Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যিহোশূয় 22

তিনটি পরিবারগোষ্ঠী ঘরে ফিরে গেল

22 তারপর যিহোশূয় রূবেণ, গাদ এবং মনঃশি পরিবারগোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের একটা সভা ডাকলেন। যিহোশূয় তাদের বললেন, “মোশি ছিলেন প্রভুর দাস। মোশি তোমাদের যা বলেছেন তোমরা তার সবই পালন করেছ। তাছাড়া তোমরা আমার নির্দেশও সব পালন করেছ। তোমরা সব সময় ইস্রায়েলের অন্য লোকদের সাহায্য করেছ। তোমাদের প্রভু ঈশ্বর যা যা আদেশ দিয়েছিলেন তোমরা তার সবই অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছ। তোমাদের প্রভু, ঈশ্বর, ইস্রায়েলবাসীদের শাস্তি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর প্রভু প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। সুতরাং এখন তোমরা বাড়ী যেতে পার। প্রভুর দাস মোশি তোমাদের যর্দন নদীর পূর্বতীরের জমি-জায়গা দিয়েছেন। তোমরা এখন সে দেশে অর্থাৎ‌ তোমাদের বাড়ী যাও। কিন্তু মোশি তোমাদের যেসব বিধি পালন করতে বলেছেন সেসব পালন করে চলতে ভুলো না। তোমরা প্রভু ঈশ্বরকে ভালোবাসবে। তাঁর আদেশ পালন করবে। তোমরা সবসময় তাঁকে মেনে চলবে। তোমাদের যতদূর সাধ্য সেই ভাবে তোমরা তাঁর অনুসরণ করবে ও তাঁর সেবা করবে।”

তারপর যিহোশূয় তাদের বিদায় সম্ভাষণ জানালেন। তারা বাড়ী চলে গেল। মোশি মনঃশির অর্ধেক পরিবারগোষ্ঠীকে বাশনের জমি-জায়গা দিয়েছিলেন। বাকী মনঃশির অর্ধেক পরিবারগোষ্ঠীকে তিনি দিয়েছিলেন যর্দন নদীর পশ্চিম তীর। যিহোশূয় তাদের আশীর্বাদ করে নিজের জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, “তোমরা এখন বেশ ধনী হয়েছ। তোমাদের অনেক পশু আছে। তোমাদের আছে অনেক সোনা, রূপো এবং দামী দামী গয়নাগাটি। তোমাদের আছে সুন্দর সুন্দর পোশাক। শত্রুদের কাছ থেকে অনেক কিছুই তোমরা পেয়েছ। এইসব জিনিস তোমাদের ভাইদের সঙ্গে, যারা যর্দন নদীর পূর্বদিকে রয়ে গেছে, তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিও।”

সুতরাং রূবেণ, গাদ ও মনঃশি পরিবারগোষ্ঠীর অর্ধেক ইস্রায়েলের অন্য লোকদের রেখে চলে গেল। তারা কনানের শীলোতে ছিল। সে জায়গা ছেড়ে দিয়ে তারা গিলিয়দে ফিরে গেল। তারা ফিরে গেল মোশির দেওয়া জায়গায়। প্রভু মোশিকে তাদের এই জায়গা দেবার জন্যই আদেশ দিয়েছিলেন।

10 রূবেণ, গাদ ও মনঃশির পরিবারগোষ্ঠীর অর্ধেক লোকরা গিলিয়দ নামে একটি জায়গায় গেল। জায়গাটা কনানের অন্তর্গত যর্দন নদীর কাছেই। সেখানে তারা একটা চমৎ‌‌কার বেদী বানালো। 11 ইস্রায়েলের অন্যান্য লোকরা যারা তখনও শীলোতে ছিল, শুনতে পেল যে এই তিন পরিবারগোষ্ঠী এরকম একটা বেদী তৈরী করেছে। তারা এও শুনল যে বেদীটা হয়েছে কনানের সীমান্তে গিলিয়দ নামক একটি জায়গায়। সেটা ইস্রায়েলের দিকের যর্দন নদীর কাছেই। 12 এসব শুনে ইস্রায়েলের সব লোক এই তিনটি পরিবারগোষ্ঠীর ওপর বেশ রেগে গেল। তারা একসঙ্গে মিলিত হয়ে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে বলে ঠিক করল।

13 সেই জন্য ইস্রায়েলের লোকরা কয়েক জনকে পাঠালো রূবেণ, গাদ এবং মনঃশির লোকদের সঙ্গে কথা বলতে। এইসব ইস্রায়েলীয়দের নেতা ছিল পীনহস। পীনহস হচ্ছে যাজক ইলিয়াসরের পুত্র। 14 ইস্রায়েলবাসীরা এছাড়াও তাদের পরিবারগোষ্ঠীর দশজন নেতাকে সেখানে পাঠিয়েছিল। প্রতিটি গোষ্ঠী থেকে একজন করে নেতা পাঠানো হয়েছিল। এরা থাকত শীলোতে।

