপ করতে লাগল।

যীশুর মৃত্যু

(মার্ক 15:33-41; লূক 23:44-49; যোহন 19:28-30)

45 সেই দিন দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ঢেকে রইল। 46 প্রায় তিনটের সময় যীশু খুব জোরে বলে উঠলেন, “এলি, এলি লামা শবক্তানী?” যার অর্থ, “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?”(A)

47 যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন একথা শুনে বলতে লাগল, “ও এলিয়কে ডাকছে।”

48 তাদের মধ্যে একজন তখনই দৌড়ে গিয়ে একটা স্পঞ্জ কিছুটা সিরকায় ডুবিয়ে দিয়ে একটা নলের মাথায় সেটা লাগিয়ে তা যীশুর মুখে তুলে ধরে তাকে খেতে দিল। 49 কিন্তু অন্যরা বলতে লাগল, “ছেড়ে দাও, দেখি এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না?”

50 পরে যীশু আর একবার খুব জোরে চিৎকার করে প্রাণ ত্যাগ করলেন।

51 সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের মধ্যেকার সেই ভারী পর্দাটা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দুভাগ হয়ে গেল, পৃথিবী কেঁপে উঠল, বড় বড় পাথরের চাঁই ফেটে গেল, 52 সমাধিগুহাগুলি খুলে গেল, আর মারা গিয়েছিলেন এমন অনেক ঈশ্বরের লোকের দেহ পুনরুত্থিত হল। 53 যীশুর পুনরুত্থানের পর এরা কবর ছেড়ে পবিত্র নগর জেরুশালেমে গিয়ে বহুলোককে দেখা দিয়েছিলেন।

54 ক্রুশের পাশে শতপতি ও তার সঙ্গে যাঁরা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা ভূমিকম্প ও অন্য সব ঘটনা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, “সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।”

55 সেখানে বহু স্ত্রীলোক ছিলেন, যাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন। এই মহিলারা গালীল থেকে যীশুর দেখাশোনার জন্য তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন। 56 তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোব ও যোষেফের মা মরিয়ম আর যাকোব ও যোহনের[c] মা।

যীশুর সমাধি

(মার্ক 15:42-47; লূক 23:50-56; যোহন 19:38-42)

57 সন্ধ্যা নেমে আসছে এমন সময় আরিমাথিয়ার যোষেফ নামে এক ধনী ব্যক্তি জেরুশালেমে এলেন; তিনিও যীশুর একজন অনুগামী ছিলেন। 58 পীলাতের কাছে গিয়ে যোষেফ যীশুর দেহটা চাইলেন। তখন পীলাত তাঁকে তা দিতে হুকুম করলেন। 59 যোষেফ দেহটি নিয়ে পরিষ্কার একটা কাপড়ে জড়ালেন। 60 তারপর সেই দেহটা নিয়ে তিনি নিজের জন্য পাহাড়ের গায়ে যে নতুন সমাধিগুহা কেটে রেখেছিলেন, তাতে রাখলেন। পরে সেই সমাধির মুখ বন্ধ করতে বড় একটা পাথর গড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলেন। 61 মরিয়ম মগ্দলীনী ও সেই অন্য মরিয়ম কবরের সামনে বসে রইলেন।

যীশুর সমাধিগুহা পাহারা দেওয়া হল

62 পরের দিন, যখন শুক্রবার শেষ হল, অর্থাৎ প্রস্তুতি পর্বের পরের দিন, প্রধান যাজকরা ও ফরীশীরা গিয়ে পীলাতের সঙ্গে দেখা করল। 63 তারা বলল, “হুজুর, আমাদের মনে পড়ছে সেই প্রতারক তাঁর জীবনকালে বলেছিল, ‘আমি তিনদিন পরে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হব।’ 64 তাই আপনি হুকুম দিন যেন তিন দিন কবরটা পাহারা দেওয়া হয়, তা না হলে ওর শিষ্যরা হয়তো এসে দেহটা চুরি করে নিয়ে গিয়ে বলবে, তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন; তাহলে প্রথমটার চেয়ে শেষ ছলনাটা আরো খারাপ হবে।”

65 পীলাত তাদের বললেন, “তোমাদের কাছে পাহারা দেবার লোক আছে, তোমরা গিয়ে যত ভালভাবে পারো পাহারা দেবার ব্যবস্থা কর।” 66 তখন তারা সকলে গিয়ে কবরের মুখের সেই পাথররাশির উপর সীলমোহর করল ও সেখানে একদল প্রহরী মোতায়েন করে সমাধিটি সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International