15 সেই জন্য এই এগার জন লোক গিলিয়দে গেল। তারা রূবেণ, গাদ ও মনঃশির লোকদের বলল, 16 “ইস্রায়েলের সব লোক তোমাদের কাছে জানতে চায় কেন ইস্রায়েলের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তোমরা এই কাজ করলে? কেন তোমরা প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করেছ? কেন তোমরা নিজেদের জন্য বেদী তৈরী করলে? তোমরা তো জান এটা ঈশ্বরের শিক্ষার বিরুদ্ধাচরণ। 17 পিয়োরে কি হয়েছিল মনে পড়ে? সেই পাপের ফল আজও আমরা ভোগ করছি। সেই মহাপাপের জন্য ঈশ্বর বহু ইস্রায়েলবাসীকে প্রবল অসুখে আক্রান্ত করেছিলেন। সেই অসুস্থতার ফল আজও আমরা ভোগ করছি। 18 আর এখন তোমরা সেই একই কাজ করছো? তোমরা প্রভুর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করছ। তোমরা কি প্রভুর অনুসরণ অগ্রাহ্য করবে? যদি এখনও না ক্ষান্ত হও, তাহলে ইস্রায়েলের প্রতিটি মানুষের উপরই তিনি ক্রুদ্ধ হবেন।

19 “যদি তোমাদের দেশকে অবমাননা করা হয় তাহলে আমাদের দেশে চলে এসো। প্রভুর পবিত্র তাঁবু আমাদের দেশে রয়েছে। তোমরা আমাদের এখানে কিছু জমি-জায়গা পেতে পার। সেখানে তোমরা বসবাস করতে পার কিন্তু কখনও প্রভুর বিরুদ্ধে যেও না। আর কোন বেদী তৈরী করো না। আমরা তো ইতিমধ্যেই সমাগম তাঁবুতে আমাদের প্রভু ও ঈশ্বরের একটা বেদী পেয়েছি।

20 “সেরহের পুত্র আখনের কথা একবার মনে করে দেখ। সে বর্জিত বস্তু সম্বন্ধে ঈশ্বরের আজ্ঞা মানেনি। সেই লোকটি ঈশ্বরের বিধি ভেঙ্গে ছিল, কিন্তু তার জন্য ইস্রায়েলের সমস্ত লোককে শাস্তিভোগ করতে হয়েছিল। আখন তার পাপের জন্য মারা গিয়েছিল, কিন্তু একই কারণে আরো অনেক লোক মারা গিয়েছিল।”

21 তখন রূবেণ, গাদ ও মনঃশির লোকরা ঐ এগারো জনকে বলল, 22 “প্রভু হলেন আমাদের ঈশ্বর! আবার বলছি প্রভুই হচ্ছেন আমাদের ঈশ্বর! কেন আমরা বেদী করেছি তা তিনি জানেন। এবার তোমরাও তা জেনে রাখো। আমরা কি করেছি তা তোমরা বিচার করে দেখ। যদি তোমাদের মনে হয় আমরা কিছু অন্যায় করেছি তাহলে আমাদের তোমরা মেরে ফেল। 23 যদি আমরা ঈশ্বরের বিধি ভঙ্গ করে থাকি তাহলে তাঁকে বল তিনি যেন নিজে আমাদের শাস্তি দেন। 24 তোমরা কি মনে কর যে আমরা এই বেদী বানিয়েছি হোমবলি, শস্য নৈবেদ্য ও মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য? না মোটেই তা নয়। কেন বেদী বানিয়েছি জানো? আমাদের ভয় ছিল ভবিষ্যতে তোমাদের লোকরা আমাদের মেনে নেবে না যে আমরাও তোমাদেরই লোক। আমরা তোমাদেরই জাতি। সেদিন তোমাদের লোকরাই বলবে, ‘ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরকে উপাসনা করার অধিকার আমাদের নেই। 25 ঈশ্বর আমাদের যর্দন নদীর অন্য পারে থাকতে দিয়েছেন। এর অর্থ নদীই আমাদের আলাদা করে দিয়েছে। আমাদের ভয় ছিল তোমাদের সন্তানরা বড় হয়ে যখন দেশ শাসন করবে তখন তারা মনেও করবে না যে আমরা তোমাদেরই লোক। তখন তারা বলবে, তোমরা রূবেন আর গাদের লোক, তোমরা কেউ ইস্রায়েলের নও।’ তখন তোমাদের সন্তানরা আমাদের সন্তান-সন্ততিদের প্রভুর উপাসনা করতে দেবে না।

26 “তাই আমরা এই বেদী তৈরী করার সংকল্প করেছিলাম। আমরা হোমবলি আর অন্যান্য কিছু উৎসর্গ করার জন্য বেদী বানাই নি। 27 আসল কথা হচ্ছে বেদী তৈরীর উদ্দেশ্য তোমাদের জানানো যে আমরা সেই একই ঈশ্বরের উপাসনা করছি যে ঈশ্বর তোমাদের। এই বেদীই তোমাদের কাছে আমাদের কাছে আর আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে প্রমাণ করবে যে আমরাও প্রভুর উপাসনা করি। আমরা আমাদের নৈবেদ্য, শস্য নৈবেদ্য এবং মঙ্গল নৈবেদ্য প্রভুকে উৎসর্গ করি। আমরা চাই যে তোমাদের সন্তানরা বড় হয়ে জানুক যে, আমরাও তোমাদের মতোই ইস্রায়েলবাসী। 28 ভবিষ্যতে যদি তোমাদের বংশধররা বলে আমরা কেউ ইস্রায়েলীয় নই তখন আমাদের বংশধররা বলবে, ‘ঐ দেখো আমাদের পিতারা এই বৈদী তৈরী করে দিয়েছেন। এই বেদী পবিত্র তাঁবুতে প্রভুর যে বেদী আছে হুবহু তারই মতো। এই বেদী আমরা কোন কিছু উৎসর্গ করার জন্য করি নি, আমরা যে ইস্রায়েলবাসী তারই প্রমাণ হিসাবে আমরা এটি নির্মাণ করেছি।’

29 “সত্যি বলছি আমরা প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করতে চাই নি। আমরা তাঁকে মানতে চাই। আমরা জানি পবিত্র তাঁবুর সামনে যে বেদী রয়েছে সেটাই একমাত্র সত্যিকারের বেদী। সেই বেদীই আমাদের প্রভু ঈশ্বরের বেদী।”

30 যাজক পীনহস আর তাঁর সঙ্গী সাথী নেতারা রূবেণ, গাদ এবং মনঃশির লোকদের কাছ থেকে এইসব শুনলেন। তাঁরা এদের কথা শুনে খুশী হলেন, বুঝতে পারলেন যে এরা সত্যি কথাই বলেছে। 31 তাই পীনহস বললেন, “আজ আমরা জানি যে প্রভু আমাদের সঙ্গেই আছেন এবং আমরা এও জানি যে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে নই। এবং আমরা জানি যে ইস্রায়েলের লোকদের প্রভু শাস্তি দেবেন না।”

32 তারপর নেতাদের সঙ্গে নিয়ে পীনহস সেখান থেকে নিজেদের দেশে ফিরে গেলেন। রূবেণ এবং গাদের দেশ গিলিয়দ থেকে তাঁরা কনানে ফিরে গিয়ে ইস্রায়েলবাসীদের সব কিছু জানালেন। 33 শুনে তারাও খুশী হল। তারা খুশী হয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাল। রূবেণ, গাদ ও মনঃশির দেশ তারা ধ্বংস করবে না বলে স্থির করল।

34 রূবেণ এবং গাদের লোকরা বেদীটার একটা নাম দিল। যার অর্থ হল: “এই বেদী হচ্ছে আমাদের প্রভু ঈশ্বরের বিশ্বাসের প্রতীক।”

প্রেরিত 2

পবিত্র আত্মার আগমন

এরপর পঞ্চাশত্তমীর দিনটি এল, সেই দিনটিতে প্রেরিতরা সকলে একই জায়গায় সমবেত ছিলেন। সেই সময় হঠাৎ‌ আকাশ থেকে ঝোড়ো হাওযার শব্দের মত প্রচণ্ড একটা শব্দ শোনা গেল আর যে ঘরে তাঁরা বসেছিলেন, সেই ঘরের সর্বত্র তা ছড়িয়ে গেল। তাঁরা তাঁদের সামনে আগুনের শিখার মতো কিছু দেখতে পেলেন। সেই শিখাগুলি তাদের উপর ছড়িয়ে পড়ল ও পৃথক পৃথক ভাবে তাঁদের প্রত্যেকের উপর বসল। তাঁরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন আর ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগলেন। পবিত্র আত্মাই তাঁদের এইভাবে কথা বলার শক্তি দিলেন।

সেই সময় প্রত্যেক জাতির থেকে ধার্মিক ইহুদীরা এসে জেরুশালেমে বাস করছিল। সেই শব্দ শুনে বহুলোক সেখানে এসে জড়ো হল। তারা সকলে হতবাক হয়ে গেল, কারণ প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের ভাষায় প্রেরিতদের কথা বলতে শুনছিল।

এতে তারা আশ্চর্য হয়ে পরস্পর বলতে লাগল, “দেখ! এই যে লোকরা কথা বলছে, এরা সকলে গালীলের লোক নয় কি! তবে আমরা কেমন করে ওদের প্রত্যেককে আমাদের নিজের নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে শুনছি? এখানে আমরা যারা আছি, আমরা ভিন্ন ভিন্ন দেশের লোক; পার্থীয়, মাদীয়, এলমীয়, মিসপতামিয়া, যিহূদিয়া, কাপ্পাদকিয়া, পন্ত, আশিয়া, ফরুগিয়া, পাম্ফুলিয়া ও মিশর, 10 কুরীনীর লুবিয়ার কাছে কিছু অঞ্চলের লোক, রোম থেকে এসেছে এমন অনেক লোক এবং ইহুদী বা ইহুদী ধর্মে দীক্ষিত অনেকে। 11 ক্রীতীয় ও আরবীয় আমরা সকলেই আমাদের মাতৃভাষায় ঈশ্বরের মহাপরাক্রান্ত কাজের বর্ণনা এদের মুখে শুনেছি।”

12 তারা হতবুদ্ধি হয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “এর অর্থ কি?” 13 কিন্তু অন্য লোকেরা বিদ্রূপের ভঙ্গীতে বলতে লাগল, “ওরা দ্রাক্ষারস পান করে মাতাল হয়েছে।”

পিতরের বক্তব্য

14 তখন পিতর ঐ এগারো জন প্রেরিতের সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন, “হে আমার ইহুদী ভাইরা, আজ জেরুশালেমে যত লোক বাস করেন তাঁদের সকলের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনাদের এর অর্থ জানা দরকার। 15 আপনারা যা মনে করছেন তা নয়, এই লোকেরা কেউ মাতাল নয়, কারণ এখন মাত্র সকাল ন’টা। 16 কিন্তু ভাববাদী যোয়েল এবিষয়েই বলেছেন,

17 ‘ঈশ্বর বলছেন: শেষের দিনগুলিতে এরকমই হবে;
    শেষকালে আমি সকল লোকের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব,
তাতে তোমাদের ছেলেমেয়েরা ভাববাণী বলবে,
    তোমাদের যুবকরা দর্শন পাবে,
    আর তোমাদের বৃদ্ধ লোকরা স্বপ্ন দেখবে।
18 হ্যাঁ, আমি আমার সেবকদের,
    স্ত্রী ও পুরুষ সকলের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব,
    আর তারা ভাববানী বলবে।
19 আমি উর্দ্ধে আকাশে বিস্ময়কর সব লক্ষণ দেখাবো
    ও নীচে পৃথিবীতে নানা অদ্ভুত চিহ্ন,
    রক্ত, আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখাবো।
20 প্রভুর সেই মহান ও মহিমাময় দিন আসার আগে,
    সূর্য্য কালো ও চাঁদ রক্তের মতো লাল হয়ে যাবে।
21 আর যে কেউ প্রভুর নামে ডাকবে, সে উদ্ধার পাবে।’(A)

22 “হে ইহুদী ভাইরা, একথা শুনুন: নাসরতীয় যীশুর দ্বারা ঈশ্বর বহু অলৌকিক ও আশ্চর্য কাজ করে আপনাদের কাছে প্রমাণ দিয়েছেন যে তিনি সেই ব্যক্তি যাঁকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন; আর আপনারা এই ঘটনাগুলি জানেন। 23 যীশুকে আপনাদের হাতে সঁপে দেওয়া হল, আর আপনারা তাঁকে হত্যা করলেন। মন্দ লোকদের দিয়ে আপনারা তাঁকে ক্রুশের উপর পেরেক বিদ্ধ করলেন। ঈশ্বর জানতেন যে এসব ঘটবে; আর তাই ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনা, যা তিনি বহুপূর্বেই নিরূপণ করেছিলেন। 24 যীশু মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করলেন, কিন্তু ঈশ্বর সেই বিভীষিকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করলেন। ঈশ্বর যীশুকে মৃতদের মধ্য থেকে তুলে আনলেন। মৃত্যু যীশুকে তার কবলে রাখতে সক্ষম হল না। 25 কারণ দায়ূদ যীশুর বিষয়ে বলেছিলেন:

‘আমি প্রভুকে সবসময়ই আমার সামনে দেখেছি;
    আমাকে স্থির রাখতে তিনি আমার ডানদিকে অবস্থান করছেন।
26 এইজন্য আমার অন্তর আনন্দিত,
    আর আমার জিভ উল্লাস করে।
আমার এই দেহও প্রত্যাশায় জীবিত থাকবে।
27     কারণ তুমি তোমার প্রাণ মৃত্যুলোকে পরিত্যাগ করবে না।
    তুমি তোমার পবিত্র ব্যক্তিকে ভয় পেতে দেবে না।
28 তোমার সান্নিধ্যে আমার জীবন
    তুমি আনন্দে ভরিয়ে দেবে।’(B)

29 “আমার ভাইরা, আমাদের সেই শ্রদ্ধেয় পূর্বপুরুষ দায়ূদের বিষয়ে আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, তিনি মারা গেছেন ও তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে, আর আজও তাঁর কবর আমাদের মাঝে আছে। 30 কিন্তু তিনি একজন ভাববাদী ছিলেন এবং জানতেন ঈশ্বর শপথ করে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাঁর বংশের একজনকে তাঁরই মতো রাজা করে সিংহাসনে বসাবেন।[a] 31 পরে কি হবে তা আগেই জানতে পেরে দায়ূদ যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে বলেছিলেন:

‘তাঁকে মৃত্যুলোকে পরিত্যাগ করা হয় নি
বা তাঁর দেহ কবরের মধ্যে ক্ষয় প্রাপ্ত হয় নি।’

32 কিন্তু ঈশ্বর মৃত্যুর পর যীশুকেই পুনরুত্থিত করেছেন; আর আমরা সকলে এই ঘটনার সাক্ষী আছি। আমরা সকলে তাঁকে দেখেছি। 33 যীশুকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হল; এখন যীশু ঈশ্বরের কাছে তাঁর ডানদিকে অবস্থান করছেন। পিতা যীশুকে পবিত্র আত্মা দিয়েছেন, পিতা তাঁকে সেই পবিত্র আত্মা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন যীশু সেই পবিত্র আত্মাকে ঢেলে দিলেন, তোমরা এখন তাই দেখছ ও শুনছ। 34 কারণ দায়ূদ স্বর্গারোহন করেন নি, আর তিনি নিজে একথা বলছেন,

‘প্রভু ঈশ্বর আমার প্রভুকে বলছেন;
35 যে পর্যন্ত না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পা রাখার জায়গায় পরিণত করি,
    তুমি আমার ডানদিকে বস।’(C)

36 “তাই ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবার নিশ্চিতভাবে জানুক যে যাকে আপনারা ক্রুশবিদ্ধ করেছিলেন, সেই যীশুকেই ঈশ্বর প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করেছেন।”

37 লোকেরা এই কথা শুনে খুবই দুঃখিত হল। তারা পিতর ও অন্যান্য প্রেরিতদের বলল, “ভাইরা, আমরা কি করব?”

38 পিতর তাঁদের বললেন, “আপনারা মন-ফিরান, আর প্রত্যেকে পাপের ক্ষমার জন্য যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজ হোন, তাহলে আপনারা দানরূপে এই পবিত্র আত্মা পাবেন। 39 কারণ এই প্রতিশ্রুতি আপনাদের জন্য, আপনাদের সন্তানদের জন্য আর যারা দূরে আছে তাদেরও জন্য। আমাদের ঈশ্বর প্রভু তাঁর নিজের কাছে যাদের ডেকেছেন, এই দান তাদের সকলের জন্য।”

40 পিতর তাঁদের আরো অনেক কথা বলে সাবধান করে দিলেন; তিনি তাঁদের অনুনয়ের সুরে বললেন, “বর্তমান কালের মন্দ লোকদের থেকে নিজেদের বাঁচান!” 41 যাঁরা পিতরের কথা গ্রহণ করলেন, তাঁরা বাপ্তিস্ম নিলেন। এর ফলে সেদিন কম বেশী তিন হাজার লোক খ্রীষ্টবিশ্বাসীবর্গের সঙ্গে যুক্ত হলেন।

বিশ্বাসীবর্গের সহভাগীতা

42 বিশ্বাসীরা প্রায়ই একত্র হয়ে মনোযোগের সঙ্গে প্রেরিতদের শিক্ষা গ্রহণ করতেন। বিশ্বাসীবর্গ নিজেদের মধ্যে সব কিছু ভাগ করে নিতেন এবং একই সঙ্গে আহার ও প্রার্থনা করতেন। 43 প্রেরিতেরা অনেক অলৌকিক ও আশ্চর্য কাজ করতে লাগলেন; প্রত্যেকের অন্তরে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে গভীর ভক্তি ছিল। 44 বিশ্বাসীরা সকলে একসঙ্গে থাকতেন এবং সবকিছু নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন। 45 তাঁরা তাঁদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে, যাঁর যেমন প্রয়োজন সেই অনুসারে ভাগ করে নিতেন। 46 তাঁরা প্রতিদিন মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে একত্রিত হতেন, একই উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তাঁরা সেখানে যেতেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িতে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন আর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে আনন্দের সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ করতেন। 47 বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের প্রশংসা করতেন, আর সকলেই তাঁদের ভালোবাসতেন। প্রতিদিন অনেকে উদ্ধার লাভ করছিলেন আর যাঁরা উদ্ধার লাভ করছিলেন তাদেরকে প্রভু বিশ্বাসীবর্গের সঙ্গে যুক্ত করতে থাকলেন।

যিরমিয় 11

বন্দোবস্ত ভঙ্গ হল

11 প্রভুর এই বার্তা যিরমিয়র কাছে এসে পৌঁছালো: “চুক্তির ভাষা শোন যিরমিয়। তুমি যা শুনবে তা যিহূদার লোকেদের বলবে। জেরুশালেম বাসীদেরও বলবে। প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এইগুলি বললেন: ‘যারা এই চুক্তি মানবে না তাদের অমঙ্গল হবে। তোমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে আমি যে চুক্তি করেছিলাম তার সম্বন্ধে বলছি। মিশর থেকে যখন তাদের আমি নিয়ে এসেছিলাম তখনই এই চুক্তি করেছিলাম। মিশরের প্রচুর সমস্যা ছিল। লোহা গলানো গরম ছিল সেখানে।’ আমি ওদের বলেছিলাম, ‘আমাকে মেনে চলো এবং আমার আদেশমতো কাজ করো। যদি তা করো তাহলে তোমরা হবে আমার লোক। আমি হব তোমাদের ঈশ্বর।’

“আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি করেছিলাম তা বজায় রাখতে এটা করেছিলাম। আমি কথা দিয়েছিলাম যে, তাদের এমন উর্বর জমি দেব যা থেকে দুধ আর মধু সংগৃহীত হবে। এবং তোমরা এখন সেই দেশেই বাস করছো।”

আমি (যিরমিয়) উত্তরে জানালাম, “আমেন, প্রভু।”

প্রভু আমাকে বললেন, “যিরমিয়, এই বার্তা তুমি যিহূদার শহরগুলিতে এবং জেরুশালেমের রাস্তাগুলিতে ধর্মোপদেশ দ্বারা প্রচার করো। এই হল বার্তা: ‘চুক্তির বয়ান শোন এবং বিধিগুলিকে মান্য করো। আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের মিশর থেকে নিয়ে আসার সময় সতর্কবাণী দিয়েছিলাম। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত বারে বারে আমি তাদের সতর্ক করে এসেছি। আমি তাদের আমাকে মেনে চলার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষ আমার কথা শোনেনি। তারা ছিল একগুঁয়ে, জেদী। তারা তাদের দুষ্ট অন্তরে যা ভাবত তাই করত। চুক্তিতে বলা হয়েছে যে যদি তারা ঈশ্বরকে অমান্য করে তাহলে তাদের অমঙ্গল হবে। আমি তাদের আদেশ দিয়েছিলাম এই বন্দোবস্ত মানতে। কিন্তু তারা তা মানেনি। তাই আমি তাদের অমঙ্গল ঘটাবো।’”

প্রভু আমাকে বললেন, “যিরমিয়, আমি জানি যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকরা গোপন ছক কষেছে। 10 তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতো পাপ কাজ করছে। তাদের পূর্বপুরুষরা আমার বার্তা শুনতে অস্বীকার করেছিল। তারা অন্য দেবতার পূজা করেছিল। আমি তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলাম তা যিহূদা ও ইস্রায়েলের পরিবার ভঙ্গ করেছে।”

11 তাই প্রভু বললেন, “আমি খুব শীঘ্রই যিহূদার লোকদের ভয়ঙ্কর অনিষ্ট করব। তারা পালাতে পারবে না। তারা অনুতপ্ত হবে এবং তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করে সাহায্য চাইবে। কিন্তু আমি তাদের কথা কানেই তুলব না। 12 যিহূদা ও জেরুশালেম শহরের লোকরা তখন সাহায্যের প্রার্থনায় ছুটে যাবে তাদের মূর্ত্তিদের কাছে। ঐ লোকরা মূর্ত্তিদের সামনে ধুপধূনো জ্বালাবে। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর সময় যখন আসবে তখন মূর্ত্তিরা যিহূদার লোকদের কোন সাহায্যই করতে পারবে না।

13 “যিহূদার লোকরা, তোমাদের অসংখ্য মূর্ত্তি আছে। যিহূদার যত শহর আছে ততগুলি সংখ্যক মূর্ত্তি আছে। তোমরা ঐ বিরক্তিকর মূর্ত্তি ‘বাল’ এর জন্য বহু বেদী তৈরী করেছিলে। জেরুশালেমে যতগুলি সংখ্যক রাস্তা আছে ততগুলি বেদী তৈরী করেছিলে।

14 “যিরমিয় তোমায় বলেছি যিহূদার লোকদের জন্য প্রার্থনা কোরো না। তাদের জন্য কিছু চেয়ো না। তাদের জন্য প্রার্থনা করলে আমি শুনব না। ওরা কষ্ট পাবেই। কষ্ট পেলে তখন তারা আমার সাহায্যের জন্য কাঁদবে। কিন্তু আমি তাদের কথা শুনব না।

15 “আমার প্রেমিকা (যিহূদা) আমার উপাসনা গৃহে কেন?
    তার ওখানে থাকার কোন অধিকার নেই।
    সে অনেক পাপ কাজ করেছে।
যিহূদা তুমি কি মনে কর বিশেষ প্রতিশ্রুতিসমূহ ও পশুবলিসমূহ তোমাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে?
    তুমি কি মনে কর আমাকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করে তুমি শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবে?”

16 প্রভু তোমাকে একটি নাম দিয়েছিলেন।
    তিনি তোমাকে “মনোরম এক হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ” বলে ডাকতেন।
কিন্তু এক প্রবল ঝড়ের সাহায্যে প্রভু ঐ গাছে আগুন লাগিয়ে
    তার শাখাপ্রশাখা পুড়িয়ে ছাই করে দেবেন।
17 প্রভু সর্বশক্তিমান তোমাকে রোপণ করেছিলেন
    এবং তিনি বলেছিলেন যে বিপর্যয় তোমার কাছে আসবে।
কারণ ইস্রায়েল ও যিহূদার পরিবার
    অনেক ক্ষতিকর অনিষ্ট কাজ করেছে।
তারা বাল মূর্ত্তির উদ্দেশ্যে বলি দিয়েছে
    এবং আমাকে ক্রুদ্ধ করেছে।

যিরমিয়র বিরুদ্ধে চক্রান্ত

18 প্রভু আমাকে দেখালেন অনাথোতের মানুষ কিভাবে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে। প্রভু আমাকে এইসব দেখালেন, যাতে আমি জানতে পারি যে তারা আমার বিরুদ্ধে। 19 আমার বিরুদ্ধে লোকদের এই ষড়যন্ত্রের কথা প্রভু আমাকে জানাবার আগে আমি ছিলাম একজন নিরীহ মেষশাবকের মত, জবাই এর অপেক্ষারত। আমি এই ষড়যন্ত্রের কথা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। তারা আমার সম্বন্ধে এই কথাগুলি বলেছিল: “চলো ঐ গাছকে এবং গাছের ফলকে আমরা ধ্বংস করে দিই। চলো তাকে হত্যা করি। তাহলে মানুষ তাকে ভুলে যাবে।” 20 কিন্তু প্রভু আপনি হলেন নিরপেক্ষ বিচারক। আপনি জানেন কিভাবে মানুষের হৃদয় ও মনের পরীক্ষা নিতে হয়। আমি আপনাকে আমার যুক্তিগুলো সাজিয়ে দেব এবং আপনিই আমার হয়ে ওদের যোগ্য শাস্তি দেবেন।

21 অনাথোতের মানুষ যিরমিয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তারা যিরমিয়কে বলেছিল, “প্রভুর হয়ে ভাববাণী করলে তোমাকে আমরা হত্যা করব।” প্রভু সেই অনাথোতের লোকদের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নিলেন। 22 প্রভু সর্বশক্তিমান বললেন, “আমি অনাথোতের সেই লোকগুলোকে খুব শীঘ্রই যোগ্য শাস্তি দেব। তাদের যুবকরা যুদ্ধে মারা যাবে। তাদের ছেলেমেয়েরা খাদ্যের অভাবে মারা যাবে। 23 অনাথোত শহরের কেউ বেঁচে থাকবে না। আমি তাদের শাস্তি দেব। আমিই ওদের অমঙ্গল ঘটাবো।”

মথি 25

দশজন কনের দৃষ্টান্তমূলক গল্প

25 “স্বর্গরাজ্য কেমন হবে, তা দশজন কনের সঙ্গে তুলনা করা চলে, যারা তাদের প্রদীপ নিয়ে বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বার হল। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিল নির্বোধ আর অন্য পাঁচজন ছিল বুদ্ধিমতী। সেই নির্বোধ কনেরা তাদের বাতি নিল বটে কিন্তু সঙ্গে তেল নিল না। অপরদিকে বুদ্ধিমতী কনেরা তাদের প্রদীপের সঙ্গে পাত্রে তেলও নিল। বর আসতে দেরী হওয়াতে তারা সকলেই তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।

“কিন্তু মাঝরাতে চিৎকার শোনা গেল, ‘দেখ, বর আসছে! তাকে বরণ করতে এগিয়ে যাও।’

“সেই কনেরা তখন উঠে তাদের প্রদীপ ঠিক করল। কিন্তু নির্বোধ কনেরা বুদ্ধিমতী কনেদের বলল, ‘তোমাদের তেল থেকে আমাদের কিছু তেল দাও, কারণ আমাদের প্রদীপ নিভে যাচ্ছে।’

“এর উত্তরে সেই বুদ্ধিমতী কনেরা বলল, ‘না। তেল যা আছে তাতে হয়তো আমাদের ও তোমাদের কুলোবে না, তোমরা বরং যারা তেল বিক্রি করে তাদের কাছে গিয়ে নিজেদের জন্য তেল কিনে আনো।’

10 “তারা যখন তেল কেনার জন্য বাইরে যাচ্ছে, এমন সময় বর এসে উপস্থিত হল, তখন যে কনেরা প্রস্তুত ছিল তারা বরের সঙ্গে বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল। তারপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল।

11 “শেষে অন্য কনেরা এসে বলল, ‘শুনছেন, আমাদের জন্য দরজা খুলে দিন।’

12 “কিন্তু এর উত্তরে বর বলল, ‘সত্যি বলছি, আমি তোমাদের চিনি না।’

13 “তাই তোমরা সজাগ থেকো, কারণ তোমরা সেই দিন বা মুহূর্ত্তের কথা জান না, কখন মানবপুত্র ফিরে আসবেন।

তিনজন দাসের কাহিনী

(লূক 19:11-27)

14 “স্বর্গরাজ্য এমন একজন লোকের মতো, যিনি বিদেশে যাবার আগে চাকরদের ডেকে সম্পত্তির ভার তাদের হাতে দিয়ে গেলেন। 15 তিনি একজনকে পাঁচ থলি মোহর, আর একজনকে দু থলি মোহর এবং আর একজনকে এক থলি মোহর দিলেন। যার যেমন ক্ষমতা সেই অনুসারে দিয়ে তিনি বিদেশে চলে গেলেন। 16 যে পাঁচ থলি মোহর পেয়েছিল, সে সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকা খাটাতে শুরু করল, আর তাই দিয়ে আরো পাঁচ থলি মোহর লাভ করল। 17 যে লোক দু’থলি মোহর পেয়েছিল সেও সেই টাকা খাটিয়ে আরো দু’থলি মোহর রোজগার করল। 18 কিন্তু যে এক থলি মোহর পেয়েছিল, সে গিয়ে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তার মনিবের টাকা সেই গর্তে পুঁতে রাখল।

19 “অনেক দিন পর সেই চাকরদের মনিব ফিরে এসে তাদের কাছে হিসাব চাইলেন। 20 যে পাঁচ থলি মোহর পেয়েছিল, সে আরো পাঁচ থলি মোহর এনে বলল, ‘হুজুর, আপনি আমাকে পাঁচ থলি মোহর দিয়েছিলেন, দেখুন আমি তাই দিয়ে আরো পাঁচ থলি মোহর রোজগার করেছি।’

21 “তার মনিব তখন তাকে বললেন, ‘বেশ, তুমি উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস। তুমি এই সামান্য বিষয়ে বিশ্বস্ত থাকাতে আমি তোমার হাতে অনেক বিষয়ের ভার দেব। এস, তোমার মনিবের আনন্দের সহভাগী হও।’

22 “এরপর যে দু থলি মোহর পেয়েছিল, সেও তার মনিবের কাছে এসে বলল, ‘হুজুর, আপনি আমায় দু থলি মোহর দিয়েছিলেন, দেখুন আমি তাই দিয়ে আরো দু থলি মোহর রোজগার করেছি।’

23 “তার মনিব তাকে বললেন, ‘বেশ! তুমি উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস। তুমি সামান্য বিষয়ের উপর বিশ্বস্ত হলে, তাই আমি আরো অনেক কিছুর ভার তোমার ওপর দেব। এস, তুমি তোমার মনিবের আনন্দের সহভাগী হও।’

24 “এরপর যে লোক এক থলি মোহর পেয়েছিল সে তার মনিবের কাছে এসে বলল, ‘হুজুর আমি জানি আপনি বড় কড়া লোক। আপনি যেখানে বীজ বোনেন নি সেখানে কাটেন; আর যেখানে কোন বীজ ছড়ান নি সেখান থেকে শস্য সংগ্রহ করেন: 25 তাই আমি ভয়ে আপনার দেওয়া মোহরের থলি মাটিতে পুঁতে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আপনার যা ছিল তা নিন।’

26 “এর উত্তরে তার মনিব তাকে বললেন, ‘তুমি দুষ্ট ও অলস দাস! তুমি তো জানতে আমি যেখানে বুনি না সেখানেই কাটি; আর তুমি এও জান যেখানে আমি বীজ ছড়াই না সেখান থেকেই সংগ্রহ করি। 27 তাই তোমার উচিত ছিল মহাজনদের কাছে আমার টাকা জমা রাখা, তাহলে আমি এসে আমার টাকার সঙ্গে কিছু সুদও পেতাম।’

28 “তাই তোমরা এর কাছ থেকে, ‘ঐ মোহর নিয়ে যার দশ থলি মোহর আছে তাকে দাও। 29 হ্যাঁ, যার আছে তাকে আরো দেওয়া হবে, তাতে তার প্রচুর হবে। কিন্তু যার নেই, তার যা আছে তাও তার কাছে থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।’ 30 তোমরা ঐ অকর্মন্য দাসকে অন্ধকারে বাইরে ফেলে দাও; সেখানে লোকেরা কান্নাকাটি করে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষে।

মানবপুত্র সকল লোকের বিচার করবেন

31 “মানবপুত্র যখন নিজ মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে তাঁর স্বর্গদূতদেব সঙ্গে নিয়ে এসে মহিমার সিংহাসনে বসবেন, 32 তখন সমস্ত জাতি তাঁর সামনে জড়ো হবে। রাখাল যেমন ভেড়া ও ছাগল আলাদা করে, তেমনি তিনি সব লোককে দুভাগে ভাগ করবেন। 33 তিনি নিজের ডানদিকে ভেড়াদের রাখবেন আর বাঁদিকে ছাগলদের রাখবেন।

34 “এরপর রাজা তাঁর ডানদিকের যারা তাদের বলবেন, ‘আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছ, তোমরা এস! জগত সৃষ্টির শুরুতেই যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তার অধিকার গ্রহণ কর। 35 কারণ আমি ক্ষুধিত ছিলাম, তোমরা আমায় খেতে দিয়েছিলে। আমি পিপাসিত ছিলাম আর তোমরা আমাকে পান করবার জল দিয়েছিলে। আমি অচেনা আগন্তুক রূপে এসেছিলাম আর তোমর আমায় আশ্রয় দিয়েছিলে। 36 যখন আমার পরনে কোন কাপড় ছিল না, তখন তোমরা আমায় পোশাক পরিয়েছিলে। আমি অসুস্থ ছিলাম, তোমরা আমার সেবা করেছিলে। আমি কারাগারে ছিলাম, তোমর আমায় দেখতে এসেছিলে।’

37 “এর উত্তরে যারা ভাল তারা বলবে, ‘প্রভু, কখন আমরা আপনাকে ক্ষুধার্ত দেখে খেতে দিয়েছিলাম, পিপাসিত দেখে জল পান করতে দিয়েছিলাম? 38 কখনই বা আপনাকে অচেনা আগন্তুক দেখে আতিথেয়তা করেছিলাম অথবা আপনার পরনে কাপড় নেই দেখে পোশাক পরিয়েছিলাম? 39 আর কখনই বা অসুস্থ বা কারাগারে আছেন দেখে আপনাকে দেখতে গিয়েছিলাম?’

40 “এর উত্তরে রাজা তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমার এই তুচ্ছতমদের মধ্যে যখন কোন একজনের প্রতি তোমরা এরূপ করেছিলে, তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।’

41 “এরপর রাজা তাঁর বাম দিকের লোকদের বলবেন, ‘ওহে অভিশপ্তরা, তোমরা আমার কাছ থেকে দূর হও, দিয়াবল ও তার দূতদের জন্য যে ভয়াবহ অনন্ত আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে গিয়ে পড়। 42 কারণ আমি যখন ক্ষুধার্ত ছিলাম, তখন তোমরা আমায় খেতে দাও নি। আমার যখন পিপাসা পেয়েছিল, তখন আমায় জল দাও নি। 43 আমি অচেনা আগন্তুকরূপে এসেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমার আতিথেয়তা করনি। আমার পোশাক ছিল না, কিন্তু তোমরা আমায় পোশাক দাও নি। আমি অসুস্থ ছিলাম ও কারাগারে গিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা আমার খোঁজ নাও নি।’

44 “এর উত্তরে তারা তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, কবে আপনাকে ক্ষুধার্ত, কি পিপাসিত, কি আগন্তুকরূপে দেখে অথবা কবেই বা আপনার পরনে কাপড় ছিল না, বা আপনি অসুস্থ ছিলেন ও কারাগারে গিয়েছিলেন বলে আমরা আপনার সাহায্য করিনি?’

45 “এ কথার উত্তরে রাজা বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যখন এই অতি সামান্য যারা তাদের কোন একজনের প্রতি তা করনি, তখন আমারই প্রতি তা কর নি।’

46 “এরপর অধার্মিক লোকেরা যাবে অনন্ত শাস্তি ভোগ করতে, কিন্তু ধার্মিকরা প্রবেশ করবে অনন্ত জীবনে।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International